সম্প্রতি, “এবার ‘all of us are dead season 2’ রিলিজের দাবিতে আন্দোলনের ডাক দিলো বাংলাদেশের কে-ড্রামার সাধারণ দর্শক” শীর্ষক তথ্যে বা শিরোনামে ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম যমুনা টেলিভিশনের ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, “এবার ‘all of us are dead season 2’ রিলিজের দাবিতে আন্দোলনের ডাক দিলো বাংলাদেশের কে-ড্রামার সাধারণ দর্শক” শীর্ষক তথ্যে বা শিরোনামে যমুনা টেলিভিশন কোন ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি বরং, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে যমুনা টেলিভিশনের ডিজাইন সম্বলিত আলোচিত ভুয়া ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি প্রকাশের তারিখ হিসেবে ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে অনুসন্ধানে ২৬ আগস্ট তারিখে গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজে এ সংক্রান্ত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। যমুনা টেলিভিশনের ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেলেও এমন কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি।
এছাড়া, আলোচিত ফটোকার্ডটির সাথে যমুনা টেলিভিশন কর্তৃক প্রকাশিত ফটোকার্ডের শিরোনামে ব্যবহৃত ফন্টের পার্থক্য রয়েছে।
Photocard Comparison: Rumor Scanner
এছাড়া, যমুনা টেলিভিশন তাদের ফেসবুক পেজে গত ২ সেপ্টেম্বর এক পোস্ট এর মাধ্যমে আলোচিত ফটোকার্ডটিকে ভুয়া বলে নিশ্চিত করেছে। পাশাপাশি, আলোচিত দাবি সমর্থিত কোনো তথ্য অন্য কোনো গণমাধ্যমেও পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, “এবার ‘all of us are dead season 2’ রিলিজের দাবিতে আন্দোলনের ডাক দিলো বাংলাদেশের কে-ড্রামার সাধারণ দর্শক” শীর্ষক তথ্য বা শিরোনামে যমুনা টেলিভিশনের নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া ও বানোয়াট।
সম্প্রতি “প্রকাশ্য সিগারেট খাওয়া নিষিদ্ধ আইন পাস করা হবে সাস্থ্যমন্ত্রনালয়” শীর্ষক শিরোনামে বা তথ্যে মূলধারার সংবাদমাধ্যম কালবেলার ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “প্রকাশ্য সিগারেট খাওয়া নিষিদ্ধ আইন পাস করা হবে সাস্থ্যমন্ত্রনালয়” শীর্ষক শিরোনাম বা তথ্যে কালবেলা কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি বরং ভিন্ন একটি ফটোকার্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার একাধিক ফেসবুক মনিটরিং টুল ব্যবহার করে দেখেছে, আলোচিত ফটোকার্ড সম্বলিত পোস্ট ফেসবুকে মূলত ০৩ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে প্রচার হতে শুরু করে। ০৩ সেপ্টেম্বর সকাল ১১ টায় “ইসরাত জাহান মিম” নামে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে এ সংক্রান্ত সম্ভাব্য প্রথম পোস্টটি পাওয়া যায়।
আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে এটিতে কালবেলার লোগো দেখতে পাওয়া যায়।
অতঃপর, কালবেলার ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে এমন দাবি সম্পর্কিত কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড পাওয়া না গেলেও কালবেলার ফেসবুক পেজে গত ০২ সেপ্টেম্বর তারিখে “ধূমপানের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড পাওয়া যায়। উক্ত ফটোকার্ডে ব্যবহৃত ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটিতে ব্যবহৃত ছবির হুবহু মিল পাওয়া যায়।
Comparison : Rumor Scanner
উক্ত ফটোকার্ডের ডিজাইনের সাথেও আলোচিত ফটোকার্ডের ডিজাইনের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। তবে, আলোচিত ফটোকার্ডের শিরোনামে ব্যবহৃত ফন্ট ডিজাইনের সাথে কালবেলার ফটোকার্ডের ফন্টের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। আলোচিত ফটোকার্ডটির শিরোনামে “ধূমপানের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে” বাক্যের পরিবর্তে “প্রকাশ্য সিগারেট খাওয়া নিষিদ্ধ আইন পাস করা হবে সাস্থ্যমন্ত্রনালয়” বাক্য যুক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া, ফটোকার্ডটির তারিখও মুছে দেওয়া হয়েছে। তবে, আলোচিত ফটোকার্ডটিতে ব্যবহৃত ছবির বর্ডার ও স্ট্রোকের আকৃতি ও রঙের সাথে প্রচারিত ফটোকার্ডটির হুবহু মিল পাওয়া যায়।
যা থেকে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, কালবেলার ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ফটোকার্ডটিকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে সম্পাদনা করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
