Home Blog Page 598

সিইসি কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র পদত্যাগ চাওয়ার ভুয়া তথ্য

গত ২৮ নভেম্বর শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে ‘এবার নিষেধাজ্ঞার চিঠি নিয়ে আসলো পিটার হাঁস, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইলো সিইসি’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

 শেখ হাসিনা

টিকটকে প্রচারিত উক্ত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবদি ভিডিওটিতে প্রায় ১২ হাজার ৪ শত পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। এছাড়া ১ হাজার ২ শত বার শেয়ার করা হয়েছে। ভিডিওটি’র মন্তব্যঘর ঘুরে অধিকাংশ নেটিজেনকে উক্ত দাবির প্রেক্ষিতে তাদের প্রতিক্রিয়া জানাতে দেখা যায়।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো নিষেধাজ্ঞার চিঠি নিয়ে আসেননি এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ চাননি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ভিডিও ও ছবি যুক্ত করে তাতে চটকদার বাক্য বসিয়ে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সেখানে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ ও পুরোনো কিছু ছবি যুক্ত করা হয়েছে।

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে সেখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল এবং সরকরের বিপক্ষে নিয়মিত বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা করা অনলাইন এক্টিভিস্ট ফয়জুল হকের পৃথক দুটি ভিডিও দেখা যায়।

এবিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টিফোর এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৮ নভেম্বর ‘নির্বাচন ঘিরে দেশ সংকটে আছে: প্রধান নির্বাচন কমিশনার’ শীর্ষক শিরোনামে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের বক্তব্য নিয়ে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: YouTube 

এই ভিডিওটি’র সাথে আলোচিত ভিডিওটি’র প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের বক্তব্য অংশের মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner 

তবে উক্ত বক্তব্যে কোথায় তাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ চাইতে দেখা যায়নি। বরং সেখানে তিনি আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন।

পরবর্তীতে, ম্যানুয়ালি অনুসন্ধানের মাধ্যমে Dr. Fayzul Huq-ডঃ ফয়জুল হক নামের একটি ফেসবুক পেজে গত ২৮ নভেম্বর ‘অ*বৈধ পথে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যাবে না!অর্থনীতি ও গার্মেন্টস শিল্পে ধ*স আসতে পারে এমন ইঙ্গিত করলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার!ডঃ ফয়জুল হক’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Facebook

এই ভিডিওটি’র সাথে আলোচিত ভিডিওটি’র অনলাইন এক্টিভিস্ট ফায়েজুল হকের বক্তব্য অংশের মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner

এছাড়াও, মুলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো নিষেধাজ্ঞার চিঠি নিয়ে আসার বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়নি। তবে গণমাধ্যম সূত্রে গত ২৭ নভেম্বর কলোম্বো সফর শেষে তার ঢাকায় ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর আগে তিনি গত ১৬ নভেম্বর ছুটি কাটাতে শ্রীলঙ্কায় গিয়েছিলেন। তাছাড়া, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ চাওয়ার বিষয়টিরও সত্যতা পাওয়া যায়নি।

অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, আলোচিত দাবিগুলো সঠিক নয়।

মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে উত্তপ্ত রাজনীতির মাঠ। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন গ্রহণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি এবং সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছে। এসব ঘটনায় প্রতিদিনই বিভিন্ন ধরনের তথ্য ইন্টারনেটে প্রচারিত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৮ নভেম্বর শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে একটি বেনামি অ্যাকাউন্ট থেকে ‘এবার নিষেধাজ্ঞার চিঠি নিয়ে আসলো পিটার হাঁস, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইলো সিইসি’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ভিডিও ও ছবি যুক্ত করে তাতে চটকদার বাক্য বসিয়ে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিগুলো প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবিগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, আগামী ৭ জানুয়ারি রোববার ভোটগ্রহণের দিন রেখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। গত ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষনে এই ঘোষণা দেন তিনি।

উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে ‘এবার নিষেধাজ্ঞার চিঠি নিয়ে আসলো পিটার হাঁস, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইলো সিইসি’ শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

দৈত্যাকৃতির সিল মাছের ‘আল্লাহু আল্লাহু’ বলে ডাকার ভিডিওটি এডিটেড

সম্প্রতি, ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহর কুদরত দেখুন’ শীর্ষক শিরোনামে দৈত্যাকৃতির একটি সিল মাছ আল্লাহু আল্লাহু বলে ডাকছে দাবিতে ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

দৈত্যাকৃতির

টিকটকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট  দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ

ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দৈত্যাকৃতির সিল মাছটির আল্লাহু আল্লাহু বলে ডাকার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ইংল্যান্ডের সাউথ জর্জিয়া দ্বীপের তীরে উক্ত দৈত্যাকৃতির সিল মাছটি দেখা যায়। যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরবর্তীতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। উক্ত ভিডিওটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় মিরর করে তার সাথে আল্লাহু আল্লাহু ডাকার অডিওটি যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক ডিজিটাল আধেয় বা কন্টেন্ট প্রকাশক LAD Bible এর ফেসবুক পেজে গত ১০ এপ্রিল That is one huge seal 😳 শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Facebook

ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে। তবে এটিও দেখা যায় যে, আলোচিত ভিডিওটি উক্ত ভিডিওর মিরর ভার্সন   এবং উক্ত ভিডিওতে তা ধারণ করার সময়কার পারিপার্শ্বিক শব্দ ব্যতীত আর কোনো শব্দ শুনতে পাওয়া যায় না। 

