Home Blog Page 527

প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ এবং সেনাবাহিনীর ক্ষমতা আসা নিয়ে গুজব

সম্প্রতি, হাসিনার উপর ক্ষেপলো পুলিশ-সেনাবাহিনী, ক্ষমতায় আসলো সেনাবাহিনী। হাসিনার পদত্যাগ– শীর্ষক শিরোনামে এবং হাসিনার গলায় পাড়া দিয়ে ক্ষমতায় আসলো সেনাবাহিনী– শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ভিডিওটিতে দাবি করা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর সেনাবাহিনী এবং পুলিশ ক্ষেপেছে। শেখ হাসিনার পদত্যাগ করেছে এবং সেনাবাহিনী ক্ষমতায় এসেছে। 

প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন এবং সেনাবাহিনী ক্ষমতা আসার দাবিগুলো সঠিক নয় বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিওটিতে তিনজন সংবাদ উপস্থাপকের সংবাদ পাঠ করার ভিডিও ক্লিপ রয়েছে। এছাড়া, সেনাপ্রধান এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ এবং জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামালকেও বক্তব্য দিতে দেখা যায়। 

ভিডিও যাচাই- ১

আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, একজন সংবাদ উপস্থাপক সংবাদ পাঠ করছেন। উপস্থাপকের বক্তব্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে যমুনা টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে গতবছরের ১৬ নভেম্বর “বহিরাগত হুমকি মোকাবেলায় সেনা সদস্যদের সদা প্রস্তুত থাকার নির্দেশ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। (আর্কাইভ

Video Comparison: Rumor Scanner 

উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে। 

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, চট্টগ্রাম সেনানিবাসের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারে কালার প্রদান অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ সবাইকে পেশাদারিত্বের প্রত্যাশিত মান অর্জনের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক যে কোনো হুমকি মোকাবিলায় সদা প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন। সেই অনুষ্ঠানের সংবাদ এটি। 

ভিডিও যাচাই- ২

আলোচিত ভিডিওটির এই অংশেও একজনকে সংবাদ পাঠ করতে দেখা যায়। উপস্থাপককে বলতে শোনা যায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন- আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

পরবর্তীতে উপস্থাপকের বক্তব্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে News 24 এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ২২ জানুয়ারি “তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কোন সুযোগ নেই” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। (আর্কাইভ)

উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে। 

Video Comparison: Rumor Scanner

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায় উপস্থাপক বলছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

শনিবার (২১ জানুয়ারি) সকালে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত, সদ্য পদোন্নতি প্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং সম পর্যায়ের বিচারকদের জন্য ১০ ওরিয়েন্টেশন কোর্সের উদ্বোধন শেষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে দাবী জানাচ্ছে তা উচ্চ আদালত অনেক আগেই অবৈধ ঘোষণা করেছে। তাই সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করতে হলে যে সমস্ত দপ্তর দায়িত্ব পালন করে তারা নির্বাচন কমিশনের অধীনে কাজ করবে। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়ার কোন সুযোগ নেই। 

অর্থাৎ,  আলোচিত ভিডিওটিতে উপস্থাপকের বক্তব্য কেটে উপস্থাপন করা হয়েছে।

ভিডিও যাচাই- ৩

ভিডিওটির এই অংশেও একজন উপস্থাপককে সংবাদ পাঠ করতে শোনা যায়। উপস্থাপকের বক্তব্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৭ ডিসেম্বর “প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো চিঠিতে যা বলল সশস্ত্র বাহিনী” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। (আর্কাইভ)

উক্ত ভিডিওটি আলোচিত ভিডিওটির সাথে হুবহু মিল রয়েছে। 

Video Comparison: Rumor Scanner 

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, ২৯ ডিসেম্বরের পরিবর্তে আগামী ৩ জানুয়ারি সশস্ত্র বাহিনী নামানোর সিদ্ধান্ত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছে সশস্ত্র বিভাগ। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ থেকে পাঠানো রোববারের এক চিঠি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। চিঠিতে সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারের পক্ষে স্বাক্ষর করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুসাইন মুহাম্মাদ মাসীহুর রাহমান।

অর্থাৎ, এখানেও প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ এবং সেনাবাহিনী ক্ষমতায় আসা সংক্রান্ত কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। 

ভিডিও যাচাই- ৪

আলোচিত ভিডিওটির এই অংশে সেনাপ্রধান এসএম শফিউদ্দিন আহমেদকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। 

সেনাপ্রধানের বক্তব্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে যমুনা টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে গতবছরের ১৬ নভেম্বর “বহিরাগত হুমকি মোকাবেলায় সেনা সদস্যদের সদা প্রস্তুত থাকার নির্দেশ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। (আর্কাইভ

উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে। 

Video Comparison: Rumor Scanner 

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, চট্টগ্রাম সেনানিবাসের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারে কালার প্রদান অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান এস এম শফিউদ্দিন আহমেদের দেওয়া বক্তব্য এটি।

এখানে সেনাপ্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং সেনাবাহিনী ক্ষমতায় আসা সংক্রান্ত কোনো তথ্য উল্লেখ করেননি এবং কথাও বলেননি।

ভিডিও যাচাই- ৫ 

আলোচিত ভিডিওটির এই অংশে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামালকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। 