তাছাড়া, কালবেলা সাধারণত তাদের প্রতিটি ফটোকার্ডে ফটোকার্ড প্রচারের তারিখ এবং ফটোকার্ডটির নিম্নাংশে “নিউজ লিংক কমেন্টে” বাক্য সংযুক্ত করে থাকে যা প্রচারিত ফটোকার্ডটিতে নেই। এছাড়া, কালবেলা তাদের ফটোকার্ডে সাধারণত প্রমিত বাংলা বানান ব্যবহার করে থাকে, অপরদিকে প্রচারিত ফটোকার্ডটিতে বানান ভুলও লক্ষ্য করা যায়, যেমন: স্বাস্থ্য এর পরিবর্তে “সাস্থ্য” এবং “মন্ত্রণালয়ের” পরিবর্তে “মন্তনালয়”। যা অধিকতর নিশ্চিত করে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটি কালবেলার তৈরি আসল কোনো ফটোকার্ড নয়।
সুতরাং, “প্রকাশ্য সিগারেট খাওয়া নিষিদ্ধ আইন পাস করা হবে সাস্থ্যমন্ত্রনালয়” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি এডিটেড বা সম্পাদিত।
সম্প্রতি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের সকল দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা বিনামূল্যে করার আশ্বাস দিয়েছেন দাবিতে ‘বাংলাদেশের সকল দরিদ্র ছাত্র ছাত্রী পড়াশোনা ব্যবস্থা ফ্রি করা হবে – ডা. ইউনুস’ শীর্ষক শিরোনামে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভির ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ‘বাংলাদেশের সকল দরিদ্র ছাত্র ছাত্রী পড়াশোনা ব্যবস্থা ফ্রি করা হবে – ডা. ইউনুস’ শীর্ষক শিরোনামে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি কোনো প্রতিবেদন বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি বরং, এনটিভি-র ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে শিরোনাম পরিবর্তন করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
আলোচিত দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ফটোকার্ডটিতে থাকা এনটিভি-র লোগোর সূত্র ধরে গণমাধ্যমটির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে উক্ত শিরোনামে প্রচারিত কোনো ফটোকার্ড কিংবা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
উক্ত ফটোকার্ডের সঙ্গে আলোচিত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ফটোকার্ডটিতে ব্যবহৃত গ্রাফিক্যাল ডিজাইন ও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ছবির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। পরবর্তীতে এই ফটোকার্ডটির সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির তূলনামূলক বিশ্লেষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ফটোকার্ড দুটির ছবির মিল থাকলেও আলোচিত ফটোকার্ডের শিরোনাম ও শিরোনামে ব্যবহৃত ফন্টের সাথে এনটিভি-র ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডের ফন্টের ডিজাইনের মিল নেই।
Photocard Comparison by Rumor Scanner
আলোচিত ফটোকার্ডটির শিরোনামে ‘জাতিসংঘ অধিবেশনে ছোট প্রতিনিধি দল নিয়ে যাবেন ড. ইউনূস’ শীর্ষক বাক্যাংশের পরিবর্তে ‘বাংলাদেশের সকল দরিদ্র ছাত্র ছাত্রী পড়াশোনা ব্যবস্থা ফ্রি করা হবে – ডা. ইউনুস’ বাক্যাংশটি যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও আলোচিত ফটোকার্ডটিতে এটি প্রকাশের তারিখ মুছে দেওয়া হয়েছে।
অর্থাৎ, এনটিভির ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডটিকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
পাশাপাশি, ড. মুহাম্মদ ইউনূস দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার খরচ নিয়ে এমন কোনো মন্তব্য করেছেন কিনা তা জানতে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চ করে দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আলোচ্য দাবির সপক্ষে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, ‘বাংলাদেশের সকল দরিদ্র ছাত্র ছাত্রী পড়াশোনা ব্যবস্থা ফ্রি করা হবে – ডা. ইউনুস’ শীর্ষক শিরোনামে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা এবং উক্ত দাবিতে এনটিভির নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি এডিটেড বা সম্পাদিত।
গত ০৫ আগস্ট গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর আওয়ামী লীগের অনেক এমপি-মন্ত্রী দেশ ছেড়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে হামলা, মামলা, গ্রেপ্তারের মুখে আত্মগোপনে চলে যান আওয়ামী লীগের অনেক সাবেক এমপি-মন্ত্রী ও নেতাকর্মীরা। ইতিমধ্যে বিভিন্ন মামলায় অনেকে গ্রেফতারও হয়েছেন।
