২০২২: গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাকে ঘিরে ছড়িয়েছে যেসব গুজব

কালের গহবরে সদ্য হারিয়ে যাওয়া খ্রিষ্টীয় বছর ২০২২ বাংলাদেশের বৃহৎ বেশ কিছু স্থাপনা নির্মাণ ও নির্মাণ শেষে উদ্বোধন ও চালু নিয়ে আলোচনায় ছিল। এর মধ্যে অন্যতম ছিল দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জনগণের বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ও চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা, ঢাকার বাসিন্দাদের মেট্রোরেল পাওয়া। 

এর বাইরে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে রেলস্টেশনে আইকনিক ছবি নির্মাণ, বন্দরনগরী চট্টগ্রামে নির্মাণাধীন কর্ণফুলী টানেলও ছিল আলোচনায়। 

তবে এসব আলোচনার মধ্যেই এই স্থাপনাগুলো নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে নানা গুজব৷ এসব গুজবের মধ্যে নির্মাণাধীন স্থাপনার ভুল ছবি প্রচার, স্থাপনাকে ঘিরে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বক্তব্য, স্থাপনাকে ঘিরে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার ইত্যাদি। 

রিউমর স্ক্যানার ২০২২ সালে নির্মাণাধীন বিভিন্ন স্থাপনাকে ঘিরে ছড়ানো যেসব গুজব, মিথ্যা তথ্য উন্মোচন করেছে তার উল্লেখযোগ্য কিছু নিয়েই আজকের এই আয়োজন৷

১. পদ্মা সেতুর ছবি 

২০২২ সালের ২৫ জুন উদ্বোধন হয় বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জনগণের বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু। সেতুটি উদ্বোধনের দিনেই এমন একটি স্থাপনার জন্যে বাংলাদেশ গর্ব করতেই পারে” শীর্ষক শিরোনামে একটি সেতুর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশের পদ্মা সেতুর ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিটি পদ্মা সেতু বা বাংলাদেশের কোনো সেতুর ছবি নয়। 

এ সংক্রান্ত রিউমর স্ক্যানারের বিস্তারিত প্রতিবেদন পড়ুন এখানে। 

২. খালেদা জিয়ার পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন 

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে আগে এই সেতুকে ঘিরে যেসব রাজনৈতিক গুজব ছড়িয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর কে স্থাপন করেছেন। 

এ নিয়ে ২০২২ সালের ৫ জুন ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতো বিনিময়কালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেন, পদ্মা সেতুর প্রথম ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।

তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পদ্মা সেতুর প্রথম ভিত্তিপ্রস্তর সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া স্থাপন করেননি বরং ২০০১ সালের ৪ জুলাই তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর প্রথম ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

এ প্রসঙ্গে রিউমর স্ক্যানারের বিস্তারিত প্রতিবেদন পড়ুন এখানে। 

৩. কর্ণফুলী টানেলের ছবি

পদ্মা সেতুর পর এদেশের জনগণের নজর ছিল দেশে চলমান প্রথমবারের মতো নির্মাণ হতে যাওয়া আরেকটি মেগাপ্রকল্প কর্ণফুলী টানেল।

আর তাই পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরপরই একটি টানেলের ছবিকে কর্ণফুলী টানেলের ছবি দাবিতে  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে একটি গুজব৷ 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ছবিটি কর্ণফুলী টানেলের নয় বরং ছবিটি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত। 

এ নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের বিস্তারিত প্রতিবেদন পড়ুন এখানে

৪. কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনের ছবি

প্রথমবারের মতো দেশের রেল নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হতে যাচ্ছে পর্যটন নগরী কক্সবাজার। এই নেটওয়ার্ক ঘিরে তৈরি করা হচ্ছে নানা অবকাঠামো। এর মধ্যে অন্যতম কক্সবাজারের আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন। তবে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই ২০২২ সালের অক্টোবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে “ইউরোপ আমেরিকা নয় এটি বাংলাদেশের কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশন” শীর্ষক শিরোনামে একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে।

তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত ছবিটি কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনের বাস্তব ছবি নয় বরং এটি কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনের প্রস্তাবনার থ্রিডি ছবি।

এ নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের বিস্তারিত প্রতিবেদন পড়ুন এখানে। 

