গরুর মাংস খাওয়া নিয়ে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নামে ভুয়া মন্তব্য প্রচার

দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “আমি হিন্দু গরুর গোস্ত খেয়েছি আরো খাবো। হিন্দু ধর্মে কোথাও লেখা নেই যে গরুর গোস্ত খাওয়া যাবে না। গরুর প্রতি যদি আপনাদের এতো মোহাব্বত থাকে তাহলে গরুর চামড়া দিয়ে জুতা তৈরি করেন কেন? দয়া করে ধর্মের দোহায় দিয়ে সম্প্রদায়ী সন্ত্রাস সৃষ্টি করবেন না।” শীর্ষক একটি মন্তব্যকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

গরুর মাংস

২০১৬ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 
২০১৭ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 
২০১৮ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 
২০১৯ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 
২০২০ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন  এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এবং এখানে (আর্কাইভ)। 
২০২১ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

টিকটকে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “আমি হিন্দু গরুর গোস্ত খেয়েছি আরো খাবো। হিন্দু ধর্মে কোথাও লেখা নেই যে গরুর গোস্ত খাওয়া যাবে না। গরুর প্রতি যদি আপনাদের এতো মোহাব্বত থাকে তাহলে গরুর চামড়া দিয়ে জুতা তৈরি করেন কেন? দয়া করে ধর্মের দোহায় দিয়ে সম্প্রদায়ী সন্ত্রাস সৃষ্টি করবেন না।” শীর্ষক কোনো মন্তব্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেননি বরং ২০১৫ সালে প্রেস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান এবং ভারতের সুপ্রিমকোর্টের সাবেক বিচারপতি মার্কয়েন্ড কাটজুর মন্তব্যের একটি অংশের সাথে অতিরিক্ত কিছু বাক্য জুড়ে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে ছড়ানো হচ্ছে। 

দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে মমতা বন্দোপাধ্যায় এর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টগুলো পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে উক্ত দাবি সম্পর্কিত কোনো মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতিতে অনুসন্ধানে বেসরকারি টিভি চ্যানেল এনটিভির ওয়েবসাইটে ২০১৫ সালের ২২ মে “আমি হিন্দু, গরুর মাংস খেয়েছি, আবার খাব” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot : NTV Online 

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রেস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান এবং ভারতের সুপ্রিমকোর্টের সাবেক বিচারপতি মার্কয়েন্ড কাটজু ‘আমি হিন্দু, আমি গরুর মাংস খেয়েছি এবং আবার খাব। গরুর মাংস খাওয়ায় দোষের কিছু নেই। পৃথিবীর ৯০% মানুষ গরুর মাংস খায়। তারা কি সবাই পাপী? এবং আমি এটা বিশ্বাস করি না, গরু পবিত্র অথবা আমাদের মা। কীভাবে একটি পশু মানুষের মা হতে পারে? এ জন্যই আমি বলি, ৯০ শতাংশ ভারতীয়ই মূর্খ, মি. মুখতার আব্বাস নাকভিসহ।’ শীর্ষক একটি মন্তব্য করেন। 

সার্বিক অনুসন্ধানের ভিত্তিতে ধারণা করা যায় মার্কয়েন্ড কাটজুর উক্ত মন্তব্যর কিছু অংশের সাথে অতিরিক্ত বাক্য জুড়ে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর মন্তব্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এছাড়া অনুসন্ধানে ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান টুডে’র ওয়েবসাইটে ২০১৭ সালের ২৪ এপ্রিল “Mamata: BJP spreading canards that I eat beef, spending crores on social media to tarnish my image” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কলকাতায় অনুষ্ঠিত তৃণমূল কংগ্রেসের সাংগঠনিক নির্বাচন উপলক্ষে দেওয়া বক্তৃতায় গরুর মাংস খাওয়া নিয়ে তাকে জড়িয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মূলত, প্রেস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান এবং ভারতের সুপ্রিমকোর্টের সাবেক বিচারপতি মার্কয়েন্ড কাটজুর একটি মন্তব্যের কিছু অংশের সাথে অতিরিক্ত বাক্য জুড়ে দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘আমি হিন্দু গরুর গোস্ত খেয়েছি আরো খাবো। হিন্দু ধর্মে কোথাও লেখা নেই যে গরুর গোস্ত খাওয়া যাবে না। গরুর প্রতি যদি আপনাদের এতো মোহাব্বত থাকে তাহলে গরুর চামড়া দিয়ে জুতা তৈরি করেন কেন? দয়া করে ধর্মের দোহায় দিয়ে সম্প্রদায়ী সন্ত্রাস সৃষ্টি করবেন না’। এছাড়া দেশীয় কিংবা ভারতীয় কোনো গণমাধ্যমেও বিষয়টির সত্যতা সম্পর্কিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, গরুর মাংস খাওয়া নিয়ে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নামে একটি মন্তব্য দীর্ঘদিন ধরে ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img