এরই মধ্যে সম্প্রতি, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে দাবিতে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। এছাড়াও, ‘অভিনন্দন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ কে’ শীর্ষক তথ্যে বা শিরোনামে যমুনা টিভির লোগো সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন- এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে দাবিতে পোস্ট দেখুন- এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে অভিনন্দন জানিয়ে যমুনা টিভির লোগো যুক্ত ফটোকার্ড প্রচার করে এক্স পোস্ট দেখুন- এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কিংবা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে দলটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দয়িত্ব দেওয়া হয়েছে শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয়। বরং, কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিগুলো ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। এছাড়া, আবদুল হামিদকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে অভিনন্দন জানিয়ে মূলধারার ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম যমুনা টিভি কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, যমুনা টিভির লোগো ব্যবহার করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে গণ আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগ পরবর্তী সময়ে দল পরিচালনার জন্য আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে কোনো সংবাদ মাধ্যমে আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
আওয়ামী লীগ দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল। এদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে কাউকে দায়িত্ব প্রদান করা হলে বিশেষ করে দলের গুরুত্বপূর্ণ প্রধান দুটি পদে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হলে সেটি অবশ্যই গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ার কথা।
এছাড়া, আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুকে পেজ ‘Bangladesh Awami League’ পর্যবেক্ষণ করে আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, ‘ক্ষমতাচ্যুত দল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে এখনই কোনো পরিবর্তন আনা হচ্ছে না। দলের কর্মকাণ্ড পরিচালনায় কাউকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক করারও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা কালের কণ্ঠকে এমন তথ্য জানিয়েছেন। তাঁরা জানান, কয়েক দিন ধরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব প্রচার করা হচ্ছে তা সত্য নয়।’
পরবর্তীতে, ‘অভিনন্দন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ কে’ শীর্ষক শিরোনামে মূলধারার ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম যমুনা টিভি কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেছে কিনা জানতে অনুসন্ধানে যমুনা টিভির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে প্রচারিত সংবাদ ও ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করে উক্ত শিরোনাম সম্বলিত কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও যমুনা টিভি’র ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল বা অন্য কোনো গণমাধ্যমেও উক্ত দাবির সপক্ষে কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে, যমুনা টিভির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করে আলোচিত ফটোকার্ডের বিষয়ে একটি পোস্ট পাওয়া যায়। আলোচিত ফটোকার্ডটি ভুয়া উল্লেখ করে গণমাধ্যমটি জানায়, ‘যমুনা টিভি এমন কোনো সংবাদ প্রচার করেনি; গুজবে বিভ্রান্ত হবেন না’
অর্থাৎ, এটা নিশ্চিত যে ৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ে এখন পর্যন্ত দল পরিচালনার জন্য আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।
সুতরাং, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা। এবং আবদুল হামিদকে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে অভিনন্দন জানিয়ে যমুনা টিভির নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি সম্পূর্ণ ভুয়া ও বানোয়াট।