কায়সার কামালের বক্তব্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে চ্যানেল ২৪ এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৭ ডিসেম্বর “১-৭ জানুয়ারি সারাদেশের আদালত বর্জনের ঘোষণা বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। (আর্কাইভ)

উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে। 

Video Comparison: Rumor Scanner 

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, আগামী ১-৭ জানুয়ারি আপিল বিভাগ, হাইকোর্ট বিভাগসহ সারা দেশের আদালত বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। বুধবার সুপ্রিমকোর্ট বার ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।

এছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং সেনাবাহিনী ক্ষমতায় আসা সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন গ্রহণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি এবং সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছে। এসব ঘটনায় প্রতিদিনই বিভিন্ন ধরনের তথ্য ইন্টারনেটে প্রচারিত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় “হাসিনার উপর ক্ষেপলো পুলিশ-সেনাবাহিনী, ক্ষমতায় আসলো সেনাবাহিনী। হাসিনার পদত্যাগ– শীর্ষক শিরোনামে এবং হাসিনার গলায় পাড়া দিয়ে ক্ষমতায় আসলো সেনাবাহিনী– শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওতে থাকা দাবিগুলো সঠিক নয়। অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার খণ্ডাংশ ভিডিও যুক্ত করে তাতে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবির ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে করবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। আগামী ৩ জানুয়ারি থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত ৮ দিন মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বে থাকবে সেনাবাহিনী। বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং সেনাবাহিনীর ক্ষমতা আসা দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

যুক্তরাষ্ট্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ দেয়নি

সম্প্রতি, “ক্ষমতা ছেড়ে পালাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী, যুক্তরাষ্ট্রের চিঠি পদত্যাগের নির্দেশ” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। 

পদত্যাগের নির্দেশ

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ সম্বলিত চিঠি দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার শিরোনাম ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে কোথাও যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ সম্বলিত চিঠি দেওয়ার কোনো দৃশ্য দেখা যায়নি। ভিডিওটির শুরুতে কয়েকটি সংবাদ প্রতিবেদনের খন্ডাংশ দেখানো হয়। তারপর ভিডিওটির সংবাদপাঠ অংশের পর আলোচিত দাবিটি প্রসঙ্গে পুরোনো কিছু ছবি এবং দুইটি ভিডিও দেখানো হয়।

ভিডিওটি’র সংবাদপাঠ অংশে বলা হয়, “সরকার পতন হবে এমনটি বলেছে সেনাবাহিনী এমনকি আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সেনাবাহিনী যে অ্যাকশনে নামছে এবং তারা যেভাবে গোপন পরিকল্পনাগুলো করে নেমেছে মাঠে সে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা একটি চিঠি দেখবো যে সেনাবাহিনী স্পষ্টভাবে লিখে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছে। তাহলে কি প্রধানমন্ত্রীর পতন হচ্ছে? আগামী নির্বাচন কি বিএনপি ছাড়া হবে না? এই বিষয়গুলো নিয়ে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য থাকছে ভিডিওতে ”

সংবাদপাঠ অংশে থাকা বিষয়গুলো নিয়ে অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে আলোচিত দাবিটি’র সত্যতা পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে উক্ত ভিডিওটিতে দেখানো ভিন্ন দুইটি ভিডিও ক্লিপের বিষয়ে পৃথকভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

ভিডিও যাচাই – ০১

আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা প্রথম ভিডিওটির অনুসন্ধানে ভিডিওতে থাকা ‘বার্তা বাজার’ এর লোগোর সূত্র ধরে কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে বার্তা বাজারের ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৫ ডিসেম্বর “আমেরিকা ফেরত যাবে না,সরকারের পতন নিশ্চিত” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির একটি অংশ আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে। 

Video Comparison : Rumor Scanner

ভিডিওতে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আন্তজার্তিক মহলের সম্পৃক্ততার বিষয়ে আলোচনা করা হয়। 

ভিডিও যাচাই – ০২ 

দ্বিতীয় ভিডিওটিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের রাজনীতিবিদ এবং নোয়াখালী – ০১ আসনের প্রাক্তন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের একটি ভিডিও দেখানো হয়। ভিডিওটির অনুসন্ধানে কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ‘Daily Desherpotro’ নামক ফেসবুক পেজে গত ২৬ ডিসেম্বর একই ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

Video Comparison : Rumor Scanner 

ভিডিওটিতে মাহবুব উদ্দিন খোকন আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগের অধীনে হবে না শীর্ষক মন্তব্য করেন। উক্ত ভিডিওটিকে আলোচিত দাবিতে যুক্ত করা হয়েছে। 

