সম্প্রতি, ‘সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ, মানিকগঞ্জ’ এর বসন্তবরণ ও পিঠা উৎসব অনুষ্ঠানে কলেজের একজন নারী শিক্ষিকা শাড়ি পরিহিত অবস্থায় নৃত্য পরিবেশন করছেন দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটিতে নৃত্য পরিবেশনকারী এই নারী মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের কোনো শিক্ষক নন। প্রকৃতপক্ষে, উক্ত নারীর নাম প্রিয়া। তিনি দেবেন্দ্র কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষে একজন শিক্ষার্থী।
মূলত, বসন্তের আগমন উপলক্ষ্যে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের প্রশাসন কর্তৃক কলেজ প্রাঙ্গণে বসন্তবরণ ও পিঠা উৎসব আয়োজন করা হয়। উক্ত আয়োজনে কলেজটির বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা নৃত্য/গান/কবিতা আবৃত্তি পরিবেশন করেন। এই অনুষ্ঠানেই কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী প্রিয়া একটি গানের সাথে নৃত্য পরিবেশন করেন। পরবর্তীতে উক্ত ভিডিওটি দেবেন্দ্র কলেজের নারী শিক্ষকের নাচের ভিডিও দাবিতে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও একই দাবিটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সেসময় দাবিটিকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
গেলো বছর থেকে দেশীয় মূলধারার পত্রিকা দৈনিক বাংলার “জাতির পিতার চশমার খাপ পতিতালয়ে” শীর্ষক শিরোনাম সম্বলিত একটি সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার অনুসন্ধানে জানা যায়, “জাতির পিতার চশমার খাপ পতিতালয়ে” শীর্ষক শিরোনামে দৈনিক বাংলা পত্রিকায় কখনো প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি বরং ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট দৈনিক বাংলা পত্রিকায় প্রকাশিত “সৌদী আরব ও সুদানের স্বীকৃতি” শিরোনামের একটি সংবাদ প্রযুক্তির সহায়তায় বিকৃত করে আলোচ্য সংবাদ প্রতিবেদনের ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।
গুজবের সূত্রপাত
এ বিষয়ের সত্যতা যাচাইয়ে অনুসন্ধানের মাধ্যমে, ২০২০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি জিয়ার সৈনিক নিউজ টিভি নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে বিতর্কিত অস্ট্রিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশি সেফাতউল্লাহ ওরফে সেফুদার একটি ভিডিও (আর্কাইভ) পাওয়া যায়। এই ভিডিওতে সেফুদা দাবি করেন যে, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একবার পতিতালয়ে গিয়ে তার চশমার খাপ ভুলে ফেলে এসেছিলেন। এমন খবর বাংলাদেশের মূলধারার পত্রিকা দৈনিক ইনকিলাবেও প্রকাশিত হয়েছে।”
২০২০ সালের ১৮ জুন দৈনিক ইনকিলাবকে সূত্র দেখিয়ে ‘BM Juwel’ নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে একই বিষয় (আর্কাইভ) ফেসবুকে প্রচার করা হয়।
পরবর্তীতে, দৈনিক ইনকিলাব এমন কোনো সংবাদ প্রকাশ করেছিল না সে বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করি আমরা। প্রথমত, গুগলে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করে সার্চ করা হয়। এছাড়া, দৈনিক ইনকিলাবের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এবং তাদের সামাজিক মাধ্যমের পেজগুলোও অনুসন্ধান করা হয়। এর পাশাপাশি, পুরোনো পত্রিকার অনলাইন সংরক্ষণাগার সংগ্রামের নোটবুক ওয়েবসাইট থেকে দৈনিক ইনকিলাবের পুরোনো পত্রিকা খুঁজেও দেখা হয়। তবে, একটি সূত্রেও দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত উল্লিখিত সংবাদটির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এই বিষয়ে দৈনিক ইনকিলাবের সিনিয়র রিপোর্টার মাইনুল হাসান সোহেলের সঙ্গে কথা বলেছি আমরা। তিনি বলেন, “এমন নিউজ আমরা কখনো ছাপাইনি।”
পরবর্তীতে একই বিষয়ে ইনকিলাবের চিফ রিপোর্টার ফারুক হোসেনের সাথেও কথা বলেছি আমরা। তিনি বলেন, “আমি দীর্ঘ ১২ বছর ইনকিলাবে আছি। এমন কিছু আমার চোখে পড়েনি। আর যদি এমন কিছু প্রকাশ হতো তাহলে বিষয়টি অনেক আলোচিত হতো। এমন ভিত্তিহীন একটা বিষয় আমাদের প্রচার করার সুযোগ নেই।”
২০২৩ সাল থেকে একই দাবিতে একটি পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ছবি প্রচার হতে দেখেছি আমরা। উক্ত ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে, জনপ্রিয় বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ায় মূল ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। মূল পত্রিকায় শিরোনাম ছিল ‘সৌদী আরব ও সুদানের স্বীকৃতি’।
Image Comparison: Rumor Scanner.
