সম্প্রতি, “বাহরাইনের মানামায় পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে ইসরায়েলের দূতাবাসে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুদ্ধ জনতা” শীর্ষক শিরোনামে অগ্নিসংযোগের দৃশ্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি বাহরাইনের ইসরায়েলি দূতাবাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের নয় বরং এটি ২০১২ সালে বাহরাইনের একটি পুলিশ স্টেশন হামলার ভিডিও।
আলোচিত ভিডিওটির কী ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, Revoluution Bahrain নামের ইউটিউব চ্যানেলে ২০১২ সালের ৩০ ডিসেম্বর “البحرين : محاصرة مركز للشرطة وحرقه – سترة” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
আরবিতে লেখা উক্ত ভিডিওর ক্যাপশন বাংলায় অনুবাদ করে জানা যায়, ভিডিওটি ২০১২ সালে বাহরাইনের একটি থানায় অগ্নিসংযোগের ঘটনার।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, আলোচিত ভিডিওটি ২০১২ সালে বাহরাইনের সিত্রা পুলিশ স্টেশনে অগ্নিসংযোগের দৃশ্য।
Source: Reuters
প্রসঙ্গত, হামাস-ইসরায়েল চলমান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বাহরাইনসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সংঘটিত হচ্ছে।
মূলত, ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে বাহরাইনের সিত্রা নামক একটি পুলিশ স্টেশনে অগ্নিসংযোগ করে কিছু বিক্ষোভকারী। ২০১২ সালের পুরোনো সেই অগ্নিসংযোগের ভিডিওকে চলমান হামাস-ইসরায়েল সংঘাতের প্রেক্ষাপটে বাহরাইনের ইসরায়েল দূতাবাসে অগ্নিসংযোগের ভিডিও দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ০৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা শুরু করে। এই হামলার প্রেক্ষিতে ইসরায়েলও হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকায় পাল্টা হামলা চালায়। এতে দেশ দুইটির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাত নতুন মাত্রা পায়৷
উল্লেখ্য, চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইস্যুতে একাধিক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার৷
সুতরাং, ২০১২ সালে বাহরাইনের পুলিশ স্টেশনে অগ্নিসংযোগের ভিডিওকে বাহরাইনের ইসরায়েল দূতাবাসে অগ্নিসংযোগের ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, বিশ্বকাপ আসরে ওপেনিং ব্যাটারহিসেবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের একমাত্র লিটন দাসেরই দুটো হাফ সেঞ্চুরি আছে দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিশ্বকাপ আসরে ওপেনিং ব্যাটার হিসেবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের একমাত্র লিটন দাসেরই দুটো হাফ সেঞ্চুরি থাকার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, লিটন দাস ব্যতীত ইমরুল কায়েসেরও বিশ্বকাপের এক আসরে দুটো হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে। ২০১১ সালের বিশ্বকাপে এই রেকর্ড গড়েন ইমরুল কায়েস।
আলোচিত দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিষয়ক গণমাধ্যম ESPN এর ক্রিকেটভিত্তিক ওয়েবসাইট espncricinfo -এ ১৯৯৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিশ্বকাপের প্রতিটি আসরে বাংলাদেশি ওপেনারদের প্রতিটি ম্যাচের পারফরম্যান্স ম্যানুয়ালি অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, আইসিসি ওডিআই বিশ্বকাপের ২০১১ সালের আসরে ইংল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে বাংলাদেশের হয়ে ওপেনিং ব্যাটার ইমরুল কায়েস যথাক্রমে ৬০ এবং ৭৩ রান করেন। অনুসন্ধানে আরও দেখা যায়, ইমরুল কায়েস ব্যতীত ১৯৯৯ থেকে ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত আর কোনো বাংলাদেশি ওপেনিং ব্যাটার একই আসরে দুটো হাফ সেঞ্চুরি করেননি।
Source: espncricinfo
অর্থাৎ, বিশ্বকাপের কোনো আসরে বাংলাদেশি ওপেনিং ব্যাটার হিসেবে লিটন দাস একাই দুটো হাফ সেঞ্চুরির অধিকারী নন।
