মোবাইলে আসক্ত মা কর্তৃক শিশুকে ফ্রিজে ভরে রাখার ভাইরাল ভিডিওটি স্ক্রিপ্টেড

সম্প্রতি মোবাইলে আসক্ত মা সবজির বদলে নিজের শিশুকে রেফ্রিজারেটরে ভরে রাখার দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।

দাবিকৃত ভিডিওতে দেখা যায়, ফোনে মগ্ন এক মা কাজ করার সময় খাবার রাখার পরিবর্তে নিজের অজান্তেই তার কোলের শিশুকে রেফ্রিজারেটরে ভরে রাখেন। কিছুক্ষণ পরে শিশুটির বাবা উপস্থিত হন এবং সন্তানের অবস্থান সম্পর্কে স্ত্রীর কাছে জিজ্ঞাসা করেন। সন্তানকে না দেখে চারপাশে খোঁজা শুরু করেন। অবশেষে, কান্নার শব্দ অনুসরণ করে শিশুটিকে রেফ্রিজারেটর থেকে উদ্ধার করা হয়।

 শিশুকে ফ্রিজে

উক্ত দাবিতে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন দেখুন ইনকিলাব, খবর সংযোগ, জুম বাংলা, আলোকিত প্রতিদিন, এমটিনিউজ২৪


ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মোবাইলে আসক্ত মায়ের সবজির বদলে নিজের শিশুকে রেফ্রিজারেটরে ভরে রাখার ভাইরাল ভিডিওটি বাস্তব কোনো ঘটনার নয় বরং শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে নির্মিত একটি ভিডিও বাস্তব দাবি করে প্রচারিত হয়েছে।

ভিডিওটি সম্পর্কে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভিডিওটি প্রাথমিকভাবে ভারত ভিত্তিক কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্টে (,,) প্রচারিত হয়েছিল। এর পরবর্তীতে, বিষয়টি নিয়ে ভারতের গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টিভিতে  বাস্তব দাবিতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর বাংলাদেশের কিছু গণমাধ্যমেও এই বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ পায়।

বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে প্রচারিত ভিডিওগুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। গত ৩০ মার্চ নরেন্দ্র মোদি পরিবার (আর্কাইভ) নামের একটি এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে এ বিষয়ে প্রচারিত ৪ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের ভিডিওর শেষ ফ্রেমে একটি ডিসক্লেইমার দেখা যায়। বলা হয়, এই ভিডিও ফুটেজটি জনসচেতনতার উদ্দেশ্যে প্রকাশিত হয়েছে, যাতে মানুষ বুঝতে পারে বাস্তব জীবনের পরিস্থিতিগুলি কেমন হতে পারে।

Image: Viral Video. 

পরবর্তীতে উক্ত ডিসক্লেইমারের সূত্রে ভারতীয় ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা ফ্যাক্টলির ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ২০ অক্টোবর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে তৈরি কিছু স্ক্রিপ্টেড ভিডিও বাস্তব দাবিতে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া প্রসঙ্গে প্রকাশিত এই ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনে উল্লিখিত একটি ভিডিওতে আলোচিত ভিডিওটির মতো হুবহু একই ডিসক্লেইমার ব্যবহার হতে দেখা যায়।

সেই সূত্রে থার্ড আই (3RD EYE) নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল খুঁজে পাওয়া যায়। চ্যানেলটি ঘুরে আলোচ্য ভিডিওটির মতো একই ধরণের অসংখ্য ভিডিও দেখা যায়। ভিডিওগুলোর শেষেও একই ধরণের ডিসক্লেইমার ব্যবহার করতে দেখা যায়। চ্যানেলটির অ্যাবাউট সেকশন থেকে জানা যায়, সেখানে প্রতিদিন অ্যাকশন, ড্রামা, কমেডি এবং তথ্যপূর্ণ বিভিন্ন ভিডিও পোস্ট করা হয়।

তবে শিশুকে ফ্রিজে রাখার আলোচ্য ভিডিওটি চ্যানেলটিতে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ইউটিউব চ্যানেলের সূত্রে থার্ড আইয়ের ফেসবুক পেজও খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানেও এই ভিডিওটি পাওয়া যায়নি।

তবে থার্ড আইয়ের ফেসবুকে পেজে সঞ্জানা গালরানি (Sanjjanaa Galrani) নামের একটি ফেসবুক পেজের পোস্ট নিয়মিত শেয়ার হতে দেখা যায়। সে সূত্রে সঞ্জানা গালরানির পেজে অনুসন্ধান করে গত ২৮ মার্চ প্রকাশিত মূল ভিডিওটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয়, এটি শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে তৈরি একটি স্ক্রিপ্টেড ভিডিও। 

Screenshot: Facebook.

মূলত, সম্প্রতি মোবাইলে আসক্ত মায়ের সবজির বদলে নিজের শিশুকে রেফ্রিজারেটরে ভরে রাখার একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়। ভিডিওটি নিয়ে ভারত এবং বাংলাদেশের গণমাধ্যমে বাস্তব দাবিতে সংবাদ প্রচার হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এটি একটি স্ক্রিপ্টেড ভিডিও। জনসচেতনতার উদ্দেশ্যে এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

সুতরাং, মোবাইলে আসক্ত মায়ের সবজির বদলে নিজের শিশুকে রেফ্রিজারেটরে ভরে রাখা সংক্রান্ত একটি স্ক্রিপ্টেড ভিডিও বাস্তব ঘটনা দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img