ছবিটির বিবরণী থেকে জানা যায়, এটি ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট প্রকাশিত দৈনিক বাংলা পত্রিকার ছবি।
উক্ত তারিখের সূত্রে পুরোনো পত্রিকার অনলাইন সংরক্ষণাগার সংগ্রামের নোটবুক ওয়েবসাইট থেকে মূল পত্রিকাটি খুঁজে পাওয়া যায়। মূল পত্রিকায় দেখা যায় ‘সৌদী আরব ও সুদানের স্বীকৃতি’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটির বিষয়বস্তু ছিল সৌদি আরব ও সুদান থেকে বাংলাদেশের স্বীকৃতি পাওয়া।
অর্থাৎ, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট দৈনিক বাংলার প্রকাশিত “সৌদী আরব ও সুদানের স্বীকৃতি” শিরোনামের সংবাদ বিকৃত করে “জাতির পিতার চশমার খাপ পতিতালয়ে” শিরোনামে পরিবর্তন করা হয়েছে।
মূলত, সামাজিক মাধ্যমে আলোচিত ও সমালোচিত ব্যক্তি সেফাতউল্লাহ ওরফে সেফুদা এক ভিডিওতে দাবি করেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একবার পতিতালয়ে গিয়ে তার চশমার খাপ ভুলে আসেন এবং এই ঘটনা দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত হয়েছে। এই দাবি পরবর্তীতে ফেসবুকে ইনকিলাবের সূত্রে প্রচারিত হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে এমন কোনো সংবাদ ইনকিলাবে পাওয়া যায়নি এবং ইনকিলাবের সিনিয়র ও চিফ রিপোর্টার রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেন এমন খবর তাদের পত্রিকায় প্রকাশিত হয়নি। এছাড়া, ২০২৩ সাল থেকে একই দাবিতে দৈনিক বাংলা পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ছবি প্রচার করা হয়। তবে, ২০২৩ সাল থেকে উক্ত দাবিতে প্রচারিত সংবাদের ছবিটিও ভুয়া। প্রকৃতপক্ষে, ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট দৈনিক বাংলা পত্রিকায় প্রকাশিত “সৌদী আরব ও সুদানের স্বীকৃতি” শিরোনামের একটি সংবাদ বিকৃত করে “জাতির পিতার চশমার খাপ পতিতালয়ে” শিরোনামে পরিবর্তন করে উক্ত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।
সুতরাং, “জাতির পিতার চশমার খাপ পতিতালয়ে” শীর্ষক শিরোনাম সম্বলিত দৈনিক বাংলা পত্রিকার আলোচ্য প্রতিবেদনের ছবিটি সম্পাদনা বা বিকৃত করে তৈরি করা হয়েছে।
তথ্যসূত্র
Rumor Scanner’s own analysis.
News archives from Songramer Notebook.
Statement from Faruque Hossain, Chief Reporter, Daily Inqilab.
Statement from Mynul Hasan Sohel, Senior Reporter, Daily Inqilab.
২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (জিএসটি) গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আজ শনিবার (২৭ এপ্রিল) শুরু হয়েছে। আজ এ ইউনিট—বিজ্ঞানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে পরীক্ষা শুরুর পূর্বে এবং পরে “ক ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে” শীর্ষক দাবিতে একটি পোস্ট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
আজ এ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা দুপুর ১২টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। এর পূর্বে সকাল ১১ টা ০৬ মিনিটে ফেসবুকে ‘Mehedi Hasan Shuvo (আর্কাইভ)‘ নামক একটি অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশিত একটি পোস্টে (আর্কাইভ) দাবি করা হয়, GST A ইউনিট ভর্তি পরীক্ষা 2024 এর প্রশ্ন পরীক্ষা শুরুর আগেই দিয়ে দিলাম সময় সকাল 11টা 05 মিনিট। যারা ইনবক্সে গিয়ে প্রুভ চাও তাদের জন্য শেষবারের মতো প্রশ্নের কিছু অংশ ফ্রি তে দিলাম। এইটুকু ই প্রমাণের জন্য যথেষ্ট।যাদের গুচ্ছ,কৃষি গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার ১০০% কমন প্রশ্ন লাগবে তারা ইনবক্সে যোগাযোগ করো।আমি এডভান্স টাকা ছাড়া প্রশ্ন সেল করিনা।যাদের এডভান্স করতে সমস্যা আছে তারা আমার থেকে দূরে থাকো।
টাকা ফিক্সড এবং এডভান্স। যারা বাংলা কম বুঝো দয়া করে তারা অযথা মেসেজ দিয়ে বিরক্ত কইরোনা।
বিঃদ্রঃ এটাই আমার প্রমাণ দেওয়ার জন্য শেষ পোস্ট আমার আইডি থেকে আর কখনো এইভাবে পোস্ট হবে না। প্রমাণ অনেক দিছি আর কতো।”
পোস্টে একটি ছবি সংযুক্ত রয়েছে, যেখানে একটি ছাপা প্রশ্নের একাংশ দেখা যাচ্ছে।
একই অ্যাকাউন্ট থেকে আজ দুপুর ১ টা ২৪ মিনিটে আরেকটি পোস্ট (আর্কাইভ) করে তাতে একটি মেসেঞ্জারের স্ক্রিনশট যুক্ত করা হয়। উক্ত স্ক্রিনশটেও ছাপা প্রশ্নের একই অংশই দেখা যাচ্ছিল। এই পোস্টে দাবি করা হয়, “GST বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা ২০২৪ ‘ এ’ ইউনিট এর প্রশ্ন ১০০% কমন দিলাম।নিচে স্কিনসট দেওয়া হলো। গুচ্ছ,কৃষি গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার ১০০% কমন প্রশ্ন লাগলে দ্রুত ইনবক্সে যোগাযোগ করো। টাকা ফিক্সড এবং এডভান্সড যারা বাংলা কম বুঝো তারা দয়া করে অযথা কোন মেসেজ দিয়ে ব্লক খাইয়ো না।যারা ইনবক্সে এসে প্রুব চাও তাদের জন্য।প্রমান তো অনেক দিলাম আর কত।”
