Home Blog Page 111

২০২২ সালের বস্তাবন্দি জীবিত কিশোরী উদ্ধারের ঘটনাকে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণের পর হত্যা দাবিতে প্রচার

সম্প্রতি, ‘ #Madrasastudent in a bag, taken to the #hospital in critical condition. She may have died after being raped, that’s why the #miscreants threw her in a sack in a pond! The air in #Bangladesh has become heavy with the cries of women and children!’ শীর্ষক শিরোনামে এক নারীকে বস্তা বন্দি থেকে উদ্ধার করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচার করা হয়েছে। শিরোনামের বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায়,  মাদ্রাসা শিক্ষার্থী একটি ব্যাগে, আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ধর্ষণের পর সে মারা গেছে, সে কারণেই তাকে বস্তায় পুকুরে ফেলে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা! নারী ও শিশুদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের বাতাস!

উক্ত দাবিতে এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণের পর হত্যার কোনো ঘটনার নয় বরং, ২০২২ সালে ঠাকুরগাঁওয়ে টাঙ্গন ব্রিজের নিচ থেকে বস্তাবন্দি জীবিত কিশোরী উদ্ধার হওয়ার ঘটনার ভিডিও। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ‘journaleye24’ নামক ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ২১ জুলাই প্রকাশিত ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর  সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে৷

Comparison: Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওর ডেস্ক্রিপশন অংশ থেকে জানা যায়, ২১ জুলাই, ২০২২ সকালে পৌরশহরের টাঙন নদী থেকে বস্তা বন্দি অবস্থায় মাহফুজা নামের কিশোরীকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা। মাহফুজা শহরের একটি মাদরাসায় কিতাব বিভাগে পড়াশোনা করেন ৷ মেয়েটির সাবেক স্বামী তার দলবল নিয়ে রাত আনুমানিক ৩- ৪ টার দিকে মেয়েটিকে কৌশলে মাদরাসা থেকে বের করে নিয়ে আসেন ৷ পরে নির্যাতন করে তাকে বস্তাবন্দি করে টাঙন নদীতে ফেলে রাখে। পরে তাকে উদ্ধার করে আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। 

উক্ত পোস্ট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চ করে একই ঘটনায় মূলধারার গণমাধ্যম আজকের পত্রিকার ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ২১ জুলাই ‘ঠাকুরগাঁওয়ে নদী থেকে বস্তাবন্দী ছাত্রীকে জীবিত উদ্ধার’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনের ফিচারে ব্যবহৃত ছবির সাথেও আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে। 

প্রতিবেদনে উক্ত ঘটনায় ভুক্তভোগীর নারীর একটি সাক্ষাৎকারও পাওয়া যায়। ভুক্তভোগী জানান, ‘আমাদের বাড়ির সাবেক ভাড়াটে গুলজান বেগম তার অন্তরঙ্গ ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তার কাছে মাদ্রাসার মেয়ে চায়। এতে রাজি হয়নি। আমি লেখাপড়া শেষ করে মাদ্রাসার ছাত্রীনিবাসে আমি ঘুমিয়ে পড়ি। রাত ৩টার দিকে ঘরের বাইরে থেকে আমাকে কে বা কারা ডাক দেয়। আমি ঘুম থেকে জেগে ঘরের জানালার কাছে গিয়ে দেখি কয়েকজন যুবক আমার ছবি দেখায়। আমি ছবিগুলো নেওয়ার চেষ্টা করলে তারা শক্তি প্রয়োগ করে আমাকে ঘরের বেড়া ভেঙে টেনে বের করে। সন্ত্রাসীরা তাৎক্ষণিকভাবে আমার মুখে ওড়না পেঁচিয়ে ধরে। পরে হাত-পা বেঁধে বস্তায় ভরে। এর পর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।’

সেসময় উক্ত ঘটনার বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন বলেন, ‘জীবিত উদ্ধার কিশোরীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে তাকে হত্যা করার উদ্দেশে অজ্ঞান করে বস্তায় ভরে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে কিনা এবং অন্য কোনো ঘটনা আছে কিনা তা তদন্ত করা হচ্ছে। মেয়েটি কাপড় রাখা ট্রাংক থেকে বেশ কিছু প্রেম পত্র পাওয়া গেছে।’

উক্ত বিষয়ে সেসময় অন্যান্য গণমাধ্যমে (, ) প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়।

অর্থাৎ, আলোচিত ছবির ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। 

উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারি মাসে একই ছবিটি মোহাম্মদপুর থেকে নিখোঁজ কিশোরী সুবার বলেও প্রচার করা হয়েছিল। সেসময় বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং,  ২০২২ সালে ঠাকুরগাঁওয়ে টাঙ্গন ব্রিজের নিচ থেকে বস্তাবন্দি জীবিত কিশোরী উদ্ধার করার ঘটনাকে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

বরগুনায় শিশু ধর্ষণের মামলাকারী বাবার লাশ উদ্ধারের দৃশ্য দাবিতে ভারতের ভিডিও প্রচার 

0

গত ০৪ মার্চ বরগুনা সদরের বাড়ি থেকে বিকেলে প্রাইভেট পড়তে গিয়েছিল সপ্তম শ্রেণির এক কিশোরী (১৪)। পড়া শেষে বাড়ি ফেরার পথে সিজিত রায় নামের এক বখাটের নেতৃত্বে কয়েকজন মুখে কাপড় গুঁজে কিশোরীকে অপহরণ করে। এরপর তাকে ধর্ষণ করা হয়। পরের দিন ৫ মার্চ সকালে ওই কিশোরীকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পার্কে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় কিশোরীর বাবা (৩৭) ওই দিন রাতেই বরগুনা সদর থানায় সিজিত রায়সহ দুজনের নামে ধর্ষণের মামলা করেন। কিশোরীর পরিবারকে মামলা তুলে নিতে এবং ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে শাসাতে থাকে আসামিপক্ষ। এরপর ১১ মার্চ কর্মস্থলে গিয়ে নিখোঁজ হন কিশোরীর বাবা। ওই দিন রাত সোয়া ১২টার দিকে মুঠোফোনের রিংটোনের সূত্র ধরে বাড়ির পাশের ঝোপ থেকে কিশোরীর বাবার লাশ পাওয়া যায়। 

