সম্প্রতি, হঠাৎ সেনাবাহিনী ও পুলিশ জামায়াতের পক্ষ নিল, আজ থেকে দেশ চালাবে জামায়াত শিবির– শীর্ষক শিরোনামে এবং থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভিডিওটিতে দাবি করা হচ্ছে, সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এবং দেশ চালানোর দায়িত্ব বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সেনাবাহিনী ও পুলিশ এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দল একসাথে আন্দোলনের ঘোষণা দেয়নি এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দলের অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির কর্তৃক দেশ চালানোর সিদ্ধান্ত হয়নি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে থাম্বনেইলে সেনাপ্রধান ও ডিএম্পি ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দলের নেতা ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের ছবি দেখা যায়। এছাড়া, ভিডিওটিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দলের নেতা ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের একটি বক্তব্য এবং জনগনের কাছ থেকে এক সাংবাদিকের নেওয়া সাক্ষাৎকারের ভিডিও দেখা যায়। এছাড়া ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার খন্ড খন্ড কয়েকটি ক্লিপও দেখা যায়।
ভিডিও যাচাই- ১
আলোচিত ভিডিওটিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দলের নেতা ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়।
সেই বক্তব্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে গত ২৫ ডিসেম্বর “প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ঈমানদারের করণীয় ও পুরস্কার” শীর্ষক ক্যাপশনে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। (আর্কাইভ)
উক্ত ভিডিওটিতে থাকা ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের দেওয়া বক্তব্যের সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা বক্তব্যের হুবহু মিল রয়েছে।

৭ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ হাদিসের মাধ্যমে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম ব্যাখ্যা করেছেন।
অর্থাৎ, ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ নিজ দলের সাথে সেনাবাহিনী ও পুলিশ নিয়ে আন্দোলন করার বা দলের অঙ্গ সংগঠনের কাছে দেশ চালানোর সিদ্ধান্ত সংক্রান্ত কোনো তথ্য উল্লেখ করেনি এবং কথাও বলেননি।
ভিডিও যাচাই- ২
আলোচিত ভিডিওটিতে একজন সাংবাদিককে কয়েকজনের কাছ থেকে সাক্ষাৎকার নিতে দেখা যায়। সাংবাদিকের করা প্রশ্ন সাক্ষাৎদাতার উত্তরের প্রেক্ষিতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ২৫ ডিসেম্বর “আসন্ন ডামি নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের ভাবনা! ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, রবিবার। বগুড়া সারিয়াকান্দি সোনাতলায় স্থানীয় অনলাইন সাংবাদিক মুসফিকুর রহমান আসন্ন ডামি নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের ভাবনা বিষয়ে জানতে চান। দেখুন ভিডিওটিতে দেখুন ডামি নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের ভাবনা কি।” শীর্ষক ক্যাপশনে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। (আর্কাইভ)
উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে।

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, বগুড়া সারিয়াকান্দি সোনাতলায় স্থানীয় অনলাইন সাংবাদিক মুসফিকুর রহমান স্থানীয় জনগণকে ৭ জানুয়ারি আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে যাবেন কি না এমন প্রশ্নের প্রেক্ষিতে কয়েকজনের সাক্ষাৎকার নেন।
অর্থাৎ, এখানেও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দলের সাথে সেনাবাহিনী ও পুলিশ আন্দোলন করার এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ছাত্রশিবির কর্তৃক দেশ চালানোর সংক্রান্ত কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।
এছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে করবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। আগামী ৩ জানুয়ারি থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত ৮ দিন মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বে থাকবে সেনাবাহিনী। বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন গ্রহণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি এবং সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছে। এসব ঘটনায় প্রতিদিনই বিভিন্ন ধরনের তথ্য ইন্টারনেটে প্রচারিত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় “হঠাৎ সেনাবাহিনী ও পুলিশ জামায়াতের পক্ষ নিল, আজ থেকে দেশ চালাবে জামায়াত শিবির” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওতে থাকা দাবিগুলো সঠিক নয়। অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার খণ্ডাংশ ভিডিও যুক্ত করে তাতে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবির ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, সেনাবাহিনী ও পুলিশ এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দল একসাথে আন্দোলনের ঘোষণা এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির কর্তৃক দেশ চালানোর সিদ্ধান্ত দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Dr. Md. Shafiqul Islam Masud- Facebook Post
- Bangladesh Nationalist Party-BNP- Facebook Post
- Rumor Scanner’s Own Analysis