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গুচ্ছের এ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শুরুর আগেই ফেসবুকে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং পরীক্ষা শুরুর পূর্বে প্রশ্নের ছবি ব্যতীত পোস্ট করে পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ওই পোস্ট সম্পাদনা করে প্রশ্নের ছবিটি যুক্ত করে এই দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে শুরুতে মেহেদী হাসান শুভ নামের কথিত এই অ্যাকাউন্টটির আজ সকালের পোস্টটির এডিট হিস্টোরি যাচাই করে দেখা যায়, সকাল ১১ টা ০৬ মিনিটে যখন পোস্ট করা হয়, তখন পোস্টে প্রশ্নপত্রের কোনো ছবি যুক্ত ছিল না। পরবর্তীতে দুপুর ০১ টা ১১ মিনিটে ওই পোস্টে প্রশ্নপত্রের ছবিটি যুক্ত করা হয়।
Screenshot collage: Rumor Scanner
আমরা প্রশ্নপত্রের ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধান করে এটিরও মূল সূত্র খুঁজে পেয়েছি। প্রকাশনী প্রতিষ্ঠান জয়কলির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১ টা ০৭ মিনিটে গুচ্ছ এ ইউনিটের প্রশ্নগুলো প্রকাশ করা হয়। সেখান থেকেই আলোচিত প্রশ্নের ছবিটি নিয়ে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। দুইটি প্রশ্নের বিভিন্ন অংশ হুবহু মিল পেয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে রিউমর স্ক্যানার।
Screenshot comparison: Rumor Scanner
মূলত, আজ ২৭ এপ্রিল গুচ্ছ এ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে একইদিন সকাল ১১ টা ০৬ মিনিট অর্থাৎ পরীক্ষার পূর্বে এবং পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ফেসবুকে মেহেদী হাসান শুভ নামে একটি অ্যাকাউন্টে একটি প্রশ্নের ছবি যুক্ত করে দুই পোস্টের মাধ্যমে দাবি করা হয়, ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর দুপুর ০১ টা ১১ মিনিটে সকালের পোস্টটি সম্পাদনা করে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নের ছবি (যা ফেসবুকে একটি প্রকাশনীর পেজ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে) যুক্ত করে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, মেহেদী হাসান শুভ নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে এর পূর্বেও একাধিক ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের দাবি করা হয়। এ বিষয়ে রিউমর স্ক্যানারের ফ্যাক্টচেক দেখুন এখানে।
সুতরাং, গুচ্ছ এ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বলে যে দাবি করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
বাংলাদেশসহ এশিয়ার একাধিক দেশে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এরই প্রেক্ষিতে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার বরাত দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, আগামী ২৫ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত চলবে নওতাপ৷ এই নওতাপের নয় দিন গরম সবচেয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করবে। কারণ, এইসময় সূর্য রোহিণী নক্ষত্রে প্রবেশ করবে।… এই বছর নওতাপ চলবে আগামী ২৫ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ২৫ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত নওতাপ চলার বিষয়ে কোনো তথ্য বা বিজ্ঞপ্তি দেয়নি নাসা বরং ভারতের একটি গণমাধ্যমে জ্যোতিষীদের বরাতে উক্ত তথ্য প্রচারের পর তা নাসা জানিয়েছে দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভারতের গণমাধ্যম ‘এই সময়’ এর ওয়েবসাইটে গত ২৪ এপ্রিল তারিখে এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ খুঁজে পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার। সংবাদটির বিস্তারিত অংশে দাবি করা হয়, “জ্যোতিষীরা জানিয়েছেন যে আগামী ২৫ মে থেকে শুরু হবে নওতাপ৷ এই সময় সূর্য যেন আগুন ছড়াতে শুরু করবে পৃথিবীর বুকে।…… এই বছর নওতাপ চলবে আগামী ২৫ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত।” হুবহু এই লেখাগুলোই ফেসবুকে প্রচার হতে দেখেছি আমরা, তবে মূল সংবাদে উক্ত তথ্য জ্যোতিষীদের বরাতে বলা হলেও আলোচিত দাবি সংক্রান্ত পোস্টে তথ্যগুলো নাসা জানিয়েছে বলে দাবি করা হয়।
Comparison : Rumor Scanner
আমরা বিভিন্ন কিওয়ার্ড এবং ফেসবুকের এডভান্স মনিটরিং টুল ব্যবহার করে দেখেছি, এই সময় এর প্রতিবেদন প্রকাশের (২৪ এপ্রিল) পরদিন ফেসবুকে প্রতিবেদনের আলোচিত অংশটি (জ্যোতিষীর বরাত) হুবহু কপি পেস্ট হয়ে প্রচার হলেও এর পরদিন অর্থাৎ অন্তত ২৬ এপ্রিল থেকে আলোচিত দাবিতে পোস্ট ছড়িয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিতের লক্ষ্যে নাসার ওয়েবসাইটে একাধিক কিওয়ার্ড সার্চ করেও উক্ত দাবির পক্ষে কোনো তথ্যের উল্লেখ পাইনি। নাসা থেকে রোহিণী নক্ষত্র কিংবা মৃগশিরা নক্ষত্র সম্পর্কে কোনো তথ্য প্রচার সংক্রান্ত কোনো সংবাদও প্রকাশ হতে দেখা যায়নি।