এরই প্রেক্ষিতে, ‘বরগুনার ৭ম শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়ের ধর্ষণে বাদী হয়ে মামলা করা মেয়ের বাবা সেই মন্টু চন্দ্র দাস এর মৃতদেহ পাওয়া গেলো জঙ্গলের ভেতর বসা অবস্থায়। ওই শিশু এখনও চিকিৎসাধীন।’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বরগুনায় শিশু ধর্ষণের ঘটনায় মামলার বাদী বাবাকে হত্যার দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশের নয় বরং, জঙ্গলে লাশ পাওয়ার এই ঘটনাটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের। তবে উক্ত ভিডিওটি ভারতের হলেও বরগুনায় শিশু ধর্ষণের ঘটনায় মামলার বাদী (বাবা) লাশ পাওয়ার দাবিটি সত্য।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে তাতে ‘শিরোনামে ত্রিপুরা’ শীর্ষক লোগো লক্ষ্য করা যায়৷ উক্ত সূত্র ধরে ত্রিপুরা রাজ্যের ফেসবুক ভিত্তিক নাগরিক সাংবাদিকতার প্লাটফর্ম ‘শিরোনামে ত্রিপুরা’-এর ফেসবুক পেজে গত ১১ মার্চ প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া গেছে।

Video Comparison By Rumor Scanner 

ভিডিওটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, মলয়নগর বাইপাস এলাকার জঙ্গলে বসা অবস্থায় এক ব্যবসায়ীর নিথর দেহ পাওয়া গেছে৷ ভিডিওতে নিহত ব্যক্তির বোনের বক্তব্যে নিহত ব্যক্তির নাম রনবীর দেব (৫২) জানা যায়।

উক্ত তথ্যাবলীর সূত্র ধরে গত ১১ মার্চ ত্রিপুরার স্থানীয় গণমাধ্যম Tripura News 8 এর ফেসবুক পেজে প্রকাশিত একটি ভিডিও এবং জাগরণত্রিপুরা.com নামক ওয়েবসাইটে ‘জঙ্গল থেকে ব্যবসায়ীর ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার, চাঞ্চল্য’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়৷

সুতরাং, ভারতের ত্রিপুরায় এক ব্যবসায়ী লাশ জঙ্গলে পাওয়ার ঘটনাকে বাংলাদেশে বরগুনায় শিশু ধর্ষণের মামলা করায় বাবাকে হত্যার ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র 

জুলাই অভ্যুত্থানের সমন্বয়কদের বিয়ের বিষয়ে সমন্বয়ক উমামার মন্তব্য দাবিতে জনকণ্ঠের নকল ফটোকার্ড প্রচার

0

সম্প্রতি, “জুলাই অভ্যুত্থান শুধু সমন্বয়কদের বিয়ে করার জন্য হয়নি। সবাই বিয়ে করে ফেলছে অথচ আমার চিন্তা কেউ করেনা: সমন্বয়ক উমামা” শিরোনামে সংবাদমাধ্যম জনকণ্ঠের ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ডে  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।   

উক্ত দাবিতে ছড়িয়ে পড়া পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “জুলাই অভ্যুত্থান শুধু সমন্বয়কদের বিয়ে করার জন্য হয়নি। সবাই বিয়ে করে ফেলছে অথচ আমার চিন্তা কেউ করেনা: সমন্বয়ক উমামা” শীর্ষক দাবিতে জনকণ্ঠ কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং, জনকণ্ঠ কর্তৃক প্রকাশিত ভিন্ন শিরোনামের একটি ফটোকার্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা এমন কোনো মন্তব্যও করেননি।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে জনকণ্ঠের নাম, লোগো এবং এটি প্রকাশের তারিখ হিসেবে ‘১৮ মার্চ ২০২৫’ উল্লেখ করা হয়েছে।

পরবর্তীতে জনকণ্ঠের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজটি পর্যবেক্ষণ করলে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত কোনো ফটোকার্ড পাওয়া যায়নি। তবে, গত ১৮ মার্চে গণমাধ্যমটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে “জুলাই গণঅভ্যুত্থান শুধু নির্বাচনের জন্য হয়নি: উমামা ফাতেমা” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটির সাথে এই ফটোকার্ডটির ডিজাইন, ফন্ট এবং ছবির মিল রয়েছে। কিন্তু এই ফটোকার্ডটি ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পাদনা করে “জুলাই গণঅভ্যুত্থান শুধু নির্বাচনের জন্য হয়নি: উমামা ফাতেমা” বাক্য পরিবর্তন করে “জুলাই অভ্যুত্থান শুধু সমন্বয়কদের বিয়ে করার জন্য হয়নি। সবাই বিয়ে করে ফেলছে অথচ আমার চিন্তা কেউ করেনা:সমন্বয়ক উমামা” করা হয়েছে। 

Comparison: Rumor Scanner 

উক্ত বিষয়ে একই শিরোনামে জনকণ্ঠের ওয়েবসাইটে গত ১৮ মার্চে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “জুলাই গণঅভ্যুত্থান শুধু নির্বাচনের জন্য হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন উমামা ফাতেমা। একটি বেসরকারি গণমাধ্যমে তিনি এ কথা বলেন। উমামা আরো বলেন, ২০১৫ সালের পর বিএনপি তো রাস্তায়ই নামতে পারেনি, এমন হয়েছে যে তেল-গ্যাসের দাম বেড়েছে সে জন্য রাস্তায় নেমেছে। কারণ, নির্বাচনের জন্য তো রাস্তায় নামতে পারতেছে না। তখন তারা বিভিন্ন সামাজিক ইস্যু নিয়ে রাস্তায় নামার চেষ্টা করেছে সেই সাথে সামাজিক অর্গানাইজেশনগুলোর সাথে যোগাযোগ বাড়ায়।” এছাড়াও, উক্ত প্রতিবেদনে বিএনপি ও জনগণের মনোভাবের বিষয়েও তার মন্তব্য পাওয়া যায়৷ তবে, আলোচিত দাবির কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