মূলত, গত ১০ অক্টোবর ধর্মশালায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওপেনিং ব্যাটার হিসেবে এবারের বিশ্বকাপের আসরে প্রথম হাফ সেঞ্চুরি করেন লিটন দাস। এরপর গত ১৯ অক্টোবর ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয়বারের মত হাফ সেঞ্চুরি হাকান বাংলাদেশী এই ওপেনার। উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিটন দাস-ই একমাত্র বাংলাদেশি ওপেনিং ব্যাটার যিনি বিশ্বকাপের একই আসরে দুটো হাফ সেঞ্চুরি করেছেন দাবিতে একটি তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত দাবিটি সঠিক নয়। বাংলাদেশি ওপেনার হিসেবে লিটন দাসের আগে ইমরুল কায়েস বিশ্বকাপের এক আসরে দুই হাফ সেঞ্চুরি করেন। ২০১১ সালে আয়োজিত আইসিসি ওডিআই বিশ্বকাপের আসরে ইংল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসের বিপরীতে হাফ সেঞ্চুরি করেন তিনি।
সুতরাং, বিশ্বকাপ আসরে বাংলাদেশি ওপেনিং ব্যাটার হিসেবে একমাত্র লিটন দাসেরই দুটো হাফ সেঞ্চুরি আছে দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।
সম্প্রতি, “আমিতো সারাজীবন থাকবো না আমি যাবার আগে মাশরাফিকে বিসিবি প্রেসিডেন্ট এর পদটা দিয়ে যেতে চাই। কিন্তু মাশরাফি বিসিবি প্রেসিডেন্ট এর পদ নেবে কিনা তা আমি জানিনা৷ আমি মাশরাফির সাথে বসে কথা বলে দেখবো” শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের মন্তব্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাকে বিসিবির সভাপতি পদ দেওয়ার বিষয়ে নাজমুল হাসান পাপন আলোচিত মন্তব্যটি করেননি। বরং ২০২২ সালে বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেলে দেওয়া তার একটি সাক্ষাতকারকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
ভিডিওটিতে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বক্তব্য পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সেখানে তিনি “আমি তো সারাজীবন থাকবো না আমি যাবার আগে মাশরাফিকে বিসিবি প্রেসিডেন্ট এর পদটা দিয়ে যেতে চাই। কিন্তু মাশরাফি বিসিবি প্রেসিডেন্ট এর পদ নেবে কি না তা আমি জানি না৷ আমি মাশরাফির সাথে বসে কথা বলে দেখবো” শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি।
পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে মূলধারার ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ২১ মে ‘মাশরাফীই কি পরবর্তী বিসিবি সভাপতি? কী বললেন পাপন?‘ শীর্ষক শিরোনামে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সাক্ষাতকার নিয়ে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়; যা আলোচিত ভিডিওটির পূর্ণ সংস্করণ।
Screenshot: Jamuna TV YouTube
উক্ত ভিডিওটিতে মাশরাফির বোর্ড প্রেসিডেন্ট হওয়া নিয়ে উপস্থাপকের প্রশ্নের জবাবে পাপন বলেন, “প্রথম কথা হচ্ছে, মাশরাফি বোর্ড প্রেসিডেন্ট হতে চায় কি না আমার সন্দেহ। দ্বিতীয় হচ্ছে, বোর্ড প্রেসিডেন্টটা এখন বেশ কম্পলিকেটেড। দেশে না, দেশের বাইরে। সো এই প্রেশারটা ও নিবে কি না, বা নিতে চায় কি না নাম্বার ওয়ান। নাম্বার টু, ওকে তো আগে আসতে হবে। অনেকে মনে করে কি, সেদিন একজন ধরছে, আমি ডাইরেক্টর হবো। প্রায় রোজই এমন ধরে। আমি ডাইরেক্টর হতে চাই, আমারে ডাইরেক্টর বানায় দেন। আরে কেমনে বানাবো? আপনি তো কাউন্সেলর না। কাউন্সেলর না হলে আপনি তো হতেই পারবেন না। দিস ইজ নাম্বার ওয়ান, আগে একটা কাউন্সেলর হন। একটা ক্লাব কিনেন বা চালান। কিছু একটা করেন।”
”আমার ধারণা মাশরাফি ডেফিনিটলি এখানে জিতবে৷ আমার কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু ডাইরেক্টর হয়ে আসার পরে প্রেসিডেন্টে পারবে কি না এটা বিষয়। মাশরাফিকে আমাদের প্রথম থেকেই প্ল্যান। দেখেন আমার কাছে মনে হয় মাশরাফি অলরেডি ইজ টু বিজি। আমার কাছে পার্সোনালি মনে হয়। ও কিন্তু প্রচুর সময় দিচ্ছে রাজনীতিতে।
আমার পার্সোনাল একটা ইচ্ছা ছিল, মানে আমি ওকে বলেছি আমার যতটুক মনে হয়, আমি সবাইকে বলতাম, মাশরাফি যেদিন রিটায়ার্ড করবে সেদিন ওকে আমি বাংলাদেশ টিমের ম্যানেজার বানায় দেবো। কিন্তু মাঝখানে বিপদ হল, ও তো এমপি হয়ে গেলো। একটা এমপিকে আমি এখন কিভাবে ম্যানেজার করি?”
