Home Blog Page 36

‘দেশে থাকলেও ঢাবিতে যেতেন না’ শীর্ষক মন্তব্য করেননি ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম

গত ০৮ আগস্ট বিবিসি বাংলা’য় কলকাতায় আওয়ামী লীগের কার্যক্রম বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। উক্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে দেশের কতিপয় গণমাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, তিনি দেশে থাকলেও তার ক্যাম্পাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতেন না।

উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন ইত্তেফাক, যায়যায়দিন, ঠিকানা নিউজ, বিডি২৪রিপোর্ট, শেয়ার নিউজ২৪। 

অনলাইন সংবাদমাধ্যম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস উক্ত দাবি সংবাদ আকারে প্রকাশের পর তা পরবর্তীতে সরিয়ে নিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সংবাদের পূর্ববর্তী আর্কাইভ না পাওয়া গেলেও সার্চ ইঞ্জিনে এখনও সংবাদটি দেখা যাচ্ছে। 

একই দাবির ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে।  

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশে থাকলেও ঢাবিতে যেতেন না শীর্ষক মন্তব্য করেননি সাদ্দাম হোসেন বরং তিনি দেশে থাকলে গত এক বছরে ক্যাম্পাসে যেতে পারতেন কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তার মন্তব্যে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে বিবিসি বাংলার আলোচিত প্রতিবেদনটি পড়ে দেখা যায়, সেখানে এমন কোনো মন্তব্যের অস্তিত্ব নেই। তবে প্রতিবেদনের একটি অংশে সাদ্দাম হোসেনের বক্তব্য কোট করেছে সংবাদমাধ্যমটি। সেখানে সাদ্দাম বলছিলেন, “গত একবছর ধরে ক্যাম্পাসটা খুব মিস করি। দেশে থাকলেও যে গত এক বছরে ক্যাম্পাসে যেতে পারতাম তা নয়।”

Screenshot: BBC Bengla Website 

অর্থাৎ, সাদ্দাম তার মন্তব্যে দেশে থাকলেও ঢাবিতে যেতে পারতেন কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তবে দাবি করা হচ্ছে যে দেশে থাকলে তিনি ঢাবিতে যেতেন না বলে মন্তব্য করেছেন। 

সুতরাং, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম দেশে থাকলেও ঢাবিতে যেতেন না শীর্ষক মন্তব্য করেছেন শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

মাইলস্টোনের শিক্ষার্থীদের পোড়া লাশ দাফন দাবিতে এখন টিভির নামে সম্পাদিত ফটোকার্ড প্রচার

0

গত ২১ জুলাই রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফ-৭ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৩৪ জনের মৃত্যু ঘটেছে। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি, মূল ধারার গণমাধ্যম এখন টিভির আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ডের মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে যে, “ঢাকা মেডিকেলের মর্গ থেকে মাইলস্টোনের শিক্ষার্থীদের পোড়া লাশ জুলাই অভ্যুত্থানের অজ্ঞাত মরদেহ বলে দাফনের জন্য হস্তান্তর করা হয়েছে। দাবি মাইলস্টোন শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের।”

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ফটোকার্ড দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে।  

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এখন টিভি উক্ত দাবিতে কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, তারেক রহমানের ভিন্ন মন্তব্য সম্বলিত ইত্তেফাকের ফটোকার্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তার সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এতে এখন টিভির লোগো এবং এটি প্রকাশের তারিখ ০৭ আগস্ট, ২০২৫ উল্লেখ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে এখন টিভির ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি অন্য কোনো গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবিটির বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে, এখন টিভির ফেসবুক পেজে গত ০৭ আগস্ট ‘ঢাকা মেডিকেলের মর্গ থেকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরিচয় না পাওয়া ৬ মরদেহ আঞ্জুমান মফিদুলে হস্তান্তর। দাফন করা হবে জুরাইন কবরস্থানে’ শীর্ষক তথ্য সম্বলিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়।

Photocard Comparison: Rumor Scanner

উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ফটোকার্ডের সাথে উক্ত ফটোকার্ডের শিরোনাম ব্যতিত বাকি সকল উপাদানের মিল রয়েছে। এখন টিভির মূল ফটোকার্ডটিতে ‘ঢাকা মেডিকেলের মর্গ থেকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরিচয় না পাওয়া ৬ মরদেহ আঞ্জুমান মফিদুলে হস্তান্তর দাফন করা হবে জুরাইন কবরস্থানে’ শীর্ষক বাক্য থাকলেও প্রচারিত ফটোকার্ডটিতে এর পরিবর্তে ‘ঢাকা মেডিকেলের মর্গ থেকে মাইলস্টোনের শিক্ষার্থীদের পোড়া লাশ জুলাই অভ্যুত্থানের অজ্ঞাত মরদেহ বলে দাফনের জন্য হস্তান্তর করা হয়েছে। দাবি মাইলস্টোন শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের।’ শীর্ষক বাক্য লেখা হয়েছে।

অর্থাৎ, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে এখন টিভির ফটোকার্ড সম্পাদনা করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

মূল ফটোকার্ড সম্বলিত এখন টিভির পোস্টের মন্তব্যের ঘরে পাওয়া গণমাধ্যমটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গুলিতে নিহত অজ্ঞাত ৬ ব্যক্তির মরদেহ আঞ্জুমান মফিদুলের কাছে হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ৭ আগস্ট সকালে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়।

গেল এক বছরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পড়ে থাকা এ মরদেহগুলোর খোঁজে আসেননি কেউ। এতে করে অজ্ঞাত হিসেবেই রাজধানীর জুরাইনে দাফন করা হবে তাদের। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে শাহবাগ থানা। এই অজ্ঞাত ৬টি লাশের মধ্যে ৩ টি যাত্রাবাড়ী থানার, ১টি পল্টন থানার ও ২টি শাহবাগ থানার।