তবে, বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতরের বরাতে সময় টিভি দাবি করছে, “এপ্রিলই শেষ নয়, এবারের মে মাস হবে আরও উত্তপ্ত। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হতে পারে ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।”
মূলত, বাংলাদেশসহ এশিয়ার একাধিক দেশে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে নাসার বরাত দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্প্রতি দাবি করা হচ্ছে, আগামী ২৫ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত চলবে নওতাপ৷ এই নওতাপের নয় দিন গরম সবচেয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করবে। কারণ, এইসময় সূর্য রোহিণী নক্ষত্রে প্রবেশ করবে।… এই বছর নওতাপ চলবে আগামী ২৫ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, নাসা এমন কোনো তথ্যই দেয়নি। প্রকৃতপক্ষে, ভারতের গণমাধ্যম এই সময় এর এক প্রতিবেদনে জ্যোতিষীদের বরাতে উক্ত তথ্য প্রচারের পর তা নাসা জানিয়েছে দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, ২৫ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত নাসা নওতাপ চলবে বলে জানিয়েছে শীর্ষক একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিগুলো মুসলিম থেকে ধর্মান্তরিত নারীদের বিবাহের দৃশ্যের নয় বরং উক্ত দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো জন্মসূত্রে হিন্দু দুই নারীর বিবাহের দৃশ্যের।
গুজবের সূত্রপাত
দাবিটির সূত্রপাত অনুসন্ধানে গত ২৬ এপ্রিল দুপুর ১২ টা ১৩ মিনিটে ‘সনাতন আর্মি Latest ভারসন’ নামক টেলিগ্রাম চ্যানেলে এ সংক্রান্ত সম্ভাব্য প্রথম পোস্টটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টটি ‘সনাতন আর্মি Secret Version’ নামের একটি প্রাইভেট টেলিগ্রাম চ্যানেলে পোস্ট করার পর ‘সনাতন আর্মি Latest ভারসন’ টেলিগ্রাম গ্রুপে ফরোয়ার্ড করা হয়।
Screenshot: Telegram
টেলিগ্রাম চ্যানেলের ওই পোস্টে লেখা হয়–“জয় শ্রীরাম৷ গত সপ্তাহে ২ জন মুসলিম বোন ইসলাম ত্যাগ করে সনাতনে ফিরেন।
উনারা বাড়ি থেকে পালিয়ে আমাদের এক দাদার কাছে আশ্রয় নেন। পরে উনাদেরকে একটা মন্দিরে নিয়ে গিয়ে বিবাহ সম্পুর্ন করা হয়। মুসলিম মুমিন ভাইদের বলছি, এখানে কাউকে জোর করে ধর্মান্তিরিত করানো হয় নাই। উনারা নিজ ইচ্ছায় এসেছেন।
এখন ২ মেয়ের পরিবার মামলা করছেন ছেলেদের উপরে। আর মেয়ে দুইজন যেহেতু প্রাপ্তবয়স্ক, তাই আশা করি কোন সমস্যা হবে না। সুমাইয়া থেকে সুস্মিতা রানী পাল
কনিকা রহমান থেকে কনিকা দেবনাথ। উনাদের এফিডেভিট করানো হইছে।”
ছবিটির সত্যতা জানতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে sanatansangbed নামক একটি ব্লগস্পট ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল “মন্দির ভিত্তিক বিয়ে” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধ খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রবন্ধে সংযুক্ত ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত প্রথম ছবির সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
Image Comparison: Rumor Scanner
উক্ত প্রবন্ধ থেকে জানা যায়, বিবাহিত দম্পতির নাম রনজিত বল ও প্রীতি দে। তারা ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে চট্টগ্রামের চট্টেশ্বরী মন্দিরে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের বিয়ে মন্দির ভিত্তিক হওয়ার কারণে সনাতন সংগঠন সম্মাননা সূচক তাদের একটি স্বারক প্রদান করে।
এছাড়া, Pampi Das নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০১৮ সালের ২৭ এপ্রিল প্রকাশিত পোস্টে (আর্কাইভ) রনজিত বল ও প্রীতি দে দম্পতির বিয়ের একাধিক ছবিসহ উক্ত ঘটনার সত্যতা জানা যায়।
অর্থাৎ, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টের প্রথম ছবিটি কথিত সুমাইয়া জাহান থেকে সুস্মিতা রানী পাল হওয়া নারীর সাথে কথিত রাজিব পালের বিয়ের নয়।
ছবি যাচাই: ০২
ছবিটির বিষয়ে জানতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে Forever Memmory নামক ইউটিউব চ্যানেলে ২০২১ সালের ৯ অক্টোবর “মন্দিরে বিয়ে দেখুন” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওর একটি দৃশ্যের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ২য় ছবির সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
Image Comparison: Rumor Scanner
উক্ত ভিডিও থেকে দম্পতির পরিচিতি নিয়ে কোন তথ্য জানা যায় নি।
