‘লেখক ভট্টাচার্যের পুকুর দেখভালের দায়িত্বে জামায়াত নেতা’ শীর্ষক দাবি আজকের পত্রিকা করেনি

সম্প্রতি, ‘পালিয়ে যাওয়ার আগে যশোরের মনিরামপুরে নিজের পুকুর জামায়াত নেতাকে দেখভাল করতে দিয়ে যায় ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। এদিকে লেখকের পুকুর মনে করে ১৯ জানুয়ারি সেখানকার মাছ লুট করে নেয় স্থানীয় বিএনপির কর্মীরা। পরে এলাকার জামায়াতের নেতাদের চাপে বিএনপির কর্মীরা মাছ বিক্রির ৯৩ হাজার টাকা থেকে থেকে ৮৯ হাজার টাকা ফেরত দেয়।’ শীর্ষক একটি তথ্য জাতীয় দৈনিক আজকের পত্রিকার সূত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা লেখক ভট্টাচার্য তার পুকুরের দায়িত্ব জামায়াতে ইসলামীর নেতাকে দিয়ে গেছেন দাবিতে আজকের পত্রিকা কোনো সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং, নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে আজকের পত্রিকার ওয়েবসাইটে গত ১৯ জানুয়ারি “ছাত্রলীগ নেতা লেখকের ভেবে জামায়াত নেতার মাছ লুট” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ১৯ জানুয়ারি যশোরের মনিরামপুরে জামায়াত নেতার আলমসাধু ভর্তি মাছ লুট করে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে বিএনপির কর্মীদের বিরুদ্ধে। ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্যের ঘেরের মাছ মনে করে লুট করা হয় বলে জানা গেছে। এ ঘটনার একটি ভিডিও গত ১৯ জানুয়ারি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। 

প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্যের বাড়ি মনিরামপুরের দুর্বাডাঙ্গা ইউনিয়নে। স্থানীয় ঘুঘুদা বিলে তাঁর মাছের ঘের রয়েছে। সরকার পতনের পর স্থানীয় তৌহিদ নামের এক ব্যক্তির কাছে ঘের দেখভালের দায়িত্ব দিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন লেখক। তৌহিদ ঘেরের মাছ ধরে বিক্রি করেন। এতে বিএনপির লোকজন বাধা দেয়। গতকাল শনিবার দুপুরে লেখক ভট্টাচার্য্যের ঘের থেকে মাছ ধরে আলমসাধু যোগে কপালিয়া বাজারে বিক্রির জন্য পাঠানো হয়। অপরদিকে একই সময়ে নিজেদের ঘেরের মাছ ধরে আলমসাধু যোগে কপালিয়া বাজারের আড়তে পাঠান জামায়াত নেতা লেয়াকত হোসেনসহ কয়েকজন। পথিমধ্যে কালীবাড়ি মোড় থেকে কপালিয়া বাজারে যাওয়ার পথে জামায়াত নেতাদের মাছ লুট করে নেন স্থানীয় বিএনপির কয়েকজন কর্মী। 

আরও জানা গেছে, মূলত লেখক ভট্টাচার্য্যের ঘের থেকে ধরা মাছ লুট করতে গিয়ে তথ্যের ভুলে জামায়াত নেতার মাছ লুটের ঘটনা ঘটে। মাছ বিক্রির টাকা শনিবার রাতে এক সালিস বৈঠকের মাধ্যমে ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছেন অভিযুক্তরা।

অর্থাৎ, লেখক ভট্টাচার্যের পুকুর দেখভালের দায়িত্ব কোনো জামায়াতে ইসলামী দলের নেতাকে দেওয়া হয়নি। তৌহিদ নামের এক ব্যক্তিকে দেওয়া হয়েছে। তবে, আজকের পত্রিকার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তৌহিদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি।  

বিষয়টি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য দুর্বাডাঙ্গা ইউনিয়নের স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার। দুর্বাডাঙ্গা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বার সেলিম আক্তার দাবি করেন, লেখক ভট্টাচার্যের পুকুর যিনি দেখভাল করেন তৌহিদ সে বিএনপি করে। 

পাশাপাশি, আজকের পত্রিকা বা অন্যকোনো গণমাধ্যম ও বিশ্বস্ত সূত্রে আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। অন্যান্য গণমাধ্যমের প্রতিবেদনেও (,) তৌহিদ নামের ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং লেখক ভট্টাচার্যের ঘেরের মাছ লুট করতে গিয়ে তথ্যের ভুলে জামায়াত নেতার মাছ লুটের ঘটনা ঘটেছে বলে জানানো হয়েছে।

এদিকে লেখক ভট্টাচার্যের ঘেরের মাছ ভেবে উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের মাছ ছিনতাই করে বাজারে বিক্রির এ ঘটনায় উপজেলায় বিএনপির দুই কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে।

সুতরাং, লেখক ভট্টাচার্য তার পুকুর দেখভালের দায়িত্ব জামায়াত নেতাকে দিয়ে গেছেন দাবি করে আজকের পত্রিকা সংবাদ প্রকাশ করেছে শীর্ষক তথ্যটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র 

আরও পড়ুন

spot_img