Home Blog Page 39

বাংলাদেশের দোকানে ডাকাতির ভিডিও দাবিতে ভারতের ভিডিও প্রচার 

সম্প্রতি, “সুদি ইউনুসের সংস্কার,মুদি দোকান ডা’কাত দল লু’ট করার জন্য ভাং’চু’র করছে…! ২৯/০৭/২০২৫” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ডাকাতির এই ভিডিওটি বাংলাদেশের নয় বরং, এটি ভারতের মধ্য প্রদেশের ঘটনার ভিডিও।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ভারতীয় সাংবাদিক ‘Narendra Nath Mishra’ এর এক্স অ্যাকাউন্টে ২০২৫ সালের ৩ আগস্ট প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে।

Comparison: Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হয়, এটি ভারতের মধ্য প্রদেশের শিবপুরীর ঘটনা। 

পরবর্তীতে, আরেক ভারতীয় সাংবাদিক ‘Abhimanyu Singh Journalist’ এর এক্স অ্যাকাউন্টেও একই দাবিতে ভিডিওটি প্রচার হতে দেখা যায়। 

এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক অ্যাকাউন্টে একই তথ্যসংবলিত আলোচিত ভিডিওটি (,,) খুঁজে পাওয়া যায়।

অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়। 

সুতরাং, ভারতের মধ্য প্রদেশে দোকানে ডাকাতির দৃশ্যকে বাংলাদেশের দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

  • Narendra Nath Mishra – X post 

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধারের দাবিটি ভুয়া

সম্প্রতি, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্র্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ইউটিউবে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা উদ্ধারের দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ক্যাসিনোকাণ্ডের সাথে জড়িত গেণ্ডারিয়া আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা এনামুল হক এনু ও তার ভাই রুপন ভূঁইয়ার বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধারের ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রচারিত পুরোনো একটি প্রতিবেদনের ফুটেজকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার। পর্যালোচনায় ভিডিওটিতে ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম সময় টেলিভিশনের একটি লোগো দেখতে পাওয়া যায়। উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে সময় টিভির ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল এবং ওয়েবসাইট পর্যালোচনা করেও নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধারের কোনো সংবাদ বা ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি। পাশপাশি অন্যকোনো গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রেও এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

এছাড়াও সময় টিভির প্রতিবেদনে ব্যবহৃত সময় টিভির লোগোর অ্যানিমেশনের সাথে আলোচিত ভিডিওর লোগোর অ্যানিমেশনের পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। আলোচিত ভিডিওর ‘সময়’ লেখা লোগোটির অক্ষরগুলো উল্লম্বিকভাবে ঘুরতে দেখা যায়। অপরদিকে সময় টিভিতে প্রচারিত প্রতিবেদনের লোগোর অক্ষরগুলো অনুভূমিকভাবে ঘুরতে দেখা যায়। এছাড়াও সময়টিভির লোগোতে ‘সময়’ লেখার নিচে পৃথিবীর মানটিত্র রয়েছে। 

পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওর কয়েকটি কী-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে অনুসন্ধানে ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমে আরটিভি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর কোটি টাকা ও ৭২০ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার, আ.লীগের দুই নেতা পলাতক শীর্ষক শিরোানামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদনের সন্ধান পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner 

প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়,  উক্ত প্রতিবেদনের ১ মিনিট ১০ সেকেন্ড থেকে লকার ভাঙার ফুটেজ থেকে পরবর্তী বেশকিছু ফুটেজের সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে। আলোচিত ভিডিওটিতে ব্যবহৃত টাকা উদ্ধারের ফুটেজগুলোর সাথে আরটিভির প্রতিবেদনে থাকা ফুটেজগুলোর মিল লক্ষ্য করা যায়।