Video Comparison by Rumor Scanner

এছাড়াও ভিডিওটি থেকে জানা যায়, উক্ত দৈত্যাকৃতির সিল মাছটিকে সাউথ জর্জিয়া দ্বীপের তীরে দ্বীপটির পেঙ্গুইনদের সাথে দেখা যায়। 

Screenshot: Facebook

পরবর্তীতে উক্ত তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যভিত্তিক দৈনিক ট্যাবলয়েড পত্রিকা Daily Mail এর ফেসবুক পেজে গত ৯ মার্চ The Godzilla of seals 😱 শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত উক্ত সিল মাছের আরেকটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Facebook

উক্ত ভিডিওটি পর্যালোচনা করেও আলোচিত ভিডিওটি সম্পর্কে একই তথ্য পাওয়া যায়।

এছাড়াও রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ভারতীয় গণমাধ্যম NDTV এর ওয়েবসাইটে গত ২ আগস্ট  This huge creature was seen on the seashore, some said sea elephant, some called lion শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: NDTV

উক্ত প্রতিবেদনের সাথে যুক্ত দৈত্যাকৃতির সিল মাছেরএকই ভিডিওটি পাওয়া যায়। ভিডিওটি পর্যালোচনা করেও সিলটির আল্লাহু আল্লাহু বলার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে ভিন্ন একটি অডিও যুক্ত করে তৈরি করা হয়েছে।

মূলত, চলতি বছরের শুরুর দিকে ইংল্যান্ডের সাউথ জর্জিয়া দ্বীপের তীরে একটি দৈত্যাকৃতির সিল মাছ দেখা যায়। সিল মাছটির অস্বাভাবিক আকৃতির কারণে সেটির ভিডিও সেসময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। উক্ত সিল মাছের সেই ভিডিওটিতে সম্প্রতি আল্লাহু আল্লাহু শীর্ষক অডিও ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় যুক্ত করে সিল মাছটি আল্লাহু বলে ডাকছে দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

সুতরাং, দৈত্যাকৃতির সিল মাছের ‘আল্লাহু আল্লাহু’ বলে ডাকার দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত ভিডিওটি এডিটেড বা বিকৃত। 

তথ্যসূত্র

শিশুটি ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ছিল না

0

সম্প্রতি, ইসরাইলের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনি পরী- শীর্ষক ক্যাপশনে একটি শিশুর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। 

শিশুটি

উক্ত ছবি সহকারে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, শিশুটিকে ইসরায়েলি বাহিনী গ্রেফতারই করেনি। তাই তার ইসরায়েলি বাহিনীর কাছে থেকে মুক্তি পাওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে শিশুটির মা ফাতিমা শাহিনকে ইসরায়েলি বাহিনী গ্রেফতার করেছিল। ছবিটি সম্প্রতি ফাতিমার মুক্তি উপলক্ষে কারাগারের বাহিরে অপেক্ষায় থাকা তার শিশুকন্যা আইলুলের।

অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে “Reem Al-Harmi ريم الحرمي” নামের একটি এক্স অ্যাকাউন্টে (সাবেক টুইটার) আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: X

ছবিটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, শিশুটি ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বাহিনীর কাছে বন্দি ফাতিমা শাহিনের (৩৩) একমাত্র মেয়ে। শিশুটি তার মায়ের মুক্তি উপলক্ষে কারাগারের বাহিরে অপেক্ষায় ছিল। 

পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ভারতীয় গণমাধ্যম Radiance News এর ওয়েবসাইটে গত ২৫ নভেম্বর “First round of Palestinian prisoners liberated in swap – many see the open sky after years” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 

Screenshot: Radiance News

উক্ত প্রতিবেদন থেকেও শিশুটির বিষয়ে একই তথ্য জানা যায়। পাশাপাশি শিশুটির এক পোশাক পরিহিত আরেকটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।

এছাড়া, একই তারিখে মধ্যপ্রাচ্যের গণমাধ্যম Khaleej Times এ “Watch: Palestinian mother’s emotional reunion with daughter released after 8 years” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনে আলোচিত শিশুর আরও একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Khaleej Times

উক্ত ছবির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ফাতিমা শাহিন কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তার মেয়ে আইলুল তাকে আদর করছে। 

উল্লেখ্য, ফাতিমা শাহীন চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল তারিখে ওয়েস্ট বেথলেহেম শহরে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

মূলত, গত ২৫ নভেম্বর ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে বন্দি ফিলিস্তিনি নাগরিক ফাতিমা শাহীন মুক্তি পান। তার মুক্তি উপলক্ষে কারাগারের বাহিরে অবস্থান করছিলেন তার শিশুকন্যা আইলুল। পরবর্তীতে ঐ শিশুর মায়ের মুক্তির জন্য অপেক্ষারত একটি ছবিকেই ইসরায়েলি বাহিনীর কাছ থেকে কাছ থেকে মুক্তি পাওয়া শিশুর ছবি দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক প্রচার করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত ০৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা শুরু করে। এই হামলার প্রেক্ষিতে ইসরায়েলও হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকায় পাল্টা হামলা চালায়। এতে দেশ দুইটির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাত নতুন মাত্রা পায়৷ পরবর্তীতে যুদ্ধ বিরতির প্রথম পর্যায়ের বন্দি আদান প্রদানের চুক্তি করে। এই চুক্তিতে ইজরায়েল কর্তৃক ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি দেওয়া ৩৯ জনকে মুক্তি দেয়। এই ৩৯ জনের মধ্যে ফাতিমা শাহীনও একজন। 