অর্থাৎ, জুলাই অভ্যুত্থানের ঘটনা সংক্রান্ত সংবাদকে বিকৃত করে মাইলস্টোনের বিমান দুর্ঘটনার সাথে জড়িয়ে অপপ্রচার চালানো হয়েছে। 

সুতরাং, ‘ঢাকা মেডিকেলের মর্গ থেকে মাইলস্টোনের শিক্ষার্থীদের পোড়া লাশ জুলাই অভ্যুত্থানের অজ্ঞাত মরদেহ বলে দাফনের জন্য হস্তান্তর করা হয়েছে। দাবি মাইলস্টোন শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের’ শীর্ষক দাবিতে এখন টিভির নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি সম্পাদিত।

তথ্যসূত্র

বিএনপির প্রোগ্রামে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়ায় শিশুকে নির্যাতন দাবিতে ভিন্ন ঘটনা ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি, “বিএনপির পোগ্রামে যে শিশু ‘জয় বাংলা’ বলায় ভাইরাল হয়েছিল, সেই শিশুই রাতে বিএনপির সন্ত্রাসীদের নির্যাতনের শিকার! শুধু একটি কারণ—সে বিএনপির মিছিলে গিয়েও বলেছিল “জয় বাংলা”। শিশুর মুখ থেকে উচ্চারিত একটিমাত্র স্লোগান এতটাই ভয়ংকর হয়ে উঠলো? এটাই কি তোমাদের রাজনীতি? এটাই কি মানবতা?” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে উক্ত দাবিতে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এক ব্যক্তিকে গণপিটুনির এই ভিডিওটির সাথে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কোনো কর্মসূচির সম্পর্ক নেই এবং গণপিটুনির কারনও জয় বাংলা স্লোগান নয়। প্রকৃতপক্ষে, গত ১৮ মার্চ রাজধানীর খিলক্ষেতে ধর্ষণের অভিযোগে এক কিশোরকে  বিক্ষুব্ধ জনতার গণপিটুনির ভিডিও।  

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটির কিছু কী ফ্রেম রিভার্স সার্চ করে ‘Asadujjaman Ridoy’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২৫ সালের ১৯ মার্চ প্রচারিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে সংযুক্ত ভিডিওর কিছু অংশের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি মিল রয়েছে। 

Video Comparison by Rumor Scanner 

পোস্টটির ক্যাপশনে দাবি করা হয়, এটি গত ১৮ মার্চের ভিডিও। গণপিটুনির শিকার ওই কিশোরের বিরুদ্ধে ৫ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠলে তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় উত্তেজিত জনতা তাকে পুলিশের গাড়ি থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে। 

উল্লিখিত পোস্ট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে   ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম একুশে টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৫ সালের ১৯ মার্চ ‘খিলক্ষেত ধ/র্ষ/ণের অভিযোগে তরুণকে পি/টিয়ে আ/হ/ত: পুলিশ গাড়িতে হা/ম/লা’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিও প্রতিবেদন থেকে জানা যায় গণপিটুনিতে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত কিশোর আহত হলেও মারা যায় নি। 

পরবর্তীতে এঘটনায় মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে ২০২৫ সালের ১৯ মার্চ ‘খিলক্ষেতে ধর্ষণের অভিযোগে কিশোরকে গণপিটুনি, পুলিশের ওপর হামলা’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাজধানীর খিলক্ষেতে ধর্ষণের অভিযোগে এক কিশোরকে থানায় নেওয়ার সময় পুলিশের গাড়িতে হামলা করে পিটিয়ে আহত করে স্থানীয় ক্ষুব্ধ জনতা। এতে ওসি (তদন্ত) আশিকুর রহমান গুরুতর আহত হলে তাঁকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহত কিশোরকেও হাসপাতালে পাঠানো হয়। 

সুতরাং, রাজধানীর খিলক্ষেতে ধর্ষণের অভিযোগে এক কিশোরকে বিক্ষুব্ধ জনতার গণপিটুনির দৃশ্যকে বিএনপির প্রোগ্রামে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়ায় শিশুকে নির্যাতন দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

এনসিপির বিরুদ্ধে ফেসবুকে পোস্ট করায় নয়, ভিডিওর যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে চুরির অভিযোগে

সম্প্রতি, যাত্রাবাড়ীতে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নিয়ে পোস্ট করায় যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে- দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি যাত্রাবাড়ীর নয় এবং ফেসবুকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বিরুদ্ধে পোস্ট করার কার ভিডিওর যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, এটি গত ২৭ জুন গাজীপুরের কোনাবাড়িতে চুরির অপবাদ দিয়ে কারখানার অফিসে জানালার সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে এক শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার ভিডিও। 

অনুসন্ধানে মূলধারার বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে “শিরোনাম উল্লেখ” গত ৩০ জুন প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে। 

Video Comparison By Rumor Scanner 

উক্ত ভিডিও থেকে জানা যায়, গত জুন মাসে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ীতে অবস্থিত গ্রীনল্যান্ড লিমিটেড নামে একটি কারখানার ভেতরে হৃদয় নামের এক যুবককে চুরির অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা করেছে। নিহত হৃদয়ের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলায়। উক্ত ঘটনায় নিহতের ভাইয়ের করা মামলায় হাসান মাহমুদ নামের একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। 

