সম্প্রতি ‘নবিজীর বাড়ি মুবারক’ শীর্ষক শিরোনামে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর বাড়ির ছবি দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ছবিটি মহানবী (সা:) বাড়ির নয়। প্রকৃতপক্ষে ইরানের মরুভূমিতে অবস্থিত একটি গ্রামের ছবিকে আলোচিত দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতির মাধ্যমে, অনলাইন মিডিয়া শেয়ারিং প্লাটফর্ম ‘WIKIMEDIA COMMONS’ এর ওয়েবসাইটে “Iran – a village in the desert, broken houses after an earthquake in 1968” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনটিতে জায়গাটিকে ইরানের মরুভূমি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মূলত, ৯৯৯ সালের এপ্রিলে ‘Jeanne Menjoulet’ নামের একজন ফটোগ্রাফার কর্তৃক ধারণকৃত ছবিটি ইরানের মরুভূমিতে অবস্থিত একটি গ্রামের যা কিনা ১৯৬৮ সালে ভুমিকম্পের ধ্বংসাবশেষ হিসেবে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের মরুভূমির গ্রামের এই ছবিকেই মহানবী (সাঃ) এর বাড়ির ছবি দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও একই ছবিটি মহানবী (সাঃ) এর বাড়ির ছবি দাবি করা হলে সেসময়ে বিষয়টিকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, তুরস্ক ভ্রমণে বাংলাদেশের নাগরিকদের লাগবে না ভিসা শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং, সৌদি আরব, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ওমানের সাধারণ পাসপোর্টধারী নাগরিকদের ভিসা ছাড়া তুরস্কে ভ্রমণের নতুন সিদ্ধান্তের খবর জানা গেলেও এই তালিকায় বাংলাদেশ নেই৷
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে সৌদি আরবের গণমাধ্যম Saudi Gazette এর ওয়েবসাইটে গত ২৩ ডিসেম্বর Turkiye announces visa exemption for Saudis শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Saudi Gazette
প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে জানা যায়, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান গত ২২ ডিসেম্বর সৌদি আরবসহ ছয়টি দেশের সাধারণ পাসপোর্টধারী নাগরিকদের দেশটিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে ভিসা ছাড় দেওয়ার একটি সিদ্ধান্ত জারি করেছেন। প্রতিবেদনে, ভিসা ছাড় পাওয়া দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কানাডা, বাহরাইন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ওমান। তবে এই তালিকায় বাংলাদেশের নাম পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে একই রকম তথ্য দেখতে পাওয়া যায়।
Screenshot: Daily Sabah
মূলত, গত ২২ ডিসেম্বর সৌদি আরব, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাসহ ছয়টি দেশের নাগরিকদের তুরস্কে ভিসামুক্ত প্রবেশের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে। ফেসবুকের কিছু পোস্টে দাবি করা হয়, এই তালিকায় বাংলাদেশও রয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। উক্ত তালিকায় বাংলাদেশের নাম উল্লেখ নেই।
সুতরাং, ভিসা ব্যতীত তুরস্ক ভ্রমণের সুবিধা পাবার তালিকায় বাংলাদেশের নাম না থাকলেও ফেসবুকের কিছু পোস্টে তালিকায় বাংলাদেশের নাম আছে বলে দাবি করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, ‘সিনেমায় আর অভিনয় করবেন না মাহিয়া’ শীর্ষক শিরোনামে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভি’র আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। ফটোকার্ডটিতে ব্যবহৃত ছবিতে মাহিয়া মাহির পাশে থাকা চশমা পরিহিত একজন ব্যক্তিকে ক্যামেরার উদ্দেশ্যে মধ্যমাঙ্গুলি প্রদর্শন করতে দেখা যায়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ‘সিনেমায় আর অভিনয় করবেন না মাহিয়া’ শীর্ষক শিরোনামে মাহিয়া মাহির সাথে থাকা ব্যক্তির মধ্যমাঙ্গুলি দেখানোর ছবি সম্বলিত ফটোকার্ডটি আরটিভি প্রকাশ করেনি বরং, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আরটিভি’র ফটোকার্ডে থাকা ব্যক্তির ভি চিহ্ন দেখানোর ছবির একটি আঙ্গুল মুছে দিয়ে উক্ত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আরটিভি’র আদলে তৈরি আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে ফটোকার্ডটি প্রচারের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩।
Screenshot: Facebook
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ফটোকার্ডটিতে থাকা তারিখ এবং আরটিভি’র লোগোর সূত্র ধরে আরটিভি’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ২৭ ডিসেম্বর প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করে আমার বাচ্চা হয়ে গিয়েছে, সংসার আছে। আমি এখন… শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Facebook
উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ফটোকার্ডটির সাথে এর শিরোনাম, মাহিয়া মাহির ছবিসহ আনুষঙ্গিক বিষয়বস্তুর মিল রয়েছে। তবে আলোচিত ফটোকার্ডে মধ্যমাঙ্গুলি দেখানো চশমা পরিহিত ব্যক্তিকে আরটিভি কর্তৃক প্রকাশিত ফটোকার্ডে ভিক্টোরি চিহ্ন প্রদর্শন করতে দেখা যায়।
Photocard Comparison by Rumor Scanner
অর্থাৎ, আরটিভির ফটোকার্ডে থাকা ব্যক্তির একটি আঙ্গুল ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় এডিট বা সম্পাদনার মাধ্যমে মুছে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করে তা প্রচার করা হচ্ছে।
পরবর্তীতে উক্ত ছবির সূত্র অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে দৈনিক করতোয়া-এর ওয়েবসাইটে গত ১৮ ডিসেম্বর ট্রাক নিয়ে নির্বাচনি মাঠে মাহি শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Daily Karatoa
প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আরটিভি’র ফটোকার্ডে ব্যবহৃত ছবিটির সাথে উক্ত প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবির বেশ মিল রয়েছে। উক্ত প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবিতে মাহির সাথে একই হলুদ রঙের ট্রাক দেখা যাচ্ছে। এছাড়াও তার পোশাক এবং আশেপাশের মানুষজনের মিল রয়েছে।
Image Comparison by Rumor Scanner
ছবিটিতে আলোচিত ফটোকার্ডে মধ্যমাঙ্গুলি দেখানো চশমা পরিহিত ব্যক্তিরও অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। তবে এখানে তাকে ভিক্টোরি চিহ্ন-ই প্রদর্শন করতে দেখা যায়।
Screenshot: Daily Karatoa
এছাড়াও প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, গত ১৮ ডিসেম্বর সারা দেশের রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেন। উক্ত ছবিটি সেদিন সকালে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির ট্রাক প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর গণমাধ্যমকে জানানোর সময় তোলা হয়েছে।
মূলত, গত ২৬ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার গোগ্রাম ইউনিয়নে যান চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। এসময় এক নারী ভোটারের তাকে উদ্দেশ্য করে বলা ‘ভোটের পর নেতারা দেশ ছাড়া হয়ে যায়, এটা আমরা কিন্তু দেখবো না! ভোটার আগে যেভাবে মানুষের কাছে যাচ্ছেন, ভোটের পরেও যেন এমনই দেখি!’ শীর্ষক কথার প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘আমি তো আর সিনেমা করবো না, আমার বাচ্চা হয়ে গেছে, সংসার আছে। আমি এখন আপনাদের নিয়ে থাকব।’ চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির উক্ত বক্তব্যের প্রেক্ষিতে প্রায় সকল দেশীয় গণমাধ্যমই সংবাদ প্রকাশ করে। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভিও উক্ত ঘটনায় তাদের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে মাহিয়া মাহি ও তার কর্মী-সমর্থকসহ একটি ছবি সম্বলিত ফটোকার্ড প্রকাশ করে। যেখানে মাহি ও তার কর্মীদের ভিক্টোরি চিহ্ন প্রদর্শন করতে দেখা যায়। কিন্তু সম্প্রতি, উক্ত ফটোকার্ডের ছবিতে থাকা এক চশমা পরিহিত কর্মীর একটি আঙ্গুল ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় এডিট বা সম্পাদনার মাধ্যমে মুছে দিয়ে মধ্যমাঙ্গুলি দেখাচ্ছে এমন ভঙ্গিতে উপস্থাপন করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করে তা প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, আরটিভি’র ফটোকার্ডে ব্যবহৃত ছবিতে মাহিয়া মাহির সাথে থাকা একজন কর্মী মধ্যমাঙ্গুলি দেখাচ্ছে দাবিতে একটি ফটোকার্ড প্রচার করা হচ্ছে; যা এডিটেড বা বিকৃত।
সম্প্রতি, সেনাবাহিনী মাঠে নেমেই কাদেরকে গ্রেফতার নির্বাচন বন্ধের চিঠি পাঠালেন যুক্তরাষ্ট্র্র্র শীর্ষক শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।
উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ২৭ হাজার বার। ভিডিওটিতে প্রায় চার হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী কর্তৃক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে গ্রেপ্তার করেনি এবং যুক্তরাষ্ট্রও নির্বাচন বন্ধের কোনো চিঠি পাঠায়নি। প্রকৃতপক্ষে অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
ভিডিও যাচাই ০১
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায় ৯ মিনিট ৪ সেকেন্ডের ভিডিওটির শুরুতে দেশিয় বেসরকারি ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম এটিএন নিউজ এরএকটি সংবাদ প্রতিবেদন লক্ষ্য করা যায়।
পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বেসরকারি ইলেকট্রনিক মিডিয়া ATN News এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৭ ডিসেম্বরে “আগামী সংসদে কারা হবে বিরোধী দল জানতে চায় বিদেশিরা” শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদনের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison: Rumor Scanner
ভিডিও থেকে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদে বিরোধী দল কারা সে বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধি দলের সদস্যরা জানতে চেয়েছেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গত ২৬ ডিসেম্বর ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের তেজগাঁও কার্যালয়ে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।
ভিডিও যাচাই ০২
প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ অনুসন্ধান করে, বেসরকারি ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম Bangla Vision এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৯ সালের ৮ নভেম্বর “ছোট কোন ঘটনা থেকেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হবে: মওদুদ” শীর্ষক শিরোনামে একটি সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
এর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison: Rumor Scanner
ভিডিও থেকে জানা যায়, সরকার পতন এখন সময়ের ব্যাপার, ছোট যেকোনো ঘটনা থেকে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হবে জানান বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।
সেদিন জাতীয় প্রেসক্লাবে অবিভক্ত ঢাকার নির্বাচিত মেয়র ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা মৃত্যুতে আয়োজিত এক স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিলে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সেনাবাহিনী কর্তৃক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গ্রেপ্তার হওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন বন্ধের চিঠি পাঠানোর প্রেক্ষিতে দেশিয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কোনো গ্রহণযোগ্য তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার দাবিতে বিএনপি- জামায়াতসহ আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের তথ্যের প্রচার হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে সেনাবাহিনী কর্তৃক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গ্রেপ্তার হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন বন্ধের চিঠি পাঠিয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সেনাবাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার হননি এবং যুক্তরাষ্ট্রও নির্বাচন বন্ধের কোনো চিঠি দেয়নি।
প্রকৃতপক্ষে, ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের দেওয়া এক বক্তব্যের ভিত্তিতে প্রচারিত সংবাদের অংশ এবং গত ২৬ ডিসেম্বরে বিরোধী দল কারা হবে ওবায়দুল কাদেরের কাছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) এ তথ্য জানতে চাওয়ার ভিডিও একত্রে যুক্ত করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী কর্তৃক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গ্রেপ্তার এবং যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন বন্ধের জন্য চিঠি দিয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
গত ২৭ ডিসেম্বর Media Cell 24 নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘ভোট চাইতে গিয়ে গণধোলাইয়ের শিকার সাকিব, সারাদেশে এমপি মন্ত্রীদের ঝাড়ু পেটা করলো জনগন’ শীর্ষক শিরোনাম ও ‘ভোট চাইতে গিয়ে গণধোলাই খেলো সাকিব, সারাদেশে এমপি মন্ত্রীদের ঝাড়ু পেটা করলো’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার বার। ভিডিওটিতে প্রায় এক হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে। ভিডিওটি’র মন্তব্যঘর ঘুরে উক্ত দাবির পক্ষে নেটিজেনদের বিভিন্ন মন্তব্য করতে দেখা গেছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশের ক্রিকেটার ও মাগুরা-১ আসনের নৌকার প্রার্থী সাকিব আল হাসান ভোট চাইতে গিয়ে গণধোলাইয়ের শিকার হননি এবং সারাদেশে জনগণের হাতে এমপি-মন্ত্রীদের ঝাড়ু পেটার শিকার হওয়ার দাবিটিও সঠিক নয় বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ভিডিও ক্লিপ নিয়ে তৈরি একটি বিস্তারিত ভিডিও। তবে উক্ত ভিডিওটি’র কোথাও সাকিবের ওপর হামলার দৃশ্য দেখানো হয়নি কিংবা এসম্পর্কিত কোনো তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। তাছাড়া জনগণ কর্তৃক সারাদেশে এমপি-মন্ত্রীদের ঝাড়ু পেটা শীর্ষক দাবির পক্ষেও ভিডিওটি’র বিস্তারিত অংশে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওটি’র শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে উল্লেখিত দাবিগুলোর সাথে ভিডিওটি’র বিস্তারিত অংশের অমিল রয়েছে। আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত ভিডিও ক্লিপগুলোর বিষয়ে আলাদা আলাদাভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
