লাইলি-মজনুর আসল ছবি দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত হয়ে আসছে।
যা দাবি করা হচ্ছে
ফেসবুকে প্রচারিত পোস্টগুলোর ক্যাপশনে বলা হচ্ছে, “লাইলি আর মজনুর প্রেম কাহিনীর কথা শোনেননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া ভার। (চিত্রঃ ফ্রান্সের জাদুঘরে রাখা লাইলী-মজনু’র সত্যিকারের ছবি…!)” পোস্টের ক্যাপশন অনুযায়ী, লাইলি-মজনুর আসল ছবি ফ্রান্সের জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।
বিগত সময়ে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, লাইলি-মজনুর আসল ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিটি লাইলি-মজনুর ছবি নয় বরং এটি সাধারণ দু’জন মানুষের সংযুক্ত ছবির কিছুটা পরিবর্তিত সংস্করণ।
রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতিতে, লাইলি-মজনু দাবিতে প্রচারিত ছবিতে পাওয়া নারী ও পুরুষের ছবি দুইটি আলাদা আলাদা সার্চ করে নারীর ছবিটি উইকিমিডিয়া কমনসে খুঁজে পাওয়া যায়।
ছবিটি একজন সাধারণ নারীর ছবি, যেটিকে এডিট করে কিছুটা পরিবর্তন করে প্রচার করা হচ্ছে
ওয়েবসাইট লাইব্রেরি অফ কংগ্রেসের মতে, ছবিটি জর্ডানের কেরাক শহরের একজন নারীর, যিনি সম্ভবত একজন শেখের স্ত্রী ছিলেন। তার দামী পোশাক এবং চুলের বেণীতে আভিজাত্য প্রতিফলিত হয়। জর্ডান আদিবাসী খ্রিস্টান নারীরা সাধারণত এ ধরণের বেণী করতেন।
Alamy নামে আরেকটি স্টক ইমেজ সাইটেও ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। তবে, মজনু দাবিতে যে ছবিটি ছড়িয়েছে রিভার্স ইমেজ সার্চে তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায় নি।
লাইলি-মজনু দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো ১৮ শতকে প্রথম আবিষ্কার করেছেন জোসেফ নিপোখ নিৎসে। তিনি একজন ফরাসী ফোটোগ্রাফার ও আবিষ্কারক ছিলেন।
লাইলি-মজনু প্রকৃতপক্ষে, ৭ম শতকে কায়েস ইবনে আল মুল্লাওয়া নামের একজন বেদুইন কবি ও তার প্রেমিকা লাইলি বিনতে মাহদী’র প্রেমকাহিনীর উপর রচিত একটি মহাকাব্য।
পোর্টেবল ক্যামেরা আবিষ্কার করা হয় ১৮ থেকে ১৯ শতকে। এর আগে যে ক্যামেরা ছিলো না ব্যাপারটি তা নয়, তবে সেই ক্যামেরা ছিলো আকারে অনেক বড় এবং সেসব ক্যামেরায় ছবি ধারণ করার প্রক্রিয়াও ছিলো বেশ জটিল। তাই স্টুডিওর বাইরে ছবি তোলা ছিলো অসম্ভব। মহাকাব্যের লাইলির যদি বাস্তব অস্তিত্ব থেকেও থাকে তবুও ৭ম শতকে ঐ ছবি ধারণ অসম্ভব।
অনুসন্ধানে, ফ্রান্সের কোনো জাদুঘরে লাইলি-মজনুর কোন ছবি খুঁজে পাওয়া যায় নি। তবে কয়েকটি জাদুঘরে হাতে আঁকা কিছু চিত্র পাওয়া গেছে।
মূলত, লাইলি-মজনুর প্রেমকথা বেদুইন জনপদে ৫ম শতাব্দী থেকে প্রচলিত একটি জনপ্রিয় উপকথা। পরবর্তীতে, নাজামি গাজনবী নামে এক পার্সিয়ান কবি এই ভালোবাসার গল্পে মুগ্ধ হয়ে রচনা করেন এক মহাকাব্য। সেটি বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়ে লাইলি-মজনুর প্রেম-কাহিনী ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীজুড়ে। এরই প্রেক্ষিতে সাধারণ দুই বেদুইন নারী-পুরুষের ছবিকে লাইলি-মজনুর আসল ছবি দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, রিউমর স্ক্যানার টিম পূর্বেও ছবির সঙ্গে ভুয়া ক্যাপশন জুড়ে দেওয়া পোস্ট শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
সুতরাং, সাধারণ দুই বেদুইন নারী-পুরুষের ছবিকে লাইলি-মজনুর আসল ছবি দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Wekipedia- History of the camera Layla and Majnun
- Wekimedia Commons
- Alamy
- The Met- Laila and Majnun in School, Laila and Majnun