সম্প্রতি, ‘ #Madrasastudent in a bag, taken to the #hospital in critical condition. She may have died after being raped, that’s why the #miscreants threw her in a sack in a pond! The air in #Bangladesh has become heavy with the cries of women and children!’ শীর্ষক শিরোনামে এক নারীকে বস্তা বন্দি থেকে উদ্ধার করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচার করা হয়েছে। শিরোনামের বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায়, মাদ্রাসা শিক্ষার্থী একটি ব্যাগে, আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ধর্ষণের পর সে মারা গেছে, সে কারণেই তাকে বস্তায় পুকুরে ফেলে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা! নারী ও শিশুদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের বাতাস!

উক্ত দাবিতে এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণের পর হত্যার কোনো ঘটনার নয় বরং, ২০২২ সালে ঠাকুরগাঁওয়ে টাঙ্গন ব্রিজের নিচ থেকে বস্তাবন্দি জীবিত কিশোরী উদ্ধার হওয়ার ঘটনার ভিডিও।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ‘journaleye24’ নামক ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ২১ জুলাই প্রকাশিত ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে৷

উক্ত ভিডিওর ডেস্ক্রিপশন অংশ থেকে জানা যায়, ২১ জুলাই, ২০২২ সকালে পৌরশহরের টাঙন নদী থেকে বস্তা বন্দি অবস্থায় মাহফুজা নামের কিশোরীকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা। মাহফুজা শহরের একটি মাদরাসায় কিতাব বিভাগে পড়াশোনা করেন ৷ মেয়েটির সাবেক স্বামী তার দলবল নিয়ে রাত আনুমানিক ৩- ৪ টার দিকে মেয়েটিকে কৌশলে মাদরাসা থেকে বের করে নিয়ে আসেন ৷ পরে নির্যাতন করে তাকে বস্তাবন্দি করে টাঙন নদীতে ফেলে রাখে। পরে তাকে উদ্ধার করে আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
উক্ত পোস্ট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চ করে একই ঘটনায় মূলধারার গণমাধ্যম আজকের পত্রিকার ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ২১ জুলাই ‘ঠাকুরগাঁওয়ে নদী থেকে বস্তাবন্দী ছাত্রীকে জীবিত উদ্ধার’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনের ফিচারে ব্যবহৃত ছবির সাথেও আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে।
প্রতিবেদনে উক্ত ঘটনায় ভুক্তভোগীর নারীর একটি সাক্ষাৎকারও পাওয়া যায়। ভুক্তভোগী জানান, ‘আমাদের বাড়ির সাবেক ভাড়াটে গুলজান বেগম তার অন্তরঙ্গ ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তার কাছে মাদ্রাসার মেয়ে চায়। এতে রাজি হয়নি। আমি লেখাপড়া শেষ করে মাদ্রাসার ছাত্রীনিবাসে আমি ঘুমিয়ে পড়ি। রাত ৩টার দিকে ঘরের বাইরে থেকে আমাকে কে বা কারা ডাক দেয়। আমি ঘুম থেকে জেগে ঘরের জানালার কাছে গিয়ে দেখি কয়েকজন যুবক আমার ছবি দেখায়। আমি ছবিগুলো নেওয়ার চেষ্টা করলে তারা শক্তি প্রয়োগ করে আমাকে ঘরের বেড়া ভেঙে টেনে বের করে। সন্ত্রাসীরা তাৎক্ষণিকভাবে আমার মুখে ওড়না পেঁচিয়ে ধরে। পরে হাত-পা বেঁধে বস্তায় ভরে। এর পর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।’
সেসময় উক্ত ঘটনার বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন বলেন, ‘জীবিত উদ্ধার কিশোরীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে তাকে হত্যা করার উদ্দেশে অজ্ঞান করে বস্তায় ভরে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে কিনা এবং অন্য কোনো ঘটনা আছে কিনা তা তদন্ত করা হচ্ছে। মেয়েটি কাপড় রাখা ট্রাংক থেকে বেশ কিছু প্রেম পত্র পাওয়া গেছে।’
উক্ত বিষয়ে সেসময় অন্যান্য গণমাধ্যমে (১, ২) প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়।
অর্থাৎ, আলোচিত ছবির ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারি মাসে একই ছবিটি মোহাম্মদপুর থেকে নিখোঁজ কিশোরী সুবার বলেও প্রচার করা হয়েছিল। সেসময় বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ২০২২ সালে ঠাকুরগাঁওয়ে টাঙ্গন ব্রিজের নিচ থেকে বস্তাবন্দি জীবিত কিশোরী উদ্ধার করার ঘটনাকে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- journaleye24- ঠাকুরগাঁওয়ে টাঙ্গন ব্রিজের নিচ থেকে জীবিত বস্তাবন্দি কিশোরী উদ্ধার
- আজকের পত্রিকা – ঠাকুরগাঁওয়ে নদী থেকে বস্তাবন্দী ছাত্রীকে জীবিত উদ্ধার
- দেশ রুপান্তর- সেতুর নিচ থেকে বস্তাবন্দি কিশোরী জীবিত উদ্ধার
- News Bangla 24- নদীর পাড়ে বস্তাবন্দি জীবিত কিশোরী উদ্ধার