বৃহস্পতিবার, অক্টোবর 3, 2024
spot_img

কফিন মিছিলে নুরুল হক নুর গুলিবিদ্ধ হয়ে রক্তাক্ত হননি

গত ৩০ ডিসেম্বর গণ অধিকার পরিষদের কফিন মিছিলে নেতা–কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় দলটির সভাপতি নুরুল হক নুর পুলিশের হাতে রক্তাক্ত হয়েছেন দাবি করে ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে যাতে শিরোনাম দেওয়া হয়েছে  ভিপি নুরের সাথে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ পুলিশের গুলিতে রক্তাক্ত ভিপি নুর এবং থাম্বনেইলে লেখা রয়েছে, ভিপি নুরের সাথে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ শুধু গুলি আর গুলি রক্তাক্ত ভিপি নুর।

কফিন মিছিলে

উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ১১ হাজার বার। ভিডিওটিতে প্রায় চারশত পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত কফিন মিছিলে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের ধস্তাধস্তি হলেও পুলিশ কোনো গুলি চালায়নি এবং নুরুল হক নুরও রক্তাক্ত হননি। 

আলোচিত দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ভিডিওটির কিছু কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে Newsbaba24 নামক ইউটিউব চ্যানেলে গত ৩১ ডিসেম্বর (২০২৩) “৭ তারিখের নির্বাচন পাতানো। কফিন মিছিলে পুলিশের বাধা” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison: Rumor Scanner

ভিডিও থেকে জানা যায়, গত ৩০ ডিসেম্বর (২০২৩) গণঅধিকার পরিষদের কফিন মিছিলে পুলিশ বাধা দেয়।

পরবর্তীতে এরই সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে জাতীয় দৈনিক মানবজমিন এর ওয়েবসাইটে গত ৩১ ডিসেম্বর (২০২৩) “পুলিশি বাধায় গণঅধিকারের কফিন মিছিল পণ্ড” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ৩০ ডিসেম্বর গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা ভোটাধিকার হরণ ও নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংসের প্রতিবাদে সমাবেশ ও কফিন মিছিল করে। সমাবেশ শেষে কফিন মিছিল করার সময় পুলিশ মারমুখী ভাবে প্রতিরোধ করে। কফিন মিছিল বন্ধ না করায় পুলিশ গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর ও সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খানের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে এবং কয়েকদফা ধাক্কা দিয়ে আটক করার হুমকি দেয়। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের সাথে ধস্তাধস্তি হয়। পরবর্তীতে পুলিশ কফিন লাথি দিয়ে ভেঙে ফেলে। পুলিশের এনন ধস্তাধস্তিতে গণঅধিকার পরিষদের বিভিন্ন শীর্ষ নেতৃবৃন্দ নিচে পড়ে গিয়ে আহত হন।

কফিন ভাঙচুরের পর নুরুল হক নুর বলেন, আপনারা দেখেছেন আমরা দুই-আড়াইশ’ লোক শান্তিপূর্ণ ভাবে মিছিল করতে চেয়েছিলাম। সেখানে পুলিশ বাধা দিয়েছে, গুণ্ডা-মাস্তানদের মতো লাথি দিয়ে আমাদের কফিনটি ভেঙে ফেললো। এটি কি পুলিশ করতে পারে? কোন আইনে তারা এসব করতে পারে? আমাদের চেয়ে পুলিশের সংখ্যা বেশি, তাদের অনেকের হাতে ইলেকট্রিক শক লাঠি, টিপ ছুরির মতো জিনিস ছিল। ভিড়ের মাঝে কাউকে ছুরিকাঘাত করা বা পুলিশেরই কোনো সদস্যকে ছুরিকাঘাত করে আমাদের ওপর দায় চাপাতো। যেভাবে ২৮শে অক্টোবর ছাত্রলীগ, যুবলীগকে দিয়ে পুলিশ হত্যা করে মির্জা ফখরুলদের আসামি করেছে।

উক্ত প্রতিবেদনে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের দেওয়া বক্তব্যে ছুরিকাঘাত হওয়ার সম্ভাবনা প্রকাশ করলেও তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে সরাসরি ছুরিকাঘাত করার অভিযোগ করেননি। এছাড়া, তার বক্তব্যের কোথাও পুলিশ কর্তৃক গোলাগুলি হওয়া এবং নুরুল হক নুর আহত হয়ে রক্তাক্ত হওয়ার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

অনুসন্ধানে অন্যান্য জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো, কালের কণ্ঠ, যুগান্তর, ইনকিলাব, দেশ রুপান্তর, কালবেলা পত্রিকার ওয়েবসাইটসহ দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত ভিডিও সংবাদ প্রতিবেদন এবং বেসরকারি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া বাংলা ভিশন প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদনেও পুলিশ কর্তৃক গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের ওপর গোলাগুলি এবং দলের সভাপতি নুরুল হক নুর রক্তাক্ত হয়ে আহত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি।

মূলত, গত ৩০ ডিসেম্বর (২০২৩) ভোটাধিকার হরণ ও নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংসের প্রতিবাদে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা সমাবেশ ও কফিন মিছিল করে। নেতাকর্মীরা সমাবেশ শেষে কফিন মিছিল করলে সেসময় পুলিশ মারমুখী ভাবে প্রতিরোধ করে এবং এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে দলটির সভাপতি নুরুল হক নুর ও সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খানসহ নেতাকর্মীদের সাথে ধস্তাধস্তি হয়। উক্ত ঘটনা নিয়ে পরবর্তীতে দেশীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তবে সম্প্রতি সেই ঘটনায় পুলিশ গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের ওপর গুলি চালিয়েছে এবং সভাপতি নুরুল হক নুর রক্তাক্ত হয়ে আহত হয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে দেখেছে, নুরুল হক নুর এ ঘটনার পর দেওয়া বক্তব্যে ছুরিকাঘাত হওয়ার সম্ভাবনা প্রকাশ করলেও তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে সরাসরি ছুরিকাঘাত করার অভিযোগ করেননি। গণমাধ্যমেও এমন কোনো তথ্য আসেনি। 

সুতরাং, গত ৩০ ডিসেম্বরে গণঅধিকার পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত কফিন মিছিলে পুলিশ গুলি চালিয়েছে এবং সভাপতি নুরুল হক নুর রক্তাক্ত হয়ে আহত হয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img