সম্প্রতি, ৯০ মিনিট দৈর্ঘ্যের ফুটবলে প্রথম থেকে ৯০ প্রতি মিনিটেই গোল করার রেকর্ড করা ফুটবল ইতিহাসে একমাত্র ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো দাবি করে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ৯০ মিনিট দৈর্ঘ্যের ফুটবলে প্রথম থেকে ৯০ প্রতি মিনিটেই গোল করার রেকর্ড করা ফুটবল ইতিহাসে একমাত্র ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো নন বরং রোনালদো ছাড়াও আরো অন্তত দুই ফুটবলার এই কৃতিত্ব অর্জন করেছেন।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ৯০ মিনিট ফুটবলের প্রতি মিনিটে গোল দেওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করা তিন ফুটবলার হলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ এবং লুইস সুয়ারেজ। সম্মানজনক এই কৃতিত্ব অর্জনের তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন হলে লুইস সুয়ারেজ। ২০২১ সালে লা লিগার একটি ম্যাচে গেতাফের বিরুদ্ধে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের হয়ে ৭৮ মিনিটে গোল দিয়ে এই তালিকায় যুক্ত হন তিনি।
ক্রীড়াভিত্তিক অনলাইন পোর্টাল ট্রিবুনায় ২০২১ সালের ২৩ সেপ্টেবরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনও একই তথ্য মিলেছে। মূলত, সাধারণত ফুটবল খেলা ৯০ মিনিটের হয়ে থাকে। এই ‘৯০ মিনিটের প্রতি মিনিটেই গোলের রেকর্ড করা ফুটবল ইতিহাসের একমাত্র ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো’ দাবি করে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। উক্ত দাবির বিপরীতে অনুসন্ধানে জানা গেছে, রোনালদো ছাড়াও এই কৃতিত্ব অর্জনের তালিকার আরো অন্তত দুই ফুটবলার রয়েছেন। এরা হলেন, দুই ফুটবলার হলেন উরুগুয়ের লুইস সুয়ারেজ ও সুইডেনের জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ।
উল্লেখ্য, পূর্বে একই দাবি লিওনেল মেসির নামে ছড়ালে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার জানায়, মেসি এখনো এই রেকর্ড গড়েননি। ১ মিনিটের মধ্যে গোল করতে পারলে ১ থেকে ৯০ মিনিটে প্রতি মিনিটে গোল দেওয়ার তালিকায় জায়গা করে নিবেন তিনি, যে তালিকায় ইতোমধ্যেই আরো অন্তত তিন ফুটবলার রয়েছেন।
সুতরাং, “ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোই একমাত্র ফুটবলার যিনি ফুটবল ইতিহাসে ১ থেকে ৯০ প্রতি মিনিটেই গোল করার রেকর্ড করেছেন” শীর্ষক দাবিটি বিভ্রান্তিকর।
গত পহেলা জানুয়ারি Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘এইমাত্র হাসিনাকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করলো প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়াল’ শীর্ষক শিরোনাম ও ‘সেনাবাহিনীর নির্দেশে নির্বাচন থেকে সরে দাড়ালো জাতীয় পার্টি’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার বার। ভিডিওটিতে প্রায় ৫ শত পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে।
পরবর্তীতে এই ভিডিওটি আরও একটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার করা হয়। সেটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সিইসি অবাঞ্চিত ঘোষণা করেননি এবং সেনাবাহিনীর নির্দেশে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে জাতীয় পার্টির সরে দাঁড়ানোর দাবিটিও সঠিক নয় বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ভিডিও ক্লিপ নিয়ে তৈরি একটি বিস্তারিত ভিডিও।
উক্ত ভিডিওটি’র কোথাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল কর্তৃক অবাঞ্চিত ঘোষণা করার দৃশ্য দেখানো হয়নি কিংবা এ সম্পর্কিত কোনো তথ্যেরও উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
তাছাড়া সেনাবাহিনীর নির্দেশে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে জাতীয় পার্টির সরে দাঁড়ানোর দাবিটির পক্ষেও ভিডিওটির বিস্তারিত অংশে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত ভিডিও ক্লিপগুলোর বিষয়ে আলাদা আলাদাভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
ভিডিও যাচাই- ০১
আলোচিত ভিডিওটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে বেসরকারি টেলিভিশন ‘চ্যানেল ২৪র ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ৪ অক্টোবর ‘নির্বাচন বর্জনের বিষয়ে যা বললেন জিএম কাদের’ শীর্ষক শিরোনামে জিএম কাদেরের বক্তব্য নিয়ে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
এই ভিডিওটি’র সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে দেখানো প্রথম ভিডিও ক্লিপটি’র অর্থাৎ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বক্তব্যের অংশের মিল পাওয়া যায়।
Video Comparison by Rumor Scanner
অর্থাৎ, এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
ভিডিও যাচাই- ০২
আলোচিত ভিডিওটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে বেসরকারি টেলিভিশন ‘চ্যানেল আই’ এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ৩১ ডিসেম্বর (২০২৩) ‘নির্বাচন বর্জন করেছেন জাতীয় পার্টির বরিশাল-২, ৫ ও বরগুনা-১ আসনের প্রার্থীরা’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