এছাড়া দেশিয় এবং আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগের চিঠি দেওয়া হয়েছে কিংবা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতা ছাড়া বিষয়ক কোনো গ্রহণযোগ্য সূত্রে কোনো সংবাদ প্রতিবেদন কিংবা তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মূলত, আগামী ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এই নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে। এদিকে এই নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে করার দাবি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো৷ জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোও  বাংলাদেশের নির্বাচন সুষ্ঠু করার দাবি জানিয়েছে। তবে এ বিষয়ে সবচেয়ে বেশি তৎপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে উঠে আসছে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের বিষয়। এছাড়া দেশটির বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র পিটার ডি হাসও এ বিষয়ে নিয়মিত কথা বলছেন। দেশটি বলছে, বাংলাদেশে তারা অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেখতে চায়। এরই প্রেক্ষিতে “ক্ষমতা ছেড়ে পালাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী, যুক্তরাষ্ট্রের চিঠি পদত্যাগের নির্দেশ” শীর্ষক দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি পুরোনো ভিডিও ক্লিপ ও ছবি যুক্ত করে তাতে চটকদার শিরোনাম ও একাধিক ছবি ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে বিষয়টির সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে একটি তথ্য প্রচার করা হয়েছে ; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

ইন্ডিয়ান আইডলের মঞ্চে বাংলাদেশি যুবকের গাওয়া নৌকার গানের এই ভিডিওটি এডিটেড

সম্প্রতি, ‘ইন্ডিয়ান মঞ্চে সেরা নৌকার গান’ শীর্ষক শিরোনামে এক যুবকের গান গাওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউব এবং শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে প্রচার করা হয়েছে।

ইন্ডিয়ান

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ইউটিউবে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

টিকটকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ইন্ডিয়ান আইডলের মঞ্চে উক্ত যুবকের নৌকার গান গাওয়ার এই ভিডিওটি আসল নয় বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি’র শুরুতেই এক যুবককে ভারতীয় এক টেলিভিশন প্রোগ্রামে মাইক্রোফোন হাতে ‘নৌকা মার্কায় ভোটটা দেবেন গো’’ শীর্ষক গানটি গাইতে শোনা যায়। গানটি শুনে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিচারকের দায়িত্বে থাকা মঞ্চে উপস্থিত তারকাদের মুগ্ধ হতে দেখা যায়।

ভিডিওটিতে ভারতের তারকা সঙ্গীত শিল্পী হিমেশ রেশামিয়া, নেহা কক্কর, তারকা অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোন সহ বেশ কয়েকজন তারকাকে এসময় মঞ্চে দেখা যায়। এবিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত ভিডিওটি থেকে বেশকিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।

আলোচিত ভিডিওটি’র বিভিন্ন অংশে দেখানো উক্ত তারকাদের একাধিক দৃশ্যের স্থিরচিত্র রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে সনি এন্টারটেইনমেন্ট’র অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেল ‘SET India’তে ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর প্রকাশিত Indian Idol প্রোগ্রামের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিও’র একাধিক দৃশ্যের সাথে আলোচিত ভিডিওটি’র একাধিক দৃশ্যের হুবহু মিল পাওয়া যায়। তবে ফেসবুকে প্রচারিত আলোচিত ভিডিওটি’তে গান গাওয়া যুবককে এই ভিডিওটিতে দেখা যায়নি।

Video Comparison by Rumor Scanner
Video Comparison by Rumor Scanner

অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওটি উক্ত টেলিভিশন প্রোগ্রামের কয়েকটি দৃশ্য যুক্ত করে তৈরি করা হয়েছে।

পরবর্তীতে অধিকতর অনুসন্ধানে ভাইরাল ভিডিওটি’র নির্মাতা সবুজ খানকে খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি তার ফেসবুক পেজে গত ২৫ ডিসেম্বর ‘ইন্ডিয়ান মঞ্চে সেরা নৌকার গান। নৌকা মার্কায় ভোট দিন’ শীর্ষক গানের ভিডিওটি পোস্ট করে জানান, “ভিডিওটি এডিট করে তৈরি করা। দয়াকরে কেউ সিরিয়াসলি নিবেন না।”

Screenshot: Sobuz Khan Facebook

অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, উক্ত গান গাওয়ার আলোচিত এই ভিডিওটি আসল নয়।

মূলত, সবুজ খান নামের এক যুবক ইন্ডিয়ান আইডল প্রোগ্রামে ভারতীয় তারকাদের উপস্থিতির পুরোনো কিছু ভিডিও ক্লিপ সংগ্রহ করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ‘‘ইন্ডিয়ান মঞ্চে সেরা নৌকার গান। নৌকা মার্কায় ভোট দিন’ শীর্ষক একটি গান সম্পাদনার মাধ্যমে যুক্ত করে নিজের ফেসবুক পেজে পোস্ট করেন। পরবর্তীতে উক্ত ভিডিওটি ‘ইন্ডিয়ান মঞ্চে সেরা নৌকার গান’ শীর্ষক শিরোনামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউব এবং শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে আসল ভিডিও দাবিতে ছড়িয়ে পড়ে।

উল্লেখ্য, পূর্বেও একই ব্যক্তির ইন্ডিয়ান আইডল অনুষ্ঠানের মঞ্চে মাকে নিয়ে গান গাওয়ার ভিডিও ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে সেসময় ভিডিওটিকে এডিটেড হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, ‘ইন্ডিয়ান মঞ্চে সেরা নৌকার গান’ শীর্ষক ইন্টারনেটে প্রচারিত বাংলাদেশি যুবকের গান গাওয়ার ভিডিওটি এডিটেড বা বিকৃত।

তথ্যসূত্র

নবীজির নয়, এটি তাঁর কন্যা হযরত ফাতিমার ব্যবহৃত পোশাক

ইসলামের সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর ব্যবহৃত জামা’র ছবি দাবিতে একটি ছবি ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছে।