উল্লিখিত সংবাদ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে ঢাকা পোস্টের ওয়েবসাইটে এক তারিখে “কোনাবাড়ীতে শ্রমিককে রশি দিয়ে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা, ভিডিও ভাইরাল” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে থাকা ছবির সাথেও আলোচিত ভিডিওর দৃশ্যের মিল রয়েছে। 

Screenshot: Dhaka Post Website 

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, গত ২৭ জুন দিবাগত রাতে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ীতে অবস্থিত গ্রীনল্যান্ড লিমিটেড নামে একটি কারখানার ভেতরে চুরির অপবাদ দিয়ে কারখানার অফিসে জানালার সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে এক শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠে। শ্রমিকে বেঁধে মারধর করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ২৯ জুন রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। 

একই তথ্যে প্রথম আলোও সংবাদ প্রকাশ করেছিল। 

অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নিয়ে পোস্ট করায় যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার নয়।

পাশাপাশি, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে চুরির অভিযোগে  যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার ভিডিওকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) বিরুদ্ধে ফেসবুকে পোস্ট করায় যাত্রাবাড়ীতে যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

সেনাপ্রধান পদত্যাগ করেননি এবং তাকে আটকও করা হয়নি

আওয়ামী লীগ কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগে সম্প্রতি মেজর পদমর্যাদার সাদেকুল হক সাদেক নামে এক সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নিয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। গত ৩১ জুলাই ঢাকা সেনানিবাসে অফিসার্স মেস ‘এ’-তে আয়োজিত একসংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনী সদর দপ্তরের মিলিটারি অপারেশনস পরিদফতরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা এ তথ্য জানান।

এরই প্রেক্ষিতে, যমুনা টিভি, বাংলাদেশ প্রতিদিন, একুশে টেলিভিশন, আমার দেশ -এর সংবাদ দাবিতে গণমাধ্যমগুলোর কিছু ফুটেজ যুক্ত করে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

এর মধ্যে যমুনা টিভির ফুটেজে আওয়ামী লীগ কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ ওঠা, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান পদত্যাগ করেছেন – এমন অডিও শুনা যায়। বাংলাদেশ প্রতিদিনের ফুটেজে আওয়ামী লীগ কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগে আটক সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান – এমন অডিও শুনতে পাওয়া যায়। এবং আমার দেশের ফুটেজে আওয়ামী লীগ কর্মীদের গোপনে নাশকতার ট্রেনিংয়ে সংশ্লিষ্ট সেনা কর্মকর্তা সেনাপ্রধান জেনালে ওয়াকার-উজ-জামানকে কোর্ট মার্শালের মুখোমুখি করা হচ্ছে – এমন অডিও শুনতে পাওয়া যায়।

উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। এই প্রতিবেদন লেখা অবধি ইউটিউবে ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ১ মিলিয়নেরও বেশি।

ভিডিওটিতে শুরুতে গণমাধ্যমগুলোর ফুটেজে অডিও হিসেব শুনা যাচ্ছে,

যমুনা টিভির সংবাদ ফুটেজে শুনা যায়, “আওয়ামী লীগ কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ ওঠা, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান পদত্যাগ করেছেন সম্পর্কের কথা শিকার করে। আধিপত্য কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না বলেও জানান সেনাকর্মকর্তারা।”

বাংলাদেশ প্রতিদিনরে সংবাদ ফুটেজে শুনা যায়, “কোর্ট মার্শালের মুখোমুখি হচ্ছেন আওয়ামী লীগ কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগে আটক সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তার বিরুদ্ধে পাওয়া অভিযোগের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে একটি তদন্ত আদালত গঠন করেছে সেনাবাহিনী। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।”

একুশে টেলিভিশনের সংবাদ ফুটেজে শুনা যায়, “রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা সংলগ্ন কেবি কনভেনশন সেন্টার এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। সারা দেশ থেকে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের তৃনমূল কর্মীদের সংঘটিত করে গোপনে সেখানে নাশকতার প্রশিক্ষণ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় গ্রেফতারকৃতদের জেরা করে প্রাথমিকভাবে এমন তথ্যই পেয়েছেন গোয়েন্দারা। আর ট্রেইনার সেনাকর্মকর্তাকে আটক করে তদন্ত শুরু হয়েছে।”

আমার দেশ -এর সংবাদ ফুটেজে শুনা যায়, “আওয়ামী লীগ কর্মীদের গোপনে নাশকতার ট্রেনিংয়ে সংশ্লিষ্ট সেনা কর্মকর্তা সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে কোর্ট মার্শালের মুখোমুখি করা হচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার পর সেনাবাহিনীর তরফ থেকে দুটি তদন্ত আদালত গঠন করা হয়। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ঘটনার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়ায় ইতোমধ্যে তাকে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়। বিবিসি জানিয়েছে রাজনৈতিক বৈঠকে সেনা কর্মকর্তাদের অংশগ্রহনের অভিযোগ কৌতুহলের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে ওই কর্মকর্তাকে সেনা হেফাজতে নেয়ার পর তার বিচার প্রক্রিয়া কি হবে তা নিয়েও চলছে নানা আলোচনা।”

টিকটকে প্রচারিত প্রায় একই ধরনের ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। টিকটকে ভিডিওটি প্রায় ৩ লক্ষ ৯০ হাজারেরও বেশি দেখা হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আওয়ামী লীগ কর্মীদের প্রশিক্ষণের অভিযোগে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে আটক করা হয়নি এবং তিনি পদত্যাগও করেননি। প্রকৃতপক্ষে, আওয়ামী লীগ কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগে সম্প্রতি সেনাবাহিনী মেজর সাদিককে হেফাজতে নেওয়ার ঘটনার বিষয়ে গণমাধ্যমগুলোতে প্রচারিত সংবাদ প্রতিবেদন সম্পাদনা করে আলোচিত দাবির ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার। ভিডিওটির কয়েকটি গণমাধ্যমের সংবাদের ফুটেজ দেখানো হয়। তারপর একজন ব্যক্তিকে কথা বলতে দেখা যায়।