এছাড়া, উমামা ফাতেমার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করেও আলোচিত দাবি সম্বলিত কোনো মন্তব্যের অস্তিত্ব মেলেনি।

সুতরাং, “জুলাই অভ্যুত্থান শুধু সমন্বয়কদের বিয়ে করার জন্য হয়নি। সবাই বিয়ে করে ফেলছে অথচ আমার চিন্তা কেউ করেনা:সমন্বয়ক উমামা” শীর্ষক শিরোনামে জনকণ্ঠের নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি সম্পাদিত।

তথ্যসূত্র

শেখ হাসিনা সম্প্রতি দেশবাসীর নিকট দোয়া চেয়েছেন দাবিতে পুরোনো ভিডিও প্রচার 

সম্প্রতি রাজনৈতিক আশ্রয়ে ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীর কাছে দোয়া চাইলেন শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে৷ 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)৷  

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং, ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলন চলাকালীন সময়ে শেখ হাসিনার বিটিভি ভবন পরিদর্শন শেষে প্রেস ব্রিফিং-এর ভিডিওকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে৷ 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে তাতে কথাCom নামক লোগো লক্ষ্য করা যায়৷ উক্ত সূত্র ধরে কথাCom নামক ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ৩০ আগস্ট ‘দেশ বাসির কাছে দোয়া চেয়ে কেন্দে দিলেন প্রধানমন্ত্রী: Sheikh Hasina’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া গেছে। 

Comparison: Rumor Scanner 

ভিডিওটিতে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, দেশবাসীকে বলি আপনারা দোয়া করেন এই যে জঙ্গীবাদ আর এর হাত থেকে যেন মানুষ মুক্তি পায়। মানুষের জীবনে যেন শান্তি আসে। সবাইকে ধন্যবাদ।

পরবর্তীতে, ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম মাই টিভির ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ২৬ জুলাই ‘বিটিভি ভবনের ধ্বংসযজ্ঞ নিজ চোখে দেখলেন প্রধানমন্ত্রী’ শিরোনামে প্রকাশিত ভিডিওতে প্রেস ব্রিফিং এর বিস্তারিত ভিডিও পাওয়া যায়। এই ভিডিও থেকে জানা যায়, শেখ হাসিনা বিটিভিতে আগুন লাগানোর ঘটনাকে নিন্দা জানিয়ে জঙ্গীবাদ আখ্যা দেন, এবং দেশবাসীকে এই জঙ্গীবাদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য দোয়া করতে বলেন। 

সুতরাং, শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক সময়ের দেশবাসীর কাছে দোয়া চাওয়ার দাবিতে জুলাই আন্দোলনের সময়ের পুরোনো ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

এসএসসি পরীক্ষার হলে কর্তব্যরত থাকবে সেনাবাহিনী শীর্ষক দাবিতে যমুনা টিভির নামে ভুয়া ফটোকার্ড প্রচার

0

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “এসএসসি পরীক্ষায় পরীক্ষা কক্ষে কর্তব্যরত থাকবে সেনাবাহিনী” শীর্ষক শিরোনামে মূলধারার গণমাধ্যম যমুনা টিভির লোগো সম্বলিত একটি ফটোকার্ড প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “এসএসসি পরীক্ষায় পরীক্ষা কক্ষে কর্তব্যরত থাকবে সেনাবাহিনী” শীর্ষক শিরোনামে যমুনা টিভি কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি বরং, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় যমুনা টিভির লোগো ব্যবহার করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে যমুনা টিভির নাম, লোগো এবং এটি প্রকাশের তারিখ হিসেবে ‘১৬ মার্চ ২০২৫’ উল্লেখ করা হয়েছে।

উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে যমুনা টিভির ফেসবুক পেজে প্রচারিত সংবাদ ও ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করে উক্ত শিরোনাম সম্বলিত কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও যমুনা টিভির ওয়েবসাইটেও উক্ত দাবির পক্ষে কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

Comparison: Rumor Scanner

তাছাড়া, যমুনা টিভির ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলোর সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির ফন্ট ডিজাইনেও ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়।

পাশাপাশি, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলেও আলোচিত দাবিটির সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, “এসএসসি পরীক্ষায় পরীক্ষা কক্ষে কর্তব্যরত থাকবে সেনাবাহিনী” শীর্ষক শিরোনামে যমুনা টিভির নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া ও বানোয়াট।

তথ্যসূত্র

  • Rumor Scanner’s analysis

বাংলাদেশে ধর্ষণের শিকার নারীর লাশের দৃশ্য দাবিতে ভারতের দৃশ্য প্রচার

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “পুরো বাংলাদেশ ধর্ষণের কান্নায় পরিপূর্ণ। #বাংলাদেশ_সংকট” (অনূদিত)

এছাড়াও, দেশের নাম সরাসরি উল্লেখ না করেও বাংলাদেশি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে উক্ত ভিডিওটি প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “আর কত দেখতে হবে এমন ধ’র্ষ’ণের পর শিশুকে হ’ত্যামায়ের আর্তনাদ”।

উল্লেখ্য যে, প্রচারিত ভিডিওটিতে ভুট্টা ক্ষেত সদৃশ একটি জায়গায় একটি লাশের পাশে কয়েকজনকে ক্রন্দনরত অবস্থায় দেখা যায়।

এরূপ দাবিতে এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশের নয় বরং, ভারতের বিহার রাজ্যের কাটিহার জেলার আজমনগর মহকুমার সিসিয়া গ্রামের এক কিশোরীর লাশের দৃশ্যকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করলে তাতে প্রচারিত দাবিটির সপক্ষে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

পরবর্তী অনুসন্ধানে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে “এমডি রাহাত” নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ০৬ মার্চে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে সাদৃশ্য পাওয়া যায়।

