সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক ব্যক্তির দুইটি ছবি প্রচার করে ক্যাপশনে দাবি করা হয়েছে, “ডেঙ্গু মশার কামড়ে বৈষম্যবিরোধী আন্ডোলনের রাষ্ট্রপতি মারা গেছে। তোরা সব রাজুতে আই। আওয়ামী ডেঙ্গুমশাকে দেশছাড়া করবো।”
উল্লেখ্য যে, প্রচারিত ছবি দুইটির মধ্যে একটি ছবি হচ্ছে রাষ্ট্রপতি লেখা সম্বলিত পতাকার পাশে একজন ব্যক্তির বসা অবস্থায় ধারণকৃত এবং অপর ছবিটি নিহত অবস্থায় ধারণকৃত।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিতে প্রদর্শিত ব্যক্তির নাম তানভীর আহমেদ রনি। তিনি ডেঙ্গু মশার কামড়ে বা সাম্প্রতিক সময়ে নিহত হননি বরং সড়ক দুর্ঘটনায় গত ১২ সেপ্টেম্বরে নিহত হয়েছেন।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবি দুইটির প্রথমটি অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি লেখা সম্বলিত পতাকার সাথে উক্ত ব্যক্তির ধারণকৃত ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধান করলে জানা যায়, ছবিটি তানভীর আহমেদ রনি নামের এক ব্যক্তির। রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধান করে তানভীর আহমেদ রনির ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি খুঁজে পায় এবং তার অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করলে গত ০৭ আগস্টে উক্ত অ্যাকাউন্টটিতে একটি ভিডিও পোস্ট হতে দেখা যায়। উক্ত ভিডিওটি তানভীরের একাধিক ছবির সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছিল এবং উক্ত ছবিগুলোর মধ্যে আলোচিত উক্ত ছবিটিও পাওয়া যায়।
Comparison : Rumor Scanner
এছাড়া, তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ৫ আগস্টে পোস্ট হওয়া আরেকটি ছবি পাওয়া যায় যার সাথে আলোচিত ছবিটির সাদৃশ্য পাওয়া যায় এবং নিশ্চিত হওয়া যায় যে আলোচিত প্রথম ছবিটি তানভীর রনির।
পরবর্তী অনুসন্ধানে নিহত ব্যক্তির ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ‘কচুয়া নিউজ ২৪’ নামের একটি ফেসবুক পেজে গত ১২ সেপ্টেম্বরে প্রচারিত একটি পোস্টে আরেকটি ছবির সাথে উক্ত ছবিটির সংযুক্তি পাওয়া যায়৷ ক্যাপশনে বলা হয়, “কচুয়া উপজেলার ১০ নং গোহাট উওর ইউনিয়নের পালগীরি গ্রামের মোঃ জাহেদ (দীপু) ও তার খালাতো ভাই তানভির (রনি) আজ সন্ধ্যায় কুমিল্লা ঢাকা মহাসড়কের দাউদকান্দির গৌরিপুর বাইক এক্সিডেন্টে ইন্তেকাল করেন ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন ।”
Comparison : Rumor Scanner
এরই সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে মূলধারার সংবাদমাধ্যম দৈনিক ইনকিলাবের ওয়েবসাইটে “সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল কচুয়ার দুই শিক্ষার্থীর” শীর্ষক শিরোনামে ২০২৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল চাঁদপুরের কচুয়ার দুই মেধাবী শিক্ষার্থীর। বৃহস্পতিবার (২০২৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টার দিকে ঢাকা- চট্রগ্রাম মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া পাখির ব্রীজের উপর উঠার সময় মালবাহী লরীর চাপায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। নিহতরা হলেন কচুয়া উপজেলার পালগিরি গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে তানভীর আহমেদ রনি (২৬) এবং দুলাল মিয়ার ছেলে জাহিদ হাসান জিপু (২৫)। তারা দুইজনই ঢাকা কলেজের মেধাবী ছাত্র এবং খালাতো ভাই ।” উক্ত প্রতিবেদনটিতে নিহত হওয়া ব্যক্তি দুইজনের ছবিও সংযুক্ত করা হয় যেখানে তানভীর আহমেদ রনির ছবিরও সংযুক্তি পাওয়া যায়।
এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনুসন্ধান করলেও সড়ক দুর্ঘটনায় তানভীর আহমেদ রনির নিহত হওয়ার বিষয়ে একাধিকপোস্ট পাওয়া যায় যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, প্রচারিত ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং গত সেপ্টেম্বর মাসের এবং তানভীর আহমেদ রনি ডেঙ্গু মশার কামড়ে নয় বরং, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন।
সুতরাং, সড়ক দুর্ঘটনায় গত সেপ্টেম্বর মাসে নিহত হওয়া তানভীর আহমেদ রনির ছবি প্রচার করে সাম্প্রতিক সময়ে তিনি ডেঙ্গু মশার কামড়ে নিহত হয়েছে দাবিতে প্রচার করা হয়েছেন; যা মিথ্যা।
২৬ জানুয়ারি, ২০২৫ : এই প্রতিবেদন প্রকাশ পরবর্তী সময়ে একই দাবি সম্বলিত এক্স পোস্ট আমাদের নজরে আসার প্রেক্ষিতে উক্ত পোস্টগুলোকে প্রতিবেদনে দাবি হিসেবে যুক্ত করা হলো।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি প্রচার করা হয়েছে, “আমি ইতিমধ্যে জানি যে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের পক্ষে কেউ দাঁড়াবে না। খুশি রায়, এক হিন্দু মেয়ে, সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনে সক্রিয় ছিল। ইসলামী প্রশাসন তাকে গ্রেপ্তার করেছে।” এছাড়াও দাবি করা হয়েছে, “যারা সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনে কাজ করেছে, তাদেরকে ট্র্যাক করা হচ্ছে এবং মামলা দেওয়া হচ্ছে। খুশি রায়ের পুরো পরিবারকেই ইসলামী প্রশাসন গ্রেপ্তার করেছে।”
অর্থাৎ, দাবি করা হয়েছে যে সংখ্যালঘু অধিকার নিয়ে কাজ করার কারণে খুশি রায়কে আটক করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সংখ্যালঘু অধিকার নিয়ে কাজ করার কারণে খুশি রায়কে আটক করা হয়নি বরং, অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশচেষ্টার অভিযোগে আরো কয়েকজন ব্যক্তির সাথে তাকেও আটক করা হয়।