নবীজির নয়

উক্ত জামার ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকের কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

একই জামার ছবি ব্যবহার করে ইউটিউবে প্রচারিত কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

একই জামার ছবি ব্যবহার করে টিকটকের কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত পোশাকটি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর নয় বরং এটি তাঁর কন্যা হযরত ফাতিমা (রাঃ) এর ব্যবহৃত পোশাক।

অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে তুরস্কের সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: “basin.ktb.gov.tr” website

এই প্রতিবেদনে প্রকাশিত একটি ছবির সাথে আলোচিত ছবিটির হুবহু মিল পাওয়া যায়।

Image Comparison by Rumor Scanner

সেখানে উল্লেখিত বিস্তারিত তথ্য থেকে জানা যায়, এটি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর কন্যা হযরত ফাতিমা (রাঃ) এর ব্যবহৃত পোশাক।

পরবর্তীতে তুরস্কের Topkapi Palace Museum এ ভ্রমণ নিয়ে Hannan Miah নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৯ সালের ২১ জুন প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Hannan Miah YouTube 

ভিডিওটিতে উক্ত পোশাকটি’র পাশে “the mantle of hazrat fatima” শীর্ষক বাক্যটি প্রদর্শিত হতে দেখা যায়। এতে বোঝা যায়, এটি হযরত ফাতিমা (রাঃ) এর ব্যবহৃত পোশাক।

মূলত, তুরস্কের সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ২০১৪ সালে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর কন্যা হযরত ফাতিমা (রাঃ) এর ব্যবহৃত পোশাক সহ আরও কিছু ছবি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। পরবর্তীতে সেখান থেকে হযরত ফাতিমা (রাঃ) এর ব্যবহৃত পোশাকের ছবিটি সংগ্রহ করে সেটিকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর ব্যবহৃত জামা’র ছবি দাবিতে ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার হয়ে আসছে।

উল্লেখ্য, পূর্বেও মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জামের ছবি শীর্ষক একটি দাবি প্রচারিত হলে তা মিথ্যা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, হযরত ফাতিমা (রাঃ) এর ব্যবহৃত একটি পোশাকের ছবিকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর ব্যবহৃত পোশাক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

নির্বাচনের মাঠে পুলিশ-সেনাবাহিনীর সংঘর্ষের ভুয়া দাবি প্রচার

সম্প্রতি, হঠাৎ নির্বাচনের মাঠে পুলিশ সেনাবাহিনী তুমুল সংঘর্ষ ভয়ে শেখ হাসিনা শীর্ষক শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।

পুলিশ-সেনাবাহিনীর সংঘর্ষে

উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ২৭ হাজার বার। ভিডিওটিতে প্রায় এক হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুলিশ-সেনাবাহিনীর মধ্যে কোনো সংঘর্ষ হয়নি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

ভিডিও যাচাই ০১

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায় ২ মিনিট ১৮ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের একটি ভিডিও বক্তব্য লক্ষ্য করা যায়।

পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বেসরকারি ইলেকট্রনিক মিডিয়া NEWS24 এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২০ সালের ৫ আগস্টে “সিনহা হত্যার দায় ব্যক্তির, বাহিনীর নয় | সেনা ও পুলিশ প্রধানের যৌথ সংবাদ সম্মেলন” শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদনের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison: Rumor Scanner

ভিডিও থেকে জানা যায়, কক্সবাজারে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের নিহত হওয়া নিয়ে সেনাবাহিনীর অবস্থান নিয়ে কথা বলেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। তিনি বলেন, “আমর এই ঘটনাকে একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখতে চাই। এই ঘটনার সাথে যারা সম্পৃক্ত থাকবে সেটার দায় দায়িত্ব কোনো প্রতিষ্ঠানের হতে পারে না। ইনকুয়েরি টিম যাদের দোষী সাব্যস্ত করবে তারা সেই দোষের প্রায়শ্চিত্ত করবেন।

ভিডিও যাচাই ০২

প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ অনুসন্ধান করে, kanaksarwarNEWS নামক ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৪ ডিসেম্বর “আন ল’ফুল কমান্ড মানতে বাধ্য না সেনাবাহিনী-মেজর জেনারেল এহতেশাম-উল হল” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত উক্ত সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison: Rumor Scanner

ভিডিও থেকে জানা যায়, বিশিষ্ট সাংবাদিক কনক সারওয়ার এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মেজর জেনারেল এহতেশামুল হক বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। তবে উক্ত আলোচনায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে পুলিশ-সেনাবাহিনীর মধ্যে কোনো সংঘর্ষ নিয়ে কথা হয়নি।

এছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুলিশ-সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হওয়ার প্রেক্ষিতে দেশিয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কোনো গ্রহণযোগ্য তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার দাবিতে বিএনপি- জামায়াতসহ আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের তথ্যের প্রচার হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি  দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুলিশ-সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, নির্বাচন কমিশন পদত্যাগ করেনি এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করেনি। প্রকৃতপক্ষে ২০২০ সালে মেজর সিনহা হত্যার ঘটনায় তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ সেনাবাহিনীর অবস্থান নিয়ে দেওয়া বক্তব্য এবং গত ২৪ ডিসেম্বর বিশিষ্ট সাংবাদিক কনক সারওয়ার এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মেজর জেনারেল এহতেশামুল হক বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনার ভিডিও একত্রে যুক্ত করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