এই ভিডিওটি’র সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে দেখানো দ্বিতীয় ভিডিও ক্লিপটি’র মিল পাওয়া যায়।
Video Comparison by Rumor Scanner
অর্থাৎ, এই ভিডিওটি জাতীয় পার্টির সম্মিলিত নির্বাচন বর্জনের নয় বরং সেখানে দলটি’র বরিশাল-২, ৫ ও বরগুনা-১ আসনের প্রার্থীদের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণার উল্লেখ পাওয়া যায়।
তাছাড়া, মূলধারার গণমাধ্যম যুগান্তর এর অনলাইন সংস্করণে পহেলা জানুয়ারি ‘নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকব কিনা সময়ই বলে দেবে: জিএম কাদের’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, একদিনে দেশের পাঁচটি আসনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের কারণ হিসেবে দলটির চেয়ারম্যান ও রংপুর-৩ (সদর) আসনের প্রার্থী (লাঙ্গল) জিএম কাদের বলেন, প্রার্থিতা প্রত্যাহার হুমকির কারণেও হতে পারে, অর্থের অভাবেও হতে পারে। অনেক প্রার্থী অর্থশালী হয়ে থাকেন না, অর্থের কারণেও অনেকে নির্বাচন থেকে সরে যান।
জাতীয় পার্টি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে জিএম কাদের বলেন, নির্বাচন না আসা পর্যন্ত সঠিক করে বলা যাচ্ছে না। নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকব কিনা সেটা সময়ই বলে দেবে। সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করেন।
পাশাপাশি, মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল কর্তৃক অবাঞ্চিত ঘোষণার দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।
মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময়ে ইন্টারনেটে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের তথ্য প্রচারের প্রবণতা বাড়ছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত পহেলা জানুয়ারি Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘এইমাত্র হাসিনাকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করলো প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়াল’ শীর্ষক শিরোনাম ও সেনাবাহিনীর নির্দেশে নির্বাচন থেকে সরে দাড়ালো জাতীয় পার্টি’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। তবে অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে আলোচিত দাবিগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে, অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, আগামী ৭ জানুয়ারি রোববার ভোটগ্রহণের দিন রেখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
সুতরাং সিইসি কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবাঞ্চিত ঘোষণা এবং সেনাবাহিনীর নির্দেশে জাতীয় পার্টির নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, রাজশাহী-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি জামালপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মুরাদ হাসানকে জড়িয়ে শারীরিক সম্পর্কের বিষয়ে মন্তব্য করেছেন দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভিডিওটিতে মাহিয়া মাহিকে কথিত কন্ঠে বলতে শোনা যায়, উনি আমার সাথে এত বাজেভাবে সেক্স করছে যে আমি জাস্ট বলে বুঝাতে পারবো না। আমি অসুস্থ। আমি তিনদিন হচ্ছে যে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াতে পারি না। ইভেন আমি এখনো অসুস্থ। আমি আমার রিপোর্ট গুলা আপনাদের কাছে দেখাবো। আমার যে জরায়ুতে ইনফেকশন হয়ে গেছে।… (বানান এবং শব্দচয়ন অপরিবর্তিত)
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, মাহিয়া মাহি মুরাদ হাসানকে জড়িয়ে শারীরিক সম্পর্কের বিষয়ে সম্প্রতি কোনো মন্তব্য করেননি বরং মাহিয়া মাহি কর্তৃক সময় সংবাদকে দেওয়া নির্বাচনী প্রচারণা কেন্দ্রিক একটি বক্তব্যের ভিডিওর সাথে ভিন্ন ব্যক্তির অডিও যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি ভিন্ন দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
ভিডিও যাচাই
অনুসন্ধানে গত ৩১ ডিসেম্বর (২০২৩) ‘সময় টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে “ভোটের সব খবর জানতে চোখ রাখুন সময়ে” শীর্ষক ক্যাপশনে এ সংক্রান্ত মূল রিলস ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওতে থাকা মাহিয়া মাহির পোশাক, ব্যাকগ্রাউন্ড এবং গলায় ঝুলানো আইডি কার্ডের সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা মাহিয়া মাহির পোশাক, ব্যাকগ্রাউন্ড এবং গলায় ঝুলানো আইডি কার্ডের মিল পরিলক্ষিত হয়।
Video Comparison: Rumor Scanner
ভিডিওটিতে মাহিয়া মাহিকে বলতে শোনা যায়, “আসসালামু আলাইকুম! আমি মাহিয়া মাহি। ভোটের খুঁটিনাটি সব খবর জানতে চোখ রাখুন সময় টিভি’র ইউটিউব এবং ফেসবুক চ্যানেলে। আর ভিজিট করুন ইলেকশন ডট সময় নিউজ ডট টিভিতে।”
এছাড়া, সময় টিভি’র ফেসবুক পেজেও একই ভিডিও পাওয়া যায়।
অর্থাৎ, এই ভিডিওতে মাহি মুরাদ হাসানের বিষয়ে কোনো মন্তব্যই করেননি।
অডিও যাচাই
