Home Blog Page 376

ফারিহা তৃষ্ণা দুইবার হ্যাটট্রিক করা একমাত্র বোলার নন

0

গত ২ এপ্রিল অস্ট্রেলিয়া নারী দলের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেন বাংলাদেশি পেসার ফারিহা ইসলাম তৃষ্ণা। ইনিংসের শেষ তিন বলে অস্ট্রেলিয়ার এলিস পেরি, সোফি মলিনু ও বেথ মুনিকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন ফারিহা। এটি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তার দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক। এর আগে ২০২২ সালে নিজের অভিষেক ম্যাচে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছিলেন ফারিহা। 

ফারিহার রেকর্ড গড়া এ কৃতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আলোচনা ও প্রশংসা হয়েছে। এর মাঝে কিছু পোস্টে তাকে ডাবল হ্যাটট্রিক করা বিশ্বের একমাত্র বোলার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই ফেসবুক পোস্টগুলোতে দাবি করা হয়েছে– “বিশ্বের ১ মাত্র বোলার হিসেবে ডাবল হ্যাট্রিকের রেকর্ড গড়লেন বাংলাদেশের ফারিহা তৃষ্ণা।”

ফেসবুকে প্রচারিত উক্ত দাবির কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) , এখানে (আর্কাইভ) , এখানে (আর্কাইভ) , এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়,  ফারিহা তৃষ্ণা দুইবার হ্যাটট্রিক করা বিশ্বের একমাত্র বোলার নন, বরং ফারিহার পূর্বে আন্তর্জাতিক নারী টি-টোয়েন্টিতে আরও দুজন এবং পুরুষ টি-টোয়েন্টিতে চারজন বোলার দুইবার করে হ্যাটট্রিক করেছেন। তবে পেসার হিসেবে আন্তর্জাতিক নারী টি-টোয়েন্টিতে দুইবার হ্যাটট্রিক করা প্রথম বোলার ফারিহা তৃষ্ণা। সেই সাথে প্রথম বাংলাদেশী এবং আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশের নারী ক্রিকেটার হিসেবে প্রথম বোলার হিসেবে দুইবার হ্যাটট্রিক করেছেন ফারিহা।

অনুসন্ধানে দেখা যায় আন্তর্জাতিক নারী টেস্টওয়ানডেতে এ যাবত কোনো বোলার দুইবার হ্যাটট্রিক করতে পারেননি। তবে আন্তর্জাতিক নারী টি-টোয়েন্টিতে এখন পর্যন্ত তিনজন বোলার দুটি ভিন্ন ম্যাচে হ্যাটট্রিক করার গৌরব অর্জন করেছেন। ইএসপিএন ক্রিকইনফো ওয়েবসাইটে আন্তর্জাতিক নারী টি-টোয়েন্টি ম্যাচে হওয়া হ্যাটট্রিক তালিকায় দেখা যায় এখন পর্যন্ত ৪২টি হ্যাটট্রিক হয়েছে এবং এর মধ্যে তিনজন বোলার দুইবার করে হ্যাটট্রিক করতে পেরেছেন। ফারিহার পূর্বে উগান্ডার অফ-স্পিনার কনসি অ্যাওয়েকো এবং হংকংয়ের বাঁ-হাতি স্পিনার ক্যারি চ্যান এ কৃতি অর্জন করেছিলেন। তবে তারা দুজনই স্পিনার হওয়ায়– প্রথম পেসার হিসেবে নারী আন্তর্জাতিক টি-২০ তে দুইবার হ্যাটট্রিক করার রেকর্ড গড়েছেন ফারিহা তৃষ্ণা। অপরদিকে পুরুষ ক্রিকেটে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এখন পর্যন্ত চারজন বোলার দুইবার হ্যাটট্রিক করতে পেরেছেন, সে হিসেবে নারী-পুরুষ ক্রিকেট মিলে বিশ্বের সপ্তম বোলার হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে দুইবার হ্যাটট্রিক করা বোলার ফারিহা ইসলাম তৃষ্ণা। 

Screenshot from ICC website 

মূলত, গত ২ এপ্রিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে নিজের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টি-২০ হ্যাটট্রিক তুলে নেন বাংলাদেশি পেসার ফারিহা তৃষ্ণা। ফারিহার এ কৃতি প্রচার করতে গিয়ে কিছু পোস্টে তাকে দুইবার হ্যাটট্রিক করা বিশ্বের একমাত্র বোলার হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার অনুসন্ধানে দেখেছে ফারিহা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে দুইবার হ্যাটট্রিক করা একমাত্র বোলার নন, বরং নারীদের মধ্যে তৃতীয় এবং সর্বসাকুল্যে সপ্তম  বোলার। ইতিপূর্বেই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে দুজন নারী ও চারজন পুরুষ বোলার এই কৃতি অর্জন করেছেন। তবে ফারিহা প্রথম বাংলাদেশী এবং নারী ক্রিকেটে প্রথম পেসার হিসেবে দুইবার হ্যাটট্রিক করার গৌরব অর্জন করেছেন।   

সুতরাং, ফারিহা তৃষ্ণাকে দুইবার হ্যাটট্রিক করা একমাত্র বোলার হিসেবে দাবি করে ফেসবুকে প্রচারিত দাবিটি বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

  1. All International women’s Hat-trick- ESPNCricinfo 
  2. ICC’s report on Fariha’s second hat-trick  

মৃত্যুর গুজব ছড়ানোর প্রতিবাদে সালওয়ান মোমিকা আবারও কোরআন পুড়িয়েছেন দাবিতে গুজব 

0

ইরাকি বংশোদ্ভূত সালওয়ান মোমিকা একাধিকবার প্রকাশ্যে ইসলাম ধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ কোরআন পুড়িয়ে বিতর্ক ও সমালোচনার সৃষ্টি করেন। সম্প্রতি, তিনি সুইডেন ছেড়ে নরওয়ে পাড়ি জমানোর ঘোষণা দেন। এরইমধ্যে নরওয়েতে তার মৃত্যু হয়েছে শীর্ষক একটি গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে এই গুজবের রেশ কাটতে না কাটতেই ‘মৃত্যুর গুজবের প্রতিবাদে আবারও প্রকাশ্যে এসে কুরআন পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন সালওয়ান মোমিকা’ শীর্ষক একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

মৃত্যুর গুজব

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সালওয়ান মোমিকা সম্প্রতি কোরআন পোড়াননি বরং তিনি সুইডেন ছেড়ে নরওয়ে যাওয়ার পর গত ২৮ মার্চ নরওয়েজিয়ান পুলিশ তাকে আটক করে। এখন তিনি নরওয়েজিয়ান পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। 

গুজবের সূত্রপাত 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ০৩ এপ্রিল Asad Noor নামক একটি ফেসবুক গ্রুপে ‘নাকে দড়ি বাঁধা উটের পিঠে চড়ে’ নামক একটি ফেসবুক পেজ থেকে আলোচিত দাবিতে সম্ভাব্য প্রথম পোস্টটি (আর্কাইভ) করা হয়।

Screenshot: Facebook

পরবর্তীতে তথ্যটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। 

আলোচিত দাবির বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গণমাধ্যম ও বিশ্বস্ত সূত্রে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

নরওয়েজিয়ান সংবাদমাধ্যম ফিল্টার নিউজে “ «Trussel mot grunnleggende nasjonale interesser»: Kjent koranbrenner pågrepet da han ankom Norge – skal utvises «så raskt som mulig»” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নরওয়ে আগমনের পরিপ্রেক্ষিতে সালওয়ান মোমিকাকে গত ২৮ মার্চ নরওয়েজিয়ান পুলিশ আটক করে, এবং সে গত কয়েকদিন ধরে পুলিশের ইমিগ্রেশন কেন্দ্রে বন্দি রয়েছেন।

