Home Blog Page 35

খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিবের বাসা থেকে টাকা উদ্ধারের দাবিটি ভুয়া

সম্প্রতি, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিবের বাসা থেকে ৭ বস্তা ও সিন্দুক ভর্তি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও প্রতিবেদন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। এর পাশাপাশি প্রচারিত ভিডিও প্রতিবেদনটির শুরুতে সংবাদপাঠিকাকে বলতে শোনা যায়, হাবিবুর রহমান হাবিবকে রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে র‌্যাব গ্রেফতারও করেছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতা শামীম সাঈদীর ফেসবুক প্রোফাইলে শেয়ারকৃত একই ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ইউটিউবে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

থ্রেডস প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, হাবিবুর রহমান হাবিবের বাসা থেকে টাকা উদ্ধারের কোনো ঘটনা ঘটেনি  এবং তাকে গ্রেফতারও করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, ক্যাসিনোকাণ্ডের সাথে জড়িত গেণ্ডারিয়া আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা এনামুল হক এনু ও তার ভাই রুপন ভূঁইয়ার বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধারের ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রচারিত পুরোনো একটি প্রতিবেদনের ফুটেজের সাথে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ফুটেজ যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

ভিডিও যাচাই ১

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার প্রতিবেদনটির শুরুতে থাকা সংবাদপাঠিকার ফুটেজে ইলেকট্রনিকগণমাধ্যম একাত্তর টিভির লোগো এবং ‘বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান গ্রেপ্তার’ শিরোনাম দেখতে পায়। 

পরবর্তীতে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ২০২৩ সালের ২১ নভেম্বর একাত্তর টিভির ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত মূল প্রতিবেদনটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner 

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, বিচারককে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও আদালতে হাজির না হওয়ায় তাকে সেসময় মিরপুরের ডিওএইচএস এলাকা থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। প্রতিবেদনটিতে তার বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধার হওয়ার বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এছাড়াও সেসময় তার গ্রেফতার হওয়ার সাথেও এমন কোনো ঘটনার সম্পৃক্ততা আছে বলে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়নি।

ভিডিও যাচাই ২

পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওটিতে হাবিবুর রহমান হাবিবের একটি অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্যের পর তার বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধারের দৃশ্য দাবিতে কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয়। টাকা ‍উদ্ধারের ফুটেজগুলোর বিষয়ে অনুসন্ধানে কিছু ফ্রেম রিভার্স সার্চের মাধ্যমে আরেক ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমে আরটিভি এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর কোটি টাকা ও ৭২০ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার, আ.লীগের দুই নেতা পলাতক  শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদনের সন্ধান পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner 

প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়,  উক্ত প্রতিবেদনের ১ মিনিট ১০ সেকেন্ড থেকে লকার ভাঙার ফুটেজ থেকে পরবর্তী বেশকিছু ফুটেজের সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে। আলোচিত ভিডিওটিতে ব্যবহৃত টাকা উদ্ধারের ফুটেজগুলোর সাথে আরটিভির প্রতিবেদনে থাকা ফুটেজগুলোর মিল লক্ষ্য করা যায়।

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, উক্ত ভিডিওটি ২০১৯ সালে অবৈধ ক্যাসিনো বাণিজ্যের সাথে জড়িত ঢাকার গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক ভূঁইয়া এবং তার ভাই ও একই সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রূপন ভূঁইয়ারসহ তাদের সহযোগী ও কর্মচারীদের বাসায় র‌্যাবের অভিযান চালিয়ে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার এবং অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনার। 

অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওতে ব্যবহৃত টাকা উদ্ধারের ফুটেজের সাথে হাবিবুর রহমান হাবিবের কোনো সম্পর্ক নেই। এছাড়াও কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে হাবিবুর রহমান হাবিবের বাড়ি থেকে ৭ বস্তা টাকা উদ্ধারের বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

ভিডিও যাচাই ৩

সর্বশেষ ভিডিওটিতে আরেক বিএনপি নেতা জাকারিয়া পিন্টুর একটি ফুটেজ ব্যবহার করা হয়। যেখানে তাকে হাবিবুর রহমান হাবিবের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলতে দেখা যায়। কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে এনটিভির ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৬ জুন প্রচারিত জাকারিয়া পিন্টুর ওই বক্তব্যের পুরো ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

ভিডিওটিতে হাবিবুর রহমান হাবিবের বিরুদ্ধে জাকারিয়া পিন্টুর চাঁদাবাজির অভিযোগ করতে দেখা গেলেও তার বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধারের বিষয়ে বা হাবিবুর রহমানের গ্রেফতার হওয়ার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে শোনা যায়নি। 

সুতরাং, খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিবের বাসা থেকে ৭ বস্তা ও সিন্দুক ভর্তি টাকা উদ্ধারের দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