তবে ভিডিওটির মন্তব্য ঘরে একজন বিবাহের স্থানের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে Forever Memmory চ্যানেল থেকে জানানো হয় এটি ফরিদপুর জেলায় অনুষ্ঠিত হয়।
Screenshot: Youtube
এছাড়া, বাংলাদেশে গত সপ্তাহে দুইজন মুসলিম নারী ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করে বিয়ে করেছেন এমন দাবির প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে দেশিয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে রনজিত বল ও প্রীতি দে নামক দম্পতি চট্টগ্রামের চট্টেশ্বরী মন্দিরে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সেসময় তাদের বিয়ে মন্দির ভিত্তিক হওয়ার কারণে সনাতন সংগঠন সম্মাননা সূচক তাদের একটি স্বারক প্রদান করে। এছাড়া, ২০২১ সালে এক দম্পতির ফরিদপুরের এক মন্দিরে বিয়ে অনুষ্ঠিত হলে তা ইউটিউবে প্রচার করা হয়। সম্প্রতি, এই দুই দম্পতির বিয়ের ছবি যুক্ত করে গত সপ্তাহে দুইজন মুসলিম নারী ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করে বিয়ে করেছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ এপ্রিল মৃন্ময় ভন্দ্র এমক এক যুবক মুসলিম থেকে হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়া তার স্ত্রী খাদিজা ওরফে মিতু কর্মকারকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার কারণে হত্যা করেছেন বলে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দেন।
সুতরাং, জন্মসূত্রে হিন্দু দুই নারীর বিয়ের পুরোনো ছবিকে গত সপ্তাহে দুইজন মুসলিম নারী ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করে বিয়ে করেছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত এখন বেশ আলোচিত বিষয়। গত ১৩ এপ্রিল ইরান নিজেদের ভূখন্ড থেকে ইসরায়েলে হামলা চালায়। এই হামলা চালানোর পর থেকে সামাজিক মাধ্যমে ইরান-ইসরায়েল ইস্যু নিয়ে নানা ছবি ও ভিডিও প্রচারিত হচ্ছে । ।
এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি, এ্যন্টি ট্যাঙ্ক থেকে আকাশে থাকা যুদ্ধ বিমানকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হচ্ছে এবং যুদ্ধ বিমান থেকে এয়ার টু গ্রাউন্ড পদ্ধতিতে নিচে থাকা ট্যাঙ্ক এবং তার আশপাশ লক্ষ্য করে গুলি করছে এমন একটি ভিডিও ইরান কর্তৃক ইসরায়েল হামলার দৃশ্য দাবিতে শর্ট ভিডিও প্লাটফর্ম টিকটকে প্রচার করা হয়েছে।
আলোচিত এই ভিডিওটি প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি প্রায় ১২ লক্ষ বার দেখা হয়েছে। ভিডিওটিতে প্রায় ৪০ হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিও ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের কোনো দৃশ্যের নয় বরং, ভিডিওটি আর্মা-৩ নামক একটি সিমুলেশন গেমের দৃশ্যের।
অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটির কিছু কী- ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ‘Compared Comparison’ নামক ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ১১ জুন ‘MiG-29 Jet & Attack Helicopter shot down by Anti-Air System – SAM – Military Simulation – ArmA 3’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়।
Comparison by Rumor Scanner
ভিডিওটির বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়, এই ভিডিওটি আর্মা-৩ (ArmA 3) এ তৈরি একটি সিমুলেশন! আমি আপনাদের জন্য এই সিমুলেশন ভিডিওগুলো তৈরি করতে পছন্দ করি এবং আমি খুশি যে আপনারা সকলেই এই ধরনের ভিডিওগুলো অনেক পছন্দ করেছেন! আর্মা-৩(ArmA 3) এর গ্রাফিক্স খুব ভালো, এটি প্রায় বাস্তব জীবনের মত দেখায়। বাস্তব যুদ্ধের চেয়ে বরং, সিমুলেশন!
আরও উল্লেখ করা হয়, আমি নিশ্চিতভাবে আপনাদের মাঝে এমন ধারণা দিতে চাই না যে আমি যুদ্ধকে মহিমান্বিত করি, আমি কেবল একজন উৎসাহী গেমার। অস্ত্র ব্যবস্থা অবশ্যই বাস্তব জীবনে ভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয়, কিন্তু আমি আপনাকে এই অস্ত্র ব্যবস্থা সম্পর্কে শিক্ষিত করতে পেরে আনন্দিত।এই ভিডিওটি বোহেমিয়া ইন্টারেক্টিভ এ.এস এর সামগ্রী ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।”
ইউটিউব চ্যানেলটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ইউটিউব চ্যানেলটিতে সবসময় এমন ধরনের ভিডিও আপলোড করা হয়।
চ্যানেলটি সম্বন্ধে এবাউটে উল্লেখ করা হয়, গল্প এবং সিমুলেশন তৈরি করতে আর্মা-৩ ArmA 3 এবং DCS ব্যবহার করে আধুনিক সিনেমাটিক সামরিক চলচ্চিত্র তৈরি করা। সামরিক সিমুলেশন – সামরিক তুলনা – মার্কিন সামরিক – রাশিয়ান সামরিক – চীনা সামরিক – C-RAM সিস্টেম – এসি-১৩০ গানশিপ -এ-১০ Warthog – মিসাইল – যুদ্ধ জাহাজ – আর্টিলারি এবং আরও অনেক কিছু!