দেশীয় সংবাদমাধ্যম ডিবিসি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলে গত বছরের ২৩ নভেম্বর “পদের লোভ দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্কের অভিযোগ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত এক নারীর সংবাদ সম্মেলনের ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
১৩ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের সংবাদ সম্মেলনের ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ৯ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের পর থেকে উক্ত নারীর বক্তব্যের সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে মাহিয়া মাহির কথিত কন্ঠ ও বক্তব্যের মিল রয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পদ-পদবির লোভ দেখিয়ে তরুণীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে কোনাবাড়ি থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী আব্দুর রহমান মাস্টারের বিরুদ্ধে। ২৩ নভেম্বর গাজীপুরে সংবাদ সম্মেলনে ওই তরুণী এ অভিযোগ করেন।
মূলত, ২০২২ সালের নভেম্বরে গাজীপুরের এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে পদ-পদবির লোভ দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করার অভিযোগ তোলেন এক নারী। এ সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী নারীর বক্তব্যের কিছু অংশের অডিও কেটে নিয়ে গত ৩১ ডিসেম্বর রাজশাহী-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির ‘সময় টিভি’র প্রমোশন করার একটি ভিডিওর সাথে যুক্ত করে মাহিয়া মাহির বক্তব্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, মুরাদ হাসানের সাথে শারীরিক সম্পর্কের বিষয়ে মাহিয়া মাহির দেওয়া বর্ণনা দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি এডিটেড বা বিকৃত।
সম্প্রতি, জাতিসংঘের নির্দেশে নির্বাচন স্থগিত করলো প্রধান নির্বাচন কমিশনার শীর্ষক শিরোনাম এবং ৬ মাসের জন্য নির্বাচন স্থগিত করলো জাতিসংঘ, ভয়ে শেখ হাসিনা শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।
উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি দেখা হয়েছে সাড়ে চার হাজারেরও বেশি বার। ভিডিওটিতে প্রায় সাড়ে তিনশত পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, জাতিসংঘ আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্থগিত করার নির্দেশ দেয়নি এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনারও নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেননি। প্রকৃতপক্ষে ভিন্ন ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
ভিডিও যাচাই ০১
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে ২ মিনিট ২০ সেকেন্ডের ভিডিওটির শুরুতে বাংলা ভাষায় “স্থগিত হলো নির্বাচন, দেশটিতে গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিলো” শীর্ষক তথ্যে একটি সংবাদ প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে লক্ষ্য করা যায়।
পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বেসরকারি ইলেকট্রনিক মিডিয়া Jamuna TV এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ১ আগস্ট “মিয়ানমারের নির্বাচন স্থগিত, জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ালো জান্তা সরকার” শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদনের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison: Rumor Scanner
ভিডিও থেকে জানা যায়, মিয়ানমারে ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে গণতান্ত্রিক উপায়ে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু জরুরি অবস্থার কারণে নির্বাচনের সময়সীমা ৬ মাসের জন্য পিছিয়ে নেওয়া হয়। এটি সে-সময় ঐ ঘটনা নিয়ে প্রচারিত প্রতিবেদন।
অর্থাৎ, ৬ মাস নির্বাচন পেছানোর খবর গত বছরের আগস্ট মাসে মিয়ানমারের, বাংলাদেশের নয়।
ভিডিও যাচাই ০২
প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ অনুসন্ধান করে, বেসরকারি ইলেকট্রনিক মিডিয়া Boishakhi TV
এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর “সহিংসতার তথ্য উপাত্ত দিয়ে জাতিসংঘে বিএনপির চিঠি” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রকাশিত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison: Rumor Scanner
ভিডিও থেকে জানা যায়, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকারের কারচুপি সহিংসতার নানা তথ্য এবং উপাত্ত তুলে ধরে জাতিসংঘে চিঠি পাঠিয়েছে বিএনপি। গত ৩১ ডিসেম্বর অনলাইন ব্রিফিং এ দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ কথা জানান। এটি ঐ ঘটনা নিয়ে প্রচারিত প্রতিবেদন।