আরো জানা যায়, নরওয়েজিয়ান পুলিশ তাকে জাতীয় সুরক্ষার জন্য হুমকি হিসেবে গণ্য করছে এবং এর ফলে তাকে দ্রুততম সময়ে সুইডেনে প্রেরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।

এছাড়া একই বিষয়ে সুইডিশ সংবাদমাধ্যম আফটোনব্লাদেটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সুইডেনের মাইগ্রেশন এজেন্সির প্রেস ম্যানেজার বার্তা সংস্থা টিটিকে জানিয়েছে, তারা নরওয়ের অনুরোধটি (সালওয়ান মোমিকে ফেরত পাঠানোর সম্পর্কিত) গ্রহণ করেছে।

এ সংক্রান্ত দাবিগুলোতে যে ছবিটি যুক্ত করা হয়েছে তা সালওয়ান মোমিকার গত ২৭ মার্চে সুইডেন যাওয়া সংক্রান্ত এক্স পোস্টেই খুঁজে পাওয়া যায়৷ এরপরই তিনি আটক হন। তাই ছবিটিও এই দাবির সাথে প্রাসঙ্গিক নয়। 

মূলত, সুইডেনে একাধিকবার প্রকাশ্যে কোরআন পুড়িয়ে বিতর্কিত ইরাকি বংশোদ্ভূত সালওয়ান মোমিকা সম্প্রতি সুইডেন ছেড়ে নরওয়ে পাড়ি জমান। নরওয়ে গমনের পর সেখানে তার মরদেহ পাওয়া গেছে এমন একটি গুজব নেট জগতে ভাইরাল হয়। এরই মধ্যে, ‘মৃত্যুর গুজবের প্রতিবাদে আবারও প্রকাশ্যে এসে কুরআন পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন সালওয়ান মোমিকা’ শীর্ষক একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সালওয়ান মোমিকা সম্প্রতি কোরআন পোড়াননি। প্রকৃতপক্ষে, সালওয়ান মোমিকা সুইডেন ছেড়ে নরওয়ে যাওয়ার পর গত ২৮ মার্চ নরওয়েজিয়ান পুলিশ তাকে আটক করে। এখন তিনি নরওয়েজিয়ান পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। 

সুতরাং, ‘মৃত্যুর গুজবের প্রতিবাদে আবারও প্রকাশ্যে এসে কুরআন পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন সালওয়ান মোমিকা’ শীর্ষক দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

মোবাইলে আসক্ত মা কর্তৃক শিশুকে ফ্রিজে ভরে রাখার ভাইরাল ভিডিওটি স্ক্রিপ্টেড

সম্প্রতি মোবাইলে আসক্ত মা সবজির বদলে নিজের শিশুকে রেফ্রিজারেটরে ভরে রাখার দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।

দাবিকৃত ভিডিওতে দেখা যায়, ফোনে মগ্ন এক মা কাজ করার সময় খাবার রাখার পরিবর্তে নিজের অজান্তেই তার কোলের শিশুকে রেফ্রিজারেটরে ভরে রাখেন। কিছুক্ষণ পরে শিশুটির বাবা উপস্থিত হন এবং সন্তানের অবস্থান সম্পর্কে স্ত্রীর কাছে জিজ্ঞাসা করেন। সন্তানকে না দেখে চারপাশে খোঁজা শুরু করেন। অবশেষে, কান্নার শব্দ অনুসরণ করে শিশুটিকে রেফ্রিজারেটর থেকে উদ্ধার করা হয়।

 শিশুকে ফ্রিজে

উক্ত দাবিতে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন দেখুন ইনকিলাব, খবর সংযোগ, জুম বাংলা, আলোকিত প্রতিদিন, এমটিনিউজ২৪


ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মোবাইলে আসক্ত মায়ের সবজির বদলে নিজের শিশুকে রেফ্রিজারেটরে ভরে রাখার ভাইরাল ভিডিওটি বাস্তব কোনো ঘটনার নয় বরং শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে নির্মিত একটি ভিডিও বাস্তব দাবি করে প্রচারিত হয়েছে।

ভিডিওটি সম্পর্কে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভিডিওটি প্রাথমিকভাবে ভারত ভিত্তিক কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্টে (,,) প্রচারিত হয়েছিল। এর পরবর্তীতে, বিষয়টি নিয়ে ভারতের গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টিভিতে  বাস্তব দাবিতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর বাংলাদেশের কিছু গণমাধ্যমেও এই বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ পায়।

বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে প্রচারিত ভিডিওগুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। গত ৩০ মার্চ নরেন্দ্র মোদি পরিবার (আর্কাইভ) নামের একটি এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে এ বিষয়ে প্রচারিত ৪ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের ভিডিওর শেষ ফ্রেমে একটি ডিসক্লেইমার দেখা যায়। বলা হয়, এই ভিডিও ফুটেজটি জনসচেতনতার উদ্দেশ্যে প্রকাশিত হয়েছে, যাতে মানুষ বুঝতে পারে বাস্তব জীবনের পরিস্থিতিগুলি কেমন হতে পারে।

Image: Viral Video. 

পরবর্তীতে উক্ত ডিসক্লেইমারের সূত্রে ভারতীয় ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা ফ্যাক্টলির ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ২০ অক্টোবর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে তৈরি কিছু স্ক্রিপ্টেড ভিডিও বাস্তব দাবিতে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া প্রসঙ্গে প্রকাশিত এই ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনে উল্লিখিত একটি ভিডিওতে আলোচিত ভিডিওটির মতো হুবহু একই ডিসক্লেইমার ব্যবহার হতে দেখা যায়।

সেই সূত্রে থার্ড আই (3RD EYE) নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল খুঁজে পাওয়া যায়। চ্যানেলটি ঘুরে আলোচ্য ভিডিওটির মতো একই ধরণের অসংখ্য ভিডিও দেখা যায়। ভিডিওগুলোর শেষেও একই ধরণের ডিসক্লেইমার ব্যবহার করতে দেখা যায়। চ্যানেলটির অ্যাবাউট সেকশন থেকে জানা যায়, সেখানে প্রতিদিন অ্যাকশন, ড্রামা, কমেডি এবং তথ্যপূর্ণ বিভিন্ন ভিডিও পোস্ট করা হয়।

তবে শিশুকে ফ্রিজে রাখার আলোচ্য ভিডিওটি চ্যানেলটিতে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ইউটিউব চ্যানেলের সূত্রে থার্ড আইয়ের ফেসবুক পেজও খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানেও এই ভিডিওটি পাওয়া যায়নি।

তবে থার্ড আইয়ের ফেসবুকে পেজে সঞ্জানা গালরানি (Sanjjanaa Galrani) নামের একটি ফেসবুক পেজের পোস্ট নিয়মিত শেয়ার হতে দেখা যায়। সে সূত্রে সঞ্জানা গালরানির পেজে অনুসন্ধান করে গত ২৮ মার্চ প্রকাশিত মূল ভিডিওটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয়, এটি শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে তৈরি একটি স্ক্রিপ্টেড ভিডিও। 

Screenshot: Facebook.

