সম্প্রতি মাগুরা- ১ আসনে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভে এসে হবিগঞ্জ- ৪ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে মারার হুমকি দিয়েছেন দাবিতে ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইউটিউবে Sports Channel নামের একটি চ্যানেল হতে একটি ভিডিও (আর্কাইভ) প্রচার করা হয়েছে।
ভিডিওটি এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি প্রায় ৩ লক্ষ ১১ হাজারবার দেখা হয়েছে।
উক্ত ভিডিওটি ডাউনলোড করে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ছোট কথা নামের ফেসবুক পেজ থেকে প্রকাশিত এই পোস্টটি গত ১৫ জানুয়ারি দুপুর ৩ টা অবধি প্রায় ৯ লক্ষ ২৬ হাজার বার দেখা হয়েছে এবং ১ হাজার তিনশত বার শেয়ার করা হয়েছে। এছাড়া ভিডিওতে ৩৩ হাজারেরও বেশি পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য ভিডিওটি বর্তমানে পেজটিতে পাওয়া যাচ্ছে না।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ফেসবুকে লাইভে এসে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে মারার হুমকি দেননি বরং সাকিবের পুরনো এবং ভিন্ন প্রেক্ষাপটের ভিডিও উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
ভিডিও যাচাই: ০১
সাকিবের ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে সাকিব আল হাসানের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে ২০২৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওর একটি অংশের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison: Rumor Scanner
উক্ত ভিডিওতে সাকিব ২০২৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি চীনের বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনীয় পণ্য উৎপাদক সংস্থা ওপোর নতুন মডেলের মোবাইল বাজারজাত উপলক্ষে একটি বিজ্ঞাপনী বার্তা দেন। এই ভিডিওতে ব্যারিস্টার সুমনকে নিয়ে তিনি কোনো কথা বলেননি।
ভিডিও যাচাই: ০২
ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে বেসরকারি ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম কালবেলা’র ইউটিউব চ্যানেল ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ ব্যারিস্টার সুমনকে মারতে গিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান শীর্ষক শিরোনামে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের একটি সাক্ষাৎকার খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison: Rumor Scanner
উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিওতে ব্যারিস্টার সুমন সাকিবের সমালোচনা করে নানা কথা বলেন। তিনি বলেন, “সাকিব জনপ্রিয় ব্যক্তি। তিনি আমায় মারলেও কেউ আমার বিচার নেবে না। সেলিব্রেটি সে মারতেই পারে আমাকে।”
এছাড়া, অনুসন্ধানে দেশিয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সাকিব ব্যারিস্টার সুমনকে মারার হুমকি দেওয়ার দাবির বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, ২০২৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান চীনের বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনীয় পণ্য উৎপাদক সংস্থা ওপোর নতুন মডেলের মোবাইল বাজারজাত উপলক্ষে তার অফিসিশাল ফেসবুক পেজে একটি বিজ্ঞাপনী বার্তা দেন। পাশাপাশি একই বছরের ১৬ মার্চ মূলধারার গণমাধ্যম কালবেলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্যারিস্টার সুমন সাকিবের বিরুদ্ধে তাকে হামলা চেষ্টার অভিযোগ তুলেন এবং সাকিবকে নিয়ে নানা সমালোচনা করেন। সম্প্রতি উক্ত ঘটনা দুইটির ভিডিও ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় যুক্ত করে সাকিব আল হাসান লাইভে এসে ব্যারিস্টার সুমনকে মারার হুমকি দিয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, সাকিব আল হাসান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভে এসে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে মারার হুমকি দিয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, ‘টাকার বস্তা দিয়ে শরিফুলকে কিনে নিবো লাইভে এসে শরিফুলকে সরাসরি জানিয়ে দিল বিরাট কোহলি’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।
ভিডিওটিতে দাবি করা হচ্ছে, আসন্ন আইপিএল আসরে বাংলাদেশি পেসার শরিফুল ইসলামকে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু-এর সাবেক অধিনায়ক বিরাট কোহলি বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে তার দলে কিনে নিবেন এমন বক্তব্য দিয়ে একটি লাইভ ভিডিও প্রকাশ করেছেন।
পরবর্তীতে উক্ত ভিডিওটি ডাউনলোড করে টিকটকেও প্রচার করা হয়। টিকটক পোস্টটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, লাইভে এসে বিরাট কোহলির বাংলাদেশি পেসার শরিফুল ইসলামকে টাকার বস্তার বিনিময়ে কিনে নিতে চাওয়ার আলোচিত দাবিটি সঠিক নয়। বরং, ভারতীয় মোটরসাইকেল প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান Hero MotoCorp এর ১০০ মিলিয়ন তম মোটরসাইকেল উৎপাদন উপলক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিরাট কোহলির দেওয়া একটি শুভেচ্ছা বার্তার ভিডিও আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে ১ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের আলোচিত ইউটিউব ভিডিওটি পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটির শুরুতে বিরাট কোহলির একটি ভিডিও দেখতে পাওয়া যায়। যেখানে তাকে ‘Today there are 100 milion hero’ শীর্ষক কথাটি বলতে শোনা যায়। পরবর্তীতে ভিডিওটির উপস্থাপক কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্য প্রমাণ ছাড়াই সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে দাবি করেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর এই খেলোয়াড় লাইভে এসে ‘টাকার বস্তা দিয়ে শরিফুল ইসলামকে আমার দলে কিনে নিবো। যত টাকা লাগে আমরা দিবো। তবুও শরিফুল ইসলামকে আমাদের দলে চাই’ শীর্ষক কথাগুলো বলেছেন। আলোচিত ভিডিওর শুরুতে দেখানো লাইভ ভিডিওতে যার কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বিরাট কোহলির উক্ত লাইভ ভিডিওটি অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। বিরাট কোহলির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ২০২১ সালের ২২ জানুয়ারি #100MillionHeroes 👏🏼 @heromotocorp শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Facebook
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এই ভিডিওটির সাথে আলোচ্য ইউটিউব ভিডিওর শুরুতে দেখানো ভিডিওটির হুবহু মিল পাওয়া যায়।
Video Comparison by Rumor Scanner