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দীর্ঘদিন ধীরে একটি ছবি প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, প্রচারিত ছবিটি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিয়ের অনুষ্ঠানের। শেখ হাসিনার বিয়ের অনুষ্ঠানে লুঙ্গি পরিহিত এবং সিগারেটের প্যাকেট হাতে থাকা অবস্থায় বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ উপস্থিত ছিলেন শীর্ষক দাবিতে সাম্প্রতিক সময়ে ছবিটি আবারও ফেসবুকে প্রচার করা হয়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, শেখ হাসিনার বিয়ের অনুষ্ঠানে লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় গিয়েছিলেন বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত ছবিতে শেখ হাসিনার উপস্থিতি নেই এবং এটি শেখ হাসিনার বিয়ের অনুষ্ঠানের ছবিও নয় বরং কোনো ধরনের তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই ছবিটি আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। ২০২২ সালের ১৪ অক্টোবর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহকারী প্রেস সচিব এম এম ইমরুল কায়েস নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে আলোচিত ছবিতে শেখ হাসিনার উপস্থিতি নেই বলে নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য, পূর্বেও একই দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সম্প্রতি, “টিএসসি সহ ১২টি পয়েন্টে গোসলখানা নির্মান করবো: ঢাবি উপাচার্য” শীর্ষক তথ্যে বা শিরোনামে জাতীয় দৈনিক কালবেলার লোগো সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, টিএসসিসহ ১২টি পয়েন্টে গোসলখানা নির্মাণের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান এমন কোন মন্তব্য করেননি এবং কালবেলাও এমন দাবিতে কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি বরং, কালবেলার ফটোকার্ড ডিজাইন নকল করে এই ভুয়া দাবি প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে আলোচিত ফটোকার্ড পর্যবেক্ষণ করে ফটোকার্ডটিতে প্রকাশের তারিখ ২৭ আগস্ট উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে অনুসন্ধানে ২৭ আগস্ট তারিখে গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজে এ সংক্রান্ত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। কালবেলার ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেলেও এমন কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি।
এছাড়া, আলোচিত ফটোকার্ডটির সাথে কালবেলা কর্তৃক প্রকাশিত ফটোকার্ডের শিরোনামের ফন্টের পার্থক্য রয়েছে। পাশাপাশি, আলোচিত দাবি সমর্থিত কোনো তথ্য অন্য কোনো গণমাধ্যমেও পাওয়া যায়নি।
Photocard Comparison: Rumor Scanner
সুতরাং, “টিএসসি সহ ১২টি পয়েন্টে গোসলখানা নির্মান করবো: ঢাবি উপাচার্য” শীর্ষক তথ্য বা শিরোনামে দৈনিক কালবেলার নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া ও বানোয়াট।
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে যান। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এর মধ্যে, ড. ইউনূস হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অত্যাধুনিক টেলিফোন বুথ স্থাপন করেছেন দাবিতে একজন ব্যক্তি একটি আধুনিক টেলিফোন বুথের সামনে দাঁড়িয়ে থাকার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ছবিটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নয়, বরং এটি দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ছবি।
আলোচ্য দাবিটির উৎসের সন্ধানে ‘Shuvo Kamal’ নামে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ৩১ আগস্ট রাতে উক্ত দাবিতে করা সম্ভাব্য প্রথম পোস্টটি পাওয়া যায়। ২ সেপ্টেম্বর তিনি মন্তব্য করে জানান, পোস্টটি ছিল সার্কাজম। তবে এর আগেই পোস্টটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে, এবং অনেকেই এটিকে বাস্তব হিসেবে বিশ্বাস করেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্রি টেলিফোন বুথের স্থাপনা নতুন কিছু নয়। ২০২০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিমানবন্দরকে আরও যাত্রীবান্ধব করতে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে সেসময় বিমানবন্দরে ফ্রি টেলিফোন বুথ বসিয়েছে বিটিসিএল। এই প্রতিবেদনে টেলিফোন বুথের একটি ছবিও দেখা যায়।
২০২২ সালের ০৮ ফেব্রুয়ারি ‘Bangla Aviation’ নামের একটি ফেসবুক পেজে বিমানবন্দরের টেলিফোন বুথের একটি ছবি পাওয়া যায়। এছাড়া, বিমানবন্দরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটেও এই ফ্রি টেলিফোন বুথের তথ্যের পাশাপাশি একটি প্রতীকী ছবি দেখা যায়।
উপরিউক্ত সবগুলো টেলিফোন বুথের ছবিতেই বিটিসিএলের লোগো দেখা যায়।
অর্থাৎ, শাহজালাল বিমানবন্দরে টেলিফোন বুথ বসানো হয়েছে বিটিসিএলের সৌজন্যে এবং প্রতিটি বুথেই প্রতিষ্ঠানটির লোগো রয়েছে। কিন্তু দাবিকৃত ছবিতে বিটিসিএলের কোনো লোগো নেই এবং সেখানে আরবি ভাষায় কিছু লেখা দেখা যাচ্ছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে স্টক ফটো ওয়েবসাইট অ্যালামিতে দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টেলিফোন বুথের ছবি পাওয়া যায়, যা ভাইরাল হওয়া ছবির টেলিফোন বুথের সঙ্গে হুবহু মিলে যায়।
Image Comparison: Rumor Scanner.