মূলত, সম্প্রতি মোবাইলে আসক্ত মায়ের সবজির বদলে নিজের শিশুকে রেফ্রিজারেটরে ভরে রাখার একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়। ভিডিওটি নিয়ে ভারত এবং বাংলাদেশের গণমাধ্যমে বাস্তব দাবিতে সংবাদ প্রচার হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এটি একটি স্ক্রিপ্টেড ভিডিও। জনসচেতনতার উদ্দেশ্যে এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

সুতরাং, মোবাইলে আসক্ত মায়ের সবজির বদলে নিজের শিশুকে রেফ্রিজারেটরে ভরে রাখা সংক্রান্ত একটি স্ক্রিপ্টেড ভিডিও বাস্তব ঘটনা দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

ভারতের ভিডিওকে ঢাবি শিক্ষার্থীর রং উৎসবের ভিডিও দাবিতে প্রচার 

গত ২৮ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আয়োজনে রং উৎসবে অংশ নেয় শিক্ষার্থীরা। এরই মধ্যে গত ৩০ মার্চ ঝরা পাতা নামে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে “রমজানে রং উৎসবে ঢাবি শিক্ষার্থী” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। 

রং উৎসবের

ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৭৫ হাজার বার।  ভিডিওটিতে প্রায় ২ হাজার ৯০০ টি পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, রমজানে রং উৎসবে ঢাবির শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণের দাবিতে ভাইরাল ভিডিওটি বাংলাদেশের নয় বরং ভারতের হায়দারাবাদের হোলি উৎসবের ভিডিওকে বাংলাদেশের দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।  

আলোচিত ভিডিওটি নিয়ে অনুসন্ধানে ‘gana kantu’ নামক একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ২৯ মার্চ “with twinklekapoordoll Instagram celebrity (5.2M followers) at holi celebration 2024” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল (যদিও মিরর করা) খুঁজে পাওয়া যায়। 

Video Comparison : Rumor Scanner 

উক্ত ব্যাক্তির অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণে রং উৎসবের আরও একাধিক ভিডিও (, , ) খুঁজে পাওয়া যায়। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আলোচিত ভিডিওটিও একই উৎসবের। 

পরবর্তীতে উক্ত ব্যাক্তির ফেসবুক অ্যাকাউন্টেও একই উৎসবের পোস্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। জানা যায়, তিনি ভারতের বিজায়ওয়াড়া শহরের বাসিন্দা। 

আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে আরও অনুসন্ধানে Twinkle kapor এর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ৩১ মার্চ একই উৎসবের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওতেও আমরা আলোচিত ভিডিওর দৃশ্যের উপস্থিতি দেখতে পাই। 

আয়োজক সূত্রে জানা যাচ্ছে, হায়দারাবাদের এই হোলি উৎসব আয়োজিত হয় গত ২৪ ও ২৫ মার্চ। 

মূলত, গত ২৪ ও ২৫ মার্চ ভারতের হায়দারাবাদে হোলি উৎসবের একটি ভিডিও গত ২৯ মার্চ ভারতের এক তরুণ তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেন। উক্ত ভিডিওটিকে বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রং উৎসবের ভিডিও দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।

সুতরাং, রমজানে রং উৎসবে ঢাবি শিক্ষার্থীদের মেতে উঠার দাবিতে ইন্টারনেটে ভারতের একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

স্কোপোলামিন বিষয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নাম ব্যবহার করে ভুয়া সতর্কবার্তা

0

মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুই উৎসবের একটি পবিত্র ঈদুল ফিতর ঘনিয়ে আসছে। প্রতি বছরই ঈদকে কেন্দ্র করে ভুল তথ্য বা গুজব অনলাইন প্লাটফর্মগুলোতে প্রচার হয়ে আসতে দেখছে রিউমর স্ক্যানার৷ সম্প্রতি, ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষদের প্রতি পরামর্শ হিসেবে স্কোপোলামিন নামে একটি মাদক সংক্রান্ত বেশ কিছু সতর্কতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে দেখেছি আমরা। 

দীর্ঘ পোস্টগুলোর শুরুটা এমন, “যারা ঈদে বাড়ি ফিরবেন তাদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা। 

সম্প্রতি একটা কেমিক্যাল এর ব্যবহার তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে কিছু অসৎ মানুষের হাতে পড়েছে। কেমিক্যাল টার নাম হচ্ছে স্কোপোলামিন। এটা সাধারণত সাড়ে তিন ফিট দূর থেকেও বাতাসের মাধ্যমে একজন মানুষকে আসক্ত করতে পারে। এই কেমিক্যালটা আমাদের ন্যাসাল রুটের মাধ্যমে যখন ভেতরে প্রবেশ করে তখন মানুষের মস্তিষ্কের প্রাইমারি ইনিশিয়াল স্টেজ অফ থিংকিং সহজ বাংলায় বললে মানুষের চিন্তা করার ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। যে কারণে মানুষ তাৎক্ষণিকভাবে সামনে থাকা মানুষের পুতুলে পরিণত হয়। তখন আপনাকে ওই লোক যা কমান্ড দেবে আপনি সেটাই করবেন। এটা থেকে বাঁচতে আমি কিছু বিষয়ের কথা বলছি এগুলো মাথায় রাখবেন।”

এরপর এ বিষয়ে ১৩ টি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। 

এই পরামর্শগুলো বাংলাদেশ পুলিশ দিয়েছে দাবি করে ফেসবুকের কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

একই পরামর্শ পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল দিয়েছে দাবি করে ফেসবুকের কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

একই পরামর্শ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ দিয়েছে দাবি করে ফেসবুকের কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

স্কোপোলামিন

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশের কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সম্প্রতি ঈদকে কেন্দ্র করে স্কোপোলামিন বিষয়ে কোনো সতর্কবার্তা দেয়নি বরং, ডাঃ আজাদ নামে এক ব্যক্তি তার রোগীর কেসস্টাডির উপর নির্ভর করে প্রথম গত ২৫ মার্চ এ বিষয়ে ফেসবুকে পোস্ট করার পর পুলিশের বিভিন্ন শাখার নামে উক্ত সতর্কবার্তাগুলো ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে এ সংক্রান্ত দাবিটির মূল সূত্রপাতের খোঁজে ফেসবুকের এডভান্স সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে ২০২২ সালের ২৬ মার্চ কামরুজ্জামান কামরুল নামে এক ব্যক্তির পোস্টে একই তথ্য পাওয়া যায়। তবে এই পোস্টের এডিট হিস্টোরি যাচাই করে দেখা যাচ্ছে, গত ২৬ মার্চ এই পোস্ট এডিট করে আলোচিত তথ্যগুলো যুক্ত করা হয়েছে। এর পূর্বে উক্ত পোস্টের ক্যাপশনে কোনো লেখা ছিল না। 

Screenshot collage: Rumor Scanner 

আমাদের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ২৫ মার্চ দুপুর ১ টা ৫৬ মিনিটে এ সংক্রান্ত প্রথম পোস্ট করেন ডাঃ আজাদ নামে এক ব্যক্তি। তিনি তার পোস্টে পোস্টের সূত্র হিসেবে কোনো বাহিনীর নাম উল্লেখ করেননি। পোস্টের ক্যাপশনে তিনি জনসচেতনতার উদ্দেশ্যে এই পোস্টটি শেয়ার করতে আহ্বান জানান।  

Screenshot: Facebook 

আমরা তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেন, এটা তারই লেখা। পেশায় ডাক্তার জনাব আজাদ আমাদের এই পোস্ট লেখার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেছেন, “আমার এক বন্ধুর ওয়াইফের কাছ থেকে স্বর্ণলঙ্কার নিয়ে গিয়েছিল এই কেমিক্যালটা ব্যবহার করে। তারপর পরবর্তীতে যখন উনি নরমাল হচ্ছিল না তখন আমাকে নক দিয়েছিল।” 

অর্থাৎ, আলোচিত তথ্যগুলো একজন ডাক্তার তার রোগীর কেসস্টাডির উপর নির্ভর করে প্রথম লিখেন ফেসবুকে।

