বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরছে, মেয়েদের জন্য বাধ্যতামূলক হচ্ছে বোরখা, হারাম প্রেম নিষিদ্ধ দাবিতে জাতীয় দৈনিক নয়া দিগন্ত এর লোগো সম্বলিত একটি ফটোকার্ড ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরছে শীর্ষক তথ্যে বা শিরোনামে নয়া দিগন্ত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং গণমাধ্যমটির ফটোকার্ডের আদলে ভুয়া তথ্য সম্বলিত নকল এই ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণে এতে নয়া দিগন্তর লোগো থাকার বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হয়। পরবর্তীতে নয়া দিগন্তর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করে উক্ত শিরোনাম সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। অন্য কোনো মূলধারার গণমাধ্যমেও উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তাছাড়াও নয়া দিগন্তর ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলোর সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির শিরোনামের লেখার সাথে নয়া দিগন্ত এর ফটোকার্ডের শিরোনাম লেখার ফন্ট ও কালারের মধ্যে ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া, ‘ইবিতে ফিরছে শিবির’ লেখাটি বন্ধনীর মধ্যে থাকায় অসামঞ্জস্যতা লক্ষ্য করা যায়।
Photocard Comparison: Rumor Scanner
নয়া দিগন্তর ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণে গত ০৯ আগস্ট এই বিষয়ে একটি ফটোকার্ড পোস্টের মাধ্যমে উল্লেখ করা হয় ‘এমন কোনো খবর নয়া দিগন্ত প্রচার করেনি।’
সুতরাং, ছাত্রশিবির ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরছে তথ্যে বা শিরোনামে ‘নয়া দিগন্ত’ লোগো ব্যবহার করে ইন্টারনেটে প্রচারিত ফটোকার্ডটি সম্পূর্ণ ভুয়া ও বানোয়াট।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলনের পথ ধরে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে গত ০৫ আগস্ট পদত্যাগ করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিদায় নিয়েছে তার সরকার। ভেঙে দেওয়া হয়েছে ১২তম জাতীয় সংসদ। এরই প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতা, সরকারের মন্ত্রী ও এমপিদের দেশ ছাড়ার চেষ্টা বা আত্মগোপনে যাওয়ার খবর আসছে গণমাধ্যমে। সম্প্রতি হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হক (ব্যারিস্টার সুমন) লন্ডনে পালিয়ে গিয়েছেন দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং এটি গত বছরের অক্টোবরে ব্রাজিলের সাবেক ফুটবলার রোনালদিনহো বাংলাদেশে আসার অনুষ্ঠানের।
অনুসন্ধানে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে বেসরকারি ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম একাত্তর টিভির ক্রীড়া সাংবাদিক অর্ণব বাপিকে লক্ষ্য করা যায়।
Screenshot: Facebook
ঘটনার প্রেক্ষাপট জানতে তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, “এই ফুটেজটি প্রায় এক বছর আগের। নির্দিষ্ট তারিখ এই মুহুর্তে মনে নেই সেদিন ব্রাজিলিয়ান সাবেক ফুটবলার রোনালদিনহো বাংলাদেশে এসেছিল। ঢাকার হোটেল রেডিসন ব্লু’তে আমাদের সংবাদকর্মীদের আমন্ত্রণ ছিল। আয়োজকদের সাথে মিডিয়ার প্রেস কনফারেন্স কভার নিয়ে ঝামেলা হয়। তখন ব্যারিস্টার সুমন আমাদের অনুরোধ জানায় অনুষ্ঠানটি কভারের জন্য। না হলে সে ও এখানে থাকবে না। সেটারই একটা ছোট্ট মুহুর্ত এটা।”
পরবর্তী অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক সমকালের ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ১৮ অক্টোবর “রোনালদিনহো’র অনুষ্ঠান বয়কট করলেন সাংবাদিকরা, যা বললেন ব্যারিস্টার সুমন” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনের পরিবেশের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