তবে ভিডিওটির কোথাও বিরাট কোহলিকে আলোচিত ভিডিওতে উপস্থাপকের দাবিকৃত কথাগুলো বলতে শোনা যায়নি। বরং, ভারতীয় মোটরসাইকেল প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান Hero MotoCorp কে শুভেচ্ছা জানিয়ে উক্ত ভিডিওতে বিরাট কোহলি ইংরেজিতে কিছু কথা বলেন। যার বাংলা অনুবাদ- ‘একশ মিলিয়ন হিরো, ওয়াও! এটা কত অসাধারণ! আজ একশ মিলিয়ন হিরো রাইডার তাদের স্বপ্ন এবং আগামীর জন্য শক্তি নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে। এই মহান মুহূর্তের জন্য আমি পাওয়ান জি (Hero MotoCorp এর নির্বাহী চেয়ারম্যান) এবং পুরো হিরো দলকে অভিনন্দন জানাতে চাই। হিরো পরিবারের অংশ হতে পারাটা আমার জন্য সম্মানের। ভারতের একটি সত্যিকারের বিশ্বমানের ব্র্যান্ড।’
প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে জানা যায়, সেদিনই ভারতীয় মোটরসাইকেল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান Hero MotoCorp তাদের Hero Xtreme 160R মডেলের মোটরসাইকেল উদ্বোধনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির ১০০ মিলিয়ন বা ১০ কোটি তম বাইক উৎপাদনসম্পন্ন করে।
এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে তার ফেসবুক পেজে প্রচারকৃত ভিডিওগুলো পর্যালোচনা করেও আলোচিত দাবির পক্ষে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমেও দেশী কিংবা বিদেশি কোনো গণমাধ্যমে আলোচিত দাবিটির বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, বাংলাদেশি পেসার শরিফুল ইসলামকে আইপিএল-এ তার দলে কেনার বিষয়ে বিরাট কোহলি কোনো লাইভ করেননি।
মূলত, গত ১৯ জানুয়ারি রপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিপিএলের ইতিহাসের সপ্তম হ্যাটট্রিক করেন বাঁহাতি পেসার শরিফুল।। বিপিএলের প্রথম ম্যাচেই হ্যাটট্রিক করে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন তরুণ বাংলাদেশি পেসার শরিফুল ইসলাম। গত ১৯ জানুয়ারি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে দুর্দান্ত ঢাকার হয়ে দারুণ এই পারফর্মেন্সের পর বিপিএলের এলিট ক্লাবের সদস্য হয়েছেন তিনি। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি আইপিএল-এর দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর জনপ্রিয় খেলোয়াড় ‘বিরাট কোহলি লাইভে এসে টাকার বস্তা দিয়ে শরিফুল ইসলামকে তার দলে কিনে নিতে চেয়েছেন’ দাবিতে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০২১ সালে ভারতীয় মোটরসাইকেল প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান Hero MotoCorp এর ১০০ মিলিয়ন তম মোটরসাইকেল উৎপাদন উপলক্ষ্যে বিরাট কোহলিও দেওয়া একটি শুভেচ্ছা বার্তার ভিডিওকে কেটে নিয়ে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, লাইভে এসে বিরাট কোহলির টাকার বস্তা দিয়ে বাংলাদেশি পেসার শরিফুল ইসলামকে আইপিএলে তার দলে কিনতে চাওয়ার দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ : এই প্রতিবেদন প্রকাশ পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টিকটকে একই দাবি সম্বলিত ভিডিও আমাদের নজরে আসার প্রেক্ষিতে একটি টিকটক পোস্টকে প্রতিবেদনে দাবি হিসেবে যুক্ত করা হলো।
গত ১২ জানুয়ারি Sports Center নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘সাকিবের মতো খারাপ মানুষ দুইটা হয় না! ব্যারিস্টার সুমনের পক্ষ নিয়ে সাকিবকে ধুয়ে দিলো তামিম’ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি প্রায় ১৪ হাজার বার দেখা হয়েছে। ভিডিওটিতে প্রায় আড়াই শত পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের সাথে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের পুরোনো দ্বন্দ্ব ইস্যুতে সুমনের পক্ষ নিয়ে সাকিবের বিরুদ্ধে কোনো মন্তব্য করেননি তামিম ইকবাল বরং তামিম ইকবালের ভিন্ন প্রেক্ষাপটের পুরোনো একটি ভিডিও ক্লিপের সাথে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার পুরোনো কিছু ছবি যুক্ত করে তাতে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটিতে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল, বর্তমান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান এবং ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের পুরোনো কিছু ছবি ও ভিডিও ক্লিপ প্রদর্শিত হতে দেখা যায়।
ভিডিওটি’র সংবাদপাঠ অংশে দাবি হয়, ‘মাগুরা-১ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর সুমনকে আবারও মারার হুমকি দিয়েছেন সাকিব। সাকিবের এমন কর্মকাণ্ড দেখে সংবাদমাধ্যমে এসে তামিম ইকবাল বলেন, “খেলার মাঠ আর রাজনীতির মাঠ এক নয়, সে এখন এমপি হয়েছে। একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ একাজ করতে পারে না। সাকিব অতিরিক্ত বেড়ে গেছে। ওর বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে তামিম ইকবালের এরূপ কোনো মন্তব্যের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা ভিডিও ক্লিপটির বিষয়ে আলাদাভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
ভিডিওটিতে দেখানো তামিম ইকবালের বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে বেসরকারি টেলিভিশন ‘এখন টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ‘সাকিবের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে খোলামেলা কথা বললেন তামিম?’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
এই ভিডিওর একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত তামিম ইকবালের বক্তব্যের অংশের হুবহু মিল পাওয়া যায়।
Video Comparison by Rumor Scanner
ভিডিওতে উল্লেখিত বিস্তারিত তথ্য থেকে জানা যায়, এটি ২০২৩ সালে আলোচিত তামিম-সাকিব দ্বন্দ্ব ইস্যুতে তামিমের বক্তব্যের ভিডিও। উক্ত ভিডিওটিতে সাকিব আল হাসানের বিপক্ষে সেসময় তাকে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য করতে দেখা যায়নি।
অর্থাৎ, এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এর সাথে আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই।
এছাড়াও, অতীতে কিংবা সাম্প্রতিক সময়ে সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে তামিম ইকবালকে প্রকাশ্যে কোনো ধরনের বিরূপ মন্তব্য করতে দেখা যায়নি।
তবে, ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের স্কোয়াড থেকে তামিম ইকবালের বাদ পড়াসহ দলের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নিয়ে বিশ্বকাপের পূর্বেই সাকিব আল হাসান টি স্পোর্টসে একটি সাক্ষাৎকার দেন। পরবর্তীতে স্কোয়াডে না থাকা ইস্যুতে তামিম ইকবালও তার ফেসবুক পেজে একটু ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেন। তাদের দুজনের এই পৃথক দুই বার্তার মাধ্যমে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হয়। কিন্তু তামিম ঐ ভিডিও বার্তায় সাকিবকে উল্লেখ করে তাকে নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি।