রিউমর স্ক্যানার টিম যাচাই করে দেখেছে, প্রথম দিকে কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাম উল্লেখ ছাড়াই পোস্টের তথ্যগুলো কপি পেস্ট হতে থাকে। 

দিন তিনেক পর গত ২৮ মার্চ থেকে পুলিশের একাধিক শাখার নামে এই পোস্টটি প্রচার পেতে শুরু করে। সেদিন পুলিশের একাধিক কর্মকর্তাও একই পোস্ট তাদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছেন। 

ভোলার সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেলের (ডিবি) এসআই মো: মুহাইমিনুল ইসলামের নাম ব্যবহার করে এ সংক্রান্ত একাধিক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে। 

মুহাইমিনুল ইসলাম নিজে এমন কোনো পোস্ট করেছেন কিনা তা জানা না গেলেও একইদিন কুষ্টিয়ার সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেলের এএসআই মো: মিন্টু মিয়া নিজেই তার নাম উল্লেখ করে নিজের আইডিতে একই পোস্ট করেন। 

পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের আরো একাধিক কর্মকর্তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট এবং বিভিন্ন থানার ফেসবুক পেজে ২৮ ও ২৯ মার্চ একই পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে।

২৮ মার্চ পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেলের নাম ব্যবহার করে প্রথম পুলিশের কোনো শাখার নামে একই পোস্ট (, , ) প্রচার হয়। এমনকি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেলের বরাত দিয়ে একই পোস্ট শেয়ার করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন কর্মকর্তাও। 

২৮ মার্চই প্রথম বাংলাদেশ পুলিশের নাম উল্লেখ করে একই পোস্ট হতে দেখা যায়। সেদিন এমন অন্তত দুইটি পোস্টের খোঁজ মেলে। দেখুন এখানে, এখানে।  

পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল এবং বাংলাদেশ পুলিশ ছাড়াও একই দিন (২৮ মার্চ) পুলিশের স্পেশার ব্রাঞ্চের লোগোর ছবি ব্যবহার করে অন্তত একটি পোস্ট পাওয়া যায় যাতে একই তথ্য উল্লেখ রয়েছে। যদিও এই পোস্টে স্পেশার ব্রাঞ্চের নাম উল্লেখ করা হয়নি।  

তবে পরদিনই (২৯ মার্চ) স্পেশাল ব্রাঞ্চের নাম উল্লেখ করে একাধিক পোস্ট (, ) পাওয়া যায় ফেসবুকে। এর মধ্যে সম্ভাব্য প্রথম পোস্ট করা হয় সেদিন ভোরে আবদুল মনির নাবিল নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে।    

এরপরই স্পেশাল ব্রাঞ্চের নাম উল্লেখ করে এই পোস্ট প্রচার হতে থাকে। আমরা এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের বিশেষ পুলিশ সুপার মাসরুফ হোসেনের সাথে কথা বলেছিলাম। তিনি জানিয়েছেন, স্পেশাল ব্রাঞ্চের পক্ষ থেকে এমন কোনো সতর্কবার্তা দেওয়া হয়নি। 

মূলত, ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষদের প্রতি পরামর্শ হিসেবে স্কোপোলামিন নামে একটি মাদক সংক্রান্ত বেশ কিছু সতর্কতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ সংক্রান্ত কতিপয় পোস্টে এই পরামর্শগুলো বাংলাদেশ পুলিশ দিয়েছে, কিছু পোস্টে পরামর্শগুলো পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল এবং কিছু পোস্টে একই পরামর্শ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ দিয়েছে শীর্ষক দাবি করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশের কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সম্প্রতি ঈদকে কেন্দ্র করে স্কোপোলামিন বিষয়ে কোনো সতর্কবার্তা দেয়নি। প্রকৃতপক্ষে, ডাঃ আজাদ নামে এক ব্যক্তি তার রোগীর কেসস্টাডির উপর নির্ভর করে প্রথম গত গত ২৫ মার্চ এ বিষয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেন যাতে তিনি কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাম উল্লেখ করেননি। পরবর্তীতে পুলিশের বিভিন্ন শাখার নামে উক্ত সতর্কবার্তাগুলো প্রচারিত হয়েছে। 

সুতরাং, আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে স্কোপোলামিন মাদক বিষয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নাম ব্যবহার করে একটি সতর্কবার্তা ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

  • ডাঃ আজাদ: Facebook Post
  • Statement from Mashroof Hossain 
  • Rumor Scanner’s own investigation 

চীনের মহাপ্রাচীর চাঁদ থেকে খালি চোখে দেখা যায় না

0

বিগত কয়েক বছর ধরেই “চীনের মহাপ্রাচীর একমাত্র মানবসৃষ্ট স্থাপনা যেটি চাঁদ থেকেও খালি চোখে দেখা যায়” শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়।

২০২৪ সালে ইন্টারনেটে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)

২০১৮ সালের পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)

২০১৫ সালের পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)

২০১৪ সালের পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চীনের মহাপ্রাচীর চাঁদ থেকে খালি চোখে দেখা যায় না বরং পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে ১৮০ মাইল উচ্চতায় অবস্থিত আন্তজার্তিক মহাকাশ স্টেশন থেকেও চীনের মহাপ্রাচীর স্পষ্টভাবে দেখা যায় না, সেখানে পৃথিবী থেকে প্রায় ২ লাখ ৩৭ হাজার মাইল দূরের চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে চীনের মহাপ্রাচীর খালি চোখে দেখতে পাওয়া অসম্ভব।

আনুমানিক ২২০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে চীনের প্রথম রাজা কিন শি হুয়াং মহাপ্রাচীরের নির্মাণকাজ শুরু করেন। চীনের ছোটবড় সকল রাজ্যকে হারিয়ে চীনা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠার পরপরই তিনি চীনের অভ্যন্তরীণ পুরোনো দেয়ালগুলো ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দেন। সেইসাথে উত্তরাঞ্চলের যাযাবর গোষ্ঠীগুলোর লুটপাটের হাত থেকে বাঁচতে বিশাল প্রাচীর নির্মাণ শুরু করেন তিনি। পরবর্তীতে, বিভিন্ন সময়ে একাধিক সাম্রাজ্যের সম্রাটগণ প্রাচীরের পরিবর্ধন ও সংস্কার করেন। প্রাচীরের মাঝে শত্রুপক্ষের গতিবিধি নজরদারির জন্য ওয়াচ টাওয়ারও নির্মিত হয়। প্রাচীর নির্মাণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল মিং সাম্রাজ্যের সম্রাটগণের। তারা প্রাচীরের দৈর্ঘ্য উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্ধিত করেন এবং প্রাচীর নির্মাণে উচ্চমানের পাথরের ব্যবহার করেন যা প্রাচীরের দৃঢ়তা ও স্থায়িত্ব দুই-ই বৃদ্ধি করে। 

Image Source: Britannica

এখানে বলে রাখা ভালো, চীনের মহাপ্রাচীর কোনো একক স্থাপনা নয় বরং অনেকগুলো প্রাচীর একত্রে গ্রেট ওয়াল অব চায়না নামে পরিচিত। এসকল প্রাচীরের সম্মিলিত দৈর্ঘ্য প্রায় ২১,১৯৬ কিলোমিটার বা ১৩,১৭১ মাইল এবং প্রশস্ততা গড়ে প্রায় ৪-৫ মিটার। যার অনেকটাই এখন ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে। কিন্তু, চীনা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের নিদর্শন হয়ে প্রাচীরের বাকি অংশ এখনও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ১৯৮৭ সালে ইউনেস্কো প্রাচীন পৃথিবীর সপ্তাচর্যের মধ্যে অন্যতম এই স্থাপনাটিকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

চীনের মহাপ্রাচীর কি সত্যিই চাঁদ থেকে খালি চোখে দেখা যায়?