উল্লেখ্য, আর্মা-৩ হলো একটি উন্মুক্ত বিশ্ব কৌশলগত শ্যুটার সিমুলেশন ভিডিও গেম ।
মূলত, মূলত, গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে অবস্থিত ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলি হামলার জবাবে ১৩ এপ্রিল ইরান নিজেদের ভূখন্ড থেকে সরাসরি ইসরায়েলে ড্রোন ও মিসাইল দিয়ে হামলা চালায়।এই ঘটনার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইসরায়েলের ওপর ইরানের হামলার দৃশ্য দাবিতে অসংখ্য ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। সম্প্রতি একই দাবিতে একটি ভিডিও প্রচারের প্রেক্ষিতে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের কোনো ভিডিও নয়। প্রকৃতপক্ষে, এটি আর্মা-৩ নামক একটি ভিডিও গেমের দৃশ্য।
সুতরাং, ইন্টারনেট থেকে আর্মা-৩ নামক সিমুলেশন ভিডিও গেমের ভিডিও সংগ্রহ করে সাম্প্রতিক ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি, ‘হঠাৎ অবসরের ঘোষণা দিল মির্জা ফখরুল বিএনপির নতুন মহাসচিব হলেন ডক্টর ইউনুস’ শীর্ষক থাম্বনেইল ও একই শিরোনামে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবসরের ঘোষণা দেননি এবং নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসও বিএনপির নতুন মহাসচিব নির্বাচিত হননি। প্রকৃতপক্ষে, বিএনপি নেতা গোলাম মাওলা রনির একটি ভিডিওর সাথে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলা এবং ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের দুটি প্রতিবেদনের সংবাদ পাঠিকার ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে ভিডিওটির শুরুতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানল এটিএন নিউজ ও ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সংবাদ পাঠিকার ফুটেজের সাথে দেশ টিভির ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি ফুটেজ দেখানো হয়। পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওটির উপস্থাপক দাবি করেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন এবং এর প্রেক্ষিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস নাকি অন্য কেউ বিএনপির মহাসচিব হচ্ছেন তা জানতে পুরো ভিডিওটি দেখার আমন্ত্রণ জানিয়ে তিনি বিএনপির আরেক নেতা গোলাম মাওলা রনির একটি ভিডিও দর্শকদের উদ্দেশ্যে দেখান। যার কোনোটির সাথেই আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই।
প্রতিবেদনটি পর্যলোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওর শুরুতে ব্যবহৃত এটিএন নিউজের সংবাদ পাঠিকার ফুটেজের সাথে উক্ত প্রতিবেদনের সংবাদ পাঠিকার অংশের হুবহু মিল রয়েছে।
Video Comparison by Rumor Scanner
এছাড়াও প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থাকায় কোনো প্রকার সভা সমাবেশে যুক্ত হননি। এরই প্রেক্ষিতে অসুস্থতার কারণে দলের মহাসচিব পদে পরিবর্তন আসছে এমন একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। তবে দলটির শীর্ষ নেতাকর্মীরা জানান, এটি একটি রাজনৈতিক প্রোপাগাণ্ডা।
ভিডিও যাচাই ২
পরবর্তীতে দেখানো ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের ভিডিওটি অনুসন্ধনে ভিডিওটির ‘বিএনপি পুনর্গঠন মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটিতে আসতে পারে নতুন মুখ’ শীর্ষক শিরোনামের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Independent Television এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ২০ মে মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটিতে আসছে নতুন মুখ | BNP New Plan | Independent TV শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Youtube
প্রতিবেদনটি পর্যলোচনা করে আলোচিত ভিডিওতে থাকা সংবাদ পাঠিকার ফুটেজের সাথে উক্ত প্রতিবেদনের সংবাদ পাঠিকার অংশের হুবহু মিল পাওয়া যায়।
Video Comparison by Rumor Scanner
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) পুনর্গঠন এবং এটিএন নিউজের মতই মহাসচিব পরিবর্তনের গুঞ্জন নিয়েই মূলত ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের এই প্রতিবেদন। যার সাথে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবসরের ঘোষণা দেওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওতে ব্যবহৃত ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ফুটেজের সাথে উক্ত ভিডিওর হুবহু মিল রয়েছে।
Video Comparison by Rumor Scanner
এছাড়াও ভিডিওটি থেকে জানা যায়, শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের করা মামলায় ৬ মাসের সাজাপ্রাপ্ত নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে স্থায়ী জামিন দেননি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল। মূলত এই বিষয়েই তার আইনজীবীর দেওয়া বক্তব্যের ভিডিও এটি।
ভিডিওটি পর্যলোচনা করে আলোচিত ভিডিওতে ব্যবহৃত তার ভিডিওর সাথে বেশকিছু অংশের মিল পাওয়া যায়।
Video Comparison by Rumor Scanner
ভিডিওটিতে তিনি দাবি করেন, বিএনপির বর্তমান মহাসচিব পদের রদবদল হবে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পরিবর্তে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের রাজনীতিবিদ, সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদ-এর নাম আলোচনায় রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। পুরো ভিডিওটি জুড়ে তিনি তাকে নিয়েই নানা আলোচনা করেন। তবে ভিডিওটিতে তার দাবিগুলোর স্বপক্ষে তিনি কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য উপস্থাপন করেননি। এছাড়াও তিনি ভিডিওটিতে কোথাও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অবসরের ঘোষণা দেওয়া কিংবা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নতুন মহাসচিব হওয়ার বিষয়ে কোনো কথা বলেননি।
