সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেছেন, “গত ১৫ বছর ছাত্রলীগের নাম ধারণ করে সকল হামলা চালিয়েছে শিবির”।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “গত ১৫ বছর ছাত্রলীগের নাম ধারণ করে সকল হামলা চালিয়েছে শিবির” শীর্ষক কোনো প্রকাশ্য মন্তব্য ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব করেননি বরং, কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই ছাত্রদল সভাপতির নামে আলোচিত এই দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করে এবং পরবর্তীতে এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে আলোচিত দাবিটির সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে, ছাত্রদল সভাপতি এরূপ কোনো প্রকাশ্য মন্তব্য করে থাকলে তা গণমাধ্যমে আসতো, তবে গণমাধ্যমেও এ বিষয়ে কোনো সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য যে, “গত ১৫ বছর ছাত্রলীগের নাম ধারণ করে সকল হামলা চালিয়েছে শিবির” শীর্ষক কোনো প্রকাশ্য মন্তব্য ছাত্রদল সভাপতি রাকিব না করে থাকলেও প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চে ফেসবুকে ‘এমডি মল্লিক হাসান’ নামের একটি অ্যাকাউন্টে গত ২০ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত একটি ভিডিও পোস্ট পাওয়া যায়। ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন ব্যক্তির সাথে হ্যান্ডমাইক হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে একজন বলছেন, “যারা ছাত্রলীগ বেশে ছাত্রশিবির করতো তারাই ছাত্রলীগ বেশে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর ১৭টা বছর নির্মম নির্যাতন নিপীড়ন চালানো হয়েছে”। পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, তিনি রাজশাহী ছাত্রদলের নেতা। তবে তার নাম বা কখন কোথায় বক্তব্যটি দিয়েছিলেন সে বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেছেন, “গত ১৫ বছর ছাত্রলীগের নাম ধারণ করে সকল হামলা চালিয়েছে শিবির” শীর্ষক দাবিটি বিভ্রান্তিকর।
ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৮ জন মিলে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর এক নারীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে হত্যার আলোচিত দাবিটি সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, গত বছরের মার্চে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় এক নারীকে তার প্রাক্তন স্বামী ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত একটি ভিডিও ব্যবহার করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
দাবিকৃত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে, এতে এক নারীকে ওড়না দিয়ে গাছের সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় দেখা যায়। সেখানে এক ব্যক্তি নিজেকে নিহত নারীর বাবা পরিচয় দিয়ে বলেন, তার নাম রুহুল আমিন এবং নিহত নারীর নাম রেখা বেগম। ভিডিওটির ডান কোণে ‘The Somoy’ নামের একটি জলছাপও দেখা যায়।
এই সূত্র ধরে ফেসবুকে অনুসন্ধান করলে ‘The Somoy’ নামের একটি ফেসবুক পেজে ২০২৪ সালের ৩০ মার্চ ‘প্রথমে নিখোঁজ, দুই দিন পর গভীর জঙ্গলে পাওয়া গেল যুবতীর এমন নি°থ°র দে°হ…’ শিরোনামে ৪ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই ভিডিওর খণ্ডিত অংশ ব্যবহার করেই আলোচিত দাবিটি ছড়ানো হচ্ছে।
Screenshot: Facebook.
