গত ০৩ আগস্ট রাজধানীর শাহবাগে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এরই প্রেক্ষিতে, ‘০৩-০৮-২০২৫ আজ এই মুহুর্তে শাহবাগে সমাবেশ শেষে, বিএনপির নেতাকর্মীরা রাস্তায় যাওয়ার পথে এনসিপির বিরুদ্ধে স্লোগান দিলে, ঢাকায় বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ চলছে’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং ছাত্রদলের ০৩ আগস্টের সমাবেশকে ঘিরে এমন কোনো সংঘর্ষের তথ্যও পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি গত বছরের জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনার।
অনুসন্ধানে ‘Deep Pain’ নামক একটি ফেসবুক পেজ থেকে গত বছরের ১৭ জুলাই প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে।

পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, প্রচারিত ভিডিওটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনার।
উক্ত সূত্র ধরে অনুসন্ধানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ডিবিসি নিউজের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি এমএইচ সাইফুর রহমানের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকেও একই তারিখে উক্ত ভিডিওটি পোস্ট হতে দেখা যায়। সাইফুর রহমান তার পোস্টে বলেন, দৃশ্যটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপের।
এরপর প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বাংলা ট্রিবিউনের ওয়েবসাইটে গত বছরের ১৭ জুলাই “রাজশাহী বিশ্বদ্যিালয়ে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ১৭ জুলাই সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজশাহী বিশ্বদ্যিালয়ে (রাবি) পুলিশের সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেট হয়ে ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রবেশ করে পুলিশ। এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ সময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে ইটভাঙা শুরু করেন। ভাঙা ইট ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখেন জোহা চত্বর সংলগ্ন প্যারিস রোডে। সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটের দিকে টিয়ারশেল ছুড়ে পুলিশ। এতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলেও কিছু সময় পরে আবারও একত্রিত হয়ে স্লোগান দিতে শুরু করেন। পুলিশের প্রায় ৩০ মিনিট অভিযানের পর শিক্ষার্থীরা আবারও ছত্রভঙ্গ হয়ে যান তারা। এতে সাংবাদিকসহ অনেক শিক্ষার্থী টিয়ারশেলে আহত হন।
অনলাইন সংবাদমাধ্যম ঢাকা পোস্টও সেসময় একই তথ্যে সেসময় সংবাদ প্রকাশ করেছে।
বিষয়টি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ডিবিসি নিউজের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি এমএইচ সাইফুর রহমানের সাথে কথা বলে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি জানান, প্রচারিত ভিডিওটি গত বছরের ১৭ জুলাই সন্ধ্যায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপের ঘটনার।
অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটি ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই তারিখে রাবিতে শিক্ষার্থীদের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনার।
পাশাপাশি, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গত০৩ আগস্ট ছাত্রদলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকায় পুলিশের সাথে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের কোনো তথ্য গণমাধ্যমে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, গত বছরের জুলাই মাসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনার ভিডিওকে গত০৩ আগস্ট ছাত্রদলের সমাবেশের পর পুলিশের সাথে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Deep Pain- Facebook Post
- MH Saifur Rahman- Facebook Post
- Bangla Tribune- রাজশাহী বিশ্বদ্যিালয়ে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ
- Dhaka Post- অবরুদ্ধ রাবি উপাচার্যকে উদ্ধার করল পুলিশ-র্যাব-বিজিবি
- MH Saifur Rahman’s Statement