সম্প্রতি মুসলিম বিশ্ব প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপন করেছে। এ বিষয়ে দেশের মূলধারার সংবাদমাধ্যম কালবেলা’র এক ভিডিও প্রতিবেদনে (ভিডিওর ৫০ সেকেন্ড সময় থেকে) দাবি করা হয়, মুসলিম দেশ হিসেবে শুধু মালয়েশিয়াতেই এবার ২৯টি রোজা শেষে ঈদ পালিত হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মুসলিম দেশ হিসেবে চলতি বছর শুধু মালয়েশিয়াতেই ২৯ রোজা শেষে ঈদ পালিত হয়নি বরং জর্ডান, পাকিস্তান, মরক্কো এবং ওমানসহ বিশ্বের একাধিক মুসলিম প্রধান দেশেই এমন ঘটনার নজির পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে গালফ নিউজের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, ওমানে ২৯ রোজা শেষে ১০ এপ্রিল পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে।
একই দিন অর্থাৎ ১০ এপ্রিল মুসলিম বিশ্বের আরেক দেশ মরক্কোতেও ২৯ রোজা শেষে ঈদ পালনের খবর দিয়েছে সে দেশের সংবাদমাধ্যম।
মুসলিম প্রধান আরেক দেশ জর্ডানে বাংলাদেশের মতো ১২ মার্চ রমজান মাস শুরু হওয়ার পর ২৯ রোজা শেষে গত ১০ এপ্রিল ঈদ পালিত হয়েছে।
মুসলিম বিশ্বের আরেক দেশ পাকিস্তানেও ২৯ রোজা শেষে চলতি বছর ঈদুল ফিতর পালিত হয়েছে।
মূলত, সম্প্রতি মুসলিম বিশ্ব প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুল ফিতর উদযাপন করেছে। এ বিষয়ে কালবেলা’র এক ভিডিও প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, মুসলিম দেশ হিসেবে শুধু মালয়েশিয়াতেই এবার ২৯ রোজা শেষে ঈদ পালিত হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, মালয়েশিয়া ছাড়াও আরো অন্তত চারটি মুসলিম প্রধান দেশ ২৯ রোজা শেষে এবার ঈদুল ফিতর পালন করেছে।
সুতরাং, মুসলিম প্রধান একাধিক দেশ চলতি বছর ২৯ রোজা শেষে ঈদ পালন করলেও দেশের একটি গণমাধ্যমে শুধু মালয়েশিয়ায় এমন ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘমেয়াদী কার্বোহাইড্রেট মেটাবলিক ডিসঅর্ডার যা রক্তে গ্লুকোজের স্বাভাবিক মাত্রার বিঘ্ন ঘটিয়ে হৃৎপিণ্ড, কিডনি, রক্তবাহিকা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি সাধন করে থাকে। আমরা যখন খাবার খাই, তখন আমাদের অগ্নাশয় থেকে ইনসুলিন নামক একধরনের হরমোন নিঃসৃত হয়। ইনসুলিনের খাদ্যের অতিরিক্ত গ্লুকোজ কমিয়ে দেয়। যখন ইনসুলিনের উৎপাদন কমে যায় কিংবা দেহে পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপাদিত হওয়ার পরও যখন তার কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়, তখন শরীরে অতিরিক্ত গ্লুকোজ জমা হয়। এই অবস্থাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় ডায়াবেটিস বলে। মানুষের দেহে বিভিন্ন প্রকারের ডায়াবেটিস দেখতে পাওয়া যায়। তবে, মোটাদাগে ডায়াবেটিস তিন ধরনের–
টাইপ-১ ডায়াবেটিস
টাইপ-২ ডায়াবেটিস
জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস
এগুলোর মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ৪২২ মিলিয়ন মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এছাড়াও, বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে ডায়াবেটিসের কারণে মারা যান। বিগত কয়েক দশক ধরে ডায়াবেটিসের এই প্রাদুর্ভাব বাড়ছে বলেও জানায় সংস্থাটি।
যুক্তরাজ্যের ডায়াবেটিস সংস্থার তথ্যানুসারে, এখন পর্যন্ত ডায়াবেটিস একটি অনিরাময়যোগ্য ব্যাধি। ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখাই আক্রান্ত ব্যক্তির একমাত্র পাথেয়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে রোগীদের নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন, শারীরিক ব্যায়াম ও খাদ্যাভাসের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতে হয়।
স্বাস্থ্যবিষয়ক ম্যাগাজিন মেডিকেল নিউজ টুডে’র তথ্যমতে, ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্যতালিকায় মিস্টিজাতীয় খাবার রাখতে নিরুৎসাহিত করা হলেও ফলের বিষয়ে তেমন কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই। কোনো নির্দিস্ট ফল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিষিদ্ধও নয়। পুষ্টির উৎস হিসেবে যেকোনো ফলই গ্রহণ করতে পারবেন ডায়াবেটিস রোগীরা। তবে, এক্ষেত্রে ফলে উপস্থিত কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বিবেচনায় রাখতে হবে।
ফলে কতটুকু কার্বোহাইড্রেট থাকলে সেটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিরাপদ?
আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, ডায়াবেটিস রোগীরা তিনটি ভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে নিজেদের খাদ্যতালিকায় ফলের পরিমাণ নির্ধারণ করতে পারেন। সেগুলো হলো-
কার্ব কাউন্ট
ডায়াবেটিস রোগীরা প্রতিবেলার খাদ্যতালিকায় ১৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেটযুক্ত ফল রাখতে পারেন।তাজা ফলের একটি ছোট টুকরা কিংবা ১/২ কাপ ফ্রোজেন বা ক্যানড ফ্রুটে ১৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়। এছাড়াও, ৩/৪ কাপ থেকে ১ কাপ তাজা বেরি ও তরমুজ জাতীয় ফল কিংবা ১/৩-১/২ কাপ ফলের রসে ১৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে। এভাবে নির্দিষ্ট ফলের নির্দিষ্ট পরিমাণে উপস্থিত কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ ১৫ গ্রামের নিচে থাকলেই ডায়াবেটিস রোগী নিজের খাদ্যতালিকায় সে ফল স্বচ্ছন্দে স্থান দিতে পারেন। এক্ষেত্রে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ মুখ্য, ফলের প্রজাতি নয়।
ডায়াবেটিস প্লেট মেথড
এই পদ্ধতিতে কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণ পুরো প্লেটের আনুপাতিক হারে নির্ধারণ করা হয়। ৯ ইঞ্চির একটি প্লেটকে সমান চারভাগে ভাগ করা হয়। এবার পুরো প্লেটের ২ ভাগ ননস্টার্চ ভেজিটেবল, ১ ভাগ কার্বোহাইড্রেট(ভাত, ফল ইত্যাদি) এবং ১ ভাগ প্রোটিন জাতীয় খাবার অন্তর্ভুক্ত করে খাদ্যতালিকা নির্ধারণ করতে হয়।
Source: NIDDK
গ্লাইসেমিক ইনডেক্স
গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের (জিআই) মাধ্যমেও খাদ্যে থাকা কার্বোহাইড্রেট বা শর্করার পরিমাণ সম্পর্কে জানা যায়। গ্লাইসেমিক ইনডেক্স হলো, ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত স্কেলে খাদ্যের রেটিং। এই স্কোর নির্দেশ করে খাবার কত দ্রুত রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে। সাধারণভাবে শরীর মাঝারি বা নিম্ন জিআই খাবারের তুলনায় উচ্চ জিআই খাবার দ্রুত শোষণ করে।
জিআই স্কোরের ভিত্তিতে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ফল একটি ভালো খাদ্য। কারণ, বেশির ভাগ ফলে ফ্রুক্টোজ এবং প্রচুর ফাইবার থাকায় এদের জিআই স্কোর কম থাকে।
এছাড়াও, ডায়াবেটিস রোগীর খবর হিসেবে একটি ফলের তালিকাও উল্লেখ করে আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন। সেখানে, আপেল, আঙুর, কলা, পেঁপে, আনারস সহ বিভিন্ন প্রজাতির ফলকে ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ভালো হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
Source: আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের একাধিক গবেষণাপত্রের (১, ২) তথ্যমতে, নিয়মিত খাদ্যতালিকায় ফল রাখা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। এসব গবেষণাপত্র আরো জানায়, দৈনিক ২০০ গ্রাম ফল গ্রহণ টাইপ-২ ডায়বেটিসের প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, দৈনিক ১৩৩ গ্রাম পর্যন্ত ফলাহার টাইপ-২ ডায়াবেটিসের জটিলতা ও মৃত্যুহার উভয়ই কমিয়ে দেয় বলে এসব গবেষণায় জানা যায়।
মূলত, ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্যতালিকায় মিষ্টিজাতীয় খাবার পরিহার করার পরামর্শ থাকলেও কোনো নির্দিষ্ট ফল খাওয়ার ব্যাপারে কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই। ডায়াবেটিস রোগীরা যেকোনো ফলই খেতে পারবেন কিন্তু ফলে উপস্থিত কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বিবেচনায় রাখতে হবে। ফলে, উচ্চমাত্রার কার্বোহাইড্রেট থাকলে সে ফলও ডায়াবেটিস রোগীর খেতে পারবেন, তবে কম পরিমাণে। সুতরাং, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কোনো নির্দিষ্ট ফল নিষিদ্ধ নয় বরং কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বিবেচনায় নিয়ে যেকোনো ফলই তারা খেতে পারেন।