সম্প্রতি, ইউটিউবে প্রকাশিত একটি ভিডিওর মাধ্যমে দাবি করা হয়েছে যে, ভোটের মাঠে নেমেই তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ জুতা পেটার শিকার হয়েছেন এবং নির্নাচনী প্রচারণার মঞ্চে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে গণধোলাই দেওয়া হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ৫১ হাজার বার। ভিডিওটিতে প্রায় দেড় হাজারের বেশি পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটির টাইটেল এবং থাম্বনেইলে ভোটের মাঠে নেমে তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদের জুতা পেটা খাওয়া এবং ওবায়দুল কাদেরের গণধোলাই খাওয়ার দাবি করা হলেও ভিডিওতে ভিন্ন ব্যক্তি ও ঘটনার ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
ভিডিও যাচাই ০১
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ৮ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের ভিডিওটির শুরুতে মঞ্চে থাকা একজন ব্যক্তিকে জুতা দিয়ে আঘাত করা হচ্ছে তবে মঞ্চে থাকা ব্যানারে মোরশেদ নামক লেখা দেখা যায়।
পরবর্তীতে উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে Independent TV এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৬ ডিসেম্বর “অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিও প্রতিবেদনের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

ভিডিও থেকে জানা যায়, নোয়াখালী-২ আসনে নৌকার প্রার্থী মোরশেদ আলমের পথসভা চলাকালে তাকে আলাউদ্দিন আলু নামে এক ব্যক্তি জুতা ছুঁড়ে মারে।
অর্থাৎ, তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদকে নয়, নোয়াখালী-২ আসনে নৌকার প্রার্থী মোরশেদ আলমকে জুতা ছোঁড়ার ঘটনা ঘটেছে।
ভিডিও যাচাই ০২
প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে Times Report নামক ফেসবুক পেজে গত ২৫ ডিসেম্বরে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিও প্রতিবেদনের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

ভিডিও থেকে জানা যায়, গত ২৫ ডিসেম্বর নীলফামারী- ৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির প্রার্থী মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল ভোট চাইতে গেলে জনগণের তোপের মুখে পড়েন।
তবে উক্ত ভিডিওর কোথাও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে লাঞ্ছিত করার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনী প্রচারণার সময়ে তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদের জুতা পেটা খাওয়া এবং ওবায়দুল কাদেরকে গণধোলাই খেয়েছেন দাবিতে দেশিয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার দাবিতে বিএনপি- জামায়াতসহ আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের তথ্যের প্রচার হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ জুতা পেটা এবং ওবায়দুল কাদের গণধোলাই খেয়েছেন দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দুই নেতার বিষয়ে প্রচারিত তথ্যগুলো সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, গত ২৬ ডিসেম্বর নোয়াখালী-২ আসনে নৌকার প্রার্থী মোরশেদ আলমের পথসভা চলাকালীন সময়ে আলাউদ্দিন আলু নামে এক ব্যক্তি তাকে জুতা ছুঁড়ে মারে। এছাড়া, গত ২৫ ডিসেম্বরে নীলফামারী-৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল ভোট চাইতে গেলে জনগণের তোপের মুখে পড়েন। এই দুই ঘটনার ভিডিও ব্যবহার করে উক্ত দাবিগুলো প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ জুতা পেটা খেয়েছেন এবং ওবায়দুল কাদের গণধোলাই এর শিকার হওয়ার দাবিতে ইন্টারনেটে ভিন্ন ব্যক্তি এবং ঘটনার একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Independent TV – অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ
- Times Report – Facebook Post
- Rumor Scanner’s own analysis