নুরুল হক নুরকে নিয়ে নিপুন, জাইমা, মান্না ও মির্জা ফখরুলের নামে ভুয়া মন্তব্য প্রচার

0

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চারটি সংবাদ শিরোনামের স্ক্রিনশট প্রচার করা হয়েছে। স্ক্রিনশটগুলোতে দাবি করা হয়েছে, 

১. ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরী বলেছেন, “তারেকের চাইতে নুরুর মাজা অনেক শক্ত, সেই আমাদের কাণ্ডারী”।

২. বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমান বলেছেন, “নুরুর মাঝে আমি আমার দাদুর ছায়া দেখতে পাচ্ছি”

৩. নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, “ক্ষমতা বিএনপি কেও দেয়া যাবে না! নুরের হাতে ক্ষমতা দেওয়া হবে”

৪. বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “নুরু প্রধানমন্ত্রী হলে আমি হবো সামরিক বাহিনীর প্রধান”

উক্ত শিরোনাম সম্বলিত ছবিগুলো প্রচার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “তখন সবার আশা এবং ভরসার একমাত্র আশ্রয় স্থল ছিলেন Nurul Haque Nur ভাই | এখন সবাই অনেক বড় নেতা সবাই ক্রেডিট নিতে ব্যস্ত”

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের বিষয়ে ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরী, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমান, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আলোচিত মন্তব্যগুলো করেননি। প্রকৃতপক্ষে নুরের বিষয়ে অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরী, জাইমা রহমান, মাহমুদুর রহমান মান্না এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এরূপ কোনো মন্তব্য করেননি।

অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করলে তাতে প্রচারিত দাবির সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে আলোচিত ৪টি মন্তব্যের কোনোটির সপক্ষেই নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

প্রচারিত সংবাদ শিরোনামের ছবিগুলো পর্যবেক্ষণ করলে তিনটি ছবিতে সংবাদমাধ্যমের নাম হিসেবে দেখা যায়, ‘BNP News | বাংলা’। অনুসন্ধানে উক্ত নাম ও লোগো সম্বলিত কোনো নির্ভরযোগ্য সংবাদমাধ্যম পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, ছবিগুলোতে থাকা সংবাদমাধ্যমের ট্যাবের নাম হিসেবে দেখা যায়, ‘হাওয়া ভবন’, ‘খাম্বা তারেক’, ‘মাদারে গণতন্ত্র’ ও ‘গাজাপল্টন’। এ থেকে বুঝা যায় যে প্রচারিত সংবাদ শিরোনাম বা এর স্ক্রিনশটগুলো ব্যাঙ্গাত্মক উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল। তবে, মূল সূত্রপাতের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এছাড়া, মাহমুদুর রহমান মান্নার বক্তব্যের স্ক্রিনশটটি পর্যবেক্ষণ করলে সংবাদমাধ্যমের নাম হিসেবে দেখা যায় ‘Breaking News BD’ নামক একটি ফেসবুক পেজ ও প্রোফাইল ছবিতে দেখা যায় বাংলাদেশের পতাকা। অনুসন্ধানে উক্ত নাম ও লোগো বা ছবি সম্বলিত কোনো নির্ভরযোগ্য সংবাদমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবির সপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের বিষয়ে অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরী, জাইমা রহমান, মাহমুদুর রহমান মান্না ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মন্তব্য দাবিতে প্রচারিত মন্তব্যগুলো ভুয়া ও বানোয়াট।

তথ্যসূত্র

  • Rumor Scanner’s analysis

তাসনিম জারা দাবিতে ভিন্ন নারীর সম্পাদিত ছবি প্রচার  

0

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তির বিশেষ দিনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পাঁচ শীর্ষস্থানীয় নেতা গত ০৫ আগস্ট কক্সবাজারে যান। এই পাঁচজনের একজন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা। এরই প্রেক্ষিতে তাসনিম জারার হোটেলের ছবি দাবিতে একটি এডাল্ট ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে। 

একই দাবিতে টিকটকের পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিটি তাসনিম জারার নয় বরং, ইন্টারনেট থেকে ভিন্ন এক নারীর ছবি সংগ্রহ করে তাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সাহায্যে তাসনিম জারার মুখমণ্ডল প্রতিস্থাপন করে আলোচিত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে একাধিক ওয়েবসাইটে (সঙ্গত কারণে লিংক সংযুক্ত করা হয়নি) একই ছবির সন্ধান পায় রিউমর স্ক্যানার। এসব ছবিতে থাকা নারীর সাথে তাসনিম জারার মুখাবয়বের মিল না থাকলেও পারিপার্শ্বিক উপাদানগুলোর মিল পাওয়া যায়।  