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় দায়ের করা ধর্ষণ মামলায় হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক গত ৪ এপ্রিল জামিন পেয়েছেন। এই জামিনের পর সম্প্রতি, “ জামিনে মুক্তি পেয়ে লাইভে এলেন মামুনুল হক” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মামুনুল হক কারাগার থেকে মুক্তি পাননি বরং প্রচারিত ভিডিওটি ২০২১ সালের।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এই ভিডিওটি নিয়ে পূর্বেও ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার। গত বছরের ০৫ মে প্রকাশিত এই ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভিডিওটি ২০২১ সালের।
মামুনুল হকের ফেসবুক লাইভের এই ভিডিওটি সমালোচনার মুখে তিনি পরবর্তীতে সরিয়ে নেন।
অর্থাৎ, তিন বছরের পুরোনো ভিডিও ব্যবহার করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
মামুনুল হকের মুক্তির বিষয়ে অনুসন্ধানে জানা যাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে আরও মামলা থাকায় তিনি এ মামলায় জামিন পেলেও কারামুক্তি পাচ্ছেন না বলে জানানো হয়েছে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে।
মূলত, ২০২১ সালের ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়েল রিসোর্টের একটি কক্ষে মামুনুল হক ও তার কথিত স্ত্রী অবরুদ্ধ হওয়ার পর সমালোচনার সৃষ্টি হলে পরবর্তীতে সেই বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে লাইভে আসেন মামুনুল হক। সম্প্রতি তার ধর্ষণ মামলায় জামিন পাওয়াকে কেন্দ্র করে ২০২১ সালের মামুনুল হকের পুরোনো সেই লাইভ ভিডিওকে ‘মুক্তি পেয়ে লাইভে আসলেন মামুনুল হক’ শীর্ষক দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। তবে মামুনুল হক কারাগার থেকে মুক্তি পাননি। তার বিরুদ্ধে আরও মামলা থাকায় তিনি কথিত ধর্ষণ মামলায় জামিন পেলেও কারামুক্তি পাচ্ছেন না।
সুতরাং, হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব হোলি পালিত হয়েছে। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির বাংলা সংস্করণের ওয়েবসাইটে ‘হিন্দু ধর্ম অবলম্বীদের অন্যতম হোলি উৎসবে বিশ্ব জুড়ে ৪৮ হাজার মেয়ে ধর্ষণের শিকার’ শীর্ষক শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে দাবি করে ফেসবুকে কথিত সংবাদটির একটি স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘হিন্দু ধর্ম অবলম্বীদের অন্যতম হোলি উৎসবে বিশ্ব জুড়ে ৪৮ হাজার মেয়ে ধর্ষণের শিকার’ শিরোনামে বিবিসি বাংলায় কোনো সংবাদ প্রকাশিত হয়নি বরং, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে বিবিসি বাংলা ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনের আদলে আলোচিত স্ক্রিনশটটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দাবিকৃত এমন কোনো সংবাদ বিবিসি বাংলার ওয়েবসাইটে পায়নি রিউমর স্ক্যানার।
এছাড়াও, ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, বিবিসি বাংলার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংবাদগুলোর লেখার ফন্টের সাথে প্রচারিত ছবিটির লেখার ফন্টের অমিল পাওয়া যায়।
Screenshot comparison: Rumor Scanner
পরবর্তীতে একাধিক ভিন্ন ভিন্ন কিওয়ার্ড সার্চ করে ‘হোলি উৎসবে বিশ্ব জুড়ে ৪৮ হাজার মেয়ে ধর্ষণের শিকার’ শীর্ষক কোনো তথ্য অন্যান্য গণমাধ্যমেও পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে বিবিসি বাংলার একাধিক সাংবাদিকের সাথে কথা বলেছে রিউমর স্ক্যানার৷ তারাও জানিয়েছেন, বিবিসি বাংলায় এমন কোনো সংবাদ প্রকাশিত হয়নি।