উপস্থাপকের আরেকটি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “যে কোনো দায়িত্বে আসার মত ছেলে ও না, আমি যদি ওকে চিনে থাকি। কাজেই আমি একটা দিলাম (দায়িত্ব)। আর ও চলে আসবে তা না, এটা ম্যাচ করতে হবে। সো আমার ওর সাথে বসে,উই উইল ফাইনালাইজ।”
অর্থাৎ, বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন তার চলে যাবার আগে মাশরাফিকে বিসিবি প্রেসিডেন্ট এর পদ দিতে চাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেননি। এছাড়া যে কোনো দায়িত্বে আসার মত ছেলে মাশরাফি না উল্লেখ করে সে সময় তিনি বলেছিলেন, ওর সাথে আলোচনা করে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেবেন।
পাশাপাশি, মূলধারার গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণ করেও নাজমুল হাসান পাপনের কোনো মন্তব্যে মাশরাফি বিন মর্তুজাকে বিসিবি সভাপতি হিসেবে চাওয়ার কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, ২০২২ সালের ২১ মে মূলধারার ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম যমুনা টিভি তাদের ইউটিউব চ্যানেলে ‘মাশরাফীই কি পরবর্তী বিসিবি সভাপতি? কী বললেন পাপন?’ শীর্ষক শিরোনামে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সাক্ষাতকার নিয়ে একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে মাশরাফি বিন মর্তুজাকে বিসিবিতে দেখতে চাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন পাপন। তবে এমপি হওয়ার পর তিনি যে কোনো দায়িত্ব পালন করবেন কি না তা নিয়ে তিনি সংশয় প্রকাশ করে বলেন, পরবর্তীতে মাশরাফির সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে উক্ত ভিডিওটির কিছু অংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন মাশরাফিকে বিসিবি প্রেসিডেন্ট এর পদ দিয়ে যেতে চান এবং এজন্য তিনি তার সাথে বসে কথা বলবেন।
উল্লেখ্য, পূর্বেও বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের নাম উদ্বৃত করে ভুয়া বক্তব্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, মাশরাফিকে বিসিবি সভাপতির পদ দেওয়া নিয়ে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের মন্তব্য দাবিতে প্রচারিত মন্তব্য টি বিকৃত করা।
সম্প্রতি, “ধন্যবাদ অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ ভক্ত। তোমাদের প্রতি ভালোবাসা বেড়ে গেল আই লাভ ফিলিস্তিন.তোমাদের জন্য অনেক শুভ কামনা” শীর্ষক শিরোনামে কিছু পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের সমর্থকদের ফিলিস্তিনের পতাকা তুলে ধরার আলোচিত ছবিটি বাস্তব নয় বরং এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স(এআই) ব্যবহার করে নির্মিত।
শুরুতেই প্রাসঙ্গিক কী-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের সমর্থকদের ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলনের বিষয়ে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম। কিন্তু, কোন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কিংবা কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের সমর্থকদের ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলনের সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি।
পরবর্তীতে, আলোচ্য ছবিটিকে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, The Atlei House নামের এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত পোস্টের ক্যাপশনের ইংরেজি অনুবাদ থেকে জানা যায়, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের হোম ভেন্যু Civitas Metropolitano স্টেডিয়ামে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ সমর্থকদের ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলনের একটি কাল্পনিক ছবি এটি।
পাশাপাশি, কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক অনলাইন গণমাধ্যম ‘Buzz Feed News’ এ গত ০১ ফেব্রুয়ারি “Why Are AI-Generated Hands So Messed Up?” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরিকৃত ছবি সমূহে অসংলগ্ন হাতের আকার দেখা যায়। হাতের আঙুলের আকারও সঠিকভাবে চিত্রায়ণ করতে পারে না কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। ফলে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরিকৃত ছবিসমূহে প্রায়শই দেখা মেলে অসংলগ্ন হাত কিংবা আঙুলের আকৃতি।
Source: Buzz Feed News
Buzz Feed News এর প্রতিবেদনে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী আলোচিত ছবিটি বিশ্লেষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। বিশ্লেষণে দেখা যায়, গ্যালারিতে থাকা দর্শকদের হাতের আকৃতি বাস্তব মানুষের হাতের মত নয়। ছবিতে উপস্থিত অনেক দর্শকের মাঝেই অসংলগ্ন হাতের আকার লক্ষ্য করা গেছে। যা নির্দেশ করে যে ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা তৈরি।
এছাড়াও, কোনো ছবি এআই জেনারেটেড কী-না তার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ওয়েবসাইট Hive Moderation-এ আলোচিত ছবিটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা নির্মিত হওয়ার সম্ভাব্যতা যাচাই করে রিউমর স্ক্যানার।
Hive moderation এর বিশ্লেষণ অনুসারে, আলোচিত ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা নির্মিত হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯.৯%.
