পাঠ্যবইয়ে ভুল: বাংলা সিয়েরা লিওনের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা নয়

২০০২ সালের পর থেকে প্রায় প্রতিবছরের ফেব্রুয়ারি মাসে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বাংলা ভাষা এবং সিয়েরা লিওনকে জড়িয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে একটি দাবি প্রচার হয়ে আসছে। দাবি করা হয়ে থাকে, সিয়েরা লিওনের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা বা অন্যতম রাষ্ট্রভাষা বা সরকারি ভাষা বা দাপ্তরিক ভাষা বাংলা। 
চলতি বছরের নবম-দশম শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ পাঠ্যবইয়ের ‘জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ’ বিষয়ক নবম অধ্যায়ে (১১১তম পৃষ্টা) বাংলাকে সিয়েরা লিওনের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

একই দাবিতে ফেসবুকের পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।  

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সের চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের সংখ্যায়ও একই দাবি প্রকাশ করা হয়েছে৷ দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের দীর্ঘ অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলা সিয়েরা লিওনের দ্বিতীয় সরকারি, দাপ্তরিক বা রাষ্ট্রভাষা নয়; বরং দেশটির একমাত্র সরকারি ভাষা ইংরেজি। সিয়েরা লিওনে ক্রিও, লিম্বা, মেন্দে, এবং তেমনে সহ আরও কয়েকটি ভাষা প্রচলিত রয়েছে, যার মধ্যে ক্রিও সর্বজনীন ভাষা হিসেবে প্রচলিত।

মূলত, ২০০২ সালে সিয়েরা লিওনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে, দেশটির তৎকালীন সাবেক প্রেসিডেন্ট আহমেদ তেজান কাব্বাহ বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে একটি ঘোষণা করেন।  এই ঘোষণা নিয়ে বিভিন্ন সূত্রের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কিছু সূত্র অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট কাব্বাহ বাংলাকে সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করেছেন। অপর কিছু সূত্র অনুযায়ী, বাংলাকে দেশটির সম্মানজনক ভাষা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে রিউমর স্ক্যানারের দীর্ঘ অনুসন্ধানে জানা যায়, সিয়েরা লিওনের একমাত্র সরকারি ভাষা ইংরেজি। কিন্তু ইংরেজির নিয়মিত ব্যবহার সল্পসংখ্যক শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ। দেশটির ভাষাগত বৈচিত্র্য এবং সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ক্রিও, মেন্দে, তেমনে প্রভৃতি ভাষার ব্যাপক চর্চা লক্ষ্য করা যায়। দেশটিতে অন্তত ১৮টি ভাষা প্রচলিত রয়েছে। তবে এদের মধ্যে ক্রিও দেশটির সর্বজনীন ভাষা। অন্তত ৯৫ শতাংশ মানুষ এটি বুঝতে পারে। রিউমর স্ক্যানারের দীর্ঘ অনুসন্ধানে দেশটিতে বাংলা ভাষার প্রচলন দেখা যায়নি। এ প্রসঙ্গে দেশটিতে ভাষা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা দ্য ইনস্টিটিউট ফর সিয়েরা লিওনিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজেস (টিআইএসএলএল) এর প্রোগ্রাম ডিরেক্টর লামিন হেনরি কার্গবো বলেছেন, বাংলা ভাষা কখনো সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি। প্রয়াত সাবেক প্রেসিডেন্ট আহমাদ তেজন কাব্বাহ কেবল বাংলা ভাষাকে সিয়েরা লিওনের ভাষার তালিকায় বিবেচনা কিংবা অন্তর্ভুক্ত করার কথা উল্লেখ করেছিলেন, সরকারি ভাষা হিসেবে নয়। এর পেছনের কারণ হিসেবে সিয়েরা লিওনের গৃহযুদ্ধ চলাকালীন বাংলাদেশের অবদান ও সহায়তার স্বীকৃতি উল্লেখ করা হয়েছে। তবে, বাংলা ভাষা সিয়েরা লিওনের জনগণ বা সরকারের দ্বারা কখনো সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি। সিয়েরা লিওনে ইংরেজি ভাষাই একমাত্র সরকারি ভাষা হিসেবে প্রচলিত এবং বাকি ভাষাগুলো অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়।

উল্লেখ্য, ২০০২ সাল থেকে প্রচারিত এই দাবিটি দীর্ঘ অনুসন্ধানের মাধ্যমে খণ্ডণ করে পূর্বেই ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।  

আরও পড়ুন

spot_img