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্ট পর্যবেক্ষণ করলে তাতে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে গত ২০ জানুয়ারি “পঞ্চগড় সীমান্ত দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা, পাঁচ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, “পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার বড়শশী সীমান্ত দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টার অভিযোগে দুই দম্পতিসহ মোট পাঁচ বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল রোববার (১৯ জানুয়ারি) দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নের বড়শশী সীমান্তের ৭৭৭ নম্বর মেইন পিলারের ৬ নম্বর সাব–পিলার থেকে প্রায় ১০০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কাজীপাড়া এলাকায় তাঁদের আটক করেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা। পরে মামলা দিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গ্রেপ্তার পাঁচজনের সঙ্গে তিন শিশুকে দেওয়া হয় স্বজনদের হেফাজতে। […] গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার ছোট চণ্ডীপুর এলাকার বিশ্বজিৎ রায় (২৭), তাঁর স্ত্রী খুশি রায় (২৩), কাহারোল উপজেলার তেলিয়ান এলাকার রতন রায় (৩০), তাঁর স্ত্রী চন্দনা রানী রায় (২৮) ও পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার উৎকুড়া এলাকার বাসিন্দা সুজন রায় (২১)। […] বিজিবির জিজ্ঞাসাবাদে আটক ব্যক্তিরা জানান, ভারতে আত্মীয়ের বাড়িতে যেতে অনুপ্রবেশের উদ্দেশ্যে একাধিক দালাল চক্রের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা চুক্তিতে তাঁরা সীমান্তবর্তী এলাকায় এসেছেন। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া তিনটি মুঠোফোন ও বাংলাদেশি ৪ হাজার ৫৮৪ টাকা জব্দ করা হয়। […] বোদা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. রেজওয়ানুল হক মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, পাঁচজনের বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টার অভিযোগে (পাসপোর্ট আইনে) একটি মামলা করেছে বিজিবি। এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পাঁচজনকে আদালতে হাজির করার প্রক্রিয়া চলছে।”
তাছাড়া, একইদিনে মূলধারার সংবাদমাধ্যম সমকালে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকেও জানা যায়, পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশচেষ্টার অভিযোগে নারী ও শিশুসহ আটজনকে আটক করেছে বিজিবি যার মধ্যে খুশি রায়ের নামও অন্তর্ভুক্ত। রোববার (১৯ জানুয়ারি) গভীর রাতে বোদা উপজেলার কাজীপাড়া সীমান্ত এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তবে মুচলেকা নিয়ে শিশুদের তাদের স্বজনদের কাছে দেওয়া হয়েছে।
একই তথ্য আরো একাধিক সংবাদমাধ্যম সূত্রেও জানা যায়। তবে, কোথাও খুশি রায়কে সংখ্যালঘুর অধিকার নিয়ে কথা বলার কারণে বা সাম্প্রদায়িক কারণে আটক করার কোনো উল্লেখ বা তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও নানা পোস্ট থেকে জানা যায়, আলোচিত ধর্মীয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর খুশি রায় এবং অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ চেষ্টার অভিযোগে আটক হওয়া খুশি রায় একই ব্যক্তি।
সুতরাং, অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশচেষ্টার অভিযোগে আটককৃত খুশি রায়কে সংখ্যালঘু অধিকার নিয়ে কাজ করার কারণে আটক করা হয়েছে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের শয্যাশায়ী অবস্থার ছবিসহ একটি ফটোকার্ড প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, তিনি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন এবং দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে ওবায়দুল কাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তথ্যটি সত্য নয় বরং ২০১৯ সালে তার অসুস্থতার ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত পুরোনো একটি ছবি ব্যবহার করে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো সংবাদমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে ওবায়দুল কাদেরের হাসপাতালে ভর্তি কিংবা দেশবাসীর কাছে দোয়া চাওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে, দাবিটির সাথে প্রচারিত ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে, ২০১৯ সালের ৩ মার্চ বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল যুগান্তরের ওয়েবসাইটে “কাদের কাদের বলে ডাকতেই চোখের পাতা নড়ে উঠল” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবির সাথে আলোচিত ফটোকার্ডে ব্যবহৃত ছবিটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, সেসময় হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ায় ওবায়দুল কাদেরকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়েছিলো। পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসা গ্রহণ করে সুস্থ হয়ে ফিরেও এসেছিলেন তিনি।
অর্থাৎ, এই ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
এছাড়া, গত ০৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা গুঞ্জন চললেও তবে বর্তমানে তিনি কোথায় অবস্থান করছেন, সে বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতারা বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিলেও, ওবায়দুল কাদেরকে এখনো পর্যন্ত কোনো বিবৃতি বা মন্তব্য দিতে দেখা যায়নি।
সুতরাং, সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের হাসপাতালে ভর্তি দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, ‘পালিয়ে যাওয়ার আগে যশোরের মনিরামপুরে নিজের পুকুর জামায়াত নেতাকে দেখভাল করতে দিয়ে যায় ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। এদিকে লেখকের পুকুর মনে করে ১৯ জানুয়ারি সেখানকার মাছ লুট করে নেয় স্থানীয় বিএনপির কর্মীরা। পরে এলাকার জামায়াতের নেতাদের চাপে বিএনপির কর্মীরা মাছ বিক্রির ৯৩ হাজার টাকা থেকে থেকে ৮৯ হাজার টাকা ফেরত দেয়।’ শীর্ষক একটি তথ্য জাতীয় দৈনিক আজকের পত্রিকার সূত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা লেখক ভট্টাচার্য তার পুকুরের দায়িত্ব জামায়াতে ইসলামীর নেতাকে দিয়ে গেছেন দাবিতে আজকের পত্রিকা কোনো সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং, নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে আজকের পত্রিকার ওয়েবসাইটে গত ১৯ জানুয়ারি “ছাত্রলীগ নেতা লেখকের ভেবে জামায়াত নেতার মাছ লুট” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ১৯ জানুয়ারি যশোরের মনিরামপুরে জামায়াত নেতার আলমসাধু ভর্তি মাছ লুট করে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে বিএনপির কর্মীদের বিরুদ্ধে। ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্যের ঘেরের মাছ মনে করে লুট করা হয় বলে জানা গেছে। এ ঘটনার একটি ভিডিও গত ১৯ জানুয়ারি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়।