Screenshot Comparison: Rumor Scanner
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত বছরের ১৮ অক্টোবর ব্রাজিলিয়ান সাবেক ফুটবলার রোনালদিনহো বাংলাদেশে আসার অনুষ্ঠানে আয়োজকের সাথে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের আসন নিয়ে বাগবিতণ্ডা হলে সাংবাদিকগণ উক্ত অনুষ্ঠান বয়কট করেন।
আরেক গণমাধ্যম নিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে “অপমানে রোনালদিনহোর অনুষ্ঠান বয়কট সাংবাদিকদের” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়।
উল্লেখ্য, সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হকের (ব্যারিস্টার সুমন) বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হক লন্ডনে পালিয়ে গিয়েছেন দাবিতে গত বছরের ভিন্ন ঘটনার ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জেলায় গত সপ্তাহ থেকে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান হাঁটু পানির মধ্যে দাড়িয়ে নামাজ পড়ছেন দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
সামাজিক মাধ্যমে ছবিটি পোস্ট করে ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয়, ‘চট্টগ্রাম থেকে ফেনী রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে নামাজের সময় প্রায় শেষের দিকে তাই পানিতেই নামাজ আদায় করেন সম্মানিত আমীরে জামায়াত’। এছাড়াও, উল্লেখ করা হয়, ‘আলহামদুলিল্লাহ্ শুকরিয়া আমরা সৌভাগ্যবান কারণ আমরা এমন একজন আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানকে পেয়েছি।’
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমানের নয় বরং, ছবিটি চট্টগ্রাম মহানগর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সেক্রেটারি আল মোহাম্মদ ইকবালের।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ছবির ব্যক্তির সাথে ডা. শফিকুর রহমান যে ধরনের টুপি পরেন তার পার্থক্য লক্ষ করা যায়।
Comparison: Rumor Scanner
পরবর্তী অনুসন্ধানে ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ‘Khondokhar Foysol Bin Mostofa’ নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওতে একই ব্যক্তির একই স্থানের নামাজ পড়ার দৃশ্য দেখা যায়। তবে ভিডিওটির ক্যাপশনে পানিতে নামাজ পড়ার প্রসঙ্গ টেনে সফর অবস্থায় নামাজ পড়ার বিষয়ে উল্লেখ করলেও এই ব্যক্তির পরিচয় সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি।
Screenshot: Khondokhar Foysol Bin Mostofa
পরবর্তীতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে ভিডিওতে তার সাথে সেফটি ভেস্ট পরিহিত আরও দুই ব্যক্তিকে নামাজ পড়তে দেখা যায়। সেফটি ভেস্টে আরবী ও বাংলায় ‘খেদমত’ এবং পাশে হাতপাখা সদৃশ একটি লোগো দেখতে পাওয়া যায় এবং নিচে চরমোনাই প্রয়াত পীর সৈয়দ ফজলুল করিমের নাম দেখতে পাওয়া যায়।
এছাড়াও, ভিডিওটিতে ‘আল মুহাম্মদ ইকবাল সেক্রেটারি ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগর’ শীর্ষক লেখা রয়েছে। অর্থাৎ, ভিডিওতে নামাজ আদায়কারী ব্যক্তিটিকে ইসলামী আন্দোলন চট্রগ্রাম মহানগরের সেক্রেটারি আল মোহাম্মদ ইকবাল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও অনুসন্ধানে ‘Md Nujrul Islam’ নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ২৭ আগস্ট আলোচিত বিষয়ে একটি পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টটিতে পানিতে নামাজরত ব্যক্তির পরিচয়ে মুখমণ্ডল চিহ্নিত করে অন্য একটি ছবি যুক্ত করা হয়।
Screenshot: Md Nujrul Islam
পোস্টে উল্লেখ করা হয়, ‘মিথ্যাচারের রাজনীতি বন্ধ হোক, যার কর্ম সে প্রচার করুন সমস্যা নেই তবে এ সমস্ত বিষয় নিয়েও এত বড় মিথ্যাচার কেন হবে? ইসলামী আন্দোলনের মহানগর নেতাদেরকে আমীরে জামায়াত বানানোর খুব প্রয়োজন হয়েছে নাকি?’