সুতরাং, ইসরায়েলি বাহিনীর কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া শিশুর ছবি দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

হিন্দু থেকে মুসলিম হওয়া নারীকে মুসলিম থেকে হিন্দু হওয়ার দাবিতে প্রচার

0

সম্প্রতি, ‘দুবাইয়ে মুসলিম মহিলা হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছেন’ শীর্ষক দাবিতে এক নারীর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। পোস্টগুলোতে দাবি করা হয়েছে দুবাইতে ওই মুসলিম মহিলা হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করে তার নাম পরিবর্তন করে রাধা রেখেছেন এবং জানিয়েছেন, “হিন্দুদের খারাপ দেখানো হয়, সত্যি কথা বলতে, আমি হিন্দুদের ভয় পেতাম, কিন্তু সনাতনের সত্যতা যখন জানলাম তখন দেখি সম্পূর্ণ আলাদা। তারপর আমি আমি গীতা পড়লাম এবং পরবর্তীতে আমার মন পরিবর্তন হয়ে আমি সত্য সনাতন ধর্ম গ্রহন করলাম।”

হিন্দু থেকে মুসলিম

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, যে নারীর ছবি প্রচার করে তাকে মুসলিম থেকে হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার দাবি করা হয়েছে প্রকৃতপক্ষে সেই নারী বেশ কয়েকবছর পূর্বে হিন্দু ধর্ম থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হয়েছেন। 

অনুসন্ধানে overcometv নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৬ সালের ৩০ এপ্রিল ‘Religion Was Always a Confusion- New Muslim’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওর ঐ নারীর সাথে উক্ত দাবির সাথে যুক্ত নারীর হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।  

Screenshot: overcometv YouTube

ভিডিওতে overcometv কে দেওয়া ২০১৬ সালের সেই সাক্ষাতকারে ঐ নারী জানান, তার নাম মারিয়াম। বয়স ২৭। তিনি ভারত থেকে এসেছেন এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলেন। তার পরিবার খুব একটা প্রাকটিসিং বা রিলিজিয়াস ছিল না। ধর্ম  সবসময় একটা কনফিউশান ছিল। পালন করতে হতো তাই করত। খুব একটা প্রাকটিসিং না হলেও তারা তাদের বিশ্বাসে দৃঢ় ছিলেন। মারিয়াম ভারতে বসবাস করলেও তার আশেপাশে যে মুসলিমরা ছিলো তাঁদের সাথে সে পরিচিত হতে পারেনি। ছোটবেলা থেকেই সে শিখেছিল মুসলিমরা ভালো মানুষ নয়, তাঁরা সন্ত্রাসের সাথে যুক্ত, তাঁরা জঙ্গি, তাঁরা খারাপ, তাঁদের কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে।

আরব আমিরাতে আসার আগ পর্যন্ত তার কখনোই কোন মুসলিমের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ হয়নি। তারপর কর্মসূত্রে সংযুক্ত আরব আমিরাতে এসে  মুসলিমদের সাথে তার পরিচয় ও বন্ধুত্ব হয় এবং বুঝতে পারেন মুসলিমরা অনেক ভালো। মুসলিম বন্ধুদের আচরণ দেখে তার ভালো লেগে যায় এবং তারপরই তিনি ইসলাম নিয়ে আগ্রহী হয়ে ইসলাম সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন। তিনি ইসলাম সম্পর্কিত পড়াশোনা করেন এবং পরবর্তীতে একটা সময় ইসলাম গ্রহণ করেন। এসময় কোরআন পড়ার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি আবেগাপ্লুত হোন।

অর্থাৎ, ওই নারী  মুসলিম থেকে হিন্দু হননি বরং তিনি হিন্দু ধর্ম থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন এবং তিনি হিন্দুদের খারাপ দেখানো হত শীর্ষক কোনো বক্তব্য দেননি বরং মুসলিমরা খারাপ তাকে এমন শেখানোর কথা তিনি বলেছেন। 

মূলত, এক ভারতীয় হিন্দুধর্মী নারী সংযুক্ত আরব আমিরাতে আসার পর মুসলিমদের ভালো আচরণ দেখে ইসলামের প্রতি আগ্রহী হয়ে একটা সময় ইসলাম গ্রহণ করেন। তার ইসলাম গ্রহনের ঘটনা নিয়ে তিনি যুক্তরাজ্য ভিত্তিক প্লাটফর্ম overcome tv কে একটি সাক্ষাতকার দেন। সেই সাক্ষাতকারে তিনি মুসলিমদের নিয়ে আগে কি ভাবতেন, কিভাবে ইসলামের প্রতি আগ্রহী হলেন এবং কিভাবে ইসলাম গ্রহণ করলেন তা নিয়ে কথা বলেন। সাম্প্রতিক সময়ে তার সেই সাক্ষাতকারের ভিডিও থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট নিয়ে কয়েকটি ছবি প্রচার করে তিনি মুসলিম থেকে হিন্দু হয়েছেন শীর্ষক ভুয়া দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে প্রচার করা হয়।

সুতরাং, হিন্দু ধর্ম থেকে ইসলামে ধর্মান্তরিত হওয়া এক নারীর পুরোনো সাক্ষাতকার থেকে ছবি নিয়ে  তাকে মুসলিম থেকে হিন্দু ধর্ম গ্রহণকারী হিসেবে প্রচার করার বিষয়টি মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিলের গুজব 