মূলত, বাস্তব ছবি দাবিতে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের গ্যালারিতে সমর্থকদের হাতে ফিলিস্তিনি পতাকা উত্তোলনের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ছড়িয়ে পড়া ছবিটি বাস্তব কোনো ছবি নয় বরং, ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৭অক্টোবর হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ একটিমাত্র ম্যাচে অংশগ্রহন করেছে। রিয়াল সোসিয়েদাদে’র বিপক্ষে ৮অক্টোবর অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচের পর অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের পরবর্তী ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ২২অক্টোবর।
উল্লেখ্য, পূর্বেও পোপ ফ্রান্সিসের বাস্তব ছবি দাবিতে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা নির্মিত ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের সমর্থকরা গ্যালারিতে ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলন করার ছবিকে বাস্তব ছবি দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি, চলমান হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে গাজায় পাঠানো ত্রাণ সামগ্রীর গাড়িবহরের ভিডিও দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি হামাস-ইসরায়েল সাম্প্রতিক যুদ্ধের ত্রাণ সহায়তার গাড়িবহর আটকে পড়ার নয় বরং এটি ২০২১ সালের ৩১ মে মিসর সীমান্তের রাফাহ ক্রসিং অঞ্চলে গাজার উদ্দেশ্যে মিসরের ত্রাণ সহায়তার গাড়ি বহর আটকে পড়ার ভিডিও।
ছবিটির কী ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, আলোচ্য ভিডিওটিকে মিসরীয় টিভি চ্যানেল Al Nahar এর ফেসবুক পেজে ২০২১ সালের ৩১ মে’র একটি পোস্টে খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
উক্ত ফেসবুক পোস্টের আরবি ভাষার ক্যাপশন বাংলায় অনুবাদ করে দেখা যায়, গাজায় ফিলিস্তিনিদের মানবিক সাহায্যের জন্য মিসরের পাঠানো ত্রাণ সহায়তার গাড়িবহরের ভিডিও এটি।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, আলোচিত ভিডিওটি ২০২১ সালের ৩১মে মিসরের ত্রাণ সাহায্যের গাড়িবহরের ভিডিও।
অন্যদিকে, হামাস-ইসরায়েল চলমান যুদ্ধে মানবিক সাহায্যের গাড়িবহর আটকে দেওয়ার বিষয়ে অনুসন্ধান করে, কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা’র ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ১৬ অক্টোবর “Humanitarian aid stuck at Gaza border as WHO warns of ‘catastrophe’” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মিসর সীমান্তে ফিলিস্তিনিদের জন্য মানবিক সাহায্য নিয়ে বিশাল গাড়িবহর অপেক্ষা করছে। কিন্তু, ইসরায়েল রাফাহ ক্রসিং পয়েন্ট বন্ধ করে দেওয়ায় মিসরের ত্রাণ সহায়তার এসব গাড়ি গাজায় পৌছতে পারছে না।
এছাড়াও, অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে মিসরের ত্রাণ সহায়তা আটকে দেওয়ার প্রতিবেদন দেখুন AP News, Reuters.