সুতরাং, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুলিশ-সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে ভুয়া বক্তব্য প্রচার 

সম্প্রতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিষয়ে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। দাবি করা হচ্ছে, তিনি বলেছেন, ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার চেয়ে বিষ খেয়ে মরে যাওয়া ভালো।’

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী

উক্ত দাবিতে ফেসবুকের কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার চেয়ে বিষ খেয়ে মরে যাওয়া ভালো’ শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি বরং কোনো প্রকার তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত বক্তব্যটি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, একই মন্তব্য ইতোপূর্বেও ভিন্ন ব্যক্তির বক্তব্য দাবিতেও প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।  

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে দাবিটির সূত্রপাত খোঁজার চেষ্টা করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে গত ২৫ ডিসেম্বর রাত ১২.৫১ মিনিটে Sayedul Islam Montu নামের একটি ফেসবুক একাউন্টে এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot from : Facebook 

উক্ত পোস্টটিতে “ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার ইচ্ছা নাই”, “জোর করে প্রধানমন্ত্রী হতে চাই না”, “জনগণের ভোট চুরি করে ক্ষমতায় যাবার ইচ্ছা নাই” শীর্ষক বক্তব্যের পাশাপাশি “বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনে জয়ী হওয়ার চেয়ে বিষ খেয়ে মরে যাওয়া ভালো” বক্তব্যটির উল্লেখ পাওয়া যায়। 

তবে Sayedul Islam Montu এর পোস্টে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনে জয়ী হওয়ার চেয়ে বিষ খেয়ে মরে যাওয়া ভালো শীর্ষক লাইনটি শুরুতে ছিল না। পোস্টটির এডিট হিস্টোরি বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, পোস্ট করার আট ঘন্টা পর তিনি পোস্ট এডিট করে আলোচিত লাইনটি যুক্ত করেছেন।

Screenshot: Facebook 

যদিও তিনি উক্ত মন্তব্যটি যে প্রধানমন্ত্রীর এমন কোনো তথ্য সরাসরি উল্লেখ করেননি। তবে এই লাইনটিই পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য দাবিতে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। 

পরবর্তীতে এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক কোনো সংবাদমাধ্যমেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য দাবিতে আলোচিত তথ্যের কোনো হদিস খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

বিষয়টি নিয়ে বিস্তর অনুসন্ধানে দৈনিক কালবেলার ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৬ নভেম্বর তারিখে ‘কেউ যেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে না পারে’ | BD Prime Minister শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot from: Kalbela News Youtube Video 

উক্ত প্রতিবেদনটিতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, কেউ যেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে না পারে সেদিকে নজর দিতে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নির্দেশনা দিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সেদিন গণভবনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৩০০ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য বিশ্লেষণ করে ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার চেয়ে বিষ খেয়ে মরে যাওয়া ভালো’ শীর্ষক কোনো মন্তব্য বা বক্তব্যের সন্ধান পাওয়া যায়নি।  

আলোচ্য সভায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সম্বলিত আরো কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে। 

এছাড়া, উক্ত দাবিটির বিষয় অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ২০১৯ সালের ০৩ এপ্রিলে একই তথ্যটি আলোচিত কন্টেন্ট ক্রিয়েটর এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী আশরাফুল আলম হোসেন ওরফে হিরো আলমের বক্তব্য দাবিতেও প্রচার করা হয়েছিল। 

দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

Screenshot from: Facebook 

আমরা অনুসন্ধানে হিরো আলম এমন মন্তব্য করেছেন শীর্ষক দাবির পক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্যসূত্রে প্রমাণ পাইনি। 

মূলত, গত ২৬ নভেম্বর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে একটি মতবিনিময় সভা করেন। সেখানে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ যেন নির্বাচিত হতে না পারে, সেদিকে নজর দিতে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বিশেষ নির্দেশনা দেন। সম্প্রতি ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার চেয়ে বিষ খেয়ে মরে যাওয়া ভালো’ শিরোনামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত বক্তব্যটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়। এছাড়া দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও উক্ত বক্তব্যের বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি, ইতোপূর্বেও একই বক্তব্য ভিন্ন ব্যক্তির নামে ইন্টারনেটে প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। 

প্রসঙ্গত, পূর্বেও বিভিন্ন ব্যক্তির নামে ভূয়া বক্তব্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার চেয়ে বিষ খেয়ে মরে যাওয়া ভালো’ শীর্ষক শিরোনামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

রুমিন ফারহানার নামে বিএনপির রাজনীতি না করার বিষয়ে ভুয়া মন্তব্য প্রচার

0

সম্প্রতি, বিএনপি’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার বিষয়ে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। দাবি করা হচ্ছে, তিনি বলেছেন, আমি আর রাজনীতি করবো না সবাই আমাকে শুধু টালায়৷ 

রুমিন ফারহানার

উক্ত দাবিতে ফেসবুকের কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, রুমিন ফারহানা ‘আমি আর রাজনীতি করবো না সবাই আমাকে শুধু টালায়৷’ শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি বরং কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত মন্তব্যটি রুমিন ফারহানার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে দাবিটির সূত্রপাত খোঁজার চেষ্টা করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে গতকাল (২৭ ডিসেম্বর) রাত ১১টার পর এ সংক্রান্ত সম্ভাব্য প্রথম পোস্টটি নজরে আসে আমাদের। 