এছাড়া, ড. ইউনূসের দায়িত্ব নেওয়ার পর বিমানবন্দরে নতুন কোনো টেলিফোন বুথ স্থাপনের তথ্য বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে পাওয়া যায়নি। গত ৩০ আগস্ট প্রকাশিত একটি ফ্যাক্ট-চেক প্রতিবেদনে রিউমর স্ক্যানারও নিশ্চিত করেছে, ড. ইউনূসের দায়িত্ব গ্রহণের আগেই বিমানবন্দরে এই সেবা চালু ছিল।
সুতরাং, দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টেলিফোন বুথের ছবিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে টেলিফোন বুথের দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
প্রায় আট দশক যাবৎ চলমান রয়েছে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল সংঘাত। বিভিন্ন সময় যেটি ভয়াবহ রূপও লাভ করেছে। তবে গত বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে অতর্কিত বোমা হামলা চালালে এই সংঘাত যুদ্ধে পরিণত হয়। যাতে এ পর্যন্ত প্রায় কয়েক হাজার মানুষ নিহত ও কয়েক লাখ মানুষ আহত হয়েছেন। বাস্তুহারা হয়েছে অসংখ্য ফিলিস্তিনি। কিন্তু সম্প্রতি, ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের মাঝে চলমান এ যুদ্ধে ফিলিস্তিনি জয় লাভ করেছেন দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। প্রচারিত ভিডিওটিতে বিপুল সংখ্য মানুষকে ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে উল্লাস করতে দেখা যাচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত ছবিটি চলমান ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধের কোনো ঘটনার নয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০২১ সালে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে চলা টানা ১১ দিনের সংঘাতের পর দুপক্ষের মধ্যে যুদ্ধ বিরতির একটি চুক্তি হয়। সেসময় ফিলিস্তিনি জনগণের উল্লাসের ভিডিওটিকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সাথে উক্ত ভিডিওর হুবহু মিল রয়েছে। এছাড়াও ভিডিওটির শিরোনামে থেকে জানা যায়, এটি ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যকার যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা হবার পরবর্তী মুহুর্তের দৃশ্য। পাশাপাশি উক্ত ভিডিওটির শেষেও আলোচিত ভিডিওটির মত alarabiya নামের একটি লোগো দেখতে পাওয়া যায়।
ভিডিওটির শিরোনাম ইংরেজিতে অনুবাদের মাধ্যমে জানা যায়, মূলত ২০২১ সালে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ বিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর গাজা শহরের রাস্তায় মানুষের উল্লাসের ভিডিও এটি।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, টানা ১১ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর ইসরায়েল এবং হামাস সেসময় যুদ্ধ বিরতিতে সম্মত হয়। উক্ত সংঘাতে সেসময় ২৩২ জন ফিলিস্তিনি এবং ১২ জন ইসরায়েলির নিহত হয়।
সুতরাং, হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ বিরতির পুরোনো ভিডিওকে চলমান ফিলিস্তিন-ইসরায়েলে যুদ্ধে ফিলিস্তিনের জয়ের দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
গেল আগস্ট মাসে অতি বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের ফলে দেশের বেশকিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উক্ত এলাকাসমূহে আটকে পড়া মানুষদের মাঝে বেশকয়েকটি বাহিনীসহ অনেক স্বেচ্ছাসেবী দল ত্রাণ বিতরণ করছে। এরই প্রেক্ষিতে একজন ত্রাণদাতা এক হিন্দু শিশুকে ত্রাণ দিয়েছেন এবং বিনিময়ে তার গলার মালা কেটে ফেলে দিয়েছেন দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
