গেল কয়েক বছর ধরে “ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট এবং বাবা পেশায় রিকশাচালক সেল্যুট বাবা memories of convocation” শীর্ষক ক্যাপশনে একটি ছবি সম্বলিত পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে।
পোস্টগুলোতে যে ছবিটি সংযুক্ত করা হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, রিকশায় গাউন-হ্যাট পরা অবস্থায় বসে থাকা একজন বয়স্ক ব্যক্তিকে দাঁড়িয়ে স্যালুট জানাচ্ছেন এক ব্যক্তি।
সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন – এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। আর্কাইভ ভার্সন দেখুন – এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
২০২০ সালেও একই দাবিতে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন – এখানে এবং এখানে।
আর্কাইভ ভার্সন দেখুন – এখানে এবং এখানে।
২০১৮ সালেও একই দাবিতে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন – এখানে এবং এখানে।
আর্কাইভ ভার্সন দেখুন – এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ছবিতে থাকা গ্র্যাজুয়েট ব্যক্তিটি ও রিকশাচালক বয়োবৃদ্ধ সম্পর্কে বাবা-ছেলে নয় এবং ছবিটি সাম্প্রতিক সময়েরও নয়।
অনুসন্ধানে সম্প্রতি ‘খন্দকার’স GK’ নামক পেজে প্রকাশিত উক্ত পোস্টের কমেন্টে Uzzol Hossain নামক এক ব্যক্তির কমেন্ট নজরে আসে রিউমর স্ক্যানার টিমের।
জনাব উজ্জ্বল লিখেছেন, “এটা ভুয়া ছবি, রিক্সা চালককে একজন স্যালুট করেছেন, বাট ওনারা সম্পর্কে বাবা-ছেলে নন।”
এই কমেন্টের সূত্র ধরে জনাব উজ্জ্বলের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, “এটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভোকেশনের ছবি। ৫১ তম কনভোকেশন। ওইবার আমিও কনভোকেশন নিয়েছিলাম। এটা ‘বাবা-ছেলে’র ছবি বলে প্রচার হওয়াতে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ ফেসবুক পেজে অনেক লেখালেখি হয়েছিল। সত্যটা হল তিনি ওই রিক্সাচালকের ছেলে নন। ওনাকে এমনিতে স্যালুট করেছিলেন। যেটা অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছিল, কিন্তু তথ্যটা একটু ইমোশোনাল করে অনেকে বাবা ছেলে বলে প্রচার করেন।”
পরবর্তীতে কিওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতিতে অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘The Daily Campus’ এর ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ০৪ অক্টোবর “গ্রাজুয়েট ও রিকশাচালক বাবা-ছেলে নয়” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, “ভাইরাল হওয়া ছবির গ্র্যাজুয়েট লিটন মোস্তাফিজ। তবে সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে আমরা বন্ধুরা মিলে অনেক ছবি তুলছিলাম। হঠাৎ দেখি পাশে রিকেশাওয়ালা চাচা আমার দিকে মায়াবী চোখে তাকিয়ে আছেন। আমি এগিয়ে গিয়ে তার গায়ে আমার গাউন পরিয়ে দেই। এ সময় কয়েকটি ছবি তোলা হয়। ভাইরাল কিংবা বাহবা পাওয়ার জন্য ছবি তুলিনি। আমার বাবাও একজন কৃষক। শ্রমজীবীদের কষ্ট আমাকে নাড়া দেয়। তাদের প্রতি আমার বিশেষ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রয়েছে। যিনি ছবি তুলেছিলেন তার পেজে পোস্ট দেওয়ার পর মুহূর্তেই তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ছবি নিয়ে যখন বিতর্ক সৃষ্টি হয় তখন আমি ফেসবুকে আমার বক্তব্য তুলে ধরি।”
অনুসন্ধানে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর প্রকাশিত লিটন মুস্তাফিজের এ সম্পর্কিত ফেসবুক পোস্টটি খুঁজে পাওয়া যায়।
মূলত, ছবিতে স্যালুটরত ঢাবি গ্র্যাজুয়েটের নাম লিটন মোস্তাফিজ। ছবিটি ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম সমাবর্তন সামনে রেখে তোলা হয়েছিলো এবং সেসময়ে এক রিকশাচালককে গাউন পরিয়ে স্যালুট করার এই ছবিটি ফেসবুকে পোস্ট করা হলে এটি বিবর্তিত হয়ে বাবা-ছেলে দাবিতে ছড়িয়ে পড়ে। এর প্রেক্ষিতে সেসময় জনাব মোস্তাফিজ এক ফেসবুক পোস্টে ছবিটির বিষয়ে বিস্তারিত লিখে বিভ্রান্তি দূর করেন। তাছাড়া, এক সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানান, “সমাবর্তনে বন্ধুরা মিলে ছবি তুলছিলাম। হঠাৎ দেখি পাশে রিকশাওয়ালা চাচা আমার দিকে মায়াবী চোখে তাকিয়ে। আমি এগিয়ে গিয়ে তার গায়ে আমার গাউন পরিয়ে দেই। এসময় কয়েকটি ছবি তোলা হয়। আমার বাবাও একজন কৃষক। শ্রমজীবীদের কষ্ট আমাকে নাড়া দেয়।” ২০১৮ সালের সেই ছবিটিই সম্প্রতি আবার ঢাবির ৫৩তম সমাবর্তন ঘিরে নতুন করে বিভ্রান্তিকর দাবিতে প্রচারিত হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ১৯ নভেম্বর।
সুতরাং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গ্রাজুয়েট এবং উক্ত ক্যাম্পাসের একজন রিকসাচালকের একসাথে তোলা ছবিকে বাবা ও ছেলে দাবিতে প্রচার হয়ে আসছে ; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- The Daily Campus: গ্রাজুয়েট ও রিকশাচালক বাবা-ছেলে নয়
- Liton Mostafuz: Facebook Post