মৃত্যুর গুজব ছড়ানোর প্রতিবাদে সালওয়ান মোমিকা আবারও কোরআন পুড়িয়েছেন দাবিতে গুজব 

ইরাকি বংশোদ্ভূত সালওয়ান মোমিকা একাধিকবার প্রকাশ্যে ইসলাম ধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ কোরআন পুড়িয়ে বিতর্ক ও সমালোচনার সৃষ্টি করেন। সম্প্রতি, তিনি সুইডেন ছেড়ে নরওয়ে পাড়ি জমানোর ঘোষণা দেন। এরইমধ্যে নরওয়েতে তার মৃত্যু হয়েছে শীর্ষক একটি গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে এই গুজবের রেশ কাটতে না কাটতেই ‘মৃত্যুর গুজবের প্রতিবাদে আবারও প্রকাশ্যে এসে কুরআন পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন সালওয়ান মোমিকা’ শীর্ষক একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

মৃত্যুর গুজব

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সালওয়ান মোমিকা সম্প্রতি কোরআন পোড়াননি বরং তিনি সুইডেন ছেড়ে নরওয়ে যাওয়ার পর গত ২৮ মার্চ নরওয়েজিয়ান পুলিশ তাকে আটক করে। এখন তিনি নরওয়েজিয়ান পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। 

গুজবের সূত্রপাত 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ০৩ এপ্রিল Asad Noor নামক একটি ফেসবুক গ্রুপে ‘নাকে দড়ি বাঁধা উটের পিঠে চড়ে’ নামক একটি ফেসবুক পেজ থেকে আলোচিত দাবিতে সম্ভাব্য প্রথম পোস্টটি (আর্কাইভ) করা হয়।

Screenshot: Facebook

পরবর্তীতে তথ্যটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। 

আলোচিত দাবির বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গণমাধ্যম ও বিশ্বস্ত সূত্রে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

নরওয়েজিয়ান সংবাদমাধ্যম ফিল্টার নিউজে “ «Trussel mot grunnleggende nasjonale interesser»: Kjent koranbrenner pågrepet da han ankom Norge – skal utvises «så raskt som mulig»” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নরওয়ে আগমনের পরিপ্রেক্ষিতে সালওয়ান মোমিকাকে গত ২৮ মার্চ নরওয়েজিয়ান পুলিশ আটক করে, এবং সে গত কয়েকদিন ধরে পুলিশের ইমিগ্রেশন কেন্দ্রে বন্দি রয়েছেন।

আরো জানা যায়, নরওয়েজিয়ান পুলিশ তাকে জাতীয় সুরক্ষার জন্য হুমকি হিসেবে গণ্য করছে এবং এর ফলে তাকে দ্রুততম সময়ে সুইডেনে প্রেরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।

এছাড়া একই বিষয়ে সুইডিশ সংবাদমাধ্যম আফটোনব্লাদেটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সুইডেনের মাইগ্রেশন এজেন্সির প্রেস ম্যানেজার বার্তা সংস্থা টিটিকে জানিয়েছে, তারা নরওয়ের অনুরোধটি (সালওয়ান মোমিকে ফেরত পাঠানোর সম্পর্কিত) গ্রহণ করেছে।

এ সংক্রান্ত দাবিগুলোতে যে ছবিটি যুক্ত করা হয়েছে তা সালওয়ান মোমিকার গত ২৭ মার্চে সুইডেন যাওয়া সংক্রান্ত এক্স পোস্টেই খুঁজে পাওয়া যায়৷ এরপরই তিনি আটক হন। তাই ছবিটিও এই দাবির সাথে প্রাসঙ্গিক নয়। 

মূলত, সুইডেনে একাধিকবার প্রকাশ্যে কোরআন পুড়িয়ে বিতর্কিত ইরাকি বংশোদ্ভূত সালওয়ান মোমিকা সম্প্রতি সুইডেন ছেড়ে নরওয়ে পাড়ি জমান। নরওয়ে গমনের পর সেখানে তার মরদেহ পাওয়া গেছে এমন একটি গুজব নেট জগতে ভাইরাল হয়। এরই মধ্যে, ‘মৃত্যুর গুজবের প্রতিবাদে আবারও প্রকাশ্যে এসে কুরআন পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন সালওয়ান মোমিকা’ শীর্ষক একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সালওয়ান মোমিকা সম্প্রতি কোরআন পোড়াননি। প্রকৃতপক্ষে, সালওয়ান মোমিকা সুইডেন ছেড়ে নরওয়ে যাওয়ার পর গত ২৮ মার্চ নরওয়েজিয়ান পুলিশ তাকে আটক করে। এখন তিনি নরওয়েজিয়ান পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। 

সুতরাং, ‘মৃত্যুর গুজবের প্রতিবাদে আবারও প্রকাশ্যে এসে কুরআন পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন সালওয়ান মোমিকা’ শীর্ষক দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img