মূলত, ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় তিনি সাকিব আল হাসানের দুবাইয়ে গিয়ে আলোচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানের জুয়েলারি শপ উদ্ভোধন করতে যাওয়ার বিষয়ের সমালোচনা করে সাকিবের বিরুদ্ধে তার (সুমন) ওপর হামলার চেষ্টার অভিযোগ করেন। পরবর্তী উক্ত বিষয়টি ব্যাপক ভাইরাল হলে তা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। উক্ত বিষয়টিকেই সাকিব এবং ব্যারিস্টার সুমনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরের ঘটনা দাবি করে সে প্রেক্ষিতে গত ১২ জানুয়ারি Sports Center নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘সাকিবের মতো খারাপ মানুষ দুইটা হয় না! ব্যারিস্টার সুমনের পক্ষ নিয়ে সাকিবকে ধুয়ে দিলো তামিম’ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে উক্ত দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি। সাম্প্রতিক সময়ে কিংবা অতীতে তামিম ইকবাল এমন কোনো মন্তব্য করেননি। প্রকৃতপক্ষে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে সাকিবের সাথে দ্বন্দ্ব নিয়ে গণমাধ্যমের প্রশ্নের মুখোমুখি তামিম ইকবাল। তবে সেসময় তিনি সাকিব আল হাসান সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য করেননি। সম্প্রতি ঐ ঘটনার ভিডিও প্রচার করেই ব্যারিস্টার সুমনের পক্ষ নিয়ে তামিম ইকবাল সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে মন্তব্য করেছেন শীর্ষক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন এবং ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের বিষয়ে ভুল তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ব্যারিস্টার সুমনের পক্ষ নিয়ে তামিম ইকবাল ‘সাকিবের মতো খারাপ মানুষ দুইটা হয় না’ শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
গত ১৫ জানুয়ারি Sports Center নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘সাকিব পরিবার থেকে কোনো শিক্ষা পায় নাই, ব্যারিস্টার সুমনের পক্ষ নিয়ে সাকিবকে একি বললো মুশফিক’ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি প্রায় ৫ হাজার বার দেখা হয়েছে। ভিডিওটিতে প্রায় ১ শত পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, হবিগঞ্জ-৪ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের সাথে মাগুরা-১ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসানের পুরোনো দ্বন্দ্ব ইস্যুতে সুমনের পক্ষ নিয়ে সাকিবের বিরুদ্ধে কোনো মন্তব্য করেননি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সিনিয়র খেলোয়াড় মুশফিকুর রহিম বরং মুশফিকুর রহিমের ভিন্ন প্রেক্ষাপটের পুরোনো একটি ভিডিও ক্লিপের সাথে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার পুরোনো কিছু ছবি যুক্ত করে তাতে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটিতে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের উইকেট কিপার ব্যাটার মুশফিকুর রহিম, বর্তমান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান এবং ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের পুরোনো কিছু ছবি ও ভিডিও ক্লিপ প্রদর্শিত হতে দেখা যায়।
ভিডিওটি’র সংবাদপাঠ অংশে দাবি হয়, ‘সাকিব আল হাসান এবং ব্যারিস্টার সুমনের দ্বন্দ্ব ইস্যুতে ফেসবুক লাইভে এসে মুশফিকুর রহিম বলেছেন, “সাকিব চরম তার পরিবার থেকে কোনো শিক্ষা পায়নি, সে চরম বেয়াদব। ব্যারিস্টার সুমন একজন দেশপ্রেমিক এবং ভালো মনের মানুষ। সাকিব কিভাবে তাকে মারতে যায়? সাকিব তার নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী এমপি হয়নি বরং ব্যারিস্টার সুমন তার নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী এমপি হয়েছে। অল্পকিছুতেই সাধারণ মানুষকে মারধর করা এবং তাদের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে যাওয়া এগুলো কোনো খেলোয়াড় করতে পারে না। সাকিবের উচিত ব্যারিস্টার সুমনের পা ধরে মাফ চাওয়া।”
প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে মুশফিকুর রহিমের এরূপ কোনো মন্তব্যের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা ভিডিও ক্লিপটির বিষয়ে আলাদাভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
ভিডিওটিতে প্রচারিত মুশফিকুর রহিমের বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে মুশফিকুর রহিমের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ২০২১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ‘It’s time to GEAR UP! Get tge best offers of PUMA at daraz’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison by Rumor Scanner
উক্ত ভিডিওর একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওর মুশফিকুর রহিমের ফুটেজ অংশের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিওতে মুশফিক তার বিজ্ঞাপনী কাজের অংশ হিসেবে অনলাইন মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম দারাজের ৭ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতিষ্ঠানটি’র ওয়েবসাইট থেকে পুমা’র পণ্য ক্রয় নিয়ে কথা বলেন।
অর্থাৎ, এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এর সাথে আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই।
এছাড়াও, অতীতে কিংবা সাম্প্রতিক সময়ে সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে মুশফিকুর রহিমকে প্রকাশ্যে কোনো ধরনের বিরূপ মন্তব্য করতে দেখা যায়নি।
মূলত, ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় তিনি সাকিব আল হাসানের দুবাইয়ে গিয়ে আলোচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানের জুয়েলারি শপ উদ্ভোধন করতে যাওয়ার বিষয়ের সমালোচনা করে সাকিবের বিরুদ্ধে তার (সুমন) ওপর হামলার চেষ্টার অভিযোগ করেন। পরবর্তী উক্ত বিষয়টি ব্যাপক ভাইরাল হলে তা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। উক্ত বিষয়টিকেই সাকিব এবং ব্যারিস্টার সুমনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরের ঘটনা দাবি করে সে প্রেক্ষিতে গত ১৫ জানুয়ারি Sports Center নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘সাকিব পরিবার থেকে কোনো শিক্ষা পায় নাই, ব্যারিস্টার সুমনের পক্ষ নিয়ে সাকিবকে একি বললো মুশফিক’ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে উক্ত দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে, সাম্প্রতিক সময়ে কিংবা অতীতে মুশফিক রহিম সাকিব আল হাসানকে নিয়ে এরূপ কোনো মন্তব্য করেননি। মুশফিকুর রহিমের দারাজের বিজ্ঞাপনী কাজের পুরোনো একটি ভিডিও ক্লিপের সাথে ও ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার পুরোনো কিছু ছবি যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন এবং সাকিব আল হাসানের বিষয়ে ভুল তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ব্যারিস্টার সুমনের পক্ষ নিয়ে মুশফিকুর রহিম ‘‘সাকিব পরিবার থেকে কোনো শিক্ষা পায় নাই’’ শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
