ইরাকি বংশোদ্ভূত সালওয়ান মোমিকা ২০১৮ সালে সুইডেনে আসেন এবং ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে সুইডেন সরকার তাকে তিন বছরের জন্য বসবাসের অনুমতি দেয়। সুইডেনে অবস্থানকালে তিনি একাধিকবার প্রকাশ্যে ইসলাম ধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ কোরআন পুড়িয়ে বিতর্ক ও সমালোচনার সৃষ্টি করেন। অভিবাসন আবেদনে ভুল তথ্য প্রদানের অভিযোগে ২০২৩ সালের অক্টোবরে তার বসবাসের অনুমতি নবায়নের আবেদন সুইডেনের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ নাকচ করে দেয়। গত ২৭ মার্চ তিনি তার এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে জানান, তিনি সুইডেন ত্যাগ করে নরওয়েতে আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছেন এবং বর্তমানে সেখানে অবস্থান করছেন। পরবর্তীতে, তাকে নরওয়েতে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে দাবিতে একটি তথ্য নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।

উক্ত দাবিতে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন দেখুন দেশ টিভি, স্বদেশ প্রতিদিন, ডেইলি মেসেঞ্জার (ফেসবুক) এবং ফেস দ্য পিপল (ফেসবুক)।
একই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নরওয়েতে সালওয়ান মোমিকার মরদেহ পাওয়ার সংবাদটি সত্য নয় বরং বর্তমানে তিনি নরওয়েজিয়ান পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।
সম্প্রতি সালওয়ান মোমিকা সুইডেন ছেড়ে নরওয়ে গিয়েছেন এই তথ্য প্রকাশের পর নরওয়েতে তার মৃত্যু নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন দাবি ছড়িয়ে পড়ে।
গত ১ এপ্রিল ভাসিফ আয় (Vasıf Ay) নামের তুরস্ক ভিত্তিক এক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে করা পোস্টে (আর্কাইভ) কোনো তথ্যসূত্র ব্যতীত দাবি করা হয়, “নরওয়েতে একজন কুর্দ সালওয়ান মোমিকাকে হত্যা করেছে বলে শোনা যাচ্ছে।”

এদিকে গত ০১ এপ্রিল সালওয়ান মোমিকার উইকিপিডিয়া নিবন্ধ এডিট করে সেদিন তার মৃত্যুর তারিখ হিসেবে যুক্ত করা হয়।
এরপর নরওয়েতে তার মরদেহ পাওয়া গেছে দাবিতে সামাজিক মাধ্যম এক্সে অসংখ্য পোস্ট হতে (১,২,৩) থাকে। তবে এসব পোস্টগুলোতেও নির্দিষ্ট কোনো সূত্রের উল্লেখ ছিল না। মরদেহ পাওয়া গেছে দাবি করা হলেও পোস্টগুলোতে মরদেহের কোনো ছবি যুক্ত করা হয়নি।
এসব এক্স পোস্টের বরাতে ভারতীয় একাধিক গণমাধ্যম (১,২,৩) তার মৃত্যুর সংবাদ প্রচার করে। পরবর্তীতে ভারতের গণমাধ্যমের বরাতে বাংলাদেশের কতিপয় গণমাধ্যমেও এ বিষয়ে সংবাদ প্রচার হয়।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে সুইডিশ ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা কেলক্রিটিকব্যুরান (Källkritikbyrån) এবং নরওয়েজিয়ান ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা ফ্যাক্টিস্কের (Faktisk) সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
গত ৩ এপ্রিল কেলক্রিটিকব্যুরান আমাদের জানায়, তারা এখনও এই বিষয়টি যাচাই করতে পারেনি। তবে তারা সুইডেন ভিত্তিক সুইডিশ-আরবি ভাষার সংবাদমাধ্যম আলকম্পিসে এই বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের কথা আমাদের জানায়।
আলকম্পিসের উক্ত প্রতিবেদনে নরওয়েজিয়ান গণমাধ্যম ডকুমেন্টের বরাতে জানানো হয়, নরওয়েজিয়ান পুলিশের ইমিগ্রেশন ইউনিট সালওয়ান মোমিকাকে মৃত পাওয়ার ব্যাপারে অবগত নয়।
গতকাল ৪ এপ্রিল নরওয়েজিয়ান ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা ফ্যাক্টিস্ক রিউমর স্ক্যানারকে জানায়, সালওয়ান মোমিকা গত সপ্তাহে নরওয়ে পৌঁছানোর পর থেকে পুলিশ হেফাজতে আছেন। তিনি নরওয়েতে আশ্রয় চেয়েছেন, তবে যত দ্রুত সম্ভব তাকে সুইডেনে ফেরত পাঠানো হবে।
এই তথ্যের সূত্র হিসেবে নরওয়েজিয়ান সংবাদমাধ্যম ভের্ডেনস গ্যাংয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদেন পাঠায় তারা। উক্ত প্রতিবেদনের সূত্রে নরওয়ে এবং সুইডেনের আরো দুইটি গণমাধ্যমে (১,২) একই বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

নরওয়েজিয়ান সংবাদমাধ্যম ফিল্টার নিউজের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নরওয়ে আগমনের পরিপ্রেক্ষিতে সালওয়ান মোমিকাকে গত ২৮ মার্চ নরওয়েজিয়ান পুলিশ আটক করে, এবং সে গত কয়েকদিন ধরে পুলিশের ইমিগ্রেশন কেন্দ্রে বন্দি রয়েছেন।
আরো জানা যায়, নরওয়েজিয়ান পুলিশ তাকে জাতীয় সুরক্ষার জন্য হুমকি হিসেবে গণ্য করছে এবং এর ফলে তাকে দ্রুততম সময়ে সুইডেনে প্রেরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।
এছাড়া একই বিষয়ে সুইডিশ সংবাদমাধ্যম আফটোনব্লাদেটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। জানা যায়, সুইডেনের মাইগ্রেশন এজেন্সির প্রেস ম্যানেজার বার্তা সংস্থা টিটিকে জানিয়েছে, তারা নরওয়ের অনুরোধটি (সালওয়ান মোমিকে ফেরত পাঠানোর সম্পর্কিত) গ্রহণ করেছে।
মূলত, সুইডেনে একাধিকবার প্রকাশ্যে কোরআন পুড়িয়ে বিতর্কিত ইরাকি বংশোদ্ভূত সালওয়ান মোমিকা সম্প্রতি সুইডেন ছেড়ে নরওয়ে পাড়ি জমান। নরওয়ে গমনের পর সেখানে তার মরদেহ পাওয়া গেছে এমন একটি দাবি নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে এবং নরওয়েজিয়ান ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, সুইডেন ছেড়ে নরওয়ে যাওয়ার পর গত ২৮ মার্চ নরওয়েজিয়ান পুলিশ তাকে আটক করে। এখন তিনি নরওয়েজিয়ান পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।
সুতরাং, সুইডেনে প্রকাশ্যে কোরআন পুড়িয়ে বিতর্কিত সালওয়ান মোমিকার মরদেহ নরওয়েতে পাওয়া যাওয়ার দাবিটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Rumor Scanner’s own analysis.
- Verdens Gang – Koranbrenner Salwan Momika pågrepet – sendes tilbake til Sverige
- Aftonbladet – Momika gripen i Norge – utvisas till Sverige
- Filter Nyheter – «Trussel mot grunnleggende nasjonale interesser»: Kjent koranbrenner pågrepet da han ankom Norge – skal utvises «så raskt som mulig»
- Aftonbladet – Momika gripen i Norge – utvisas till Sverige