এছাড়াও উল্লেখ করা হয়, ‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগরের ত্যাগী নেতা মোঃ আল ইকবাল ভাইয়ের ফটো দিয়ে আমিরে জামায়াত বলে চালিয়ে দিচ্ছে। মানুষ তো লেবাস চেহারা দেখলেই বুঝবেন আদৌও সে জামায়াতের আমির নয়, পোস্ট কারীও হচ্ছে ওই ইসলামিক গ্রুপে এডমিন মুসলিম হিসেবে হলেও নিজের মঙ্গলের জন্য এই মিথ্যা অপপ্রচার না করলেই মনে হয় ভালো হতো, আল্লাহ আমাদের মিথ্যা অপপ্রচার থেকে বিরত রাখুন।’
পরবর্তীতে, মুখমণ্ডল চিহ্নিত করা ব্যক্তি সম্পর্কে জানতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ‘Islami Andolan Bangladesh’ পর্যবেক্ষণ করে বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রমে উক্ত ব্যক্তির উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।
সুতরাং, চট্টগ্রাম মহানগর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সেক্রেটারি আল মোহাম্মদ ইকবালের পানিতে নামাজ পড়ার ছবিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান হাঁটু পানির মধ্যে দাড়িয়ে নামাজ পড়ছেন দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
ডা. শফিকুর রহমানের ছবি: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ওয়েবসাইট
ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জেলায় গত সপ্তাহ থেকে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অর্ধকোটির বেশি। সরকারী হিসেবে এখন পর্যন্ত ৩১ জন মানুষের মৃত্যুর তথ্য জানা গেছে। সম্প্রতি এরই প্রেক্ষিতে বন্যার পাঁচটা আলাদা ফুটেজ সম্বলিত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, ফুটেজগুলো বাংলাদেশে চলমান বন্যা পরিস্থিতির দৃশ্যের।
তাছাড়া, উক্ত ভিডিও সংযুক্ত করে বাংলাদেশের বন্যার ভিডিও দাবিতে আরেকটি ফেসবুক পোস্টও প্রচার করা হয়েছে। তবে, পোস্টের দুইদিন পর ক্যাপশন এডিট করে “বাংলাদেশের” শব্দ বাদ দেওয়া হয়। ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত ভিডিওটি ১৬ লক্ষেরও অধিকবার চালু করা হয়েছে এবং ১৩ হাজারেরও অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটিতে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশে চলমান বন্যার নয়, বরং ভিন্ন ঘটনার একাধিক পুরনো ফুটেজের সমন্বয়ে তৈরি একটি পুরনো ভিডিও।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটিতে বাংলাদেশের কোনো উল্লেখযোগ্য স্থাপনা দৃষ্টিগোচর হয়নি। তাছাড়া, ভিডিওটির ক্যাপশন বা ভিডিওটিতে কোথাও এটি ধারণের স্থান সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়নি। অতঃপর, রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতিতে ফটো ও ভিডিও শেয়ারিং সামাজিক যোগাযোগ সেবা ইনস্টাগ্রামে ekuketv নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে গত ১৭ মে তারিখে প্রচারিত একটি ভিডিও এর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির প্রতিটি অর্থাৎ পাঁচটি ফুটেজের সাথে হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Comparison : Rumor Scanner
ভিডিওটির ক্যাপশন পড়ে এটি বন্যার ভিডিও বুঝা গেলেও ভিডিওটির স্থান বা প্রসঙ্গ সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য জানা যায়নি।
অধিকতর অনুসন্ধানে 罗翔 নামের একটি এক্স অ্যাকাউন্টে গত ৩১ মে তারিখে প্রচারিত একটি ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির প্রথম তিনটি ফুটেজের হুবহু মিল পাওয়া যায়৷ ভিডিওটির ক্যাপশনে স্থান হিসেবে গুইঝো নামের চীনের একটি প্রদেশের নাম উল্লেখ করা হয়।
অর্থাৎ, বন্যার স্থান সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া না গেলেও পুরনো একাধিক ভিন্ন ফুটেজের সমন্বয়ে তৈরি উক্ত ভিডিওটি বাংলাদেশে চলমান বন্যার নয়, এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় কেননা বাংলাদেশে চলমান ভয়াবহ বন্যা শুরু হওয়ার অন্তত প্রায় তিনমাস আগে থেকেই ভিডিওটি অনলাইনে নানা বিদেশি অ্যাকাউন্টে প্রচারিত হয়েছে।
অর্থাৎ, পুরনো একাধিক ভিন্ন ফুটেজের সমন্বয়ে তৈরি ভিডিওকে বাংলাদেশে চলমান ভয়াবহ বন্যার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বোরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বীরশ্রেষ্ঠ হিসেবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান করেছেন দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কোটা আন্দোলনে নিহত আবু সাঈদকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বীরশ্রেষ্ঠ হিসেবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়নি বরং, কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