হবিগঞ্জ-৪ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনকে হামলা চেষ্টার কারণে মাগুরা-১ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড থেকে দলের অধিনায়কত্ব হারিয়েছেন শীর্ষক দাবি সম্বলিত শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে গত ১১ জানুয়ারি Sports Center নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ৭৫ হাজার বার। ভিডিওটিতে ১ হাজার ৫ শত পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মাগুরা-১ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে অধিনায়কত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়নি বরং অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে তাতে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার পুরোনো কিছু ভিডিও ক্লিপ ও ছবি যুক্ত করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটিতে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, অধিনায়ক সাকিব আল হাসান এবং ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের পুরোনো কিছু ছবি ও ভিডিও ক্লিপ প্রদর্শিত হতে দেখা যায়।
ভিডিওটি’র সংবাদপাঠ অংশে দাবি হয়, পুরোনো শত্রুতার জেরে এমপি হওয়ার পর আবারও ব্যারিস্টার সুমনকে মারার হুমকি দেয় সাকিব আল হাসান। এই খবর নাজমুল হাসান পাপনের কানে পৌছালে তিনি এক সংবাদ মাধ্যমে এসে সাকিব আল হাসানকে অহংকারী এবং বেয়াদব আখ্যা দিয়ে তাকে তিন ফরম্যাটের অধিনায়কের দায়িত্ব থেকে বহিস্কার করেন।
পরবর্তী অনুসন্ধানে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা ছবি ও ভিডিও ক্লিপগুলোর বিষয়ে আলাদাভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
ভিডিও যাচাই: ১
ভিডিওটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম কালবেলা’র ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ ‘ব্যারিস্টার সুমনকে মারতে গিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের সাক্ষাৎকারের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
এই ভিডিওটি’র একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটি’র শুরুতে দেখানো ব্যারিস্টার সুমনের ভিডিও ক্লিপের হুবহু মিল পাওয়া যায়।
Video Comparison by Rumor Scanner
ভিডিওতে সেসময় ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনকে সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে হামলা চেষ্টার অভিযোগ সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেখা যায়।
অর্থাৎ, এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
ভিডিও যাচাই ২
ভিডিওটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘এখন টিভি’রর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর ‘বাংলাদেশের ব্যর্থতা নিয়ে যা বললেন পাপন’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: EKHON TV
ভিডিওতে উল্লেখিত বিস্তারিত তথ্য থেকে জানা যায়, এটি ২০২৩ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পরাজয় প্রসঙ্গে সেসময় সাংবাদিকদের সাথে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের কথা বলার ভিডিও।
এই ভিডিওটি’র একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটি’র নাজমুল হাসান পাপনের বক্তব্যের ফুটেজ অংশের হুবহু মিল পাওয়া যায়।
Video Comparison by Rumor Scanner
অর্থাৎ, এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এর সাথে আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই।
ছবি যাচাই
ভিডিওটিতে প্রদর্শিত নাজমুল হাসান পাপনের ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে বাংলাদেশের জাতীয় সংবাদ সংস্থা ‘বাসস’ এর ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ২৩ জুলাই ‘বিশ্বকাপে তামিমই আমাদের অধিনায়ক’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবির সাথে আলোচিত ভিডিওতে ব্যবহৃত নাজমুল হাসান পাপনের ছবির হুবহু মিল পাওয়া যায়।
Image Comparison by Rumor Scanner
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এটি ২০২৩ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপে তামিম ইকবাল বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হওয়া প্রসঙ্গে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময়ের ছবি।
অর্থাৎ, এই ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এর সাথে আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই।
পাশাপাশি, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এখন পর্যন্ত সাকিব আল হাসানকে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়কের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় তিনি সাকিব আল হাসানের দুবাইয়ে গিয়ে আলোচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানের জুয়েলারি শপ উদ্বোধন করতে যাওয়ার বিষয়ের সমালোচনা করে সাকিবের বিরুদ্ধে তার (সুমন) ওপর হামলার চেষ্টার অভিযোগ করেন। তবে উক্ত ঘটনায় সেসময় বা পরবর্তীতে কোনো ধরনের মামলা করা হয়নি।
এছাড়া, মূলধারার গণমাধ্যম ‘যুগান্তর’ এর অনলাইন সংস্করণে গত ২৯ ডিসেম্বর ‘সাকিব এখনো আমাদের অধিনায়ক’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিসিবির ক্রিকেট অপারেশনস কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনূসের বক্তব্য থেকে জানা যায়, রাজনৈতিক ব্যস্ততা এবং ইনজুরির কারণে সেসময় দলের বাইরে থাকলেও সাকিব আল হাসানই বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হিসেবে থাকবেন। সাকিব আল হাসানের পরিকল্পনা জেনে পরবর্তীতে দীর্ঘমেয়াদী অধিনায়ক কে হবেন সেব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত দাবিটি সঠিক নয়।