ভিডিও যাচাই- ০১
আলোচিত ভিডিওটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘সময় টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৭ ডিসেম্বর ‘ভোটে বিএনপির না থাকা নিয়ে যা বললেন সাকিব’ শীর্ষক শিরোনামে সাকিব আল হাসানের বক্তব্য নিয়ে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
এই ভিডিওটি’র সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে দেখানো সাকিব আল হাসানের বক্তব্যের অংশের ভিডিও ক্লিপের মিল পাওয়া যায়।
Video Comparison by Rumor Scanner
অর্থাৎ, এই ভিডিওটি’র সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত দাবির কোনো মিল নেই।
ভিডিও যাচাই- ০২
আলোচিত ভিডিওটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘যমুনা টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৫ ডিসেম্বর ‘শত শত নারী ঝাড়ু নিয়ে ধাওয়া করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
সেখানে উল্লেখিত বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, ভিডিওটি গত ২৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম -১২ সংসদীয় আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর সমর্থকদের আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী কর্তৃক ঝাড়ু নিয়ে ধাওয়া করার ঘটনায় ধারণকৃত।
এই ভিডিওটি’র সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে এক নারীর ঝাড়ু হাতে একদল লোককে ধাওয়া করার ভিডিও ক্লিপটি’র মিল পাওয়া যায়।
Video Comparison by Rumor Scanner
অর্থাৎ, এই ভিডিওটি সারাদেশে জনগণ কর্তৃক এমপি-মন্ত্রীদের ঝাড়ু পেটার কোনো ঘটনার নয়।
এছাড়াও, মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এখন পর্যন্ত সাকিব আল হাসান ভোট চাইতে গিয়ে গণধোলাইয়ের শিকার কিংবা সারাদেশে জনগণের হাতে এমপি মন্ত্রীদের ঝাড়ু পেটার শিকার হওয়ার দাবিগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়নি।
মূলত, বাংলাদেশের ক্রিকেটার ও বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাগুরা-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। গত ২৭ ডিসেম্বর Media Cell 24 নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘ভোট চাইতে গিয়ে গণধোলাইয়ের শিকার সাকিব, সারাদেশে এমপি মন্ত্রীদের ঝাড়ু পেটা করলো জনগন’ শীর্ষক শিরোনাম ও ‘ভোট চাইতে গিয়ে গণধোলাই খেলো সাকিব, সারাদেশে এমপি মন্ত্রীদের ঝাড়ু পেটা করলো’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিগুলো সঠিক নয়। মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে আলোচিত দাবিগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, আগামী ৭ জানুয়ারি রোববার ভোটগ্রহণের দিন রেখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। গত ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষনে এই ঘোষণা দেন তিনি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও হাসান মাহমুদকে জুতা পেটা এবং ওবায়দুল কাদেরকে গণধোলাইয়ের ভুয়া দাবি প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ভোট চাইতে গিয়ে সাকিব আল হাসান গণধোলাইয়ের শিকার এবং সারাদেশে জনগণের হাতে এমপি মন্ত্রীদের ঝাড়ু পেটার শিকার হওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, “গভীর রাতে ডিবির হাতে গ্রেফতার যুবদলের ১১ জন সকালেই লাঠিসোঁটা নিয়ে যুদ্ধে নামলো” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। ভিডিওটির থাম্বনেইলে দাবি করা হচ্ছে, গভীর রাতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং লাঠিসোঁটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাড়ি ঘেরাও করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিএনপির অঙ্গসংগঠনের ১১ জন নেতাকর্মী গ্রেফতারের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন ঘেরাও করার কোনো ঘটনা ঘটেনি এবং রুহুল কবির রিজভীও গ্রেফতার হননি বরং কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি সংবাদপাঠের ভিডিওর খণ্ডাংশ এবং ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।
উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison: Rumor Scanner