তিনি বলেন, “দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আর্মি অফিসারের পক্ষ থেকে গোপনে ট্রেইনিং দেওয়া হবে এটা এই দেশের মানুষ কখনও কল্পনায়ও ভাবেনি। যদিও অনেক সময় অনেকে বলতো এই সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান তিনি শেখ হাসিনার নিয়োগ করা এবং তার আত্মীয় সে কারনে তিনি গোপনে হলেও শেখ হাসিনার হয়ে কাজ করবেন। যে কারনেই এইবার এই দেশের মানুষ বলছে, আর্মি অফিসারের কাছ থেকে শুধু মাত্র ক্ষমতার চেয়ার টেনে নিলেই হবে না। পাশাপাশি তাকে কঠোরতম শাস্তি দিতে হবে এবং বিচারের মুখোমুখি করতে হবে যাতে করে ভবিষ্যতে কোনো বাহিনীর সদস্যরা এই দেশের বিরুদ্ধে কোনো ধরনে ষড়যন্ত্র বা নাশকতা দুঃসাহস না করে। ইতোমধ্যেই এই আর্মি অফিসারকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং তাকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে। তো এই বিষয়ের কিছু অংশ ভিডিওর শুরুতে শিরোনামে আপনারা দেখেছেন বিস্তারিত দেখবেন পুরো ভিডিও জুড়ে…”

এরপর ভিডিওটিতে আমার দেশ -এর একটি ক্লিপ এর দীর্ঘ সংষ্করণ দেখানো হয়। কিন্তু সংবাদ প্রতিবেদনটিতে ‘আওয়ামী লীগ কর্মীদের গোপনে নাশকতার ট্রেনিংয়ে সংশ্লিষ্ট সেনা কর্মকর্তা সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে কোর্ট মার্শালের মুখোমুখি করা হচ্ছে।’ এমন কোনো তথ্য বা অডিও ছিলনা।

যমুনা টিভির ভিডিও ক্লিপ যাচাই

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে গত ৩১ জুলাই ‘পাহাড়ি এলাকায় কেএনএফ’র আধিপত্য কোনোভাবেই মেনে নেয়া হবে না’ শিরোনামের একটি সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনের শুরুর ১২ সেকেন্ড অংশের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে। তবে, ভিডিও প্রতিবেদনটিতে ‘আওয়ামী লীগ কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ ওঠা, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান পদত্যাগ করেছেন সম্পর্কের কথা শিকার করে’ এমন কোনো তথ্য ছিল না।

প্রতিবেদনটিতে শুরুর অংশে বলা হয়, “আওয়ামী লীগ কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ উঠা মেজর সাদিকুল হক সাদিকের বিষয়ে অবগত সেনাবাহিনী। তার বিষয়ে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন মিলিটারি অপারেশনস পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ নাজিম উদ্দৌলা।” 

এছাড়াও প্রতিবেদনটিতে কেএনএফ-এর আধিপত্য বিষয়ে বলা হয়, “স্বাধীন বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকায় কেএনএফ-এর আধিপত্য কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না বলেও জানান সেনাকর্তারা।”

অর্থাৎ, এটি নিশ্চিত যে যমুনার টিভির প্রতিবেদনের ভিডিও ক্লিপ সম্পাদনা করে আলোচিত ক্লিপটি তৈরি করা হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রতিদিনের ক্লিপ যাচাই

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে বাংলাদেশ প্রতিদিনের ইউটিউব চ্যানেলে গত ১ আগস্ট ‘আওয়ামী লীগকে প্রশিক্ষণ দেয়া সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোর্ট মার্শাল সামরিক আদালত | Major Sadik’ ক্যাপশনে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিও প্রতিবেদনে ‘কোর্ট মার্শালের মুখোমুখি হচ্ছেন আওয়ামী লীগ কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগে আটক সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান’ এমন কোনো তথ্য ছিল না।

প্রতিবেদনটিতে শুরুর অংশে বলা হয়, কোর্ট মার্শেলের মার্শালের মুখোমুখি হচ্ছেন আওয়ামী লীগ কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগে আটক সেনা কর্মকর্তা মেজর সাদেকুর রহমান সাদেক। তার বিরুদ্ধে পাওয়া অভিযোগের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে একটি তদন্ত আদালত গঠন করেছে সেনাবাহিনী। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

অর্থাৎ, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সংবাদ প্রতিবেদন সম্পাদনা করে আলোচিত ক্লিপটি তৈরি করা হয়েছে। 

একুশে টেলিভিশনের ক্লিপ যাচাই

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে একুশে টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে গত ১ আগস্ট ‘রাজধানী দখলে গোপন প্রশিক্ষণ, ট্রেনার সেনা কর্মকর্তা আ’ট’ক’ শিরোনামে একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিও প্রতিবেদনের শুরুর অংশের সাথে আলোচিত ক্লিপটির মিল রয়েছে। তবে, আলোচিত ক্লিপটিতে কোনো সেনাকর্মকর্তার নাম উল্লেখ করতে শুনা যায়নি। একুশে টেলিভেশনের প্রতিবেদনটিতে, ট্রেইনার সেনাকর্মকর্তা সাদিককে আটক করে তদন্ত শুরু হয়েছে।”

