সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি প্রচার করা হয়েছে, “আমি ইতিমধ্যে জানি যে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের পক্ষে কেউ দাঁড়াবে না। খুশি রায়, এক হিন্দু মেয়ে, সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনে সক্রিয় ছিল। ইসলামী প্রশাসন তাকে গ্রেপ্তার করেছে।” এছাড়াও দাবি করা হয়েছে, “যারা সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনে কাজ করেছে, তাদেরকে ট্র্যাক করা হচ্ছে এবং মামলা দেওয়া হচ্ছে। খুশি রায়ের পুরো পরিবারকেই ইসলামী প্রশাসন গ্রেপ্তার করেছে।”
অর্থাৎ, দাবি করা হয়েছে যে সংখ্যালঘু অধিকার নিয়ে কাজ করার কারণে খুশি রায়কে আটক করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সংখ্যালঘু অধিকার নিয়ে কাজ করার কারণে খুশি রায়কে আটক করা হয়নি বরং, অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশচেষ্টার অভিযোগে আরো কয়েকজন ব্যক্তির সাথে তাকেও আটক করা হয়।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্ট পর্যবেক্ষণ করলে তাতে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে গত ২০ জানুয়ারি “পঞ্চগড় সীমান্ত দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা, পাঁচ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, “পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার বড়শশী সীমান্ত দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টার অভিযোগে দুই দম্পতিসহ মোট পাঁচ বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল রোববার (১৯ জানুয়ারি) দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নের বড়শশী সীমান্তের ৭৭৭ নম্বর মেইন পিলারের ৬ নম্বর সাব–পিলার থেকে প্রায় ১০০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কাজীপাড়া এলাকায় তাঁদের আটক করেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা। পরে মামলা দিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গ্রেপ্তার পাঁচজনের সঙ্গে তিন শিশুকে দেওয়া হয় স্বজনদের হেফাজতে। […] গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার ছোট চণ্ডীপুর এলাকার বিশ্বজিৎ রায় (২৭), তাঁর স্ত্রী খুশি রায় (২৩), কাহারোল উপজেলার তেলিয়ান এলাকার রতন রায় (৩০), তাঁর স্ত্রী চন্দনা রানী রায় (২৮) ও পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার উৎকুড়া এলাকার বাসিন্দা সুজন রায় (২১)। […] বিজিবির জিজ্ঞাসাবাদে আটক ব্যক্তিরা জানান, ভারতে আত্মীয়ের বাড়িতে যেতে অনুপ্রবেশের উদ্দেশ্যে একাধিক দালাল চক্রের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা চুক্তিতে তাঁরা সীমান্তবর্তী এলাকায় এসেছেন। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া তিনটি মুঠোফোন ও বাংলাদেশি ৪ হাজার ৫৮৪ টাকা জব্দ করা হয়। […] বোদা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. রেজওয়ানুল হক মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, পাঁচজনের বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টার অভিযোগে (পাসপোর্ট আইনে) একটি মামলা করেছে বিজিবি। এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পাঁচজনকে আদালতে হাজির করার প্রক্রিয়া চলছে।”
তাছাড়া, একইদিনে মূলধারার সংবাদমাধ্যম সমকালে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকেও জানা যায়, পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশচেষ্টার অভিযোগে নারী ও শিশুসহ আটজনকে আটক করেছে বিজিবি যার মধ্যে খুশি রায়ের নামও অন্তর্ভুক্ত। রোববার (১৯ জানুয়ারি) গভীর রাতে বোদা উপজেলার কাজীপাড়া সীমান্ত এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তবে মুচলেকা নিয়ে শিশুদের তাদের স্বজনদের কাছে দেওয়া হয়েছে।
একই তথ্য আরো একাধিক সংবাদমাধ্যম সূত্রেও জানা যায়। তবে, কোথাও খুশি রায়কে সংখ্যালঘুর অধিকার নিয়ে কথা বলার কারণে বা সাম্প্রদায়িক কারণে আটক করার কোনো উল্লেখ বা তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও নানা পোস্ট থেকে জানা যায়, আলোচিত ধর্মীয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর খুশি রায় এবং অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ চেষ্টার অভিযোগে আটক হওয়া খুশি রায় একই ব্যক্তি।
সুতরাং, অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশচেষ্টার অভিযোগে আটককৃত খুশি রায়কে সংখ্যালঘু অধিকার নিয়ে কাজ করার কারণে আটক করা হয়েছে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।