পরবর্তীতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাম্প্রতিক সময়ে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন কিনা এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-র মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন কিনা তা জানতে প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমেও গণমাধ্যমে কিংবা কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
মূলত, গত বছরের ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিএনপির মহাসমাবেশে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে কারামুক্তি পাওয়ার পর বেশকিছুদিন দলের কোনো প্রকার কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ না করায় দলের অভ্যন্তরে মহাসচিব পদের রদবদলের একটি গুঞ্জন তৈরি হয়। যা নিয়ে একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হয়। এর প্রেক্ষিতে সম্প্রতি, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন এবং শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিএনপির নতুন মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন দাবিতে ‘হঠাৎ অবসরের ঘোষণা দিল মির্জা ফখরুল বিএনপির নতুন মহাসচিব হলেন ডক্টর ইউনুস’ শীর্ষক থাম্বনেইল ও একই শিরোনামে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিগুলো সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, বিএনপির মহাসচিব পদের রদবদলের গুঞ্জন নিয়ে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলা ও ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনে প্রচারিত প্রতিবেদনের সংবাদ পাঠিকার ফুটেজের সাথে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে প্রচারিত ভিন্ন একটি ভিডিও এবং বিএনপি নেতা গোলাম মাওলা রনির ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত একটি ভিডিওর কিছু অংশ যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। যার সাথে দাবিটির কোনো সম্পর্ক নেই।
সুতরাং, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন এবং নোবেলবিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিএনপির মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গণমাধ্যমে সৌদি আরবের বন্যার খবরে প্রচারিত ভিডিওটিতে থাকা ফুটেজগুলো সাম্প্রতিক সময়েরই নয় বরং, পুরোনো ভিডিও ব্যবহার করে সেগুলোকে সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে গণমাধ্যমে (DESH TV) ৪৫ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এতে সর্বমোট আটটি ফুটেজ দেখানো হয়েছে৷ এর মধ্যে ০০-০৯ সেকেন্ড, ০৯-১০ সেকেন্ড, ২২-২৭ সেকেন্ড,২৭-৩০ সেকেন্ড, ৩০-৩৫ সেকেন্ড, ৩৫-৪০ সেকেন্ড অংশের মিল পাওয়া যায় Evolution Crisis নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ২৫ নভেম্বর Saudi Arabia become a vast ocean! Flooding in Jeddah after heavy rain শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিওর (আর্কাইভ) সাথে।
Screenshot comparison: Rumor Scanner
ভিডিওটির বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে ২০২২ সালের ২৪ নভেম্বর সৌদি আরবের জেদ্দায় ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে দেশটির পশ্চিমে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। এটি সেসময়েরই ভিডিও।
দেশ টিভির ভিডিওটির ১০-২২ সেকেন্ড সময়ের ফুটেজটি খুঁজে পাওয়া যায়, KOMPAS.COM নামের একটি ওয়েবসাইটে। ২০২৩ সালের ২ জানুয়ারী Jeddah Bergelut dengan Banjir di Awal Tahun শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিওর সাথে এই দৃশ্যের মিল পাওয়া যায় (আর্কাইভ)।
Screenshot comparison: Rumor Scanner
KOMPAS.COM এর একই ভিডিওর আরেকটি ফুটেজও মিলে গেছে দেশ টিভিতে প্রচারিত ভিডিওটির ৪০-৪৩ সেকেন্ড অংশের সাথে।
Screenshot comparison: Rumor Scanner
তবে এই দুই ফুটেজ ঠিক কবের তা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কিন্তু এটা নিশ্চিত যে, এটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়৷
মূলত, সম্প্রতি সৌদি আরবে প্রবল ঝড়বৃষ্টি কারণে দেশটির অনেক অঞ্চলের রাস্তা তলিয়ে যায়। কতিপয় গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবরের ভিডিও প্রকাশ করে উক্ত ভিডিওগুলো সৌদির সাম্প্রতিক বন্যার দৃশ্য বলে দাবি করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওতে দেখানো ফুটেজগুলো সৌদির সাম্প্রতিক বন্যার নয়। পুরোনো ঘটনার ফুটেজকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, সৌদি আরবের বন্যার পুরোনো ভিডিওকে দেশটির সাম্প্রতিক বন্যার দৃশ্য দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ৫০ টাকার নোটটি প্রচলিত কোনো নোট নয় এবং এই নোটে খালেদা জিয়ার ছবিও ছিল না বরং স্মারক এই নোটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবির স্থলে খালেদা জিয়ার ছবি যুক্ত করে প্রচার করা হচ্ছে।
আলোচিত এই নোটটি মূলত স্মারক নোট হিসেবে ঢাকায় মেট্রোরেলের উদ্বোধন উপলক্ষে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে অবমুক্ত করা হয়। পরের বছরের জানুয়ারিতে এটিকে ‘প্রচলিত নোট’ হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হলে তা নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। ফ্যাক্টচেকে যে ছবিটির বিষয়ে আমরা তথ্য দিয়েছিলাম তা পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, তাতে শেখ হাসিনার ছবি রয়েছে।