সম্প্রতি, “৭ জানুয়ারী নির্বাচন বাতিল। কঠিন বিপদে পড়ল প্রধানমন্ত্রী” শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

জাতীয় সংসদ

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে(আর্কাইভ) এবং এখানে(আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল করা হয়নি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়া আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। আলোচিত ভিডিওর শুরুতেই দুটি ভিন্ন ভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের সংবাদ উপস্থাপনের ভিডিওর খণ্ডাংশ দেখানো হয়। এরপর আলোচিত ভিডিওর উপস্থাপককে দর্শকের উদ্দেশ্যে তিনটি ভিডিও প্রদর্শন করতে দেখা যায়। 

ভিডিও যাচাই-১

উক্ত ভিডিওর কি ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে,  United Nations এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ২০ নভেম্বর “Gaza, Yemen, Mali & other topics – Daily Press Briefing (20 Nov 2023) | United Nations” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Collage By Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওর ১৭ মিনিট ৫৪ সেকেন্ড এর ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওতে জাতিসংঘের একজন প্রতিনিধিকে বিশ্বব্যাপী চলমান বিভিন্ন পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিং করতে দেখা যায়।

ভিডিও যাচাই-২

ভিডিওটির কিছু কি ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে Bangla Info Tube নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৯ নভেম্বর “৭ জানুয়ারী গেম ওভার ? নিশ্চিত ভাবেই না !” শীর্ষক শিরোনামের একটি ভিডিও খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ভিডিওর সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Collage By Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওতে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করতে দেখা যায়।

ভিডিও যাচাই-৩

কি ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, KOTHA নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ২০ নভেম্বর “একতরফা নির্বাচনে সরকারকে সাহায্য করছে কে? Masood Kamal | KOTHA” শীর্ষক শিরোনামের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর সাথে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু আলোচিত ভিডিওর কোথাও ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন বাতিলের বিষয়ে কোনোরূপ তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

Collage By Rumor Scanner

অর্থাৎ, প্রাসঙ্গিকতা ছাড়াই ভিন্ন ভিন্ন ভিডিওর খণ্ডাংশ জুড়ে দিয়ে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

পাশাপাশি, মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এখন পর্যন্ত আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল হওয়ার দাবির বিষয়ে কোনোরূপ তথ্য পাওয়া যায়নি।

তবে, গত ২৬ নভেম্বর বিকেলে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল জানিয়েছেন, বিএনপি নির্বাচনে এলে পুনঃতফসিল করা যেতে পারে।

তিনি আরো বলেন, এখনো সময় আছে। তারা এলে জাতির জন্য সৌভাগ্য হবে। কমিশন চায় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হোক।

মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন গ্রহণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি এবং সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছে। এসব ঘটনায় প্রতিদিনই বিভিন্ন ধরনের তথ্য ইন্টারনেটে প্রচারিত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল করা হয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিটি সঠিক নয়। অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে তাতে চটকদার থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে বিষয়টির সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, আগামী ৭ জানুয়ারি রোববার ভোটগ্রহণের দিন রেখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। গত ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষনে এই ঘোষণা দেন তিনি।

উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল হয়েছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

বাম হাতের চতুর্থ আঙুলে আংটি পরানোর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই

0

সম্প্রতি, “বিয়ের আংটি বাম হাতের চতুর্থ আঙুলে কেন পড়ানো হয় জানেন;! কারণ এটি একমাত্র আঙুল যার স্নায়ু সরাসরি আমাদের হৃদয়ের সাথে,অর্থাৎ হৃদযন্ত্রের সাথে যুক্ত থাকে!!” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়।

আংটি

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ)

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাম হাতের চতুর্থ আঙুলই একমাত্র নয়, যার শিরার সাথে হার্ট বা হৃৎপিণ্ডের সরাসরি সংযুক্তি আছে বরং হাতের প্রত্যেকটি আঙুলই শিরার মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডের সাথে যুক্ত। প্রকৃতপক্ষে বিয়ের আংটি বাম হাতের একটি নির্দিষ্ট আঙুলে পরানোর পেছনে আছে প্রাচীন মিশরীয় বিশ্বাস, যেখানে মনে করা হতো ঐ একটি আঙুলের শিরাই সরাসরি হৃৎপিণ্ডের সাথে যুক্ত এবং এই শিরাটিকে বলা হয় Vena Amoris বা Vein of Love।

হাতের প্রত্যেকটি আঙুলই শিরার মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডের সাথে যুক্ত

আলোচিত দাবিটি নিয়ে আলোচনার পূর্বে হৃৎপিণ্ডের কাজ ও দেহের রক্ত সংবহনতন্ত্র নিয়ে মৌলিক কিছু আলোচনা করা যাক। রক্ত সংবহনতন্ত্র হলো হৃৎপিণ্ড, রক্তনালী এবং রক্তের সমন্বয়ে গঠিত একটি তন্ত্র। হৃৎপিণ্ডের অবিরাম সংকোচন এবং প্রসারণের মাধ্যমে সারা দেহে রক্ত সংবহন পদ্ধতি অব্যাহত থাকে। এই রক্ত সংবহন পদ্ধতি যেসব নালীর মাধ্যমে পরিচালিত হয়, তাকে রক্তনালী বা রক্তবাহিকা (Blood Vessel) বলে। গঠন, আকৃতি এবং কাজের ভিত্তিতে রক্তবাহিকা বা রক্তনালী তিন ধরনের হয়ে থাকে। যথা, ধমনি, শিরা এবং কৈশিক জালিকা।