Screenshot: Facebook 

গতকাল বা সাম্প্রতিক সময়ে রুমিন ফারহানা এমন বক্তব্য দিলে স্বাভাবিকভাবেই তা গণমাধ্যমে প্রচার হবে। কিন্তু একাধিক গণমাধ্যমসূত্রে তিনি এমন কোনো মন্তব্য করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বরং, আজ (২৮ ডিসেম্বর) জাতীয় দৈনিক সমকালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে রুমিন ফারহানার বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে যাতে তাকে বিএনপির সহ- আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক বলে পরিচয় দেওয়া হয়েছে। 

তাছাড়া, রুমিন ফারহানার অফিশিয়াল ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, তিনি সর্বশেষ পোস্ট করেছেন গতকালই (২৭ ডিসেম্বর) রাত ১০ টা ৫০ মিনিটে। এই পোস্টে তিনি এসএ টিভিতে গত ২৬ ডিসেম্বর একটি টক শোতে অংশ নেওয়ার পর সেটির একটি ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করেছেন। এখানেও তাকে বিএনপির রাজনীতি ছেড়ে দেওয়া শীর্ষক কোনো মন্তব্য করতে দেখা যায়নি। 

Screenshot: Facebook

রুমিন ফারহানার ফেসবুক অ্যাকাউন্টের সাম্প্রতিক অ্যাক্টিভিটি বিশ্লেষণ করেও আলোচিত দাবিটির পক্ষে কোনো প্রমাণ মেলেনি। 

অর্থাৎ, রুমিন ফারহানা বিএনপির রাজনীতিতে ছেড়ে দেওয়া সংক্রান্ত কোনো মন্তব্য করেননি। 
এছাড়া, আলোচিত দাবিতে রুমিন ফরাহানার যে ছবিটি প্রচার করা হচ্ছে তাও বিকৃত। চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির একটি ছবিতে রুমিন ফারহানার মুখমন্ডল ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে বসিয়ে উক্ত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে। মূল ছবি সম্বলিত প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে।

Image comparison: Rumor Scanner 

মূলত, সম্প্রতি বিএনপি’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার বিষয়ে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে যাতে দাবি করা হয়, তিনি ‘আমি আর রাজনীতি করবো না সবাই আমাকে শুধু টালায়৷’ শীর্ষক মন্তব্য করেছেন। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। রুমিন ফারহানা এমন কোনো মন্তব্য করেননি। কোনো প্রকার তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত মন্তব্যটি রুমিন ফারহানার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

সুতরাং, বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানার ‘আমি আর রাজনীতি করবো না সবাই আমাকে শুধু টালায়৷’ শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্বাচন বাতিল করার গুজব

সম্প্রতি, শেখ হাসিনার পদত্যাগ, নির্বাচন বাতিল করবে সেনাবাহিনী শীর্ষক শিরোনাম এবং পদত্যাগ করলো নির্বাচন কমিশন, নির্বাচন বাতিল করলো সেনাবাহিনী শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

 নির্বাচন বাতিল

উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নির্বাচন কমিশন পদত্যাগ করেনি এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করেনি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

ভিডিও যাচাই ০১

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায় ১২ মিনিট ১০ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাকের লোগোসহ একটি প্রতিবেদন প্রচার করতে দেখা যায়।

Screenshot from Facebook

পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দৈনিক ইত্তেফাকের ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৫ ডিসেম্বর “নির্বাচনে সতন্ত্র ও নৌকার প্রার্থীদের মধ্যে সংঘাত বাড়ছেই” শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদনের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison: Rumor Scanner

ভিডিও থেকে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্বতন্ত্র ও নৌকার প্রার্থীদের মধ্যে সংঘাতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটে।

তবে ভিডিওটির কোথাও নির্বাচন কমিশন পদত্যাগ করেছে কিংবা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করার কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এমনকি নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ এবং সেনাবাহিনী নির্বাচন বাতিল করেছে এমন দাবিতে দেশিয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কোনো গ্রহণযোগ্য তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বেসরকারি ইলেক্ট্রনিক টিভি চ্যানেল আরটিভির ওয়েবসাইটে গত ২৬ ডিসেম্বর “সেনাবাহিনীর অধীনে নির্বাচন চেয়ে ফের রিট” শীর্ষক শিরোনামে একটি সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২৬ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ ভেঙে দিয়ে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্বাচন চেয়ে হাইকোর্টে ফের রিট দায়ের ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ নামে একটি রাজনৈতিক দল। একাদশ সংসদ ভেঙে দিয়ে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্বাচন চেয়ে করা রিট শুনানির জন্য গ্রহণ না করে ফেরত দিয়েছেন হাইকোর্ট। 

আরটিভির ওয়েবসাইটে ২৭ ডিসেম্বরে “সেনাবাহিনীর অধীনে নির্বাচন চেয়ে রিট ফেরত হাইকোর্টের” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তপসিল হয়ে যাওয়ায় এই মুহূর্তে এ ধরনের রিট শুনানির সুযোগ নেই বলে জানায় হাইকোর্ট।