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা’র ওয়েবসাইটে প্রাপ্ত তথ্যমতে, বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই মিথ প্রচলিত থাকলেও প্রকৃতপক্ষে চাঁদ থেকে চীনের মহাপ্রাচীর দেখা যায় না। 

Source: NASA

নাসার ওয়েবসাইটে, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে এক্সপেডিশন ১০ এর কমান্ডার লিরোয় শিও’র তোলা মহাপ্রাচীরের একটি ছবি পাওয়া যায়। উচ্চশক্তির ক্যামেরা লেন্সের সাহায্যে ছবিটি তোলা হয়। কিন্তু বিষয়টি নিশ্চিত করে যে, খালি চোখে চীনের মহাপ্রাচীরের এমন দৃশ্য দেখা সম্ভব নয়। শুধু উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরা লেন্স দ্বারাই এ ধরণের ছবি তোলা সম্ভব। 

এছাড়াও, ওয়েস্ট টেক্সাস ইউনিভার্সিটি’র ওয়েবসাইটে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক Christopher Baird এক প্রশ্নের জবাবে জানান, চীনের মহাপ্রাচীর অনেক লম্বা হলেও এর প্রশস্ততা অনেক কম। ফলে কম উচ্চতার কক্ষপথ থেকেও চীনের মহাপ্রাচীর খালি চোখে দেখা দুষ্কর। শুধু চীনের মহাপ্রাচীই নয়, পৃথিবীর কোনো মানবসৃষ্ট স্থাপনাই অধিক উচ্চতা থেকে খালি চোখে দেখা যায় না।

Source: West Texas University
বিষয়ে কী বলছেন মহাকাশচারীরা?

নাসার শাটল অ্যাস্ট্রনট জে অ্যাপট জানান, “যদিও মহাকাশ স্টেশন থেকে চীনের মহাপ্রাচীর ছাড়াও মানবসৃষ্ট আরো কিছু অবকাঠামো অনুধাবন করা যায় তবু পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে ১৮০ মাইল উপরে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন থেকেই চীনের মহাপ্রাচীর খালি চোখে দেখা খুবই দুষ্কর। সেখানে পৃথিবী থেকে ২ লাখ ৩৭ হাজার মাইল দূরে অবস্থিত চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে চীনের মহাপ্রাচীর দেখতে পাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই।”

তিনি আরো জানান, “চাঁদ থেকে পৃথিবীর দিকে তাকালে একটি সুন্দর গোলক(পৃথিবী) দেখা যায়, যার অধিকাংশই সাদা(মেঘ), কিছু নীল(সমুদ্র), টুকরো টুকরো হলুদ(মরুভূমি) এবং মাঝেমাঝে কিছু সবুজ রং(গাছপালার রং)। চাঁদ থেকে মানবসৃষ্ট কোনো বস্তুই দেখা সম্ভব নয়। প্রকৃতপক্ষে, পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে কয়েক হাজার মাইল উপরে পৌঁছলেই পৃথিবীতে অবস্থিত কোনো মানবসৃষ্ট বস্তু দেখা সম্ভব না।”

Source: Snopes
যেভাবে এলো এই জনশ্রুতি

১৯৩২ সালে রবার্ট রিপলি’র বিখ্যাত বিলিভ ইট অর নট ট্যাগলাইনে তিনি বলেন, “চীনের মহাপ্রাচীর ‘হতে পারে’ পৃথিবীর একমাত্র মানবসৃষ্ট স্থাপনা যা চাঁদ থেকে দেখা যায়”। পরবর্তীতে, তার এই ধারণাই সত্যি হিসেবে একসময় শহুরে শ্রুতিকথায় পরিণত হয়। যদিও রবার্ট রিপলি এককভাবে এ কৃতিত্বের দাবিদার নন। তারও অনেক বছর আগে, ১৯০৪ সালে হেনরি নরম্যানের লেখা ‘মানুষ এবং পুবের রাজনীতি’ বইতে বলা হয়েছিল যে, “প্রাচীরটি তৈরির সময়কাল যেমন বিস্মিত করে, তেমনি আরো বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, এটি চাঁদ থেকেও দেখা যায়।”

এছাড়াও, ১৯৩৮ সালে আমেরিকান পরিব্রাজক রিচার্ড হ্যালি বার্টনের ‘বুক অব মার্ভেলস:দ্য ওরিয়েন্ট’ প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, “চীনের প্রাচীর মানব সৃষ্ট একমাত্র স্থাপনা, যা চাঁদ থেকেও দেখা যায়।” বার্টনের ভ্রমণবিষয়ক বইগুলো বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় ভালো সাড়া পেয়েছিল। সুতরাং, চীনের মহাপ্রাচীর বিষয়ক বিভ্রান্তি তৈরিতে তাঁরও বিশেষ ভূমিকা ছিল! আর এরপর প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এ শ্রুতিকথা লোকমুখে প্রচলিত হয়ে এসেছে। 

মূলত, বহু বছর ধরেই “চীনের মহাপ্রাচীর একমাত্র মানবসৃষ্ট স্থাপনা যেটি চাঁদ থেকেও খালি চোখে দেখা যায়” শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মানবসৃষ্ট এই স্থাপনাটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৮০ মাইল দূরের আন্তজার্তিক মহাকাশ স্টেশন থেকেই খালি চোখে দেখতে পাওয়া দুষ্কর। সেখানে পৃথিবী থেকে ২ লাখ ৩৭ হাজার মাইল দূরে অবস্থিত চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে চীনের মহাপ্রাচীর খালি চোখে দেখতে পাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। 

সুতরাং, “চীনের মহাপ্রাচীর একমাত্র মানবসৃষ্ট স্থাপনা যেটি চাঁদ থেকেও খালি চোখে দেখা যায়” শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচারিত হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

সুইডেনে প্রকাশ্যে কোরআন পোড়ানো সালওয়ান মোমিকার মৃত্যুর গুজব

ইরাকি বংশোদ্ভূত সালওয়ান মোমিকা ২০১৮ সালে সুইডেনে আসেন এবং ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে সুইডেন সরকার তাকে তিন বছরের জন্য বসবাসের অনুমতি দেয়। সুইডেনে অবস্থানকালে তিনি একাধিকবার প্রকাশ্যে ইসলাম ধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ কোরআন পুড়িয়ে বিতর্ক ও সমালোচনার সৃষ্টি করেন। অভিবাসন আবেদনে ভুল তথ্য প্রদানের অভিযোগে ২০২৩ সালের অক্টোবরে তার বসবাসের অনুমতি নবায়নের আবেদন সুইডেনের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ নাকচ করে দেয়। গত ২৭ মার্চ তিনি তার এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে জানান, তিনি সুইডেন ত্যাগ করে নরওয়েতে আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছেন এবং বর্তমানে সেখানে অবস্থান করছেন। পরবর্তীতে, তাকে নরওয়েতে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে দাবিতে একটি তথ্য নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।

উক্ত দাবিতে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন দেখুন দেশ টিভি, স্বদেশ প্রতিদিন, ডেইলি মেসেঞ্জার (ফেসবুক) এবং ফেস দ্য পিপল (ফেসবুক)।

একই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নরওয়েতে সালওয়ান মোমিকার মরদেহ পাওয়ার সংবাদটি সত্য নয় বরং বর্তমানে তিনি নরওয়েজিয়ান পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।

সম্প্রতি সালওয়ান মোমিকা সুইডেন ছেড়ে নরওয়ে গিয়েছেন এই তথ্য প্রকাশের পর নরওয়েতে তার মৃত্যু নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন দাবি ছড়িয়ে পড়ে।

গত ১ এপ্রিল ভাসিফ আয় (Vasıf Ay) নামের তুরস্ক ভিত্তিক এক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে করা পোস্টে (আর্কাইভ) কোনো তথ্যসূত্র ব্যতীত দাবি করা হয়, “নরওয়েতে একজন কুর্দ সালওয়ান মোমিকাকে হত্যা করেছে বলে শোনা যাচ্ছে।”

Screenshot: Facebook.