উক্ত ফেসবুক পেজের ক্যাপশনের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ প্রথম আলোতে একই বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে ঘটনার বিস্তারিত জানা যায়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় কিশোরী রেখা বেগম হত্যার ঘটনায় তার সাবেক স্বামী রিয়াজ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ৩০ মার্চ ঢাকার তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে রিয়াজ পুলিশের কাছে রেখাকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।
গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, কুলাউড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুর রহিম প্রথম আলোকে জানান, জিজ্ঞাসাবাদে রিয়াজ বলেছেন, তালাকের পর তার সাবেক স্ত্রীর অন্য এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ের কথাবার্তা চলছিল, যা তিনি মেনে নিতে পারেননি। এ কারণে কৌশলে রেখাকে বাড়ির পাশের জঙ্গলে ডেকে নিয়ে যান এবং ‘আমি না পাইলে আর কেউ পাবে না’ বলে ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। হত্যার পর লাশ গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে আত্মগোপনে চলে যান।
হত্যা মামলার এজাহার সূত্রে প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, ঢাকায় রিয়াজ উদ্দিন মাদক সেবন করে প্রায়ই স্ত্রীর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন। এ অবস্থায় প্রায় দুই মাস আগে স্থানীয়ভাবে সালিশ হয়। সালিশে রিয়াজ স্ত্রীকে তালাকের সিদ্ধান্তের কথা জানান। এ সময় দেনমোহর হিসেবে ৫০ হাজার টাকা দেন। ২৭ মার্চ রেখা ছাড়া বাড়িতে পরিবারের অন্য কোনো সদস্য ছিলেন না। এ সময় আশপাশের কিছু লোক রিয়াজের সঙ্গে রেখাকে জঙ্গলের দিকে হেঁটে যেতে দেখেন। এর পর থেকে তাঁদের খোঁজ মিলছিল না। ২৯ দুপুরে বাড়ির কাছে গ্রিজিং নয়াবাগান এলাকায় গহিন জঙ্গলে গাছের সঙ্গে ওড়না দিয়ে বাঁধা অবস্থায় রেখার লাশ মিলে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে
সেসময় এই একই তথ্য আরও কয়েকটি গণমাধ্যমেও (১,২) প্রকাশিত হয়।
এছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির একাধিক ঘটনা ঘটলেও, ১৮ জন মিলে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর গাছের সঙ্গে বেঁধে হত্যার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, ১৮ জন মিলে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর এক নারীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে হত্যার দাবিতে প্রচারিত বিষয়টি বিভ্রান্তিকর।
২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ : এই প্রতিবেদন প্রকাশ পরবর্তী সময়ে একই দাবিতে একাধিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্লার্টফর্মের পোস্টে ও ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন আমাদের নজরে আসার প্রেক্ষিতে উক্ত পোস্টটি প্রতিবেদনে দাবি হিসেবে যুক্ত করা হলো।
২০২৪ সালের ৩০ মার্চ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন প্রশ্ন রেখেছিলেন, বুয়েট কি পাকিস্তান? যে ভিসা পাসপোর্ট নিয়ে বুয়েটে প্রবেশ করতে হবে?
সম্প্রতি, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ইস্যুতে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের মতো একই বক্তব্য দিয়েছেন ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব দাবিতে একটি ভিডিও সামজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। কিছু কিছু ভিডিওতে সাদ্দাম হোসেন ও রাকিবুল ইসলাম রাকিবের বক্তব্যের ফুটেজ একই ভিডিওতে রাখা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যনার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দামের মতো একই বক্তব্য দিয়েছেন ছাত্রদল সভাপতি রাকিব শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং, গত ১ জানুয়ারি ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সংগঠনটির সভাপতির ভিন্ন বিষয়ে বক্তব্যের ভিডিওতে সম্পাদনার মাধ্যমে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দামের অডিও সংযুক্ত করে প্রচার করা হয়েছে।