উক্ত ভিডিওর বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, গত ২৪ ডিসেম্বর মহেশখালীতে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধ সমর্থনে সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি নেতা আলমগীর মুহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ এর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
অর্থাৎ, উক্ত ভিডিও দুইটি অপ্রাসঙ্গিকভাবে আলোচিত ভিডিওর সাথে জুড়ে দিয়ে প্রচার করা হয়েছে।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি খোরশেদ আলমসহ ১১ জনকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বরাত দিয়ে উক্ত প্রতিবেদনে জানানো হয়, আটক ব্যক্তিরা নির্বাচন বানচাল করার লক্ষ্যে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণসহ বিভিন্ন ধরনের নাশকতার পরিকল্পনায় জড়িত।
এছাড়াও, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকে বিএনপির অঙ্গসংগঠনের ১১ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতারের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও করা এবং বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর গ্রেফতারের সত্যতা জানা যায়নি।
মূলত, নাশকতার পরিকল্পনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত ২৭ ডিসেম্বর বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের ১১ নেতা-কর্মীকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এ ঘটনার প্রেক্ষিতেই “গভীর রাতে ডিবির হাতে গ্রেফতার যুবদলের ১১ জন সকালেই লাঠিসোঁটা নিয়ে যুদ্ধে নামলো” শীর্ষক শিরোনামে এবং গভীর রাতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং লাঠিসোঁটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাড়ি ঘেরাও করা হয়েছে শীর্ষক থাম্বনেইলের মাধ্যমে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিগুলো সঠিক নয়। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও হয়নি এবং রিজভীও গ্রেফতার হননি। অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ভিডিওর খণ্ডাংশ যুক্ত করে করে তাতে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবির ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, ছাত্রদলের ১১জন নেতাকর্মী ও বিএনপি গ্রেফতারের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন ঘেরাও রুহুল কবির রিজভী গ্রেফতার করা হয়েছে শীর্ষক দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও নৃত্যশিল্পী শান্তি রহমান নাজিয়ার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে যাতে দেখা যাচ্ছে, ব্যাকগ্রাউন্ডের কর্কশিটে ‘শান্তির গোয়া হলুদ’ লেখা।
ছবিটির মন্তব্যের ঘরে উক্ত ছবির সত্যতা নিয়ে বেশ কয়েকজনের সংশয় প্রকাশ করার পাশাপাশি অনেককে বিভ্রান্ত হতেও দেখা যায়।
Image Collage by Rumor Scanner
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে তোলা শান্তি রহমান নাজিয়ার ছবিতে ‘গোয়া হলুদ’ লেখা ছিল না বরং, শান্তির পেজে প্রকাশিত মূল ছবিতে ‘গায়ে হলুদ’ লেখা ছিল।
অনুসন্ধানের শুরুতে শান্তি রহমান নাজিয়ার ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে উক্ত পেজে গত ২৬ ডিসেম্বর Finally! (আর্কাইভ) শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Facebook
ছবিটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উক্ত ছবিতে শান্তি রহমান নাজিয়ার পোশাক এবং আনুষঙ্গিক বিষয়বস্তুর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিতে তার পরিহিত শাড়ি এবং আনুষঙ্গিক বিষয়বস্তুর মিল রয়েছে।
Image Comparison by Rumor Scanner
এছাড়াও তার পেছনে ‘শান্তির গায়ে হলুদ’ লেখা সম্বলিত একটি কর্কশিট বোর্ড দেখা যায়। যার সাথে আলোচিত কর্কশিট বোর্ডের ডিজাইনের মিল রয়েছে।
পরবর্তীতে তার ফেসবুক পেজটি পর্যালোচনা করে গত ২৪ ডিসেম্বর Last night was fab! (আর্কাইভ) শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত আরেকটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Facebook
উক্ত ছবিটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটির সাথে উক্ত ছবির মিল রয়েছে।
Image Comparison by Rumor Scanner
আলোচিত ছবিতে থাকা দুজন ছেলে এবং শান্তি রহমান নাজিয়ার সাথে থাকা নারীর মিল পাওয়া যায়। তবে আলোচিত ছবিটিতে তাদের পেছনে থাকা কর্কশিট বোর্ডের লেখার পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।
আলোচিত ছবিটির কর্কশিট বোর্ডের ‘শান্তির গোয়া হলুদ’ লেখাটির পরিবর্তে উক্ত ছবিতে বোর্ডে ‘শান্তির গায়ে হলুদ’ লেখা দেখতে পাওয়া যায়।