প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্যের বাড়ি মনিরামপুরের দুর্বাডাঙ্গা ইউনিয়নে। স্থানীয় ঘুঘুদা বিলে তাঁর মাছের ঘের রয়েছে। সরকার পতনের পর স্থানীয় তৌহিদ নামের এক ব্যক্তির কাছে ঘের দেখভালের দায়িত্ব দিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন লেখক। তৌহিদ ঘেরের মাছ ধরে বিক্রি করেন। এতে বিএনপির লোকজন বাধা দেয়। গতকাল শনিবার দুপুরে লেখক ভট্টাচার্য্যের ঘের থেকে মাছ ধরে আলমসাধু যোগে কপালিয়া বাজারে বিক্রির জন্য পাঠানো হয়। অপরদিকে একই সময়ে নিজেদের ঘেরের মাছ ধরে আলমসাধু যোগে কপালিয়া বাজারের আড়তে পাঠান জামায়াত নেতা লেয়াকত হোসেনসহ কয়েকজন। পথিমধ্যে কালীবাড়ি মোড় থেকে কপালিয়া বাজারে যাওয়ার পথে জামায়াত নেতাদের মাছ লুট করে নেন স্থানীয় বিএনপির কয়েকজন কর্মী।
আরও জানা গেছে, মূলত লেখক ভট্টাচার্য্যের ঘের থেকে ধরা মাছ লুট করতে গিয়ে তথ্যের ভুলে জামায়াত নেতার মাছ লুটের ঘটনা ঘটে। মাছ বিক্রির টাকা শনিবার রাতে এক সালিস বৈঠকের মাধ্যমে ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছেন অভিযুক্তরা।
অর্থাৎ, লেখক ভট্টাচার্যের পুকুর দেখভালের দায়িত্ব কোনো জামায়াতে ইসলামী দলের নেতাকে দেওয়া হয়নি। তৌহিদ নামের এক ব্যক্তিকে দেওয়া হয়েছে। তবে, আজকের পত্রিকার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তৌহিদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি।
বিষয়টি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য দুর্বাডাঙ্গা ইউনিয়নের স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার। দুর্বাডাঙ্গা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বার সেলিম আক্তার দাবি করেন, লেখক ভট্টাচার্যের পুকুর যিনি দেখভাল করেন তৌহিদ সে বিএনপি করে।
পাশাপাশি, আজকের পত্রিকা বা অন্যকোনো গণমাধ্যম ও বিশ্বস্ত সূত্রে আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। অন্যান্য গণমাধ্যমের প্রতিবেদনেও (১,২) তৌহিদ নামের ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং লেখক ভট্টাচার্যের ঘেরের মাছ লুট করতে গিয়ে তথ্যের ভুলে জামায়াত নেতার মাছ লুটের ঘটনা ঘটেছে বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে লেখক ভট্টাচার্যের ঘেরের মাছ ভেবে উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের মাছ ছিনতাই করে বাজারে বিক্রির এ ঘটনায় উপজেলায় বিএনপির দুই কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে।
সুতরাং, লেখক ভট্টাচার্য তার পুকুর দেখভালের দায়িত্ব জামায়াত নেতাকে দিয়ে গেছেন দাবি করে আজকের পত্রিকা সংবাদ প্রকাশ করেছে শীর্ষক তথ্যটি মিথ্যা।
গত ১৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ১১তম আসরে ফরচুন বরিশাল বনাম ঢাকা ক্যাপিটালস এর ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত ম্যাচ চলাকালে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের উইকেট কিপার ব্যাটার লিটন কুমার দাসকে উদ্দেশ্য করে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেয় একদল দর্শক। এরইমধ্যে উক্ত ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, লিটন কুমার দাস হিন্দু হওয়ার কারণে তাঁর বিরুদ্ধে এই স্লোগানটি দেওয়া হয়েছে। ইসলামপন্থীরা এই স্লোগানটিকে বাংলাদেশের হিন্দুদের বিরুদ্ধে গালি হিসেবে ব্যবহার করে।
উক্ত দাবিতে ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়ার কারণে লিটন কুমার দাসের বিরুদ্ধে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেওয়া হয়নি এবং এই স্লোগানটিকে বাংলাদেশের হিন্দুদের বিরুদ্ধে অপবাদ হিসেবেও ব্যবহার করা হয় না বরং, বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে এই স্লোগানটি ক্রিকেটারসহ অনেক মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষের বিরুদ্ধেও দেওয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, আলোচিত এই স্লোগানটি বাংলাদেশে একটি সাধারণ চর্চা।
গত ১৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ১১তম আসরে ফরচুন বরিশাল বনাম ঢাকা ক্যাপিটালস এর ম্যাচে পরাজিত হয় ঢাকা ক্যাপিটালস। উক্ত ম্যাচে ফিল্ডিং করার সময়ে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ও ঢাকা ক্যাপিটালস এর ব্যাটার লিটন কুমার দাসকে উদ্দেশ্য করে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেয় কিছু দর্শক।
পরবর্তীতে উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে বিপিএল ফ্রেঞ্জাইজি ঢাকা ক্যাপিটালস তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে একটি পোস্ট দেয়। যেখানে বলা হয়, “আপনি হয়তো একটি ঝাপসা ভিডিওতে কাউকে দুয়োধ্বনি শুনতে দেখছেন, আমরা দেখছি একজন জাতীয় নায়কের বিপিএল ইতিহাসের দ্রুততম শতক হাঁকিয়ে রেকর্ড-গড়া পার্টনারশিপের অংশ হয়ে ওঠা। আপনি সমালোচনা দেখেন, আমরা দেখি একজন তারকা ব্যাটারের দেশের হয়ে সবচেয়ে বড় ওয়ানডে ইনিংস খেলা, এবং দেশের হয়ে টেস্ট র্যাংকিংয়ে ব্যাটার হিসেবে সর্বোচ্চ স্থানে আসা।
আপনি বাধা-বিপত্তি দেখেন, আমরা দেখি ঐতিহাসিক কিছু মুহূর্তের সৃষ্টি। লিটন, আপনি আমাদের ভালবাসার প্রতীক। আপনি আমাদের গৌরব।”
Screenshot: Dhaka Capitals Facebook Page
এছাড়াও, বিপিএলের আরেক ফ্রেঞ্চাইজি রংপুর রাইডার্সও তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে উক্ত বিষয়টি নিয়ে সহমর্মিতা জানিয়ে পোস্ট দেয়। সেখানে তারা বলেন, “লাল-সবুজের জার্সিতে ব্যাট হাতে লিখেছেন অসংখ্য রূপকথা, আমাদের দিয়েছেন উদযাপনের উপলক্ষ! আমরা সেই লিটন দাশকেই মনে রাখি, সমর্থন করি। Stay Strong Litton Kumer Das!”