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, উক্ত ভিডিওটি ২০১৯ সালে অবৈধ ক্যাসিনো বাণিজ্যের সাথে জড়িত ঢাকার গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক ভূঁইয়া এবং তার ভাই ও একই সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রূপন ভূঁইয়ারসহ তাদের সহযোগী ও কর্মচারীদের বাসায় র‌্যাবের অভিযান চালিয়ে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার এবং অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনার। 

একই ঘটনায় সেসময় আরেক ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। যা থেকেও একই তথ্য জানা যায়। 

সুতরাং, এনসিপির নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা উদ্ধারের দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

ভারতের বেঙ্গালুরুতে বাড়ির ভেতরে ঢুকে হামলার ঘটনাকে বাংলাদেশের ঘটনা দাবিতে প্রচার

সম্প্রতি, বাংলাদেশের বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হচ্ছে, ‘আমার এই বাংলাদেশে কোন নিরাপত্তা নেই.. আপনি যে আপনার ঘরে থাকবেন সেই নিরাপত্তাটুকু পর্যন্ত নেই.. কিভাবে এ দেশে আপনি বাঁচবেন.. ভিডিওটা ভালো করে সবাই দেখেন.. যদি সুযোগ হয় তাহলে অন্যকে দেখার সুযোগ করে দেবেন শেয়ার করুন।’ (বানান অপরিবর্তিত)

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাড়ির ভেতরে ঢুকে হামলার এই ঘটনাটি বাংলাদেশের নয়। বরং, ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের বেঙ্গালুরুর ঘটনাকে বাংলাদেশের ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের স্থানীয় ডিজিটাল সংবাদ প্ল্যাটফর্ম ‘Guarantee News’ -এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ৩০ এপ্রিল ‘ಲಾಂಗ್ & ಮಚ್ಚುಗಳ ಸಮೇತ ಅ*ಟ್ಯಾಕ್ ಮಾಡ್ತಿರುವ EXCLUSIVE ಸಿಸಿಟಿವಿ ದೃಶ್ಯ’ ক্যাপশনে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির একটি দীর্ঘসংষ্করণ খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির ক্যাপশন বর্ণনায় #bengaluru #family #bengalurucity #bengalurunews হ্যাশগুলো ব্যবহার করা হয়েছে।

Comparison : Rumor Scanner

পরবর্তীতে, হ্যাশট্যাগে পাওয়া তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ভারতের তেলুগু ভাষার সংবাদ প্লাটফর্ম ‘ఉత్తరాంధ్ర నౌ!’ (Uttarandhra Now) -এর এক্স অ্যকাউন্টে ভিডিওটি গত ১ মে প্রচার হতে দেখা যায়। ভিডিওর ক্যাপশন থেকে জানা যায়, এটি বেঙ্গালুরুতে একটি পরিবারের ওপর হামলার ঘটনার।

এছাড়াও, ভিডিওটি ‘BJP Karnataka’ নামক এক্স অ্যাকাউন্ট থেকেও একই দাবিতে প্রচার হতে দেখা যায়।

Screenshot: BJP Karnataka (X Account)

তেলেগুর স্থানীয় গণমাধ্যম ‘M9 NEWS’ -এর ওয়েবসাইটে এই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মহাদেবপুরা BBMP-এর কর্মী শ্রুতি স্থানীয় কুখ্যাত সন্ত্রাসী লাঙ্গু মাচ্চু ডনাসহ একটি দল নিয়ে প্রভু নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে জোর করে প্রবেশ করে। সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে হামলাকারীরা প্রভুকে মারাত্মকভাবে আহত করার অভিযোগ উঠেছে।

অর্থাৎ, এটি নিশ্চিত যে বিল্ডিংয়ের ভেতরে ঢুকে হামলার এই ঘটনাটি বাংলাদেশের নয়।, 

সুতরাং, ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের বেঙ্গালুরুতে বাড়ির ভেতরে ঢুকে হামলার একটি ভিডিওকে বাংলাদেশের ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্য।

তথ্যসূত্র

কোটা সংস্কার আন্দোলনের ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ে শিবির ও বামদের সংঘর্ষের দাবিতে প্রচার 