অর্থাৎ, চলমান হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে রাফাহ ক্রসিং পয়েন্টে সীমান্তে ইসরায়েল কর্তৃক মিশরের ত্রাণ সহায়তা আটকে দেওয়ার তথ্যটি সঠিক।
মূলত, চলমান হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে গাজায় প্রবেশের একমাত্র পথ রাফাহ ক্রসিং পয়েন্ট বন্ধ থাকায় মিসরের পক্ষ থেকে পাঠানো ত্রাণ সামগ্রীর গাড়িবহর আটকে পড়ে। এই ঘটনার সাথে ২০২১ সালের ৩১মে মিসর থেকে গাজার উদ্দেশ্যে পাঠানো ত্রাণ সহায়তা আটকা পড়া গাড়িবহরের ভিডিও জুড়ে দিয়ে চলমান হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে ত্রাণ সামগ্রী আটকে দেওয়ার ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও গাজা সীমান্তে চার ইসরায়েলি সৈন্য লুকিয়ে রাখা বোমার আঘাতে আহত হওয়ার ঘটনার পুরোনো ভিডিওকে হামাস-ইসরায়েল চলমান সংঘাতের ভিডিও দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত হলে সেবিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, রাফাহ ক্রসিং পয়েন্টে মিসরের ত্রাণ সামগ্রী আটকে পড়ার ঘটনাটি সত্য; কিন্তু উক্ত তথ্যের সাথে প্রচারিত ভিডিওটি পুরোনো এবং বিভ্রান্তিকর।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের সময়ে ফিলিস্তিনে তুরস্কের সেনাবাহিনী আসার নয় বরং চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তুরস্কের ভুমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ট্রাকে করে সেনা সদস্য নিয়ে যাওয়ার ভিডিও উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে Sarı Saçlım Mavi Gözlüm নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি “Biz Ordusu Millet Olan Bir Ülkeyiz.” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot from Facebook
ভিডিওতে থাকা ক্যাপশনটি তুরস্কের ভাষায় লেখা ছিলো এবং ক্যাপশন শেষে তুরস্কের একটি পতাকার ইমোজি দেওয়া ছিলো। তুর্কিশ ভাষায় লেখা ক্যাপশনটির বাংলা অনুবাদ করলে হয় ‘আমরা এমন একটি দেশ যেখানে সেনাবাহিনী একটি জাতি’।
পরবর্তীতে ভিডিওটি নিয়ে অধিকতর অনুসন্ধানে তুরস্ক ভিত্তিক গণমাধ্যম Yeniçağ এর ওয়েবসাইটে “Askerleri deprem bölgesine böyle taşıdılar” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে সংযুক্ত একটি ফিচার ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির একটি দৃশ্যের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison: Rumor Scanner
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, গত ফেব্রুয়ারি মাসে তুরস্কে ভুমিকম্প আঘাত হানার পর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধার কাজের জন্য ট্রাকে করে সামরিক সদস্যরা যাচ্ছিলেন।
পরবর্তীতে তুরস্ক, ফিলিস্তিনে সেনা পাঠাচ্ছে কিনা এই দাবির অনুসন্ধানে তুরস্কের গণমাধ্যম এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে, যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা Reuters এর ওয়েবসাইটে গত ১২ অক্টোবরে “Turkey ready to send Palestinians aid but ‘very difficult’ to deliver” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তুরস্ক ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত ফিলিস্তিনিদের জন্য মানবিক সহায়তা পাঠাতে প্রস্তুত।
এর আগে ১০ অক্টোবরে Reuters এ “Erdogan discusses Israeli-Palestinian conflict with regional leaders -presidency” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট তাইয়্যেপ এরদোগান ফিলিস্তিন, ইসরাইল, ফিলিস্তিন, লেবানন, কাতার এবং মিশরের নেতাদের সাথে ফোনালাপে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে যুদ্ধের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং তুরস্ক ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘর্ষের অবসান ঘটাতে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করতে প্রস্তুত।
অর্থাৎ ভিডিওটি সাম্প্রতিক কোনো ঘটনার নয় এবং এটির সাথে ফিলিস্তিনের বর্তমান পরিস্থিতির কোনো সম্পর্ক নেই।
মূলত, গত ফেব্রুয়ারি মাসে তুরস্কে ভুমিকম্প আঘাত হানার পর সে দেশের সেনা সদস্যরা ট্রাকে করে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধার কাজের জন্য যান। উক্ত ঘটনা নিয়ে সেসময় সেনা সদস্যদের ট্রাকে করে যাওয়ার ভিডিও যুক্ত করে তুরস্কের স্থানীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হয়। তবে সম্প্রতি ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতকে কেন্দ্র করে ঐ ভিডিওকে ফিলিস্তিনে তুরস্কের সেনাবাহিনী আসার দৃশ্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ০৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা শুরু করে। এই হামলার প্রেক্ষিতে ইসরায়েলও হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকায় পাল্টা হামলা চালায়। এতে দেশ দুইটির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাত নতুন মাত্রা পায়৷
উল্লেখ্য, চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইস্যুতে একাধিক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার৷
সুতরাং, ফিলিস্তিনে তুরস্ক সামরিক সদস্য পাঠিয়েছে দাবিতে ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।