মূলত, ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় তিনি সাকিব আল হাসানের দুবাইয়ে গিয়ে আলোচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানের জুয়েলারি শপ উদ্বোধন করতে যাওয়ার বিষয়ের সমালোচনা করে সাকিবের বিরুদ্ধে তার (সুমন) ওপর হামলার চেষ্টার অভিযোগ করেন। পরবর্তী উক্ত বিষয়টি ব্যাপক ভাইরাল হলে তা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সাকিব ও সুমনের এই পুরোনো দ্বন্দ্বকে পুঁজি করে গত ১১ জানুয়ারি Sports Center নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে হবিগঞ্জ-৪ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনকে হামলা চেষ্টার কারণে মাগুরা-১ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড থেকে দলের অধিনায়কত্ব হারিয়েছে শীর্ষক দাবি সম্বলিত শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে উক্ত দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে সাকিব আল হাসানকে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর সায়েদুল হক সুমন ও সাকিব আল হাসানের মধ্যে পুনরায় দ্বন্দ্বে জড়িয়ে যাওয়ার কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি এবং তাদের পুরোনো দ্বন্দ্ব নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন সাম্প্রতিক সময়ে কোনো বক্তব্য প্রদান করেননি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও ব্যারিস্টার সুমন এবং সাকিব আল হাসানের বিষয়ে ভুল তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনকে হামলা চেষ্টার অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাকিব আল হাসান বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়কত্ব হারিয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, বিপিএল ২০২৪ এ উপস্থাপক বা ধারাভাষ্যকার হিসেবে থাকবেন প্রমীলা ক্রিকেটার জাহানারা আলম– শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) এর আসন্ন দশম আসরে ধারাভাষ্যকার/ উপস্থাপক (কমেন্টেটর) হিসেবে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটার জাহানারা আলম থাকছেন শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং বিপিএলের আসন্ন দশম আসরের ধারাভাষ্যকারদের তালিকায় জাহানারা আলমের নাম নেই। এছাড়া, তিনি নিজেও তথ্যটি সম্পর্কে জানেন না বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
অনুসন্ধানে গত ৮ জানুয়ারি ‘CricCircle’ নামক একটি ফেসবুক পেজে আসন্ন বিপিএলের দশম আসরে ‘কে কে থাকতে পারেন ধারাভাষ্যকার হিসেবে’ তার ভবিষ্যদ্বাণী করে দেওয়া একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: CricCircle
এই পোস্টে অন্যান্যদের মধ্যে জাহানারা আলমের নামও রয়েছে।
এই পোস্ট থেকেই পরবর্তীতে আলোচিত দাবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
পরবর্তীতে জাতীয় দৈনিক ‘প্রতিদিনের বাংলাদেশ’ এর ওয়েবসাইটে গত ১২ জানুয়ারি “ধারাভাষ্য দেবেন জাহানারা, জানেন না তিনিই”- শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
প্রতিদিনের বাংলাদেশ’কে আলোচিত দাবিটি নিয়ে জাহানারা আলম বলেছেন, ‘আমি নিজেও জানি না এটা সম্পর্কে। ফেসবুকে দেখলাম এমন একটা নিউজ। বিগত তিন-চার দিন থেকে অনেক অভিনন্দনও পেয়েছি। কিন্তু আমি নিজেও জানি না ধারাভাষ্য দিতে যাচ্ছি।’
এছাড়া, গত ১৬ জানুয়ারি বিপিএলের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে আসন্ন বিপিএলের দশম আসরে কে কে থাকছেন ধারাভাষ্যকার হিসেবে এ-সংক্রান্ত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: BPL- Bangladesh Premier League Facebook Post
পোস্টটিতে ৯ জন ধারাভাষ্যকারের নাম থাকলেও সেখানে জাহানারা আলমের নাম নেই।
মূলত, গত ৮ জানুয়ারি ‘CricCircle’ নামক একটি ফেসবুক পেজ থেকে বিপিএলের আসন্ন দশম আসরে কে কে ধারাভাষ্যকার হিসেবে থাকতে পারেন এর ভবিষ্যদ্বাণী করে ১০ জনের তালিকা দিয়ে একটি পোস্ট করা হয়। সেখানে জাহানারা আলমের নাম ছিল। পরবর্তীতে জাহানারা আলম বিপিএলের আসন্ন দশম আসরে ধারাভাষ্যকার হিসেবে থাকবেন দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিপিএলের আসন্ন দশম আসরে ধারাভাষ্যকারদের তালিকায় জাহানারা আলমের নাম নেই। এছাড়া, তথ্যটি তিনি জানেন না বলে গণমাধ্যমকেও নিশ্চিত করেছেন।
সুতরাং, বিপিএলের আসন্ন দশম আসরে জাহানারা আলম ধারাভাষ্যকার হিসেবে থাকবেন- শীর্ষক তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, চার কিডনি অনুদান দেওয়া হচ্ছে দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
দাবিকৃত বার্তাটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
“Dear all Important, 4 Kidneys Available.
Due to Death of Mr Sudhir And His Wife Who Met With an Accident Yesterday, Doctor Has Declared Them Brain Dead. Mr.Sudhir is B+ and His Wife O+. His Family Wants to Donate Their Kidneys for Humanity .Plz Circulate.
Contact 9837285283 9581544124 8977775312
Forward to Another Group, It Could Help Someone…”
অনূদিত- “প্রিয়জনেরা, গুরুত্বপূর্ণ খবর: ৪টি কিডনি পাওয়া যাবে।
গতকাল একটি দুর্ঘটনায় মি. সুধীর এবং তাঁর স্ত্রী মারা গেছেন, যার ফলে চিকিৎসক তাদের মস্তিষ্ক মৃত বলে ঘোষণা করেছেন। মি. সুধীরের রক্তের গ্রুপ বি পজিটিভ এবং তাঁর স্ত্রীর ও পজিটিভ। তাদের পরিবার মানবতার স্বার্থে তাদের কিডনি দান করতে ইচ্ছুক। অনুগ্রহ করে এই বার্তাটি ছড়িয়ে দিন।
যোগাযোগ: 9837285283 9581544124 8977775312
এই বার্তাটি অন্যান্য গ্রুপে ফরওয়ার্ড করুন, এর মাধ্যমে অন্যরা সাহায্য পেতে পারে…”
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চার কিডনি অনুদানের ভাইরাল বার্তাটি সত্য নয় বরং অন্তত ২০১৭ সাল থেকেই ভারতের এক কিডনি বিশেষজ্ঞ সহ আরো দুই অপরিচিত ব্যক্তির মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে চার কিডনি দান বিষয়ক একটি বার্তা দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে প্রচার হয়ে আসছে। তাছাড়া বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী বার্তায় উল্লেখ করা উপায়ে কিডনি অনুদান সম্ভব নয়।
শুরুতেই ছড়িয়ে পড়া বার্তাটি ফেসবুকে অনুসন্ধান করি আমরা। একই বার্তা ২০১৭ সাল থেকে প্রায় প্রতি বছর দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট হতে দেখি আমরা (২০১৭,২০১৮,২০১৯,২০২০,২০২১,২০২২,২০২৩)। ২০১৭ ও ২০১৮ সালের পোস্টগুলোতে শুধু একটি নম্বর ‘9837285283’ যুক্ত ছিলো। সময়ের ব্যবধানে আরো দুইটি নম্বর যুক্ত করে ২০১৯ সাল থেকে মোট তিনটি নম্বর সহ আলোচিত বার্তা প্রচার হতে দেখা যায়।
বার্তাটির সাথে যুক্ত মোবাইল নম্বরগুলো লক্ষ্য করলে দেখতে পারি একটি নম্বরও বাংলাদেশি নয়। নম্বরগুলো কার সে বিষয়ে জানতে কলার সনাক্তকরণ ও ব্লক করার অ্যাপ ট্রুকলারের (Truecaller) ব্যবহার করি। ট্রুকলার ব্যবহার করে প্রথম অর্থাৎ ‘9837285283’ নম্বরটি সম্পর্কে জানা যায় এটি, Sandeep Kumar Garg নামের এক ব্যক্তির নম্বর। বাকি দুইটি নম্বর অর্থাৎ ‘9581544124’ এবং ‘8977775312’ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য মেলেনি।
Image Collage: Rumor Scanner.
