যুক্তরাষ্ট্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ দেয়নি

সম্প্রতি, “ক্ষমতা ছেড়ে পালাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী, যুক্তরাষ্ট্রের চিঠি পদত্যাগের নির্দেশ” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। 

পদত্যাগের নির্দেশ

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ সম্বলিত চিঠি দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার শিরোনাম ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে কোথাও যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ সম্বলিত চিঠি দেওয়ার কোনো দৃশ্য দেখা যায়নি। ভিডিওটির শুরুতে কয়েকটি সংবাদ প্রতিবেদনের খন্ডাংশ দেখানো হয়। তারপর ভিডিওটির সংবাদপাঠ অংশের পর আলোচিত দাবিটি প্রসঙ্গে পুরোনো কিছু ছবি এবং দুইটি ভিডিও দেখানো হয়।

ভিডিওটি’র সংবাদপাঠ অংশে বলা হয়, “সরকার পতন হবে এমনটি বলেছে সেনাবাহিনী এমনকি আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সেনাবাহিনী যে অ্যাকশনে নামছে এবং তারা যেভাবে গোপন পরিকল্পনাগুলো করে নেমেছে মাঠে সে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা একটি চিঠি দেখবো যে সেনাবাহিনী স্পষ্টভাবে লিখে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছে। তাহলে কি প্রধানমন্ত্রীর পতন হচ্ছে? আগামী নির্বাচন কি বিএনপি ছাড়া হবে না? এই বিষয়গুলো নিয়ে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য থাকছে ভিডিওতে ”

সংবাদপাঠ অংশে থাকা বিষয়গুলো নিয়ে অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে আলোচিত দাবিটি’র সত্যতা পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে উক্ত ভিডিওটিতে দেখানো ভিন্ন দুইটি ভিডিও ক্লিপের বিষয়ে পৃথকভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

ভিডিও যাচাই – ০১

আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা প্রথম ভিডিওটির অনুসন্ধানে ভিডিওতে থাকা ‘বার্তা বাজার’ এর লোগোর সূত্র ধরে কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে বার্তা বাজারের ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৫ ডিসেম্বর “আমেরিকা ফেরত যাবে না,সরকারের পতন নিশ্চিত” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির একটি অংশ আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে। 

Video Comparison : Rumor Scanner

ভিডিওতে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আন্তজার্তিক মহলের সম্পৃক্ততার বিষয়ে আলোচনা করা হয়। 

ভিডিও যাচাই – ০২ 

দ্বিতীয় ভিডিওটিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের রাজনীতিবিদ এবং নোয়াখালী – ০১ আসনের প্রাক্তন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের একটি ভিডিও দেখানো হয়। ভিডিওটির অনুসন্ধানে কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ‘Daily Desherpotro’ নামক ফেসবুক পেজে গত ২৬ ডিসেম্বর একই ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

Video Comparison : Rumor Scanner 

ভিডিওটিতে মাহবুব উদ্দিন খোকন আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগের অধীনে হবে না শীর্ষক মন্তব্য করেন। উক্ত ভিডিওটিকে আলোচিত দাবিতে যুক্ত করা হয়েছে। 

এছাড়া দেশিয় এবং আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগের চিঠি দেওয়া হয়েছে কিংবা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতা ছাড়া বিষয়ক কোনো গ্রহণযোগ্য সূত্রে কোনো সংবাদ প্রতিবেদন কিংবা তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মূলত, আগামী ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এই নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে। এদিকে এই নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে করার দাবি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো৷ জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোও  বাংলাদেশের নির্বাচন সুষ্ঠু করার দাবি জানিয়েছে। তবে এ বিষয়ে সবচেয়ে বেশি তৎপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে উঠে আসছে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের বিষয়। এছাড়া দেশটির বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র পিটার ডি হাসও এ বিষয়ে নিয়মিত কথা বলছেন। দেশটি বলছে, বাংলাদেশে তারা অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেখতে চায়। এরই প্রেক্ষিতে “ক্ষমতা ছেড়ে পালাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী, যুক্তরাষ্ট্রের চিঠি পদত্যাগের নির্দেশ” শীর্ষক দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি পুরোনো ভিডিও ক্লিপ ও ছবি যুক্ত করে তাতে চটকদার শিরোনাম ও একাধিক ছবি ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে বিষয়টির সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে একটি তথ্য প্রচার করা হয়েছে ; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

আরও পড়ুন

spot_img