সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২ সমন্বয়ককে আটকের ভুয়া খবর প্রচার 

গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে বাংলাদেশ সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই ভবনে অগ্নিকাণ্ডের আনুষ্ঠানিক তদন্তের পাশাপাশি চলতে থাকে নানান আলোচনা ও গুঞ্জন। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি, ‘সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে অগ্নিকাণ্ডে ২ জন সবন্বয়কে আটক করেছে’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকে প্রচার করা হয়েছে।

ভিডিওটির থাম্বনেইলে আরো বলা হয় ‘সিসিটিভি ফুটেজ ফাঁস! গ্রেপ্তার সমন্বয়ক’ ও ‘সমন্বয়কদের বিচারের দাবিতে – রুমিন ফারহানা’ এবং সিসিটিভি ফুটেজে শনাক্ত ৩ সমন্বয়ক’।

উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ইউটিউব ভিডিওটি ৭৩ হাজার বার দেখা হয়েছে৷ 

উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি টিকটকে প্রচারিত সর্বাধিক ভাইরাল ভিডিওটিতে প্রায় সাড়ে ২৭ হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে এবং ভিডিওটি প্রায় আড়াই হাজার বার শেয়ার করা হয়েছে। ভিডিওটির কমেন্ট বক্সে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে অধিকাংশ ব্যবহারকারী উক্ত দাবির পক্ষে মতামত দিয়েছে৷  

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২ জন সমন্বয়ককে আটক করার দাবিটি সঠিক নয় এবং এ ঘটনায় রুমিন ফারহানাও সমন্বয়কদের বিচার দাবি করেননি। বরং, কয়েকজন ব্যক্তির মন্তব্যের পৃথক কিছু অডিও সম্পাদনার মাধ্যমে জোড়া দিয়ে কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, প্রকাশিত এই ভিডিওতে সমন্বয়কদের গ্রেফতারের বিষয়ে কোনো তথ্য নেই বরং বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানার বক্তব্য রয়েছে। 

প্রচারিত ভিডিওর শুরুতে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম আর টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর প্রকাশিত ‘সচিবালয়ে আ/গুন: সংগ্রহ করা হয়েছে সিসিটিভি ভিডিও’ শীর্ষক শিরোনামের একটি ভিডিও থেকে নেওয়া প্রথম চার সেকেন্ডের ফুটেজ ব্যবহার করা হয়, যেখানে সংবাদপাঠিকা সচিবালয়ে আগুনের ঘটনায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহের তথ্য প্রদান করেছেন৷ 

প্রচারিত ভিডিওতে রুহুল কবির রিজভীর বক্তব্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ২০২৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর গণমাধ্যম News24 এর ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত ‘শেখ হাসিনার নথি চাওয়ার পরই সচিবালয়ে আগুন জনমনে প্রশ্ন তৈরি করছে: রিজভী’ শীর্ষক শিরোনামে ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: YouTube 

উক্ত ভিডিওর ০০:০৮ থেকে ০০:১৯ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশটির অডিও আলোচিত ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে, যেখানে জনাব রিজভী সচিবালয় থেকে ফাইল গায়েব হয়ে যাওয়া ও আগুন লাগার বিষয়ে কথা বলেছেন। 

একইভাবে, রুমিন ফারহানার বক্তব্যের কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম Jamuna Television এর ফেসবুক পেজে ২০২৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর প্রকাশিত ‘ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে সচিবালয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে ; রুমিন ফারহানা’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Facebook 

উক্ত ভিডিওর ০৫:০৮ থেকে ০৫:৩০ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশটির অডিও আলোচিত ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে, যেখানে রুমিন ফারহানা সচিবালয়ের আগুন পরিকল্পিত ভাবে ঠান্ডা মাথায় লাগানো হয়েছে বলে তার মতামত দিয়েছেন। 

এছাড়া, প্রচারিত ইউটিউব ভিডিওতে ২০২৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর গণমাধ্যম ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন এর ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত ‘সচিবালয়ে আগুনের ঘটনার প্রতিবেশী দেশের সম্পৃক্ততা নিয়ে যা বললেন নুর’ শীর্ষক শিরোনামের ভিডিও থেকে ০০:২৪ থেকে ০০:২৮ পর্যন্ত চার সেকেন্ডের অংশটি ব্যবহার করা হয়েছে, যেখানে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড শর্ট সার্কিট থেকে হওয়ার ব্যাপারে তার মতামত জানান৷ 

Screenshot: YouTube 

আলোচিত ভিডিওতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলামের ছবি ব্যবহার ও সচিবালয়ে আগুন লাগার বিষয়ে ফেসবুক লাইভে আসার কথা বলা হলেও তাকে আটক করা হয়েছে এমন বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। 

Screenshot: Facebook 

বরং, গত ১৯ জানুয়ারি মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর কোটাসহ ফলাফল প্রকাশের প্রতিবাদে হাসিবকে বক্তব্য রাখতে দেখা যায় দেখুন।

উল্লেখ্য, গত ৩১ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কাছে দেয়া প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে সচিবালয়ে আগুনের কারণ বৈদ্যুতিক ‘লুজ কানেকশন’। ভবনটির ছয় তলার মাঝামাঝি সিঁড়ির কাছে এটি শুরু হয়। সচিবালয়ের ভেতর সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও ২৬ ডিসেম্বর রাত ১.৩৬ মিনিটে একটি বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গ থেকে ধীরে ধীরে আগুন ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি ধরা পড়েছে।

এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে কোনো সমন্বয়ককে গ্রেফতারের সংবাদ বা তথ্য পাওয়া যায়নি৷ 

সুতরাং, সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২ জন সমন্বয়ককে আটক করা হয়েছে এবং রুমিন ফারহানা সমন্বয়কদের বিচার দাবি করেছেন  শীর্ষক তথ্যগুলো মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

আরও পড়ুন

spot_img