প্রথম নম্বর থেকে প্রাপ্ত নামের সূত্র ধরে ওপেন সোর্স অনুসন্ধানে ভারতের মিরাটে অবস্থিত নুতেমা হাসপাতালের ওয়েবসাইটে একজন ডাক্তারের প্রোফাইল খুঁজে পাই। সেখান থেকে জানতে পারি সন্দীপ কুমার গর্গ একজন নেফ্রোলজিস্ট (কিডনি বিশেষজ্ঞ)।
তার সম্পর্কে বিস্তারিত অনুসন্ধানে ভারতীয় ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠান নিউজ মোবাইলের (News Mobile) ওয়েবসাইটে ২০২১ সালে আলোচ্য বিষয়ে প্রকাশিত একটি ফ্যাক্ট-চেক প্রতিবেদন পাই আমরা। ভাইরাল এই বার্তার বিষয়ে সন্দীপ কুমারের সাথে যোগাযোগ করেছিলো তারা। এ বিষয়টি গুজব এবং অনেক বছর ধরেই ছড়িয়ে আসছে বলে নিউজ মোবাইলকে জানিয়েছেন সন্দীপ কুমার।
আরেকটি ফ্যাক্ট-চেকিং সাইট Social Media Hoax Slayer-এ ২০১৮ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সন্দীপ কুমারের মন্তব্য পাওয়া যায়। জানা যায়, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এই সমস্যায় পড়েছেন তিনি। এই বিষয়ে সাইবার সেলেও অভিযোগ জানিয়েছেন। তার মতে কেউ প্র্যাংক বা হয়রানির উদ্দেশ্যে তার নম্বর যুক্ত করে এমন বার্তা ছড়িয়েছে।
আমরাও সন্দীপ কুমার গর্গের সাথে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। তবে প্রতিবেদনটি প্রকাশের সময় অবধি কোনো প্রত্যুত্তর পাইনি।
বাকি দুইটি অর্থাৎ ‘9581544124’ এবং ‘8977775312’ নম্বরের বিষয়ে কোনো তথ্য মেলেনি এবং যোগাযোগও সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে আরো একাধিক আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠান প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কায় একই বার্তা ছড়িয়ে পড়লে ফ্রান্সের নিউজ এজেন্সি এএফপির ফ্যাক্টচেক বিভাগ বিষয়টিকে ভুয়া প্রমাণ করে। ২০২০ সালে একই বিষয়কে ভুয়া প্রমাণ করে ভারতের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠান বুম।
যেহেতু বার্তাটি বর্তমানে বাংলাদেশে ছড়িয়ে তাই বাংলাদেশে কিডনি অনুদান বিষয়ক আইনে কি বিধিনিষেধ আছে তা খুঁজে বের করি আমরা। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচলিত মানবদেহে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন (সংশোধন) আইন, ২০১৮ অনুযায়ী জীবন রক্ষায় ২২ ধরনের নিকটাত্মীয়ের কিডনি নেওয়া যাবে। তারা হচ্ছেন- মা, বাবা, ছেলে, মেয়ে, ভাই, বোন, স্বামী, স্ত্রী ও আপন চাচা, ফুফু, মামা, খালা, নানা, নানি, দাদা, দাদি, নাতি, নাতনি এবং আপন চাচাতো, মামাতো, ফুফাতো, খালাতো ভাই বা বোন। এই তালিকার বাইরে অন্য কারও শরীর থেকে কিডনি নিয়ে অন্যের শরীরে প্রতিস্থাপন করার আইনি সুযোগ নেই।
যদিও ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর আত্মীয় না হলেও কোনো ব্যক্তিকে কিডনি দান করার বিধান রেখে আইন সংশোধনের রায় দিয়েছে বাংলাদেশের হাইকোর্ট। তবে রায়ের পরবর্তী সময় আইন সংশোধনের কোনো তথ্য পাইনি আমরা। মূলত, ২০১৭ সাল থেকেই ভারতের নেফ্রোলজিস্ট সন্দ্বীপ কুমার গর্গ এবং আরো দুই অপরিচিত ব্যক্তির মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে চার কিডনি দান বিষয়ক একটি বার্তা দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে প্রচার হয়ে আসছে। জনাব সন্দ্বীপ এ বিষয়টি গুজব জানিয়ে সাইবার সেলেও অভিযোগ জানিয়েছেন। বাংলাদেশে মানবদেহে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন অনুযায়ী কিডনি রোগীকে বাঁচাতে ২২ ধরনের নিকটাত্মীয় নিজের একটি কিডনি দিতে পারেন। এই তালিকার বাইরে অন্য কারও শরীর থেকে কিডনি নিয়ে অন্যের শরীরে প্রতিস্থাপন করার আইনি সুযোগ নেই।
অর্থাৎ, চার কিডনি দানের ভাইরাল বার্তাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
গত ০৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাগুরা- ১ আসন থেকে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান এবং হবিগঞ্জ- ৪ আসন থেকে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচনের পরবর্তী সময়ে গত ১২ জানুয়ারি ‘ব্যারিস্টার সুমনকে মারতে গিয়ে এমপি পদ হারারেন সাকিব আল হাসান শীর্ষক’ দাবিতে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয় এবং পরবর্তীতে তা ফেসবুকেও ছড়িয়ে পড়ে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর এখন অবধি সাকিব আল হাসান ও ব্যারিস্টার সুমনের মধ্যকার কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে নি এবং সাকিব আল হাসান তার এমপি পদও হারাননি প্রকৃতপক্ষে, অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার পুরোনো কিছু ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটির শুরুতে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের একটি ভিডিও দেখানো হয় যাতে তাকে ‘এটাই ছিল আমার সবচেয়ে বড় সফলতা। আদালত তার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।’ শীর্ষক কথা বলতে শোনা যায়। পরবর্তীতে সাকিব আল হাসানের একটি ভিডিও দেখানো হয় যেখানে তিনি বলেন, ‘আমি জানি না। শোনা কথা বলবেন না। কংক্রিট নিউজ থাকলে সেটা বলবেন।’ এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ভিডিও দেখানো হয়। পরবর্তীতে সাকিবের ব্যারিস্টার সুমনকে মারতে যাওয়ার ভিডিও দাবিতে আরেকটি ভিডিও দেখানো হয়। সর্বোপরি ভিডিওটির উপস্থাপক দাবি করেন, সাকিবের কর্মকান্ডের জন্যে প্রধানমন্ত্রী তাকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু পুরো ভিডিওতে এমন কোনো তথ্য ভিডিও কিংবা অডিও দর্শকদের উদ্দেশ্যে দেখানো হয়নি।
ভিডিও যাচাই ১
আলোচিত ভিডিওর শুরুতে দেখানো ব্যারিস্টার সুমনের ভিডিও অনুসন্ধানে তার বক্তব্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Channel 24 এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর এ রায় সব থানার ওসিদের জন্য একটা ‘অশনি সংকেত’: ব্যারিস্টার সুমন শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Youtube
উক্ত ভিডিওর শুরুর অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওতে থাকা ব্যারিস্টার সুমনের ক্লিপের সাথে হুবহু মিল রয়েছে।
Video Comparison by Rumor Scanner