মূলত, সম্প্রতি, ‘হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম হোলি উৎসবে বিশ্ব জুড়ে ৪৮ হাজার মেয়ে ধর্ষণের শিকার’ শীর্ষক শিরোনামে বিবিসি বাংলার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন দাবিতে একটি স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিবিসি বাংলা এমন কোনো সংবাদ প্রকাশ করেনি।
সুতরাং, ‘হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম হোলি উৎসবে বিশ্ব জুড়ে ৪৮ হাজার মেয়ে ধর্ষণের শিকার’ শীর্ষক শিরোনামে বিবিসি বাংলার সংবাদ দাবিতে প্রচারিত স্ক্রিনশটটি ভুয়া ও বানোয়াট।
২০২৩ সালের ০৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে একটি হামলা শুরু করে, যার ফলে ইসরায়েল-হামাসের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি সংঘাত শুরু হয় এবং এটি এখনো চলমান। এই সংঘাত সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। সংঘাতকে কেন্দ্র করে বিশ্বের নানা দেশ থেকে গাজায় ত্রাণ ও অর্থ সহায়তা পাঠানো হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড তাদের কোমল পানীয় মোজোর বিক্রয় থেকে প্রতি বোতলের বিপরীতে ১ টাকা ফিলিস্তিনের সহায়তায় দেওয়ার ক্যাম্পেইন শুরু করে, যা ক্রেতাদের মধ্যে বেশ সাড়া জাগিয়েছে। সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে মোজোর ২ লিটারের একটি বোতলের ছবি প্রকাশ করে দাবি করা হচ্ছে, ৮০ টাকার মোজো ১০০ টাকা হয়ে গেল কিভাবে? ফিলিস্তিনে তো প্রতি বোতল থেকে মাত্র ১ টাকা যাচ্ছে।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এ সংক্রান্ত পোস্টগুলোতে উল্লেখ করা হয়েছে, “Mojo কি তাহলে আবেগকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা করছে?? ৮০ টাকার Mojo ১০০ টাকা হয়ে গেল কিভাবে ?? ফিলিস্তিনে যায় তো মাত্র ১ টাকা বোতল প্রতি৷ প্রোডাকশন বাড়লেতো দাম কমার কথা কিন্তু প্রোডাকশন বাড়ার সাথে সাথে দাম বাড়ার কারণ কি?? যে বাংলাদেশী Coca-Cola বয়কট করেছে সে বাংলাদেশী কিন্তু Mojo ও বয়কট করতে পারবে সুতরাং আবেগকে হাতিয়ার বানিয়ে ব্যবসা না করে, বিনয়ের সাথে ব্যবসা করেন”
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ফিলিস্তিনের বিষয়ে ক্যাম্পেইন শুরুর পর মোজোর ২ লিটার বোতলের দাম ৮০ থেকে বাড়িয়ে ১০০ টাকা করা হয়নি বরং মোজোর এই দাম সর্বশেষ গতবছরের জুলাইতে বৃদ্ধি পেয়েছে, তখন ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতও শুরু হয়নি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে মোজোর উৎপাদনকারী মূল প্রতিষ্ঠান আকিজ ভেঞ্চারের ওয়েবসাইটে গত বছরের (২০২৩) ০৭ ডিসেম্বর প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যাচ্ছে, গত বছরের (২০২৩) ২৪ নভেম্বর ঢাকার হাতিরঝিলে আয়োজিত ‘To Gaza From Dhaka’ নামে একটি ফান্ডরেইজিং কনসার্টে মোজো ‘Mojo Support Palestine’ নামে একটি ক্যাম্পেইন শুরুর ঘোষণা দেয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে মোজোর প্রতি বোতলের আয় থেকে এক টাকা ফিলিস্তিনের সহায়তায় পাঠানো হবে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিনই মোজোর ফেসবুক পেজেও বিষয়টি জানানো হয়।
এর আগে সমজাতীয় এক দাবির প্রসঙ্গে আকিজ ফুড এন্ড বেভারেজের ব্র্যান্ড ম্যানেজার আদনান শফিক রিউমর স্ক্যানারকে জানিয়েছিলেন, তারা ০৪ ডিসেম্বর থেকে এই ক্যাম্পেইন শুরু করেন।
ওপেন সোর্স অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বরেও মোজোর ২ লিটারের বোতল ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। সেসময় এ বিষয়ে একাধিক ফেসবুক ব্যবহারকারীদের পোস্ট খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম (১,২,৩)।
Screenshot : Facebook.