চলমান ফিলিস্তিনের হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যকার সংঘাতের মধ্যে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে সামরিক পোশাক পরিহিত কিছু সৈন্যকে দেখা যাচ্ছে। দাবি করা হচ্ছে, এরা রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সদস্য এবং এরা ফিলিস্তিন রওয়ানা দিচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি ফিলিস্তিনে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর রওয়ানা হওয়ার নয় বরং চেচনিয়ার সৈন্যদের পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার দৃশ্যকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটির কিছু কী ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ইউটিউবের একটি চ্যানেলে গত ০৮ জুন প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়, যার সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল লক্ষ্য করা গেছে। ভিডিওটির ক্যাপশনে এই সৈন্যদের ‘চেচেন মুসলিম সৈন্য’ বলে দাবি করা হয়।
Screenshot: YouTube
চেচেন সৈন্যদের পোশাকের (১,২) সাথে ইউটিউবের ভিডিওটিতে প্রচারিত সৈন্যদের আউটফিটের বেশ মিল প্রতীয়মান হয়েছে রিউমর স্ক্যানার টিমের কাছে।
Image comparison: Rumor Scanner
আরও অনুসন্ধান করে ইনস্টাগ্রামের একটি অ্যাকাউন্টে ২০২২ সালের ০৮ মার্চ প্রকাশিত একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই পোস্টের ক্যাপশনেও এই সৈন্যদের চেচেন মুসলিম সৈন্য বলে অভিহিত করা নয়৷
Screenshot: Instagram
রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে ককেশাস পর্বতমালার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্র চেচনিয়া। ১৯৯৬ সালে চেচেন নেতা আসলান মাসখাদভ রাশিয়ার সঙ্গে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেন। এ চুক্তির আওতায় চেচেনরা পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা না পেলেও অধিকতর স্বায়ত্বশাসন লাভ করে। এর অধিকাংশ মানুষই মুসলিম। বর্তমানে চেচনিয়ার ক্ষমতায় আছেন রমজান কাদিরভ।
চলমান সংঘাত শুরুর পর গত ০৮ অক্টোবর টেলিগ্রামে দেওয়া এক বার্তায় কাদিরভ জানান, তিনি ফিলিস্তিনের পক্ষে আছেন এবং এই যুদ্ধের বিরুদ্ধে তার অবস্থান। কাদিরভ এই যুদ্ধ থামাতে শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠানোর প্রস্তাব দেন, যাতে ‘শৃংখলা পুনরুদ্ধার এবং যে কোনো সমস্যা সৃষ্টিকারীদের মোকাবিলা করা যায়।
এই প্রতিবেদন প্রকাশের আগ পর্যন্ত এই প্রস্তাবের বিষয়ে কোনো অগ্রগতির তথ্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত হয়নি।
মূলত, গত ০৭ অক্টোবর থেকে চলমান ফিলিস্তিনের হামাস ও ইসরায়েলের সংঘাতের মধ্যে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দাবি করা হচ্ছে, ফিলিস্তিনে রাশিয়ার সেনাবাহিনী রওয়ানা হওয়ার দৃশ্য এটি। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধান জানা যায়, ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এটির সাথে সাম্প্রতিক সংঘাতের কোনো সম্পর্ক নেই। অন্তত ২০২২ সালের মার্চ থেকে ভিডিওটি ইন্টারনেটে রয়েছে এবং ভিডিওতে দেখানো সৈন্যদের আউটফিটের সাথে চেচেন সৈন্যদের আউটফিটের হুবহু মিল রয়েছে। সে সময় চেচেনরা ইউক্রেনে যুদ্ধে যোগ দিয়েছিল এবং তখন প্রকাশিত এই ভিডিওতেও একই তথ্য দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। তাছাড়া, চেচনিয়ার পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনের শান্তি রক্ষায় বাহিনী পাঠানোর প্রস্তাব দেওয়া হলেও এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
প্রসঙ্গত, চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইস্যুতে একাধিক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার৷
সুতরাং, ফিলিস্তিনে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর রওয়ানা হওয়ার ভিডিও দাবিতে পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার দৃশ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, “পদত্যাগের ঘোষণা দিলো প্রধানমন্ত্রী। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে ফেঁ*সে গেলো প্রধানমন্ত্রী।” শীর্ষক শিরোনাম ও প্রায় সমজাতীয় তথ্যযুক্ত থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের ঘোষণা সংক্রান্ত কোনো ঘটনা ঘটেনি বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় পুরোনো ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ৮ মিনিট ৬ সেকেন্ডের এই ভিডিওটির শুরুতে কয়েকটি সংবাদ প্রতিবেদনের খণ্ডিত অংশের ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করা হয়। উক্ত ভিডিওতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের একটি ছোট ভিডিও ক্লিপ দেখানো হয়। পরবর্তীতে আলোচিত দাবিটি সম্পর্কে দুইটি ভিন্ন ঘটনার ভিডিও দেখানো হয়। ভিডিও দুইটির কোথাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের ঘোষণা সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ভিডিও যাচাই ১
