সম্প্রতি “ইউরোপ আমেরিকা নয় এটি বাংলাদেশের কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশন” শীর্ষক শিরোনামে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ইউটিউবে প্রচারিত এমন ভিডিও (থাম্বনেইল) দেখুন এখানে এবং আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে।
টিকটকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ )।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত ছবিটি কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনের বাস্তব ছবি নয় বরং এটি কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনের প্রস্তাবনার থ্রিডি ছবি।
কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে, ভিডিও শেয়ারিং সাইট ইউটিউবে ‘Mithu Dhar‘ নামক একটি চ্যানেলে ২০১৯ সালের ৪ ডিসেম্বর “Cox Bazar proposed Railway Station 3D animation” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওর শিরোনাম অনুযায়ী, এটি কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনের প্রস্তাবনার থ্রিডি ভিডিও।
পাশাপাশি, ভিডিও শেয়ারিং সাইট ইউটিউবে ‘Railway Project‘ নামক একটি চ্যানেলে ২০১৯ সালের ২৪ এপ্রিল “ICONIC Cox’sbazar Railway Station Animation” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওর শিরোনাম অনুযায়ী, এটি কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনের প্রস্তাবনার অ্যানিমেশন (থ্রিডি) ভিডিও।
এছাড়াও, কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণের জন্য এর থ্রিডি অ্যানিমেশন তৈরি করা হয় আর্কিটেকচারাল ডিজাইন কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠান “ভলিউমজিরো” থেকে। প্রতিষ্ঠানটির একজন স্টুডিও এডমিন জানান, “কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনটি আমাদের দ্বারা ডিজাইন করা হয়েছে এবং বর্তমানে এটি নির্মাণাধীন। কেউ কেউ বলতে পারেন যে থিডি উপস্থাপনগুলো (চিত্র ও ভিডিও) সত্যিকারের মতো, কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি যে একবার সম্পূর্ণ হলে এটি আরও চিত্তাকর্ষক হবে৷”
মূলত, দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত এবং রামু থেকে মিয়ানমারের নিকটবর্তী ঘুমধুম পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প ২০১০ সালের ৬ জুলাই একনেকে অনুমোদন পায়। পৃথক দুটি লটে বিভক্ত প্রকল্পের দ্বিতীয় লটের অধিভুক্ত কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণের জন্য এর থ্রিডি অ্যানিমেশন তৈরি করা হয় ভলিউমজিরো নামক একটি প্রতিষ্ঠান থেকে। সেই থ্রিডি অ্যানিমেশনের ছবিকে বাস্তবের কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনের ছবি দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, প্রকল্পের পৃথক দুটি লটের একটি হচ্ছে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজারের চকরিয়া পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার এবং দ্বিতীয় লট হচ্ছে চকরিয়া থেকে কক্সবাজার সদর পর্যন্ত। চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) ও দেশীয় ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড পৃথক দুই লটের কার্যাদেশ পায়।
গত পহেলা অক্টবরে প্রকাশিত সময় টেলিভিশনের এক ভিডিও প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২১৫ কোটি টাকা ব্যায়ে ২৯ একর জমির উপর নির্মাণাধীন দেশের একমাত্র আইকনিক রেল স্টেশনের ছাদের উপরে স্টিল ক্যানোপির কাজ, সৌন্দর্য্য বর্ধন, ফায়ার ফাইটিং, স্যানিটারি এবং বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ চলছে। এছাড়াও ফুটওভার ব্রিজ, তিনটি প্ল্যাটফর্ম এবং মূল স্টেশন কাঠামোর ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে। স্টেশনসহ মোট প্রকল্পের ৭৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে শেষ হতে পারে এর নির্মাণকাজ।
প্রসঙ্গত, ইতোপূর্বে অ্যানিমেশন’কে বাস্তব দাবিতে প্রচারের বিষয় নিয়ে বেশকিছু তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনের প্রস্তাবনার থ্রিডি ছবিকে স্টেশনের বাস্তব ছবি দাবিতে প্রচার করা হচ্ছ; যা বিভ্রান্তিকর।