Comparison : Rumor Scanner

ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, “Sisya purab tola AZAMANJAR  par khand”. উক্ত পোস্টটির মন্তব্য সেকশন পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, ‘শাহবাজ আলম’ নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারীর প্রশ্নের জবাবে ‘সোবহান আলী সোবহান আলী’ নামের আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারী জানান, ঘটনাটি আজমনগরের পাশে সিসিয়া গ্রামের। এছাড়া, উক্ত একই ক্যাপশনে উক্ত ঘটনার আরো একাধিক ভিডিও পোস্ট হতে দেখা যায়।

Screenshot : Facebook

এরই সূত্র ধরে অনুসন্ধান করলে ভারতীয় ওয়েবসাইট ভিলেজ ইনফো এর একটি নিবন্ধ থেকে জানা যায়, “সিসিয়া গ্রামটি ভারতের বিহার রাজ্যের কাটিহার জেলার আজমনগর মহকুমায় অবস্থিত। এটি মহকুমার সদর আজমনগর (তহসিলদার অফিস) থেকে ৬ কিলোমিটার এবং জেলা সদর কাটিহার থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ২০০৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, নিমাউল গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে সিসিয়া গ্রামটি অন্তর্ভুক্ত।”

উক্ত সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে বিহার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফার্স্ট বিহারের ওয়েবসাইটে গত ০৭ মার্চে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সম্প্রতি বিহারের কাটিহারে এক চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড সামনে এসেছে, যেখানে দুর্বৃত্তরা এক কিশোরীকে ধর্ষণের পর নির্মমভাবে হত্যা করেছে। ভুক্তভোগী কিশোরী সন্ধ্যাবেলায় গবাদি পশুর খাদ্যের জন্য মাঠে গিয়েছিলেন, কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফিরে না আসার পর পরিবারের সন্দেহ জাগে। অনেক খোঁজের পর কিশোরীর দেহ ভুট্টা ক্ষেতে পাওয়া যায়। (স্বয়ংক্রিয় অনুবাদের সারাংশ)

এছাড়া, এ বিষয়ে ঝাড়খণ্ড, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম প্রভাতখবরের ওয়েবসাইটে গত ০৬ মার্চে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, আজমনগর থানা এলাকার নিমল পঞ্চায়েতের একটি গ্রামে বৃহস্পতিবার (০৬ মার্চ) সকালে একটি ভুট্টা ক্ষেতে ১২ বছর বয়সী এক নাবালিকা মেয়ের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। পরিবারের সদস্যরা জানান, মেয়েটি বুধবার (০৫ মার্চ) বিকাল ৪টায় ঘাস কাটতে মাঠে গিয়েছিল। সন্ধ্যা পর্যন্ত বাড়ি না ফেরায় তারা খোঁজাখুঁজি শুরু করে, কিন্তু তাকে কোথাও পাওয়া যায়নি। পরদিন বৃহস্পতিবার (০৬ মার্চ) সকালে খোঁজার সময় বাড়ির পিছনের ভুট্টা ক্ষেতে তার অর্ধনগ্ন ও ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ পাওয়া যায়। মেয়েটির মা ও দাদী অভিযোগ করেন যে তাদের মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে। মৃতদেহ পাওয়ার সময় মেয়েটির পরা পায়জামা তার গলায় জড়ানো অবস্থায় ছিল এবং গলা ও শরীরের অন্যান্য অংশে আঘাতের চিহ্ন দেখা গিয়েছিল। (অনুবাদের সারাংশ)

অর্থাৎ, এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, প্রচারিত ঘটনাটি বাংলাদেশের নয় বরং ভারতের বিহারের।

সুতরাং, ভারতের বিহারের ভুট্টা ক্ষেতে পাওয়া এক কিশোরীর লাশের দৃশ্যকে বাংলাদেশে ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হওয়া মেয়ের লাশ দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

মাগুরার ধর্ষণের শিকার শিশুর বোনের আত্মহত্যার তথ্যটি ভুয়া

0

সম্প্রতি, ‘ব্রেকিং নিউজ: মাগুরার শিশু আছিয়ার বোন আত্ম**হত্যা করেছে। সোর্স কমেন্টে’ শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি মাগুরায়  ধর্ষণের শিকার শিশুর বোন আত্মহত্যা করেননি বরং কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফেসবুকের উক্ত দাবির কতিপয় পোস্টে একটি ব্লগপোস্টের লিংক সূত্র হিসেবে দেওয়া হয়েছে। রিউমর স্ক্যানারের বিশ্লেষণে sadhinnews247 নামের ব্লগস্পটের বিনামূল্যের ডোমেইনের এই সাইটটি একটি ভূঁইফোড় সাইট বলে প্রতীয়মান হয়। সাইটে ‘মাগুরার শিশু আছিয়ার বোনের আত্মহত্যা’ শীর্ষক কথিত দাবির বিষয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে তবে কোনো প্রকাশকাল উল্লেখ নেই ।

কথিত এই সংবাদে দাবি করা হয়, মাগুরায় ধর্ষিত শিশু আসিয়া আজ দুপুর ১ টায় ঢাকার সামরিক সম্মেলিত হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছে। ডাক্তারদের ভাষ্যমতে অনেক চেষ্টার পরও আসিয়াকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। অভিযুক্ত আসামির চারজন সবাই কে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তাদের বিচার কার্যক্রম চালু রয়েছে আশা করি অতি শীঘ্রই তাদের ফাঁসি কার্যকর হবে। এদিকে আছিয়ার মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে তার বোন এই লজ্জা ঘৃণা এবং শোক সহ্য করতে না পেরে নিজের বাবার বাড়িতে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানা গেছে। 

উক্ত সংবাদটি পর্যালোচনা করে এতে আত্নহত্যার দাবির বিষয়ে কোনো তথ্যসূত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

