সম্প্রতি, ১৮ জন মিলে সঙ্গবদ্ধ ধর্ষণ শেষে গাছের সাথে বেঁধে এক নারীকে হত্যা করা হয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

উক্ত দাবিতে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রতিবেদন দেখুন এই দিন।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এক্সে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৮ জন মিলে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর এক নারীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে হত্যার আলোচিত দাবিটি সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, গত বছরের মার্চে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় এক নারীকে তার প্রাক্তন স্বামী ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত একটি ভিডিও ব্যবহার করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
দাবিকৃত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে, এতে এক নারীকে ওড়না দিয়ে গাছের সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় দেখা যায়। সেখানে এক ব্যক্তি নিজেকে নিহত নারীর বাবা পরিচয় দিয়ে বলেন, তার নাম রুহুল আমিন এবং নিহত নারীর নাম রেখা বেগম। ভিডিওটির ডান কোণে ‘The Somoy’ নামের একটি জলছাপও দেখা যায়।
এই সূত্র ধরে ফেসবুকে অনুসন্ধান করলে ‘The Somoy’ নামের একটি ফেসবুক পেজে ২০২৪ সালের ৩০ মার্চ ‘প্রথমে নিখোঁজ, দুই দিন পর গভীর জঙ্গলে পাওয়া গেল যুবতীর এমন নি°থ°র দে°হ…’ শিরোনামে ৪ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই ভিডিওর খণ্ডিত অংশ ব্যবহার করেই আলোচিত দাবিটি ছড়ানো হচ্ছে।

উক্ত ফেসবুক পেজের ক্যাপশনের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ প্রথম আলোতে একই বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে ঘটনার বিস্তারিত জানা যায়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় কিশোরী রেখা বেগম হত্যার ঘটনায় তার সাবেক স্বামী রিয়াজ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ৩০ মার্চ ঢাকার তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে রিয়াজ পুলিশের কাছে রেখাকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।
গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, কুলাউড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুর রহিম প্রথম আলোকে জানান, জিজ্ঞাসাবাদে রিয়াজ বলেছেন, তালাকের পর তার সাবেক স্ত্রীর অন্য এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ের কথাবার্তা চলছিল, যা তিনি মেনে নিতে পারেননি। এ কারণে কৌশলে রেখাকে বাড়ির পাশের জঙ্গলে ডেকে নিয়ে যান এবং ‘আমি না পাইলে আর কেউ পাবে না’ বলে ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। হত্যার পর লাশ গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে আত্মগোপনে চলে যান।
হত্যা মামলার এজাহার সূত্রে প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, ঢাকায় রিয়াজ উদ্দিন মাদক সেবন করে প্রায়ই স্ত্রীর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন। এ অবস্থায় প্রায় দুই মাস আগে স্থানীয়ভাবে সালিশ হয়। সালিশে রিয়াজ স্ত্রীকে তালাকের সিদ্ধান্তের কথা জানান। এ সময় দেনমোহর হিসেবে ৫০ হাজার টাকা দেন। ২৭ মার্চ রেখা ছাড়া বাড়িতে পরিবারের অন্য কোনো সদস্য ছিলেন না। এ সময় আশপাশের কিছু লোক রিয়াজের সঙ্গে রেখাকে জঙ্গলের দিকে হেঁটে যেতে দেখেন। এর পর থেকে তাঁদের খোঁজ মিলছিল না। ২৯ দুপুরে বাড়ির কাছে গ্রিজিং নয়াবাগান এলাকায় গহিন জঙ্গলে গাছের সঙ্গে ওড়না দিয়ে বাঁধা অবস্থায় রেখার লাশ মিলে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে
সেসময় এই একই তথ্য আরও কয়েকটি গণমাধ্যমেও (১,২) প্রকাশিত হয়।
এছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির একাধিক ঘটনা ঘটলেও, ১৮ জন মিলে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর গাছের সঙ্গে বেঁধে হত্যার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, ১৮ জন মিলে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর এক নারীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে হত্যার দাবিতে প্রচারিত বিষয়টি বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- The Somoy: Facebook Post
- Prothom Alo: কুলাউড়ায় সাবেক স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার
- Somoyer Konthosor: রেখা হত্যাকাণ্ডের ৩০ ঘন্টার মধ্যে আসামি ঢাকার ফার্মগেট থেকে গ্রেপ্তার
- Desh Rupantor: জঙ্গলের ভেতর গাছের সঙ্গে বাঁধা কিশোরীর লাশ
হালনাগাদ/ Update
২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ : এই প্রতিবেদন প্রকাশ পরবর্তী সময়ে একই দাবিতে একাধিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্লার্টফর্মের পোস্টে ও ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন আমাদের নজরে আসার প্রেক্ষিতে উক্ত পোস্টটি প্রতিবেদনে দাবি হিসেবে যুক্ত করা হলো।