গত ৫ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রদর্শনীতে একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত ব্যক্তিদের ছবি রাখা হলে বামপন্থী বিভিন্ন সংগঠনের ক্ষোভের মুখে তা সরিয়ে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরবর্তীতে উক্ত ঘটনায় ঘৃণা মিছিল করেছে বামপন্থী সংগঠনগুলো এবং একই সময়ে এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রশিবির। বামপন্থী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মী ও শিবির সমর্থকদের পাল্টাপাল্টি স্লোগানে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা। এরই প্রেক্ষিতে, “মধ্যে রাতে ঢা’কা বি’শ্ববিদ্যালয়ে রাজাকারের ছবি সরানো কেন্দ্র করে বাম শি’ক্ষার্থীদের সাথে শি’বির ও পু’লিশের ত্রি-মুখী সং’ঘ’র্ষ চলছে” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে উক্ত দাবিতে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। এছাড়া, গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত ব্যক্তিদের ছবি সরানোকে কেন্দ্র করে বামপন্থীদের সাথে শিবিরের উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেও সংঘর্ষের কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে, এটি গতবছরের জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের ঘটনার ভিডিওটি।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে কী-ফ্রেমের রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ‘7 College News’ নামক ফেসবুক পেজে ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস | শিববাড়ী আবাসিক এলাকার সামনে” শীর্ষক ক্যাপশনে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির ১৩ সেকেন্ড অংশ থেকে ১ মিনিট ৩৭ সেকেন্ড অংশের মিল রয়েছে।

Comparison: Rumor Scanner

ভিডিওটির ক্যাপশনে স্থান হিসেবে শিববাড়ী আবাসিক এলাকার উল্লেখ রয়েছে। সেই সূত্র ধরে গুগল ম্যাপে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল টাওয়ারের সামনের এলাকায় অবস্থিত। রাস্তার মোড় ও আশপাশের একাধিক ভবনের বিন্যাস বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, ভিডিওটি ওই স্থানেই ধারণ করা হয়েছে।

Collage: Rumor Scanner

এছাড়া, সেসময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশিত একই তথ্যসংবলিত আলোচিত ভিডিওটি (,,) খুঁজে পাওয়া যায়।

সুতরাং, ২০২৪ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময়ের ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত ব্যক্তিদের ছবি সরানোকে কেন্দ্র করে বাম শিক্ষার্থীদের সাথে শিবির ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষের দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

আওয়ামী লীগের মিছিলে পুলিশের গুলির দৃশ্য দাবিতে  ২০২৪ সালের কোটা আন্দোলনের ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি ‘পুলিশ সরাসরি আওয়ামীলীগের মিছিলের উপর গুলি করছে…!! জুলাই ঘোষণাপত্রের বিরুদ্ধে আওয়ামীলীগ,ছাত্রলীগ একযোগে ঢাকায় মাঠে নেমেছে।’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)৷

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। ঢাকায় জুলাই ঘোষণাপত্রের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনকালীন সময়ের ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নিউইয়র্ক প্রবাসী ফাতেমা নাজনীন প্রিসিলা এর ফেসবুক পেজে ২০১৪ সালের ১৯ জুলাই প্রকাশিত পোস্টে একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়৷ উক্ত ছবির সাথে প্রচারিত ভিডিওটির দৃশ্যের সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। 

পোস্টটির ক্যাপশন থেকে প্রতীয়মান হয়, ছবিটি ২০২৪ সালের জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময়ে আন্দোলনকারীদের ওপর  আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিবর্ষণের ঘটনার।

পরবর্তীতে, GOOD Bay নামক ফেসবুক পেজে ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই প্রকাশিত পোস্টে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে প্রচারিত ভিডিওটির সাদৃশ্য রয়েছে। 

পোস্টটির ক্যাপশন থেকে আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে একই তথ্য জানা যায়।

অর্থাৎ, ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। 

সুতরাং, সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণের ভিডিও দাবিতে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকালীন সময়ের ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

