সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্বাচন বাতিল করার গুজব

সম্প্রতি, শেখ হাসিনার পদত্যাগ, নির্বাচন বাতিল করবে সেনাবাহিনী শীর্ষক শিরোনাম এবং পদত্যাগ করলো নির্বাচন কমিশন, নির্বাচন বাতিল করলো সেনাবাহিনী শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

 নির্বাচন বাতিল

উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নির্বাচন কমিশন পদত্যাগ করেনি এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করেনি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

ভিডিও যাচাই ০১

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায় ১২ মিনিট ১০ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাকের লোগোসহ একটি প্রতিবেদন প্রচার করতে দেখা যায়।

Screenshot from Facebook

পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দৈনিক ইত্তেফাকের ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৫ ডিসেম্বর “নির্বাচনে সতন্ত্র ও নৌকার প্রার্থীদের মধ্যে সংঘাত বাড়ছেই” শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদনের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison: Rumor Scanner

ভিডিও থেকে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্বতন্ত্র ও নৌকার প্রার্থীদের মধ্যে সংঘাতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটে।

তবে ভিডিওটির কোথাও নির্বাচন কমিশন পদত্যাগ করেছে কিংবা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করার কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এমনকি নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ এবং সেনাবাহিনী নির্বাচন বাতিল করেছে এমন দাবিতে দেশিয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কোনো গ্রহণযোগ্য তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বেসরকারি ইলেক্ট্রনিক টিভি চ্যানেল আরটিভির ওয়েবসাইটে গত ২৬ ডিসেম্বর “সেনাবাহিনীর অধীনে নির্বাচন চেয়ে ফের রিট” শীর্ষক শিরোনামে একটি সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২৬ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ ভেঙে দিয়ে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্বাচন চেয়ে হাইকোর্টে ফের রিট দায়ের ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ নামে একটি রাজনৈতিক দল। একাদশ সংসদ ভেঙে দিয়ে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্বাচন চেয়ে করা রিট শুনানির জন্য গ্রহণ না করে ফেরত দিয়েছেন হাইকোর্ট। 

আরটিভির ওয়েবসাইটে ২৭ ডিসেম্বরে “সেনাবাহিনীর অধীনে নির্বাচন চেয়ে রিট ফেরত হাইকোর্টের” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তপসিল হয়ে যাওয়ায় এই মুহূর্তে এ ধরনের রিট শুনানির সুযোগ নেই বলে জানায় হাইকোর্ট।

পরবর্তীতে জাতীয় দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার এ ২৬ ডিসেম্বর “সেনাবাহিনী নির্বাচনী দায়িত্বে মাঠে থাকবে ৩-১০ জানুয়ারি” শীর্ষক শিরোনামে একটি সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে সহায়তার জন্য সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য আগামী ৩ জানুয়ারি থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত ৮ দিন মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করবে সেনাবাহিনী।

একই দিনে অনলাইন পোর্টাল বিডিনিউজ২৪ এ প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়।

মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার দাবিতে বিএনপি- জামায়াতসহ আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের তথ্য প্রচার হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন পদত্যাগ করেছে এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করেছে দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, নির্বাচন কমিশন পদত্যাগ করেনি এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করেনি। প্রকৃতপক্ষে কোনো প্রকার গ্রহণযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিতে ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

সুতরাং, নির্বাচন কমিশন পদত্যাগ করেছে এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করেছে দাবিতে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img