মৃত্যুর আগে সাংবাদিক তুহিনের বক্তব্য দাবিতে ভিন্ন ব্যক্তির ভিডিও প্রচার

গাজীপুরে গত ৭ আগস্ট রাত সাড়ে আটটার দিকে এক সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত মো. আসাদুজ্জামান তুহিন (৩৮) দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করতেন। এরই প্রেক্ষিতে গতকাল ৮ আগস্ট গণমাধ্যম ও পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়, “মৃ-ত্যুর আগে যা বলে গেলেন গাজীপুরের সাংবাদিক তুহিন”।

ভিডিওটিতে একজন আহত ব্যক্তিকে কথা বলতে দেখা যায়। আহত ব্যক্তি একজন নারীর সাথে ধাক্কাধাক্কি/ঘুষি মারার বিষয়েও উল্লেখ করেন।

এরূপ দাবিতে গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজে প্রচারিত পোস্ট দেখুন : চ্যানেল২৪

গণমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওটি পরবর্তীতে ডাউনলোড হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও নানা অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে প্রচার করা হয়। দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি গাজীপুরে মৃত্যুর আগে নিহত সাংবাদিক তুহিনের বক্তব্যের দৃশ্যের নয়। প্রকৃতপক্ষে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত ব্যক্তির নাম বাদশা মিয়া এবং তিনি আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

অনুসন্ধানে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত ব্যক্তি ও নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের মুখমন্ডলের তুলনা করলে পার্থক্য দেখা যায়। যা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত করে দুইজন ভিন্ন ব্যক্তি।

Comparison : Rumor Scanner

পরবর্তীতে ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে মূলধারার গণমাধ্যম ‘কালের কণ্ঠ’ এর ওয়েবসাইটে ‘যে ব্যক্তির ওপর হামলার ভিডিও করায় খুন হলেন সাংবাদিক তুহিন’ শীর্ষক শিরোনামে গত ৮ আগস্টে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে সংযুক্ত ছবির সাথে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়। ছবিটির বর্ণনা অংশে বলা হয়, উক্ত ব্যক্তির নাম বাদশা মিয়া। এছাড়াও, ইনসেটে নিহত সাংবাদিক তুহিনের ছবিও সংযুক্ত করা হয়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে কুপিয়ে হত্যার আগে অস্ত্রধারীরা বাদশা মিয়া নামে এক ব্যক্তির ওপর অস্ত্র নিয়ে হামলার চেষ্টা করেন। পুলিশের ধারণা, ওই ঘটনার ভিডিও করায় প্রাণ দিতে হয়েছে তুহিনকে।”

এ বিষয়ে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের কর্মস্থল ‘প্রতিদিনের কাগজ’ এর ওয়েবসাইটেও ‘যে ব্যক্তির ওপর হামলার ভিডিও করায় খুন হলেন সাংবাদিক তুহিন’ শীর্ষক শিরোনামে গত ৮ আগস্টে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতেও প্রচারিত ভিডিওটির একটি স্ক্রিনশটের সংযুক্তি পাওয়া যায়। ছবিটির বর্ণনায় বলা হয়, “অস্ত্রধারীদের হামলায় আহত বাদশা মিয়া”। এছাড়াও, ইনসেটে নিহত সাংবাদিক তুহিনের ছবিও সংযুক্ত করা হয়।

উল্লেখ্য, “মৃ-ত্যুর আগে যা বলে গেলেন গাজীপুরের সাংবাদিক তুহিন” শীর্ষক দাবিতে মূলধারার গণমাধ্যম ‘চ্যানেল২৪’ আলোচিত ভিডিওটি গত ৮ আগস্টে প্রচার করলেও পরবর্তীতে তা সরিয়ে নিয়ে “যে ব্যক্তির উপর হামলার ভিডিও ধারণের জন্য করুণ পরিণতি সাংবাদিক তুহিনের” শীর্ষক শিরোনামে ভিডিওটি প্রচার করে এবং ভিডিওটিতে একটি সিসিটিভি ফুটেজেরও সংযুক্তি পাওয়া যায়। সিসিটিভি ফুটেজে নীল রঙের জামা পরে আহত ব্যক্তিকে একজন নারীর সাথে আক্রমণাত্মক আচরণ করতে দেখা যায়।

পরবর্তী অনুসন্ধানে উক্ত সিসিটিভি ফুটেজের একটি স্ক্রিনশটের সংযুক্তিসহ জাতীয় দৈনিক ‘প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে গত ৮ আগস্টে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ঘটনাস্থল চন্দনা চৌরাস্তা মসজিদ মার্কেটের পশ্চিম পাশে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা ৫৮ মিনিট। কালো রঙের জামা পরা এক নারী হেঁটে যাচ্ছেন। পেছন দিক থেকে নীল রঙের জামা পরা এক ব্যক্তি ওই নারীকে পেছন দিক থেকে টেনে ধরেন। নারী জোর করে চলে যেতে চাইলে তাঁর সামনে গিয়ে গতি রোধ করেন ওই ব্যক্তি। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি নারীকে চড়থাপ্পড় মারেন। ঠিক এমন সময় পাশ থেকে ধারালো অস্ত্র হাতে কয়েক যুবক ওই ব্যক্তিকে কোপানোর চেষ্টা করেন। নীল শার্ট পরা ওই ব্যক্তি দৌড়ে পালিয়ে যান। … সিসিটিভি ফুটেজে নারীর সঙ্গে যে ব্যক্তির ধস্তাধস্তি হয়েছিল ও পরে তিনি পালিয়ে যান, ওই ব্যক্তি আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাঁর নাম বাদশা মিয়া। তিনি বলেন, ‘ওই মেয়েসহ একটা টিম আছে। ওরা আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে গেছে।’”

অর্থাৎ, এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত ব্যক্তি নিহত সাংবাদিক তুহিন নন। প্রকৃতপক্ষে তিনি একজন ভিন্ন ব্যক্তি এবং তার নাম বাদশা মিয়া।

সুতরাং, বাদশা মিয়া নামে ভিন্ন এক ব্যক্তির ভিডিওকে গাজীপুরে মৃত্যুর আগে নিহত সাংবাদিক তুহিনের বক্তব্যের দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img