আলোচিত দাবির সত্যতা যাচাইয়ে জাতিসংঘের ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে এ সম্পর্কিত কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি। এছাড়া, আলোচিত দাবির প্রেক্ষিতে দেশিয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, আগামী ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এই নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে। এদিকে বিভিন্ন সময় এই নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে করার দাবি জানিয়েছে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি জাতিসংঘ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছে এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেছে দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায় দাবিটি সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৩ সালে মাসে মিয়ানমারে জরুরি অবস্থার কারণে নির্বাচনের সময়সীমা ৬ মাসের জন্য পিছিয়ে নেওয়া এবং একই বছরের ৩১ ডিসেম্বরে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন সরকারের কারচুপি সহিংসতার নানা তথ্য এবং উপাত্ত তুলে ধরে বিএনপি কর্তৃক জাতিসংঘে চিঠি পাঠানোর তথ্য নিয়ে দেশিয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ফুটেজ একত্রে যুক্ত করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, জাতিসংঘ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছে এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির ধূমপান করার একটি দৃশ্য যুক্ত করে “অতিরিক্ত নির্বাচন প্রচারনার কারনে এমপি মাহিয়া মাহি এখন অনেকটাই পাগল” শীর্ষক দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে।
ভিডিওগুলোর কমেন্ট সেকশকে অনেক নেটিজেনকেই বিষয়টি সত্য ভেবে নিয়ে মন্তব্য করতে দেখা গিয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নির্বাচনী প্রচারণার কারণে মাহিয়া মাহির বর্তমান অবস্থা দাবি করে প্রচারিত ভিডিওটি বাস্তব নয় বরং তার করা স্বপ্নবাজী সিনেমার একটি দৃশ্যকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে প্রচারিত ভিডিওর ওপরের অংশে থাকা মাহিয়া মাহির হতাশাগ্রস্থ অবস্থায় ধূমপান করার দৃশ্যটির অনুসন্ধানে বিজয় টেলিভিশন এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারী “কেন এত ধূমপান করছেন মাহি? স্বপ্নবাজী। Mahiya Mahi” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison : Rumor Scanner
এই প্রতিবেদনের স্বপ্নবাজী সিনেমায় মাহিয়া মাহির ধূমপান করার দৃশ্য নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবং এই দৃশ্যটিই আমরা আলোচিত ভিডিওতে দেখতে পাই।
পরবর্তীতে আলোচিত দাবিতে দেখানো মাহিয়া মাহির নির্বাচনী প্রচারণার ভিডিওটির অনুসন্ধানে অনলাইন পোর্টাল Daily Ekattor এর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ২০২৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর “যদি কিছু না পাড়ি তাইলে তো আর পরের বার ভোট চাইতে আসতে পারব না” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে (আর্কাইভ) পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে মাহিয়া মাহি নির্বাচনী প্রচারণায় ভোটারদের কাছে ভোট চাইতে দেখা যায়।
মূলত, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেব নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। উক্ত নির্বাচনে অংশগ্রহনকে কেন্দ্র করে প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনি। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি তার নির্বাচনী প্রচারণার একটি ভিডিওর সাথে ধূমপান করার একটি দৃশ্য যুক্ত করে “অতিরিক্ত নির্বাচন প্রচারনার কারনে এমপি মাহিয়া মাহি এখন অনেকটাই পাগল” শীর্ষক দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানার অনুসন্ধানে দেখেছে যে ২০২০ সালে তার অভিনীত সিনেমা স্বপ্নবাজী’র একটি দৃশ্যকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, মাহিয়া মাহির সিনেমার একটি দৃশ্য যুক্ত করে ‘অতিরিক্ত নির্বাচন প্রচারনার কারনে এমপি মাহিয়া মাহি এখন অনেকটাই পাগল’ শীর্ষক দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে ; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তার একটি বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটিতে উক্ত কর্মকর্তাকে বলতে শোনা যায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেদেরকে আমাদের কাছে সোপর্দ করেন। আর না হলে যে কোনো মূল্যে আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে আপনাদের বিরুদ্ধে যে কোনো প্রকার স্যাক্রিফাইস করা প্রয়োজন, যে কোনো প্রকার আত্মদান করা প্রয়োজন তা করতে প্রস্তুত আছি।
এ সংক্রান্ত ভিডিওটি পোস্ট করে দেশের জন্য ভাল একটা খবর পেলাম। আলহামদুলিল্লাহ। শীর্ষক লাইন লিখে সকলকে শেয়ার করতে আহ্বান জানানো হয়েছে। এই আহ্বান সাড়াও ফেলেছে নেটিজেনদের মধ্যে। ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিওটি এখন অবধি ১৫ লক্ষাধিক মানুষ দেখেছেন। শেয়ার করেছেন প্রায় ২১ হাজার মানুষ।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তার নাম মো. সাইফুল আবেদীন যিনি ২০২২ সালে সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি এবং চট্টগ্রামের এরিয়া কমান্ডার থাকাকালীন একটি অনুষ্ঠানে দেওয়া তার একটি বক্তব্যকে বিকৃত করে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, জনাব সাইফুল পাহাড়ের সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের উদ্দেশ্য করে উক্ত মন্তব্য করেন।