মূলত, কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও নৃত্যশিল্পী শান্তি রহমান নাজিয়া তার ফেসবুক পেজে সম্প্রতি গায়ে হলুদের কিছু ছবি পোস্ট করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সে ছবিতে থাকা গায়ে হলুদের কর্কশিট বোর্ড ডিজাইনে ‘শান্তির গোয়া হলুদ’ লেখা সম্বলিত একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গায়ে হলুদের কর্কশিট বোর্ডে ‘শান্তির গোয়া হলুদ’ লেখা সম্বলিত প্রচারিত ছবিটি আসল নয়। প্রকৃতপক্ষে, তার পেজ থেকে উক্ত প্রোগামের একটি ছবি সংগ্রহ করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে ‘শান্তির গায়ে হলুদ’ লেখাটির স্থানে ‘শান্তির গোয়া হলুদ’ লেখাটি যুক্ত করে আলোচিত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।
সুতরাং, গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও নৃত্যশিল্পী শান্তি রহমান নাজিয়ার তোলা ছবিতে কর্কশিট বোর্ডে ‘শান্তির গোয়া হলুদ’ লেখা সম্বলিত ছবিটি এডিটেড বা বিকৃত।
সম্প্রতি, “খালেদা জিয়ার কাছে ক্ষমাচেয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দিলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা | Khaleda Zia |BD Politics” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কাছে ক্ষমা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ঘোষণা করেননি বরং কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি সংবাদপাঠের ভিডিওর খণ্ডাংশ এবং ভিন্ন ভিন্ন দুটি ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।
উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Comparison By Rumor Scanner
উক্ত ভিডিওর বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালে রাজধানীতে ছাত্রদলের ৩৯ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে বক্তব্য প্রদান করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
অর্থাৎ, উক্ত ভিডিওটি অপ্রাসঙ্গিকভাবে আলোচিত ভিডিওতে যুক্ত করে প্রচার করা হয়েছে।
উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Comparison By Rumor Scanner
উক্ত ভিডিও থেকে জানা যায়, রাজশাহী আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত নেতাদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে অংশ নেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। উক্ত ভিডিওটি ২০১৫ সালের সে অনুষ্ঠানেই ধারণকৃত।
অর্থাৎ, ভিডিওটি অপ্রাসঙ্গিকভাবে আলোচিত ভিডিওর সাথে যুক্ত করে প্রচার করা হয়েছে।
এছাড়াও, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম কিংবা কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে আলোচিত দাবির সত্যতা জানা যায়নি।
মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন গ্রহণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি এবং সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছে। এসব ঘটনায় প্রতিদিনই বিভিন্ন ধরনের তথ্য ইন্টারনেটে প্রচারিত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় “খালেদা জিয়ার কাছে ক্ষমাচেয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দিলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা” দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিটি সঠিক নয়। অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ভিডিওর খণ্ডাংশ যুক্ত করে করে তাতে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবির ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, “তাহলে শিক্ষার্থীরা পেন্সিল দিয়ে লিখবে নাকি?” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভিডিওটিতে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিকে “মোবাইল ফোন বা ইলেকট্রনিক কোনো ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। সেটি যেকোনো ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস হোক না কেনো, ঘড়ি, ক্যালকুলেটর, কলম যেকোনো ধরনের।” শীর্ষক মন্তব্য করতে দেখা যায়।
গত ১০ ডিসেম্বর Viral Topics নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও (আর্কাইভ) এখন অবধি প্রায় ২ লক্ষ ৬৭ হাজারেরও অধিক বার দেখা হয়েছে। আড়াই হাজার রিয়্যাক্ট পাওয়া এই রিল ভিডিওটি শেয়ার করেছেন ৩৪৯ জন মানুষ।
এর আগে শিক্ষামন্ত্রীর একই মন্তব্যযুক্ত ভিন্ন একটি ভিডিও “পেন্সিল দিয়ে লিখতে হবে এবার SSC পরীক্ষায়” শীর্ষক শিরোনামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল।