বিয়ের আংটি বাম হাতের অনামিকায় পরার মিথ সম্পর্কে যা জানা যায়

অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, বিয়ের আংটি বাম হাতের একটি নির্দিষ্ট আঙুলে পরানোর ব্যাপারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে তথ্যটি প্রচার হয়ে আসছে, তার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তবে  বৈজ্ঞানিক ভিত্তি না থাকলেও এ দাবির যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায় প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায়। 

এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন বলছে, বাম হাতের চতুর্থ আঙুলটির শিরা সরাসরি হৃৎপিণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকা ও এজন্যই এ আঙুলে আংটি পরানোর প্রথাটির সূচনা প্রাচীন মিশরে।

পরবর্তীতে এ প্রথা ছড়িয়ে পড়ে রোমান ও গ্রীকদের মধ্যেও। এই শিরাকে তারা নাম দেয় Vena Amoris। তবে মিশরের সভ্যতা বিশেষজ্ঞ ড. ফ্লোরা অ্যান্থনি বলেন, বিয়েতে আংটি পরানো কোনো প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা নয়। প্রাচীন মিশরে বিয়েতে এই ধরনের অনুসঙ্গ সম্পর্কে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। তিনি পুরো বিষয়টিকেই বিশেষ করে প্রাচীন মিশরের অংশটিকে মিথ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

মূলত, ইন্টারনেটে দীর্ঘদিন ধরেই ‘বিয়ের আংটি বাম হাতের তৃতীয়/চতুর্থ আঙুলে পরানোর কারণ হিসেবে একটি তথ্য প্রচার হয়ে আসছে। যেখানে দাবি করা হচ্ছে এটিই হাতের একমাত্র আঙুল, যার স্নায়ু সরাসরি আমাদের হৃদযন্ত্রের সাথে যুক্ত থাকে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, এটি বহু যুগ ধরে চলে আসা একটি প্রচলিত মিথ। বিয়ের আংটি বাম হাতের তৃতীয়/চতুর্থ আঙুলে পরানোর কারণ হিসেবে প্রচারিত দাবিটির কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই বরং হাতের প্রতিটি আঙুলের সাথেই হৃৎপিণ্ডের সংযোগ রয়েছে।

উল্লেখ্য, পূর্বেও বিষয়টি ইন্টারনেটে ব্যপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে এই বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। 

নির্বাচনের তফসিল বাতিল এবং প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের ভুয়া তথ্য প্রচার 

সম্প্রতি, “এইমাত্র পদত্যাগ করলেন শেখ হাসিনা তফসিল বাতিল আজ থেকে দেশ চালাবে সেনাবাহিনী” শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। 

তফসিল বাতিল

ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

টিকটকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ইউটিউবে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।  

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নির্বাচনের তফসিল বাতিল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর কিংবা সেনাবাহিনী কর্তৃক দেশ চালানোর দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো সঠিক নয় বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার পুরোনো কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি যুক্ত করে সম্পাদনার মাধ্যমে তৈরি একটি ভিডিও প্রতিবেদন।

প্রথম ভিডিও ক্লিপ যাচাই 

ভিডিও ক্লিপগুলোর বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রথম ভিডিওতে থাকা এনটিভির লোগোর সূত্র ধরে অনুসন্ধানে ২০২২ সালের ২০ অক্টোবর এনটিভি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলে “ক্ষমতাগ্রহনের ৪৫ দিনেই পদত্যাগ করলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনের প্রথম কয়েক সেকেন্ড অংশটুকু কাট করে আলোচিত ভিডিওতে যুক্ত করা হয়েছে। 

Video Comparison : Rumor Scanner 

সংবাদ প্রতিবেদনটিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের পদত্যাগের বিষয়ে বলা হয়। 

অর্থাৎ আলোচিত দাবির সাথে এই ভিডিও প্রতিবেদনের কোনো প্রকার প্রাসঙ্গিকতা নেই।

দ্বিতীয় ভিডিও ক্লিপ যাচাই

আলোচিত ভিডিওতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ভিডিও ক্লিপ দেখানো হয়। ভিডিওটির কয়েকটি স্থিরচিত্র রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে গত ২১ সেপ্টেম্বর অনলাইন গণমাধ্যম ঢাকা ট্রিবিউন এ “Dhaka signs treaty of high seas for sustainable use of marine resources” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২০ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে জাতীয় অধিক্ষেত্রের বাইরের অঞ্চলের সামুদ্রিক জৈবিক বৈচিত্র্যের সংরক্ষণ এবং সাগরের আইন সম্পর্কিত জাতিসংঘের অধীনে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। 

Screenshot Comparison : Rumor Scanner 

অর্থাৎ, উক্ত ঘটনার একটি ভিডিও ক্লিপ আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে। 

তৃতীয় ভিডিও ক্লিপ যাচাই

আলোচিত ভিডিওটিতে ডিবিসি নিউজের সংবাদ পাঠের একটি ভিডিও দেখতে পায় রিউমর স্ক্যানার। উক্ত সূত্র ধরে  অনুসন্ধানে ২০২২ সালের ১৯ ডিসেম্বর “বিএনপি দেশে আবারো সামরিক শাসন চায় কি-না সংশয়ে আওয়ামী লীগ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনের প্রথম অংশটুকু অপ্রাসঙ্গিকভাবে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে। 