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ইউটিউবে চ্যানেল২৪ এর চ্যানেলে ২০২২ সালের ২৭ মে প্রকাশিত ‘যুদ্ধ করতে চান? ৩০ মিনিটও টিকবেন না শীর্ষক শিরোনামের এ সংক্রান্ত মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিওর এক মিনিট সময় থেকে উক্ত ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে শান্তিচুক্তি সম্পাদন করেছেন। আমরা সবাই সেই শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসি। কারণ উনি বলেছেন, “আমরা পার্বত্য চুক্তি সম্পাদন করেছি এবং তা পূর্ণ বাস্তবায়ন করবো।” আমি আশা করবো, সরকারের পক্ষ থেকে যে কটি ধারা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি সেটি বাস্তবায়নের আগে যারা অস্ত্রধারী আছেন, তারা আপনাদের মাত্র দুইটি ধারা, সেই দুটি ধারা বাস্তবায়ন করেন। আপনারা অস্ত্র সমর্পন করেন এবং নিজেদের সোপর্দ করেন। আর না হলে যে কোনো মূল্যে আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে আপনাদের বিরুদ্ধে যে কোনো প্রকার স্যাক্রিফাইস করা প্রয়োজন, যে কোনো প্রকার আত্মদান করা প্রয়োজন তা করতে প্রস্তুত আছি।
Screenshot: YouTube
এই ভিডিওতে উক্ত ব্যক্তির নাম উল্লেখ না থাকলেও (আর্মি কমান্ডার পরিচয় উল্লেখ করা হয়েছে) এটা স্পষ্ট যে, তিনি প্রধানমন্ত্রীকে সেনাবাহিনীর কাছে নিজেকে সোপর্দ করতে বলেননি। তিনি মূলত, পাহাড়ে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের উদ্দেশ্য করে উক্ত মন্তব্য করেন।
স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, সে বছরের ২৬ মে রাঙামাটিতে পুলিশ লাইনস সুখী নীলগঞ্জে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নস এর পার্বত্য আঞ্চলিক দপ্তর ও তিন পার্বত্য জেলায় তিনটি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন কার্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে আলোচিত মন্তব্যটি করেন সেনাবাহিনীর সেসময়ের ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি এবং চট্টগ্রামের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মো. সাইফুল আবেদীন।
মূলত, ২০২২ সালে রাঙামাটির একটি সুধী সমাবেশে দেওয়া মন্তব্যে পাহাড়ের সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের উদ্দেশ্য করে সেনাবাহিনীর সেসময়ের ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি এবং চট্টগ্রামের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মো. সাইফুল আবেদীন বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে শান্তিচুক্তি সম্পাদন করেছেন। আমরা সবাই সেই শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসি। কারণ উনি বলেছেন, “আমরা পার্বত্য চুক্তি সম্পাদন করেছি এবং তা পূর্ণ বাস্তবায়ন করবো।” আমি আশা করবো, সরকারের পক্ষ থেকে যে কটি ধারা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি সেটি বাস্তবায়নের আগে যারা অস্ত্রধারী আছেন, তারা আপনাদের মাত্র দুইটি ধারা, সেই দুটি ধারা বাস্তবায়ন করেন। আপনারা অস্ত্র সমর্পন করেন এবং নিজেদের সোপর্দ করেন। আর না হলে যে কোনো মূল্যে আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে আপনাদের বিরুদ্ধে যে কোনো প্রকার স্যাক্রিফাইস করা প্রয়োজন, যে কোনো প্রকার আত্মদান করা প্রয়োজন তা করতে প্রস্তুত আছি।’ তার এই বক্তব্যের ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’ এবং ‘নিজেদের সোপর্দ করেন। আর না হলে যে কোনো মূল্যে আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে আপনাদের বিরুদ্ধে যে কোনো প্রকার স্যাক্রিফাইস করা প্রয়োজন, যে কোনো প্রকার আত্মদান করা প্রয়োজন তা করতে প্রস্তুত আছি।’ শীর্ষক লাইন যুক্ত করে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, ২০২২ সালে রাঙামাটিতে পাহাড়ের সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের উদ্দেশ্য করে সেনাবাহিনীর সেসময়ের কর্মকর্তা মেজর জেনারেল মো. সাইফুল আবেদীনের মন্তব্যকে প্রধানমন্ত্রীর নিজেকে সোপর্দ করা বিষয়ক মন্তব্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা বিকৃত।
সম্প্রতি, “আদালত অচলে বিপাকে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগের নির্দেশ দিল রাষ্ট্রপতি” শীর্ষক থাম্বনেইল এবং প্রায় সমজাতীয় দাবিসহ “বিএনপি পক্ষ নিলো সেনাবাহিনী” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ দেননি এবং সেনাবাহিনীর বিএনপির পক্ষ নোওয়া সংক্রান্ত ঘটনা ঘটেনি বরং কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি কয়েকটি সংবাদপাঠের ভিডিও এবং ভিন্ন ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।
উক্ত ভিডিওর সংবাদ উপস্থাপকের সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Comparison By Rumor Scanner
উক্ত ভিডিও থেকে জানা যায়, গত ০১ জানুয়ারি ন্যায়বিচারের দাবিতে আদালত বর্জনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পালন করেছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। এ উপলক্ষ্যে ঢাকার নিম্ন আদালত প্রাঙ্গণে মিছিল করে সংগঠনটি।
উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Comparison By Rumor Scanner
উক্ত ভিডিও থেকে জানা যায়, ভিডিওটি ২০২৩ সালের জুন মাসে সুপ্রিম কোর্টের সামনে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের বিক্ষোভ মিছিলের। ।
অর্থাৎ, ভিডিওটি পুরোনো ঘটনার এবং অপ্রাসঙ্গিকভাবে ফুটেজটি আলোচিত ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে।
এছাড়াও, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়ার দাবিটির সত্যতা জানা যায়নি। পাশাপাশি সেনাবাহিনীর বিএনপির পক্ষ নেওয়ার দাবির স্বপক্ষেও কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, বিএনপির ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনের সাথে সংহতি জ্ঞাপন করে ১লা জানুয়ারি থেকে ৭ই জানুয়ারি পর্যন্ত আপিল বিভাগ, হাইকোর্ট বিভাগসহ সারাদেশের সকল আদালত বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।
উল্লেখ্য, আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে গত ০৩ জানুয়ারি মাঠে নেমেছে সশস্ত্র বাহিনী। ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনীর এই কার্যক্রম চলবে বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর- আইএসপিআর থেকে জানানো হয়েছে।
মূলত, গত ২৭ ডিসেম্বর বিএনপিপন্থী জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম বিএনপির ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে পহেলা জানুয়ারি থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত আদালত বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গতকাল ০১ জানুয়ারি পূর্বঘোষিত পালন করেন বিএনপিপন্থী জাতীয়তাবাদী আইনজীবীরা। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে, “আদালত অচলে বিপাকে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগের নির্দেশ দিল রাষ্ট্রপতি” এবং “বিএনপির পক্ষ নিল সেনাবাহিনী” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিগুলো সঠিক নয়। রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ সংক্রান্ত কোনো ঘটনা ঘটেনি। এছাড়া সেনাবাহিনীর বিএনপির পক্ষ নেওয়ারও কোনো ঘটনা ঘটেনি। অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ভিডিওর খণ্ডাংশ যুক্ত করে করে তাতে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবির ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন এবং সেনাবাহিনী বিএনপির পক্ষ নিয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।
গত ৩০ ডিসেম্বর গণ অধিকার পরিষদের কফিন মিছিলে নেতা–কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় দলটির সভাপতি নুরুল হক নুর পুলিশের হাতে রক্তাক্ত হয়েছেন দাবি করে ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে যাতে শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ভিপি নুরের সাথে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ পুলিশের গুলিতে রক্তাক্ত ভিপি নুর এবং থাম্বনেইলে লেখা রয়েছে, ভিপি নুরের সাথে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ শুধু গুলি আর গুলি রক্তাক্ত ভিপি নুর।
উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ১১ হাজার বার। ভিডিওটিতে প্রায় চারশত পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত কফিন মিছিলে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের ধস্তাধস্তি হলেও পুলিশ কোনো গুলি চালায়নি এবং নুরুল হক নুরও রক্তাক্ত হননি।
আলোচিত দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ভিডিওটির কিছু কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে Newsbaba24 নামক ইউটিউব চ্যানেলে গত ৩১ ডিসেম্বর (২০২৩) “৭ তারিখের নির্বাচন পাতানো। কফিন মিছিলে পুলিশের বাধা” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison: Rumor Scanner
ভিডিও থেকে জানা যায়, গত ৩০ ডিসেম্বর (২০২৩) গণঅধিকার পরিষদের কফিন মিছিলে পুলিশ বাধা দেয়।
পরবর্তীতে এরই সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে জাতীয় দৈনিক মানবজমিন এর ওয়েবসাইটে গত ৩১ ডিসেম্বর (২০২৩) “পুলিশি বাধায় গণঅধিকারের কফিন মিছিল পণ্ড” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ৩০ ডিসেম্বর গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা ভোটাধিকার হরণ ও নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংসের প্রতিবাদে সমাবেশ ও কফিন মিছিল করে। সমাবেশ শেষে কফিন মিছিল করার সময় পুলিশ মারমুখী ভাবে প্রতিরোধ করে। কফিন মিছিল বন্ধ না করায় পুলিশ গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর ও সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খানের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে এবং কয়েকদফা ধাক্কা দিয়ে আটক করার হুমকি দেয়। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের সাথে ধস্তাধস্তি হয়। পরবর্তীতে পুলিশ কফিন লাথি দিয়ে ভেঙে ফেলে। পুলিশের এনন ধস্তাধস্তিতে গণঅধিকার পরিষদের বিভিন্ন শীর্ষ নেতৃবৃন্দ নিচে পড়ে গিয়ে আহত হন।