অর্থাৎ, একুশে টেভিশনের প্রতিবেদন সম্পাদনা করে ক্লিপটি তৈরি করা হয়েছে।

আমার দেশ -এর ফুটেজ যাচাই

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে আমার দেশ-এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ২ আগস্ট ‘আওয়ামী না’শ’ক’তা’য় সংশ্লিষ্ট সেনা কর্মকর্তারা কোর্ট মা’র্শা’লে’র মুখোমুখি’ শিরোনামে একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। তবে, উক্ত প্রতিবেদনে ‘আওয়ামী লীগ কর্মীদের গোপনে নাশকতার ট্রেনিংয়ে সংশ্লিষ্ট সেনা কর্মকর্তা সেনাপ্রধান জেনালে ওয়াকার-উজ-জামানকে কোর্ট মার্শালের মুখোমুখি করা হচ্ছে’ এমন তথ্য ছিল না।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “আওয়ামী লীগ কর্মীদের গোপনে নাশকতার ট্রেনিংয়ে সংশ্লিষ্ট সেনা কর্মকর্তা মেজর সাদেক ও তার সুপিরিয়র কমান্ডকে কোর্ট মার্শালের মুখোমুখি করা হচ্ছে।…”

তবে, আলোচিত ভিডিওটিতে দেখানো দীর্ঘতম সংষ্করণেও সম্পাদনা করে মেজর সাদিকের নাম কেটে দেওয়া হয়।

অর্থাৎ, আমার দেশ-এর এই প্রতিবেদন সম্পাদনা করে আলোচিত ফুটেজটি তৈরি করা হয়েছে।

উল্লিখিত তথ্যপ্রমাণ থেকে এটি নিশ্চিত যে, আলোচিত ভিডিওটি বিভিন্ন গণমাধ্যমের ভিডিও প্রতিবেদনের ফুটেজগুলো সম্পাদনা করে তৈরি করা হয়েছে।

ইউটিউব থাম্বনেইল যাচাই

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের পদত্যাগ পত্র হাতে ছবিটি সম্পাদনা বা এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে, যা এই ছবিতে তার বুকে যে ব্যাচ দেখা যাচ্ছে তা থেকে স্পষ্ট হওয়া যায়। এছাড়াও, আমাদের অনুসন্ধানে পুলিশের হাতে আটক ছবিটি প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। 

সুতরাং, আওয়ামী লীগ কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ সেনাপ্রধান আটক হয়েছেন এবং পদত্যাগ করেছেন শীর্ষক দাবিগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

গাজীপুরে সাংবাাদিক হত্যা ইস্যুতে এনসিপিকে জড়িয়ে আমার দেশ এর নামে ভুয়া ফটোকার্ড প্রচার

0

গাজীপুরে গত ৭ আগস্ট রাত সাড়ে আটটার দিকে এক সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা করেছে একদল সন্ত্রাসী। নিহত মো. আসাদুজ্জামান তুহিন (৩৮) দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করতেন।

এরই প্রেক্ষিতে, ‘এনসিপি নিয়ন্ত্রিত কিশোর গ্যাং এর চিনতাই এর নিউজ করায় সাংবাদিক খুন’ শিরোনামে দৈনিক আমার দেশ – এর ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘এনসিপি নিয়ন্ত্রিত কিশোর গ্যাং এর চিনতাই এর নিউজ করায় সাংবাদিক খুন’ দৈনিক আমার দেশ কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি। বরং, প্রযুক্তির সাহায্যে দৈনিক আমার দেশ -এর ফটোর্কার্ডের আদলে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে কথিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এতে দৈনিক আমার দেশ এর লোগো রয়েছে। কিন্তু, এটি প্রকাশের তারিখ উল্লেখ নেই।

পরবর্তীতে, দৈনিক আমার দেশ এর ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করে উক্ত শিরোনাম সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, আমার দেশ এর ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল বা অন্য কোনো গণমাধ্যমেও উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তবে, রিউমর স্ক্যানারের পর্যবেক্ষণে ফটোকার্ডটিতে কিছু অসামঞ্জস্যতা দেখা যায়। যেমন – এক. ‘কিশোর গ্যাং এর’ পরিবর্তে ফটোকার্ডটিতে ‘কিশোর গ্যাংয়ের’ লেখা থাকার কথা। দুই. ‘চিনতাই’ না লিখে সঠিক বানান ‘ছিনতাই’ হবে। এছাড়াও, আমার দেশ এর ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলোর সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির শিরোনামে ব্যবহৃত ফন্ট ও বাক্য গঠনে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। 

Comparison: Rumor Scanner

সুতরাং, ‘এনসিপি নিয়ন্ত্রিত কিশোর গ্যাং এর চিনতাই এর নিউজ করায় সাংবাদিক খুন’ শিরোনামে দৈনিক আমার দেশ -এর নামে প্রচারিত এই ফটোকার্ডটি সম্পূর্ণ ভুয়া ও বানোয়াট।

তথ্যসূত্র

  • Rumor Scanner’s Own Analysis

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে পুলিশের অভিযানের নয়, ভিডিওটি কোটা সংস্কার আন্দোলনের 

সম্প্রতি, “এই মুহূর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। সেখানে বিপুল পরিমাণ থানা লুটের অস্ত্র ও দেশিও অস্ত্র পাওয়ার দাবী পুলিশের.. অভিযান চলছে” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে উক্ত দাবিতে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে পুলিশের অভিযানের কোনো ঘটনা ঘটে নি। প্রকৃতপক্ষে, এটি ২০২৪ সালের কোটা আন্দোলনে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার ভিডিও।  

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটির কিছু কী ফ্রেম রিভার্স সার্চ করে ‘BNP Media Cell’ এর ফেসবুক পেজে ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল রয়েছে।

