যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে মির্জা ফখরুল ইসলামের জামিনের দাবিতে মিথ্যা তথ্য প্রচার 

সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ফখরুলের মামলা বাতিল, মুক্তি পেয়ে আসছে মির্জা ফখরুল– শীর্ষক শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ভিডিওটিতে দাবি করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের চাপে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিরুদ্ধে করা মামলা বাতিল হয়েছে এবং তিনি মুক্তি পেয়েছেন।

 মির্জা ফখরুল

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু  ভিডিও পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মুক্তি পাননি এবং যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষও তাঁর মুক্তির বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় পুরোনো একটি ভিডিওর সাথে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটিতে একজন আইনজীবী বক্তব্য দিচ্ছেন। ভিডিওটিতে বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ২৪ এর লোগো দেখা যায়। 

সেই লোগোর সূত্র ধরে অনুসন্ধানে চ্যানেল২৪ এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ৩ জানুয়ারি “যেভাবে জামিন পেলেন মির্জা ফখরুল এবং মির্জা আব্বাস” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

ভিডিওটি থেকে জানা যায়, গত বছরের ৭ ডিসেম্বর পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলায় কারাবন্দী বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে ছয় মাসের জন্য জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। 

একই তথ্যে সংবাদ প্রকাশ করেছিল দেশের অন্যান্য গণমাধ্যমগুলোও। 
সেগুলো দেখন-

অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা আইনজীবীর বক্তব্যটি সাম্প্রতিক নয় বরং গত ৩ জানুয়ারি কারাবন্দী বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস জামিন পাওয়ার সময়কার। 

Video Comparison by Rumor Scanner

এছাড়া, আলোচিত ভিডিওটির সাথে উক্ত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে। 

পরবর্তীতে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মুক্তি পেয়েছেন কিনা এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দৈনিক যুগান্তরে গত ৭ ডিসেম্বর “মির্জা ফখরুলকে জামিন দেননি হাইকোর্ট” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রধান বিচারপতির বাসায় হামলার ঘটনায় রাজধানীর রমনা থানায় করা মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে জামিন দেননি হাইকোর্ট। 

বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) বিচারপতি মো. সেলিম ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

পাশাপাশি, আজ (১৩ ডিসেম্বর) প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে “সাত মামলায় মির্জা ফখরুলের জামিন আবেদন” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পৃথক সাত মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিন আবেদন করা হয়েছে। আজ বুধবার এ আবেদন করা হয় বলে তাঁর আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন জানিয়েছেন।

অর্থাৎ, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখনো মুক্তি পাননি। 

এরপর, বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুক্তির জন্য যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কি না জানতে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানের করে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এসংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

এছাড়া, ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের ফেসবুক পেজওয়েবসাইটেও এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

মূলত, গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনার একটি মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। পরবর্তীতে জামিনের জন্য আবেদন করা হলেও তা নাকজ করে দেয় হাইকোর্ট। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ফখরুলের মামলা বাতিল, মুক্তি পেয়ে আসছে মির্জা ফখরুল– শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে, রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মুক্তি পাননি এবং যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষও তাঁর মুক্তির বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি। প্রকৃতপক্ষে অধিক ভিউ পাবার আশায় পুরোনো একটি ভিডিওর সাথে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্রের চাপে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুক্তি হয়েছে দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img