এদিকে গত ০১ এপ্রিল সালওয়ান মোমিকার উইকিপিডিয়া নিবন্ধ এডিট করে সেদিন তার মৃত্যুর তারিখ হিসেবে যুক্ত করা হয়।

এরপর নরওয়েতে তার মরদেহ পাওয়া গেছে দাবিতে সামাজিক মাধ্যম এক্সে অসংখ্য পোস্ট হতে (,,) থাকে। তবে এসব পোস্টগুলোতেও নির্দিষ্ট কোনো সূত্রের উল্লেখ ছিল না। মরদেহ পাওয়া গেছে দাবি করা হলেও পোস্টগুলোতে মরদেহের কোনো ছবি যুক্ত করা হয়নি।

এসব এক্স পোস্টের বরাতে ভারতীয় একাধিক গণমাধ্যম (,,) তার মৃত্যুর সংবাদ প্রচার করে। পরবর্তীতে ভারতের গণমাধ্যমের বরাতে বাংলাদেশের কতিপয় গণমাধ্যমেও এ বিষয়ে সংবাদ প্রচার হয়।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে সুইডিশ ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা কেলক্রিটিকব্যুরান (Källkritikbyrån) এবং নরওয়েজিয়ান ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা ফ্যাক্টিস্কের (Faktisk) সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।

গত ৩ এপ্রিল কেলক্রিটিকব্যুরান আমাদের জানায়, তারা এখনও এই বিষয়টি যাচাই করতে পারেনি। তবে তারা সুইডেন ভিত্তিক সুইডিশ-আরবি ভাষার সংবাদমাধ্যম আলকম্পিসে এই বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের কথা আমাদের জানায়।

আলকম্পিসের উক্ত প্রতিবেদনে নরওয়েজিয়ান গণমাধ্যম ডকুমেন্টের বরাতে জানানো হয়, নরওয়েজিয়ান পুলিশের ইমিগ্রেশন ইউনিট সালওয়ান মোমিকাকে মৃত পাওয়ার ব্যাপারে অবগত নয়।

গতকাল ৪ এপ্রিল নরওয়েজিয়ান ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা ফ্যাক্টিস্ক রিউমর স্ক্যানারকে জানায়, সালওয়ান মোমিকা গত সপ্তাহে নরওয়ে পৌঁছানোর পর থেকে পুলিশ হেফাজতে আছেন। তিনি নরওয়েতে আশ্রয় চেয়েছেন, তবে যত দ্রুত সম্ভব তাকে সুইডেনে ফেরত পাঠানো হবে।

এই তথ্যের সূত্র হিসেবে নরওয়েজিয়ান সংবাদমাধ্যম ভের্ডেনস গ্যাংয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদেন পাঠায় তারা। উক্ত প্রতিবেদনের সূত্রে নরওয়ে এবং সুইডেনের আরো দুইটি গণমাধ্যমে (,) একই বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

Screenshot: Filter Nyheter.

নরওয়েজিয়ান সংবাদমাধ্যম ফিল্টার নিউজের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নরওয়ে আগমনের পরিপ্রেক্ষিতে সালওয়ান মোমিকাকে গত ২৮ মার্চ নরওয়েজিয়ান পুলিশ আটক করে, এবং সে গত কয়েকদিন ধরে পুলিশের ইমিগ্রেশন কেন্দ্রে বন্দি রয়েছেন।

আরো জানা যায়, নরওয়েজিয়ান পুলিশ তাকে জাতীয় সুরক্ষার জন্য হুমকি হিসেবে গণ্য করছে এবং এর ফলে তাকে দ্রুততম সময়ে সুইডেনে প্রেরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।

এছাড়া একই বিষয়ে সুইডিশ সংবাদমাধ্যম আফটোনব্লাদেটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। জানা যায়, সুইডেনের মাইগ্রেশন এজেন্সির প্রেস ম্যানেজার বার্তা সংস্থা টিটিকে জানিয়েছে, তারা নরওয়ের অনুরোধটি (সালওয়ান মোমিকে ফেরত পাঠানোর সম্পর্কিত) গ্রহণ করেছে।

মূলত, সুইডেনে একাধিকবার প্রকাশ্যে কোরআন পুড়িয়ে বিতর্কিত ইরাকি বংশোদ্ভূত সালওয়ান মোমিকা সম্প্রতি সুইডেন ছেড়ে নরওয়ে পাড়ি জমান। নরওয়ে গমনের পর সেখানে তার মরদেহ পাওয়া গেছে এমন একটি দাবি নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে এবং নরওয়েজিয়ান ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, সুইডেন ছেড়ে নরওয়ে যাওয়ার পর গত ২৮ মার্চ নরওয়েজিয়ান পুলিশ তাকে আটক করে। এখন তিনি নরওয়েজিয়ান পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।

সুতরাং, সুইডেনে প্রকাশ্যে কোরআন পুড়িয়ে বিতর্কিত সালওয়ান মোমিকার মরদেহ নরওয়েতে পাওয়া যাওয়ার দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

বুয়েট নয়, ঈদের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের বিষয়ে জানিয়েছে ছাত্রদল

ছাত্র রাজনীতি ইস্যুতে আবারও অস্থির হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। গত ২৮ মার্চ গভীর রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনসহ সংগঠনটির একদল নেতাকর্মীর প্রবেশ ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ উঠার পর থেকে উত্তাল প্রকৌশল শিক্ষার এই বিদ্যাপীঠ। উত্তাল অবস্থার মধ্যে গত ০৩ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলনে আসে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে বিষয়ে ০৩ এপ্রিল মূলধারার সংবাদমাধ্যম ‘চ্যানেল২৪’ এর সংবাদ প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, “ঈদের পর বুয়েটে ঢুকছে ছাত্রদল।”

ইউটিউবে চ্যানেল২৪ এর উক্ত প্রতিবেদন দেখুন এখানে। 

একই দাবিতে ফেসবুকের কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঈদের পর বুয়েটে প্রবেশের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে কোনো মন্তব্য করেনি ছাত্রদল তথা সংগঠনটির সভাপতি রাকিবুল ইসলাম বরং ঈদের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রবেশের বিষয়ে দেওয়া তার বক্তব্যকে ভিন্ন দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে আলোচিত সংবাদ সম্মেলনটির লাইভ ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর ১৯:২৫ মিনিট থেকে ২০:২০ মিনিট সময়ের অংশে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলামকে বলতে শোনা যায়, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং হাইকোর্টের রায়ের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল। আমরা সেই শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের, বুয়েট ক্যাম্পাসে কী ধরনের রাজনীতি হবে সেটি বুয়েটের শিক্ষার্থীরা সিদ্ধান্ত নিবে। 

রাকিবুল বলেন, আমরা আজকে কিন্তু ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করতে পারতাম। কিন্তু আমাদের নতুন কমিটি হয়েছে। আমরা আমাদের মাননীয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি স্যারসহ তাদের বরাবর বারবার যোগাযোগ করে যাচ্ছি। ক্যাম্পাসে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির যাতে সৃষ্টি না হয় সেজন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঈদের পর যখন ক্যাম্পাস খুলবে, সাধারণ শিক্ষার্থীরা আসবে, তখন তাদের উপস্থিতিতে আমাদের যে সাংবিধানিক অধিকার এবং তারা যে দোহাই দিচ্ছে সংবিধান, সেই অধিকারের সফল বাস্তবায়ন আমরা দেখতে পারবো, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করবো৷… 

