সম্প্রতি, হাসিনার উপর ক্ষেপলো পুলিশ-সেনাবাহিনী, ক্ষমতায় আসলো সেনাবাহিনী। হাসিনার পদত্যাগ– শীর্ষক শিরোনামে এবং হাসিনার গলায় পাড়া দিয়ে ক্ষমতায় আসলো সেনাবাহিনী– শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভিডিওটিতে দাবি করা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর সেনাবাহিনী এবং পুলিশ ক্ষেপেছে। শেখ হাসিনার পদত্যাগ করেছে এবং সেনাবাহিনী ক্ষমতায় এসেছে।
ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন এবং সেনাবাহিনী ক্ষমতা আসার দাবিগুলো সঠিক নয় বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিওটিতে তিনজন সংবাদ উপস্থাপকের সংবাদ পাঠ করার ভিডিও ক্লিপ রয়েছে। এছাড়া, সেনাপ্রধান এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ এবং জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামালকেও বক্তব্য দিতে দেখা যায়।
ভিডিও যাচাই- ১
আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, একজন সংবাদ উপস্থাপক সংবাদ পাঠ করছেন। উপস্থাপকের বক্তব্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে যমুনা টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে গতবছরের ১৬ নভেম্বর “বহিরাগত হুমকি মোকাবেলায় সেনা সদস্যদের সদা প্রস্তুত থাকার নির্দেশ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। (আর্কাইভ)
উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে।
ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, চট্টগ্রাম সেনানিবাসের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারে কালার প্রদান অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ সবাইকে পেশাদারিত্বের প্রত্যাশিত মান অর্জনের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক যে কোনো হুমকি মোকাবিলায় সদা প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন। সেই অনুষ্ঠানের সংবাদ এটি।
ভিডিও যাচাই- ২
আলোচিত ভিডিওটির এই অংশেও একজনকে সংবাদ পাঠ করতে দেখা যায়। উপস্থাপককে বলতে শোনা যায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন- আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
পরবর্তীতে উপস্থাপকের বক্তব্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে News 24 এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ২২ জানুয়ারি “তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কোন সুযোগ নেই” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। (আর্কাইভ)
উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে।
ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায় উপস্থাপক বলছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
শনিবার (২১ জানুয়ারি) সকালে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত, সদ্য পদোন্নতি প্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং সম পর্যায়ের বিচারকদের জন্য ১০ ওরিয়েন্টেশন কোর্সের উদ্বোধন শেষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে দাবী জানাচ্ছে তা উচ্চ আদালত অনেক আগেই অবৈধ ঘোষণা করেছে। তাই সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করতে হলে যে সমস্ত দপ্তর দায়িত্ব পালন করে তারা নির্বাচন কমিশনের অধীনে কাজ করবে। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়ার কোন সুযোগ নেই।
অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওটিতে উপস্থাপকের বক্তব্য কেটে উপস্থাপন করা হয়েছে।
ভিডিও যাচাই- ৩
ভিডিওটির এই অংশেও একজন উপস্থাপককে সংবাদ পাঠ করতে শোনা যায়। উপস্থাপকের বক্তব্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৭ ডিসেম্বর “প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো চিঠিতে যা বলল সশস্ত্র বাহিনী” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। (আর্কাইভ)
উক্ত ভিডিওটি আলোচিত ভিডিওটির সাথে হুবহু মিল রয়েছে।
ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, ২৯ ডিসেম্বরের পরিবর্তে আগামী ৩ জানুয়ারি সশস্ত্র বাহিনী নামানোর সিদ্ধান্ত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছে সশস্ত্র বিভাগ। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ থেকে পাঠানো রোববারের এক চিঠি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। চিঠিতে সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারের পক্ষে স্বাক্ষর করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুসাইন মুহাম্মাদ মাসীহুর রাহমান।
অর্থাৎ, এখানেও প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ এবং সেনাবাহিনী ক্ষমতায় আসা সংক্রান্ত কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।
ভিডিও যাচাই- ৪
আলোচিত ভিডিওটির এই অংশে সেনাপ্রধান এসএম শফিউদ্দিন আহমেদকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়।
সেনাপ্রধানের বক্তব্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে যমুনা টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে গতবছরের ১৬ নভেম্বর “বহিরাগত হুমকি মোকাবেলায় সেনা সদস্যদের সদা প্রস্তুত থাকার নির্দেশ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। (আর্কাইভ)
উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে।
ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, চট্টগ্রাম সেনানিবাসের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারে কালার প্রদান অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান এস এম শফিউদ্দিন আহমেদের দেওয়া বক্তব্য এটি।
এখানে সেনাপ্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং সেনাবাহিনী ক্ষমতায় আসা সংক্রান্ত কোনো তথ্য উল্লেখ করেননি এবং কথাও বলেননি।
ভিডিও যাচাই- ৫
আলোচিত ভিডিওটির এই অংশে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামালকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়।
কায়সার কামালের বক্তব্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে চ্যানেল ২৪ এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৭ ডিসেম্বর “১-৭ জানুয়ারি সারাদেশের আদালত বর্জনের ঘোষণা বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। (আর্কাইভ)
উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে।
ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, আগামী ১-৭ জানুয়ারি আপিল বিভাগ, হাইকোর্ট বিভাগসহ সারা দেশের আদালত বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। বুধবার সুপ্রিমকোর্ট বার ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
এছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং সেনাবাহিনী ক্ষমতায় আসা সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন গ্রহণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি এবং সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছে। এসব ঘটনায় প্রতিদিনই বিভিন্ন ধরনের তথ্য ইন্টারনেটে প্রচারিত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় “হাসিনার উপর ক্ষেপলো পুলিশ-সেনাবাহিনী, ক্ষমতায় আসলো সেনাবাহিনী। হাসিনার পদত্যাগ– শীর্ষক শিরোনামে এবং হাসিনার গলায় পাড়া দিয়ে ক্ষমতায় আসলো সেনাবাহিনী– শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওতে থাকা দাবিগুলো সঠিক নয়। অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার খণ্ডাংশ ভিডিও যুক্ত করে তাতে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবির ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে করবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। আগামী ৩ জানুয়ারি থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত ৮ দিন মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বে থাকবে সেনাবাহিনী। বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং সেনাবাহিনীর ক্ষমতা আসা দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Jamuna Television- বহিরাগত হুমকি মোকাবেলায় সেনা সদস্যদের সদা প্রস্তুত থাকার নির্দেশ
- News 24- তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কোন সুযোগ নেই
- Independent Tv- প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো চিঠিতে যা বলল সশস্ত্র বাহিনী
- Jamuna Television- বহিরাগত হুমকি মোকাবেলায় সেনা সদস্যদের সদা প্রস্তুত থাকার নির্দেশ
- Channel 24- ১-৭ জানুয়ারি সারাদেশের আদালত বর্জনের ঘোষণা বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের
- Rumor Scanner’s Own Analysis