প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাকিবকে ব্যারিস্টার সুমনের কাছে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দেননি

সম্প্রতি, “সাকিবকে ক্ষমা চাইতে নির্দেশ দিচ্ছি! সুমনের পক্ষ নিয়ে সাকিবকে কঠিন হুশিয়ারি প্রধানমন্ত্রীর” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

ক্ষমা চাওয়ার

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে(আর্কাইভ)

দাবি করা হচ্ছে, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাগুরা- ১ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসানকে হবিগঞ্জ- ৪ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য সায়েদুল হক সুমনের কাছে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।’

পরবর্তীতে উক্ত ভিডিওটি ডাউনলোড করে টিকটকেও প্রচার করা হয়। টিকটক পোস্টটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী সাকিবকে ব্যারিস্টার সুমনের কাছে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দেননি বরং কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিন্ন ঘটনার ভিডিও যুক্ত করে অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটিতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের পৃথক দুইটি ভিডিও ক্লিপের পাশাপাশি সাকব আল হাসান ও সায়েদুল হক সুমনের কিছু ছবি প্রদর্শিত হতে দেখা যায়।

পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা ভিডিও ক্লিপগুলোর বিষয়ে আলাদাভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

ভিডিও যাচাই-১

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Somoy Tv এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর “সাকিবকে নিয়ে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা | Shakib Al Hasan | Sheikh Hasina” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটির প্রধানমন্ত্রীর ফুটেজ অংশের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison By Rumor Scanner

ভিডিও থেকে জানা যায়, জুয়াড়িদের প্রস্তাব আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগকে না জানানোর অপরাধে ২০১৯ সালে আইসিসির এক বছরের নিষেধাজ্ঞা পান সাকিব আল হাসান। সে প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিসিবি সাকিবের পাশে আছে। 

অর্থাৎ, ভিডিওটি পুরোনো এবং ভিন্ন প্রেক্ষাপটের।

ভিডিও যাচাই-২

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Kalbela এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ “ব্যারিস্টার সুমনকে মারতে গিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান | Barrister Sumon | Shakib Al Hasan | Kalbela” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর একটির অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটির সায়েদুল হক সুমনের ফুটেজ অংশের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison By Rumor Scanner

ভিডিওতে ব্যারিস্টার সুমন সাকিবের সমালোচনা করে বিভিন্ন কথা বলেন। সাকিবকে নিয়ে তিনি বলেন, “তাঁকে কোনো সমালোচনা করলে সে মারতে আসে।”

২০২৩ সালের ১৬ মার্চ ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন তার অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এক ভিডিও বার্তায় তিনি সাকিব আল হাসানের দুবাইয়ে গিয়ে আলোচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানের জুয়েলারি শপ উদ্বোধন করতে যাওয়ার বিষয়ের সমালোচনা করে সাকিবের বিরুদ্ধে তার (সুমন) ওপর হামলার চেষ্টার অভিযোগ করেন। কালবেলার এই ভিডিওটি সেই ঘটনা পরবর্তী তার গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের ঘটনার।

অর্থাৎ, ভিডিওটি পুরোনো এবং ভিন্ন ঘটনার।

এছাড়াও, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক সাকিবকে ব্যারিস্টার সুমনের কাছে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দেওয়ার দাবির সত্যতা জানা যায়নি।

মূলত, জুয়াড়িদের প্রস্তাব আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগ(আকসু) কে না জানানোর অপরাধে ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন সাকিব আল হাসান। সেসময় তার নিষেধাজ্ঞা ও সরকারের অবস্থান সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, ‘বিসিবি সাকিবের পাশে আছে।’ পাশাপাশি ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় তিনি(সুমন) সাকিব আল হাসানের দুবাইয়ে গিয়ে আলোচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানের জুয়েলারি শপ উদ্বোধন করতে যাওয়ার বিষয়ের সমালোচনা করে সাকিবের বিরুদ্ধে তার (সুমন) ওপর হামলার চেষ্টার অভিযোগ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ব্যারিস্টার সুমনের এই পৃথক দুইটি ঘটনার বক্তব্যের পুরোনো ভিডিও ক্লিপ ব্যবহার করেই প্রধানমন্ত্রী সাকিবকে ব্যারিস্টার সুমনের কাছে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিটি সঠিক নয়। সাম্প্রতিক সময়ে সাকিব আল হাসানকে প্রধানমন্ত্রী এমন কোনো নির্দেশ দেননি। এছাড়া অতীতেও সাকিব আল হাসান ও সায়েদুল হক সুমন উভয়কে জড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন কোনো মন্তব্য নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, পূর্বেও সাকিব আল হাসান ও সায়েদুল হক  সুমনকে জড়িয়ে ইন্টারনেটে মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হলে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাকিবকে ব্যারিস্টার সুমনের কাছে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

হালনাগাদ/ Update

১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ : এই প্রতিবেদন প্রকাশ পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টিকটকে একই দাবি সম্বলিত ভিডিও আমাদের নজরে আসার প্রেক্ষিতে একটি টিকটক পোস্টকে প্রতিবেদনে দাবি হিসেবে যুক্ত করা হলো।

আরও পড়ুন

spot_img