এ প্রসঙ্গে আদনান শফিক বলেন, মোজো সর্বশেষ মূল্য বৃদ্ধি করেছিল ২০২৩ সালের জুলাই মাসে। কারণ ছিল ডলারের মূল্য বৃদ্ধি এবং অন্যান্য উপাদানের (বিশেষত চিনির) মূল্যবৃদ্ধির কারণে। ঠিক সেই সময় জুলাই মাসে মোজো ১ লিটার ৬০ টাকা এবং ২ লিটার ১০০ টাকা বাজারজাত করে।
তিনি আরো বলেন, ফিলিস্তিন ইস্যুতে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে মোজো ডোনেশন ক্যাম্পিং শুরু করে ডিসেম্বর’২৩ থেকে।
এদিকে কিছু ফেসবুক পোস্টে দাবি করা হচ্ছে যে, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতেও ৮০ টাকায় ২ লিটার মোজো কেনা যাচ্ছিল। কিন্তু, রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত বছর মূল্যবৃদ্ধির পর থেকে মোজোর ২ লিটার বোতলের দাম আর পরিবর্তন হয়নি।
আদনান শফিকও এ দাবিকে মিথ্যা বলে নিশ্চিত করেছেন।
পুরোনো ব্যাচের পণ্য এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ৮০ টাকার কেনা সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আদনান শফিক জানান, মোজোর প্রত্যেকটা বোতলের মেয়াদ থাকে চার থাকে পাঁচ মাস, তাই এটি সম্ভব নয়।
এছাড়া পূর্বে ফিলিস্তিন নিয়ে ক্যাম্পেইন শুরুর পর মোজোর ৫০০ মিলি বোতলের দাম বেড়েছে দাবি করা হলে সে বিষয়টি নিয়েও ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার টিম।
পূর্বের এই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিভিন্ন ই-কমার্স ওয়েবসাইটের মূল্যছাড় কিংবা কো-ব্রান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে বাজারমূল্য থেকে কিছুটা কম দামে মোজো পাওয়া যেতে পারে।
মূলত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েলে আক্রমণের পর ইসরায়েল-হামাস সংঘাত শুরু হয়, যা দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের সূচনা করে। এই প্রেক্ষাপটে, বিশ্বের নানা দেশ থেকে গাজায় ত্রাণ ও অর্থ সহায়তা পাঠানো হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড ঘোষণা করে যে তারা তাদের কোমল পানীয় মোজোর প্রতি বোতল বিক্রয় থেকে ১ টাকা ফিলিস্তিনের সহায়তায় দান করবে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মোজোর ২ লিটারের বোতলের ছবি প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, ফিলিস্তিন নিয়ে ক্যাম্পেইন শুরুর পর মোজোর ২ লিটার বোতলের দাম ৮০ থেকে বাড়িয়ে ১০০ টাকা করা হয়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে জেনেছে, মোজোর এই দাম সর্বশেষ গত বছরের জুলাইতে বৃদ্ধি পেয়েছে, তখন ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতও শুরু হয়নি। এছাড়া ফিলিস্তিনের সহায়তায় মোজোর ক্যাম্পেইন গত ডিসেম্বরে শুরু হয়েছিল।
সুতরাং, ফিলিস্তিনের বিষয়ে ক্যাম্পেইন শুরুর পর মোজোর ২ লিটার বোতলের দাম ৮০ থেকে বাড়িয়ে ১০০ টাকা করা হয়েছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।
সম্প্রতি, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) বর্তমান চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ ও র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈনের বক্তব্যের আলাদা আলাদা ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে তারা Crazy Time Winner নামে একটি ক্যাসিনোর অ্যাপ্লিকেশনের প্রচারণা চালাচ্ছেন দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
Bangladesh Games নামের ফেসবুক পেজটি থেকে প্রকাশিত এই ভিডিও বিজ্ঞাপন আকারে প্রচার করা হচ্ছে। মেটার এড লাইব্রেরি থেকে ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিটিআরসি চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ ও র্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন ক্যাসিনোর প্রচারণায় অংশ নেননি বরং আরটিভিতে তাদের সাক্ষাৎকারের পুরোনো ভিডিও ব্যবহার করে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে বিটিআরসি চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ ও র্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈনের ভিডিও ক্লিপগুলোর মূল সূত্র খুঁজে বের করেছে রিউমর স্ক্যানার। গেল বছরের ০৯ নভেম্বর আরটিভিতে অনলাইন জুয়া সংক্রান্ত একটি ভিডিও প্রতিবেদনে ফুটেজগুলোর সন্ধান মিলেছে।
Screenshot collage: Rumor Scanner
অনলাইন জুয়ার এজেন্টরা তাদের প্রচারণার কাজে কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের ব্যবহার করছে এমন তথ্য সামনে রেখে এই প্রতিবেদনে অন্যান্যদের সাথে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সে সময়ের ভাইস চেয়ারম্যান (বর্তমানে চেয়ারম্যান) মহিউদ্দিন আহমেদ ও র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈনের সাক্ষাৎকার নেয় আরটিভি। তবে এই দুজনের সাক্ষাৎকার বিশ্লেষণ করে Crazy Time Winner নামে কোনো ক্যাসিনোর অ্যাপ্লিকেশনের প্রচারণার তথ্য মেলেনি। তাদের এ সংক্রান্ত মূল বক্তব্যের অডিওর স্থলে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ভুয়া অডিও যুক্ত করে দাবিটিকে বাস্তর রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