গত মার্চে Mahim Hasan নামের একটি টিকটক আইডি থেকে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও (আর্কাইভ) এখন অবধি প্রায় ২২ লক্ষ বার দেখা হয়েছে। ভিডিওটি এখন পর্যন্ত ২ লক্ষ ৪০ হাজারেরও অধিক মানুষ লাইক দিয়েছেন।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সাধারণ কলম বা বল পয়েন্ট কলম নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে না শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি বরং তিনি বলেছেন, ইলেকট্রনিক কলম, ইলেকট্রনিক ঘড়ি, ইলেকট্রনিক ক্যালকুলেটর নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে না। ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার নিয়মাবলি ঘোষণা নিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে করা তার একটি মন্তব্যের খণ্ডাংশ বিভ্রান্তিকরভাবে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
৬ মিনিটের উক্ত ভিডিওটির সাথে দাবিকৃত ভিডিওটির তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ভিডিও দুইটি একই দিনের হলেও দুইটি ভিডিও ভিন্ন দুইটি কোণ থেকে ধারণকৃত। এছাড়া দুইটি ভিডিওতেই শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিকে একই ধরনের অঙ্গভঙ্গি করতে দেখা যায়। তবে ভিডিও দুইটির অডিওর মিল পাওয়া যায়নি।
দাবিকৃত ভিডিওতে শিক্ষামন্ত্রীকে পরীক্ষা বিষয়ক নির্দেশনা দিতে শোনা গেলেও কালবেলার সম্পূর্ণ ভিডিওতে শিক্ষামন্ত্রীকে পরীক্ষা সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা প্রদান করতে শোনা যায়নি।
পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভির অনলাইন সংস্করণে একই তারিখে “শিক্ষাঙ্গন নিয়ে কথা বলার যোগ্যতা নেই বিএনপির : দীপু মনি” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেদিন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের উদ্বোধন করেন। উক্ত প্রতিবেদনেও পরীক্ষার নির্দেশনা সংক্রান্ত শিক্ষামন্ত্রীর কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
একই বিষয়ে আরো একাধিক মূলধারার গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও ভিডিও খুঁজে বের করা হয়। তবে সেসব প্রতিবেদন ও ভিডিওতে পরীক্ষার নির্দেশনা সংক্রান্ত শিক্ষামন্ত্রীর কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
দ্বিতীয় ভিডিও যাচাই
এডভান্স কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভির ফেসবুক পেজে ২০২১ সালের ২১ অক্টোবর ‘জেনে নিন এবারের এসএসসি পরীক্ষার নিয়মাবলি’ শীর্ষক শিরোনামে ৬ মিনিট ২১ সেকেন্ডের মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ভিডিওটির ৫৭ সেকেন্ড থেকে শুরু করা শিক্ষামন্ত্রীর মন্তব্যের সাথে দাবিকৃত ভিডিওটির মিল রয়েছে।
মূল ভিডিওটিতে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “কেন্দ্র সচিব ব্যতীত অন্য কেউ মোবাইল ফোন বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। সেটি যেকোনো ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস হোক না কেনো ঘড়ি, ক্যালকুলেটর, কলম যেকোনো ধরনের। আবার এখন অনেক ধরনের অত্যাধুনিক ডিভাইস আছে, কোনো ধরনের কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করা যাবে না। শুধু কেন্দ্র সচিব মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। তবে সেই ফোনটিও একটা বেসিক ফিচার ফোন, যাতে ছবি তোলা যায় না এমন ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। শুধু একটি ফোন কেন্দ্র সচিবের কাছে থাকবে। এছাড়া অন্য কোনো ফোন বা কোনো ডিজিটাল ডিভাইস বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস কেউ সঙ্গে নিয়ে কেন্দ্রে ঢুকতে পারবেন না।”
অর্থাৎ, ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার নিয়মাবলি সংক্রান্ত একটি প্রেস ব্রিফিংয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির করা মন্তব্যের খণ্ডাংশ নিয়ে দাবিকৃত দ্বিতীয় ভিডিওটি তৈরি করা হয়। অন্যদিকে ২০২৩ সালের ১৯ আগস্ট যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের উদ্বোধনের পর সাংবাদিকদের সাথে আলোচনার একটি ভিডিওর সাথে ২০২১ সালের উক্ত প্রেস ব্রিফিংয়ের ভিডিওর অডিও অংশ জুড়ে দিয়ে দাবিকৃত প্রথম ভিডিওটি তৈরি করা হয়।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির মন্তব্য
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সম্পূর্ণ মন্তব্য শুনলে বুঝা যায়, তিনি ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার না করার উপর জোর দিতে গিয়েই এই কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘যেকোনো ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস হোক না কেনো ঘড়ি, ক্যালকুলেটর, কলম যেকোনো ধরনের। আবার এখন অনেক ধরনের অত্যাধুনিক ডিভাইস আছে, কোনো ধরনের কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করা যাবে না।’ দীপু মনি সাধারণ কলম অর্থাৎ বল পয়েন্ট কলম নিয়ে এই মন্তব্য করেননি।
বোর্ড পরীক্ষায় ইলেকট্রনিক ডিভাইস সংক্রান্ত নির্দেশনা