Comparison: Rumor Scanner

ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই ১৬ রাজধানীর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর ঢুকে আন্দোলনরত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগ হামলা চালায়। 

একই সময়ে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘Daily Note24’ এর ফেসবুক পেজেও একই ক্যাপশনে উক্ত ভিডিওটি প্রচার হতে দেখা যায়। 

এছাড়া, সেসময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশিত একই তথ্যসংবলিত আলোচিত ভিডিওটি (,,) খুঁজে পাওয়া যায়।

সুতরাং, ২০২৪ সালের কোটা আন্দোলনে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার দৃশ্যকে সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে পুলিশের অভিযান দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র 

সাংবাদিক হত্যার প্রতিবাদ রোধে গাজীপুরে সেনাবাহিনীর টহলের নয়, এটি ২০২৪ সালের কোটা আন্দোলনকালীন ভিডিও 

গত ০৭ আগস্ট রাত আটটার দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ-এর স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান তুহিনকে গাজীপুর নগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় একদল সন্ত্রাসী কুপিয়ে হত্যা করে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সম্প্রতি ‘সরাসরি গাজীপুর থেকে গাজীপুরে সাংবাদিক হত্যা কেউ যাতে প্রতিবাদ মিছিল করতে না পারে,এজন্যই রাতে টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী। গাজীপুরে রাস্তায় প্রতিবাদ করার জন্য বের হলেই সেনাবাহিনী গুলি চালাচ্ছে…’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)৷

ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি গাজীপুরের নয় এবং এই ভিডিওর সাথে গাজীপুরে সাংবাদিক হত্যার ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনকালীন সময়ের ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে Sayed Rouf নামক এক্স হ্যান্ডেলে ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই প্রকাশিত পোস্টে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। 

Comparison: Rumor Scanner 

ভিডিওটির ক্যাপশনে এটিকে রাসেল টাওয়ারের সামনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ভিডিও বলে উল্লেখ করা হয়। 

অর্থাৎ, ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। 

পরবর্তীতে, Mohamod Sanin নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই প্রকাশিত পোস্টে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর স্থান-পারিপার্শ্বিকতা ও বিষয়বস্তুর সাথে প্রচারিত ভিডিওটির মিল রয়েছে। 

ভিডিওটির ক্যাপশনে ঘটনাস্থলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল টাওয়ার বলে উল্লেখ করা হয়েছে। 

উল্লেখ্য, পূর্বেও একই ভিডিও ব্যবহার করে এটিকে ভিন্ন স্থানের ঘটনা দাবি করা হলে তখন দাবিটিকে বিভ্রান্তিকর চিহ্নিত করে বিষয়টি নিয়ে রিউমর স্ক্যানার সেসময় ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। 

গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে হত্যার ঘটনাস্থল গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তাকে কেন্দ্র করে গাজীপুরের বিভিন্ন সড়কে  সেনাবাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে। সাংবাদিক হত্যার প্রতিবাদ কর্মসূচি রোধে নয়, বরং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে সেনাবাহিনী টহল জোরদার করেছে বলে গণমাধ্যমগুলো থেকে জানা যায়। 

সুতরাং, গাজীপুরে সাংবাদিক হত্যার ঘটনার প্রতিবাদ কর্মসূচি রোধে সাম্প্রতিক সময়ে গাজীপুরে সেনাবাহিনীর টহল ও গুলি বর্ষণের ভিডিও দাবিতে ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল টাওয়ারের সামনে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যার কারণ চাঁদাবাজি নিয়ে লাইভ নয়

জাতীয় দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান তুহিনকে গত ০৭ আগস্ট রাতে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন প্লাটফর্মে দাবি করা হয়, চাঁদাবাজি নিয়ে লাইভ ভিডিও করায় এই সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন।  

উক্ত দাবিতে ফেসবুকের পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে। 

গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন প্রথম আলো (ফেসবুক), কালের কণ্ঠ, চ্যানেল২৪ (ফেসবুক), কালবেলা (ফেসবুক), ইনডিপেনডেন্ট টিভি (ইউটিউব), বিডি২৪রিপোর্ট (ফেসবুক), মানবজমিন (ফেসবুক), যুগান্তর (ফেসবুক), একুশে টিভি (ফেসবুক), বাংলাভিশন (ফেসবুক), নিউজ২৪ (ফেসবুক), ইত্তেফাক (ফেসবুক), দেশ রূপান্তর (ফেসবুক), মাছরাঙা টিভি (ইউটিউব), জাগোনিউজ২৪, সময়ের কণ্ঠস্বর (ফেসবুক), আমাদের সময়, সংবাদ, যায়যায়দিন, মোহনা টিভি (ফেসবুক), ঢাকা টাইমস২৪, প্রতিদিনের কাগজ, আজকালের খবর, অর্থসংবাদ (ফেসবুক), সংবাদ প্রকাশ, দ্য নিউজ, বহুমাত্রিক, এমটিনিউজ২৪, কুমিল্লার কাগজ, আপন দেশ, দ্য রিপোর্ট, জুম বাংলা

কিছু গণমাধ্যম উক্ত দাবি সংবাা আকারে প্রকাশের পর তা সংশোধন করে নিয়েছে। এসব সংবাদের সংশোধন পূর্ববর্তী আর্কাইভ না পাওয়া গেলেও সার্চ ইঞ্জিনে এখনও সেসব সংবাদের পূর্বের শিরোনাম দেখা যাচ্ছে। এমন তালিকায় আছে সমকাল, আজকের পত্রিকা, ঢাকা ট্রিবিউন, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, এনটিভি, ঢাকা মেইল। 

