সোমবার, অক্টোবর 14, 2024

রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগের নির্দেশ দেননি

- Advertisement -

সম্প্রতি, “আদালত অচলে বিপাকে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগের নির্দেশ দিল রাষ্ট্রপতি” শীর্ষক থাম্বনেইল এবং প্রায় সমজাতীয় দাবিসহ “বিএনপি পক্ষ নিলো সেনাবাহিনী” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

পদত্যাগের নির্দেশ

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে(আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ দেননি এবং সেনাবাহিনীর বিএনপির পক্ষ নোওয়া সংক্রান্ত ঘটনা ঘটেনি বরং কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি কয়েকটি সংবাদপাঠের ভিডিও এবং ভিন্ন ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।

ভিডিও যাচাই-১

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে DBC News এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি “জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আদালত বর্জন কর্মসূচি | DBC NEWS” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর সংবাদ উপস্থাপকের সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison By Rumor Scanner 

উক্ত ভিডিও থেকে জানা যায়, গত ০১ জানুয়ারি ন্যায়বিচারের দাবিতে আদালত বর্জনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পালন করেছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। এ উপলক্ষ্যে ঢাকার নিম্ন আদালত প্রাঙ্গণে মিছিল করে সংগঠনটি। 

ভিডিও যাচাই-২

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Channel 24 এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ১ জুন “সুপ্রিম কোর্টের সামনের সড়কে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মিছিলে পুলিশের বাধা । BNP lawyer | Channel 24” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison By Rumor Scanner

উক্ত ভিডিও থেকে জানা যায়, ভিডিওটি ২০২৩ সালের জুন মাসে সুপ্রিম কোর্টের সামনে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের বিক্ষোভ মিছিলের। । 

অর্থাৎ, ভিডিওটি পুরোনো ঘটনার এবং অপ্রাসঙ্গিকভাবে ফুটেজটি আলোচিত ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে।

এছাড়াও, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়ার দাবিটির সত্যতা জানা যায়নি। পাশাপাশি সেনাবাহিনীর বিএনপির পক্ষ নেওয়ার দাবির স্বপক্ষেও কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, বিএনপির ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনের সাথে সংহতি জ্ঞাপন করে ১লা জানুয়ারি থেকে ৭ই জানুয়ারি পর্যন্ত আপিল বিভাগ, হাইকোর্ট বিভাগসহ সারাদেশের সকল আদালত বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।

উল্লেখ্য, আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে গত ০৩ জানুয়ারি মাঠে নেমেছে সশস্ত্র বাহিনী। ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনীর এই কার্যক্রম চলবে বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর- আইএসপিআর থেকে জানানো হয়েছে।

মূলত, গত ২৭ ডিসেম্বর বিএনপিপন্থী জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম বিএনপির ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে পহেলা জানুয়ারি থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত আদালত বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গতকাল ০১ জানুয়ারি পূর্বঘোষিত পালন করেন বিএনপিপন্থী জাতীয়তাবাদী আইনজীবীরা। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে, “আদালত অচলে বিপাকে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগের নির্দেশ দিল রাষ্ট্রপতি” এবং “বিএনপির পক্ষ নিল সেনাবাহিনী” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিগুলো সঠিক নয়। রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ সংক্রান্ত কোনো ঘটনা ঘটেনি। এছাড়া সেনাবাহিনীর বিএনপির পক্ষ নেওয়ারও কোনো ঘটনা ঘটেনি। অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ভিডিওর খণ্ডাংশ যুক্ত করে করে তাতে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবির ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

সুতরাং, রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন এবং সেনাবাহিনী বিএনপির পক্ষ নিয়েছে দাবিতে  ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img