আলোচিত দাবিটি সামাজিক মাধ্যমে অন্তত গত ০৬ আগস্ট থেকে প্রচারিত হয়ে আসতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। এ বিষয়ে অনুসন্ধানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট এবং আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে আবু সাঈদকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বীরশ্রেষ্ঠ হিসেবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদানের কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। গণমাধ্যমেও আবু সাঈদকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বীরশ্রেষ্ঠ স্বীকৃতি দিয়েছেন শীর্ষক তথ্যে কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি।
তবে, দৈনিক কালবেলার ওয়েবসাইটে গত ০৭ আগস্ট প্রকাশিত ‘আবু সাঈদকে জাতীয় বীরের মর্যাদা চায় পরিবার’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আবু সাঈদকে জাতীয় বীরের মর্যাদা চান তার পরিবার।
উল্লেখ্য, সেনাবাহিনী কর্তৃক নিহত আবু সাঈদের কবরে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানোর দাবিতে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে পূর্বে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যনার।
সুতরাং, আবু সাঈদকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বীরশ্রেষ্ঠের স্বীকৃতি প্রদান করেছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।
সরকার প্রধানের পদ ও দেশ ছেড়ে গত ৫ আগস্ট ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন শেখ হাসিনা। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিতে ১০ আগস্ট গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এসময় সেনাবাহিনী মহাসড়ক থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে গেলে উত্তেজিত জনতা তাদের ওপর ইট- পাটকেল ছুঁড়ে মারে সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয় এবং দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে। এ সময় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে একশনে যায় সেনা টহল দল। এরই প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনী কর্তৃক প্রহার হওয়ার দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিটি গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সাথে সেনাবাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনার নয় বরং এটি ভারতের মনিপুরের সীমান্তবর্তী এলাকায় দুইজন শ্রমিক দুর্বৃত্ত কর্তৃক আহত হওয়ার ছবি।
রিভার্স ইমেজ সার্চ করে Ukhrul Times নামক ভারতীয় গণমাধ্যমের ওয়েবসাইটে গত ৭ মার্চ “Two Meitei Pangal labourers beaten by armed miscreants in Manipur’s border town Moreh” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদনে যুক্ত ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Image Comparison: Rumor Scanner
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভারতের মণিপুরে ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত শহর মোরে এলাকায় নির্মাণ কাজের বালি ও পাথর নামাতে যাওয়া দুই শ্রমিককে কুকি-জো নামক সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা প্রহার করে।
সুতরাং, গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ পরবর্তী দৃশ্য দাবিতে ভারতের পুরোনো ছবি প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, হজ ও ওমরাহর খরচ কমিয়ে তা দুই থেকে আড়াই লাখ এবং পঞ্চাশ থেকে ষাট হাজার মধ্যে করা সম্ভব বলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা অধ্যাপক আ ফ ম খালিদ হোসেন জানিয়েছেন শীর্ষক একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, হজ ও ওমরাহের খরচ কমানোর বিষয়ে অর্থের পরিমাণ উল্লেখ করে ধর্ম উপদেষ্টা অধ্যাপক আ ফ ম খালিদ হোসেন মন্তব্য করেছেন শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং, তিনি হজের সিন্ডিকেটের কারণে হজ ও ওমরাহের খরচ বৃদ্ধির বিষয়ে আলাপ করলেও এই ব্যয় কমিয়ে দুই থেকে আড়াই লাখ এবং পঞ্চাশ থেকে ষাট হাজারের মধ্যে করার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