এছাড়া, একই দাবির পোস্ট ইনস্টাগ্রামে দেখুন এখানে। 

একই দাবির এক্স পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে লাইভের কারণে নয় বরং আরেকজনকে কোপানোর ‘ভিডিও ধারণ করায়’ খুন হন সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন। তাছাড়া, তার ফেসবুক প্রোফাইল এবং প্রতিদিনের কাগজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্লাটফর্মগুলো যাচাই করে তাকে সম্প্রতি চাঁদাবাজি নিয়ে কোনো লাইভও করতে দেখা যায়নি।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ফুটপাত ও দোকানপাট থেকে চাঁদাবাজি নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে লাইভ করেছিলেন সাংবাদিক আসাদুজ্জামান। তবে গণমাধ্যমটি সেদিন রাতেই এই তথ্যটি সংশোধন করে জানায়, তাঁর প্রোফাইল ঘেঁটে এমন কোনো লাইভের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। 

অনুসন্ধানে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইল খুঁজে বের করে রিউমর স্ক্যানার। তুহিনের প্রোফাইল ঘেঁটে সাম্প্রতিক সময়ে তাকে চাঁদাবাজি সংক্রান্ত কোনো লাইভ বা ধারণকৃত ভিডিও প্রকাশ করতে দেখা যায়নি। তার প্রোফাইলে সর্বশেষ গত ০৭ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় যে ভিডিও পোস্ট করা হয় তার ক্যাপশনে লেখা ছিল, “যেমন খুশি তেমন রাস্তা পার হওয়ার দৃশ্য। গাজীপুর চৌরাস্তা।” সংলাপবিহীন এই ভিডিওতে শুধু রাস্তার দৃশ্যই দেখানো হয়।

Screenshot: Facebook 

পরবর্তীতে তার কর্মস্থল প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার ফেসবুক পেজ ঘেঁটেও সেদিন গাজীপুর থেকে কোনো লাইভ বা ধারণকৃত ভিডিও প্রচারের প্রমাণ মেলেনি। তবে পত্রিকাটির এই পেজে সেদিন ঘটনার পরপরই এক ফেসবুক পোস্টে একই দাবি প্রচার করা হয়। পরদিনের প্রিন্ট সংস্করণেও একই দাবি করে বলা হয়, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, “বৃহস্পতিবার বিকেলে চান্দনা চৌরাস্তার ফুটপাত ও দোকানপাট থেকে তুহিন চাঁদাবাজির বিষয়ে লাইভ করেন।” 

Collage: Rumor Scanner 

যদিও একই পত্রিকা পরদিন আরেক প্রতিবেদনে জানায়, আরেকজনকে কোপানোর ভিডিও ধারণ করায় খুন করা হয় সাংবাদিক তুহিনকে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার রবিউল ইসলামের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি জানায়, সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনা এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা মতে দেখা যায়, সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাদশা মিয়া নামে এক ব্যক্তি চান্দনা চৌরাস্তা মোড়ে এক নারীর সঙ্গে বিবাদে জড়ান। এসময় বাদশা মিয়া ওই নারীকে আঘাত করেন। তখন একদল দুর্বৃত্ত নারীর পক্ষ নিয়ে ধারালো চাপাতি হাতে বাদশা মিয়াকে আঘাত করে। এসময় তিনি দৌড়ে পালিয়ে যান। আর এ ঘটনাটি রাস্তার পাশ থেকে মোবাইলে ভিডিও করছিলেন সাংবাদিক তুহিন। 

অনলাইন সংবাদমাধ্যম বিডিনিউজ২৪ এর এক প্রতিবেদনে একই তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। গণমাধ্যমটি জানায়, ঘটনার কিছুক্ষণ আগে থেকে তুহিনের সঙ্গেই ছিলেন তার বন্ধু ও দৈনিক নবচেতনা পত্রিকার মহানগর প্রতিনিধি মো. শামীম হোসেন। ঘটনার পর তিনিই বাসন থানা পুলিশকে বিষয়টি জানান।

শামীম বলেন, “আমরা এক সঙ্গেই হেঁটে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ একজন নারী এক ব্যক্তিকে নাজেহাল করছিল। ওই ব্যক্তি নারীটিকে আঘাত করার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন দুর্বৃত্ত ধারালো অস্ত্র দিয়ে ব্যক্তিকে আঘাত করে। তখন তিনি দৌড়ে পালিয়ে যান।

“এ সময় সাংবাদিক তুহিন ঘটনাটি দেখে দৌড়ে সাইডে গিয়ে ভিডিও করছিলেন। পরে দুর্বৃত্তরা ভিডিও ধারণ করার দৃশ্য দেখে ফেলায় তুহিনকে ধাওয়া দেয়। তুহিন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলেও দুর্বৃত্তরা তাকে ধরে ফেলে এবং প্রকাশ্যে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়।”

সুতরাং, আরেকজনকে কোপানোর ভিডিও ধারণ করায় গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে হত্যার ঘটনাকে চাঁদাবাজির ঘটনা লাইভ করায় খুনের ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র 

মৃত্যুর আগে সাংবাদিক তুহিনের বক্তব্য দাবিতে ভিন্ন ব্যক্তির ভিডিও প্রচার

গাজীপুরে গত ৭ আগস্ট রাত সাড়ে আটটার দিকে এক সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত মো. আসাদুজ্জামান তুহিন (৩৮) দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করতেন। এরই প্রেক্ষিতে গতকাল ৮ আগস্ট গণমাধ্যম ও পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়, “মৃ-ত্যুর আগে যা বলে গেলেন গাজীপুরের সাংবাদিক তুহিন”।