এছাড়া, মাগুরার  ধর্ষণের শিকার শিশুর বোনের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটলে উক্ত বিষয়ে দেশের গণমাধ্যমগুলোতে ঢালাওভাবে সংবাদ প্রচার হওয়ার কথা। তবে, দেশের কোনো গণমাধ্যমে এ বিষয়ে সংবাদ প্রচার হতে দেখা যায়নি।

উল্লেখ্য, ধর্ষণের শিকার মাগুরার এক শিশুকে গত ০৬ মার্চ মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়৷ পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৩ মার্চ দুপুরে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল-সিএমএইচে শিশুটি মৃত্যুবরণ করে। 

সুতরাং, মাগুরার ধর্ষণের শিকার শিশুর বোনের আত্মহত্যার দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র 

১৩ মার্চ ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফর এবং শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাতের দাবিগুলো মিথ্যা

১৩ মার্চ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত সফরের তারিখ নির্ধারণ করে ঘোষণা দিয়েছেন দাবিতে একটি ভিডিও গত ১০ মার্চ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। পোস্টটির মাধ্যমে আরও দাবি করা হচ্ছে, সফরকালে তিনি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে সাক্ষাতের পর ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথেও আনঅফিসিয়াল একটি সাক্ষাৎ করবেন।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

একই দাবিতে থ্রেডসে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)

ইউটিউবে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ১৩ মার্চ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফর এবং এসময় শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাতের তথ্যটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ট্রাম্প উল্লেখিত তারিখে ভারত সফরে যাননি। মূলত, ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম ক্যাবিনেট মিটিংয়ের একটি দৃশ্য কাট করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের ‍শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যালোচনায় ভিডিওটিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্পর্কে মন্তব্য করতে শুনা গেলেও তার ভারত সফরের বিষয়ে কোনো আলোচনা করতে শোনা যায়নি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ১৩ মার্চ ভারত সফরের বিষয়ে অনুসন্ধান করেও আন্তর্জাতিক কিংবা ভারতীয় কোনো গণমাধ্যমে ওইদিন তার ভারত সফর সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে মার্কিন প্রেসিডেন্টের গত ১৩ মার্চের কর্মসূচিসমূহের সময়সূচি খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানেও তার ভারত সফরের বিষয়ে কোনো তথ্য দেখতে পাওয়া যায়নি। 

Screenshot: Roll Call

পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে হুয়াইট হাউজের ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি President Trump Hosts First Cabinet Meeting, Feb. 26, 2025 শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner

ভিডিওটির শিরোনামে থেকে জানা যায়, এটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন করে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর প্রথম ক্যাবিনেট মিটিংয়ের ভিডিও। উক্ত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এর ৫০ মিনিট ৫০ সেকেন্ড থেকে ৫১ মিনিট ২ সেকেন্ড পর্যন্ত সময়ের ফুটেজের সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে। ভিডিওটি থেকে জানা যায়, এসময় ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নের উপর কোন স্তরের শুল্ক আরোপ করবেন সে বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা নিয়ে আলোচনা করছিলেন। যার সাথে আলোচিত দাবিটির কোনো সম্পর্ক নেই। এছাড়াও পুরো ভিডিওটি পর্যালোচনা করেও ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাতের বিষয়ে ট্রাম্পেকে কোনো আলোচনা করতে দেখা যায়নি।

সুতরাং, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ১৩ মার্চ ভারত সফর এবং সেসময় সেখানে অবস্থানরত শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাতের দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

বিডিনিউজ২৪ এর লোগো ব্যবহার করে ভুয়া ওয়েবসাইটে সাদিয়া আয়মানকে জড়িয়ে ভুয়া সংবাদ প্রচার

0

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মানকে জড়িয়ে ‘ সাদিয়া আয়মান লাইভ টিভিতে মাত্রাতিরিক্ত কথা বলেছিলেন। রাফসান সাবাব এটিকে “দায়িত্বজ্ঞানহীন” বলে অভিহিত করেন এবং ভিডিওটির অপ্রকাশিত অংশটি ব্যাংককে দেন।’’ (অনূদিত) শীর্ষক ক্যাপশনে একটি পোস্ট প্রচার করা হয়েছে। উক্ত পোস্টে অনলাইন সংবাদমাধ্যম বিডিনিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনের আদলে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের লিঙ্কও সংযুক্ত করা হয়েছে। উক্ত লিঙ্কে থাকা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাদিয়া আয়মানকে ইউটিউব চ্যানেল ‘What a Show’ তে রাফসান সাবাবের সাথে তার লাইভ সাক্ষাৎকারে করা বক্তব্যের জন্য মামলা করেছে। এছাড়াও দাবি করা হয়, তিনি লাইভ সাক্ষাৎকারে কম সময়ে বেশি টাকা কামানোর একটি সাইটের প্রমোশন করেছিলেন। কথিত উক্ত প্রতিবেদনটিতে অনলাইন সংবাদমাধ্যম বিডিনিউজ২৪ এর লোগোও উপরে প্রদর্শিত হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্টটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

উক্ত দাবিতে প্রচারিত কথিত প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাদিয়া আয়মানকে জড়িয়ে প্রচারিত দাবি সঠিক নয় এবং বিডিনিউজ২৪ এরূপ কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি বরং ভুয়া একটি ওয়েবসাইটে বিডিনিউজ২৪ এর লোগো সংযুক্ত করে ভিন্ন ঘটনার স্ক্রিনশট সংযুক্ত করে ভিত্তিহীনভাবে উক্ত কথিত প্রতিবেদনটি তৈরি করে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে প্রচারিত পোস্টে সংযুক্ত প্রতিবেদনটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। কথিত উক্ত প্রতিবেদনটিতে অনলাইন সংবাদমাধ্যম বিডিনিউজ২৪ এর লেগো থাকলেও ‘newsnewsthe.click’ শীর্ষক ভিন্ন একটি ডোমেইন নাম দেখা যায় এবং নিশ্চিত হওয়া যায় যে উক্ত ওয়েবসাইটটি বিডিনিউজ২৪ এর আসল ওয়েবসাইট নয়।

