মুগ্ধর গ্রাফিতিতে চুমো খাওয়া ব্যক্তি তার বাবা নন

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেওয়া আন্দোলনে ঘটেছে সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা, এসেছে বহু হতাহতের খবরও। নিহতদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ অন্যতম। তার মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগেও আন্দোলনকারীদের পানি খাওয়ানোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। তার মৃত্যুর পর দেশের বিভিন্ন স্থানে তার ছবি ও পানি খাওয়ানোর দৃশ্য গ্রাফিতি হিসেবে দেয়ালে স্থান পেয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে, সম্প্রতি মীর মুগ্ধ’র বাবা দেয়ালে আঁকা তার ছেলের গ্রাফিতি রুমাল দিয়ে মুছে চুমো খাচ্ছেন শীর্ষক দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে।

মুগ্ধর

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এবং এখানে (আর্কাইভ)।

প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওগুলো একত্রে ০৪ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি বার দেখা হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওতে থাকা ব্যক্তি মীর মুগ্ধর বাবা নন বরং টাঙ্গাইলে আঁকা মুগ্ধর একটি গ্রাফিতির সামনে ভিন্ন এক ব্যক্তির চুমো খাওয়ার দৃশ্যকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে গত ০২ আগস্ট জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর ইউটিউব চ্যানেলে ‘‘ভাবছিলাম মুগ্ধর গায়ে রাবার বুলেট লাগসে’ – স্নিগ্ধ’ শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত প্রতিবেদনের একটি অংশে মীর মুগ্ধর বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমানকে কথা বলতে দেখা যায়। মীর মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে প্রচারিত ভিডিওর ঐ ব্যক্তির চেহারার কোনো সামঞ্জস্যতা পাওয়া যায়নি।

Comparison: Rumor Scanner

এছাড়াও, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে মীর মুগ্ধর পরিবারের সাথে সাক্ষাতের বিষয়ে গত ৩১ জুলাই প্রকাশিত একটি পোস্টে মীর মুগ্ধর বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমানের উপস্থিতি পাওয়া যায়। উক্ত ছবিগুলোর সাথেও প্রচারিত ভিডিওর ঐ ব্যক্তির চেহারার কোনো মিল নেই।

Screenshot: Facebook

তাছাড়া, প্রচারিত ভিডিওটির উক্ত ব্যক্তি মীর মুগ্ধর বাবা নন বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন মীর মুগ্ধর ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ।

পরবর্তীতে, উক্ত ভিডিওর গ্রাফিতির দৃশ্য রিভার্স ইমেজ সার্চ করে Humaira Ajifa নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ১১ আগস্ট প্রচারিত একটি পোস্টে উক্ত গ্রাফিতির ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টের বিস্তারিত অংশ থেকে জানা যায়, গ্রাফিতিটি টাঙ্গাইল সদরের ভূমি অফিস সংলগ্ন দেয়ালে আঁকা হয়। উক্ত গ্রাফিতিটি আঁকেন হৃদয় হোসেন নামের একজন চিত্রশিল্পী।

সুতরাং, কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত মীর মুগ্ধর বাবা দেয়ালে আঁকা মুগ্ধর ছবির গ্রাফিতি রুমাল দিয়ে মুছে চুমো খাচ্ছেন দাবিতে টাঙ্গাইলের ভিন্ন এক ব্যক্তির একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img