এক্স (সাবেক টুইটার) এ এমন পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ত্রাণ দেওয়ার ভাইরাল ভিডিওতে যে শিশুর গলা থেকে মালা বা তাবিজ জাতীয় জিনিস খোলা হয়েছে সে শিশুটি হিন্দু ধর্মাবলম্বী নয় বরং শিশুটি ইসলাম ধর্মের অনুসারী।
ভিডিওটির কিছু কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে তাওহীদ একাডেমি এন্ড ইসলামিক সেন্টার নামক ফেসবুক পেজে গত ২৭ আগস্ট প্রকাশিত একটি ভিডিও (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে থাকা শিশুর গলা থেকে মালা কাটার দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়।
Video Comparison: Rumor Scanner
তবে উক্ত ভিডিওতে যে শিশুর গলা থেকে মালা বা তাবিজ জাতীয় জিনিস কাটা হয়েছিল, সেই শিশুর কোনো পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি।
তবে একই ফেসবুক পেজে গতকাল ২ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি ভিডিও (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওতে, যে শিশুর মালা বা তাবিজ জাতীয় জিনিস কাটা হয়েছিল সেই শিশুর একটি সাক্ষাতকার পাওয়া যায়।
Screenshot: Facebook
উক্ত সাক্ষাতকারে শিশুটি জানায় তার নাম শয়ন (শয়েন)। তার বাবার নাম আব্দুল হক এবং তার মায়ের নাম রোজিনা। তার গ্রামের নাম চর আলগী বাজার। সে দারুন নাজাত মদিনাতুন উলুম মাদ্রাসা ৩য় শ্রেণীতে পড়ে এবং সে একজন মুসলিম অর্থাৎ ইসলাম ধর্মের অনুসারী।
সুতরাং, ইসলাম ধর্মের অনুসারী শিশুর গলা থেকে মালা বা তাবিজ খুলে ফেলার ভিডিও হিন্দু ধর্মের শিশুর গলা থেকে তুলসীর মালা খুলে ফেলার দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
তাওহীদ একাডেমি এন্ড ইসলামিক সেন্টার নামক – Facebook Post
হালনাগাদ/ Update
২২ নভেম্বর, ২০২৪ : এই প্রতিবেদন প্রকাশ পরবর্তী সময়ে একই দাবি সম্বলিত ফেসবুক পোস্ট আমাদের নজরে আসার প্রেক্ষিতে উক্ত পোস্টকে প্রতিবেদনে দাবি হিসেবে যুক্ত করা হলো।
সম্প্রতি শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে দাবি প্রচার করা হচ্ছে, “চীন বাংলাদেশকে ৩ লক্ষ ৭০ হাজার সৈন্য ও ১ লক্ষ ৩০ হাজার অস্ত্র পাঠাচ্ছে এবং ২৪ ঘন্টার ভিতরে ভারতের ওপর আক্রমণ করবে বলে জানিয়েছে, বাংলাদেশ সেনাপ্রধান।”
উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি প্রায় ৪ লক্ষ ৩০ হাজার বার দেখা হয়েছে এবং প্রায় ৩২ হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটিতে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চীন বাংলাদেশকে ৩ লক্ষ ৭০ হাজার সৈন্য ও ১ লক্ষ ৩০ হাজার অস্ত্র পাঠাচ্ছে এবং বাংলাদেশ সেনাপ্রধান জানিয়েছেন ২৪ ঘন্টার ভেতর ভারতকে আক্রমণ করবে বাংলাদেশ শীর্ষক দাবিগুলো ভুয়া, বরং কোনোরকমের বিশ্বস্ত তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে আলোচিত দাবিটির সপক্ষে কোনো বিশ্বস্ত তথ্যপ্রমাণের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। অতঃপর, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করেও আলোচিত দাবিটির সপক্ষে কোনো বিশ্বস্ত তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশে চীনা সেনা আসার বিষয়ে চলতি বছরের এপ্রিল ও মে মাসে সর্বশেষ সংবাদ পাওয়া যায়। চীনের সরকারি সংবাদমাধ্যম সিনহুয়ার বরাতে বাংলাদেশি মূলধারার সংবাদমাধ্যম দৈনিক ইনকিলাবে গত ২৮ এপ্রিল