Image Comparison by Rumor Scanner 

তাছাড়া প্রচারিত ছবিটি বিশ্লেষণ করে এতে গলার অংশের রংয়ে অসামঞ্জস্যতাসহ একাধিক অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায়। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ছবিটিতে গলার ওপরের অংশে ভিন্ন নারী অর্থাৎ তাসনিম জারার মুখমণ্ডল আলাদাভাবে বসানো হয়েছে।

Image Analysis: Rumor Scanner

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে মূল ছবিটি পূর্বেও সম্পাদনা করে ভিন্ন নারী হিসেবে উপস্থাপন (সঙ্গত কারণে লিংক সংযুক্ত করা হয়নি) করে প্রচার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। 

এ বিষয়ে আরো অনুসন্ধানে একই নারীর একই ব্যাকগ্রাউন্ডের আরেকটি ছবিরও সন্ধান মেলে পিন্টারেস্টে। 

Screenshot: Pinterest

সুতরাং, তাসনিম জারার নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত এই ছবিটি সম্পাদিত। 

তথ্যসূত্র 

সাম্প্রতিক নয়, আদালতের কক্ষে শেখ মুজিবের ছবি টানানোর আদেশ ২০১৯ সালের

সম্প্রতি, ‘দুই মাসের মধ্যে দেশের সব আদালত কক্ষে শেখ মুজিবের ছবি দেওয়ার নির্দেশ করছে হাইকোর্ট’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)

এই প্রতিবেদন লেখা অবধি টিকটকে ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ২ লক্ষ ৬০ হাজার বারেরও বেশি। এছাড়াও ভিডিওটিতে প্রায় ৬ হাজারেরও বেশি পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে। পাশাপাশি ভিডিওটি ৯ শতবারেরও বেশি শেয়ার করা হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে দুই মাসের মধ্যে দেশের সব আদালত কক্ষে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টানানোর নির্দেশ দেয়নি হাইকোর্ট এবং সংবিধান লঙ্ঘন এবং স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননার অভিযোগে জাতিসংঘ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র চাওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০১৯ সালে হাইকোর্টের দেওয়া একটি নির্দেশের প্রেক্ষিতে সেসময়ে প্রচার করা সংবাদ প্রতিবেদনের একটি অডিওর অংশ ও সংবাদ পাঠিকার ছবি দিয়ে এবং একটি বানোয়াট পুরুষ কন্ঠ যুক্ত করে দিয়ে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। তাছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে হাইকোর্ট থেকে এরকম কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি। এবং জাতিসংঘ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র চাওয়া হয়েছে এমন তথ্যও নির্ভরযোগ্য সূত্রে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার। এতে, শুরুতেই একটি মেয়েলি কণ্ঠে বলা হয়, “দুই মাসের মধ্যে দেশের সব আদালত কক্ষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।”

এরপর পুরুষ কণ্ঠে বলা হয়, “সংবিধান লঙ্ঘন এবং স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননা করায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নামে মামলার পূর্বাভাস দিয়েছে জাতিসংঘের লোয়ার ল্যাপস (‘লোয়ার ল্যাপস’ কথাটি অস্পষ্ট)। সেই সাথে শেখ হাসিনার পদত্যাগ পত্র হস্তান্তর করতে না পারলে ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করার কথাও জানিয়েছে জাতিসংঘ।ড. মুহাম্মদ ইউনূসে বিরুদ্ধে মামলা এবং শেখ হাসিনার পুনরায় ক্ষমতা ফিরে পাওয়া নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন শাহাদাত রিফাত।”

এরপর ভিডিওটিতে পুরুষ কন্ঠে বলা হয়, “আবারও সকল রাজনৈতিক দল এবং জনগণের তোপের মুখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ‘রিসেট বাটন’ পুশ করতে গিয়ে দেশ এবং বহির্বিশ্বের জনগণের ক্ষোভের শিকার ড. ইউনূস। সংবিধান লঙ্ঘনের পাশাপাশি স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননা।”

আমাদের পর্যবেক্ষণে শুরুতেই থাকা নারী কন্ঠের ভয়েসটি কোনো গণমাধ্যমের প্রেজেন্টারের বলে প্রতীয়মান হয়।

ভিডিওটিতে থাকা নারীর ছবি এবং নারী কন্ঠের বলা তথ্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধান করলে বেসরকারি ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম বাংলা টিভি এর ‘Bangla TV Europe’ নামক ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৯ সালের ২৯ আগস্ট ‘২ মাসের মধ্যে দেশের সব আদালত কক্ষে বঙ্গবন্ধুর ছবি প্রদর্শনে হাইকোর্টের নির্দেশ’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison : Rumor Scanner

উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনের নারী সংবাদ পাঠিকার সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে থাকা ছবির নারীর সাথে সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। এছাড়া, আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা নারী কন্ঠের অংশটুকু এই সংবাদ প্রতিবেদনের শুরুর ১০ সেকেন্ডর সাথে মিল রয়েছে।