শেখ হাসিনাকে পুনরায় ক্ষমতায় দেখতে চাওয়া সংক্রান্ত এফবিসিসিআই সভাপতির বক্তব্যটি দুই বছর পুরোনো 

সম্প্রতি, “শেখ হাসিনা সরকারকেই আবারো ক্ষমতায় দেখতে চান এফবিসিসিআই সভাপতি” শিরোনামে একটি ভিডিও টিকটকে প্রচার করা হয়েছে। 

এই প্রতিবেদন লেখা অবধি টিকটকে ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ৪ লক্ষ ৯৩ হাজার বারেরও বেশি। এছাড়াও ভিডিওটিতে প্রায় ১ হাজার ৩ শত এর বেশি পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে এবং ভিডিওটি ৩ হাজার ৭ শতবারেরও বেশি শেয়ার করা হয়েছে। 

উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় দেখতে চেয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতির বক্তব্যটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৩ সালের ১৫ জুলাই বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ব্যবসায়ীদের করণীয়’ শীর্ষক সম্মেলনে এফবিসিসিআই সভাপতির দেওয়া পুরোনো এই বক্তব্য সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে দেশিয় মূলধারার ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম বাংলা ভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ১৫ জুলাই “শেখ হাসিনা সরকারকেই আবারো ক্ষমতায় দেখতে চান এফবিসিসিআই সভাপতি” শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সঙ্গে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির দৃশ্যের হুবহু মিল রয়েছে। 

Video Comparison by Rumor Scanner

পরবর্তীতে, উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ১৬ জুলাইয়ে “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আবারও ক্ষমতায় চান ব্যবসায়ীরা” শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot from Prothom Alo

প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, ২০২৩ সালের ১৫ জুলাই বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ব্যবসায়ীদের করণীয়’ শীর্ষক সম্মেলনে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন তার স্বাগত বক্তব্যের শেষ দিকে বলেন, শেখ হাসিনাকে আবারও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান। তিনি ছাড়াও আরও ৩১ জন ব্যবসায়ী উক্ত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। তাঁদের বেশির ভাগ সরাসরি বলেছেন, আগামী মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনাকে চান তাঁরা। 

অর্থাৎ, এফবিসিসিআই সভাপতির দেয়া এই বক্তব্যটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় তা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে। 

সুতরাং, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পুনরায় ক্ষমতায় দেখতে চান দাবিতে এফবিসিসিআই সভাপতির দেয়া একটি বক্তব্যের দৃশ্য সাম্প্রতিক সময়ের দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

৫ আগস্ট পিটার হাস বিমানবন্দরের দোলনচাঁপা ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করেছেন দাবিতে ভুয়া তালিকা প্রচার

0

গতকাল (৫ আগস্ট) জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পাঁচ শীর্ষস্থানীয় নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, মুখ্য সমন্বয়ক; সারজিস আলম, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল); হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল); তাসনিম জারা, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব এবং খালেদ সাইফুল্লাহ, যুগ্ম আহ্বায়ক হঠাৎ কক্সবাজারে যান। এ সফর ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন ছড়িয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিতে কক্সবাজার গেছেন। তবে মূলধারার একাধিক গণমাধ্যম নিজস্ব সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, পিটার হাস বর্তমানে বাংলাদেশে নেই, তিনি অবস্থান করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে।

এই গুঞ্জনের মধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) দোলনচাঁপা ভিআইপি-২ লাউঞ্জ ব্যবহারকারীদের একটি কথিত তালিকা ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দাবি করা হয়, পিটার হাস হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ওই ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করেছেন।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া কিছু পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