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে জানা যায়, ভিডিওটি মূলত ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা মামলার রায়ের পর গণমাধ্যমকে ব্যারিস্টার সুমনের বক্তব্য দেওয়ার ঘটনার। যার সাথে আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই।
আলোচিত ভিডিওর সাকিব আল হাসানের ক্লিপের সাথে উক্ত ভিডিওর শুরুর অংশের হুবহু মিল পাওয়া যায়।
Video Comparison by Rumor Scanner
ভিডিওটি থেকে জানা যায়, মূলত গত বছরের ১৫ সেপ্টেবর ভারতকে ৬ রানের ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের এশিয়া কাপ সফর শেষ করার পর আয়োজিত প্রেস কনফারেন্সের পরবর্তীতে সাংবাদিকদের সাথে সাকিব আল হাসানের আলাপকালে উক্ত ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে।
ভিডিও যাচাই ৩
প্রধানমন্ত্রীর ভিডিওটি অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে Maasranga News এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর সাম্প্রতিক বেলজিয়াম সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন প্রধানমন্ত্রীর শীর্ষক শিরোনামে সরাসরি সম্প্রচারকৃত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Youtube
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিহিত শাড়ি এবং ব্যাকগ্রাউন্ডের হুবহু মিল পাওয়া যায়।
Video Comparison by Rumor Scanner
ভিডিওটি থেকে জানা যায়, এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেলজিয়াম সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনের সরাসরি সম্প্রচারকৃত ভিডিও। তাছাড়াও ভিডিওর কোথাও তাকে আলোচিত দাবির বিষয়ে কথা বলতে শোনা যায়নি।
ভিডিও যাচাই ৪
সর্বোপরি জনগণের সামনে ব্যারিস্টার সুমনকে মারার ভিডিও দাবিতে দেখানো ভিডিওটি অনুসন্ধানে ভিডিওটির কয়েকটি কী-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে Jamuna TV এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ১০ মার্চ ভক্তকে ক্যাপ দিয়ে মারলেন সাকিব! কেন হারালেন মেজাজ? | Shakib Al Hasan | Jamuna TV শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Youtube
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উক্ত ভিডিওর ৪৯ সেকেন্ড থেকে ৫১ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওতে ব্যারিস্টার সুমনকে মারার ভিডিও দাবিতে প্রচারিত অংশের সাথে হুবহু মিল রয়েছে।
Video Comparison by Rumor Scanner
এছাড়াও ভিডিওটি থেকে জানা যায়, মূলত চট্টগ্রামে একটি ক্লোদিং ব্যান্ডের শো রুম উদ্বোধন করে ফেরার সময় একজন ভক্ত সাকিব আল হাসানের পরিহিত ক্যাপ ধরে টান দিলে তিনি উত্তেজিত হয়ে যান। পরবর্তীতে তিনি সেই ক্যাপটি দিয়ে তাকে উক্ত ব্যক্তিকে মারার চেষ্টা করেন। ভিডিওটি সেসময়ই ধারণ করা হয়েছিল। অর্থাৎ, ভিডিওটি ব্যারিস্টার সুমনকে মারার কোনো ঘটনার নয়।
পরবর্তীতে, সাকিব আল হাসানকে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে পদত্যাগ করার জন্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ দেওয়ার বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক নানা কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমেও কোনো গণমাধ্যম কিংবা কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, গত ১০ জানুয়ারি সাকিব আল হাসান ও ব্যারিস্টার সুমনসহ ২৯৮ জন নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য সংসদ ভবনে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন।
মূলত, ২০২৩ সালে এক ভিডিও বার্তার মাধ্যমে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন অভিযোগ তোলেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ভারত-বাংলাদেশ সিরিজ চলাকালে হোটেল সোনারগাঁওয়ে তাকে দেখে মারতে আসেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরবর্তী সময়ে তাদের দুজনের আলোচিত দ্বন্দের বিষয়টি পুনরায় সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এর প্রেক্ষিতে সম্প্রতি, ব্যারিস্টার সুমনকে মারতে গিয়ে সাকিব আল হাসান এমপি পদ হারালেন দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে উক্ত দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার পুরোনো কিছু ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে মারতে গিয়ে সাকিব আল হাসানের এমপি পদ হারানোর দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, “ব্যারিষ্টার সুমনের পা ধরে মাফ চাও সাকিব! সুমনের পক্ষ নিয়ে সাকিবকে কঠিন হুশিয়ারি কাদেরের” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
দাবি করা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মাগুরা- ১ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে হবিগঞ্জ- ৪ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের কাছে পা ধরে ক্ষমা চাইতে বলেছেন।
ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় ভিডিওটি এখন প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি প্রায় ২ লাখ ৭৮ হাজারবার দেখা হয়েছে এবং ভিডিওতে প্রায় ৪৩০০ এর অধিক মানুষ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের কাছে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দেননি বরং কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের একটি ভিডিও এবং বেশকিছু স্থিরচিত্র ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।
উক্ত ভিডিওর একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওর ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের ফুটেজ অংশের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Comparison By Rumor Scanner
উক্ত ভিডিও থেকে জানা যায়, গত ১৪ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পুনরায় আয়োজনের বিএনপির দাবি ‘মামা বাড়ির আবদার’ বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বিদেশি চাপ আছে, আছে অর্থনীতি নিয়ে ষড়যন্ত্র, এরপরও সরকার কারো কাছে নতি স্বীকার করবে না
তবে উক্ত ভিডিওর কোথাও ওবায়দুল কাদেরকে সাকিব আল হাসান কিংবা ব্যারিস্টার সুমনের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে শোনা যায়নি।