ভিডিও থেকে জানা যায়, ছাত্রদল সভাপতি রাকিব গত ১ জানুয়ারি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের একটি মিডিয়া ও বলতে পারবে না ছাত্রদলের কেউ এক টাকা চাঁদাবাজি করছে”। এছাড়াও, তিনি শেখ হাসিনা আমলের নির্যাতনের কথাও বলেন।
তবে, ভিডিওটিতে বুয়েট (অথবা কুয়েট) কি পাকিস্তান? যে ভিসা পাসপোর্ট নিয়ে বুয়েটে প্রবেশ করতে হবে? শীর্ষক বক্তব্য দেননি।
তাছাড়া, এই ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই। আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের ফুটেজটিতে ‘Vidma’ নামের একটি ওয়াটারমার্ক দেখতে পাওয়া যায়, যা ডিবিসি নিউজের ফুটেজে ছিল না।
অর্থাৎ, ভিডিওটি ‘Vidma’ নামের অ্যাপসের সাহায্যে সম্পাদনার মাধ্যমে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের অডিও সংযুক্ত করে তৈরি করা হয়েছে।
সুতরাং, ছাত্রদল সভাপতি রাকিবের ভিন্ন ঘটনার বক্তব্যের ভিডিও সম্পাদনা করে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের বক্তব্য সংযুক্ত করে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পাদিত।
সম্প্রতি, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ ভোটমারী এলাকা থেকে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী বাহিনীকে রগ কাটার সরঞ্জাম সহ গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শীর্ষক দাবিতে একটি ছবি সামাজিক সামাজিক মাধ্যমে প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটি জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কোনো সদস্যের নয়। বরং, আটককৃতরা হলেন, লালমনিরহাটের জেলা যুবদলের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আহসান শহীদ সরওয়ারর্দী ও একই এলাকার যুবদল কর্মী গোলাম রব্বানী।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে অনলাইন সংবাদমাধ্যম বিডিনিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে গত ৮ ফেব্রুয়ারি ‘লালমনিরহাটে যুবদলের ২ নেতা গ্রেপ্তার, অস্ত্র উদ্ধার’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে থাকা ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবির মিল পাওয়া যায়।
Comparison: Rumor Scanner
প্রতিবেদনে বলা হয়, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় যুবদলের দুই নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী। এ সময় তাদের একটি কক্ষ থেকে বেশকিছু দেশিয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
আটক আহসান শহীদ সরওয়ারর্দী (৩৫) উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রয়াত আতাউর রহমানের ছেলে এবং জেলা যুবদলের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক।
অপর আটক গোলাম রব্বানী (৩০) উপজেলার উত্তর মুসরত মদাতী এলাকার আজিজুল হকের ছেলে। তিনি একই এলাকার যুবদল কর্মী।
এছাড়া, অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের এ সংক্রান্ত সংবাদ থেকেও একই তথ্য পাওয়া যায়। এসব প্রতিবেদনে আটককৃত ব্যক্তিদের সাথে জামায়াত বা শিবিরের কোনো সংশ্লিষ্টতার তথ্য উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে অস্ত্র ও মাদকসহ যুবদলের দুই নেতা আটকের ছবিকে জামায়াত-শিবির দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল পেজ থেকে দৈনিক ৪২০০টি আলাদা আলাদা বুস্টিং বিজ্ঞাপন চলছে দাবিতে একটি পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। পোস্টটিতে আরও দাবি করা হয়, প্রতিটি বিজ্ঞাপনের পেছনে যদি ১০ ডলার খরচ করা হয় তাহলেও দৈনিক এর পেছনে ৪২ হাজার ডলার বা প্রায় ৫৫ লাখ টাকা খরচ করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের পেজ থেকে বর্তমানে দৈনিক ৪২০০টি আলাদা আলাদা বুস্টিং বিজ্ঞাপন চালানোর দাবিটি সঠিক নয়। বরং, পেজটি থেকে সর্বশেষ বিজ্ঞাপন চালানো হয়েছিল ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত। বর্তমানে পেজ থেকে কোনো বিজ্ঞাপন চালানো হচ্ছে না।
দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল পেজটির পেজ ট্রান্সপারেন্সি সেকশন পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার দেখেছে, পেজটি থেকে ‘সামাজিক ইস্যু, নির্বাচন বা রাজনীতি’ সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন চালানো হয়েছে। এছাড়াও জানা যায়, বর্তমানে আওয়ামী লীগের পেজটি থেকে কোনো বিজ্ঞাপন চালানো হচ্ছে না।
Screenshot: Facebook
পরবর্তীতে Go to Ad Library অপশনে ক্লিক করে মেটা অ্যাড লাইব্রেরিতে প্রবেশ করে দেখা যায়, বর্তমানে পেজটিতে কোনো ‘সক্রিয় বিজ্ঞাপন’ নেই। তবে সক্রিয় বিজ্ঞাপন ফিল্টারটি বাদ দিলে ‘নিষ্ক্রিয় বিজ্ঞাপন’ এর ক্ষেত্রে প্রায় ৪১০০টি বিজ্ঞাপন দেখতে পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে সর্বশেষ বিজ্ঞাপনটি চালানো হয় ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত।
Screenshot: Facebook
মেটার অ্যাড লাইব্রেরি সম্পর্কিত বিবরণী পর্যালোচনা করে জানা যায়, মেটা সামাজিক ইস্যু, নির্বাচন বা রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত সক্রিয় অথবা নিষ্ক্রিয় বিজ্ঞাপন সাত বছরের জন্য সংরক্ষণ করে। সংরক্ষিত বিজ্ঞাপনের মূল কন্টেন্ট, অর্থায়নকারী ব্যক্তি বা সংস্থার নাম, বিজ্ঞাপনটি কতবার দেখানো হয়েছে, কত দিন পর্যন্ত চলেছে, এর পেছনে কত অর্থ খরচ করা হয়েছে, কাদের লক্ষ্য করে বিজ্ঞাপনটি প্রচারিত হয়েছে, এসব তথ্যও মেটা অ্যাড লাইব্রেরিতে সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে বলে জানা যায়।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পেজ থেকে চালানো সব বিজ্ঞাপন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, পেজটি থেকে মোট ৪১০৯টি বিজ্ঞাপন চালানো হয়েছে। যার মধ্যে প্রথম বিজ্ঞাপনটি ২০১৮ সালের ১৬ মে।
সুতরাং, বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজ থেকে দৈনিক ৪২০০টি আলাদা আলাদা বুস্টিং বিজ্ঞাপন চলছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দাবি করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী ২৬ মে বাংলাদেশে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, ২৬ মে ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক বাংলাদেশের নির্বাচনের ঘোষণা দেননি বরং, কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
উক্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনে প্রায় ৫০টি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। তবে এগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের নির্বাচন সম্পর্কিত কোনো বিষয় ছিল বলে উল্লেখ পাওয়া যায়নি এই প্রতিবেদন। ট্রাম্প এই নির্বাহী আদেশে অভিবাসন নীতিতে কঠোরতা, ওবামাকেয়ার বিলোপের প্রক্রিয়া শুরু এবং ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহার ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে আরো অনুসন্ধানে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমসহ নির্ভরযোগ্য সূত্রে আলোচিত দাবির পক্ষে কোনো সংবাদ বা তথ্য পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, বাংলাদেশের নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে থাকে নির্বাচন কমিশন। বাইরের কোনো দেশ বা রাষ্ট্রপ্রধানের এই ঘোষণার এখতিয়ার নেই।
সুতরাং, ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী ২৬ মে বাংলাদেশে নির্বাচন হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শীর্ষক দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
২০০২ সালের পর থেকে প্রায় প্রতিবছরের ফেব্রুয়ারি মাসে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বাংলা ভাষা এবং সিয়েরা লিওনকে জড়িয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে একটি দাবি প্রচার হয়ে আসছে। দাবি করা হয়ে থাকে, সিয়েরা লিওনের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা বা অন্যতম রাষ্ট্রভাষা বা সরকারি ভাষা বা দাপ্তরিক ভাষা বাংলা। চলতি বছরের নবম-দশম শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ পাঠ্যবইয়ের ‘জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ’ বিষয়ক নবম অধ্যায়ে (১১১তম পৃষ্টা) বাংলাকে সিয়েরা লিওনের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সের চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের সংখ্যায়ও একই দাবি প্রকাশ করা হয়েছে৷ দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের দীর্ঘ অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলা সিয়েরা লিওনের দ্বিতীয় সরকারি, দাপ্তরিক বা রাষ্ট্রভাষা নয়; বরং দেশটির একমাত্র সরকারি ভাষা ইংরেজি। সিয়েরা লিওনে ক্রিও, লিম্বা, মেন্দে, এবং তেমনে সহ আরও কয়েকটি ভাষা প্রচলিত রয়েছে, যার মধ্যে ক্রিও সর্বজনীন ভাষা হিসেবে প্রচলিত।
