সম্প্রতি, ‘সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ, মানিকগঞ্জ’ এর বসন্তবরণ ও পিঠা উৎসব অনুষ্ঠানে শাড়ি পরিহিত এক নারীর নৃত্য পরিবেশনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, তিনি উক্ত কলেজের একজন নারী শিক্ষক।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি এ বিষয়ে সর্বাধিক ভাইরাল ভিডিওটি প্রায় ৬ লাখ বার দেখা হয়েছে। ভিডিওটিতে প্রায় ৮ হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। এ পর্যন্ত ভিডিওটি শেয়ার হয়েছে ৩ শত ৮২ বার। উক্ত দাবিকে সত্য ধরে নিয়ে অনেক নেটিজেনকে ভিডিওটি নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করতে দেখা গেছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটিতে নৃত্য পরিবেশনকারী এই নারী মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের কোনো শিক্ষক নন বরং এই নারী উক্ত কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগে অনার্স তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত একজন শিক্ষার্থী। তার নাম প্রিয়া।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি নিয়ে ভাইরাল পোস্টগুলোর মন্তব্য ঘর পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেখানে উক্ত ভিডিওর নৃত্য পরিবেশনকারী নারীকে উক্ত কলেজের শিক্ষার্থী দাবি করে করা বেশ কয়েকটি মন্তব্য রিউমর স্ক্যানার টিমের নজরে আসে।
Mehedi Hassan নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেন “ভাই এটা ম্যাডাম না, অনার্সের একজন স্টুডেন্ট।”
এক ব্যক্তির জিজ্ঞেসার বিপরীতে Md Sadekul Islam Sumon নামের একজন লিখেন, “ধুর এটা স্টুডেন্ট।”
আরও একজন ব্যক্তির জিজ্ঞেসার বিপরীতে Mohammed Nayan Islam লিখেন, “কইছে কে এইডা মেডাম। ইনি ত সিনিয়র আপু আমাদের ডিপার্টমেন্ট এর।”
এছাড়া Amir Hamja নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেন, “আমাগো ডিপার্টমেন্টের।”
উক্ত মন্তব্যগুলোর সূত্র ধরে এই মন্তব্যকারীদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে আমির হামজা ও মোহাম্মদ নয়ন ইসলাম নামের দুই ব্যক্তির সাথে আমরা যোগাযোগ সমর্থ হই।
সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী আমির হামজা জানান, “ভাইরাল ভিডিওর নৃত্য পরিবেশনকারী নারী শিক্ষক নন, উনি সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। উনার নাম প্রিয়া।”
একই কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ নয়ন ইসলামও রিউমর স্ক্যানারকে একই তথ্য জানান।
এছাড়াও, ম্যানুয়ালি অনুসন্ধানের মাধ্যমে সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ, মানিকগঞ্জ এর ওয়েবসাইটে ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষকদের তালিকা খুঁজে পাওয়া যায়। তালিকাটি পর্যবেক্ষণ করে সেখানে শুধুমাত্র একজন নারী শিক্ষকের নাম পাওয়া যায়। তিনি সোনিয়া তাহমিন জুলেখা।
পরবর্তীতে ম্যানুয়ালি অনুসন্ধানের মাধ্যমে কলেজটি’র ব্যবস্থাপনা বিভাগের একমাত্র নারী শিক্ষক সোনিয়া তাহমিন জুলেখা’র ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
আমরা সোনিয়া তাহমিন জুলেখা’র ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রাপ্ত ছবির সাথে আলোচিত ভিডিওটি’র নৃত্য পরিবেশনকারী নারীর চেহারা তুলনা করে দেখেছি। তাদের চেহারার মিল পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতের জন্য রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ, মানিকগঞ্জ এর ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “ভাইরাল ভিডিওটি’র ব্যাপারে শুনেছি। ওই অনুষ্ঠানে কোনো নারী শিক্ষিক নাচেনি। এটা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি ভিডিওটি’র নারী আমাদের কোনো শিক্ষিকা না। যারা নেচেছে সবাই ছাত্রী।”
এছাড়া অনুসন্ধানের শেষ দিকে সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ, মানিকগঞ্জ এর এই বসন্তবরণ ও পিঠা উৎসব নিয়ে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি কলেজটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তি (আর্কাইভ) রিউমর স্ক্যানার টিমের নজরে আসে।
বিজ্ঞপ্তিটিতে বলা হয়, “প্রতি বিভাগকে স্ব উদ্যোগে পিঠা উৎসব প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য এবং প্রতি বিভাগ থেকে ০২ (দুই) জন করে শিক্ষার্থী নৃত্য/গান/কবিতা আবৃত্তি ইভেন্টে পারফর্ম করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।”
অর্থাৎ, বসন্তবরণ ও পিঠা উৎসব উপলক্ষ্যে কলেজ প্রশাসন প্রদত্ত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী জানা যাচ্ছে উক্ত আয়োজনে প্রত্যেক বিভাগের শিক্ষার্থীদের নৃত্যসহ বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণের কথা ছিল। তবে বিজ্ঞপ্তির কোথাও অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের পারফর্ম করার কথা উল্লেখ নেই।
উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, আলোচিত ভিডিওর নৃত্য পরিবেশনকারী নারী সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ, মানিকগঞ্জ এর শিক্ষার্থী।
মূলত, বসন্তের আগমন উপলক্ষ্যে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের প্রশাসন কর্তৃক কলেজ প্রাঙ্গণে বসন্তবরণ ও পিঠা উৎসব আয়োজন করা হয়। উক্ত আয়োজনে কলেজটির বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা নৃত্য/গান/কবিতা আবৃত্তি পরিবেশন করেন। এই অনুষ্ঠানেই কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী প্রিয়া একটি গানের সাথে নৃত্য পরিবেশন করেন। পরবর্তীতে উক্ত ভিডিওটি দেবেন্দ্র কলেজের নারী শিক্ষকের নাচের ভিডিও দাবিতে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে।
সুতরাং, সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ, মানিকগঞ্জ এর এক নারী শিক্ষার্থীর নৃত্য পরিবেশনের ভিডিওকে উক্ত কলেজের নারী শিক্ষকের নৃত্য পরিবেশনের ভিডিও দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Statement from Amir Hamza (Student, Govt. Debendra College, Manikganj)
- Statement from Mohammed Nayan Islam (Student, Govt. Debendra College, Manikganj)
- Statement from Md. Moniruzzaman
- (Teacher, Govt. Debendra College, Manikganj)
- Govt. Debendra College, Manikganj Website: https://management.debendracollege.gov.bd/present-teachers/
- Govt. Debendra College, Manikganj: Notice
- Rumor Scanner’s Own Analysis