অর্থাৎ, ভিডিওটি অপ্রাসঙ্গিকভাবে আলোচিত ভিডিওর সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও, মূলধারার জাতীয় সংবাদমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকে আলোচিত দাবির সত্যতা জানা যায়নি।
মূলত, গত ১৪ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পুনরায় আয়োজনের বিএনপির দাবি ‘মামা বাড়ির আবদার’ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তার উক্ত মন্তব্যের একটি ভিডিও প্রতিবেদনের খণ্ডাংশ ব্যবহার করেই ওবায়দুল কাদের সাকিব আল হাসানকে ব্যারিস্টার সুমনের কাছে মাফ চাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। প্রকৃতপক্ষে ওবায়দুল কাদের সাকিব আল হাসানকে এমন কোনো নির্দেশ দেননি।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালে নিজের ফেসবুক পেজ থেকে এক ফেসবুক ভিডিও বার্তার মাধ্যমে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন অভিযোগ করেন যে, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ভারত-বাংলাদেশ সিরিজ চলাকালে হোটেল সোনারগাঁওয়ে তাকে দেখে হামলা চেষ্টা করেছিলেন।
সুতরাং, ওবায়দুল কাদের সাকিব আল হাসানকে ব্যারিস্টার সুমনের কাছে মাফ চাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, “সাকিবকে ক্ষমা চাইতে নির্দেশ দিচ্ছি! সুমনের পক্ষ নিয়ে সাকিবকে কঠিন হুশিয়ারি প্রধানমন্ত্রীর” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
দাবি করা হচ্ছে, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাগুরা- ১ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসানকে হবিগঞ্জ- ৪ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য সায়েদুল হক সুমনের কাছে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।’
পরবর্তীতে উক্ত ভিডিওটি ডাউনলোড করে টিকটকেও প্রচার করা হয়। টিকটক পোস্টটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী সাকিবকে ব্যারিস্টার সুমনের কাছে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দেননি বরং কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিন্ন ঘটনার ভিডিও যুক্ত করে অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটিতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের পৃথক দুইটি ভিডিও ক্লিপের পাশাপাশি সাকব আল হাসান ও সায়েদুল হক সুমনের কিছু ছবি প্রদর্শিত হতে দেখা যায়।
পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা ভিডিও ক্লিপগুলোর বিষয়ে আলাদাভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
উক্ত ভিডিওর একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটির প্রধানমন্ত্রীর ফুটেজ অংশের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Comparison By Rumor Scanner
ভিডিও থেকে জানা যায়, জুয়াড়িদের প্রস্তাব আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগকে না জানানোর অপরাধে ২০১৯ সালে আইসিসির এক বছরের নিষেধাজ্ঞা পান সাকিব আল হাসান। সে প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিসিবি সাকিবের পাশে আছে।
উক্ত ভিডিওর একটির অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটির সায়েদুল হক সুমনের ফুটেজ অংশের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Comparison By Rumor Scanner
ভিডিওতে ব্যারিস্টার সুমন সাকিবের সমালোচনা করে বিভিন্ন কথা বলেন। সাকিবকে নিয়ে তিনি বলেন, “তাঁকে কোনো সমালোচনা করলে সে মারতে আসে।”
২০২৩ সালের ১৬ মার্চ ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন তার অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এক ভিডিও বার্তায় তিনি সাকিব আল হাসানের দুবাইয়ে গিয়ে আলোচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানের জুয়েলারি শপ উদ্বোধন করতে যাওয়ার বিষয়ের সমালোচনা করে সাকিবের বিরুদ্ধে তার (সুমন) ওপর হামলার চেষ্টার অভিযোগ করেন। কালবেলার এই ভিডিওটি সেই ঘটনা পরবর্তী তার গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের ঘটনার।
অর্থাৎ, ভিডিওটি পুরোনো এবং ভিন্ন ঘটনার।
এছাড়াও, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক সাকিবকে ব্যারিস্টার সুমনের কাছে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দেওয়ার দাবির সত্যতা জানা যায়নি।
মূলত, জুয়াড়িদের প্রস্তাব আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগ(আকসু) কে না জানানোর অপরাধে ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন সাকিব আল হাসান। সেসময় তার নিষেধাজ্ঞা ও সরকারের অবস্থান সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, ‘বিসিবি সাকিবের পাশে আছে।’ পাশাপাশি ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় তিনি(সুমন) সাকিব আল হাসানের দুবাইয়ে গিয়ে আলোচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানের জুয়েলারি শপ উদ্বোধন করতে যাওয়ার বিষয়ের সমালোচনা করে সাকিবের বিরুদ্ধে তার (সুমন) ওপর হামলার চেষ্টার অভিযোগ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ব্যারিস্টার সুমনের এই পৃথক দুইটি ঘটনার বক্তব্যের পুরোনো ভিডিও ক্লিপ ব্যবহার করেই প্রধানমন্ত্রী সাকিবকে ব্যারিস্টার সুমনের কাছে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিটি সঠিক নয়। সাম্প্রতিক সময়ে সাকিব আল হাসানকে প্রধানমন্ত্রী এমন কোনো নির্দেশ দেননি। এছাড়া অতীতেও সাকিব আল হাসান ও সায়েদুল হক সুমন উভয়কে জড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন কোনো মন্তব্য নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও সাকিব আল হাসান ও সায়েদুল হক সুমনকে জড়িয়ে ইন্টারনেটে মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হলে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাকিবকে ব্যারিস্টার সুমনের কাছে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ : এই প্রতিবেদন প্রকাশ পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টিকটকে একই দাবি সম্বলিত ভিডিও আমাদের নজরে আসার প্রেক্ষিতে একটি টিকটক পোস্টকে প্রতিবেদনে দাবি হিসেবে যুক্ত করা হলো।