ভিডিওটিতে একজন আহত ব্যক্তিকে কথা বলতে দেখা যায়। আহত ব্যক্তি একজন নারীর সাথে ধাক্কাধাক্কি/ঘুষি মারার বিষয়েও উল্লেখ করেন।

এরূপ দাবিতে গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজে প্রচারিত পোস্ট দেখুন : চ্যানেল২৪

গণমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওটি পরবর্তীতে ডাউনলোড হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও নানা অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে প্রচার করা হয়। দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ইউটিউবে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি গাজীপুরে মৃত্যুর আগে নিহত সাংবাদিক তুহিনের বক্তব্যের দৃশ্যের নয়। প্রকৃতপক্ষে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত ব্যক্তির নাম বাদশা মিয়া এবং তিনি আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

অনুসন্ধানে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত ব্যক্তি ও নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের মুখমন্ডলের তুলনা করলে পার্থক্য দেখা যায়। যা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত করে দুইজন ভিন্ন ব্যক্তি।

Comparison : Rumor Scanner

পরবর্তীতে ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে মূলধারার গণমাধ্যম ‘কালের কণ্ঠ’ এর ওয়েবসাইটে ‘যে ব্যক্তির ওপর হামলার ভিডিও করায় খুন হলেন সাংবাদিক তুহিন’ শীর্ষক শিরোনামে গত ৮ আগস্টে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে সংযুক্ত ছবির সাথে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়। ছবিটির বর্ণনা অংশে বলা হয়, উক্ত ব্যক্তির নাম বাদশা মিয়া। এছাড়াও, ইনসেটে নিহত সাংবাদিক তুহিনের ছবিও সংযুক্ত করা হয়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে কুপিয়ে হত্যার আগে অস্ত্রধারীরা বাদশা মিয়া নামে এক ব্যক্তির ওপর অস্ত্র নিয়ে হামলার চেষ্টা করেন। পুলিশের ধারণা, ওই ঘটনার ভিডিও করায় প্রাণ দিতে হয়েছে তুহিনকে।”

এ বিষয়ে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের কর্মস্থল ‘প্রতিদিনের কাগজ’ এর ওয়েবসাইটেও ‘যে ব্যক্তির ওপর হামলার ভিডিও করায় খুন হলেন সাংবাদিক তুহিন’ শীর্ষক শিরোনামে গত ৮ আগস্টে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতেও প্রচারিত ভিডিওটির একটি স্ক্রিনশটের সংযুক্তি পাওয়া যায়। ছবিটির বর্ণনায় বলা হয়, “অস্ত্রধারীদের হামলায় আহত বাদশা মিয়া”। এছাড়াও, ইনসেটে নিহত সাংবাদিক তুহিনের ছবিও সংযুক্ত করা হয়।

উল্লেখ্য, “মৃ-ত্যুর আগে যা বলে গেলেন গাজীপুরের সাংবাদিক তুহিন” শীর্ষক দাবিতে মূলধারার গণমাধ্যম ‘চ্যানেল২৪’ আলোচিত ভিডিওটি গত ৮ আগস্টে প্রচার করলেও পরবর্তীতে তা সরিয়ে নিয়ে “যে ব্যক্তির উপর হামলার ভিডিও ধারণের জন্য করুণ পরিণতি সাংবাদিক তুহিনের” শীর্ষক শিরোনামে ভিডিওটি প্রচার করে এবং ভিডিওটিতে একটি সিসিটিভি ফুটেজেরও সংযুক্তি পাওয়া যায়। সিসিটিভি ফুটেজে নীল রঙের জামা পরে আহত ব্যক্তিকে একজন নারীর সাথে আক্রমণাত্মক আচরণ করতে দেখা যায়।

পরবর্তী অনুসন্ধানে উক্ত সিসিটিভি ফুটেজের একটি স্ক্রিনশটের সংযুক্তিসহ জাতীয় দৈনিক ‘প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে গত ৮ আগস্টে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ঘটনাস্থল চন্দনা চৌরাস্তা মসজিদ মার্কেটের পশ্চিম পাশে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা ৫৮ মিনিট। কালো রঙের জামা পরা এক নারী হেঁটে যাচ্ছেন। পেছন দিক থেকে নীল রঙের জামা পরা এক ব্যক্তি ওই নারীকে পেছন দিক থেকে টেনে ধরেন। নারী জোর করে চলে যেতে চাইলে তাঁর সামনে গিয়ে গতি রোধ করেন ওই ব্যক্তি। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি নারীকে চড়থাপ্পড় মারেন। ঠিক এমন সময় পাশ থেকে ধারালো অস্ত্র হাতে কয়েক যুবক ওই ব্যক্তিকে কোপানোর চেষ্টা করেন। নীল শার্ট পরা ওই ব্যক্তি দৌড়ে পালিয়ে যান। … সিসিটিভি ফুটেজে নারীর সঙ্গে যে ব্যক্তির ধস্তাধস্তি হয়েছিল ও পরে তিনি পালিয়ে যান, ওই ব্যক্তি আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাঁর নাম বাদশা মিয়া। তিনি বলেন, ‘ওই মেয়েসহ একটা টিম আছে। ওরা আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে গেছে।’”

অর্থাৎ, এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত ব্যক্তি নিহত সাংবাদিক তুহিন নন। প্রকৃতপক্ষে তিনি একজন ভিন্ন ব্যক্তি এবং তার নাম বাদশা মিয়া।

সুতরাং, বাদশা মিয়া নামে ভিন্ন এক ব্যক্তির ভিডিওকে গাজীপুরে মৃত্যুর আগে নিহত সাংবাদিক তুহিনের বক্তব্যের দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র