ভিডিওতে অন্তবর্তীকালীন সরকারের ধর্ম উপদেষ্টাকে হজ সিন্ডিকেট নিয়ে আলোচনা করতে দেখা যায়। তিনি বলেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের হজ যাত্রীদের বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় পবিত্র হজ পালনের জন্যে। এর কারণটি তিনি খতিয়ে দেখবেন এবং জড়িতদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবেন। কিন্তু তার বক্তব্যের কোথাও হজ এবং ওমরাহের ব্যয় কমিয়ে দুই থেকে আড়াই লাখ ও পঞ্চাশ থেকে ষাট হাজারের মধ্যে করার বিষয়টি পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সময় টিভির ফেসবুক পেজে গত ১২ আগস্ট প্রচারিত ধর্ম উপদেষ্টার আরেকটি বক্তব্যের ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে তাকে অনিয়মের জন্যে ৫০ টিরও বেশি হজ এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল করার কথা বলতে শোনা গেলেও আলোচিত দাবিটির বিষয়ে কিছু বলতে শোনা যায়নি। বরং, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রাণালয়ের সচিবকে দাবি করতে দেখা যায় যে, ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়ার থেকে বাংলাদেশের হজ যাত্রীদের প্যাকেজ খরচ তুলনামূলক কম।
পরবর্তীতে আলোচিত দাবিটির বিষয়ে জানতে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রাণালয়ের উপসচিব মো: কামরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, আলোচিত দাবিটি সম্পূর্ণ ভুয়া। ধর্ম উপদেষ্টা এমন কোনো কথা বলেননি এবং মন্ত্রাণালয় থেকেও এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
সুতরাং, ‘হজের খরচ দুই/ আড়াই লাখের মধ্যে আর ওমরাহ ৫০/৬০ হাজার টাকার মধ্যেই সম্ভব।’ শীর্ষক মন্তব্য ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন করেছেন দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।
গত ৮ আগস্ট ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে নবনিযুক্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে শুভেচ্ছা জানান। মোদির সেই এক্স পোস্টে ভারতীয় ইউটিউবার ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ধ্রুব রাঠি প্রতিত্তোর দিয়েছেন শীর্ষক একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, নরেন্দ্র মোদি তার এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে ড. ইউনূসকে শুভেচ্ছা জানানোর পোস্টে ধ্রুব রাঠি কোন জবাব দেননি বরং তার নামে তৈরি একটি প্যারোডি অ্যাকাউন্ট থেকে জবাব দেওয়ার বিষয়টিকে ধ্রুব রাঠির নিজের মন্তব্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে আলোচিত পোস্ট গুলোতে ধ্রুব রাঠির এক্স অ্যাকাউন্ট দাবিতে উল্লিখিত এক্স অ্যাকাউন্টটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ধ্রুব রাঠির এক্স অ্যাকাউন্ট দাবিতে প্রচারিত অ্যাকাউন্টিতে ধ্রুব রাঠির নামের পাশে ইংরেজিতে ‘Parody’ লেখা, যা বাংলায় নকল বোঝায়।
Screenshot from X
উক্ত অ্যাকাউন্টের বায়োতে লেখা, “এটি ফ্যান এবং প্যারোডি অ্যাকাউন্ট। @dhruv_rathee এর আসল অ্যাকাউন্টের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই এবং কারও ছদ্মবেশ ধারণ করছে না। এই অ্যাকাউন্টটি প্যারোডি।”
এছাড়া ধ্রুব রাঠির আসল এক্স অ্যাকাউন্টের সাথে তার নামে তৈরি প্যারোডি অ্যাকাউন্টের বেশ পার্থক্য লক্ষ্যনীয়।
Image Comparison: Rumor Scanner
এছাড়া, এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অনুসন্ধানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নরেন্দ্র মোদির শুভেচ্ছা জানানোর এক্স পোস্টে ধ্রুব রাঠির আসল এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে করা কোনো প্রতিত্তোর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে নরেন্দ্র মোদি তার এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে শুভেচ্ছা জানানোর পোস্টে ধ্রুব রাঠি জবাব দিয়েছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেওয়া আন্দোলনে ঘটেছে সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা, এসেছে বহু হতাহতের খবরও। নিহতদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ অন্যতম। তার মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগেও আন্দোলনকারীদের পানি খাওয়ানোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। তার মৃত্যুর পর দেশের বিভিন্ন স্থানে তার ছবি ও পানি খাওয়ানোর দৃশ্য গ্রাফিতি হিসেবে দেয়ালে স্থান পেয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে, সম্প্রতি মীর মুগ্ধ’র বাবা দেয়ালে