উক্ত প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়, “সরাসরি সম্প্রচারের সময়, সাদিয়া আয়মান সত্য প্রকাশ করার জন্য অনুতপ্ত। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। একটি সরাসরি সম্প্রচারের সময় কেলেঙ্কারির সূত্রপাত হয়, যখন সাদিয়া আয়মান অনুষ্ঠানটিতে দুর্ঘটনাক্রমে তার গোপন কথা প্রকাশ করে দেন। অনেক দর্শক সাদিয়া আয়মানের “দুর্ঘটনাজনিত” কথাগুলিতে মনোযোগ দেন এবং সম্প্রচারে বার্তা পাঠাতে শুরু করেন। তবে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি ফোন কলের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দেওয়া হয়, যারা অবিলম্বে অনুষ্ঠানটি বন্ধ করার দাবি জানায়। সৌভাগ্যবশত, “হোয়াট আ শো!” অনুষ্ঠানের পরিচালক এই অনুষ্ঠানের রেকর্ডিংয়ের একটি কপি দেওয়ার জন্য রাজি  হয়। এই প্রতিবেদনটিও শীঘ্রই মুছে ফেলা হতে পারে, যেমনটি সম্প্রচারের ক্ষেত্রে ঘটেছে। তাই পাঠকদেরকে সাদিয়া আয়মানের দেওয়া লিঙ্কটি পরীক্ষা করা উচিত।”

এরপর কথিত মুছে ফেলা সাক্ষাৎকারটি প্রচার করা হয় যেখানে দাবি করা হয় উক্ত অনুষ্ঠানের সঞ্চালক রাফসান সাবারের সাথে সাদিয়া আয়মান নিজের আয়ের উৎস নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে বলেন তিনি ”নেদারেক্স প্রো ‘ নামের একটি সাইটে টাকা ইনভেস্ট করে প্রচুর টাকা কামিয়েছেন এবং এভাবে কয়েক মাসে মিলিয়নিয়ার হওয়া সম্ভব। এসময় উক্ত সাইটটির লিঙ্কও কথিত সাক্ষাৎকারটিতে হাইপারলিঙ্ক করে দেওয়া হয় এবং পাশাপাশি ‘হোয়াট আ শো’ এর উক্ত সাক্ষাৎকারের ছবি দাবিতে কয়েকটি স্ক্রিনশট সংযুক্ত করা হয়।

এরই সূত্র ধরে অনুসন্ধান করলে ‘What a Show’ এর ইউটিউব চ্যানেলে  এ এরূপ কোনো সরাসরি সাক্ষাৎকার সম্প্রচারের তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। কথিত টাকা কামানোর সাইট ‘নেদারেক্স প্রো’ এর লিঙ্কে ক্লিক করলে দেখা যায় এটি কথিত প্রতিবেদন প্রচার করা একই ওয়েবসাইটেরই ভিন্ন একটি পৃষ্ঠায় নিয়ে এসেছে। উক্ত সাইটে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের উক্তি দাবিতে দুইটি উক্তিও সংযুক্ত করা হয় যেখানে বলা হয় তারা উক্ত সাইটটি ব্যবহারে উৎসাহিত করেছে। উল্লেখ্য যে, সাইটটিতে ড. ইউনূসকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার বদলে প্রধান কাউন্সেলর দাবি করা হয়। এছাড়াও দাবি করা হয় যে প্রতিদিন ৯৫,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ২,১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করা যাবে। এরপর নাম, ইমেইল ও মোবাইল নাম্বার দিতে বলা হয়৷ উক্ত তথ্যগুলো দিলে ১ দিনের ভেতর যোগাযোগ করা হবে বলে জানানো হয়।

পরবর্তীতে ‘What a Show’ এর উক্ত সাক্ষাৎকারের স্ক্রিনশট দাবিতে প্রচারিত স্ক্রিনশটটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে উক্ত অনুষ্ঠানের ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ১১ অক্টোবর প্রচারিত ‘ Jovan & Sadia Ayman | What a Show! with Rafsan Sabab’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত অনুষ্ঠানের স্ক্রিনশট দাবিতে প্রচারিত ছবিতে সাদিয়া আয়মানের সাথে ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা জোভানকেও দেখা যায় যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, প্রচারিত স্ক্রিনশটটি মূলত উক্ত অনুষ্ঠান থেকে নেওয়া হয়েছে।

Comparison : Rumor Scanner

উক্ত অনুষ্ঠানটিতে সাদিয়া আয়মানকে আলোচিত সাইটটি প্রমোট করতে দেখা যায়নি বরং তাকে ও জোভানকে বিভিন্ন ফান গেম খেলতে এবং ক্যারিয়ার, ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কথা বলতে দেখা যায়। 

Screenshot : Whois

উক্ত ওয়েবসাইটটির ডোমেইনের তথ্যের বিষয়ে অনুসন্ধান করলে দেখা যায় এটি ২০২৫ সালের ২১ জানুয়ারি রেজিস্ট্রার করা হয়েছে, ২০২৫ সালের ২৬ জানুয়ারি হালনাগাদ করা হয়েছে এবং ২০২৬ সালের ২১ জানুয়ারি এটি মেয়াদোত্তীর্ণ হবে।

তাছাড়া, এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলেও আলোচিত দাবির সপক্ষে বিডিনিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। বরং অনলাইন সংবাদমাধ্যম বিডিনিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে গত১২ মার্চে এ বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়৷ উক্ত প্রতিবেদনটিতে প্রচারিত কথিত উক্ত প্রতিবেদনের দাবি মিথ্যা ও সাইটটি ভুয়া বলে নিশ্চিত করা হয়।

উল্লেখ্য, এর আগে বিডিনিউজের ওয়েবসাইটের আদলে তৈরি একইরকম আরেকটি ভুয়া সাইটে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদকে জড়িয়ে একই দাবিতে একটি প্রতিবেদন করা হয়। যা নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, সাদিয়া আয়মানকে তার লাইভ টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে সহজে টাকা কামানোর সাইটের বিষয়ে কথা বলায় মামলা করা হয়েছে শীর্ষক দাবিতে বিডিনিউজ২৪ সংবাদ প্রতিবেদন করেছে শীর্ষক দাবি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

