৫ আগস্ট পিটার হাস বিমানবন্দরের দোলনচাঁপা ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করেছেন দাবিতে ভুয়া তালিকা প্রচার

গতকাল (৫ আগস্ট) জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পাঁচ শীর্ষস্থানীয় নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, মুখ্য সমন্বয়ক; সারজিস আলম, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল); হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল); তাসনিম জারা, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব এবং খালেদ সাইফুল্লাহ, যুগ্ম আহ্বায়ক হঠাৎ কক্সবাজারে যান। এ সফর ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন ছড়িয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিতে কক্সবাজার গেছেন। তবে মূলধারার একাধিক গণমাধ্যম নিজস্ব সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, পিটার হাস বর্তমানে বাংলাদেশে নেই, তিনি অবস্থান করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে।

এই গুঞ্জনের মধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) দোলনচাঁপা ভিআইপি-২ লাউঞ্জ ব্যবহারকারীদের একটি কথিত তালিকা ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দাবি করা হয়, পিটার হাস হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ওই ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করেছেন।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া কিছু পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

একই দাবিতে এক্সে প্রচারিত পোস্ট দেখুন: এখানে

ফ্যাক্টচেক


রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দোলনচাঁপা ভিআইপি-২ লাউঞ্জ ব্যবহার করেছেন বলে প্রচারিত তালিকাটি সত্য নয়। বরং, তালিকাটিতে একাধিক অসঙ্গতি রয়েছে এবং সেখানে যে কর্মকর্তার সিল ব্যবহার করা হয়েছে, সেই নামে বিমানবন্দরে কোনো কর্মকর্তা নেই।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে সাংবাদিক সাদ্দিফ অভির ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। সেখানে তিনি ছড়িয়ে পড়া কথিত ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারকারীদের তালিকাটি ভুয়া হওয়ার পক্ষে কয়েকটি যুক্তি তুলে ধরেন।

প্রথমত, তালিকায় উল্লেখ থাকা এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট EK 583 সাধারণত সকালে ঢাকা থেকে দুবাইয়ের উদ্দেশে ছেড়ে যায় কিন্তু তালিকায় লাউঞ্জ ব্যবহারের সময় দেওয়া হয়েছে সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিট। দ্বিতীয়ত, তালিকায় থাকা মেসবাহ উদ্দিন চৌধুরী ২০২২ সালে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন কিন্তু তিনি গত বছরের আগস্টে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব পদ থেকে ওএসডি হন। তৃতীয়ত, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা রুহুল আলম সিদ্দিকী প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের পর অবসর নিয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। চতুর্থত, যে কর্মকর্তার নাম ও সিল ব্যবহার করে এই তথাকথিত তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট বিভাগে সে নামে কোনো সহকারী পরিচালক নেই। বরং ওই বিভাগে সহকারী পরিচালক হিসেবে অনেক বছর ধরে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা আছেন।

পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় অনেক নেটিজেন কথিত তালিকাটির একাধিক উল্লেখযোগ্য অসঙ্গতি তুলে ধরেছেন। তারা দেখিয়েছেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নামের পাশে পদবি হিসেবে ‘Ambassador’ না লিখে বানান ভুল করে লেখা হয়েছে ‘Embassador’ এবং তালিকাটিতে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নাম ভুলভাবে ‘বেসরকারি’ বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে আরও উঠে আসে, কথিত তালিকাটিতে শাহরিয়ার চৌধুরী নামে এক ব্যক্তির সিল রয়েছে, যাকে ‘এন্ডসেক আইডি পারমিট’-এর সহকারী পরিচালক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কিংবা বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কর্মকর্তাদের তালিকায় (,) এই নামে বা পদবিতে কোনো কর্মকর্তার অস্তিত্ব মেলেনি।

তালিকায় ব্যবহৃত ‘এন্ডসেক’ শব্দটির কাছাকাছি বানানে ‘এভসেক আইডি পারমিট, সহকারী পরিচালক’ পদে নাসিমা শাহীন নামের এক নারী কর্মকর্তার নাম পাওয়া যায়। বিষয়টি নিশ্চিত করতে রিউমর স্ক্যানার তার সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি জানান, তালিকাটি ভুয়া এবং এমন কোনো তথ্য বা উপাত্ত তাদের কাছে নেই। তিনি আরও বলেন, এন্ডসেক নামে কিছু নেই, এভসেক নামে আছে।

সুতরাং, সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দোলনচাঁপা ভিআইপি-২ লাউঞ্জ ব্যবহার করেছেন দাবিতে প্রচারিত তালিকাটি সম্পূর্ণ ভুয়া ও বানোয়াট।

তথ্যসূত্র

  • Rumor Scanner’s analysis.
  • Saddif Ovee: Facebook Post 
  • Statement from Nasima Shaheen Assistant Director (Avsec ID Permit) 

আরও পড়ুন

spot_img