Video Comparison : Rumor Scanner 

চতুর্থ ভিডিও ক্লিপ যাচাই

আলোচিত দাবিটি প্রসঙ্গে সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনির একটি ভিডিও দেখানো হয়। উক্ত ভিডিওটির অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতিতে অনুসন্ধানে গত ১০ সেপ্টেম্বর গোলাম মাওলা রনির ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত একই ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison : Rumor scanner 

উক্ত ভিডিওতে তিনি গণঅভ্যুত্থান সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে কথা বলেন। এই বিষয়গুলো আলোচিত ভিডিওটিতে কোনো প্রকার প্রাসঙ্গিকতা ছাড়াই যুক্ত করা হয়েছে। 

এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কোনো গ্রহণযোগ্য সূত্রে আলোচিত দাবিগুলোর বিষয়ে কেনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ এবং সেনাবাহিনীর অধীনে নির্বাচন করার দাবিতে বিএনপি-জামায়াতসহ আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের তথ্য প্রচার হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘এইমাত্র পদত্যাগ করলেন শেখ হাসিনা তফসিল বাতিল আজ থেকে দেশ চালাবে সেনাবাহিনী’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। ভিডিওটি নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত দাবিগুলো সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি যুক্ত করে তাতে চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবিগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, আগামী ৭ জানুয়ারি রোববার ভোটগ্রহণের দিন রেখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। গত ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষনে এই ঘোষণা দেন তিনি।

সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর, নির্বাচনের তফসিল বাতিল এবং দেশ চালাবে সেনাবাহিনী শীর্ষক তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

ওয়েবসাইট হ্যাক করে রেজাল্ট পরিবর্তনের দায়ে তিন শিক্ষার্থী আটকের তথ্যটি ভুয়া

0

গত ২৬ নভেম্বর উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। ফলাফল ঘোষণার দিন “ব্রেকিং নিউজ: ওয়েবসাইট হ্যাক করে রেজাল্ট পরিবর্তনের দায়ে ৩ শিক্ষার্থী আটক” শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

অর্থাৎ, উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশের ওয়েবসাইট হ্যাক করে রেজাল্ট পরিবর্তনের দায়ে ৩ শিক্ষার্থী আটক হওয়ার একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

ওয়েবসাইট হ্যাক

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ওয়েবসাইট হ্যাক করে রেজাল্ট পরিবর্তনের দায়ে তিন শিক্ষার্থী আটক হওয়ার তথ্যটি সত্য নয় বরং কোনো প্রকার গ্রহণযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত দাবিটি ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

বিভ্রান্তির সূত্রপাত

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে NDC Version নামক একটি ফেসবুক পেজে গত ২৬ নভেম্বরে দুপুর ১:০৮ টার দিকে “ব্রেকিং নিউজ: ওয়েবসাইট হ্যাক করে রেজাল্ট পরিবর্তনের দায়ে ৩ শিক্ষার্থী আটক” শীর্ষক তথ্যের সম্ভাব্য প্রথম ফেসবুক পোস্টটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Facebook

তবে উক্ত পোস্টে আলোচিত দাবিটির ব্যপারে কোনো তথ্যসূত্র দেওয়া হয়নি।

পরবর্তীতে NDC Version নামক পেজটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পেজটির বায়ো সেকশন লক্ষ্য করে দেখা যায়, উক্ত পেজটি নটরডেম কলেজ, ঢাকা এর নামে তৈরি করা একটি মিম পেজ।

Screenshot: Facebook

অর্থাৎ, গত ২৬ নভেম্বরে NDC Version নামক পেজ থেকে দেওয়া পোস্টটি মজা বা মিম হিসেবে প্রচার করা হলেও পরবর্তীতে সেটি সত্য দাবিতে বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, গ্রুপ এবং পেজে পোস্ট করা হয়েছে।

আলোচিত দাবিটির বিষয়ে অধিকতর অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রের Fox7 Austin এর ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি “Police: Former UGA student hacked into system to change grade” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের মে মাসের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্টের জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিষয়ে অধ্যয়নরত ২১ বছর বয়সী মাইকেল ল্যামন উইলিয়ামস নামক শিক্ষার্থী তার গ্রেড পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে সহকারী অধ্যাপকদের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করায় তাকে জেলে পাঠানো হয়।

এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা AP এর ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ১১ মে “Teen arrested for hacking school system, changing grades” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের মে মাসে একটি কিশোরকে স্কুলের কম্পিউটার সিস্টেম হ্যাক করে ১০ জন শিক্ষার্থীর গ্রেড পরিবর্তন করার দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷

তবে বাংলাদেশে ওয়েবসাইট হ্যাক করে রেজাল্ট পরিবর্তনের দায়ে তিন শিক্ষার্থী আটক হয়েছেন কিনা সে বিষয়ের সত্যতা যাচাইয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট এবং দেশিয় গণমাধ্যমে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মূলত, গত ২৬ নভেম্বর উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করার দিন ওয়েবসাইট হ্যাক করে রেজাল্ট পরিবর্তনের দায়ে তিন শিক্ষার্থী আটক হওয়া নিয়ে একটি তথ্য ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিটির কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে, একটি স্যাটায়ার ধর্মী পেজ বিনোদনের উদ্দেশ্যে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হলে পরবর্তীতে বিষয়টি সত্য দাবিতে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। 