রিউমর স্ক্যানারের পাঁচ বছর: গুজব প্রতিরোধে নিরন্তর সংগ্রামের গল্প

0

চীনের উহান শহরে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর গোটা চীন এবং পরবর্তীতে অন্যান্য দেশেও ছড়াতে শুরু করে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। পরের বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশেও প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়৷ সপ্তাহ ঘুরতেই আসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা। আক্রান্তের কিংবা মৃত্যুর আতঙ্কের পাশাপাশি সে সময়ে গুজবের প্রচারও ছিল লক্ষ্যণীয়, যা জনমনে বিভ্রান্তির জন্ম দিচ্ছিল। এমনই এক নাজুক সময়ে যাত্রা শুরু রিউমর স্ক্যানারের। একটি স্বাধীন সাংবাদিকতার উদ্যোগ হিসেবে ১৭ মার্চ যখন রিউমর স্ক্যানারের পথচলা শুরু হয় তখনই এর প্রধান লক্ষ্য ঠিক করা হয়, দেশের চলমান গুজব ও ভুয়া খবর নির্মূল করা এবং সঠিক তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এই যাত্রায় শুরুর চ্যালেন্জটাই ছিল করোনা নিয়ে গুজব। করোনা আক্রান্তের ভুয়া খবর, করোনায় মৃত্যুর গুজব এমনকি করোনা মুক্তির নানা ভুয়া টোটকা নিয়ে গুজব ছিল সে সময়ের নিত্যদিনের ঘটনা। রিউমর স্ক্যানার এসব গুজব মোকাবিলায় নিরলসভাবে কাজ করেছে, নেটিজেনদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে সঠিক তথ্য। এই চেষ্টার অংশ হিসেবে আমরা ওয়েবসাইটে ফ্যাক্টচেক প্রকাশেই সীমাবদ্ধ থাকিনি। আমরা চেয়েছি, কম সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ যাতে সংশ্লিষ্ট গুজবের বিষয়ে ওয়াকিবহাল হয়। এর প্রেক্ষিতে আমরা বাংলাদেশের প্রথম ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান হিসেবে ওয়েব কন্টেন্টের পাশাপাশি ফেসবুকে ডিজিটাল ব্যানারের মাধ্যমে ফ্যাক্ট চেক স্টোরি প্রকাশ করা শুরু করি। যাত্রা শুরুর দিন থেকে আজ পর্যন্ত ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের অন্যান্য সকল মাধ্যমেই জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোয় নিয়মিত ফ্যাক্টচেক ব্যানার প্রকাশ করে আসছে রিউমর স্ক্যানার৷ 

Screenshot : Facebook 

প্রতিষ্ঠার প্রথম বছরে ৮৪টি ফ্যাক্টচেক রিপোর্ট প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। নিয়মিত কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০২১ সালের ২৮ জুলাই বাংলাদেশের দ্বিতীয় তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আন্তর্জাতিক ফ্যাক্টচেকিং নেটওয়ার্ক (আইএফসিএন) এর স্বীকৃতি পায় রিউমর স্ক্যানার। দ্বিতীয় বছরে পূর্বের বছরের তুলনায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেশি ফ্যাক্টচেক রিপোর্ট প্রকাশের রেকর্ড করে এই প্রতিষ্ঠান। 

২০২২ সালের জুনে পদ্মা সেতু চালু হয়। এই সেতুর নির্মাণের সময় থেকে শুরু করে পরবর্তীতে নানা সময়ে অসংখ্য গুজব প্রচার হয়েছে। রিউমর স্ক্যানার নিয়মিত সেসব গুজব শনাক্ত করেছে। সে বছর নিয়মিত ফ্যাক্টচেকের বাইরে প্রচলিত নানা মিথ নিয়ে কাজ শুরু করে রিউমর স্ক্যানার। খাদ্যে টেস্টিং সল্ট ব্যবহার ক্ষতিকারক কিনা, পরীক্ষার আগে ডিম খেলে পরীক্ষা খারাপ হয় কিনা, নবজাতককে মধু খাওয়ানো ঠিক কিনা এমন ২০ টির অধিক প্রচলিত মিথ নিয়ে সে বছর কাজ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

বাংলাদেশের পাঠ্যবইগুলোতে ভুলের প্রবণতার বিষয়টি বেশ কয়েক বছর ধরেই সমালোচিত হয়ে আসছে। ২০২২ সালে ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশে প্রথমবারের মত ‘রিউমর স্ক্যানার’ পাঠ্যবইয়ে থাকা ভুলের বিষয়ে ফ্যাক্টচেক করা শুরু করে। এ পর্যন্ত এ সংক্রান্ত ১৪টি ফ্যাক্টচেক প্রকাশিত হয়েছে। ২০২৩ সালের নতুন শিক্ষাক্রমের বিষয়ে ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া নানা গুজব নিয়ে নিয়মিত কাজের স্বীকৃতি হিসেবে সে বছরের ডিসেম্বরে পজিটিভ ইনফ্লুয়েন্সার অ্যাওয়ার্ড লাভ করে রিউমর স্ক্যানার। 

যে কোনো সংঘাত, সংকট কিংবা বৈশ্বিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে গুজবের প্রবাহ সৃষ্টি একটি সাধারণ ধরণ হয়ে উঠেছে। করোনাকালীন সময়ে এমন প্রবাহ দেখা গিয়েছিল। এরপর রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার সংঘাত, ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের মধ্যকার সংকটসহ এমন নানা ঘটনায় গুজবের রীতিমতো বন্যা দেখেছে বিশ্ব। রিউমর স্ক্যানার এসব গুজবের প্রবাহে তীক্ষ্ণভাবে নজর রেখেছে, নিয়মিত কাজ করেছে সেসব নিয়ে। 