অর্থাৎ, ছাত্রদল সভাপতি বুয়েট নয়, ঈদের পর ঢাবিতে প্রবেশের বিষয়ে স্পষ্ট করেই বলেছেন তার বক্তব্যে। 

তাছাড়া, এই সংবাদ সম্মেলন সংক্রান্ত অন্যান্য গণমাধ্যমের সংবাদেও (, , ) উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো তথ্য মেলেনি।  

মূলত, ছাত্র রাজনীতি ইস্যুতে গত কিছুদিন ধর উত্তাল রয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। এর প্রেক্ষিতে  গত ০৩ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলনে আসে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে বিষয়ে ০৩ এপ্রিল মূলধারার সংবাদমাধ্যম ‘চ্যানেল২৪’ এর সংবাদ প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, “ঈদের পর বুয়েটে ঢুকছে ছাত্রদল।” কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম এমন মন্তব্য করেননি। প্রকৃতপক্ষে, তিনি ঈদের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের বিষয়ে জানান। 

সুতরাং, সংবাদ সম্মেলনে এসে ঈদের পর ছাত্রদল ঢাবিতে প্রবেশের বিষয়ে জানানোর তথ্যকে বুয়েটে প্রবেশের বিষয়ে জানানোর দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর৷।

তথ্যসূত্র

  • বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল: Facebook Live
  • Rumor Scanner’s own analysis

ওবায়দুল কাদের গ্রেফতার ও পিটার হাসের নির্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফাঁসির গুজব

সম্প্রতি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গ্রেফতার হয়েছেন এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নির্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।

ইউটিউবে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গ্রেফতার হননি এবং মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফাঁসি হওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে, অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার থাম্বনেইল এবং শিরোনাম ব্যবহার করে ভিন্ন ঘটনার একাধিক ভিডিও যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে৷

অনুসন্ধানের শুরতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যলোচনা করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে ভিডিওটির শুরুতে এর উপস্থাপককে ‘এবার শেখ হাসিনার সামনে যমদূত হিসেবে দাঁড়িয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। পিটার হাসের মাধ্যমে শেখ হাসিনার পদত্যাগ হবে। আর তার পদত্যাগের পর আবারও গণতান্ত্রিক ধারায় বিএনপির অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসবে বিএনপি এমনটাই আশা করছে আমেরিকা। সেই সাথে দেখতে পারবেন এবার ওবায়দুল কাদেরকে গ্রেফতার করার জন্যে ড. আসিফ নজরুলের কঠিন হুমকি। কেন ওবায়দুল কাদেরকে গ্রেফতার হচ্ছে না তা থাকবে বিস্তারিত।’ শীর্ষক মন্তব্য করতে শোনা যায়। এর পরবর্তীতে ভিডিওটি না টেনে দেখার অনুরোধ জানিয়ে দর্শকদের উদ্দেশ্যে একজন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টের একটি ভিডিও এবং অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলের একটি টকশো-র ভিডিও দেখানো হয়। 

ভিডিও যাচাই ১

আলোচিত ভিডিওর শুরুতে দেখানো অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টের ভিডিওটি অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে Saqeeb’s Opinion নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে সরকারের বিরুদ্ধে ঘোষণা দিয়ে মাঠে নামলেন পিটার হাস? Saqeeb’s Opinion।  শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Youtube

ভিডিওটি পর্যালোচনার মাধ্যমে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওতে দেখানো অ্যাক্টিভিস্টের ভিডিওটির সাথে এটির হুবহু মিল রয়েছে। তবে আলোচিত ভিডিওটিতে মূল ভিডিওর মিরর ভার্সন দেখানো হয়েছে। 

Video Comparison by Rumor Scanner 

এছাড়াও জানা যায়, ভিডিওটি মূলত সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের লেখা একটি কলামকে নিয়ে তৈরি। যেখানে সাকিব আনোয়ার নামের উক্ত অনলাইন অ্যাক্টিভেস্ট কলামটি বিষয়ে তার মতামত জানান। যার সাথে আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই।

ভিডিও যাচাই ২

আলোচিত ভিডিওতে অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলের টকশোর ভিডিওটি অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে চ্যানেল আই-র জনপ্রিয় টকশো তৃতীয় মাত্রা-এর ইউটিউচ চ্যানেলে ২০২৩ সালের ১ নভেম্বর  গণতন্ত্রের সমর্থনে বৈশ্বিক চাপ বাড়ছে | অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল |অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান|Episode 7396 শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি টকশোর ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Youtube

উক্ত ভিডিওটি পর্যলোচনার মাধ্যমে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওতে দেখানো টকশোর ভিডিওর সাথে এটির হুবহু মিল রয়েছে। ভিডিওটির ক্ষেত্রেও পূর্বের ফুটেজের ন্যায়  ভিডিওর মিরর ভার্সন দেখানো হয়েছে।

Video Comparison by Rumor Scanner 

পাশাপাশি জানা যায়, উক্ত টকশোতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। টকশোতে তারা বাংলাদেশের রাজনীতিতে বৈশ্বিক চাপ নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি গত বছরের ২৮ অক্টোবর রাজধানীর পল্টনে আয়োজিত বিএনপির মহাসমাবেশ নিয়েও আলোচনা করেন। যার সাথেও আলোচিত দাবিগুলোর কোনো প্রকার সম্পর্ক নেই।

পরবর্তীতে ওবায়দুল কাদেরের গ্রেফতার হওয়া এবং মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে প্রচারিত তথ্যটির সত্যতা যাচাইয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমেও গণমাধ্যম কিংবা কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে আলোচিত দাবির পক্ষে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

মূলত, গত ১৫ মার্চ জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে ‘বাংলাদেশের সামনে যে সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক শিরোনামে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের লেখা একটি কলাম প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে উক্ত কলাম বিষয়ে সাকিব আনোয়ার নামের এক অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট তার ইউটিউব চ্যানেলে একটি মন্তব্যধর্মী ভিডিও প্রচার করেন। যার কিছু অংশের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলের একটি টকশোর কিছু অংশ যুক্ত করে একটি ভিডিও তৈরি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গ্রেফতার হয়েছেন এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নির্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে শীর্ষক একটি তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরর গ্রেফতার হওয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নির্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফাঁসি হওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।

সুতরাং, ওবায়দুল কাদের গ্রেফতার হয়েছেন এবং পিটার হাসের নির্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

StopNCII ইন্টারনেটের সকল মাধ্যম থেকে আপত্তিকর ছবি-ভিডিও সরাতে সক্ষম নয়

StopNCII নামের একটি ওয়েবসাইটের বিষয়ে অন্তত গত বছর থেকে বিভিন্ন তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে। এ সংক্রান্ত পোস্টগুলোতে দাবি করা হচ্ছে, যদি কেউ AI বা ফটোশপ দিয়ে আপনার ছবি এডিট করে nude ছবি তৈরি করে তাহলে আপনি stopncii ওয়েবসাইটে গিয়ে আসল ছবি আর এই এডিটেড ছবি জমা দিবেন, তাহলেই তারা ইন্টারনেট এর যত জায়গায় এই এডিটেড ছবি আছে তা সরিয়ে দিবে। এর জন্য আপনার কারো সাথে সরাসরি কথা ও বলা লাগবে না। নিজের পরিচয় ও গোপন থাকবে।