একই দাবিতে এক্সে প্রচারিত পোস্ট দেখুন: এখানে

ইউটিউবে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক


রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দোলনচাঁপা ভিআইপি-২ লাউঞ্জ ব্যবহার করেছেন বলে প্রচারিত তালিকাটি সত্য নয়। বরং, তালিকাটিতে একাধিক অসঙ্গতি রয়েছে এবং সেখানে যে কর্মকর্তার সিল ব্যবহার করা হয়েছে, সেই নামে বিমানবন্দরে কোনো কর্মকর্তা নেই।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে সাংবাদিক সাদ্দিফ অভির ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। সেখানে তিনি ছড়িয়ে পড়া কথিত ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারকারীদের তালিকাটি ভুয়া হওয়ার পক্ষে কয়েকটি যুক্তি তুলে ধরেন।

প্রথমত, তালিকায় উল্লেখ থাকা এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট EK 583 সাধারণত সকালে ঢাকা থেকে দুবাইয়ের উদ্দেশে ছেড়ে যায় কিন্তু তালিকায় লাউঞ্জ ব্যবহারের সময় দেওয়া হয়েছে সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিট। দ্বিতীয়ত, তালিকায় থাকা মেসবাহ উদ্দিন চৌধুরী ২০২২ সালে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন কিন্তু তিনি গত বছরের আগস্টে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব পদ থেকে ওএসডি হন। তৃতীয়ত, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা রুহুল আলম সিদ্দিকী প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের পর অবসর নিয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। চতুর্থত, যে কর্মকর্তার নাম ও সিল ব্যবহার করে এই তথাকথিত তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট বিভাগে সে নামে কোনো সহকারী পরিচালক নেই। বরং ওই বিভাগে সহকারী পরিচালক হিসেবে অনেক বছর ধরে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা আছেন।

পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় অনেক নেটিজেন কথিত তালিকাটির একাধিক উল্লেখযোগ্য অসঙ্গতি তুলে ধরেছেন। তারা দেখিয়েছেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নামের পাশে পদবি হিসেবে ‘Ambassador’ না লিখে বানান ভুল করে লেখা হয়েছে ‘Embassador’ এবং তালিকাটিতে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নাম ভুলভাবে ‘বেসরকারি’ বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে আরও উঠে আসে, কথিত তালিকাটিতে শাহরিয়ার চৌধুরী নামে এক ব্যক্তির সিল রয়েছে, যাকে ‘এন্ডসেক আইডি পারমিট’-এর সহকারী পরিচালক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কিংবা বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কর্মকর্তাদের তালিকায় (,) এই নামে বা পদবিতে কোনো কর্মকর্তার অস্তিত্ব মেলেনি।

তালিকায় ব্যবহৃত ‘এন্ডসেক’ শব্দটির কাছাকাছি বানানে ‘এভসেক আইডি পারমিট, সহকারী পরিচালক’ পদে নাসিমা শাহীন নামের এক নারী কর্মকর্তার নাম পাওয়া যায়। বিষয়টি নিশ্চিত করতে রিউমর স্ক্যানার তার সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি জানান, তালিকাটি ভুয়া এবং এমন কোনো তথ্য বা উপাত্ত তাদের কাছে নেই। তিনি আরও বলেন, এন্ডসেক নামে কিছু নেই, এভসেক নামে আছে।

সুতরাং, সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দোলনচাঁপা ভিআইপি-২ লাউঞ্জ ব্যবহার করেছেন দাবিতে প্রচারিত তালিকাটি সম্পূর্ণ ভুয়া ও বানোয়াট।

তথ্যসূত্র

  • Rumor Scanner’s analysis.
  • Saddif Ovee: Facebook Post 
  • Statement from Nasima Shaheen Assistant Director (Avsec ID Permit) 

‘৫ই আগস্ট অভ্যুত্থান দিবস হতে পারে না’ বক্তব্য সম্বলিত পুলিশ সদস্যের এই সাক্ষাৎকারটি এআই দিয়ে তৈরি