ভিডিওটিতে থাকা তথ্য অনুযায়ী প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতিতে অনুসন্ধানে ২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর মাছরাঙা নিউজ এর ইউটিউব চ্যানেলে “৪ টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীকে পদত্যাগের নির্দেশ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের খণ্ডাংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison : Rumor Scanner
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়,২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর মন্ত্রীসভার এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪ টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন। বৈঠক থেকে বেরিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান।
অর্থাৎ, ওবায়দুল কাদেরের উক্ত ভিডিওটির খণ্ডাংশ কোনো প্রকার প্রাসঙ্গিকতা ছাড়াই আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে।
ভিডিও যাচাই ২
আলোচিত ভিডিওটিতে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন দাবিতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের একটি ভিডিও দেখানো হয়। সেখানে তাকে বলতে শোনা যায়,’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিবেন তার কতজন মন্ত্রী নির্বাচনকালীন সময় প্রয়োজন…।’
উক্ত ভিডিওটি বিশ্লেষণে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতিতে অনুসন্ধানে গত ১৮ অক্টোবর আমাদের সময় পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে “নির্বাচনকালীন মন্ত্রী কতজন,সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সাথে এ নিয়ে সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থাৎ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্যের ভিডিওটিকেও কোনো প্রকার প্রাসঙ্গিকতা ছাড়াই আলোচিত দাবিতে যুক্ত করা হয়েছে।
ভিডিও যাচাই ৩
আলোচিত ভিডিওটির পরবর্তী ভিডিওতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের একটি ভিডিও যুক্ত করা হয়। উক্ত ভিডিওর বিষয়ে অনুসন্ধানে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে সময় টেলিভিশন এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৪ অক্টোবর “শেখ হাসিনা বিদেশে যান দেশের জন্য : ওবায়দুল কাদের। Obaidul Quader। Awami league । Somoy Tv।” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওর খণ্ডাংশের সাথে আলোচিত ভিডিওতে থাকা ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison : Rumor Scanner
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের উক্ত ভিডিওটিতে কোথাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ ঘোষণা করেছেন সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, উপরিউক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটি স্পষ্ট যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ ঘোষণা করেননি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাও পুনর্বহাল করার কোনো ঘটনা ঘটেনি এবং আলোচিত ভিডিওটিতেও এই সংক্রান্ত কোনো তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সহ বিরোধী অনেক রাজনৈতিক দল দীর্ঘদিন ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করে আসছে। তবে এই দাবিকে সবসময় প্রত্যাখ্যান করে আসছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এরই মাঝে সম্প্রতি ‘পদত্যাগের ঘোষণা দিলো প্রধানমন্ত্রী। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে ফেঁ*সে গেলো প্রধানমন্ত্রী।’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই পুরোনো ভিন্ন ঘটনার একাধিক ভিডিও যুক্ত করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়। পাশাপাশি দেশের নির্ভরযোগ্য কোনো গণমাধ্যম সূত্রেও এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, উল্লেখ্য, ২০১১ সালে বাংলাদেশে আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে। পরবর্তীতে এই ব্যবস্থা আর পূর্ণবহাল করা হয়নি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার থাম্বনেইল এবং শিরোনামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক পদত্যাগের ঘোষণা দাবিতে তথ্য প্রচার হলে সেটিকে মিথ্যা প্রমাণ করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক পদত্যাগের ঘোষণা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করা হয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত বিষয়টি মিথ্যা।
সম্প্রতি, গাজার জন্য ২৭ টন ত্রাণ পাঠালো রাশিয়া শীর্ষক শিরোনামে জাতীয় দৈনিক কালবেলার ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ভিডিও প্রতিবেদনের থাম্বনেইলে গাড়িতে করে ত্রাণ বহনের একটি ছবি প্রচার করা হয়েছে।
দৈনিক কালবেলার ফেসবুক পেজে প্রচারিত ভিডিও প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
গণমাধ্যমটির ইউটিউবে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ছবিটি গাজায় রাশিয়ার ত্রাণ পাঠানোর নয় বরং ২০২১ সালের মে মাসে মিশর থেকে গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের জন্য ত্রাণ পাঠানোর ছবিকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছ।
ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে সৌদি আরব ভিত্তিক গণমাধ্যম Arab News এ ২০২১ সালের ২৪ মে “Cairo provides large aid convoy to Gaza” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর থাম্বনেইলের ছবির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Image Compassion: Rumor Scanner