ভিডিও প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেসময় দুই মাসের মধ্যে দেশের সব আদালত কক্ষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা নারীর ছবিটি ব্যাকগ্রাউন্ড এবং পারিপার্শিক অবস্থা প্রযু্ক্তির সাহায্যে পরিবর্তন করে প্রচার করা হয়েছে।

পরবর্তীতে, এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলোজাগোনিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালের ২৯ আগস্টে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়। 

সংবাদ প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা যায়, শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বাংলাদেশের উচ্চ আদালতসহ সব আদালতে সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। ২০১৯ সালের ২৯ আগস্ট এই আদেশ দিয়েছিলেন এবং সেই সময় আদালতের এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে দুই মাসের মধ্যে হাইকোর্টে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়। এ সংক্রান্ত একটি রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছিলেন।

অর্থাৎ, এটি নিশ্চিত যে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে থাকা ছবি এবং শুরুর ৯ সেকেন্ড অংশের সংবাদ প্রতিবেদনটি মূলত ২০১৯ সালে হাইকোর্টের দেওয়া একটি নির্দেশনার বিষয়ে একটি সংবাদ প্রতিবেদনের অংশ।

তাছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে হাইকোর্ট থেকে এমন কোনো নির্দেশ দেওয়ার সপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে, আলোচিত ভিডিওটিতে পুরুষ কন্ঠে বলা তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ‘শেখ হাসিনার পদত্যাগ পত্র হস্তান্তর করতে না পারলে ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করার কথা জানিয়েছে জাতিসংঘ’ – এমন কোনো তথ্য মূলধারার গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, ‘জাতিসংঘের লোয়ার ল্যাপস’ – নামে কোনো নির্দিষ্ট সংস্থা বা পরিষদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, সম্প্রতি হাইকোর্টের নির্দেশে দেশের সব আদালত কক্ষে দুই মাসের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ছবি প্রদর্শন এবং জাতিসংঘ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র চাওয়ার দাবিগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

ঢাবির হলে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে উমামার বক্তব্য গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকরভাবে উপস্থাপন

৮ আগস্ট সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে ছাত্রদল। এ ঘটনায় হলে থাকা শিক্ষার্থীদের একাংশ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এই প্রেক্ষিতে কতিপয় গণমাধ্যমে দাবি করে, বামপন্থি ছাত্রসংগঠন ছাত্র ফেডারেশনের সাবেক সদস্য সচিব ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও মুখপাত্র উমামা ফাতেমা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলের প্রাধ্যক্ষ বরাবর এক দরখাস্তে ঢাবির আবাসিক হলে বাম ছাত্র সংগঠন ছাড়া অন্য সব দলের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন।

এই দাবিতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন: যুগান্তর, কালের কণ্ঠ, বাংলা ভিশন, জনকণ্ঠ, একুশে টিভি, সময়ের আলো, দৈনিক সংগ্রাম, রূপালী বাংলাদেশ, জুম বাংলা। 

এছাড়া, আমার দেশও একই দাবিতে সংবাদ প্রকাশ করলেও, পরবর্তীতে শিরোনাম পরিবর্তন করে আশ্চর্যবোধক চিহ্ন যোগ করে। 

একই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

ইউটিউবে প্রচারিত একই দাবি দেখুন: এখানে

ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত দাবি দেখুন: এখানে, এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা গেছে, উমামা ফাতেমা ঢাবির কবি সুফিয়া কামাল হলের প্রাধ্যক্ষ বরাবর এক দরখাস্তে ঢাবির আবাসিক হলে বাম ছাত্র সংগঠন ছাড়া অন্য সব দলের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি করেছেন বলে প্রচারিত তথ্যটি সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, দরখাস্তে তিনি বাম দলের নাম উল্লেখ না করলেও, বাম ছাড়া আরও কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের নামও উল্লেখ করেননি।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে দেখা যায়, গণমাধ্যমে প্রচারিত দাবির সঙ্গে যুক্ত উমামা ফাতেমার ওই দরখাস্তে উল্লেখ করা হয়েছে, ০৭/০৯/২০২৪ তারিখে সম্মিলিত আন্দোলনের মাধ্যমে প্রশাসন থেকে এই মর্মে প্রতিশ্রুতি নিতে সক্ষম হই যে, উক্ত তারিখ থেকে সুফিয়া কামাল হলে সকল প্রকার ছাত্ররাজনীতি (ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, শিবির, বাগছাস) নিষিদ্ধ থাকবে। গত এক বছরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে প্রশাসনের এই চুক্তি বলবৎ ছিল। কিন্তু এরই মধ্যে কতিপয় সংগঠন গুপ্তভাবে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছে হলে। অতঃপর আজ ০৮/০৮/২০২৫ তারিখ সকালবেলা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের হল ইউনিট সাত সদস্যবিশিষ্ট হল কমিটি ঘোষণা করেছে। আমরা শিক্ষার্থীরা মনে করি, তাদের এইসব কার্যকলাপ জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে সৃষ্টি হওয়া উল্লেখিত চুক্তিকে ভঙ করে, যা স্পষ্টত সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণার সামিল।