কফিন ভাঙচুরের পর নুরুল হক নুর বলেন, আপনারা দেখেছেন আমরা দুই-আড়াইশ’ লোক শান্তিপূর্ণ ভাবে মিছিল করতে চেয়েছিলাম। সেখানে পুলিশ বাধা দিয়েছে, গুণ্ডা-মাস্তানদের মতো লাথি দিয়ে আমাদের কফিনটি ভেঙে ফেললো। এটি কি পুলিশ করতে পারে? কোন আইনে তারা এসব করতে পারে? আমাদের চেয়ে পুলিশের সংখ্যা বেশি, তাদের অনেকের হাতে ইলেকট্রিক শক লাঠি, টিপ ছুরির মতো জিনিস ছিল। ভিড়ের মাঝে কাউকে ছুরিকাঘাত করা বা পুলিশেরই কোনো সদস্যকে ছুরিকাঘাত করে আমাদের ওপর দায় চাপাতো। যেভাবে ২৮শে অক্টোবর ছাত্রলীগ, যুবলীগকে দিয়ে পুলিশ হত্যা করে মির্জা ফখরুলদের আসামি করেছে।
উক্ত প্রতিবেদনে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের দেওয়া বক্তব্যে ছুরিকাঘাত হওয়ার সম্ভাবনা প্রকাশ করলেও তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে সরাসরি ছুরিকাঘাত করার অভিযোগ করেননি। এছাড়া, তার বক্তব্যের কোথাও পুলিশ কর্তৃক গোলাগুলি হওয়া এবং নুরুল হক নুর আহত হয়ে রক্তাক্ত হওয়ার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে অন্যান্য জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো, কালের কণ্ঠ, যুগান্তর, ইনকিলাব, দেশ রুপান্তর, কালবেলা পত্রিকার ওয়েবসাইটসহ দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত ভিডিও সংবাদ প্রতিবেদন এবং বেসরকারি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া বাংলা ভিশন প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদনেও পুলিশ কর্তৃক গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের ওপর গোলাগুলি এবং দলের সভাপতি নুরুল হক নুর রক্তাক্ত হয়ে আহত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি।
মূলত, গত ৩০ ডিসেম্বর (২০২৩) ভোটাধিকার হরণ ও নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংসের প্রতিবাদে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা সমাবেশ ও কফিন মিছিল করে। নেতাকর্মীরা সমাবেশ শেষে কফিন মিছিল করলে সেসময় পুলিশ মারমুখী ভাবে প্রতিরোধ করে এবং এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে দলটির সভাপতি নুরুল হক নুর ও সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খানসহ নেতাকর্মীদের সাথে ধস্তাধস্তি হয়। উক্ত ঘটনা নিয়ে পরবর্তীতে দেশীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তবে সম্প্রতি সেই ঘটনায় পুলিশ গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের ওপর গুলি চালিয়েছে এবং সভাপতি নুরুল হক নুর রক্তাক্ত হয়ে আহত হয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে দেখেছে, নুরুল হক নুর এ ঘটনার পর দেওয়া বক্তব্যে ছুরিকাঘাত হওয়ার সম্ভাবনা প্রকাশ করলেও তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে সরাসরি ছুরিকাঘাত করার অভিযোগ করেননি। গণমাধ্যমেও এমন কোনো তথ্য আসেনি।
সুতরাং, গত ৩০ ডিসেম্বরে গণঅধিকার পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত কফিন মিছিলে পুলিশ গুলি চালিয়েছে এবং সভাপতি নুরুল হক নুর রক্তাক্ত হয়ে আহত হয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে হ্যামব্রিক থমাস নামে ব্রিটিশ প্যান্থার্স ব্যাটালিয়নের কমান্ডার জেনারেল নিহত হয়েছেন দাবিতে একটি তথ্য ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, হামাস ও ইসরায়েলের চলমান সংঘাতে জেনারেল হ্যামব্রিক থমাস নামে ব্রিটিশ কোনো কমান্ডার নিহত হননি বরং ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর চিফ অফ জেনারেল স্টাফ জেনারেল স্যার প্যাট্রিক সান্ডারসের ছবি ব্যবহার করে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ব্যক্তির ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Daily Mail
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, উক্ত ব্যক্তির নাম জেনারেল স্যার প্যাট্রিক সান্ডারস। যাকে প্রতিবেদনটিতে সম্ভাব্য পরবর্তী চিফ অফ দ্য ডিফেন্স স্টাফ বলে উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবেদনে মূলত যুদ্ধ ক্ষেত্রে থাকা সৈনিকদের মানসিক অবস্থা নিয়ে তার করা আলোচনা নিয়ে লেখা হয়েছে।
পরবর্তীতে উক্ত নামের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের সরকারি ওয়েসাইট gov.uk তে জেনারেল স্যার প্যাট্রিক সান্ডারসের জীবনী খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: www.gov.uk
উক্ত জীবনী থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের জুন মাসে তিনি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (Chief of the General Staff) পদে নিয়োগ প্রাপ্ত হন এবং বর্তমানে এই পদেই বহাল রয়েছেন। ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত তিনি উক্ত পদে বহাল থাকবেন।