Bangladesh Games নামের পেজটি থেকে ৪৪ সেকেন্ডের এই ভিডিও বিজ্ঞাপন আকারে প্রচার শুরু হয় গত ১৪ এপ্রিল, যার মেটা লাইব্রেরি আইডি 308186202303481। ২০২০ সালের ২৬ আগস্ট চালু করা এই পেজের নাম শুরু থেকেই Bangladesh Games ই ছিল। মেটার এড লাইব্রেরি জানাচ্ছে, আলোচিত ভিডিওটি ছাড়াও একই ক্যাসিনো অ্যাপের আরও অন্তত আটটি ভিডিও এই মুহূর্তে বিজ্ঞাপন আকারে চালানো হচ্ছে পেজটি থেকে। এগুলোর লাইব্রেরি আইডি যথাক্রমে 427972953212963, 1460187154573791, 442621475105138, 901842465028606, 378800375124555, 450831390630229, 915803403627869, 1172210244139033। এর মধ্যে আলোচিত ভিডিওটিরই আরেকটি কপি প্রচার করা শুরু হয় গত ০৭ এপ্রিল। এই পেজটির এড্রেস হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে থাইল্যান্ডের পাহাট্টালাং (Phatthalung) নামে একটি স্থানের নাম। পেজটিতে থাইল্যান্ডেরই একটি ফোন নম্বর (+66 92 590 4832) দেওয়া রয়েছে যাতে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে রিউমর স্ক্যানার৷ এই পেজে মৌলিক কোনো পোস্ট নেই। বায়োতে থাই ভাষায় যা লেখা রয়েছে তার বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, “আমদানিকৃত ফ্যাশন ব্যাগ, ভালো মানের, সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রি করা হয়৷” কিন্তু আদতে ক্যাসিনোর বিজ্ঞাপন দিয়ে পেজটি একটিভ রাখা হচ্ছে।
মূলত, অনলাইন জুয়ার এজেন্টরা তাদের প্রচারণার কাজে কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের ব্যবহার করছে এমন তথ্য জানিয়ে গত বছরের ০৯ নভেম্বর আরটিভিতে একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রচার করা হয় যাতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) বর্তমান চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ ও র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈনেরও সাক্ষাৎকারও ছিল। সম্প্রতি এই দুই কর্মকর্তার বক্তব্যের ভিডিও ব্যবহার করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তাতে ভিন্ন ভয়েসওভার এবং জুয়ার অ্যাপের প্রচারণার ভিডিও যুক্ত করে দাবি করা হচ্ছে, তারা Crazy Time Winner ক্যাসিনোর অ্যাপের প্রচারণা করছেন। প্রকৃতপক্ষে, তারা এমন কোনো ক্যাসিনো বা জুয়ার অ্যাপের প্রচারণায় অংশ নেননি।
সুতরাং, বিটিআরসি চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ ও র্যাব কর্মকর্তা খন্দকার মঈন ক্যাসিনোর প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন শীর্ষক দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং এটি একটি স্ক্যাম বা প্রতারণা।
সম্প্রতি, “ঈদের ছুটিতে ঢাকা খালি হলেও খালি হয়নি নারায়ণগঞ্জ এবার রেকর্ড গড়লো রাসেল পার্ক” শীর্ষক শিরোনামে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভি’র আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
উক্ত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, পোস্টগুলোতে ১৭ হাজারের অধিক রিয়েক্ট পড়েছে এবং ৭০০ এর অধিক ব্যবহারকারী পোস্টগুলোতে নিজেদের মন্তব্য জানিয়েছেন। এছাড়াও পোস্টগুলো প্রায় ২০০ বার শেয়ার করা হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আরটিভি “ঈদের ছুটিতে ঢাকা খালি হলেও খালি হয়নি নারায়ণগঞ্জ এবার রেকর্ড গড়লো রাসেল পার্ক” শীর্ষক দাবিতে কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি বরং গত ১৩ এপ্রিল আরটিভি’র ফেসবুক পেজে প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে উক্ত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ড পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, উক্ত ফটোকার্ডটিতে আরটিভির লোগোর পাশাপাশি ফটোকার্ডটি প্রকাশের তারিখ হিসেবে ১৩ এপ্রিল ২০২৪ উল্লেখ করা হয়েছে।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত ফটোকার্ডে থাকা গণমাধ্যমের লোগো এবং তারিখের সূত্র ধরে আরটিভি’র ফেসবুক পেজ (১, ২) এবং ওয়েবসাইটে গত ১৩ এপ্রিল প্রকাশিত এমন কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও, আলোচিত ফটোকার্ডের ফন্টের সাথে আরটিভির প্রচলিত ফটোকার্ডের বেশকিছু অমিল খুঁজে পাওয়া যায়। আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে ফন্ট ও ফন্টের কালারের ভিন্নতা ও ফটোকার্ডে প্রদর্শিত ছবির অবস্থানে অমিল পরিলক্ষিত হয়।
Comparison Image By Rumor Scanner
যা থেকে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, আরটিভির লোগো সম্বলিত আলোচিত ফটোকার্ডটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে সম্পাদনা করে তৈরি করা হয়েছে।
মূলত, সম্প্রতি “ঈদের ছুটিতে ঢাকা খালি হলেও খালি হয়নি নারায়ণগঞ্জ এবার রেকর্ড গড়লো রাসেল পার্ক” শীর্ষক দাবিতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভি’র ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, আরটিভি এমন কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, গণমাধ্যমটির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্টগুলোতে প্রচারিত ফটোকার্ড নকল করে আলোচিত দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, “ঈদের ছুটিতে ঢাকা খালি হলেও খালি হয়নি নারায়ণগঞ্জ এবার রেকর্ড গড়লো রাসেল পার্ক” শীর্ষক দাবিতে আরটিভির নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি এডিটেড বা সম্পাদিত।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আয়মান সাদিকের কোলে থাকা বাচ্চাটি আয়মান-মুনজেরিন দম্পতির সন্তান নয় বরং বাচ্চাটি আয়মানের বন্ধু অভিনেতা সৌমিক আহমেদের।
অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে আয়মান সাদিকের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ১১ এপ্রিল তিনটি ছবি যুক্ত একটি পোস্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Ayman Sadiq Instagram
উক্ত পোস্টের একটি ছবিতে, এক নারীর কোলে একটি বাচ্চা দেখা যায়। এই বাচ্চার পোশাকের সাথে আয়মান সাদিক এবং মুনজেরিন শহীদ দম্পতির বাচ্চা দাবিতে প্রচারিত ছবিটিতে থাকা বাচ্চাটির পোশাকের মিল রয়েছে।
পরবর্তীতে অনুসন্ধানে জানা যায়, আয়মান সাদিকের ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা ছবিতে বাচ্চা কোলে নিয়ে বসে থাকা নারী অভিনেতা সৌমিক আহমেদের স্ত্রী ফাতেমা তুজ জোহরা।
বিষয়টি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য আয়মান সাদিকের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি বলেন, “শিশুটি আমার ফ্রেন্ড সৌমিক আহমেদের মেয়ে। আমার স্ত্রীর স্টোরিতে (ইন্সটাগ্রাম/ফেসবুক) এই ছবিটা গিয়েছিল সেখান থেকে মানুষজন সংগ্রহ করেছে।”
মূলত, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক কোলে বাচ্চাসহ আয়মান সাদিকের একটি ছবি ছবি প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে কোলে থাকা বাচ্চাটি আয়মান সাদিক এবং মুনজেরিন শহীদ দম্পতির সন্তান। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে আয়মান সাদিকের কোলে থাকা বাচ্চাটি তার বন্ধু অভিনেতা সৌমিক আহমেদের। আয়মান সাদিক নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সুতরাং, অভিনেতা সৌমিক আহমেদের সদ্য জন্ম নেওয়া সন্তানকে আয়মান সাদিক এবং মুনজেরিন শহীদ দম্পতির সন্তান দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
১৮ এপ্রিল, ২০২৪ : এই প্রতিবেদন প্রকাশ পরবর্তী সময়ে টিকটকে একই দাবি সম্বলিত ভিডিও আমাদের নজরে আসার প্রেক্ষিতে উক্ত ভিডিওকে প্রতিবেদনে দাবি হিসেবে যুক্ত করা হলো।
গত ১ এপ্রিল সিরিয়ায় ইরানের দূতাবাসের নিকটে ইসরায়েলের হামলায় ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের একজন সিনিয়র কমান্ডার ও ছয় কর্মকর্তা নিহত হলে এই হামলার প্রতিবাদে গত ১৩ এপ্রিল রাতে ইসরায়েলে কয়েকশ ড্রোন ও মিসাইল হামলা চালায় ইরান। এরই প্রেক্ষিতে ইরান কর্তৃক ইসরায়েলের ওপর আক্রমণের দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি ইরান কর্তৃক ইসরায়েলের ওপর আক্রমণের ঘটনার নয় বরং ২০২০ সালে তুরস্ক কর্তৃক সিরিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার সময়কার একটি ভিডিওকেই আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে তুরষ্কের ইংরেজি দৈনিক ‘Daily Sabah’ এর ভেরিফায়েড এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে ২০২০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি একটি টুইটে আলোচিত ভিডিওটির অনুরূপ একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot : Daily Sabah
উক্ত ভিডিওটির বিস্তারিত বর্ণনা থেকে জানা যায় এটি সিরিয়ার উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় ইদলিব প্রদেশে তুর্কি বাহিনী কর্তৃক আক্রমণের ভিডিও।
এছাড়া, ‘RUSA NEWS’ নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০২০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত একটি ভিডিওর সাথেও আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Image Comparison : Rumor Scanner
ভিডিওটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে তুর্কি সেনাবাহিনী সিরিয়ায় অন্তত ৬০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। যার কারণে সিরিয়ার সেনাবাহিনীর সদস্যরা গুরুতর আহত হয়ে জায়গা ত্যাগ পূর্বের দখলকৃত জায়গা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওটি গত ১৩ এপ্রিল ইরান কর্তৃক ইসরায়েলে হামলার ঘটনার নয়।
মূলত, ২০২০ সালে তুরস্ক-সিরিয়া সংঘাত চলাকালে তুর্কি সেনাবাহিনী সিরিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার সময়কার একটি ভিডিওকে গত ১৩ এপ্রিল ইরান কর্তৃক ইসরায়েলে হামলার ঘটনার ভিডিও দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, তুরস্ক-সিরিয়া সংঘাতের পুরোনো ভিডিওকে ইরান কর্তৃক ইসরায়েলে হামলার ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসমন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পদত্যাগ করেননি বরং ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটের ভিডিও যুক্ত করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে উক্ত ভিডিওটির কোথাও বিএনপি থেকে মির্জা ফখরুলের পদত্যাগের দাবি সম্পর্কিত প্রমাণ উপস্থাপন করতে দেখা যায়নি। এমনকি ভিডিওটিতে আলোচিত দাবির সাথে প্রাসঙ্গিক কোনো তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ ভিডিওটি’র থাম্বনেইলে প্রচারিত দাবিটির সাথে বিস্তারিত অংশের অসামঞ্জস্যতা রয়েছে।
আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত দাবির বিষয়ে আরও অনুসন্ধানে ভিডিওটিতে দেখানো ভিডিও ক্লিপগুলোর বিষয়ে আলাদাভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
ভিডিও যাচাই ০১
আলোচিত ভিডিওটিতে প্রথম দিকের ক্লিপটিতে প্রদর্শিত সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মোস্তফা ফিরোজ’র বক্তব্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Voice Bangla এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ৪ এপ্রিল “বিএনপির মহাসচিব পরিবর্তন এবং স্থায়ী কমিটিতে নতুন মুখের আলোচনা কেন? Mostofa Feroz I Voice Bangla” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওর একটি অংশই আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে।
Video Comparison: Rumor Scanner
ভিডিও থেকে জানা যায়, সেদিন তিনি বিএনপির মহাসচিবের পরিবর্তন হওয়া এবং স্থায়ী কমিটিতে নতুন মুখ আসার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। তবে এই ভিডিওতে তিনি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পদত্যাগের দাবির বিষয়ে কোনো কথা বলেননি।
ভিডিও যাচাই ০২
ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে বেসরকারি ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম মাছরাঙা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি “যারা পণ্য লুকিয়ে দাম বাড়ায় তাদের গণধোলাই দেয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওর একটি অংশই আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে।
Video Comparison: Rumor Scanner
ভিডিও থেকে জানা যায়, নিত্যপণ্যের দাম বাড়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কথা বলেন। তিনি বলেন, “লুকিয়ে রেখে দাম বাড়ানো। আপনাদের কি মনে হয় না যারা সরকার উৎখাতে আন্দোলন করে এখানে তাদেরও কিছু কারসাজি আছে? এর আগেও পিয়াজের খুব অভাব, দেখা গেছে বস্তা কে বস্তা পিয়াজ পানিতে ফেলে দিয়েছে”।
গত ৩ মার্চ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে সিঙ্গাপুর গমন করেন। চিকিৎসা শেষে গত ২৩ মার্চ তিনি দেশে ফেরেন।
মূলত, গত ২৩ মার্চ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চিকিৎসা শেষে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফেরেন। এরই প্রেক্ষিতে অনলাইন এক্টিভিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মোস্তফা ফিরোজ তার ইউটিউব চ্যানেলে বিএনপির মহাসচিবের পরিবর্তন হওয়া এবং স্থায়ী কমিটিতে নতুন মুখ আসার সম্ভাবনা নিয়ে নিজের মতামত সম্বলিত একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। এছাড়া, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি নিত্যপণ্যের দাম বাড়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “লুকিয়ে রেখে দাম বাড়ানো। আপনাদের কি মনে হয় না যারা সরকার উৎখাতে আন্দোলন করে এখানে তাদেরও কিছু কারসাজি আছে? এর আগেও পিয়াজের খুব অভাব, দেখা গেছে বস্তা কে বস্তা পিয়াজ পানিতে ফেলে দিয়েছে”। সম্প্রতি, এই ভিডিও ফুটেজগুলো একত্রে যুক্ত করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পদত্যাগ করেছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পদত্যাগ করেননি।
সুতরাং, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পদত্যাগ করেছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।