দরখাস্তে চারটি সংগঠনের নাম সরাসরি উল্লেখ থাকলেও বামপন্থি সংগঠনগুলোর নাম নেই। একই সঙ্গে, এতে বাম সংগঠন ছাড়া অন্য সব দলের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিও করা হয়নি।

রিউমর স্ক্যানারের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি নিশ্চিত করেছেন, ঢাবিতে অন্তত পাঁচটি বামপন্থি ছাত্র সংগঠন বর্তমানে সক্রিয় রয়েছে। এগুলো হলো সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী), বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী এবং বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন। এছাড়া ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস, ছাত্র অধিকার পরিষদ, ছাত্র অধিকার ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, ছাত্র যুব আন্দোলন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংসদ ও বাংলাদেশ ছাত্রপক্ষসহ আরও কয়েকটি সংগঠন রয়েছে। উক্ত দরখাস্তে বামপন্থি দলগুলোর মতো এসব অন্যান্য সংগঠনের নামও উল্লেখ করা হয়নি।

৯ আগস্ট বেসরকারি সংবাদ সংস্থা ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশ (ইউএনবি)-তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উমামা ফাতেমার মন্তব্য উদ্ধৃত হয়। তিনি জানান, “দৈনিক জনকণ্ঠসহ অন্যান্য মিডিয়ায় শিরোনাম ও ফটোকার্ডে আমার বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে। এসব সাংবাদিক নিজের মতো একটা অর্থ বানিয়েছে। কবি সুফিয়া কামাল হলে বামরা কোনো ফ্যাক্টর নয়, আমাদের হলে বাম রাজনীতি করেন এমন কেউ নেই।”

আলোচিত দাবির বিষয়ে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া একটি দীর্ঘ পোস্টে উমামা জানান, ৮ আগস্ট ছাত্রদলের হল কমিটি ঘোষণার পর শিক্ষার্থীদের তীব্র প্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষিতে তিনি প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচির ডাক দেন। সেখানে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে একটি স্মারকলিপি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথম খসড়ায় ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, শিবির ও বাগছাস—এই চার সংগঠনের নাম উল্লেখ করা হয়। পরে, এক শিক্ষার্থীর প্রস্তাবে সব রাজনৈতিক সংগঠনকে বোঝাতে “ইত্যাদি” শব্দ যুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে “বাম” প্রসঙ্গ ওঠার পর প্রশাসনের কাছে প্রদত্ত স্মারকলিপি নিয়ে “বামপন্থী” শব্দটিও সংযোজন করা হয়।

সুতরাং, উমামা ফাতেমা ঢাবির আবাসিক হলে বাম ছাত্র সংগঠন ছাড়া অন্য সব দলের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি করেছেন বলে প্রচারিত তথ্যটি বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যকার সংঘর্ষের দৃশ্যকে ঢাবিতে ছাত্রদল ও শিবিরের সংঘর্ষ দাবিতে প্রচার 

গত ৮ আগস্ট (শুক্রবার) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন থাকা ১৮ টি হল শাখার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল। এর প্রতিবাদে সেদিন রাতে বিক্ষোভ করে ঢাবির বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা। এরই প্রেক্ষিতে, “এই মুহূর্তে দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির বনাম ছাত্রদল সংঘাতে রণক্ষেত্র,আহত শতাধিক হয়েছে,গতরাতে কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে সংঘাত শুরু হয়!” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে উক্ত দাবিতে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয় এবং এর সাথে ঢাবি ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণারও কোনো সম্পর্ক নেই। প্রকৃতপক্ষে, এটি ২০২৪ সালের নভেম্বরে ঢাকার মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের দৃশ্য। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটির কিছু কী ফ্রেম রিভার্স সার্চ করে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম ‘bdnews24.com’ এর ফেসবুক পেজে ২০২৪ সালের ২৫ নভেম্বর “মেগা মানডে’: সংঘাতে রণক্ষেত্র মোল্লা কলেজ, আহত শতাধিক ঢাকার মাতুয়াইলের মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে জড়িয়েছে।” শীর্ষক ক্যাপশনে প্রচারিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে সংযুক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি হুবহু মিল রয়েছে। 