উল্লেখ্য, গত ২৬ নভেম্বর উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়।

সুতরাং, এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের দিনে ওয়েবসাইট হ্যাক করে রেজাল্ট পরিবর্তনের দায়ে তিন শিক্ষার্থী আটক হওয়া হওয়া নিয়ে ফেসবুকে একটি তথ্য প্রচারিত হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

রাস্তায় কাফনে মোড়ানো ফিলিস্তিনিদের লাশ দাবিতে আর্ট পারফরম্যান্সের দৃশ্য প্রচার

সম্প্রতি, রাস্তায় কাফনে মোড়ানো ফিলিস্তিনিদের লাশ দাবিতে শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। 

রাস্তায় কাফনে

টিকটকে প্রচারিত ভিডিও পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ইউটিউবে প্রচারিত শর্ট ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি রাস্তায় কাফনে মোড়ানো ফিলিস্তিনিদের লাশের কোনো দৃশ্যের নয় বরং এটি ইরানের তেহরানে অনুষ্ঠিত একটি আর্ট পারফরম্যান্সের দৃশ্য। 

অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ইরানের সংবাদ সংস্থা Tasnim News Agency এর ওয়েবসাইটে গত ১৪ নভেম্বর “Art Performance Held in Tehran in Solidarity with Gaza Children” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ১৩ নভেম্বর ইসরায়েলি হামলায় নিহত গাজার শিশুদের সাথে সংহতি প্রকাশ করার জন্য তেহরানের প্যালেস্টাইন স্কয়ারে ‘সিম্ফনি অফ দ্য কিল্ড’ নামে একটি ইনস্টলেশন আর্ট পারফরম্যান্স অনুষ্ঠিত হয়। সেই অনুষ্ঠানের দৃশ্য এটি।

Video Comparison: Rumor Scanner

উক্ত প্রতিবেদনে থাকা মসজিদের ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে প্রদর্শিত মসজিদের ছবির মিল রয়েছে। 

এছাড়া, একই তারিখে মধ্যপ্রাচ্যের সংবাদ মাধ্যম Nabd এর ওয়েবসাইটে “Dozens of symbolic shrouds in Palestine Square in Tehran” (ইংরেজি অনূদিত) শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়। 

পাশাপাশি, একই তথ্যে সংবাদ প্রকাশ করেছে আরও কিছু গণমাধ্যম। 

অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওটি একটি আর্ট পারফরম্যান্সের প্রতীকী লাশের দৃশ্য। এরই মধ্যে রাস্তায় কাফনে মোড়ানো ফিলিস্তিনিদের লাশ- শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। 

মূলত, গত ১৩ নভেম্বর ইরানের তেহরানের প্যালেস্টাইন স্কয়ারে ইসরায়েলি হামলায় নিহত গাজার শিশুদের সাথে সংহতি প্রকাশ করার জন্য ‘সিম্ফনি অফ দ্য কিল্ড’ নামে একটি ইনস্টলেশন আর্ট পারফরম্যান্স অনুষ্ঠানিত হয়। সম্প্রতি ঐ অনুষ্ঠানের একটি ভিডিওকে রাস্তায় কাফনে মোড়ানো ফিলিস্তিনিদের লাশের দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ০৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা শুরু করে। এই হামলার প্রেক্ষিতে ইসরায়েলও হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকায় পাল্টা হামলা চালায়। এতে দেশ দুইটির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাত নতুন মাত্রা পায়৷ এই সংঘাতে গাজায় নিহতের সংখ্যা ১৪ হাজার ছাড়িয়েছে বলে গণমাধ্যমে তথ্য এসেছে।

উল্লেখ্য, চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইস্যুতে একাধিক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার৷

সুতরাং, ইসরায়েলি হামলায় নিহত গাজার শিশুদের সাথে সংহতি প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত একটি আর্ট পারফরম্যান্সের দৃশ্যকে রাস্তায় কাফনে মোড়ানো ফিলিস্তিনিদের লাশের ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

ভারতে মিচেল মার্শের বিরুদ্ধে মামলা বা এফআইআর হয়নি 

গত ১৯ নভেম্বর ভারতে আয়োজিত আইসিসি ওডিআই ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া। এই জয়ের পর নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দলটির সদস্য মিচেল মার্শের একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে, যাতে দেখা যায় তিনি বিশ্বকাপ ট্রফির উপর পা তুলে বসে আছেন। পরবর্তীতে এই উদযাপনকে ভারতীয়দের জন্য অসম্মানজনক জানিয়ে ভারতের উত্তর প্রদেশের নাগরিক পণ্ডিত কেশব মিচেল মার্শের বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর দায়ের করেছেন দাবিতে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হয়েছে। কতিপয় গণমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, পণ্ডিত কেশব মিচেল মার্শের বিরুদ্ধে থানায় মামলাই দায়ের করেছেন।

মার্শের বিরুদ্ধে

উক্ত দাবিগুলোতে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন ডেইলি স্টার, প্রথম আলো, ইত্তেফাক, ঢাকা টাইমস, কালবেলা, ঢাকা পোস্ট, চ্যানেল আই, বাংলা ট্রিবিউন, কালের কণ্ঠ, চ্যানেল২৪, আমাদের সময়, যায়যায়দিন, প্রতিদিনের বাংলাদেশ, বাংলাভিশন (ফেসবুক), অনফিল্ড (ফেসবুক), অলরাউন্ডার (ফেসবুক), দেশটিভি, ডেইলি ক্রিকেট (ফেসবুক), বাংলানিউজ২৪, ঢাকা মেইল, আজকের দর্পণ, আমার বার্তা, ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস, ক্রিকফ্রেন্জি, বিডিক্রিকটাইম, সংবাদ প্রকাশ, ডেইলি বাংলাদেশ, একুশে সংবাদ, রাইজিং বিডি, সোনালী নিউজ, বাংলা২৪লাইভ নিউজপেপার, জুমবাংলা, ডেল্টা টাইমস, এমটিনিউজ২৪, তরঙ্গ নিউজ