এছাড়াও তার জীবনী পর্যালোচনা করে জানা যায়, তিনি নর্দান আয়ারল্যান্ড, কসোভো, বসনিয়া, ইরাক এবং আফগানিস্তানে বিভিন্ন সময় নানা অভিযান পরিচালনা করেছেন। তবে তার জীবনীর কোথাও ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধে তার অংশ নেয়ার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি এবং ব্রিটিশ প্যান্থার্স ব্যাটালিয়ন নামের কোনো সশস্ত্র বাহিনীতেও তার কমান্ডার জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত থাকার তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে ‘প্যান্থার্স ব্যাটেলিয়ান’ নামের কোনো বিশেষ সশস্ত্র বাহিনী রয়েছে কিনা সে বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক নানা কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে PANTHER COMMAND AND LIAISON নামের এক ধরনের বিশেষ যানের সন্ধান পাওয়া যায়। উক্ত যানটি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে PANTHER CLV নামে পরিচিত।
এরা দুইজনই ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফের) সেনা সদস্য ছিল। তবে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে কোনো ব্রিটিশ সেনা সদস্য নিহত হওয়ার তথ্য নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে পাওয়া যায়নি।
মূলত, ২০২২ সালের ০৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলে আকস্মিক মিসাইল হামলা চালায় হামাস। পরবর্তীতে হামাসের হামলার জবাবে ফিলিস্তিনে হামলা চালায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। যা বর্তমানে যুদ্ধে রূপ লাভ করেছে। এতে দু’দেশের শত শত নিরস্ত্র নাগরিকের হতাহতের ঘটনার পাশাপাশি সামরিক সদস্যদেরও নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি-ইসরায়েল যুদ্ধে হ্যামব্রিক থমাস নামের কথিত ব্রিটিশ প্যান্থার্স ব্যাটালিয়নের কমান্ডার জেনারেল নিহত হয়েছেন এমন দাবির সাথে তার ছবি দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটি হ্যামব্রিক থমাস নামের কোনো ব্যক্তির নয় এবং ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে প্যান্থার্স ব্যাটালিয়ন নামের কোনো বিশেষ সশস্ত্র বাহিনীও নেই। উক্ত ছবিটি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর চিফ অফ দ্য জেনারেল স্টাফ জেনারেল প্যাট্রিক সান্ডারসের। তিনি হামাস-ফিলিস্তিনি যুদ্ধে কখনো অংশগ্রহণই করেননি।
সুতরাং, হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে হ্যামব্রিক থমাস নামের কথিত ব্রিটিশ প্যান্থার্স ব্যাটালিয়নের কমান্ডার জেনারেল মারা গিয়েছে দাবিতে একটি তথ্য ও ছবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, বাংলাদেশের ক্রিকেটার ও আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাগুরা-১ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সাকিব আল হাসানের কলাপাতায় ভাত খাওয়ার একটি ছবিকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে তার প্রচারণার সময়ের ছবি দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাকিব আল হাসানের আলোচিত এই ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং এটি ২০২২ সালে তার মাগুরার বাড়িতে পারিবারিক আয়োজনে অনুষ্ঠিত পিকনিকে ধারণকৃত ছবি।
অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম ‘কালের কণ্ঠ’র অনলাইন সংস্করণে ২০২২ সালের ২৭ ডিসেম্বর ‘কলাপাতায় ভাত খেলেন সাকিব, ভাইরাল ছবি’ শীর্ষক শিরোনামে আলোচিত ছবিটি’র অনুরূপ একটি ছবি নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Kalerkantho
উক্ত প্রতিবেদনে সাকিবের স্ত্রী উম্মে আহমেদ শিশিরের সে সময়ের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের বরাতে জানানো হয়, সাকিবের গ্রামের বাড়ি মাগুরায় পারিবারিক আয়োজনে অনুষ্ঠিত পিকনিকে উক্ত ছবিটি ধারণ করা হয়েছে।
পরবর্তীতে সাকিবের স্ত্রী উম্মে আহমেদ শিশিরের ভেরিফাইড ফেসবুক এবং ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে সেসময়ে অর্থাৎ ২০২২ সালের ২৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত পারিবারিক আয়োজনে অনুষ্ঠিত উক্ত পিকনিকের কিছু ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Sakib Ummey Al Hasan Facebook
তবে উক্ত ছবিগুলোর মধ্যে সাকিবের কলাপাতায় ভাত খাওয়ার আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া না গেলেও শিশিরের পোস্টে সাকিবের পোশাক এবং আনুষঙ্গিক বিষয়বস্তুর সাথে ভাইরাল ছবিটির আনুষঙ্গিক বিষয়বস্তুর মিল দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
মূলত, বাংলাদেশের ক্রিকেটার ও বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাগুরা-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে তিনি নিয়মিত নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। এরই প্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক সময়ে সাকিব আল হাসানের কলাপাতায় ভাত খাওয়ার একটি ছবিকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে তার প্রচারণার সময়ের ছবি দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং এটি ২০২২ সালে মাগুরায় পারিবারিক আয়োজনে অনুষ্ঠিত পিকনিকে সাকিবের কলাপাতায় ভাত খাওয়ার সময়ে ধারণকৃত ছবি।
সুতরাং, পারিবারিক পিকনিকে সাকিব আল হাসানের কলাপাতায় ভাত খাওয়ার পুরোনো ছবিকে সাম্প্রতিক দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।