Video Comparison by Rumor Scanner 

একই শিরোনামে বিডিনিউজ২৪ ডটকমের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালের ২৫ নভেম্বর মোল্লা কলেজের সামনে প্রায় দুই ঘণ্টার এ সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। একই প্রতিবেদন থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত ও মূল ঘটনার সম্পর্কেও জানা যায়। এ বিষয়ে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেলে মাহাবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিৎ হাওলাদারের মৃত্যুর ঘটনায় ২৪ নভেম্বর (২০২৪) ঘেরাও কর্মসূচি দেয় মোল্লা কলেজসহ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। ‘সুপার সানডে’ নামের ওই কর্মসূচি থেকে ন্যাশনাল মেডিকেল ও পাশের সোহরাওয়ার্দী কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। হামলার সময় সোহরাওয়ার্দী কলেজ কেন্দ্রে স্নাতকের পরীক্ষা দেওয়া কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরাও আক্রান্ত হন। স্থগিত হয় তাদের পরীক্ষা। এর প্রতিবাদে ‘মেগা মানডে’ কর্মসূচি দিয়ে দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা ডেমরা সড়ক–সংলগ্ন মোল্লা কলেজে গিয়ে ২৫ নভেম্বর (২০২৪) হামলা ও লুটপাট করেন। এ সময় সেখানে দুই পক্ষের সংঘর্ষে প্রচুর শিক্ষার্থী আহত হন।

এছাড়া, একই বিষয়ে মূলধারার সংবাদমাধ্যম প্রথম আলোসহ একাধিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়। 

গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট কোনো সূত্রে সাম্প্রতিক সময়ে ঢাবিতে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের মধ্যকার কোনো সংঘর্ষের সংবাদ বা তথ্য পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, ২০২৪ সালে ঢাকার মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের দৃশ্যকে ঢাবিতে কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিবির ও ছাত্রদলের মধ্যে সংঘর্ষের ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

কক্সবাজারে নয়, ভবনে আগুনের এই ভিডিওটি যশোরের ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের

সম্প্রতি ‘কক্সবাজার বহুতল  ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে৷ 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)৷

ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি কক্সবাজারের কোনো ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার নয়। প্রকৃতপক্ষে, এটি ২০২৪ সালের ০৫ আগস্ট যশোরে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারের মালিকানাধীন আবাসিক হোটেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনার ভিডিও।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে Syed Ahsanur Haider নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২৪ সালের ০৫ আগস্ট প্রকাশিত পোস্টে একাধিক ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এসব ভিডিওর দৃশ্যাবলীর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির দৃশ্যাবলীর সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। 

পোস্টটির ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয়, ভিডিওগুলো যশোরে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারের মালিকানাধীন জাবির হোটেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনার। 

পরবর্তীতে, গণমাধ্যম ডেইলি সানের ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ০৬ আগস্ট ‘যশোরে শাহীন চাকলাদারের হোটেলে আগুন, নিহত ১৮’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে যুক্ত ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির দৃশ্যাবলীর মিল রয়েছে।

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ৫ আগস্ট বিকেল ৪টার দিকে যশোর শহরের চিত্রার মোড়ে অবস্থিত যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারের মালিকানাধীন জাবির ইন্টারন্যাশনাল নামক ১৪ তলা বিশিষ্ট পাঁচ তারকা হোটেলে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। প্রতিবেদনে সংযুক্ত ছবিটি উক্ত অগ্নিসংযোগের চিত্র বলে প্রতীয়মান হয়। 

Comparison: Rumor Scanner 

একই বিষয়ে গণমাধ্যম যুগান্তরের ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ০৬ আগস্ট ‘শাহীন চাকলাদারের হোটেলে আগুন, নিহত বেড়ে ২৪’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে একই তথ্য ও ভিন্ন দিক থেকে ধারণকৃত পুড়ে যাওয়া জাবির ইন্টারন্যাশনাল ভবনের চিত্র পাওয়া যায়। 

অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। 

গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট কোনো সূত্রে সাম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজারে কোনো ভবনে অগ্নিকাণ্ডের সংবাদ বা তথ্য পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, কক্সবাজারে বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ভিডিও দাবিতে গত বছরের ০৫ আগস্ট যশোরে আওয়ামী লীগ নেতার হোটেলে অগ্নিসংযোগের পুরোনো ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা৷ 

তথ্যসূত্র

গাজীপুরে হামলার শিকার সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন মারা যাননি

গত ৬ আগস্ট গাজীপুরের সাহাপাড়া এলাকায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে বেধড়ক মারধরের শিকার হন দৈনিক বাংলাদেশের আলো পত্রিকার রিপোর্টার আনোয়ার হোসেন। গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছিলেন স্থানীয় কয়েকজন যুবক। এ ঘটনায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হন তিনি।

এরই প্রেক্ষিতে, ‘Daily Ajker kantho’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে গত ৭ আগস্ট একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, ‘এবার গাজীপুরে থানার পাশেই যুবককে পাথর মেরে হত্যা: নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে বিদ্ধ পুলিশ’ 

এছাড়াও ক্যাপশন বর্ণনায় বলা হয়, ‘…চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় এক যুবককে পাথর দিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা। ঘটনার সময় পুলিশ সদস্যের উপস্থিতি সত্ত্বেও কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় জনমনে তীব্র ক্ষোভ ও নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।’

