সম্প্রতি, গত সপ্তাহে দুইজন মুসলিম নারী ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করে বিয়ে করেছে দাবিতে দুটি নবদম্পতির ছবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
যা দাবি করা হচ্ছে
“উনারা বাড়ি থেকে পালিয়ে এক হিন্দু যুবকের বাড়িকাছে আশ্রয় নেন। পরে উনাদেরকে একটা মন্দিরে নিয়ে গিয়ে বিবাহ সম্পূর্ণ করা হয়।
সুমাইয়া থেকে সুস্মিতা রানী পাল
কনিকা রহমান থেকে কনিকা দেবনাথ।
১. সুমাইয়া জাহান এবং রাজিব পাল (দুই জনের বাড়ি সিলেট),
২. কনিকা রহমান এবং প্রতিক দেবনাথ(দুই জনের বাড়ি রংপুর)।
উনাদের এফিডেভিট করানো হয়েছে।”

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিগুলো মুসলিম থেকে ধর্মান্তরিত নারীদের বিবাহের দৃশ্যের নয় বরং উক্ত দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো জন্মসূত্রে হিন্দু দুই নারীর বিবাহের দৃশ্যের।
গুজবের সূত্রপাত
দাবিটির সূত্রপাত অনুসন্ধানে গত ২৬ এপ্রিল দুপুর ১২ টা ১৩ মিনিটে ‘সনাতন আর্মি Latest ভারসন’ নামক টেলিগ্রাম চ্যানেলে এ সংক্রান্ত সম্ভাব্য প্রথম পোস্টটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টটি ‘সনাতন আর্মি Secret Version’ নামের একটি প্রাইভেট টেলিগ্রাম চ্যানেলে পোস্ট করার পর ‘সনাতন আর্মি Latest ভারসন’ টেলিগ্রাম গ্রুপে ফরোয়ার্ড করা হয়।
টেলিগ্রাম চ্যানেলের ওই পোস্টে লেখা হয়–“জয় শ্রীরাম৷ গত সপ্তাহে ২ জন মুসলিম বোন ইসলাম ত্যাগ করে সনাতনে ফিরেন।
১/ সুমাইয়া জাহান & রাজিব পাল (দুই জনের বাড়ি সিলেট)
২/ কনিকা রহমান & প্রতিক দেবনাথ(দুই জনের বাড়ি রংপুর)
উনারা বাড়ি থেকে পালিয়ে আমাদের এক দাদার কাছে আশ্রয় নেন। পরে উনাদেরকে একটা মন্দিরে নিয়ে গিয়ে বিবাহ সম্পুর্ন করা হয়। মুসলিম মুমিন ভাইদের বলছি, এখানে কাউকে জোর করে ধর্মান্তিরিত করানো হয় নাই। উনারা নিজ ইচ্ছায় এসেছেন।
এখন ২ মেয়ের পরিবার মামলা করছেন ছেলেদের উপরে। আর মেয়ে দুইজন যেহেতু প্রাপ্তবয়স্ক, তাই আশা করি কোন সমস্যা হবে না। সুমাইয়া থেকে সুস্মিতা রানী পাল
কনিকা রহমান থেকে কনিকা দেবনাথ।
উনাদের এফিডেভিট করানো হইছে।”
পরবর্তীতে এই পোস্টটি কপি করে পোস্টের শুরুতে ‘সনাতনী আইডি থেকে নেয়া’ এবং ‘ইন্না নিল্লাহ’ শিরোনাম যুক্ত করে বিভিন্ন মুসলিম আইডি থেকেও পোস্ট করা হয়।
ছবি যাচাই: ০১
ছবিটির সত্যতা জানতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে sanatansangbed নামক একটি ব্লগস্পট ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল “মন্দির ভিত্তিক বিয়ে” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধ খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রবন্ধে সংযুক্ত ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত প্রথম ছবির সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রবন্ধ থেকে জানা যায়, বিবাহিত দম্পতির নাম রনজিত বল ও প্রীতি দে। তারা ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে চট্টগ্রামের চট্টেশ্বরী মন্দিরে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের বিয়ে মন্দির ভিত্তিক হওয়ার কারণে সনাতন সংগঠন সম্মাননা সূচক তাদের একটি স্বারক প্রদান করে।
এছাড়া, Pampi Das নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০১৮ সালের ২৭ এপ্রিল প্রকাশিত পোস্টে (আর্কাইভ) রনজিত বল ও প্রীতি দে দম্পতির বিয়ের একাধিক ছবিসহ উক্ত ঘটনার সত্যতা জানা যায়।
অর্থাৎ, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টের প্রথম ছবিটি কথিত সুমাইয়া জাহান থেকে সুস্মিতা রানী পাল হওয়া নারীর সাথে কথিত রাজিব পালের বিয়ের নয়।
ছবি যাচাই: ০২
ছবিটির বিষয়ে জানতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে Forever Memmory নামক ইউটিউব চ্যানেলে ২০২১ সালের ৯ অক্টোবর “মন্দিরে বিয়ে দেখুন” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওর একটি দৃশ্যের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ২য় ছবির সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিও থেকে দম্পতির পরিচিতি নিয়ে কোন তথ্য জানা যায় নি।
তবে ভিডিওটির মন্তব্য ঘরে একজন বিবাহের স্থানের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে Forever Memmory চ্যানেল থেকে জানানো হয় এটি ফরিদপুর জেলায় অনুষ্ঠিত হয়।

এছাড়া, বাংলাদেশে গত সপ্তাহে দুইজন মুসলিম নারী ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করে বিয়ে করেছেন এমন দাবির প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে দেশিয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে রনজিত বল ও প্রীতি দে নামক দম্পতি চট্টগ্রামের চট্টেশ্বরী মন্দিরে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সেসময় তাদের বিয়ে মন্দির ভিত্তিক হওয়ার কারণে সনাতন সংগঠন সম্মাননা সূচক তাদের একটি স্বারক প্রদান করে। এছাড়া, ২০২১ সালে এক দম্পতির ফরিদপুরের এক মন্দিরে বিয়ে অনুষ্ঠিত হলে তা ইউটিউবে প্রচার করা হয়। সম্প্রতি, এই দুই দম্পতির বিয়ের ছবি যুক্ত করে গত সপ্তাহে দুইজন মুসলিম নারী ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করে বিয়ে করেছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ এপ্রিল মৃন্ময় ভন্দ্র এমক এক যুবক মুসলিম থেকে হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়া তার স্ত্রী খাদিজা ওরফে মিতু কর্মকারকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার কারণে হত্যা করেছেন বলে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দেন।
সুতরাং, জন্মসূত্রে হিন্দু দুই নারীর বিয়ের পুরোনো ছবিকে গত সপ্তাহে দুইজন মুসলিম নারী ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করে বিয়ে করেছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- sanatansangbed – মন্দির ভিত্তিক বিয়ে
- Pampi Das – Facebook Post
- Forever Memmory – Youtube Video