আঁকা তার ছেলের গ্রাফিতি রুমাল দিয়ে মুছে চুমো খাচ্ছেন শীর্ষক দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওগুলো একত্রে ০৪ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি বার দেখা হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওতে থাকা ব্যক্তি মীর মুগ্ধর বাবা নন বরং টাঙ্গাইলে আঁকা মুগ্ধর একটি গ্রাফিতির সামনে ভিন্ন এক ব্যক্তির চুমো খাওয়ার দৃশ্যকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে গত ০২ আগস্ট জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর ইউটিউব চ্যানেলে ‘‘ভাবছিলাম মুগ্ধর গায়ে রাবার বুলেট লাগসে’ – স্নিগ্ধ’ শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদনের একটি অংশে মীর মুগ্ধর বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমানকে কথা বলতে দেখা যায়। মীর মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে প্রচারিত ভিডিওর ঐ ব্যক্তির চেহারার কোনো সামঞ্জস্যতা পাওয়া যায়নি।
Comparison: Rumor Scanner
এছাড়াও, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে মীর মুগ্ধর পরিবারের সাথে সাক্ষাতের বিষয়ে গত ৩১ জুলাই প্রকাশিত একটি পোস্টে মীর মুগ্ধর বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমানের উপস্থিতি পাওয়া যায়। উক্ত ছবিগুলোর সাথেও প্রচারিত ভিডিওর ঐ ব্যক্তির চেহারার কোনো মিল নেই।
Screenshot: Facebook
তাছাড়া, প্রচারিত ভিডিওটির উক্ত ব্যক্তি মীর মুগ্ধর বাবা নন বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন মীর মুগ্ধর ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ।
পরবর্তীতে, উক্ত ভিডিওর গ্রাফিতির দৃশ্য রিভার্স ইমেজ সার্চ করে Humaira Ajifa নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ১১ আগস্ট প্রচারিত একটি পোস্টে উক্ত গ্রাফিতির ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টের বিস্তারিত অংশ থেকে জানা যায়, গ্রাফিতিটি টাঙ্গাইল সদরের ভূমি অফিস সংলগ্ন দেয়ালে আঁকা হয়। উক্ত গ্রাফিতিটি আঁকেন হৃদয় হোসেন নামের একজন চিত্রশিল্পী।
সুতরাং, কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত মীর মুগ্ধর বাবা দেয়ালে আঁকা মুগ্ধর ছবির গ্রাফিতি রুমাল দিয়ে মুছে চুমো খাচ্ছেন দাবিতে টাঙ্গাইলের ভিন্ন এক ব্যক্তির একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
গত ০৫ আগস্ট বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের পর আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মী আত্মগোপনে রয়েছে। বাদ যাননি নড়াইল-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মোর্ত্তজাও। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি তামিম ইকবাল একটি লাইভে মাশরাফি বিন মোর্ত্তজাকে এভাবে কতোদিন পালিয়ে থাকবেন বলে মন্তব্য করেন ও সাবধানে থাকতে বলেন শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ভিডিওটি এখন পর্যন্ত ৪০ লাখ ৬০ হাজার বারেরও বেশি দেখা হয়েছে এবং ৯০ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা তামিম ইকবাল সম্প্রতি মাশরাফি বিন মোর্ত্তজাকে নিয়ে লাইভে আসেননি এবং এমন কোনো মন্তব্যও করেননি বরং প্রচারিত ভিডিওটি পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার।
অনুসন্ধানে তামিম ইকবালের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে ২০২০ সালের ০৪ মে ‘Tamim Iqbal Live with Mashrafe Bin Mortaza’’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি লাইভ ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। প্রচারিত ভিডিওটির সাথে উক্ত ভিডিওটির বেশকিছু অংশ মিলে যায়।
Screenshot collage: Rumor Scanner
একইদিনে তামিম ইকবালের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলেও উক্ত লাইভ ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওগুলো থেকে জানা যায়, করোনাকালীন সময়ে তামিম ইকবালের আয়োজিত অনলাইন লাইভ অনুষ্ঠানের একটি পর্বে মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা অতিথি হয়ে আসেন। উক্ত লাইভে করোনার সমসাময়িক পরিস্থিতি ও বাংলাদেশের ক্রিকেটের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন তারা।
সুতরাং, সম্প্রতি তামিম ইকবাল লাইভে এসে মাশরাফি বিন মোর্ত্তজাকে এভাবে কতোদিন পালিয়ে থাকবেন বলে মন্তব্য করেন শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা এবং প্রচারিত ভিডিওটি পুরোনো।