একই পেজ থেকে গত ৮ আগস্ট ‘আর নেই সাংবাদিক আনোয়ার: পুলিশের সামনেই যাকে পিটিয়েছিল চাঁদাবাজরা’ শিরোনামে একটি ফটোকার্ড প্রচার করা হয়। 

ফটোকার্ডটির বর্ণনায় দাবি করা হয়, ‘তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এছাড়াও দাবি করা হয়, সাংবাদিক আনোয়ারের মৃত্যুর পর তার মা বাদী হয়ে গাজীপুর সদর মেট্রো থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।’

ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৬ আগস্ট গাজীপুরের সাহাপাড়া এলাকায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে বেধড়ক মারধরের শিকার দৈনিক বাংলাদেশের আলো পত্রিকার রিপোর্টার আনোয়ার হোসেন মারা যাননি। দৈনিক বাংলাদেশের আলো পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক মফিজুর রহমান এবং গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান বিষয়টি রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেন।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ঢাকা ট্রিবিউন -এর ওয়েবসাইটে গত ৭ আগস্ট ‘গাজীপুরে পুলিশের সামনেই সংবাদকর্মীকে পেটালো চাঁদাবাজরা’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ফিচার ইমেজের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর একটি নির্দিষ্ট ফ্রেম ও আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডের ছবির সাদৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, অটোরিকশা এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকদের কাছ থেকে প্রতিদিনই চাঁদা আদায় করছে কয়েকজন চাঁদাবাজ। এমন তথ্য পেয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে গত ৬ আগস্ট পুলিশের সামনেই বেধড়ক মারধরের শিকার হয়েছেন সংবাদকর্মী আনোয়ার হোসেন সৌরভ। প্রতিবেদনটিতে সেই সময় গুরুতর আহত অবস্থায় তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়।

এছাড়াও প্রতিবেদনটিতে সাংবাদিকের মা এবং গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসানের বক্তব্যও পাওয়া যায়।

ওই সাংবাদিকের মা আনোয়ারা সুলতানা বলেন, “আমার ছেলে সাংবাদিক। কোনো অপরাধ ছাড়াই তাকে নির্মমভাবে মেরেছে। হাসপাতালে ছেলেকে নিয়ে আছি। তবে আমরা আতঙ্কিত।”

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান বলেন, “ওই ঘটনায় একটি অভিযোগ পেয়েছি। ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামিদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”

এই বিষয়ে গত ৮ আগস্ট ডেইলি স্টারের বাংলা সংষ্করণপ্রথম আলোর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ঘটনার ফলোআপ খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা যায়, উক্ত ঘটনায় ফরিদ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রতিবেদন প্রকাশকালীন সময়ে দৈনিক বাংলাদেশের আলো পত্রিকার সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন বলেও জানা যায়।

আলোচিত দাবির বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হতে সাংবাদিক আনোয়ার হোসেনের কর্মস্থল দৈনিক বাংলাদেশের আলো পত্রিকার সম্পাদক এবং গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসানের সাথে কথা বলে রিউমর স্ক্যানার টিম।

দৈনিক বাংলাদেশের আলো পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক মফিজুর রহমান জানান, আনোয়ার হোসেন বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসানও নিশ্চিত করেন আনোয়ার হোসেন মারা যানানি।

সুতরাং, গত ৬ আগস্ট গাজীপুরের সাহাপাড়া এলাকায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে বেধড়ক মারধরের শিকার দৈনিক বাংলাদেশের আলো পত্রিকার রিপোর্টার আনোয়ার হোসেন মারা গেছেন শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

মেট্রোরেলের ডিসপ্লেতে গ্রীন লাইন দেখা যাওয়ার দাবিতে প্রচারিত ছবিটি সম্পাদিত

0

সম্প্রতি, ‘শুধু Oneplus, Samsung এর দোষ তাই না? মেট্রোরেলে গ্রিন লাইন!’ শীর্ষক ক্যাপশনে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে, মিরপুর-১০ মেট্রো স্টেশনের ছবি এটি। এটি রেলের বগির ভেতরকার ছবি যেখানে ডিসপ্লেতে গ্রীন লাইন দেখা যাচ্ছে। 

ফেসবুক প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিতে ছবিটি ২০২৩ সালেও প্রচার হতে দেখা যায়। দেখুন- এখানে, এখানে, এখানে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মিরপুর-১০ মেট্রো স্টেশনে অবস্থান করা রেলের বগির ভেতরে ডিসপ্লেতে গ্রীন লাইন দেখা যাওয়ার দাবিতে প্রচারিত ছবিটি বাস্তব নয়, বরং ভিন্ন একটি ছবিকে এডিট করে ২০২৩ সাল থেকেই উক্ত ছবিটি প্রচার করা হচ্ছে।

অনুসন্ধানে ডেইলি স্টারের ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ০১ মার্চ “Metro rail will now stop at Mirpur-10 station” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে থাকা ছবির সাথে আলোচিত ছবির ক্যাপচার, এঙ্গেল, ডিসপ্লেতে থাকা লিখা এবং প্রদর্শিত সময়ের হুবহু মিল রয়েছে। তবে ডেইলি স্টারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ছবিতে গ্রীন লাইনের কোনো অস্তিত্ব নেই। 

Photo Comparison By Rumor Scanner 

অর্থাৎ, ডেইলি স্টারের ছবিটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে। 

এছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গণমাধ্যম বা অন্য কোনো বিশ্বস্ত সূত্রে মেট্রো রেলের মিরপুর-১০ স্টেশনে অবস্থান করা রেলের বগির ভেতরের ডিসপ্লেতে গ্রীন লাইন  দেখা যাওয়ার কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ স্টেশনে অবস্থান করা রেলের বগির ভেতরের ডিসপ্লেতে গ্রীন লাইন দেখা যাওয়ার দাবিতে প্রচারিত সম্পাদিত। 

তথ্যসূত্র 

গত জুলাই-আগস্টে থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র এক বছর পর মসজিদ থেকে উদ্ধারের দাবিটি ভুয়া  

0

২০২৪ সালের জুলাই আগস্ট মাসে থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র এক বছর ধরে মসজিদে ও সম্প্রতি মসজিদ থেকে এসব অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে দাবিতে কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। 

একই দাবিতে এক্সে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে। 

এছাড়া, এসব অস্ত্র রাজধানীর খিলগাঁও ইমানবাগ জামে মসজিদে রাখা হয়েছিলো পাল্টা অভ্যুত্থানের জন্য দাবিতেও আলোচিত ছবিগুলো ফেসবুকে প্রচার হতে দেখা গেছে। দেখুন এখানে। 

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র এক বছর পর সম্প্রতি মসজিদ থেকে উদ্ধারের দাবিটি ভুয়া। প্রকৃতপক্ষে, খিলগাঁও থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র ২০২৪ সালের ৭ আগস্ট উদ্ধার করে মসজিদে রেখে সেনাবাহিনীর হাতে হস্তান্তর করেছিল সচেতন এলাকাবাসী। পুরোনো সেই ছবিগুলোই সম্প্রতি ভুয়া দাবিতে ছড়ানো হচ্ছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে উক্ত দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো রিভার্স সার্চের মাধ্যমে ‘আল-জামিয়াতুল আহ্’লিয়া উম্মাহাতুল মু’মিনীন মহিলা মাদ্রাসা’ নামক ফেসবুক পেজে ২০২৪ সালের ০৭ আগস্টে প্রকাশিত একটি পোস্টে ছবিগুলোর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। 

Image Comparison by Rumor Scanner 

উক্ত পোস্টের ক্যাপশন থেকে জানা যায়, খিলগাঁও থানা থেকে লুট হওয়া বিভিন্ন অস্ত্র সেসময় উদ্ধার করে মসজিদে জড়ো করে সেনাবাহিনীর হাতে এলাকাবাসী হস্তান্তর করে। 

পরবর্তীতে উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম চ্যানেল২৪ এর ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ০৭ আগস্ট “খিলগাঁও থানার লুট হওয়া শতাধিক অস্ত্র ফিরিয়ে দিলেন এলাকাবাসী” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনেও একই ছবিগুলো সংযুক্ত থাকতে দেখা যায়। 

Screenshot from Channel24 by Rumor Scanner 

উক্ত প্রতিবেদনের বিস্তারিত অংশ থেকে জানা যায়, রাজধানীর খিলগাঁও থানা থেকে লুট হওয়া শতাধিক আগ্নেয়াস্ত্র খিলগাঁও ঈমানবাগ জামে মসজিদে উদ্ধার করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে। ২০২৪ সালের ০৭ আগস্ট (বুধবার) দুপুরে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় এসব আগ্নেয়াস্ত্র ফেরত দেয়া হয়। 

অর্থাৎ, খিলগাঁও থানা থেকে লুট হওয়া এসব অস্ত্র সাম্প্রতিক সময়ে উদ্ধার হয়নি বরং, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসেই উদ্ধার হয়েছে। 

উল্লেখ্য, গত ৯ আগস্ট রাতে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার তিনটি দোকানে অভিযান চালিয়ে সামুরাই ও চাপাতিসহ প্রায় ১ হাজার ১০০টি ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- সামুরাই, চাপাতি, চাইনিজ কুড়াল, বাংলা কুড়াল, চাকু ও মিট হ্যামার। 

সুতরাং, ২০২৪ সালের জুলাই আগস্ট মাসে থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র এক বছর পর সম্প্রতি মসজিদ থেকে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র