মূলধারার অনলাইন গণমাধ্যম বিডিনিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের ১৩ নভেম্বর ‘এসএসসি: কোভিডের বাড়তি সতর্কতায় রোববারের অপেক্ষা’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে পরীক্ষায় যেসব নিয়ম মানার কথা উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্যে একটি হলোঃ
“কেন্দ্র সচিব ছাড়া অন্য কেউ মোবাইল ফোন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। শুধু কেন্দ্র সচিব মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন, তবে ‘ছবি তোলা যায় না’- এমন ফোনই তিনি ব্যবহার করবেন।”
মূলধারার আরেকটি অনলাইন গণমাধ্যম ঢাকা পোস্টের ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ২৯ এপ্রিল এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ‘প্রশ্নফাঁস ও গুজব ঠেকাতে যেসব পদক্ষেপ’ শীর্ষক শিরোনামের নিচে উল্লেখ করা একটি পদক্ষেপ হলোঃ
“কেন্দ্র সচিব ছবি তোলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধাবিহীন একটি সাধারণ (ফিচার) ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। কেন্দ্র সচিব ব্যতীত পরীক্ষা কেন্দ্রে অন্য কেউ মোবাইল ফোন বা অননুমোদিত ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবেন না।”
এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ওয়েবসাইটে খুঁজে পাওয়া পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল ফোন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার সংক্রান্ত ২০১৯ সালের একটি নির্দেশনায়ও একই তথ্য পাওয়া যায়।
অর্থাৎ, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির মন্তব্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে উক্ত দাবিগুলো ছড়ানো হয়েছে।
মূলত, ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার নিয়মাবলি ঘোষণা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি একটি প্রেস ব্রিফিং করেন। প্রেস ব্রিফিংয়ে ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্র প্রবেশ না করার নির্দেশনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘যেকোনো ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস হোক না কেনো ঘড়ি, ক্যালকুলেটর, কলম যেকোনো ধরনের। আবার এখন অনেক ধরনের অত্যাধুনিক ডিভাইস আছে, কোনো ধরনের কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করা যাবে না।’ এই মন্তব্যের খণ্ডাংশ ‘তাহলে শিক্ষার্থীরা পেন্সিল দিয়ে লিখবে নাকি?’ এবং ‘পেন্সিল দিয়ে লিখতে হবে এবার SSC পরীক্ষায়’ শীর্ষক শিরোনামে ভুলভাবে উপস্থাপন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়। তবে শিক্ষামন্ত্রীর সম্পূর্ণ মন্তব্য এবং বোর্ড পরীক্ষায় ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার সংক্রান্ত নির্দেশনা থেকে এটি নিশ্চিত যে শিক্ষামন্ত্রী সাধারণ বল পয়েন্ট কলম নিয়ে এই মন্তব্য করেননি। তার মন্তব্যটি মূলত ইলেকট্রনিক ডিভাইস অর্থাৎ, ইলেকট্রনিক ঘড়ি, ইলেকট্রনিক ক্যালকুলেটর এবং ইলেকট্রনিক কলম নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ সংক্রান্ত।
সুতরাং, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির মন্তব্যকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “তাহলে শিক্ষার্থীরা পেন্সিল দিয়ে লিখবে নাকি?” এবং “পেন্সিল দিয়ে লিখতে হবে এবার SSC পরীক্ষায়” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত ভিডিওগুলো বিভ্রান্তিকর।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এটি লাইলি-মজনুর আসল ছবি নয় বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সাধারণ দুইজন মানুষের ছবি সংযুক্ত করে আলোচিত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে লাইলি-মজনু দাবিতে প্রচারিত ছবিতে থাকা পুরুষের ছবি রিভার্স ইমেজ সার্চে খুঁজে পাওয়া না গেলেও আলোচিত নারীর ছবিটি উইকিমিডিয়া কমনসে খুঁজে পাওয়া যায়। যেটিকে এডিটের মাধ্যমে কিছুটা পরিবর্তন করে তৈরি করা হয়েছে।
মূলত, ৫ম শতাব্দী থেকে লাইলি-মজনুর প্রেমকথা বেদুইন জনপদে প্রচলিত একটি জনপ্রিয় উপকথা। নাজামি গাজনবী নামে এক পার্সিয়ান কবি এই ভালোবাসার গল্পে মুগ্ধ হয়ে একটি মহাকাব্য রচনা করেছিলেন। পরবর্তীতে সেটিই বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়ে লাইলি-মজনুর প্রেম-কাহিনী হিসেবে পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সাধারণ দুইজন নারী-পুরুষের ছবিকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় একত্রিত করে লাইলি-মজনুর আসল ছবি দাবি করে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও একই দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টিকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।