উক্ত দাবিতে সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিতে ২০২৩ সালের ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, স্টপএনসিআইআই (stopncii) ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেটের সকল মাধ্যম থেকে ছবি সরানো যায় না বরং নির্দিষ্ট কিছু পার্টনার প্রতিষ্ঠানে থাকা আপত্তিকর ছবি-ভিডিও সরানো গেলেও এই প্রকল্পের নানা সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই এই সেবা কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারছে না৷ 

ইংরেজি Stopncii শব্দটির পূর্ণরূপ Stop Non-Consensual Intimate Image Abuse যার বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়ায় অ-সম্মতিমূলক অন্তরঙ্গ চিত্র অপব্যবহার বন্ধ করুন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক এই উদ্যোগের পেছনে রয়েছে দাতব্য সংস্থা সাউথ ওয়েস্ট গ্রিড ফর লার্নিং (SWGfL)। ২০০০ সালে চালু হওয়া সংস্থাটি ২০১৫ সালে রিভেঞ্জ পর্ণ হেল্পলাইন (RPH) নামে একটি প্রকল্প চালু করে যার অধীনে ২০১৮ সালে স্টপএনসিআইআই এর যাত্রা শুরু।   

স্টপএনসিআইআই এর ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ইমেজ হ্যাশিং পদ্ধতির মাধ্যমে তারা অনলাইন থেকে ছবি সরানোর কাজ করে থাকে। ইমেজ হ্যাশিং এমন এক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একটি অ্যালগরিদম ব্যবহার করে একটি ছবি বা স্থিরচিত্রের একটি মৌলিক হ্যাশ ভ্যালু তৈরি করা হয়। সংশ্লিষ্ট ছবিটির সকল কপি এই হ্যাশ ভ্যালুর আওতায় চলে আসে। এজন্য এটিকে কখনও কখনও ডিজিটাল ফুটপ্রিন্টও বলা হয়। স্টপএনসিআইআই কর্তৃপক্ষ পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট হ্যাশ তাদের পার্টনারদের কাছে পাঠায়। পার্টনাররা তাদের প্লাটফর্ম থেকে ছবিটি সরাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকে৷ 

স্টপএনসিআইআই এর বর্তমানে চার ধরণের পার্টনার রয়েছে। ইন্ড্রাস্ট্রি পার্টনারস, গ্লোবাল নেটওয়ার্ক অফ পার্টনারস, এক্সপার্ট পার্টনারস এবং সাপোর্টারস। এর মধ্যে ইন্ড্রাস্ট্রি পার্টনারস যারা তারাই মূলত তাদের প্লাটফর্ম থেকে সংশ্লিষ্ট ছবিটি সরিয়ে ফেলার কাজ করে৷ এই পার্টনাররা হলো ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, থ্রেড, টিকটক, বাম্বল, পর্ণহাব, রেডডিট, অনলি ফ্যানস, স্ন্যাপ ইন., নিয়ানটিক। 

এ বিষয়ে জানতে রিউমর স্ক্যানার টিম সরাসরি সাউথ ওয়েস্ট গ্রিড ফর লার্নিং (SWGfL) কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছে। তারা বলছেন, তাদের সেবা বর্তমানে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, থ্রেড, টিকটক, বাম্বল, রেডডিট, অনলি ফ্যানস, স্ন্যাপ ইন. এবং আয়লোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তারা এটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, এসব পার্টনারদের প্লাটফর্মে পাবলিশ পোস্টে সংশ্লিষ্ট ছবি-ভিডিও থাকলেই তা সরাতে পারে পার্টনাররা। তবে ব্যক্তিগত পর্যায়ে যেমন ফেসবুক মেসেঞ্জার বা ইন্সটাগ্রাম ইনবক্সে এসব ছবি-ভিডিও থাকলে তা সরানো সম্ভব হয় না। 

একইসাথে এটাও বলছেন যে, পার্টনার প্লাটফর্ম থেকে ছবি-ভিডিওগুলো সরানো গেলেও সংশ্লিষ্টদের ডিভাইস বা গ্যালারিতে সেসব থেকে যায়। তা সরানো সম্ভব নয়৷ 

স্টপএনসিআইআই এর প্রশ্ন-উত্তর সেকশন থেকে এই ব্যবস্থার আরেকটি সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানা যায়। স্টপএনসিআইআই কর্তৃপক্ষ বলছে, যখন কেউ তাদের ওয়েবসাইটে কোনো ছবি বা ভিডিও সরাতে আবেদন করে তখন সংশ্লিষ্ট পার্টনার প্লাটফর্ম থেকে সাবমিট করা ছবি-ভিডিওর সাথে হুবহু মিল থাকা ছবি-ভিডিওগুলোই সরাতে পারেন তারা। তবে উক্ত ছবি-ভিডিও যদি ক্রপ করে, সম্পাদনাট করে বা ফিল্টারের মাধ্যমে প্রচার করা হয় তাহলে তা সরানো যায় না হুবহু মিল না থাকায়৷ তাছাড়া, একবার ছবি ও ভিডিও সরিয়ে ফেলা হলে আবার যদি কেউ তা প্রকাশ করে সেক্ষেত্রেও সেটি একই হ্যাশের আওতায় সরানো যায় না৷ সেটি আলাদা হ্যাশের মাধ্যমে সরাতে হয়। 

Screenshot: Facebook 

মূলত, স্টপএনসিআইআই (StopNCII) নামের একটি ওয়েবসাইট ইন্টারনেটের সকল উৎস থেকে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি বা ভিডিও সরাতে কাজ করে শীর্ষক একটি দাবি প্রচার হয়ে আসলেও রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে এর সত্যতা মেলেনি। প্রকৃতপক্ষে, বর্তমানে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, থ্রেড, টিকটক, বাম্বল, রেডডিট, অনলি ফ্যানস, স্ন্যাপ ইন. এবং আয়লোর পাবলিক পোস্ট থেকে আবেদনের ভিত্তিতে ছবি-ভিডিও সরানো গেলেও ব্যক্তিগত পর্যায়ে যেমন ফেসবুক মেসেঞ্জার বা ইন্সটাগ্রাম ইনবক্স থেকে এসব ছবি-ভিডিও সরানো যায় না৷ তাছাড়া, পার্টনার প্লাটফর্ম থেকে ছবি-ভিডিওগুলো সরানো গেলেও সংশ্লিষ্টদের ডিভাইস বা গ্যালারিতে সেসব থেকে যায়। তা সরানো সম্ভব নয়৷ এছাড়া, যখন কেউ তাদের ওয়েবসাইটে কোনো ছবি বা ভিডিও সরাতে আবেদন করে তখন সংশ্লিষ্ট পার্টনার প্লাটফর্ম থেকে সাবমিট করা ছবি-ভিডিওর সাথে হুবহু মিল থাকা ছবি-ভিডিওগুলোই সরাতে পারেন তারা। তবে উক্ত ছবি-ভিডিও যদি ক্রপ করে, এডিট করে বা ফিল্টারের মাধ্যমে প্রচার করা হয় তাহলে তা সরানো যায় না হুবহু মিল না থাকায়৷ একবার ছবি ও ভিডিও সরিয়ে ফেলা হলে আবার যদি কেউ তা প্রকাশ করে সেক্ষেত্রেও সেটি একই হ্যাশের আওতায় সরানো যায় না৷ সেটি আলাদা হ্যাশের মাধ্যমে সরাতে হয়।

সুতরাং, StopNCII ইন্টারনেটের সকল মাধ্যমে থেকে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও সরাতে পারে শীর্ষক দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

  • Stopncii: Website 
  • Statement from SWGfL Authority
  • Rumor Scanner’s own analysis