Screenshot: Rangpur Riders Facebook Page
তাছাড়া, লিটন কুমার দাসকে উদ্দেশ্য করে কিছু দর্শকের দুয়োধ্বনির ঘটনায় নেটিজেনরাও ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে ফেসবুকে পোস্ট (১, ২, ৩) করেন।
Collage by Rumor Scanner
বাংলাদেশে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান কি শুধু হিন্দুদের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করা হয়?
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেওয়ার প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়। গত ১৯ জানুয়ারি চিটাগং কিংস বনাম ফরচুন বরিশাল ম্যাচের আগেও জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের মূল গেটের সামনের দর্শক সারিতে ‘ভুয়া, ভুয়া’ রব ওঠে। চট্টগ্রামের দর্শকেরা বরিশালের দর্শকদের বলেন ‘ভুয়া’, বরিশালের দর্শকেরাও পাল্টা জবাব দেন ‘ভুয়া’ বলে।
মুসলিম ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান
বিপিএলের চলতি আসরের কোনো ম্যাচে বাংলাদেশের তারকা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান অংশ না নিলেও তাকে ঘিরে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেওয়া হয়।
এছাড়াও, গত বছর বিপিএলের দশম আসরেও সিলেট পর্বের ম্যাচে সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে দর্শকরা ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেয়।
একই বছর ঈদের নামাজের পর ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেওয়া হয় এই খেলোয়াড়কে উদ্দেশ্য করে। ২০২৪ সালে স্ত্রী এবং তিন সন্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে ঈদুল ফিতর উদযাপন করেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসান। সে বছরের ১০ এপ্রিল সেখানে তিনি ঈদুল ফিতর উদযাপন করেন। সেদিন জ্যামাইকার মুসলিম সেন্টারে তিনি ঈদুল ফিতরের জামাত আদায় করতে যান। সেখানে তাকে দেখে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেয় উপস্থিত জনতার কিছু অংশ।
এর আগে ২০২৩ সালেও সাকিব আল হাসানকে উদ্দেশ্য করে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেওয়া হয়। সেবছরের ২৬ অক্টোবর অনুশীলন শেষে বেরিয়ে যাওয়ার পথে মিরপুরে উপস্থিত গুটিকয়েক সমর্থকের রোষের মুখে পড়েন সাকিব। সে সময় উপস্থিত সমর্থকরা ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে দুয়োধ্বনি দেন তাকে।
এছাড়াও, গত বছরে বিপিএলের একটি ম্যাচ চলাকালে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও ওপেনিং ব্যাটার তামিম ইকবালকে নিয়েও ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেয় এক দল দর্শক।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে উদ্দেশ্য করেও গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেয় দর্শকরা।
অর্থাৎ, লিটন কুমার দাস ব্যতীত যেসব বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের উদ্দেশ্যে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেওয়ার কথা এখানে উল্লেখ করা হয়েছে তাদের প্রত্যেকেই মুসলিম ধর্মাবলম্বী।
তাছাড়া, গত বছর বাংলাদেশ বনাম দক্ষিন আফ্রিকার মধ্যকার টেস্ট ম্যাচে বিনা টিকেটে খেলা দেখতে না পেরে ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিয়েছিলেন একদল শিক্ষার্থী।
সেনাবাহিনী ও পুলিশকে উদ্দেশ্য করে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান
গত বছরের নভেম্বরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় রাজধানীর সায়েন্সল্যাব মোড়। সে সময় সেনাবাহিনীকে উদ্দেশ্য করে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেয় একদল শিক্ষার্থী।
এছাড়াও, গত বছরের কোটা আন্দোলনের সময়ে পুলিশকে উদ্দেশ্য করেও ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেয় শিক্ষার্থীরা।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাসে পেট্রলবোমা হামলায় আটজনকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া দ্বিতীয় মামলায় গত বছরের ১১ নভেম্বর পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হককে আদালতে হাজির করা হয়। সে সময় আদালত প্রাঙ্গণে সাবেক এই আইজিপিকে উদ্দেশ্য করে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেয় আইনজীবী সহ বিক্ষুব্ধ জনতা।
রাজনীতিবীদদের উদ্দেশ্য করে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান
গত বছরের ৩১ জুলাই সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের তোপের মুখে পড়েন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সে সময় সাবেক ছাত্রনেতাদের মতবিনিময়ের জন্য ডেকে কথা বলতে না দেওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় বলে জানা যায়। এতে সাবেক ছাত্রনেতারা তাকে উদ্দেশ্য করে ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দেন। এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাকও ছিলেন।
গতবছরের ০৪ আগস্ট শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগকে নিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেয় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।
গত বছরের ১৩ নভেম্বর তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগানের খবর পাওয়া যায়। পরে জানা যায়, তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে উক্ত স্লোগান দিয়েছিলেন।
এর আগে গত বছরের ০৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর গাড়ি আটকে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেয় নৌকার কর্মী সমর্থকেরা।