গতকাল ৫ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। ভিডিওটিতে দেখা যায় একজন সাংবাদিককে বাংলাদেশ পুলিশের ইউনিফর্ম সদৃশ পোশাক পরিহিত অবস্থায় একজন ব্যক্তি বলছেন, “আজ ৫ই আগস্ট অভ্যুত্থান দিবস হতে পারে না। আজ একদিনে ৩২০০ পুলিশ সদস্যকে সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছে। তাই, আজ পুলিশ হত্যা দিবস।”

ভিডিওটি প্রচার করে ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “আজ ৫ই অগাস্ট কোনো অভ্যুত্থান দিবস হতে পারেনা। আজকের এই দিনে ৩২০০ পুলিশ হ** করেছিল জ & ঙ্গিরা। সুতরাং আজকে পুলিশ  হ & ত্য| দিবস।”

উক্ত পোস্টটির মন্তব্য সেকশন পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, অনেকেই ভিডিওটি আসল ধরে মন্তব্য করছেন।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ৫ই আগস্ট অভ্যুত্থান দিবস হতে পারে না শীর্ষক বক্তব্য সম্বলিত পুলিশ সদস্যের এই সাক্ষাৎকারের ভিডিওটি আসল নয় বরং, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও।

ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কোনো বিশ্বস্ত গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে ভয়েস ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাতেও খানিকটা অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয় যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি কনটেন্টে পরিলক্ষিত হয়।

প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে তাতে ‘Nizamul Islam Saif’ নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধান করলে ‘Nizamul Islam Saif’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ৫ আগস্টে সম্ভাব্য মূল ভিডিওটি পাওয়া যায়। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে তাতে এআই লেবেলের সংযুক্তি দেখা যায় যা কোনো কনটেন্ট এআই দিয়ে তৈরি বুঝাতে পোস্টকারী সংযুক্ত করে থাকেন।

Comparison : Rumor Scanner

এছাড়া, ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে ভিডিওটির নিচের ডান কোণে ‘Veo’ নামের একটি জলছাপ ও এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্টের লেবেল দেখতে পাওয়া যায়।

Screenshot of Claimed Video

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘Veo’ গুগলের একটি উন্নত এআই টুল, যা টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড।

এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওটি এআই প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।

সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি একটি ভিডিওকে ৫ই আগস্ট অভ্যুত্থান দিবস হতে পারে না শীর্ষক বক্তব্য সম্বলিত পুলিশ সদস্যের সাক্ষাৎকারের আসল দৃশ্য দাবি করে অনলাইনে প্রচার করা হয়েছে, যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

বিএনপি-জামায়াতের সংঘর্ষ দাবিতে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষের ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি ‘এই মুহুর্তে আব্দুল্লাহপুর বিএনপি জামায়াতের দুই পক্ষের সংঘর্ষ ভয়াবহতার রূপ নিয়েছে। সাধারণ মানুষের ঘর বাড়িতে হামলা হচ্ছে..’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)৷

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি আব্দুল্লাহপুরে বিএনপি-জামায়াতের কোনো সংঘর্ষের ঘটনার নয় এবং ০৩ আগস্ট বিএনপি-জামায়াতের এমন কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে, কিশোরগঞ্জের আব্দুল্লাপুর গ্রামে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষের ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে৷ 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম চ্যানেল আইয়ের ফেসবুক পেজে গত ০১ জুলাই প্রকাশিত পোস্টে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওতে থাকা দৃশ্যাবলীর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল রয়েছে। 

Comparison: Rumor Scanner 

পোস্টটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। গত ০১ জুলাই সকালে উপজেলার খয়েরপুর-আব্দুল্লাপুর ইউনিয়নের আব্দুল্লাপুর গ্রামে ঘটে এ সহিংস ঘটনা। সংঘর্ষ চলাকালে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি কামাল পাশা ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক ফরহাদ আহমেদের মধ্যে পারিবারিক ও রাজনৈতিক বিরোধ চলছিল। এই পুরনো দ্বন্দ্বই রূপ নেয় সহিংসতায়। 