পরবর্তীতে জাতীয় দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার এ ২৬ ডিসেম্বর “সেনাবাহিনী নির্বাচনী দায়িত্বে মাঠে থাকবে ৩-১০ জানুয়ারি” শীর্ষক শিরোনামে একটি সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে সহায়তার জন্য সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য আগামী ৩ জানুয়ারি থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত ৮ দিন মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করবে সেনাবাহিনী।

একই দিনে অনলাইন পোর্টাল বিডিনিউজ২৪ এ প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়।

মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার দাবিতে বিএনপি- জামায়াতসহ আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের তথ্য প্রচার হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন পদত্যাগ করেছে এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করেছে দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, নির্বাচন কমিশন পদত্যাগ করেনি এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করেনি। প্রকৃতপক্ষে কোনো প্রকার গ্রহণযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিতে ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

সুতরাং, নির্বাচন কমিশন পদত্যাগ করেছে এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করেছে দাবিতে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

সেনাবাহিনী আওয়ামী লীগের নির্বাচন বন্ধ করে দিল দাবিতে ভুয়া তথ্য প্রচার 

সম্প্রতি, সেনাবাহিনী আওয়ামী লীগের নির্বাচন বন্ধ করে দিয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। 

নির্বাচন বন্ধ

ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আওয়ামী লীগের নির্বাচন বন্ধ করে দিল সেনাবাহিনী শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার থাম্বনেইল এবং শিরোনাম ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন ভিডিও ক্লিপ একত্রিত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি পুরোনো ঘটনার ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি নিয়ে তৈরি একটি ভিডিও প্রতিবেদন, যেখানে একটি সংবাদ প্রতিবেদনের খণ্ডাংশ, ব্যারিস্টার ফুয়াদের বক্তব্য প্রদানের সময়কার একটি ভিডিও, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের দুইটি ভিডিও এবং সেনাবাহিনীর সদস্যদের পুরোনো কিছু ছবি দেখানো হয়।

ভিডিওটি’র সংবাদপাঠ অংশে বলা হয়, “আজকের ভিডিওটি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা হয়েছে। চলুন আমরা ভিডিও স্ক্রিনে চলে যায়। তারপরে বিস্তারিত আলোচনা করবো এ প্রসঙ্গে। ”

আলোচিত ভিডিওটি’র শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে উল্লেখিত দাবিগুলোর সাথে ভিডিওটি’র বিস্তারিত অংশের মিল পাওয়া যায়নি। আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত ভিডিও ক্লিপগুলোর বিষয়ে আলাদা আলাদাভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

ভিডিও যাচাই- ০১

আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা প্রথম ভিডিওটির অনুসন্ধানে কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ‘Bangla News’ নামক ফেসবুক পেজে গত ১৩ ডিসেম্বর “সেনাবাহিনী দিয়ে আন্দোলন বন্ধের চেষ্টা হলে বাকশালের কবর রচনা করবো :ব্যারিস্টার ফুয়াদ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটির একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত প্রথম ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়। 

Video Comparison : Rumor Scanner 

ভিডিওটিতে ব্যারিস্টার ফুয়াদ ভোট বিরোধী আন্দোলন বন্ধে সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ততার বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। 

ভিডিও যাচাই- ০২ 

দ্বিতীয় ভিডিওটির অনুসন্ধানে ‘DBC NEWS’ এর সূত্র ধরে কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে DBC NEWS এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ১১ ডিসেম্বর “নির্বাচন কমিশনারের সাথে সেনাবাহিনীর বৈঠক” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিও প্রতিবেদনের একটি অংশকে আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে। 

Video Comparison : Rumor Scanner 

উক্ত প্রতিবেদনে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত ১১ ডিসেম্বর সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে বিষয়ে বলা হয়। 

ভিডিও যাচাই- ০৩ 

আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা তৃতীয় ভিডিও ক্লিপটির অনুসন্ধানে Dr. Fayzul Huq নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৩ ডিসেম্বর “হঠাৎ সেনাবাহিনী নামছে! দেশ কোন পথে!” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে যুক্ত ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়। 

Video Comparison : Rumor Scanner 

ভিডিওটিতে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও চ্যানেলটির উপস্থাপল ড. ফয়জুল হক আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সেনাবাহিনী মোতায়েনকে কেন্দ্র করে নিজস্ব অভিমত ব্যক্ত করেন। 

ভিডিও যাচাই- ০৪ 

আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা সর্বশেষ ভিডিওটির অনুসন্ধানে কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ‘NAYEEM ELLI 2’ নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ১২ ডিসেম্বর “মাঠে নামছে সেনাবাহিনী।। এ কেমন দায়িত্ব দিল ইসি” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটির একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়। 

Video Comparison : Rumor Scanner 

উক্ত ভিডিওতে চ্যানেলটির উপস্থাপক আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সেনাবাহিনী মোতায়েনকে কেন্দ্র করে নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করেন। 

এই ভিডিওটি’র সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত দাবিগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই।

এছাড়াও, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নির্বাচন বন্ধ করে দিল সেনাবাহিনী শীর্ষক দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।