এছাড়াও, গত বছরের ১০ নভেম্বর মহিলা আওয়ামী লীগ এক নেত্রীকে পুলিশ আটক করে নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে উদ্দেশ্য করেও ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিতে দেখা যায় একদল ক্ষুব্ধ লোককে।
তাছাড়া, গত ১১ জানুয়ারি জুলাই ঘোষণাপত্রের পক্ষে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীদের মধ্যে পাল্টা-পাল্টাপাল্টি হামলার অভিযোগ করা হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করলে সেখানেও দুই পক্ষের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের দুই গ্রুপ পাল্টাপাল্টি ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেয়।
শিক্ষকদের উদ্দেশ্য করে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান
গত বছরের ১৬ মার্চ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে উদ্দেশ্য করে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেয় উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।
এছাড়াও, গত বছরের ২৪ জুন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েটে) উপাচার্য অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদারের শেষ কর্মদিবসের আগের দিন তার কার্যালয়ে কয়েক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ সময় কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দেন। পরে পুলিশের সহায়তায় উপাচার্য তার বাসভবনে চলে যান।
গত বছরের ১৬ জুলাই কোটা আন্দোলন চালাকালীন ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষকের ওপর হামলা করে এক দল শিক্ষার্থী।
বিনোদন অঙ্গণের তারকাদের উদ্দেশ্য করে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান
গত বছরের ১৬ নভেম্বর যমুনা ফিউচার পার্কের একটি শোরুম উদ্বোধন করতে গিয়ে অনাকাঙ্খিত ঘটনার সম্মুখীন হন ঢাকাই সিনেমার আলোচিত নায়িকা পরীমণি। সে সময় নিরাপত্তা কর্মী, আয়োজক ও দর্শকদের মধ্যে তুমুল হট্টোগোল বেধে যায়। ঘটনার এক পর্যায়, পরীকে উদ্দেশ্য করে দর্শকরা ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিতে শুরু করলে বাধ্য হয়ে স্টেজ থেকে বিদায় নেন এই অভিনেত্রী।
এর আগে ২০২৩ সালের জুনে নিউইয়র্কের জ্যামাইকার অ্যামাজুরা হলে ২১তম ঢালিউড ফিল্ম অ্যান্ড মিউজিক অ্যাওয়ার্ডের প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। ঢালিউড মিউজিক অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে পারফর্ম করতে গিয়ে হাস্যরসের শিকার হন ঢালিউড অভিনেতা জায়েদ খান। তিনি যখন মঞ্চে পারফর্ম করতে উঠেন, তখন দর্শকরা তাকে ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে চিৎকার করতে থাকেন।
অর্থাৎ, উপরিউক্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এটা স্পষ্ট যে, বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের পৃথক পৃথক শ্রেণি পেশার মানুষের বিরুদ্ধে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেওয়া হয়েছে; যাদের অধিকাংশই ছিলেন মুসলিম ধর্মাবলম্বী। তাই এটা স্পষ্টভাবে বলা যায় যে, এটি হিন্দুদের বিরুদ্ধে কোনো স্লোগান নয় বরং যেকোনো ধর্মের মানুষের বিরুদ্ধেই এই স্লোগানটি বিভিন্ন সময়ে ব্যবহৃত হয়েছে।
লিটন কুমার দাসের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স
‘০, ০, ২, ৪, ০’ গতবছর লিটন কুমার দাসের ওয়ানডে ইনিংস এগুলো। ২০২৪ সালে ব্যাট হাতে আশানুরূপ পারফর্ম করতে পারেননি এই ওপেনিং ব্যাটার। গতবছর ৫ ওয়ানডে খেলে ৩টিতেই কোনো রান করতে পারেননি তিনি। ২০২৪ সালের ওয়ানডেতে তার রান সংখ্যা ৬। সবমিলিয়ে ওয়ানডেতে লিটনের ডাকের সংখ্যা বর্তমানে ১৫টি।
লিটনের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স নিয়ে গত ১৫ ডিসেম্বর বিসিবি পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেন, এটা খুব দুঃখজনক হবে যদি ওর কাছ থেকে আমরা সেরাটা বের করে না আসতে পারি। তবে এই মুহূর্তে তার খেলা নিয়ে সবাই নিশ্চিতভাবে হতাশ। তবে হাল ছেড়ে দিলে হবে না, ওর পাশে থাকা দরকার। আশা করব দ্রুত ফর্মে ফিরবে।
গত ১২ জানুয়ারি বিসিবি ঘোষিত চ্যাম্পিয়নস ট্রফির বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের স্কোয়াডে জায়গা পাননি লিটন কুমার দাস। এর কারণ হিসেবে লিটনের সাম্প্রতিক বাজে পারফরম্যান্সকেই দায়ী করা হচ্ছে।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির স্কোয়াড থেকে বাদ পড়া প্রসঙ্গে লিটন কুমার দাস নিজেই বলেছেন, “চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বিষয়টা যদি বলেন, এটা আমার হাতে নাই। ওটা নির্বাচকদের কল সম্পূর্ণ। কাকে খেলাবে, কাকে খেলাবে না এটা তাদের কল। আমার কাজ হচ্ছে পারফর্ম করা, যেটা করতে পারছিলাম না এতদিন। ওটার জন্য আপসেট ছিলাম, কীভাবে ডেলিভার করা যায় পারফরম্যান্স।”
অর্থাৎ, ধর্মীয় কারনে নয় বরং, আশানুরূপ পারফর্ম না করার কারণে দর্শকরা লিটন কুমার দাসের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিয়েছেন বলেই প্রতীয়মান হয়।
সুতরাং, হিন্দু হওয়ার কারণে লিটন কুমার দাসের বিরুদ্ধে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেওয়া হয়েছে শীর্ষক দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, ডব্লিউডব্লিউই (ওয়ার্ল্ড রেসলিং এন্টারটেইনমেন্ট)-এর জনপ্রিয় রেসলার জন সিনা পবিত্র কোরআন শরিফ হাতে নিয়ে রেসলিং রিংয়ে উঠেছেন দাবিতে দুটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হযেছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, জন সিনার পবিত্র কোরআন শরীফ হাতে নিয়ে রেসলিং রিংয়ে উঠার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির সহায়তায় ছবিগুলো তৈরি করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যালোচনায় প্রথম ছবির রেসলিং রিংয়ে কিছুটা অসামঞ্জস্যতা লক্ষ্য করা যায়। জন সিনার পেছনের দিকে তিনটি দড়ি দেখা গেলেও তার সামনে প্রায় একই উচ্চতায় মাত্র একটি দড়ি দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও ছবির বামপাশে দেখতে পাওয়া রিংয়ের কর্নারে ডব্লিউডব্লিউই-এর লোগো খচিত দুটি বস্তু দেখা গেলেও উপরের দিকে তেমন কিছু দেখা যাচ্ছে না। পাশাপাশি, কোরআন শরীফের কাভারের লেখাটিও অর্থপূর্ণ নয় বলে লক্ষ্য করা যায়।