একই দাবিতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন স্পোর্টস কিডা, ওপিইন্ডিয়া, ইটিভি ভারত।

একই দাবিতে গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজসহ অন্যান্য ব্যবহারকারীদের পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

একই দাবিতে গণমাধ্যমের ইউটিউব চ্যানেলসহ অন্যান্য ব্যবহারকারীদের ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতে মিচেল মার্শের বিরুদ্ধে মামলা বা এফআইআর দায়েরের দাবিটি সঠিক নয় বরং এক ব্যক্তির করা অভিযোগকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হলেও পুলিশ জানিয়েছে অভিযোগ আমলে নেয়া হয়নি। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে এক্সে (সাবেক টুইটার) ভারতের সংবাদমাধ্যম The Quint এর সাংবাদিক পিয়ুস রায়ের একটি টুইট নজরে আসে আমাদের। গত ২৪ নভেম্বরের উক্ত টুইটে পিয়ুস বলছিলেন, Bhrashtachar Virodhi Sena নামে একটি সংগঠনের জাতীয় প্রেসিডেন্ট পন্ডিত কেশব দেব মিচেল মার্শের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করতে একটি অভিযোগ পাঠিয়েছেন আলীগড়ের দিল্লী গেট পুলিশ স্টেশনে। পিয়ুস অভিযোগপত্রটির একটি ছবিও যুক্ত করেছেন টুইটে।

Image: X

আমরা এ বিষয়ে জানতে পন্ডিত কেশব দেবের সাথে কথা বলেছি। কেশব রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন, তিনি গত ২১ নভেম্বর এই অভিযোগটি থানায় পৌঁছে দেন৷ সেদিনের একটি ছবিও তিনি আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন। কেশব আমাদের কাছে স্থানীয় একটি পত্রিকার ক্লিপ পাঠিয়ে উক্ত সংবাদের বরাতে জানান, তার অভিযোগটির বিষয়ে ইন্সপেক্টর নরেন্দ্র শর্মা জানিয়েছেন, সাইবার সেলের মাধ্যমে এ বিষয়ে তদন্ত করা হবে। 

Image: Pandit Keshav

জনাব কেশব বলছেন, তিনি অভিযোগটির একটি কপি ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং ক্রীড়ামন্ত্রীর কাছেও পাঠিয়েছেন। 

ক্রীড়ামন্ত্রীকে পাঠানো অভিযোগটির কপি তিনি রিউমর স্ক্যানার টিমকেও দিয়েছেন৷ 

Image: Pandit Keshav

তবে আলীগড় পুলিশ বলছে, তারা এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ আমলে নেয়নি৷ আলীগড়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ম্রিগাঙ্ক শেখর পাঠক এক্সে এক ভিডিও বার্তার মাধ্যমে জানিয়েছেন, মার্শের বিরুদ্ধে আলিগড়ের কোনো থানাতেই কোনো অভিযোগ, মামলা বা এফআইআর আমলে নেয়া হয়নি। 

ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের ফ্যাক্টচেকার অঙ্কিতা দেশকারের কাছে এফআইআর এবং অভিযোগকে ভারতে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয় সে বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম আমরা। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন, এফআইআর তখনই করা যায় যখন অভিযোগকারী তার অভিযোগের বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত থাকেন। এর ফলে তিনি বিষয়টি নিয়ে তদন্তের আর্জি জানাতে পারেন। অভিযোগ যে কেউই জানাতে পারে এবং সেটা কেউ তুলেও নিতে পারে। তবে এফআইআর করা হলে তা আপনি তুলে নিতে পারবেন না। 

মূলত, সম্প্রতি ভারতে আইসিসি ওডিআই ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার দলের মিচেল মার্শের একটি ছবি ইন্টারনেটে  ছড়িয়ে পড়ে, যাতে দেখা যায় তিনি বিশ্বকাপ ট্রফির উপর পা তুলে বসে আছেন। পরবর্তীতে এই উদযাপনকে ভারতীয়দের জন্য অসম্মানজনক জানিয়ে ভারতের পণ্ডিত কেশব নামে এক ব্যক্তি মিচেল মার্শের বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর (কতিপয় গণমাধ্যমে মামলা দাবি) দায়ের করেছেন দাবিতে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হয়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এফআইআর বা মামলা নয়, পণ্ডিত কেশব এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ দিয়েছেন থানায়৷ তবে সেই অভিযোগ আমলে নেয়নি সংশ্লিষ্ট থানা। আলীগড় পুলিশ বলছে, মার্শের বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা এফআইআর হয়নি।

সুতরাং, বিশ্বকাপের ট্রফি পায়ের নিচে রাখাকে ভারতীয়দের জন্য অসম্মানজনক জানিয়ে ভারতের এক ব্যক্তির মিচেল মার্শের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করার ঘটনাকে মার্শের বিরুদ্ধে মামলা বা এফআইআর দায়ের করা হয়েছে দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

  • Statement from Pandit Keshav
  • Aligarh Police: Tweet 
  • Piyush Rai: Tweet 
  • Rumor Scanner’s own investigation