ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে গত ০৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। ০৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরইমধ্যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিমানবন্দরে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নিয়েছেন দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। দাবি করা হচ্ছে, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর বিমানবন্দরের যাত্রী সেবায় ফ্রি টেলিফোন, ফ্রি ওয়াইফাই, হেল্প ডিস্ক, কাষ্টমার সার্ভিস, দ্রুত ল্যাগেজ প্রদান, ভালো ব্যবহার, ল্যাগেজ ভাঙ্গলে বা কোন কিছু চুরি হলে, কর্মীদের বেতন থেকে টাকা কাটা হবে এই ধরণের নতুন উদ্যোগগুলো নেওয়া হয়েছে।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
উক্ত দাবিতে টিকটকের ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে একাত্তর টিভির একটি ভিডিও প্রতিবেদনও প্রচার করছেন নেটিজেনরা। দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে ফেসবুকে জাতীয় দলের ক্রিকেটার ইমরুল কায়েস, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মুখলেস রহমান, রেডিও জকি রাফসান শান্ত।
একই দাবিতে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন ডিবিসি নিউজ, ইনডিপেনডেন্ট টিভি, মানবকণ্ঠ, ভোরের পাতা।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্যোগ দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো তার সময়ে নেওয়া নয় বরং, ড. ইউনূসের দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে থেকেই উক্ত সেবাগুলো পাচ্ছেন বিমানবন্দরের যাত্রীরা।
গুচ্ছ দাবিগুলো নিয়ে ফেসবুকে অন্তত গত ২৬ আগস্ট থেকে পোস্ট পাওয়া যায়। এসব পোস্টে এ বিষয়ে কোনো তথ্য প্রমাণ উল্লেখ করা হয়নি।
নেটিজেনরা একাত্তর টিভির যে ভিডিও প্রতিবেদনটি প্রচার করছেন একাত্তর টিভি তা প্রচার করে ২০২২ সালের ০৬ অক্টোবর। সেদিন ইউটিউবে প্রকাশিত এই প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হেল্পডেস্ক, বিনা পয়সায় টেলিফোন বুথ, ফ্রি ওয়াইফাই, কনভেয়ার বেল্টে লাগেজ আসার সময়ও আগের চেয়ে কমে গেছে। বিমানবন্দরে বিনামূল্যে কথা বলতে আগমনী টার্মিনালে বসানো হয়েছে ১০টি টেলিফোন বুথ। হেল্প ডেস্কে দিনরাত কাজ করছেন ৫৪ জন কর্মী।
অর্থাৎ, ফ্রি টেলিফোন, ফ্রি ওয়াইফাই, হেল্প ডেস্ক, দ্রুত ল্যাগেজ প্রদানের মতো উদ্যোগগুলো অন্তত ২০২২ সাল থেকেই বাস্তবায়নের তথ্য জানা যাচ্ছে।
অথচ, এই দাবিগুলোই নতুন উদ্যোগ বলে বর্তমানে প্রচার করছে দেশেরই কতিপয় গণমাধ্যম।
Screenshot: DBC News
গত মার্চে অনলাইন সংবাদমাধ্যম ঢাকা পোস্টকে সাক্ষাৎকার দেন বিমানবন্দরটির নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম। এই সাক্ষাৎকারটি বিমানবন্দরের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটেও প্রকাশিত হয়। এই সাক্ষাৎকারে জনাব কামরুল জানান, বিমানবন্দরে অবতরণ করার পরে যাত্রীদের লাগেজ পেতে বিলম্ব হওয়ার অনেক অভিযোগ ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠে এসেছে। বর্তমানে এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে সার্বক্ষণিক তদারকির মাধ্যমে এক ঘণ্টা বা তার কম সময়ে যাত্রীদের কাছে লাগেজ ডেলিভারি নিশ্চিত করা হচ্ছে। লাগেজ ডেলিভারি পেতে সমস্যার সম্মুখীন হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি কর্তৃক তাৎক্ষণিক সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রায় ৮০% যাত্রীর কাছে ১৫ মিনিট থেকে ৫৫ বা ৬০ মিনিটের মধ্যে লাগেজ ডেলিভারি নিশ্চিত করা হয়েছে।
কামরুল বলছিলেন, যাত্রীদের যাত্রা সুন্দর ও আরামদায়ক করার প্রয়াসে ৫টি হেল্প ডেস্ক চালু করা হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে ফ্রি টেলিফোন বুথ, ফ্রি ইন্টারনেট। যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে আগমনী এলাকায় ২টি এবং বহির্গমন এলাকায় ৩টি হেল্প ডেস্ক স্থাপনের মাধ্যমে ৫৪ জন সহকর্মী ২৪ ঘণ্টা বিনামূল্যে যাত্রীদের বিভিন্ন তথ্য ও দিকনির্দেশনা প্রদান করে যাচ্ছেন।
অর্থাৎ, আলোচিত দাবিতে যে সেবাগুলোর কথা বলা হচ্ছে, তা গত মার্চেই বিদ্যমান থাকার কথা উঠে এসেছে বিমানবন্দর প্রধানের বক্তব্যে।
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া রিউমর স্ক্যানারকে বলছেন, “কিছু পরিষেবা বিদ্যমান ছিল, কিন্তু পরিষেবাগুলো আরও উন্নতি হয়েছে। আমরা ক্রমাগত ভাল পরিষেবা নিশ্চিত করেছি এবং কিছু অতিরিক্ত ব্যবস্থার মাধ্যমে তত্ত্বাবধানের উপর জোর দিয়েছি। এয়ারলাইন্সগুলোকেও ব্রিফ করা হয়েছিল এবং তারা আরও ভাল পরিষেবার জন্য এগিয়ে এসেছিল। এটি একটি দলীয় কাজ এবং সবাই এই অভিন্ন লক্ষ্যের জন্য কাজ করতে অনুপ্রাণিত হয়। এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।”
সুতরাং, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শাহজালাল বিমানবন্দরে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন দাবিতে পূর্বে থেকে বিদ্যমান সেবার বিষয়ে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Statement from Air Vice Marshal Md Monjur Kabir Bhuiyan
- Dhaka Post: যাত্রীদের সেবায় এগিয়ে যাচ্ছে শাহজালাল বিমানবন্দর
- Rumor Scanner’s Own Analysis