মূলত, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে গত ১১ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আওয়ালের নেতৃত্বে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনের সভাকক্ষে সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফদের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচন উপলক্ষে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরই ধারাবাহিকতায় সেনাবাহিনী মোতায়েনকে কেন্দ্র করে “সেনাবাহিনী আওয়ামী লীগের নির্বাচন বন্ধ করে দিল” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার অনুসন্ধানে দেখেছে যে দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি পুরোনো ভিডিও ক্লিপ ও ছবি যুক্ত করে তাতে চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবিগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, সেনাবাহিনী আওয়ামী লীগের নির্বাচন বন্ধ করে দিল শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে ; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং জামায়াতে ইসলামী একসাথে আন্দোলনে নামার গুজব

সম্প্রতি, হঠাৎ সেনাবাহিনী ও পুলিশ জামায়াতের পক্ষ নিল, আজ থেকে দেশ চালাবে জামায়াত শিবির– শীর্ষক শিরোনামে এবং থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ভিডিওটিতে দাবি করা হচ্ছে, সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এবং দেশ চালানোর দায়িত্ব বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। 

আন্দোল

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সেনাবাহিনী ও পুলিশ এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দল একসাথে আন্দোলনের ঘোষণা দেয়নি এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দলের অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির কর্তৃক দেশ চালানোর সিদ্ধান্ত হয়নি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে থাম্বনেইলে সেনাপ্রধান ও ডিএম্পি ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দলের নেতা ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের ছবি দেখা যায়। এছাড়া, ভিডিওটিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দলের নেতা ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের একটি বক্তব্য এবং জনগনের কাছ থেকে এক সাংবাদিকের নেওয়া সাক্ষাৎকারের ভিডিও দেখা যায়। এছাড়া ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার খন্ড খন্ড কয়েকটি ক্লিপও দেখা যায়।

ভিডিও যাচাই- ১

আলোচিত ভিডিওটিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দলের নেতা ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়।

সেই বক্তব্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে গত ২৫ ডিসেম্বর “প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ঈমানদারের করণীয় ও পুরস্কার” শীর্ষক ক্যাপশনে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। (আর্কাইভ)

উক্ত ভিডিওটিতে থাকা ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের দেওয়া বক্তব্যের সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা বক্তব্যের হুবহু মিল রয়েছে। 

Video Comparison: Rumor Scanner 

৭ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ হাদিসের মাধ্যমে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম ব্যাখ্যা করেছেন।

অর্থাৎ, ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ নিজ দলের সাথে সেনাবাহিনী ও পুলিশ নিয়ে আন্দোলন করার বা দলের অঙ্গ সংগঠনের কাছে দেশ চালানোর সিদ্ধান্ত সংক্রান্ত কোনো তথ্য উল্লেখ করেনি এবং কথাও বলেননি।

ভিডিও যাচাই- ২

আলোচিত ভিডিওটিতে একজন সাংবাদিককে কয়েকজনের কাছ থেকে সাক্ষাৎকার নিতে দেখা যায়। সাংবাদিকের করা প্রশ্ন সাক্ষাৎদাতার উত্তরের প্রেক্ষিতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ২৫ ডিসেম্বর “আসন্ন ডামি নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের ভাবনা! ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, রবিবার। বগুড়া সারিয়াকান্দি সোনাতলায় স্থানীয় অনলাইন সাংবাদিক মুসফিকুর রহমান আসন্ন ডামি নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের ভাবনা বিষয়ে জানতে চান। দেখুন ভিডিওটিতে দেখুন ডামি নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের ভাবনা কি।” শীর্ষক ক্যাপশনে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। (আর্কাইভ)

উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে। 

Video Comparison: Rumor Scanner 

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, বগুড়া সারিয়াকান্দি সোনাতলায় স্থানীয় অনলাইন সাংবাদিক মুসফিকুর রহমান স্থানীয় জনগণকে ৭ জানুয়ারি আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে যাবেন কি না এমন প্রশ্নের প্রেক্ষিতে কয়েকজনের সাক্ষাৎকার নেন। 

অর্থাৎ, এখানেও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দলের সাথে সেনাবাহিনী ও পুলিশ আন্দোলন করার এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ছাত্রশিবির কর্তৃক দেশ চালানোর সংক্রান্ত কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। 

এছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

উল্লেখ্য, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে করবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। আগামী ৩ জানুয়ারি থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত ৮ দিন মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বে থাকবে সেনাবাহিনী। বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন গ্রহণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি এবং সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছে। এসব ঘটনায় প্রতিদিনই বিভিন্ন ধরনের তথ্য ইন্টারনেটে প্রচারিত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় “হঠাৎ সেনাবাহিনী ও পুলিশ জামায়াতের পক্ষ নিল, আজ থেকে দেশ চালাবে জামায়াত শিবির” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওতে থাকা দাবিগুলো সঠিক নয়। অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার খণ্ডাংশ ভিডিও যুক্ত করে তাতে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবির ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

সুতরাং, সেনাবাহিনী ও পুলিশ এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দল একসাথে আন্দোলনের ঘোষণা এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির কর্তৃক দেশ চালানোর সিদ্ধান্ত দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  • Dr. Md. Shafiqul Islam Masud- Facebook Post 
  • Bangladesh Nationalist Party-BNP- Facebook Post 
  • Rumor Scanner’s Own Analysis