একই বিষয়ে অনলাইন গণমাধ্যম ঢাকা মেইলের ওয়েবসাইটে গত ০১ জুলাই ‘অষ্টগ্রামে বিএনপির দুই পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে আহত ৪০’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও একই ধরণের চিত্র ও তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়। 

উল্লিখিত গণমাধ্যম দুইটির প্রতিবেদনেও আলোচিত ভিডিওর আলোচিত সংঘর্ষে জামায়াতে ইসলামীর সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, আব্দুল্লাহপুরে বিএনপি-জামায়াতের সংঘর্ষের ভিডিও দাবিতে কিশোরগঞ্জের আব্দুল্লাপুর গ্রামে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষের ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

৩ আগস্ট পুলিশের সাথে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের দৃশ্য দাবিতে ২০২৪ সালের রাবির কোটা আন্দোলনের ভিডিও প্রচার 

গত ০৩ আগস্ট রাজধানীর শাহবাগে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

এরই প্রেক্ষিতে, ‘০৩-০৮-২০২৫ আজ এই মুহুর্তে শাহবাগে সমাবেশ শেষে, বিএনপির নেতাকর্মীরা রাস্তায় যাওয়ার পথে এনসিপির বিরুদ্ধে স্লোগান দিলে, ঢাকায় বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ চলছে’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং ছাত্রদলের ০৩ আগস্টের সমাবেশকে ঘিরে এমন কোনো সংঘর্ষের তথ্যও পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি গত বছরের জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনার। 

অনুসন্ধানে ‘Deep Pain’ নামক একটি ফেসবুক পেজ থেকে গত বছরের ১৭ জুলাই প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে। 

Video Comparison By Rumor Scanner 

পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, প্রচারিত ভিডিওটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনার। 

উক্ত সূত্র ধরে অনুসন্ধানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ডিবিসি নিউজের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি এমএইচ সাইফুর রহমানের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকেও একই তারিখে উক্ত ভিডিওটি পোস্ট হতে দেখা যায়। সাইফুর রহমান তার পোস্টে বলেন, দৃশ্যটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে র‍্যাব, পুলিশ ও বিজিবির টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপের। 

এরপর প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বাংলা ট্রিবিউনের ওয়েবসাইটে গত বছরের ১৭ জুলাই “রাজশাহী বিশ্বদ্যিালয়ে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ১৭ জুলাই সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজশাহী বিশ্বদ্যিালয়ে (রাবি) পুলিশের সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেট হয়ে ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রবেশ করে পুলিশ। এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ সময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে ইটভাঙা শুরু করেন। ভাঙা ইট ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখেন জোহা চত্বর সংলগ্ন প্যারিস রোডে। সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটের দিকে টিয়ারশেল ছুড়ে পুলিশ। এতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলেও কিছু সময় পরে আবারও একত্রিত হয়ে স্লোগান দিতে শুরু করেন। পুলিশের প্রায় ৩০ মিনিট অভিযানের পর শিক্ষার্থীরা আবারও ছত্রভঙ্গ হয়ে যান তারা। এতে সাংবাদিকসহ অনেক শিক্ষার্থী টিয়ারশেলে আহত হন।

অনলাইন সংবাদমাধ্যম ঢাকা পোস্টও সেসময় একই তথ্যে সেসময় সংবাদ প্রকাশ করেছে। 

বিষয়টি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ডিবিসি নিউজের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি এমএইচ সাইফুর রহমানের সাথে কথা বলে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি জানান, প্রচারিত ভিডিওটি গত বছরের ১৭ জুলাই সন্ধ্যায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপের ঘটনার।

অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটি ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই তারিখে রাবিতে শিক্ষার্থীদের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনার।

পাশাপাশি, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গত০৩ আগস্ট ছাত্রদলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকায় পুলিশের সাথে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের কোনো তথ্য গণমাধ্যমে পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, গত বছরের জুলাই মাসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনার ভিডিওকে গত০৩ আগস্ট ছাত্রদলের সমাবেশের পর পুলিশের সাথে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র