মূলত, ২০০২ সালে সিয়েরা লিওনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে, দেশটির তৎকালীন সাবেক প্রেসিডেন্ট আহমেদ তেজান কাব্বাহ বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে একটি ঘোষণা করেন। এই ঘোষণা নিয়ে বিভিন্ন সূত্রের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কিছু সূত্র অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট কাব্বাহ বাংলাকে সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করেছেন। অপর কিছু সূত্র অনুযায়ী, বাংলাকে দেশটির সম্মানজনক ভাষা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে রিউমর স্ক্যানারের দীর্ঘ অনুসন্ধানে জানা যায়, সিয়েরা লিওনের একমাত্র সরকারি ভাষা ইংরেজি। কিন্তু ইংরেজির নিয়মিত ব্যবহার সল্পসংখ্যক শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ। দেশটির ভাষাগত বৈচিত্র্য এবং সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ক্রিও, মেন্দে, তেমনে প্রভৃতি ভাষার ব্যাপক চর্চা লক্ষ্য করা যায়। দেশটিতে অন্তত ১৮টি ভাষা প্রচলিত রয়েছে। তবে এদের মধ্যে ক্রিও দেশটির সর্বজনীন ভাষা। অন্তত ৯৫ শতাংশ মানুষ এটি বুঝতে পারে। রিউমর স্ক্যানারের দীর্ঘ অনুসন্ধানে দেশটিতে বাংলা ভাষার প্রচলন দেখা যায়নি। এ প্রসঙ্গে দেশটিতে ভাষা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা দ্য ইনস্টিটিউট ফর সিয়েরা লিওনিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজেস (টিআইএসএলএল) এর প্রোগ্রাম ডিরেক্টর লামিন হেনরি কার্গবো বলেছেন, বাংলা ভাষা কখনো সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি। প্রয়াত সাবেক প্রেসিডেন্ট আহমাদ তেজন কাব্বাহ কেবল বাংলা ভাষাকে সিয়েরা লিওনের ভাষার তালিকায় বিবেচনা কিংবা অন্তর্ভুক্ত করার কথা উল্লেখ করেছিলেন, সরকারি ভাষা হিসেবে নয়। এর পেছনের কারণ হিসেবে সিয়েরা লিওনের গৃহযুদ্ধ চলাকালীন বাংলাদেশের অবদান ও সহায়তার স্বীকৃতি উল্লেখ করা হয়েছে। তবে, বাংলা ভাষা সিয়েরা লিওনের জনগণ বা সরকারের দ্বারা কখনো সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি। সিয়েরা লিওনে ইংরেজি ভাষাই একমাত্র সরকারি ভাষা হিসেবে প্রচলিত এবং বাকি ভাষাগুলো অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়।
উল্লেখ্য, ২০০২ সাল থেকে প্রচারিত এই দাবিটি দীর্ঘ অনুসন্ধানের মাধ্যমে খণ্ডণ করে পূর্বেই ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
গতকাল ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনেকেই শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়েছেন। এরই প্রেক্ষিতে শ্রদ্ধাঞ্জলির একটি ফুলের ডালার ছবি প্রচার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়, “২১ এর প্রথম প্রহরে সবার চোখ ফাকি দিয়ে কুকুরলীগ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে শুভেচ্ছা জানাই গেলো। ইন্টেরিম করে কি?.. [রাত ২–৩ টার দিকে দায়িত্বরত রোভার স্কাউটিং সদস্যদের নজরে আসার পর তাৎক্ষণিক ভেঙ্গে ফেলা হয়]”।