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২১ সালে মে মাসে গাজায় সাহায্য করার জন্য মিশর ‘লং লিভ ইজিপ্ট’ তহবিলের মাধ্যমে আড়াই হাজার টন খাদ্য, ওষুধ, শিশুর দুধ, জামাকাপড়, আসবাবপত্র, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি এবং অন্যান্য উপকরণ বোঝাই ১৩০ টি ট্রাক পাঠায়।
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা ‘Reuters’ এ ২০২১ সালের ১৩ জুলাই “Israel wants voucher system for foreign aid to Gaza – minister” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও একই ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
তবে, তুরষ্ক ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা Anadolu Agency এর ওয়েবসাইটে গত ১৯ অক্টোবরে “Russia to deliver 27 tons of humanitarian aid to Gaza” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে রাশিয়া কর্তৃক গাজাকে ২৭ টন ত্রাণ সাহায্য করার সত্যতা পাওয়া যায়।
মূলত, ২০২১ সালের মে মাসে ফিলিস্তিনকে মানবিক সাহায্যের জন্য মিশর ‘লং লিভ ইজিপ্ট’ তহবিলের মাধ্যমে গাজা উপত্যকায় ১৩০ ট্রাক ত্রাণ পাঠায়। উক্ত ঘটনা নিয়ে সেসময় ত্রাণবাহী গাড়ির ছবি যুক্ত করে মিশরের স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হয়। তবে সম্প্রতি রাশিয়া কর্তৃক ফিলিস্তিনের গাজার স্ট্রিপে ২৭ টন ত্রাণ সাহায্য করার ছবি দাবিতে জাতীয় দৈনিক কালবেলার প্রতিবেদনে ২০২১ সালের মে মাসে ফিলিস্তিনে মিশরের পাঠানো মানবিক সাহায্যের ছবি প্রচার করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ০৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা শুরু করে। এই হামলার প্রেক্ষিতে ইসরায়েলও হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকায় পাল্টা হামলা চালায়। এতে দেশ দুইটির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাত নতুন মাত্রা পায়।
উল্লেখ্য, একই ছবিটিকে মিশর কর্তৃক ফিলিস্তিনে ত্রাণ সহায়তা পাঠানোর সাম্প্রতিক ঘটনা দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হলে তা বিভ্রান্তিকর হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইস্যুতে একাধিক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ফিলিস্তিনের গাজার স্ট্রিপে রাশিয়ার ২৭ টন ত্রাণ সাহায্য পাঠানোর ছবি দাবিতে জাতীয় দৈনিক কালবেলার প্রতিবেদনে ২০২১ সালে ফিলিস্তিনকে মিশরের ত্রাণ সামগ্রী প্রদানের ছবি প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, ফিলিস্তিনের ‘গাজায় একটি বিড়াল! ইসরাইলী বিমান হামলায় শহীদ হওয়াখেলার সাথী ছোট্ট ফিলিস্তিনি বন্ধুকে বিদায় জানাচ্ছে’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের নয়। বরং ২০২১ সালের রাশিয়ান পুরোনো একটি ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে thecatsfervor নামক একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ৪ সেপ্টেম্বর দেওয়া একটি পোস্টে আলোচিত ভিডিওটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Instagram post
তবে ভিডিওটি সম্পর্কে উক্ত পোস্ট থেকে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এই প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, এই ভিডিওটি রাশিয়ান ও সাবেক সোভিয়েতভুক্ত দেশগুলোর একটি সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক VK তে ২০২১ সালের ১৪ এপ্রিল ‘Коська নামক অ্যাকাউন্টে প্রচার করা হয়েছিল।
অনুসন্ধানের এ পর্যায়ে অ্যাকাউন্টটিতে গিয়ে ‘আমরা তাদের (বিড়াল) এবং তাদের প্রকৃত ভালবাসার যোগ্য নই। আমাদের বাচ্চার অসুস্থতার সময় আমাদের বিড়াল তার জন্য খুব চিন্তিত ছিল। বিড়ালটি এক মিনিটের জন্যও আমাদের বাচ্চাকে ছাড়েনি (বাংলায় অনূদিত)।’ শীর্ষক শিরোনামে ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison: Rumor Scanner
অর্থাৎ ভিডিওটি সাম্প্রতিক কোনো ঘটনার নয় এবং এটির সাথে ফিলিস্তিনের কোনো সম্পর্ক নেই।
মূলত, গত ০৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা করলে ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাত নতুন মাত্রা পায়৷ এই সংঘাতকে কেন্দ্র করে ইসরাইয়েলি বিমান হামলায় নিহত ফিলিস্তিনি শিশুকে তার পালিত বিড়াল বিদায় জানাচ্ছে দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সঙ্গে চলমান ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং ভিডিওটি সর্বপ্রথম রাশিয়ান ও সাবেক সোভিয়েতভুক্ত দেশগুলোর একটি সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্কে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।
উল্লেখ্য, চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইস্যুতে একাধিক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার৷
সুতরাং, ২০২১ সালে ধারণকৃত একটি অসুস্থ বাচ্চার প্রতি একটি বিড়ালের স্নেহ দেখানোর পুরানো একটি ভিডিওকে সাম্প্রতিক ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের সময়ের দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।