কুমিল্লায় বিএনপির কার্যালয়ে এনসিপি ও জামায়াতের আগুন দেওয়ার দাবিটি গুজব

সম্প্রতি, কুমিল্লায় বিএনপি অফিসে আগুন দিয়েছে এনসিপি ও জামায়াত-শিবির – এই দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কুমিল্লায় বিএনপির কার্যালয়ে এনসিপি ও জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীরা আগুন দেয়নি। তাছাড়া, এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়েরও নয়। প্রকৃতপক্ষে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের ঘোষিত কমিটি বাতিলের দাবিতে গত ১৭ ই মে সংগঠনটির পদবঞ্চিতরা শহরের বিএনপি কার্যালয়ে আগুন দেয়। এটি সেই ঘটনারই দৃশ্য।

আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৭ মে প্রচারিত ‘কুমিল্লায় পদবঞ্চিত ছাত্রদল নেতাদের বিক্ষোভ, দলীয় কার্যালয়ে আগুন | Comilla | Chatradol | Jamuna TV’ ক্যাপশনের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওরও প্রথম ক্লিপের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে।

Comparison : Rumor Scanner

ভিডিটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, সেই সময় কুমিল্লায় ছাত্রদলের ঘোষিত কমিটি বাতিলের দাবিতে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের কমিটিতে পদবঞ্চিতদের বিক্ষোভের ঘটনা এটি।

এই বিষয়ে প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে গত ১৭ মে ‘কুমিল্লায় এবার বিএনপির অব্যবহৃত কার্যালয়ে আগুন দিলেন ছাত্রদলের পদবঞ্চিতরা’ শিরোনামে প্রতিবেদন থেকে জানা যায়,  গত ১৭ মে সন্ধ্যায় কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় এলাকার ভিক্টোরিয়া কলেজ সড়কে অবস্থিত বিএনপির কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগরের অব্যবহৃত কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার এ ঘটনা ঘটে। 

তাছাড়া, যুগান্তর এর ওয়েবসাইটে গত ১৯ মে প্রকাশিত ‘কুমিল্লায় বিএনপি কার্যালয় ভাঙচুর-অগ্নিকাণ্ডে ছাত্রদল নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “কুমিল্লায় বিএনপির কার্যালয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল হামলার ঘটনার দুই দিন পর পাঁচজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২০-৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামিরা ছাত্রদলের নেতাকর্মী বলে জানা গেছে। সোমবার [১৯ মে] রাতে কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে রোববার [১৮] রাতে তিনি বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় এ মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারনামীয় আসামিরা হলেন- মো. মহসিন (৩২), সালাহ উদ্দিন রকি (৩০), মো. সোহাগ হোসেন (৩০), সাইফুল ইসলাম (২৫) ও মারুফ আহমেদ (২৪)। তারা সবাই কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের নেতাকর্মী বলে জানা গেছে।”

অর্থাৎ, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি গত মে মাসের ১৭ তারিখের। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের গত ১৫ মে ঘোষিত কমিটি বাতিলের দাবিতে পদবঞ্চিতদের বিক্ষোভের সময় ঘটেছিল। এর সাথে এনসিপি বা জামায়াত শিবেরর সংশ্লিষ্টতা নেই। তাছাড়া, সম্প্রতি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে এমন কোনো তথ্য গনমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে খুঁজে পাওযা যায়নি।

এই বিষয়ে আরও নিশ্চিত হতে কুমিল্লার স্থানীয় সংবাদকর্মীদের সাথেও কথা বলে রিউমর স্ক্যানার টিম।

বাংলা ট্রিবিউন-এর কুমিল্লা প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মারুফ জানান, প্রচারিত ভিডিওর ঘটনার সাথে এনসিপি ও জামায়াত-শিবিরের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এটি গত ১৫ মে ছাত্রদলের ঘোষিত দক্ষিণ জেলা ও মহানগর কমিটির পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের একটি গ্রুপ দ্বারা গত ১৭ মে নগরের কান্দিরপাড় এলাকায় অবস্থিত কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর বিএনপি কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনার।

প্রথম আলোর কুমিল্লা প্রতিনিধি আবদুর রহমান বলেন, সম্প্রতি এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। দৃশ্যটি ছিল বিক্ষুব্ধ ছাত্রদল কর্তৃক বিএনপি অফিসে আগুন দেওয়ার ঘটনা।

সুতরাং, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের গত ১৫ মে ঘোষিত কমিটি বাতিলের দাবিতে পদবঞ্চিতদের বিক্ষোভের সময় ১৭ মে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে সম্প্রতি কুমিল্লায় বিএনপির কার্যালয়ে এনসিপি ও জামায়াত-শিবির আগুন দিয়েছে বলে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img