সম্প্রতি, জাতিসংঘের নির্দেশে নির্বাচন স্থগিত করলো প্রধান নির্বাচন কমিশনার শীর্ষক শিরোনাম এবং ৬ মাসের জন্য নির্বাচন স্থগিত করলো জাতিসংঘ, ভয়ে শেখ হাসিনা শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।
উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি দেখা হয়েছে সাড়ে চার হাজারেরও বেশি বার। ভিডিওটিতে প্রায় সাড়ে তিনশত পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, জাতিসংঘ আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্থগিত করার নির্দেশ দেয়নি এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনারও নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেননি। প্রকৃতপক্ষে ভিন্ন ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
ভিডিও যাচাই ০১
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে ২ মিনিট ২০ সেকেন্ডের ভিডিওটির শুরুতে বাংলা ভাষায় “স্থগিত হলো নির্বাচন, দেশটিতে গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিলো” শীর্ষক তথ্যে একটি সংবাদ প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে লক্ষ্য করা যায়।
পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বেসরকারি ইলেকট্রনিক মিডিয়া Jamuna TV এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ১ আগস্ট “মিয়ানমারের নির্বাচন স্থগিত, জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ালো জান্তা সরকার” শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদনের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিও থেকে জানা যায়, মিয়ানমারে ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে গণতান্ত্রিক উপায়ে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু জরুরি অবস্থার কারণে নির্বাচনের সময়সীমা ৬ মাসের জন্য পিছিয়ে নেওয়া হয়। এটি সে-সময় ঐ ঘটনা নিয়ে প্রচারিত প্রতিবেদন।
অর্থাৎ, ৬ মাস নির্বাচন পেছানোর খবর গত বছরের আগস্ট মাসে মিয়ানমারের, বাংলাদেশের নয়।
ভিডিও যাচাই ০২
প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ অনুসন্ধান করে, বেসরকারি ইলেকট্রনিক মিডিয়া Boishakhi TV
এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর “সহিংসতার তথ্য উপাত্ত দিয়ে জাতিসংঘে বিএনপির চিঠি” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রকাশিত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিও থেকে জানা যায়, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকারের কারচুপি সহিংসতার নানা তথ্য এবং উপাত্ত তুলে ধরে জাতিসংঘে চিঠি পাঠিয়েছে বিএনপি। গত ৩১ ডিসেম্বর অনলাইন ব্রিফিং এ দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ কথা জানান। এটি ঐ ঘটনা নিয়ে প্রচারিত প্রতিবেদন।
আলোচিত দাবির সত্যতা যাচাইয়ে জাতিসংঘের ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে এ সম্পর্কিত কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি। এছাড়া, আলোচিত দাবির প্রেক্ষিতে দেশিয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, আগামী ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এই নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে। এদিকে বিভিন্ন সময় এই নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে করার দাবি জানিয়েছে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি জাতিসংঘ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছে এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেছে দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায় দাবিটি সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৩ সালে মাসে মিয়ানমারে জরুরি অবস্থার কারণে নির্বাচনের সময়সীমা ৬ মাসের জন্য পিছিয়ে নেওয়া এবং একই বছরের ৩১ ডিসেম্বরে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন সরকারের কারচুপি সহিংসতার নানা তথ্য এবং উপাত্ত তুলে ধরে বিএনপি কর্তৃক জাতিসংঘে চিঠি পাঠানোর তথ্য নিয়ে দেশিয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ফুটেজ একত্রে যুক্ত করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, জাতিসংঘ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছে এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।