উক্ত ফুলের ডালায় লেখা দেখতে পাওয়া যায়, “শ্রদ্ধাঞ্জলি | বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-বিসিএল”। অর্থাৎ, দাবি করা হয়েছে যে প্রচারিত ফুলের ডালা’টি নিষিদ্ধ ঘোষিত ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ছিল।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ফুলের ডালাটি নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নয় বরং বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ) সমর্থিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ – বিসিএল এর ফুলের ডালাকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফুলের ডালাটি পর্যবেক্ষণ করলে তাতে ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ – বিসিএল’ লেখা যায়। এরই সূত্র ধরে অনুসন্ধান করলে ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ – বিসিএল’ নামে একটি ফেসবুক পেজ পাওয়া যায়। উক্ত ফেসবুক পেজে গত ২১শে ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ টেলিভিশনে সম্প্রচারিত দৃশ্য এর একাংশ পোস্ট করা হয়। পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহিদ দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-বিসিএল নেতৃবৃন্দ।” এসময় বিসিএল নেতৃবৃন্দের ফুলের ডালার সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফুলের ডালার সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
উক্ত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ – বিসিএল নামক সংগঠনটির ফেসবুক পেজটি পর্যবেক্ষণ করলে জানা যায়, এটি বাংলাদেশ জাসদ সমর্থিত সংগঠন এবং তাদের সভাপতি গৌতম চন্দ্র শীল ও কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান৷
এ বিষয়ে আরো অনুসন্ধানে সংগঠনটির সভাপতি ‘গৌতম শীল’ এর ফেসবুক অ্যাকাউন্টেও গত ২১শে ফেব্রুয়ারিতে “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহিদ দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-বিসিএল নেতৃবৃন্দের শ্রদ্ধা নিবেদন।” শীর্ষক ক্যাপশনে প্রচারিত একটি পোস্টে কয়েকটি পোস্টের সংযুক্তি পাওয়া যায়, যার মধ্যে একটি ফুলের ডালার ছবিও ছিল৷ উক্ত ফুলের ডালার সাথেও আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফুলের ডালার সাদৃশ্য পাওয়া যায়। এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ফুলের ডালাটি ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ – বিসিএল’ নামের একটি সংগঠনের।
এদিকে, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন। এই সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান।
তাছাড়া, এই দুইটি সংগঠনের মধ্যে আরো পার্থক্য রয়েছে। আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ইংরেজি সংক্ষিপ্তরূপ বিএসএল যার পূর্ণরূপ Bangladesh Students’ League. আর বাংলাদেশ জাসদ সমর্থিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ইংরেজি সংক্ষিপ্তরূপ বিসিএল যার পূর্ণরূপ Bangladesh Chatra League. এছাড়াও, সংগঠন দুইটির লোগোর মধ্যেও পার্থক্য রয়েছে। আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের লোগো মূলত কালো রংয়ের ও তিন তারকা সম্বলিত। অপরদিকে বাংলাদেশ জাসদ সমর্থিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ – বিসিএলের লোগো মূলত লাল রঙের ও এক তারকা সম্বলিত।
এ বিষয়ে জানতে রিউমর স্ক্যানার যোগাযোগ করে বাংলাদেশ জাসদ সমর্থিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ – বিসিএল এর সভাপতি গৌতম চন্দ্র শীলের সাথে৷ তিনি নিশ্চিত করেন, প্রচারিত ফুলের ডালার ছবিটি তাদের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-বিসিএল এর। তিনি আরো বলেন, তাদের সংগঠন ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দুইটি আলাদা সংগঠন।
সুতরাং, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ) সমর্থিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ – বিসিএল এর শ্রদ্ধাঞ্জলির ফুলের ডালা’র ছবিকে নিষিদ্ধ ঘোষিত ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ফুলের ডালার ছবি দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি, “বিএনপির বর্তমান অবস্থা এতই খারাপ যে তাদের দলের মহাসচিব এর আজকে এই ভাবে শহীদ মিনার এর গেটের সামনে এভাবে থাকা লাগে ।” শীর্ষক শিরোনামে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িযে পড়েছে। অর্থাৎ দাবি করা হয়েছে, গতকাল ২১ ফেব্রুয়ারি, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনে বাধা দেওয়া হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে গতকাল ২১ ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারে ঢুকতে না দেয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং, ২০১৮ সালে মির্জা ফখরুলকে শহীদ মিনারে ঢুকতে বাঁধা দেওয়ার পর তার রাস্তায় বসে থাকার অভিযোগ সংক্রান্ত ছবিকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে গতকাল ২১ ফেব্রুয়ারি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ফেসবুক পেজের একটি পোস্ট নজরে আসে রিউমর স্ক্যানারে। পোস্টে মির্জা ফখরুলের রাস্তার পাশে বসে থাকার ভাইরাল ছবি দুইটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়, “এটি ২০১৮ সালে ঘটেছিল। ২১শে ফেব্রুয়ারি আমাদের শ্রদ্ধা জানাতে অনুমতি দেওয়া হয়নি। আমাদের গণতন্ত্রের জন্য লড়াই এখনও চলছে। আমরা আমাদের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। ১৯৫২, ১৯৭১, ১৯৯০, ২০২৪। ইনশাআল্লাহ, শিগগিরই আমাদের একটি নির্বাচিত সরকার হবে, সরকার জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য এবং জনগণের।”
এছাড়া, রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানের মাধ্যমে ‘Dibakor Rajbangshi‘ নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০১৮ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত পোস্টে আলোচিত ছবিটি এবং ভিন্ন ভিন্ন কোণ থেকে তোলা একাধিক ছবি পাওয়া যায়। যেখানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মেঝেতে কাগজ বিছিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়।
এই ছবিগুলোই ২০১৮ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ‘শহীদ মিনারে ঢুকতে বাধা দেওয়ার পর এই ভাবে রাস্তার পাশে বসে থাকেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।’ দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হয়ে আসছে।
উল্লেখ্য, এছাড়া ২১ তারিখে গণমাধ্যম ও বিএনপির ফেসবুক পেজ সূত্রে জানা যায় মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানিয়েছে বিএনপি। তবে মির্জা ফখরুলের শহীদ মিনারে উপস্থিত থাকার কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, ২০১৮ সালের ছবিকে গতকাল ২১ ফেব্রুয়ারিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে বাঁধা দেওয়া হয়েছে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, “হাসিনাকে বিয়ে প্রসঙ্গে ট্রাম্প বললেন ‘আমি মোদির উপর ছেড়ে দিচ্ছি’” শীর্ষক শিরোনামে মূলধারার গণমাধ্যম কালবেলার ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “হাসিনাকে বিয়ে প্রসঙ্গে ট্রাম্প বললেন ‘আমি মোদির উপর ছেড়ে দিচ্ছি’” শীর্ষক তথ্যে বা শিরোনামে কালবেলা কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে কালবেলার একটি ফটোকার্ড নকল করে এই ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে কালবেলার লোগো রয়েছে এবং এটি প্রকাশের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ উল্লেখ করা হয়েছে।
কালবেলার লোগো ও ফটোকার্ড প্রকাশের তারিখের সূত্র ধরে গণমাধ্যমটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে আলোচিত দাবিসম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, কালবেলার ওয়েবসাইট কিংবা ইউটিউব চ্যানেলেও উক্ত দাবির পক্ষে কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি গণমাধ্যমটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে “বাংলাদেশের বিষয়ে যা বললেন ডোনাল্ড ট্রাম্প” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটির সাথে এই ফটোকার্ডটির ডিজাইন ও ফটোকার্ডে ব্যবহৃত ছবির হুবহু মিল রয়েছে।
তবে, আলোচিত ফটোকার্ডটির সাথে কালবেলার প্রচলিত ফটোকার্ডের টেক্সট ফন্টের ভিন্নতা রয়েছে।
Photocard Comparison By Rumor Scanner
অর্থাৎ, কালবেলার এই ফটোকার্ডটির শিরোনাম ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
পাশাপাশি, আলোচিত দাবি সমর্থিত কোনো তথ্য অন্য কোনো গণমাধ্যমেও পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, শেখ হাসিনার বিয়ে প্রসঙ্গে ট্রাম্পকে জড়িয়ে কালবেলার নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি এডিটেড বা সম্পাদিত।