Image Analysis by Rumor Scanner
একইভাবে দ্বিতীয় ছবিটির পর্যালোচনা করে, এতে জন সিনার বাম হাতে চারটি আঙুল লক্ষ্য করা যায়। যা থেকে ধারণা করা যায়, উভয় ছবিই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে।
Image Analysis by Rumor Scanner
পরবর্তীতে আলোচিত ছবিগুলো রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমেও উক্ত ছবিগুলোর কোনো সূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও জন সিনার কোরআন শরীফ হাতে নিয়ে রেসলিং রিংয়ে উঠার সত্যতা যাচাইয়ে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমেও গণমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, কোরআন শরীফ হাতে জন সিনার আলোচিত ছবিগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে।
সুতরাং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি ছবির ভিত্তিতে জনপ্রিয় রেসলার জন সিনা পবিত্র কোরআন শরীফ হাতে নিয়ে রেসলিং রিংয়ে উঠেছেন বলে দাবি করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।
যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে স্থানীয় সময় গত ৮ জানুয়ারি শুরু হওয়া ভয়াবহ দাবানলকে ঘিরে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ভিডিওর মাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, আমেরিকান জনপ্রিয় অ্যানিমেটেড টেলিভিশন সিরিজ সিম্পসনস এই ঘটনাটি আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল।
ভিডিওটির শুরুতেই একটি আধুনিক শহরের দৃশ্য দেখা যায়। এরপর দেখা যায়, আগুন দ্রুত একটি শহরের দিকে ধেয়ে আসতে থাকে। এর পরের দৃশ্যে সিম্পসন পরিবারের সদস্যরা দরজা খুলে বাইরে তাকায় এবং নিজেদেরকে আগুনে বিধ্বস্ত স্প্রিংফিল্ড শহরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। দৃশ্যটি শেষ হয় শহরের একটি বিখ্যাত চিহ্ন পুড়ে যাওয়ার মাধ্যমে।
ভিডিওটির শেষাংশে এই ভিডিওর সাথে লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানলের সঙ্গে তুলনা বুঝাতে লস অ্যাঞ্জেলেসে অবস্থিত হলিউডের বিখ্যাত সাইন পোড়ার একটি দৃশ্য দেখানো হয়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দ্য সিম্পসনস সিরিজে লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করার দাবিটি সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, সিরিজটির বিভিন্ন এপিসোডের ভিডিও ক্লিপ সম্পাদনার সাহায্যে একসাথে জুড়ে দিয়ে তৈরি একটি ভিডিওর মাধ্যমে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
দাবিকৃত ভিডিওটির শুরুতে দেখানো শহরের দিকে আগুন ধেয়ে আসার দৃশ্যটির কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে, একই দৃশ্য সম্বলিত একটি ভিডিও ইউটিউবে খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির ক্যাপশনের সূত্র ধরে জানা যায়, এটি ২০০৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ‘Little Big Girl’ শিরোনামে প্রচারিত দ্য সিম্পসনস কার্টুনের ১৮তম সিজনের ১২তম এপিসোডের ভিডিও। এ পর্বে, কর্নকব পাইপের আগুন থেকে কার্টুনটির কাল্পনিক শহর স্প্রিংফিল্ডে ভয়াবহ আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে সিরিজের চরিত্র বার্ট তার ওয়াগনে চেপে শহরের বিভিন্ন স্থানে ছুটে বেড়ায় এবং স্কুলের অগ্নি নির্বাপক ব্যবহার করে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। ফলে অগ্নি নির্বাপক থেকে নির্গত ফোমের মাধ্যমে শহরের আগুন নিভে যায়।
Comparison by: rumor scanner
পরবর্তীতে, সিম্পসন পরিবারের দরজা খুলে শহরজুড়ে আগুন লাগার দৃশ্যটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করে, একই দৃশ্য সম্বলিত একটি ভিডিও ইউটিউবে খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির বর্ণনা থেকে জানা যায় এটি, ‘Simpsons Bible Stories’ শিরোনামে প্রচারিত দ্য সিম্পসনস কার্টুনের ১০তম সিজনের ১৮তম এপিসোডের ভিডিও। এই এপিসোডের বিষয়ে খোঁজে নিয়ে জানা যায় (১,২), এই পর্বের শেষাংশে সিম্পসন পরিবার চার্চে ঘুমিয়ে পড়ে এবং জেগে দেখে চার্চ সম্পূর্ণ ফাঁকা। তারা বাইরে বের হয়ে দেখতে পায়, পৃথিবীতে বিচার দিবস শুরু হয়েছে। আকাশ রক্তিম হয়ে আছে এবং আগুন ঝরছে, আর বাইবেলের চার অশ্বারোহী (Four Horsemen of the Apocalypse) তাদের সামনে দিয়ে ছুটে যাচ্ছে। এই দৃশ্যটি মূলত বাইবেলে বর্ণিত “The Last Judgement” বা বিচার দিবসের ঘটনাকে ব্যঙ্গাত্মকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
Comparison by: rumor scanner
এরপর, সিম্পসনের কাল্পনিক শহর স্প্রিংফিল্ডের বিখ্যাত সাইন পুড়ে যাওয়ার দৃশ্যটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে জানা যায়, এতে ‘Poppa’s Got a Brand New Badge’ শিরোনামে প্রচারিত দ্য সিম্পসনস কার্টুনের ১৩তম সিজনের ২২তম এপিসোডের দৃশ্য। এই পর্বে স্প্রিংফিল্ডে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের পর শহরজুড়ে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হোমার সিম্পসন একটি ‘প্রাইভেট পুলিশ ফোর্স’ প্রতিষ্ঠা করেন এবং আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেন। গল্পের এক পর্যায়ে, শহরের অরাজকতার প্রতীক হিসেবে স্প্রিংফিল্ডের বিখ্যাত সাইনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