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ডেডিকেটেডলি কোনো জাতীয় সংসদ নির্বাচন কাভার করে দেশের একাধিক ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে লম্বা একটা সময় ব্যস্ততা ছিল। রিউমর স্ক্যানার চার শতাধিক ফ্যাক্টচেক করেছে শুধু নির্বাচন বিষয়ক ইস্যুতেই। 

বিগত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে টিম হিসেবে আমরা বেশ কিছু জনগুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছি। এর জন্য ডেডিকেটেড বিভাগও এসেছে। ইনভেস্টিগেশন ইউনিট তারই একটি৷ এই বিভাগের অধীনে এখন পর্যন্ত নয়টি রিপোর্ট প্রকাশ পেয়েছে। এর মধ্যে আলোচনার ঝড় তোলে এক্সে ভারতীয়দের অপতথ্য নিয়ে আগস্টের একটি প্রতিবেদন। 

গেল বছরের আগস্টে বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পূর্বে ও পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্থবিরতার সুযোগে রাজনৈতিক হামলার ঘটনা বেড়ে যায়। সে সময় সংখ্যালঘুরাও আক্রান্ত হন। তবে রিউমর স্ক্যানার সে সময় অনুসন্ধান করে দেখে, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রাজনৈতিক পরিচয় বা আক্রোশের বশবর্তী হয়েও সে সময় এমন অসংখ্য হামলার ঘটনা ঘটে, যেগুলোকে সাম্প্রদায়িক হামলা বলে প্রচার করা হয়েছে। এসব প্রচারে বড় ভূমিকায় ছিল ভারত থেকে পরিচালিত এক্স অ্যাকাউন্ট এবং ভারতীয় বেশ কিছু গণমাধ্যম। মূলত এভাবেই শুরু হয় ভারতীয়দের অপতথ্যের বন্যা। রিউমর স্ক্যানারের ইনভেস্টিগেশন ইউনিট আগস্টে মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্সে এমন ৫০টি অ্যাকাউন্ট খুঁজে বের করেছিল, যেগুলোতে বাংলাদেশের আগস্টের ঘটনাবলির বিভিন্ন ছবি, ভিডিও এবং তথ্যকে সাম্প্রদায়িক রূপ দিয়ে প্রচার করা হয়। এসব অ্যাকাউন্টের প্রতিটির অন্তত একটি পোস্টে সাম্প্রদায়িক অপতথ্য ও ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ পেয়েছিল রিউমর স্ক্যানার। এই প্রতিবেদন দেশে-বিদেশে আলোচনার জন্ম দেয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে রিউমর স্ক্যানারের এক পরিসংখ্যানে দেখানো হয়, গেল বছর প্রতি আড়াই দিনে ভারতীয়রা বাংলাদেশকে নিয়ে গড়ে একটি করে ভুল তথ্যের প্রচার করেছে। এর মধ্যে ভারতীয় ৭২টি গণমাধ্যম ৩২টি বিষয়ে মোট ১৩৭টি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেগুলোতে বাংলাদেশকে নিয়ে ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই ধরণের বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন পরিসংখ্যান নিয়মিতই প্রকাশ করে আসছে রিউমর স্ক্যানার। সব মিলিয়ে গেল পাঁচ বছরে প্রায় সাত হাজার রিপোর্ট প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। গেল পাঁচ বছরে অসংখ্য বিষয়ে কাজ করেছি আমরা। কাজ করেছি খুব সাধারণ ভুল তথ্য যাচাই থেকে শুরু করে ঐতিহাসিক, বহুল প্রচারিত মিথসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে। কিছু কাজ এমনই কঠিন ছিল যে এর পেছনে দিনের পর দিন সময় দিতে হয়েছে, কখনো সময়টা মাসের পর মাসেও গড়িয়েছে। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করেছি, সময় লাগুক, তবু মানুষকে সত্য জানাতে হবে। দূর করতে হবে বিভ্রান্তি। তাই হাল ছাড়িনি। সেই চেষ্টায় সফল হয়ে একটা পর্যায়ে গিয়ে সমাধান এসেছে।

নিয়মিত কাজের বাইরে গুজবের ফ্যাক্টচেক নিয়ে মিম তৈরি করতে আলাদা একটি উদ্যোগে অল্পদিনেই সাড়া পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার। এখানে উদ্দেশ্যটা জনবান্ধব। মানুষকে মিমের মাধ্যমে গুজব থেকে দূরে রাখতে সচেতন করে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছে এই প্লাটফর্ম। আমরা গত বছরই সাপ্তাহিক ফ্রি নিউজলেটার চালু করেছি। রিউমর স্ক্যানার শুধু ফ্যাক্টচেকেই ফোকাসড থাকতে চাচ্ছে না। আমাদের এই উদ্যোগগুলো তারই প্রতিফলন। মানুষের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়াটাই আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়, আমরা চাই মানুষ উপকৃত হোক এই উদ্যোগগুলোর মাধ্যমে৷ সেই প্রচেষ্টায় সম্ভাব্য সব পথ এবং সব মহলেই বিচরণ করে চলেছি আমরা।

গত ১৭ই মার্চ রিউমর স্ক্যানার পা রেখেছে ৬ষ্ঠ বছরে। বাংলাদেশে গুজব প্রতিরোধে নিরন্তর কাজ করে যাওয়া অন্যতম বৃহত্তম এই উদ্যোগের সঙ্গী কিংবা শুভাকাঙ্ক্ষী আমি, আপনি আমরা সকলেই।

রিউমর স্ক্যানার টিম বিশ্বাস করে, আমাদের এই প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা সমাজে কিছুটা হলেও ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে। মানুষ সচেতন হচ্ছে, আগ্রহী হচ্ছে তথ্য যাচাইয়ে।   নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে ভুল আর অপতথ্যের বিরুদ্ধে এই লড়াই চলুক নিরন্তর। এগিয়ে যাওয়ার এই গল্প আরো সমৃদ্ধ হোক।