Image Comparison: Rumor Scanner
অর্থাৎ, স্মারক নোটে থাকা শেখ হাসিনার ছবির স্থলে খালেদা জিয়ার ছবি জুড়ে দিয়ে বর্তমানে প্রচার করা হচ্ছে।
মূলত, বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল উদ্বোধন উপলক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫০ টাকা মূল্যমানের একটি স্মারক নোট মুদ্রণ করে এবং ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নোটটি অবমুক্ত করেন। উক্ত নোটে শেখ হাসিনার ছবি যুক্ত ছিল। উক্ত ছবির স্থলে সম্প্রতি বেগম খালেদা জিয়ার ছবি বসিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, স্থান ও ঘটনাসমূহকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য যে প্রতীকী মুদ্রা বা নোট ছাপে, তা-ই হচ্ছে স্মারক নোট বা মুদ্রা। বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন সময়েই নানা উপলক্ষ্যকে কেন্দ্র করে স্মারক নোট বা মুদ্রা ছাপিয়ে আসছে।
সুতরাং, বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল উদ্বোধন উপলক্ষে মুদ্রিত ৫০ টাকা মূল্যমান স্মারক নোটে শেখ হাসিনার ছবির স্থলে বেগম খালেদা জিয়ার ছবি যুক্ত করে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পাদিত বা এডিটেড।
সম্প্রতি ইরানের সুপ্রিম লিডার আয়াতুল্লাহ খামেনিকে ফোর্বস ম্যাগাজিন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে এপ্রিলের প্রচ্ছদে ফিচার করেছে বলে একটি দাবি প্রচার করা হচ্ছে। উক্ত দাবির সাথে ফোর্বসের প্রচ্ছদের একটি ছবিও রয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ইরানের সুপ্রিম লিডার আয়াতুল্লাহ খামেনিকে ফোর্বস ম্যাগাজিন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে ফোর্বসের প্রচ্ছদে জায়গা দেয়নি। উক্ত দাবিতে প্রচারিত ছবিটি এডিটেড।
অনুসন্ধানের শুরুতে ফোর্বসের প্রচ্ছদে আয়াতুল্লাহ খামেনির ছবি সম্বলিত ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম৷ সেখানে লক্ষ্য করা যায়, প্রচ্ছদে তারিখ হিসেবে ১৫ এপ্রিল ২০২৪ উল্লেখ করা আছে। তারপর, ফোর্বসের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ফোর্বস তাদের ওয়েবসাইটে ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদসহ ম্যাগাজিনগুলো তাদের ভার্চুয়াল ম্যাগাজিন স্টোরে রাখে। সেখান থেকে যে কেউ নির্দিষ্ট পরিমাণ মূল্য পরিশোধ করে পছন্দের ম্যাগাজিন কিনে নিতে পারেন৷ ফোর্বসের ম্যাগাজিন স্টোরে গেলে সেখানে এপ্রিল/মে মাসের ম্যাগাজিনটি প্রচ্ছদসহ খুঁজে পাওয়া যায় ঠিকই, তবে সেই প্রচ্ছদে আয়াতুল্লাহ খামেনির বদলে আমেরিকান বিলিয়নিয়ার টড বোহেলি’কে ফিচারড হতে দেখা যায়৷
তাছাড়া, এ বছরের এর আগের দুটো ম্যাগাজিন: ফেব্রুয়ারি/মার্চের ম্যাগাজিনে নিউইয়র্ক ভিত্তিক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ফার্ম ব্ল্যাকস্টোন গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ও চিফ অপারেটিং অফিসার জোনাথন গ্রে এবং ডিসেম্বর/জানুয়ারি ২০২৪ এর ম্যাগাজিনে পুয়ের্তোরিকোর Rapper ও গায়ক ব্যাড বানি’কে ফিচার হতে দেখা যায়৷
তাছাড়া, ফোর্বস নিয়মিত বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ করে থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে তারা হালনাগাদকৃত এরকম কোনো তালিকা প্রকাশ করেনি। এক্ষেত্রে তাদের শেষ তালিকা ২০১৮ সালে প্রকাশ করা হয় যেখানে আয়াতুল্লাহ খামেনির স্থান হয় ১৭তম স্থানে এবং শীর্ষে ছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তবে, এ সময়ও আয়াতুল্লাহ খামেনিকে ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে রাখা হয় নি।
Screenshot: Forbes
অধিকতর অনুসন্ধানে ২০১৫ সালের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের তালিকায়ও তার নাম পাওয়া যায়৷ তখন তার অবস্থান ছিলো ১৮তম এবং শীর্ষে ছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
Screenshot: Forbes
অনুসন্ধানের পরবর্তী পর্যায়ে, দাবিকৃত ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে দাবিকৃত ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে ব্যবহৃত ছবিটির সম্ভাব্য উৎস খুঁজে পাওয়া যায়৷ ২০১৫ সালের ২১ অক্টোবর তারিখে ইরানের সুপ্রিম লিডারের ওয়েবসাইটে তার একটা চিঠি পাওয়া যায়, যা সাবেক ইরান প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির উদ্দেশ্য লেখা হয়েছিলো। ওয়েবসাইটের সেই পেজে আয়াতুল্লাহ খামেনির এই ছবিটি দেখা যায় যেটি ফোর্বসের ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে প্রকাশ হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
মূলত, ফোর্বস ম্যাগাজিনের এ বছরের এপ্রিল/মে সংখ্যায় আমেরিকান বিলিয়নিয়ার টড বোহেলি’কে ফিচার করা হয়েছে। আর সেই ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদের ছবিকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে ইরানের সুপ্রিম লিডার আয়াতুল্লাহ খামেনির ছবি বসিয়ে দাবি করা হচ্ছে, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে ফোর্বস সাময়িকী আয়াতুল্লাহ খামেনিকে প্রচ্ছদে রেখে ফিচার করেছে।
অর্থাৎ, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে ফোর্বস ম্যাগাজিন আয়াতুল্লাহ খামেনিকে নিয়ে প্রচ্ছদে ফিচার করেছে দাবিতে প্রচারিত তথ্য মিথ্যা এবং উক্ত দাবিতে প্রচারিত প্রচ্ছদের ছবিটি এডিটেড বা সম্পাদিত।