Comparison by: rumor scanner
অর্থাৎ, ভিন্ন তিনটি সিজনের আলাদা আলাদা এপিসোড একসাথে জুড়ে দিয়ে আলোচিত ভিডিওটি বানানো হয়েছে।
এছাড়া, ভিডিওটির শেষাংশে দেখানো লস অ্যাঞ্জেলেসের বিখ্যাত হলিউড সাইন পুড়ে যাওয়ার দৃশ্যটিও ভিত্তিহীন। দাবানলের ঘটনায় হলিউড সাইন পুড়ে যাওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। এই দাবি মূলত এআই-নির্মিত বিভিন্ন ছবি ও ভিডিওর মাধ্যমে ইন্টারনেটে প্রচারিত হয়েছিল। রিউমর স্ক্যানারসহ বিভিন্ন ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা এই দাবি যাচাই করে মিথ্যা বলে নিশ্চিত করেছে।
উল্লেখ, পূর্বেও সিম্পসনস কার্টুন ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে এমন দাবি খণ্ডন করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। এমন দুইটি প্রতিবেদন দেখুনঃ
সুতরাং, সিম্পসনস কার্টুনে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানলের সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত বিষয়টি মিথ্যা।
গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে বাংলাদেশ সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই ভবনে অগ্নিকাণ্ডের আনুষ্ঠানিক তদন্তের পাশাপাশি চলতে থাকে নানান আলোচনা ও গুঞ্জন। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি, ‘সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে অগ্নিকাণ্ডে ২ জন সবন্বয়কে আটক করেছে’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকে প্রচার করা হয়েছে।
ভিডিওটির থাম্বনেইলে আরো বলা হয় ‘সিসিটিভি ফুটেজ ফাঁস! গ্রেপ্তার সমন্বয়ক’ ও ‘সমন্বয়কদের বিচারের দাবিতে – রুমিন ফারহানা’ এবং সিসিটিভি ফুটেজে শনাক্ত ৩ সমন্বয়ক’।
উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ইউটিউব ভিডিওটি ৭৩ হাজার বার দেখা হয়েছে৷
উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি টিকটকে প্রচারিত সর্বাধিক ভাইরাল ভিডিওটিতে প্রায় সাড়ে ২৭ হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে এবং ভিডিওটি প্রায় আড়াই হাজার বার শেয়ার করা হয়েছে। ভিডিওটির কমেন্ট বক্সে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে অধিকাংশ ব্যবহারকারী উক্ত দাবির পক্ষে মতামত দিয়েছে৷
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২ জন সমন্বয়ককে আটক করার দাবিটি সঠিক নয় এবং এ ঘটনায় রুমিন ফারহানাও সমন্বয়কদের বিচার দাবি করেননি। বরং, কয়েকজন ব্যক্তির মন্তব্যের পৃথক কিছু অডিও সম্পাদনার মাধ্যমে জোড়া দিয়ে কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, প্রকাশিত এই ভিডিওতে সমন্বয়কদের গ্রেফতারের বিষয়ে কোনো তথ্য নেই বরং বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানার বক্তব্য রয়েছে।
প্রচারিত ভিডিওর শুরুতে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম আর টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর প্রকাশিত ‘সচিবালয়ে আ/গুন: সংগ্রহ করা হয়েছে সিসিটিভি ভিডিও’ শীর্ষক শিরোনামের একটি ভিডিও থেকে নেওয়া প্রথম চার সেকেন্ডের ফুটেজ ব্যবহার করা হয়, যেখানে সংবাদপাঠিকা সচিবালয়ে আগুনের ঘটনায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহের তথ্য প্রদান করেছেন৷
উক্ত ভিডিওর ০০:০৮ থেকে ০০:১৯ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশটির অডিও আলোচিত ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে, যেখানে জনাব রিজভী সচিবালয় থেকে ফাইল গায়েব হয়ে যাওয়া ও আগুন লাগার বিষয়ে কথা বলেছেন।
উক্ত ভিডিওর ০৫:০৮ থেকে ০৫:৩০ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশটির অডিও আলোচিত ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে, যেখানে রুমিন ফারহানা সচিবালয়ের আগুন পরিকল্পিত ভাবে ঠান্ডা মাথায় লাগানো হয়েছে বলে তার মতামত দিয়েছেন।
এছাড়া, প্রচারিত ইউটিউব ভিডিওতে ২০২৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর গণমাধ্যম ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন এর ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত ‘সচিবালয়ে আগুনের ঘটনার প্রতিবেশী দেশের সম্পৃক্ততা নিয়ে যা বললেন নুর’ শীর্ষক শিরোনামের ভিডিও থেকে ০০:২৪ থেকে ০০:২৮ পর্যন্ত চার সেকেন্ডের অংশটি ব্যবহার করা হয়েছে, যেখানে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড শর্ট সার্কিট থেকে হওয়ার ব্যাপারে তার মতামত জানান৷
Screenshot: YouTube
আলোচিত ভিডিওতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলামের ছবি ব্যবহার ও সচিবালয়ে আগুন লাগার বিষয়ে ফেসবুক লাইভে আসার কথা বলা হলেও তাকে আটক করা হয়েছে এমন বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
Screenshot: Facebook
বরং, গত ১৯ জানুয়ারি মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর কোটাসহ ফলাফল প্রকাশের প্রতিবাদে হাসিবকে বক্তব্য রাখতে দেখা যায় দেখুন।
উল্লেখ্য, গত ৩১ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কাছে দেয়া প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে সচিবালয়ে আগুনের কারণ বৈদ্যুতিক ‘লুজ কানেকশন’। ভবনটির ছয় তলার মাঝামাঝি সিঁড়ির কাছে এটি শুরু হয়। সচিবালয়ের ভেতর সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও ২৬ ডিসেম্বর রাত ১.৩৬ মিনিটে একটি বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গ থেকে ধীরে ধীরে আগুন ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি ধরা পড়েছে।
এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে কোনো সমন্বয়ককে গ্রেফতারের সংবাদ বা তথ্য পাওয়া যায়নি৷
সুতরাং, সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২ জন সমন্বয়ককে আটক করা হয়েছে এবং রুমিন ফারহানা সমন্বয়কদের বিচার দাবি করেছেন শীর্ষক তথ্যগুলো মিথ্যা।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘Crazy Time’ নামক অ্যাপের মাধ্যমে টাকা উপার্জন করার কথা বলছেন এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
ভিডিওটিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর বক্তব্যের একটি ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয়েছে। এই ফুটেজে তাকে ‘CRAZY TIME’ নামক অ্যাপের মাধ্যমে টাকা উপার্জন করার কথা বলতে দেখা গেছে। ড. ইউনূসের বক্তব্যের পাশাপাশি ‘BANGER casino’ নামক একটি অ্যাপ এবং সেখান থেকে ‘CRAZY TIME’ নামক অ্যাপ প্রদর্শিত হয়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘CRAZY TIME’ নামের জুয়ার অ্যাপের মাধ্যমে টকা উপার্জনের কথা বলেননি বরং, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর বক্তব্যের ফুটেজটি অনুসন্ধানে ভিডিওতে ব্যবহৃত ফুটেজের কিছু কী-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ০৯ আগস্ট ‘প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস জাতির উদ্দেশে যে বার্তা দিলেন | Dr. Yunus Speech | Jamuna TV’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এটির সাথে আলোচিত জুয়ার বিজ্ঞাপনে ব্যবহৃত ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর বক্তব্যের ফুটেজের সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।
Comparison: Rumor Scanner
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এটি মূলত ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেয়ার পর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জাতির উদ্দেশ্য দেয়া ভাষণের ফুটেজ। উক্ত ভাষণে তিনি ‘CRAZY TIME’ অ্যাপ নিয়ে কোনো কথা বলেননি।
ভিডিওটি প্রচার করা ফেসবুক পেজ দুটি সম্পর্কে যা জানা যায়
‘Vegas Luck’ পেজটির ট্রান্সপারেন্সি সেকশন যাচাই করে দেখা যায়, উক্ত পেজ ২০১৯ সালের ০২ মে তৈরি করা হয়েছে। পেজটি ভিয়েতনাম থেকে ৪ জন, বাংলাদেশ থেকে ১ জন এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১ জন মোট ৬ জন ব্যক্তি পরিচালনা করে থাকেন। এছাড়া, পেজটি পর্যলোচনা করে দেখা যায়, পেজটিতে উল্লেখযোগ্য কোনো পোস্ট নেই এবং জুয়ার ভিডিওটি বুস্ট করে প্রচার করা হচ্ছে।
Screenshot: Facebook
‘Winning Life’ পেজটির ট্রান্সপারেন্সি সেকশন যাচাই করে দেখা যায়, উক্ত পেজ ২০২০ সালের ১৪ আগস্ট তৈরি করা হয়েছে। এই পেজটিতেও উল্লেখযোগ্য কোনো পোস্ট নেই এবং জুয়ার ভিডিওটি বুস্ট করে প্রচার করা হচ্ছে।
Screenshot: Facebook
উল্লেখ্য, পূর্বেও ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জড়িয়ে ভুয়া জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হলে তা নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন (১,২) প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘CRAZY TIME’ নামক জুয়ার অ্যাপে বিনোয়োগ করে অর্থ উপার্জনের করার কথা বলেছেন শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা এবং এ সংক্রান্ত ভিডিওটি এডিটেড বা বিকৃত।
সম্প্রতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে “অমিত শাহের বিরুদ্ধে শেখ রেহানাকে যৌণ হয়রানীর চেষ্টার অভিযোগ” শীর্ষক শিরোনামে সংবাদমাধ্যম সময় টিভির লোগো সম্বলিত একটি ফটোকার্ড প্রচার করা হয়েছে।
অর্থাৎ দাবি করা হয়েছে, ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানাকে যৌন হয়রানির চেষ্টার অভিযোগ দাবিতে সময় টিভি ফটোকার্ড প্রকাশ করেছে।
উক্ত দাবিতে এক্সে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “অমিত শাহের বিরুদ্ধে শেখ রেহানাকে যৌণ হয়রানীর চেষ্টার অভিযোগ” শীর্ষক শিরোনামে সময় টিভি কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি বরং, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সময় টিভির ডিজাইনের আদলে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে সময় টিভির নাম, লোগো এবং এটি প্রকাশের তারিখ হিসেবে ‘১৭ জানুয়ারি ২০২৫’ উল্লেখ করা হয়েছে।
উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে সময় টিভির ফেসবুক পেজে প্রচারিত সংবাদ ও ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করে উক্ত শিরোনাম সম্বলিত কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও সময় টিভির ওয়েবসাইটেও উক্ত দাবির পক্ষে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Comparison: Rumor Scanner
তাছাড়া, সময় টিভির ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলোর সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির ফন্ট ডিজাইনেও ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। প্রচারিত ফটোকার্ডটির শিরোনামে ‘যৌন’ বানান ভুল রয়েছে, যা গণমাধ্যমের ফটোকার্ডে সাধারণত দেখা যায়না।
পাশাপাশি, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করেও আলোচিত ফটোকার্ডটিতে থাকা অমিত শাহ’র বিরুদ্ধে শেখ রেহানাকে যৌন হয়রানির সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, অমিত শাহের বিরুদ্ধে শেখ রেহানাকে যৌন হয়রানির চেষ্টার অভিযোগ শীর্ষক দাবিতে শিরোনামে সময় টিভির নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া ও বানোয়াট।