৫. মেট্রোরেলের স্টেশনের নির্মাণাধীন গেট নিয়ে গুজব

দেশের মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নের ইতিহাসে আলোচিত ২০২২ সাল শেষ হয়েছিল ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঢাকাবাসীর বহুল প্রত্যাশিত মেট্রোরেল উদ্বোধনের মাধ্যমে। তবে এই উদ্বোধনের আগেই মেট্রোরেল স্টেশনের অসম্পূর্ণ কাজের ছবি ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘মিরপুর ১২ মেট্রোরেল স্টেশনের প্রবেশ গেটের একটি ছবি দাবি করে মেট্রোরেল স্টেশনের দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থা’ শীর্ষক  পোস্ট  ছড়িয়ে পড়ে। যা নিয়ে পরবর্তীতে অনুসন্ধানে নামে রিউমর স্ক্যানার টিম।

 অনুসন্ধানে জানা যায়, মিরপুর-১২ নামে মেট্রোরেলের কোনো স্টেশন-ই নেই বরং ছবিটি পল্লবী স্টেশনের। তাছাড়া ছবির গেটটির কাজ তখনো চলমান ছিল।

এই নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের বিস্তারিত প্রতিবেদন পড়ুন এখানে। 

৬. মেট্রোরেলের উদ্বোধনের পর উত্তরা থেকে মতিঝিল যেতে দূরত্ব

তবে কেবল নির্মাণ কাজ চলাকালীন নয়, মেট্রোরেল নিয়ে উল্লেখযোগ্য দুইটি গুজব ছড়িয়েছিল এটি জনসাধারণের জন্য চালু হওয়ার পরেও৷ এর মধ্যে একটি মেট্রোরেলের প্রতি স্টেশনে ১০ মিনিট করে দাঁড়ানোর ফলে উত্তরা থেকে মতিঝিলে পৌঁছাতে সময় লাগবে ৪ ঘন্টা। 

মেট্রোরেলের প্রতি স্টেশনে ১০ মিনিট করে দাঁড়ানোর বিষয়টি সাময়িক এবং মেট্রোরেল পুরোদমে চালু হলে উত্তরা থেকে মতিঝিলে পৌঁছাতে সময় লাগবে ৩৮ মিনিট৷ 

এ নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের বিস্তারিত প্রতিবেদন পড়ুন এখানে। 

৭. মেট্রোরেল স্টেশনে হিন্দি ভাষায় লেখা ডিজিটাল স্ক্রিন

মেট্রোরেল নিয়ে ছড়ানো গুজবের আরেকটি ছিল মেট্রো রেল স্টেশনে ইংরেজি ও হিন্দিতে গন্তব্য লেখা থাকলেও সেখানে বাংলা নেই। 

তবে এ গুজব নিয়েও রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ‘মেট্রোরেল স্টেশনে ইংরেজি ও হিন্দিতে গন্তব্য লেখা থাকলেও বাংলা না থাকার’ দাবিটি সঠিক নয়। মেট্রোরেল উদ্বোধনের পর স্টেশনের ডিজিটাল স্ক্রিনগুলোতে স্টেশনের নাম বাংলা ও ইংরেজিতেই দেখা গেছে।

এ নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের বিস্তারিত প্রতিবেদন পড়ুন এখানে

২০২২ সালে বিভিন্ন স্থাপনাকে ঘিরে যেসব গুজব ছড়িয়েছিল তার মধ্যে আলোচিত গুজবগুলো সম্পর্কে রিউমর স্ক্যানারের বিস্তারিত অনুসন্ধানগুলো একনজরে দেখুন

১. রাশিয়ার ক্রিমিয়ান সেতুর ছবিকে পদ্মা সেতুর ছবি দাবিতে প্রচার

২. পদ্মা সেতুর প্রথম ভিত্তিপ্রস্তর সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া স্থাপন করেননি

৩. ছবিটি কর্ণফুলী টানেলের নয়

৪. কক্সবাজার রেল স্টেশনের থ্রিডি অ্যানিমেশনের ছবি বাস্তব দাবিতে প্রচার

৫. মেট্রোরেল স্টেশনের অসম্পূর্ণ কাজের ছবি ব্যবহার করে বিভ্রান্তিকরভাবে প্রচার

৬. মেট্রোরেলে উত্তরা থেকে মতিঝিল যেতে কত সময় লাগবে?

৭. মেট্রোরেল স্টেশনের ডিজিটাল স্ক্রিনে বাংলা না থাকার দাবিটি মিথ্যা

আরও পড়ুন

spot_img