তারিখে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রথমবার একসঙ্গে সামরিক মহড়া করতে চলেছে চীন ও বাংলাদেশ। এবার সামরিক ক্ষেত্রেও ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করতে উদ্যোগী হয়েছে বেইজিং। তাছাড়া ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের রাজনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতি বিষয়ক আন্তর্জাতিক অনলাইন নিউজ ম্যাগাজিন দ্য ডিপ্লোম্যাটেও এ বিষয়ে উল্লেখ পাওয়া যায়৷ গত ০৬ মে তারিখে দ্য ডিপ্লোম্যাটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মে মাসের প্রথমদিকে প্রথমবারের মতো চীন ও বাংলাদেশ একটি যৌথ মহড়া করতে যাচ্ছে। এছাড়া, বাংলাদেশের হয়ে ভারতের বিপক্ষে যুদ্ধ করতে চীনা সৈন্য আসার বিষয়ে নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণই পাওয়া যায়নি।
তাছাড়া, যুদ্ধ করতে চীন বাংলাদেশে অস্ত্র পাঠাচ্ছে কি না তা অনুসন্ধানে সামরিক সরঞ্জামের ক্ষেত্রে চীন ও বাংলাদেশ পরস্পরের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করা বেশ কিছু প্রতিবেদন পাওয়া গেলেও যুদ্ধ করতে বাংলাদেশে অস্ত্র পাঠানোর বিষয়েও কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। যেমন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের আগে গত ৭ জুলাই তারিখে মূলধারার গণমাধ্যম বিবিসি বাংলাতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিভিন্ন পণ্যের পাশাপাশি চীনের কাছ থেকে সামরিক সরঞ্জামও কিনে থাকে বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে চীন থেকে দু’টি সাবমেরিনও কিনেছে দেশটি।
কিন্তু সেই সময়ের সংবাদেও চীন থেকে যুদ্ধের জন্য কোনো অস্ত্র আসার উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
৩ মাস পূর্বে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য স্টেটসম্যানে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ নানা সময়ে চীনের থেকে নানারকমের সামরিক সরঞ্জাম কিনেছে৷ গত দশক ধরে বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে প্রায় ২.৯ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় করেছে।
এছাড়া, এর পরবর্তী সময়ে চীন ও বাংলাদেশের সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে গুরুত্ববহ তেমন কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।
আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে ব্যবহৃত স্থিরচিত্রের উৎসের সন্ধান করলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম মিরর ও ব্রিটিশ স্টক কন্টেন্ট সরবরাহকারী অ্যালামির সূত্রে জানা যায়, ছবিটি ২০১৭ সালের ৩০ জুলাইয়ের যা চাইনিজ পিপল’স লিবারেশন আর্মির ৯০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনে অনুষ্ঠিত হওয়া মিলিটারি প্যারেডের দৃশ্যের৷ অর্থাৎ, ছবিটির সাথেও বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক নেই।
Comparison : Rumor Scanner
তাছাড়া, বাংলাদেশ সেনাপ্রধানের ২৪ ঘন্টার মধ্যে ভারতে আক্রমণ করার ঘোষণা দেওয়ার দাবির সপক্ষেও বিশ্বস্ত সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, চীন বাংলাদেশকে ৩ লক্ষ ৭০ হাজার সৈন্য ও ১ লক্ষ ৩০ হাজার অস্ত্র পাঠাচ্ছে এবং ২৪ ঘন্টার ভিতরে ভারতের ওপর আক্রমণ করবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সেনাপ্রধান মর্মে প্রচারিত দাবিগুলো ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা।