২০২৩ সালের ০৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে একটি হামলা শুরু করে, যার ফলে ইসরায়েল-হামাসের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি সংঘাত শুরু হয় এবং এটি এখনো চলমান। এই সংঘাত সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। সংঘাতকে কেন্দ্র করে বিশ্বের নানা দেশ থেকে গাজায় ত্রাণ ও অর্থ সহায়তা পাঠানো হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড তাদের কোমল পানীয় মোজোর বিক্রয় থেকে প্রতি বোতলের বিপরীতে ১ টাকা ফিলিস্তিনের সহায়তায় দেওয়ার ক্যাম্পেইন শুরু করে, যা ক্রেতাদের মধ্যে বেশ সাড়া জাগিয়েছে। সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে মোজোর ২ লিটারের একটি বোতলের ছবি প্রকাশ করে দাবি করা হচ্ছে, ৮০ টাকার মোজো ১০০ টাকা হয়ে গেল কিভাবে? ফিলিস্তিনে তো প্রতি বোতল থেকে মাত্র ১ টাকা যাচ্ছে।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এ সংক্রান্ত পোস্টগুলোতে উল্লেখ করা হয়েছে, “Mojo কি তাহলে আবেগকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা করছে?? ৮০ টাকার Mojo ১০০ টাকা হয়ে গেল কিভাবে ?? ফিলিস্তিনে যায় তো মাত্র ১ টাকা বোতল প্রতি৷ প্রোডাকশন বাড়লেতো দাম কমার কথা কিন্তু প্রোডাকশন বাড়ার সাথে সাথে দাম বাড়ার কারণ কি?? যে বাংলাদেশী Coca-Cola বয়কট করেছে সে বাংলাদেশী কিন্তু Mojo ও বয়কট করতে পারবে সুতরাং আবেগকে হাতিয়ার বানিয়ে ব্যবসা না করে, বিনয়ের সাথে ব্যবসা করেন”

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ফিলিস্তিনের বিষয়ে ক্যাম্পেইন শুরুর পর মোজোর ২ লিটার বোতলের দাম ৮০ থেকে বাড়িয়ে ১০০ টাকা করা হয়নি বরং মোজোর এই দাম সর্বশেষ গতবছরের জুলাইতে বৃদ্ধি পেয়েছে, তখন ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতও শুরু হয়নি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে মোজোর উৎপাদনকারী মূল প্রতিষ্ঠান আকিজ ভেঞ্চারের ওয়েবসাইটে গত বছরের (২০২৩) ০৭ ডিসেম্বর প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যাচ্ছে, গত বছরের (২০২৩) ২৪ নভেম্বর ঢাকার হাতিরঝিলে আয়োজিত ‘To Gaza From Dhaka’ নামে একটি ফান্ডরেইজিং কনসার্টে মোজো ‘Mojo Support Palestine’ নামে একটি ক্যাম্পেইন শুরুর ঘোষণা দেয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে মোজোর প্রতি বোতলের আয় থেকে এক টাকা ফিলিস্তিনের সহায়তায় পাঠানো হবে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিনই মোজোর ফেসবুক পেজেও বিষয়টি জানানো হয়।
এর আগে সমজাতীয় এক দাবির প্রসঙ্গে আকিজ ফুড এন্ড বেভারেজের ব্র্যান্ড ম্যানেজার আদনান শফিক রিউমর স্ক্যানারকে জানিয়েছিলেন, তারা ০৪ ডিসেম্বর থেকে এই ক্যাম্পেইন শুরু করেন।
ওপেন সোর্স অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বরেও মোজোর ২ লিটারের বোতল ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। সেসময় এ বিষয়ে একাধিক ফেসবুক ব্যবহারকারীদের পোস্ট খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম (১,২,৩)।

এ প্রসঙ্গে আদনান শফিক বলেন, মোজো সর্বশেষ মূল্য বৃদ্ধি করেছিল ২০২৩ সালের জুলাই মাসে। কারণ ছিল ডলারের মূল্য বৃদ্ধি এবং অন্যান্য উপাদানের (বিশেষত চিনির) মূল্যবৃদ্ধির কারণে। ঠিক সেই সময় জুলাই মাসে মোজো ১ লিটার ৬০ টাকা এবং ২ লিটার ১০০ টাকা বাজারজাত করে।
তিনি আরো বলেন, ফিলিস্তিন ইস্যুতে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে মোজো ডোনেশন ক্যাম্পিং শুরু করে ডিসেম্বর’২৩ থেকে।
এদিকে কিছু ফেসবুক পোস্টে দাবি করা হচ্ছে যে, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতেও ৮০ টাকায় ২ লিটার মোজো কেনা যাচ্ছিল। কিন্তু, রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত বছর মূল্যবৃদ্ধির পর থেকে মোজোর ২ লিটার বোতলের দাম আর পরিবর্তন হয়নি।
আদনান শফিকও এ দাবিকে মিথ্যা বলে নিশ্চিত করেছেন।
পুরোনো ব্যাচের পণ্য এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ৮০ টাকার কেনা সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আদনান শফিক জানান, মোজোর প্রত্যেকটা বোতলের মেয়াদ থাকে চার থাকে পাঁচ মাস, তাই এটি সম্ভব নয়।
এছাড়া পূর্বে ফিলিস্তিন নিয়ে ক্যাম্পেইন শুরুর পর মোজোর ৫০০ মিলি বোতলের দাম বেড়েছে দাবি করা হলে সে বিষয়টি নিয়েও ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার টিম।
পূর্বের এই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিভিন্ন ই-কমার্স ওয়েবসাইটের মূল্যছাড় কিংবা কো-ব্রান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে বাজারমূল্য থেকে কিছুটা কম দামে মোজো পাওয়া যেতে পারে।
মূলত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েলে আক্রমণের পর ইসরায়েল-হামাস সংঘাত শুরু হয়, যা দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের সূচনা করে। এই প্রেক্ষাপটে, বিশ্বের নানা দেশ থেকে গাজায় ত্রাণ ও অর্থ সহায়তা পাঠানো হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড ঘোষণা করে যে তারা তাদের কোমল পানীয় মোজোর প্রতি বোতল বিক্রয় থেকে ১ টাকা ফিলিস্তিনের সহায়তায় দান করবে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মোজোর ২ লিটারের বোতলের ছবি প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, ফিলিস্তিন নিয়ে ক্যাম্পেইন শুরুর পর মোজোর ২ লিটার বোতলের দাম ৮০ থেকে বাড়িয়ে ১০০ টাকা করা হয়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে জেনেছে, মোজোর এই দাম সর্বশেষ গত বছরের জুলাইতে বৃদ্ধি পেয়েছে, তখন ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতও শুরু হয়নি। এছাড়া ফিলিস্তিনের সহায়তায় মোজোর ক্যাম্পেইন গত ডিসেম্বরে শুরু হয়েছিল।
সুতরাং, ফিলিস্তিনের বিষয়ে ক্যাম্পেইন শুরুর পর মোজোর ২ লিটার বোতলের দাম ৮০ থেকে বাড়িয়ে ১০০ টাকা করা হয়েছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Akij Venture: Mojo Support Palestine
- Statement from Adnan Shafiq, Akij Food & Beverage Limited.
- Rumor Scanner’s own analysis.